বৈষবরস-প্রকাশ
ক্ষুদিরাম দাস
বইপজ ৮ বি, কলেজ রো
কঙ্গিকাতা-৭ ০ * ০০৯
পকাাশক 2
গৌরস্ুন্দর পাল
৮বি, কব্সেজ রে!
কলিকাডা-৭+০* ০৯
প্রকাশঃ
দোছ্ল পুথণম্া ১৩৬৩৬
মুগ্রক £
আর. রায়
সুত্রত ব্পরিদ্টিং ওওয়ার্কস্
৫ ১৯ ঝবামাপুক্ুর লেন
কছিনকাতা-৭০ * ০ ০৯
ঘ[রমন্ডাগবত
শ্রীজনার্দন শক্রবতখ
অগ্রজাধিকেযু
স্ুভীপত্লে
বিষয় পৃষ্ঠা
গ্রস্থের নামকরণ ৮০৬
শ্রীচৈতন্তের আৰির্ভাবে সমাজ-পরিবেশ ১৮৮ :১-১৯৬৮
শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের সহায়ক ধর্মীয় পুর্বভূমি "৮ ১৯৫৪
[ অদ্বৈত-শ্রীবাস-মুরারি ১৯, মাধবেন্দ্র পুরী ২০, জয়দেব-
বিদ্যাপতি-চণ্তীদাস ২১-২৬, শফী ধর্মসাধনা ২৬-২৮, শংকর-
অদ্বৈত ২৯-৩০, রামান্নজ-বিশিষ্টাছৈত ৩১-৩৪, নিশ্বার্ক ৩৫,
মধবাঁচার্য ৩৬, বল্পভ ৩, পূর্ব ইতিবৃত্তে কষ্৫গ্রসঙ্গ ৩৮-৪০,
গ্রমাণমূলক শাস্ত্র ৪১-৫৭, রাধা-প্রসঙ্গ ৫০-৫৩ |
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন ১ ৫৫-১১২
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ২ ১১৩--১২৯
[ কৃষ-উপাসনা ও গৌরভজন-_কষ্পিত বিতর্কের প্রতুযত্বর
১১৩-১৩২, ব্রদ্গ-ঈশ্বর-জীব-মায়-পুরুষার্থ ১৩২-১৪৩, অচিস্ত
ভেদাভেদ-বাদ ১৪৩-১৫২, ঈশ্বরতত্ব ১৫৩-১৫৬, নাম-নামী
১৫৭-১৫৯, ধাম-পরিকর-অবতার ১৬০-১৬৪, স্থষ্টিতত্ব ১৬৪-
১৬৫১ বুন্দাবন-লীল। ১৬৫-১৬৮, গোপীপ্রেম ও সখী ১৬৮-
১৭১) রাধাভাঁব ১৭১-১৭৮, প্রেমবিলাল-বিবর্ত ১৭৮-১৮০
গৌরকৃষ্ততত্ব বা কৃষ্ণের বুন্দাবনলীল। ও নবন্বীপলীল। ১৮০-
১৮৬, গৌড়ীয় বৈষ্'ব ধর্মের অনন্যমাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি ১৮৬-
১৯৯, রাধাভাব, পরকীয়। ব্ৃতি প্রভৃতি ১৮৯-১৯৯১ পঞ্চতত্ব
ও গণোদ্দেশ ১৯৯-২০৩শিক্ষাঙ্জোকাষ্টক ২০৩-২০৯, বৈষঃব-
ধর্ম ও সাম্প্রতিক কাল ২০৯-২১৪, বৈষ্ণবীয়ত1 ও রবীন্ত্র-
অনুভব ২১৪-২২৯ ]
রস অর্থাৎ ভক্তিরস ২০০ ৯৩০-২৬৩
[ সামান্ত। ভক্তি ২৩০-২৩৪, বৈধীও রাগানুগ। ২৩৫-২৪০,
ভাবভর্তি ২৪১-২৪৪, স্থায়ী ভাব ও রস- মুখা ও গৌণ
২৪৪-২৫৪, বিভাঁব ২৫৪-২৫৭, উদ্দীপন বিভাঁব, অঙ্গভাব,
সাত্বিক প্রঃ ২৫৭-২৬৩ ]
| ৪ ]
মধুর-রস-বৈচিত্রী ০ ২৬৩--৩৭০
[স্থায়ী ভাব ২৬৩-২৬৬, সাধারণী সমঞ্রসা ও সমর্থ ২৬৩-
২৬৮, প্রেম ২৬৮-২৭*) ম্েহ ২৭০-২৭২, মান, প্রণয়, রাগ,
অনুরাগ, ভাব ২৭২-২৮৪, মহাভাব ২৮৪-২৯৮, ভক্তিরসের
বিভাব--২৯৮-৩০৫, নায়িকা বা কৃষ্ণপ্রিয়া_ঘ্বকীয়া,
পরকীয়।, শ্রীরাধা ৩০৫-৩০৯, নায়িকাভেদ-_ মৃগ্ধ। মধ্যা
বাসকসজ্জিকা প্রগল্ভ1 ৩০৯-৩১৪, অবস্থাভেদে নায়িকা
অভিসারিকা, প্রঃ ৩১৫-৩২৪, দুতী-প্রসঙ্গ ৩২৪-৩২৬,
সখী-প্রসঙ্গ, ৩২৬-৩২৮, বিভাবে উদ্দীপন-_-৩৩১-৩৩২,
অন্গভাব- ভাব হাব হেলা প্রঃ ৩২২-৩৪৫, সাত্বিক ভাব
৩৪৬-৩৪৮, মধুরের ব্যভিচারী বা সধারীভাব ৩৪৮-৩৭০ ]
শৃঙ্গাররস-বিভাগ 22548265৮
[মুখ্য সম্ভোগ-_সংক্ষিপ্ত সংকীর্ণ সমুদ্ধিমান ৩৭১-৩৭৫,
গৌণ-সম্ভোগ ৩৭৫-৩৭৬, বিপ্রলস্ত-শৃঙ্গার" পূর্বরাগ, মান
প্রঃ ও উপবিভাগ সমূহ ৩৭৭-৩৯৮ ]
কীতনগান ও রসপর্যায় ৮" ৩৯৯-৪১২
পরিশিষ্ট _শ্রীচৈতন্যের জন্মভূমি নবছীপ ০: ৪১৩--৪১৭
প্রবৃদ্ধে বিষয়িস্বার্থে লোকধর্মবিনিগ্রহে।
ফণস্ফারে চ ভোগানাং শ্রয়ে গৌরং মহাবলম্ ॥
॥ গ্রন্ডেক মাম ক্ন্প |।
“বৈষ্ব” আখ্যায় গৌভীয় বেষঞ্চবকেই লক্ষ্য করা হয়েছে। যে বৈষ্ণব ধর্ষে
সম্বন্ধ বা উপাশ্য হলেন কৃষ্ঃ, যার অভিধেয় বা উপাসনার মূলে রাগভক্তি এবং
যার প্রয়োজন হ'ল কৃষ্*প্রেম উদ্বোধন-_সেই বিশিষ্ট ধর্মই গৌড়ীয় বৈষ্ণব
ধর্ম। গৌড়দেশে এই নবধর্ষের আবির্ভাব ঘটেছিল, শ্রীচৈতন্তের লৌকিক
জীবনেই এই ধর্মের পরাকাষ্ঠা দেখা গিয়েছিল। স্বরূপ-বপ-সনাতন-জীব-
প্রমূখ ভক্কি-সিদ্ধ পুরুষ বহু গ্রন্থের “মধ্যে এই ধর্মের রহস্থ ব] তত্ব বিশ্লেষণ করে
একে স্থায়ী প্রতিষ্ঠা দান ক'রে গেছেন। এ ছাড়া সহশ্রাধিক প্রাতংম্মরণীয়
মহাজন, সাধক ও কীর্তনগায়ক একে বাঙালির অনন্যদৃষ্ট ভাবসংস্কৃতিতে পরিণাম
দান করেছেন। “রস+ বলতে এই বিশিষ্ট ধর্মের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য চিৎ-প্রকর্ষ ও
দ্রবীভূত হলাদময় মানসিক বৃত্তিকে জ্ঞাপিত কর! হয়েছে। 'প্রকাশ* বলতে এর
স!হিত্যিক রূপ নিদিষ্ট হয়েছে। এ তিনটি বিষয়ই সংক্ষেপে এ গ্রন্থের আলোচ্য ।
ভূমিকা
॥ উ্ীক্ৈতন্ময্যে্প আলিভ্ডান্বে সমাজ-পল্লিহে্ণ ॥
আজ ১৯৮৪ গ্রীস্টাবের মধ্যভাগ। গত কয়েক বর্ষে বাঙলা! দেশ ও ভারতের
বিভিন্ন অঞ্চলে সমাজ-জীবনে অবপূর্বদৃষ্ট চাঞ্চল্য অন্ভূত হয়েছে। বহুশতবর্ষ-
ব্যাপী প্রতিষিত-্বার্থের ভিত্তিমূল কম্পিত হয়েছে । দরিদ্র শোধিত অবহেলিত
জনসাধারণ শীঘ্রই সামাগ্রিক অসাম্য চূর্ণ ক'রে মনুতত্ের
মর্যাদা লাভ করবে এমন সম্ভাবন। প্রবল হয়ে উঠেছে। যে
শক্তি মানুষের সামাঁধিক ও রাগ্রিক ইতিহাসের রূপকার, সেই শক্তিই ধর্ম,
সাহিত্য, শিল্পকলার নিয়ামক এ-সত্যে যেন আমাদের সন্দেহ না থাকে। জক্স-
মৃত্যুর ছার। সীমিত, কথনে! বিচ্ছিন্ন কখনে। একীভূত, সর্বদ| বিচিত্র মানুষজীবন-
প্রবাহ কোন্ লক্ষ্যে চালিত হচ্ছে ত] নির্যয় কর! সহজসাধ্য না হলেও মাঁনব-
পুবকণা
২ বেষঞ্চব-রস-প্রকাশ
সমাজের পূবতন ও অধুনাতন অবস্থা-বিচারে এ ষে প্রকাশের পথে অগ্রসর হচ্ছে
তা বুঝতে কষ্ট পেতে হয় না। ছন্ব-সংঘর্ধ অগ্রগতি-পশ্চাদ্গতির মধ্য দিয়ে
ধাবমান মান্গবকে লক্ষ্য ক'রে বিম্ময়বোধ করতে হয়। এই চলার মুখে
আশ্চর্যভাবে ব্যক্তি সমাজসভ্তার মধ্যে বিলীন হয়ে পড়ছে এবং ্মাজ নোতুনভাবে
ব্যক্িমহিমার স্ফুরণ ঘটাচ্ছে । এছুয়ের সম্পর্ক যেখানে নিদ্বন্ নয়, সেখানেই
সমন্তা পূরণ করতে আবিভাব ঘটেছে বৃহত্তর সামাজিক মান্গষের, আমরা ধার
আখ্য। দ্রিয়ে থাকি মহামানব বা অবতার । সমাজ-বিজ্ঞানের স্থপ্্স নিয়মেই
এদের আবির্ভাব হয়, এর] ব্যক্তিমাঙ্গষ এবং সমাজের ভারসাম্য রক্ষা করেন,
উগ্র স্বার্থময় 'ধর্ষের গ্লানি” দূর করেন। গীতায় কথিত অথচ আমাদের দ্বারা
উদ্টো৷ ক'রে ও অর্ধস্কুটভাবে উচ্চারিত সেই মহাবাক্য স্মরণ করা যাক-_
যদ) যদ! হি ধর্মস্ত গ্ল/নিরভবতি ভারত।
অত্যুখানমধর্মস্ত তদাত্মানং স্জাম্যহম, ॥
পরিত্রাণাস়্ সাধূনাং বিনাশায় চ দুক্কৃতাম,।
ধর্মসংস্থাপনাথায় সম্ভবামি যুগে যুগে ॥
ধর্মই জীবন, জীবনই ধর্ম। ধর্মের কোন্ প্লানি তখন সমাজকে অভিভূত করেছিল,
যার জন্য প্রয়োজন হয়েছিল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ? স্পষ্টই দেখা যায় দুর্যোধন-ছুঃশাসন
এবং তাদের সমর্থকের! ব্যক্তিগত এশ্বর্যসঞ্চ় এবং ভোগস্থথকেই পরমার্থ ব'লে
নিশ্চয় করেছিলেন । গীতার মতে তার] আহ্করী সম্পদের অধিকারী ছিলেন।
তাদের উগ্র স্বার্থবাসনা লোকধর্ম এবং লোকযাত্বাকে নিতান্ত পীড়িত করছিল।
যুধিষ্ঠির আপামর জনসাধারণকে নিয়ে রাজস্য় যজ্ঞ করেছিলেন । কৃষ্ণ নিয়ে-
ছিলেন লোক-পরিচর্ধার ভার। যুধিষ্ঠির অনন্যোপায় হয়ে তবেই যুদ্ধে সম্মতি
দিয়েছিলেন | ছুর্ধোধন যদি উগ্র স্বার্থ শিথিল ক'রে লোকধর্মের শ্বীকতি হিসেবে
পাচটি গ্রাম দিয়ে দিতেন তাহ'লে রক্তক্ষয় ঘটত না। লোকধর্ম-রক্ষা'র প্রতিতু
ভক্তের ভগবান্ কৃষ্ণ ঠিকই বুঝেছিলেন উর শ্রেণী-স্বার্থের সমূলে বিনাশ ছাড়া
রফ।-নিষ্পত্তিতে ধর্ম রক্ষিত হবে না।
রামায়ণে বামচন্দ্র শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসাবে কীতিত হয়েছেন, তিনি সাধুর
পরিক্রাণ এবং দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ সাধন ক'রে ধর্ষরাজ্য স্থাপন করেছিলেন ।
ত্যাগের অর্থাৎ ব্যক্তিস্বার্থের সম্যক বিলোপের দৃষ্টান্ত এমন আর দেখা যায়নি,
আবার উগ্র স্বার্থ এবং লোভের বিরুদ্ধে তিনি কালান্তকসদৃশ আচরণ করে-
ছিলেন ব'লে চিরম্মরণীয় হয়েছিলেন । রামের বালিবধ, লঙ্কাঁঅবরোব এবং
শ্রচৈতন্ভের আবিাবে সমাজ-পরিবেশ ৩
ঝাবণবধকে ধার] দাক্ষিণাত্যে আর্ধধ্ষের প্রতিষ্ঠ। হিসাবে দেখেন তাদের সঙ্গে
একমত হওয়া যায় না । রাম নিষাদদের সঙ্গে এবং অর্ধসভা বানর ব'লে আখাত
অনার্ধদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন ক'রে প্রায় চোদ্দ বছর তার্দের মধ্যে কাটিয়ে-
ছিলেন । এই্বরধ, প্রতাপ এবং লোভের প্রতিযূতি রাবণের বা তার অন্থচরদের
সঙ্গেই তিনি ছন্দে লিপ্ত হয়েছিলেন । এর! অধর্যচারী বলেই রাক্ষস আখ্যায়
অভিহিত হয়েছে । রামায়ণে রাবণ ব্রাহ্ষণবংশজাত। আর যদি অনার্ধ হয়েও
থাকেন তিনি মানবকল্যাণের নীতিকে আত্াস্তিকভাবে লঙ্ঘন করেছিলেন বলেই
তার সবংশে নিধন প্রয়োজন হয়েছিল। কাহিনীবদ্ধ সংক্ষিপ্ত রামচরিত রামের
জীবৎকালে রচিত এবং গীত হয়ে থাকলে বুঝতে হবে নবমানবধর্ম প্রতিষ্ঠার
জন্য তিনি আর্ধ-অনার্ধ সম্মিলিত সাঁধারণ মান্ৃষের কাছে প্রবলভাবে অভিনন্দিত
হয়েছিলেন । বস্ততঃ ইতিহাসের দিক দিয়ে রামায়ণ-মহাঁভারতের দুটি
কাহিনীকেই শ্রেণীন্বার্থময় আরধ-দর্পের বিনাশ এবং আর্-অনার্ধ মিলিত
মানবধর্মের প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্তরূপে গ্রহণ করাই যুক্তিযুক্ত ।
বুদ্ধদবের সময়ে এমন কি পূর্ব থেকেই ভারতে আর্ধ-অনার্ধ যগ্ঘপি মিশ্রিত
হয়েছিল, ক্ষাএ্র-পরিপুষ্ট ব্রা্ষণা মহিমা জনসাধারণকে পীিত ক'বে তুলেছিল ।
বুদ্ধদেব সাধারণ মানুষকে যুক্তিযূলক সহজ ধর্মের অধিকার দিয়ে ত্রা্ষণ্য গর্ব চূর্ণ
করলেন। এ শুধু ধর্মবিপ্লব নয়, জীবনবিপ্লবও, কারণ, ব্রাহ্মণ ধর্ম স্বার্থরক্ষণে
প্রযুক্ত হয়ে শৃদ্রদের পশুব্যবহার করত এবংস্বশ্প কারণে এুদ্রহত্যা করতে ছিধ।
করত না। বৌদ্ধধর্ম-প্রকাশের মুখ্য কারণ এখানে, এর জাবন থেকে অতিরিক্ত
কিছু দার্শনিক মূল্য পরে তাত্বিক ছারা গ্রথিত হয়ে থাকবে । তখনকার
কালে বুদ্ধের মত ও পথনির্দেশ ধে-সর্বতোব্যাপী বিপ্লব নিয়ে এসেছিল আজকের
দিনে তার স্বরূপ নির্ধারণ কঠিন হতে পারে, কারণ, যথার্থ বিপ্লবের সঙ্গে আমর!
বহুদিন অপরিচিত। ভারতীয়দের জীবনে ও চিস্তায় এ-ধর্ম আযুল পরিবর্তন
এনেছিল । গভীরতার দিক থেকে ফরামী বিপ্রবও নয়, বলশেভিক বিপ্রবই
হয়ত বা এর সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে, আর ব্যাপকতার দিক থেকে আজকের
বিশ্বের শোধণ-বিগেধী সাম্যধ্মী রাজনীতিক মনোভাবের সঙ্গেই এর
তুলনা চলে।
ধর্ম যে-পরিমাণে জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হয়ে থাকে, তত্ব সেই
পরিমাণেই গতিশীল জীবন থেকে পৃথক হয়ে পড়ে। ভীনযান, মহাযান,
অন্তিবাদ, নান্তিবাদ, সৌত্রান্তিক, বৈভাষিক প্রস্ভৃতি কৃটদর্শনের কবলিত হয়ে
পঞ্চশীল পালন এবং করুণ! মৈত্রীর সহজ পথ নিরুদ্ধ হয়ে পড়ল। অসঙ্গ
এবং বস্থবন্ধুর মত পরম বাদ্ধবও কুমারিল-শংকর প্রদত্ত আঘাত থেকে একে
রক্ষা'করতে পারলেন না। মহাযান বৌদ্ধধর্ম তান্ত্রিকতার আবরণ নিয়ে তিববতে-
বাঁঙলায় কোনোমতে আত্মরক্ষা করতে লাগল । আর মহাযানীদের শৃন্যদেহের
উপর গড়ে তোল। হ'ল নিগুণ ব্রন্মের নিরাকার মৃতি। শ্রীশংকরের অদ্বৈত
মতে সমস্ত মানুষকে ব্রদ্মের মহিমা দেওয়া] হ'ল। কিন্তু সোহহংবাদ দুরূহ তত্বের
মধ্যে নিবদ্ধ থাকায়, অসহায় সাধারণ মাহ্ছষের সহায়-শরণ না হওয়ায় এবং
কঠোর নিদিধ্যাসন ও সন্ন্যাসের দ্বারা লভ্য হওয়ায় সাধারণ মাম্ষের বাসর
অভিলাষ থেকে দূরে পডে রইল, তত্বপ্রিয় বুদ্ধিজীবী দার্শনিক এবং মুমুক্ষ
কতিপয় ব্যক্তির আশ্রয় হয়ে জনসমাজ থেকে নির্বাসিত রইল ।
্রাক্মণ্য, বৌদ্ধ এবং নব্য ব্রাহ্মণ্যের এই' সব দর্শন ও যুক্তিতর্কের সাম্প্রদায়িক
কোলাহলের অন্তরালে স্থবিপুল সাধারণ মানব, বল৷ যেতে পারে পতিত আর্য
ব। আধীকৃত অনার্য, আনুষ্ঠানিক কর্ম অথবা জীবনবিরোধী জ্ঞানের পথে পরিতৃপ্ত
না হয়ে বিশ্বরজমঞ্জের অলক্ষ্য স্থত্রধারের উদ্দেশ্যে দৈন্য ও কাতরোক্তি নিবেদন
করতে থাকলেন স্তবে, গানে, স্মরণে ও চিন্তায় । এদের জন্তই গীতার কম ও জানের
পথ বর্ণনা! ক'রে পরে ভক্তির পথও নির্ধারণ করা হয়েছে, এমন কি ভাক্তকে
প্রাধান্যও দেওয়] হয়েছে । এতিহাসিকেরা মনে করেন যজ্ঞপুরুষ বির ধার]
উপাসক তব পরবর্তী কালে বৈষ্ুন আখ্যায় অভিহিত হ'লেও ভক্তিধর্মের পথিক
ছিলেন না। কৃষ্-উপাসকেরা', ধারা কৃষ্ণের অবতারত্ব এবং লীলায় বিশ্বাসী,
তারাই আধুনিক অর্থে প্রকৃত বৈষ্ণব। ভারতের নানাস্থানে গোপ-কৃষণ ব
বাস্ছদেব-রুষ্ণের এই উপাসক সম্প্রদায় অন্তিত্বের পরিচয় মহাভাঁবতের
পূর্কাল থেকেই মিলছে। ভাগবত গ্রন্থ ন'? শ্বীষ্ীয় কোনে। শতাব্দীতেও
রচিত হয়ে থাকে তাহ'লেও ভক্তিধর্মের প্ব-প্রবলতার বিষয়ই প্রতিপন্ন
করে। অশ্বঘোনেব বুদ্ধচরিতে কৃষ্ণের গোপীনহ লীলার বিবরণ রয়েছে ।
্রীস্টীয় পঞ্চম-যষ্ঠ শতাব্দীতে দাক্ষিণাত্যে "নালবার সম্প্রদায়ের উদ্ভব এবং
বিস্তৃতি ভক্তি-ধর্মের ইতিহাসে একটি উল্লেখা বিষয়। খ্যাতনামা অন্ততঃ
বারো জন আনবার গ্রীতিময়ী শুদ্ধা ভক্তি অবলম্বন ক'রে কৃষ্ঞোপাসন?
করেছেন। গোপীসহ প্রেমলীলার বিষয় ভাগবতের পর এরাই প্রথম বর্ণন'
করেছেন ।
এ'দের ঠিক পরেই দাক্ষিণাত্যে আচার্য উপাধিধারী ভক্তিবাদী তাত্বিকদের
শ্রচৈতন্তের আবির্ভাবে সমাজ-পরিবেশ ৫
আবির্ভাব ঘটে । যামুনাচার্ষ, ভাস্করাচার্য, রাঁমাহ্জাচার্য প্রভৃতি তত্ববাদীর! অদৈত
মতের সঙ্গে ঈশ্বরভক্ভি'র সমন্বয় সাধন ক'রে ভক্তির ধারাকে দৃঢ় ভিত্তির উপর
স্থাপিত করেন। এ সময় অর্থ|২ একাদশ থেকে পঞ্চদশ শতাব্বীর মধ্যে উদ্ভূত
বিশিষ্টাদ্বৈত, ছ্বৈতাদৈত, শুদ্ধাদ্বৈত, শুদ্ধ দ্বৈত প্রভৃতি মতবাদ গৌড়ীয় বৈষণবধর্মের
দার্শনিক ভিত্তি নির্মাতাদের প্রবলভাবে সাহায্য করেছিল, কিস্তু গৌড়ীয় বৈষব-
ধর্মের অভ্যুথানে এবং বিশারে কোনে। অংশ গ্রহণ করেছিল কিন। সন্দেহ।
দার্শনিকতার সঙ্গে অসম্পংক্ত স্বত-উতসীরিত সাধারণ জনের জীবনের পু্ণতম
বিকাশের আগ্রহই এজন্য দারী। এই অভিলাষের থনসারযুতি নামপ্রেমধাতা
শমন্মহা প্রভু ।
পঞ্চদশ শতাব্দীর সম।এ-মানস পর্যালো্না করা যাক | মনে রাখতে হবে
শারতবধে অধুন।-পুধ কালে সমাজের আশ1-আকাজ্ষার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বাথের যে।গ
খাপিত হয়নি । রাজা-মহাপাজার আস।-যাওয়ায় মোগল-পাঠানের উত্থান
পতনে সমাগ-জীবনে ঘটনাব এক-আলটু স্পশ যদি বা লেগেছে, বিপর্যয় অ|সেনি |
হংরেজ শাসনের সমঘ়্েও জনসাধারণ উদ্দাসীনই ছিল বলতে হবে, অন্ততঃ দেশের
শতকরা নব্বই জন, পরোক্ষে এবং প্রত্যক্ষে কষিই যাদের জীবিকা । স্বাধীনতার
শর, আমাদের শিজেদের উপর দেশগঠনের দায়িত্ব যখন অনায়াসেই এসে পড়ল,
'তখন নিত্ররিত জনঘমাজের একবার নিদ্রাভঙ্গের মত হল বটে, কিন্তু সে বোধ হয়
খুহ্ত্তের জন্য । শিক্ষাহীন নিঞ্জীব জনসমাজের বিমুঢতার সথঘোগে স্বার্থফীত এবং
অধর্ম-পরিপুঞ্র মুষ্টমেয় ব্যক্তিবিশেষ একটি গোষ্ঠীতে সংহত হয়ে জনসমাজের
ছুবিপাক ঘণীভূত ক'বে তুললে । জনসমাঞ্জের সে মোহমিন্ত্রা এখন ঘুচছে ব'লে
“যন মনে হচ্ছে । সেযাই হোক, জাতিবর্ণের নিয়মে শাসিত আমার্দের সমাজ
বাষ্্ীয় অধিকারকে এযাবৎ প্রাধান্থ দেয়নি । সামাজিক অনাম্যের দুর্ভোগ
নীরবেই ভূগে এসেছিল । রাষ্রবুদ্ধিব জাগরণ এবং অধিকারবোধ পশ্চিমী শিক্ষা
থেকেই সম্ভব হয়েছে এ ধারণা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। পশ্চিমী শিক্ষায় শতকরা
কতজন শিক্ষিত হয়েছিল? আজ শিক্ষা-সংস্কৃতি থেকে ধঞ্িত ব্যক্তিরও রাষ্ট্রের
সহায়তায় সামাজিক সমান অধিকার লাভের প্রবল অভিলাষ জাগল কীভাবে ?
নারমাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ- যে জীয়ন্তে-মরা তার অধ্যাত্ম সম্প্দ অর্জন কর।
সম্ভব নয়। এই কারণেই বিবেকানন্দ দেশবাসীর কানে গীতার উপদেশ বর্ষণ না
ক'রে দ্রেহে-মনে শক্তি সঞ্চার করার প্রয়াপী হয়েছিলেন । আজকের দিনে
সামাজিক বিপ্লবের মর্মে মানুষের শক্তি অর্জন সম্ভব হ'লে, পরে জীবনের মধ্যে
৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
অধ্যাত্মের প্রকাশে মনুত্তত্ব-দেবত্ব একীতৃত হতে পারে। সেই স্থদিনের স্বপ্ন
স্থগিত রেখে বর্তমানে পঞ্চদশ-যোড়শ শতাব্দী এবং বৈপ্লবিক গৌড়ীয় বৈষ্ণব
ভাব-বিষ্তারের ভিত্তিভূমি লক্ষ্য করা যাক।
বাঙলায় কৌলীন্য বিধির প্রবর্তন ও প্রতিষ্ঠা যেভাবেই ঘটুক তা যে সমাজ-
জীবনের জড়ত্বের প্রধান কারণ সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। পালরাজাদের
সময়কার বাঙলার সমাজ-জীবনের ধিশেষ পরিচয় ইতিহাস না ফিলেও এটুকু
বোবা! যাঁয় যে প্রকট বণবৈষম্য বা জাতিগত শ্রেণী-সংঘাত তখনও সমাজে তেমন
উপলব্ধ হয়নি । উচ্চবর্ণের উন্নত সম্পদ্ ভোগের অধিকার তখনও রাষ্ট্রের আম্কূল্য
টৈতন্াবিভাঁবের লাভ করেনি | শ্রেগি বা বণিক্ সম্প্রদায়ের মুষ্টিমেয় ছু'চারক্তন
আবাবহিতপূর্ব সমান্ন নাগরিকদের প্রতিনিধি হিসেবে শাসকগোষ্ঠীর অস্তভুক্ত
থাকলেও এবং সমাজের অর্থের ভাগার এদের হাতে
থাকলেও প্রজাকল্যাণ বিস্থিত হয় এমন অপরিমিত ধনসঞ্চয় বা সম্পদ্ভোগ
এ'রা করতে পারতেন কিন সন্দেহ। তা ছাড়া এদের সংখ্যা নগণ্য ছিল।
'শূর”ভৃম্যধিকারীর। এবং “সেন' বংশীয় রাজার1 বৈর্দেশিক রুচি এবং জীবনচর্য'
নিম্নে এসেছিলেন ব'লে পশ্চিম অঞ্চলের উচ্চবর্ণের উপর শ্রদ্ধা পোষণ তাদের পক্ষে
স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তার! রাষ্্রসামাঁজিক সুবিধার্থে যে এতিহ্া স্ষ্টি ক'রে
গেলেন তার ফল বাঙল' দেশে স্থদূরপ্রসারী হ'ল। বৃত্তি, ভূমি এবং গ্রাম দান
ক'রে কুলীন ব'লে ধাদের বংশপরম্পরায় প্রতিষ্ঠা দেওয়। হল তারা অভিজাত
শ্রেণী হিসাবে গণ্য হলেন । বাঁওল! দেশে নোতুন সামাজিক নিয়ম, নোতুন
ধর্মের বিধান .এ'রাই প্রবর্তন করলেন এবং এদেবই সুবিধা অনুসারে নোতুন
জাতি ও বর্ণের বিভাগ স্থন্টি হ'ল। শিক্ষা-দীক্ষা, রাজপদ্, জোত-জমি বিনা
উপার্জনে এদের অধিকারতৃক্ত হ'ল এবং নিম্নবর্ণের মানুষ এদের আন্গত্যের
দ্বার জীবননির্বাহ করতে থাকলেন । সহজেই পাঠান-মোগল আমলেও এরাই
ভূম্যধিকারী এবং খেতাবধারী হয়ে উঠলেন। দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যস্ত
সমাজে এদের সংখ্যা ছিল যৎসামান্য । কিন্তু পঞ্চদশ শতববীতে এর সণ্খ্যায়
আর তেমন নগণ্য রইলেন না, ফলে অস্তশীল শ্রেণী-সংঘাত অনিবার্ধ হয়ে
উঠল। আমর! পুর্বোপাত্ত বিষয়টি পাঠকদের আর একবার স্মরণ করিয়ে দিতে
চাই। অধুনা-পূর্ব ভারতে, বিশেষত: অনার্ধরক্তময় বাঙ্লায় সাধারণ জনের
দিক থেকে জীবন ও ধর্মসংস্কার নিত্যসম্বন্ধে আবদ্ধ ছিল। ারতে জীবন-
প্রচৈতন্যের আবির্ভাবে সমাজ-পরিবেশ 9
বিপ্লব ধর্মবিপ্রবেরই রূপ নিয়েছিল। যেমন ফুটেছিল উচ্চ-নিয় জাতিবিভাগে
শ্রেণী-বৈষম্যের ধারা ।
নবম-দশম-একাদশ শতাব্দীতে কিছু মুষ্টিমেয় ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়, কিছু বৈশ্য এবং
অগণিত শূত্র গৌড়ের উত্তরের সমতল, পশ্চিমের অরণ্যবেষ্টিত মালভূমি এবং
পূর্বদক্ষিণের নিয়ভূমি ব্যাপ্ত ক'রে বিদ্যমান ছিল। এদের সঙ্গে মিশ্রিত ছিল
কিছু কোল-মৃ্ড। ও পার্বত্য জাতি। এই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার কিঞ্চিৎ
পরিচয় চর্যাগীতিকাগুলির মধ্যে রক্ষিত হয়েছে । বাকি অনুমেয় । নিঃসন্দেহে
শ্রেষ্ঠা এবং রাজপুরুষদের জীবনধার। লাধারণ থেকে স্বতন্ত্রই ছিল। কিন্তু যেমন
রাষ্ট্রনীতি এবং যুদ্ধবিগ্রহের সঙ্গে জনসাধারণের কোনো! সম্পর্ক ছিল না, তেমনি
মুষ্টিমেয় ব্রাহ্মণ্য মতাবলম্বী ক্ষত্রিয়-বৈশ্বদের সঙ্গে ও প্রবল কোনে সংঘাত উপস্থিত
হয়নি। কিন্তু সংঘা৬ একেবারেই যে ছিল না এমন নয়। সেই বিষয়ের এখন
অবতারণ। করছি।
এক এক বিশিষ্টরীতির ধর্মবিশ্বাস সেকালকার জীবনযাত্রার একট! অবিচ্ছেদ্য
ংশ। যখন আমর! প্রাচীন সাহিত্যকে ধর্মীয়” সাহিত্য বলি তখন একথা
ভেবে দেখিনা যে আমাদের ব্যক্তিক জীবন এবং সমাজ-জীবন স্থনিদিষ্ট কোনে!
নীতির ছার। চালিত ন। হ'লেও দেবতা এবং উপদেবতায় বিশ্বাস, বার-ত্রতের
অনুষ্ঠান, পর্ব-পালন নিত্যকর্মের মধ্যে গণ্য ছিল। পুরুষাপেক্ষ। নারীরাই এই
ধরনের ধর্মের অস্ুসরণে অধিকতর আগ্রহবতী ছিলেন, আর তখনকার
সাধারণের সমাজে নারীদের প্রাধান্তও ছিল যথেষ্ট । সুতরাং ভেবে দেখলে
বলতে হয় যাঁকে ধর্মীয় সাহিত্য বলছি তা-ই আমাদের পক্ষে দ্রীবনধমর্খ সাহিতা।
ফলে আমর! প্রাচীন মঙ্গলকাবাযগুলিতে ধর্মকথ অর্থাৎ দেবতার শ্তবস্ততিই পাচ্ছি
না, যখ্৫থ সাহিত্যও লাভ করছি, বাঙালির মানস-পরিচয়ের মৃল্যবান্ ইতিবৃত্তও
পেয়ে যাচ্ছি । মঙ্গলকাব্যের কিছু কাহিনী আহ্মমানিক পালবংশের রাজত্বকালেই
ছড়ার আকাবে গড়ে গুঠে। সাধু বা বপিক্দের সমাজনেতৃত্ব, শৈবধর্মাশ্রয় এবং
মঙ্গলপর্»-বিরোধিত1 একালেই স্স্ভব। উচ্চতর সমাজে লোকায়ত মঙ্গলধর্মের
অন্থ্প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল | ধনপতি ও চাদসদাগর শিবের উপাসক ছিলেন । প্রথমে
উচ্চ সম্প্রদায়ের নারীর এবং পরে পুরুষেরা মনসা-চণ্তীর পুজ। গ্রহণ করেন।
বণিকৃ-সম্প্রদায় স্বীকার করলে তবেই এইসব লৌকিক দেবতার গৌরব প্রতিষ্ঠিত
হ'ত। এই নিয়ে যে দন্বসংঘাত তা-ই মঙ্গলকাব্যগুলির মূল কাহিনীকে নিয়ন্ত্রিত
করেছে। কাহিনীগুলির উদ্ভব এবং নিতান্ত গ্রাম্য কাব্ারপ প্রথম গ্রথম শিক্ষা:
্ বৈষ্ণব রস-প্রকাশ
স্কৃতিহীন নিয়তম বর্ণেই প্রচলিত হয়। এই সমাজের কাহিনীকার ও কবি
অভিজাত শৈবোপাসকদের প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে নিপাতিত কঃরে বাস্তব
অবস্থার বিরুদ্ধে অজ্ঞাতে প্রতিশোধ নিঘ্েছেন। নেতৃস্থানীয় ভিন্রধর্মান্বিত অর্থাৎ
ভিন্নতর জীবনলক্ষণাক্রান্ত কতিপয় ব্যক্তির সঙ্গে জনসমাজের সংঘাত এবং
পরিশেষে সামাজিক মানষের বিজয়ের এই ইতিবৃত্ত প্রায়শই সাহিত্যের
ইতিহাসের লেখকদের দৃষ্গি থেকে দূরে সরে গেছে।
লৌকিক দেবতা ও ধর্মবিশ্বাস, বৃক্ষপ্রশ্ুরাদির পুজা ও মানত থেকে উন্নীত
হয়ে প্রথমতঃ ব্রতপালন, ব্রতকথ। আবৃত্তি, আচার ও নিয়মনিষ্ঠটার সঙ্গে জড়িত
হরে পড়ে। দ্বিতীয় অবস্থায়, ধরা যাক ছ্বাণশ-ত্রয়োদশ শত্বান্দীতে, কোনে! প্রসিদ্ধ
ঘটনাকে অবলগ্ধন ক'রে লোকমুখে ধাহিনীর প্রচলন হয় এবং কোনে! কবি
তাকে সুরে আবৃভিযোগ্য পাচালিতে পরিণত করেন। এই অবস্থায় নারীমহল
থেকে পুরুষের মধ্যে মঙ্গলধর্ষে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা প্রত্তিত হয়। তৃতীয় অবস্থায়
ধর্মানুঠানের ব্যাপক প্রচলন এবং উচ্চতব অন্প্র্দা কতৃক লোকায়তধর্ষকে
স্বীকৃত্দান। এই অবস্থায় শৈবধর্ষের সঙ্গে মঙ্গলধর্মের মিলন রচনা এবং ধর্মের
ও কাব্যকাহিনীর পৌরাণিক আভিজাত্য 'গ্রতিষ্ঠা। এ আনুমানিক ত্রয়োদশ-
চতুর্দশ শতাব্দীর ঘটনা । এর পব মোটামুটি পঞ্চ'শ শতাব্দীর প্রারভ্ত থেকেই
কবিরা পুর'ণমিশ্র লৌকিক কাহিনী নিষে লৌকিক শিব, চণ্ডী, মনসাকে
পৌরাণিক পেটিকার মধ্যে আবদ্ধ ক'বে, জনসমাজে পূর্বপ্রচলিত কাহিনী
অবলম্বন ক'রে কাব্যরচনায় মনেনিবেশ করলেন, পঞ্চদশ শতকের শেষে লেখ
যার পুথি আমরা পাচ্ছি। বল! বাহুল্য, কবিদের হাতে পড়ে কাহিনীব
আনুষ্ঠানিক ধর্মীয় উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে থাকল এবং জীবনচিত্র, বর্ণনার
উৎকর্ষ ও ভাবের লীলাই কাব্যগুলিতে মুখ্য স্থান গ্রহণ করলে।
বর্ণনিধিশেষে মঙ্গলধর্মের ব্যাপ্তির ফলে এক নোতুন পরিস্থিতি উদ্ভব হ'ল ।
প্রথমতঃ বন দেবত। এবং উপদ্েবত। উচ্চতর বর্ণকে প্রভাবিত করতে বার্থ হয়ে
গ্রামের অথবা অরণ্যের বুক্ষতল আশ্রয় ক'রে রইলেন, কেউ বা অন্থ প্রধান
দেবতার আবরণ-দবতা হয়ে কথঞ্চিৎ জীবনরক্ষা ক'রে, একট] ফুল একটু জল
পেয়ে বেঁচে রইলেন। পশ্চিমবঙ্গে রাঢ অঞ্চল ঘুরলে আজও এদের চিহ্ন দেখা
যাবে। তবু চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকে এই সব উপদেেবতা, যেমন ভৈরব, পঞ্চান"দ্
মার্দানা, জিনাসিনী, কুদ্রাসিনী, রঙ্গিনী, বাশুলী প্রভৃতির প্রভাব নিয় থেকে
প্রারন্ধ হয়ে উচ্চতর সমাজ পর্বস্ত স্পর্শ করেছিল, চৈতন্তভাগবতের “মছ্য মাংস
প্রচৈতন্যের আবির্তাবে সমাজ-পরিবেশ ৯
দিয়া কেহ ঘক্ষপূজ। করে' প্রস্ততি উক্তিই তার গ্রমাণ। এইসব পৃজা-উপহারের
বার এবং বশ্ততার দ্বারা পরিতোধষণীয় উগ্র দেবতার! ক্রমে টিকে থাকার যুদ্ধে
পরাজিত হয়ে তিনটি প্রধান দেবতাকে সমস্ত স্থান ছেড়ে দিতে লাগলেন, সেই
প্রধান লৌকিক দেবতাত্রয় হলেন মনস।, চণ্তী ও ধর্ষঠাকুর ব1 ধর্মরাজ। উচ্চব্ণ
ও অভিজাতেরা যখন নিয্নবর্ণসমূহের এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের ধর্মবিশ্বাস
এবং পুজার অনুষ্ঠান গ্রহণ করলেন তখন দ্বিতীয় যে অবস্থার উৎপত্তি হ'ল ভা
সমাজের পক্ষে গুরুতর । পূর্বে আমর| বলেছি শৈবধর্ষের সঙ্গে তথা পুরাণ-প্রাসিদ্ধ
দেবতার সঙ্গে লোকধর্ম এবং লোকদ্রেবতাকে একীকৃত কর। হল। বোধ হয় এর
থেকেও গুরুতর পরিবর্তন আন। হ'ল ধর্মের অনুষ্ঠানে, পু্গাপদ্ধতিতে । উচ্চবণ
পূর্নার ব্যাপারটিকে আত্মসাৎ ক'রে ফেললেন । পুরোহিত নিযুক্ত হ'ল, সংস্কৃত মন
প্রত হ'ল, নতুবা, পুবাতন পৌরাণিক মন্ত্রতন্ত্রকেই অন্নস্বল্প পরিবর্তন খণে
ক্কাজে লাগানে। হ'ল, আাড়গ্বরে বহু অর্থব্যয়ে মন্দির মণ্ডপ নিষাণ করে পু এবং
গানের অনুষ্ঠান প্রবতিত হ'ল। অ।র এ পুঙ্গান্ু্ানের প্রবতঞ হয়ে উঠলেন
কোনে। 'নায়ক” (তু*-নার়কের করহ কল্যাণ” ), খিনি নিশ্চিতভাবে ছুমাধি-
কারী বা প্রতিষ্ঠাসম্পন্ন রাজতুল্য ধ্যক্তি। মঞ্গলকাব্যগ্ুলিও এদেরই পৃণ্-
পোষকতায় রচিত হতে ধাকল। ক্রমে লোকা রত ধর্ষ ব্যক্িবিশেষের কুক্ষিগত
হে পড়ল, তার মতান্যায়ী নির্বাহিত হতে থাকল, তার রোষ অথবা সন্তোষের
উপর নির্ভরশীল হ'ল এবং ধর্মানু্টনের মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে ব্যক্তি ব শ্রেণাই
পৃর্দিত ও সম্মানিত হতে থাকলেন। আর ধারা এ ধর্মের যূল উপাসক ও
প্রবর্তক তারা ভক্ত অথবা ভৃত্য হয়ে ধহিদ্বারে করজোড়ে কপাচিক্ষ হয়ে
রইলেন । এরকম ব্যাপারের মধ্যে যে মর্মাস্তিক মানবিক বেদন। নিহিত রগেছে
তা নিয়ে আধুনিক মহ।কবির রচিত “প্রথম পুজা” ( পুনশ্চ” কাব্গ্রস্থ )
কবিতাটির কথ! পাঠকদের ম্মরণ করতে বলি। মন্দির-নির্মাণ রাজ1-জমিদারদের
প্রজ। আয়ত্তে রাখার তখনকার এক কৌশল ।
প্রতিষ্ঠাসম্পন্ন ব্যক্তিবিশেষ অথবা ভূম্যধিকারীর1 লৌকিক ধর্মাহ্ষ্ঠান এবং
গাজন উৎসবকে কিভাবে সীমিত ক'রে নিজ মহিমান্বিত ব্যক্তি প্রতিমাকে
প্রতিষ্ঠিত করোছলেন তার প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্ত ধর্মঠাকুরেব গাজন উত্সবের মধ্যে
পাওয়া যাবে। 'শৃন্তপুরাণ'-এর মধ্যে যে ধর্মপূজার পরিচয় পাওয়া যায় ভাতে
এর প্রাচীন এবং আধুনিক ছুই রূপই গ্রথিত রয়েছে। বস্তুতঃ 'শৃন্যপুরাঁণ” দ্বাদশ
থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত প্রচলিত ধর্মোৎ্সবের পার্বণবিধধির একট। খসড়া মাত্র ।
১৩ বৈষ্ণব-রস-্প্রকাশ
ধর্মমঙ্গলের মধ্যেও প্রথম লক্ষণীয়-ধর্মের সঙ্গে শিবের ( তথা বিষ্ণুর ) সমন্বয় ।
ধর্মের গাজনেও চড়কের অনুষ্ঠান গ্রচলিত। ধর্মের দেউলের পাশে শিবের মন্দির
স্থাপন অনিবার্য ছিল। ত' ছাড়া গাজন উৎসবে ভক্তদের “বোল্* ব! উচ্চকণ্ঠে
দেবতাকে আহ্বানের মধ্যে ধর্মের সঙ্গে শিবকে আহ্বানের প্রথ প্রায় সর্বত্র |
ধর্মঠাকুরের গাজন উৎসবে গ্রারভ্ভ থেকে শেষ পর্যস্ত যে-সব অনুষ্ঠানের আয়োজন
হয় তার মধ্যে সর্বত্র রাঁঢ়ের সামস্ত ভূপপতি বা ভূম্যধিকারীর স্বতন্ব মহিমার
প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বনল্লুকায় আবিভূতি রামাই ভোমের ধর্মঠাকুর,
যার মঙ্গলগান রচনায় ব্পরাঁমকে সমাজ থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল এবং
মাণিক গাঙ্থলি জাতিনাশের ভয় করেছিলেন, তিনি রাজমহিমালিপ্ত হয়ে পরিণত
হয়েছেন উচ্চজনপৃজ্য ধর্মরাজে। ধর্মরাজের বাহন অশ্ব, পরিধান মুকুটসহ
রাজবেশ, মাথায় রাজচ্ছত্র। তিনি কখনও মন্দিরমধ্যে অবস্থান করেন, কখনও
দ্রশন দিতে বহির্মশ্দির বা! সভ। আশ্রয় করেন। সভায় আমীন অবস্থায় মণ্ডপ
প্রজায় পরিপূর্ণ হয়। রৌপ্যদগুহাতে প্রতিহারী দাড়িয়ে থাকেন, ছুপাশে ছুজন
তাকে চামর পাখা নিয়ে বাতাস করেন, এ সময় ধর্মরাজ বিচারে বসেন ।
গাঁজনের সময় শত শত ভক্ত (ধার সৈম্যসামন্তের প্রতিরূপ ) বের আন্দোলন
করতে করতে ধর্মের ঘট পাহার! দিয়ে অশ্বারূঢ় ধর্মঠাকুরের পশ্চাদ্বতা হন।
সমন্ত রাত্রি ধ'রে চলে বাণ-ফ্োড়ার বিচিজ্র শোভাযাত্রা আর ধর্মরাজের যাত্রী-
সমাপ্তি ও অবস্থানের (০8101108 ) স্থান থেকে মন্দির পর্যস্ত অগণিত ভক্তের
দ্বগুসেবা” (সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাতের ভঙ্গিতে শুয়ে এবং উঠে দাঁড়িয়ে সমস্ত পথ অতি-
বাহিত করা) অথবা 'গড়ান? দেওয়া । নারীর] বিভিন্ন মানতের জন্য সমস্ত পথ
মাথায় ধুনোর খোল! জালিয়ে অতিক্রম করতে থাকে। আর উৎসবশেষে
ভক্তের! ( ভক্ত্য1) মন্ুষ্যবাহিত চতুর্দোলায় চণ্ড়ে শিবির-সন্গিবেশ স্থান থেকে
( যেমন হয় যুদ্ধজয়ের পর ) ষন্দির পর্যস্ত আসে। সামস্ত নরপতির যেমন ধর্মকর্ম
বিচারকার্য নির্বাহের জন্য আত্নায়িক, ধর্মাধিকরণিক প্রভৃতি থাকে, ধর্মরাজেরও
তেমনি আছে আমনি, ধামাইতকন্মি প্রভৃতি । লামন্ত নরপতিদের যুদ্ধবিগ্রহের
কাহিনী অবলম্বন ক'রে গড়ে উঠেছে খমমঙ্গল কাব্য । যুদ্ধে সৈনিকের কাজে
নিযুক্ত হ'ত নিয়শ্রেণীর লোকের1। ধর্মমঙ্গল কাব্যে কালু ভোম, লখাই ডোম,
কানড়া, কলিঙ্গ।। ধর্মরাজের গাজনেও দেখি বাণ-ফোড়। ভক্তের! সবাই অস্ত্যজ
নিয়শ্রেণী থেকে আসেন, আর দণগ্ডসেবা গড়াঁনসেবার ভক্তের নাধারণভাবে
* এইদব লৌকিক দেবতার পুজাপদ্ধতি এবং উৎসব-অনুষ্ঠান লেখকের আবাল] ব-দৃষ্ট |
শ্রীচৈতন্তের আবিভাবে সমাজ-পরিবেশ ১১
সমস্ত জনসমাজ থেকেই । আরও দেখা ষায় ধর্মের ভক্তের বিভিন্ন বর্ণের হলেও
উৎসবের কয়েকর্দিন তাত্রবলয় অথবা অভাবে পইতা! গ্রহণ ক'রে এক শ্রেণীতে
পরিণত হয়ে পড়ে। এর মূলে ধর্মপূজার প্রাচীন এঁতিহা হিসেবে নিম্নবর্ণের
প্রভাব কিছুটা]! কাজ করতে পারে। বস্তুতঃ এটুকু বোঝ! যায় যে ধর্য-
পূজী-পদ্ধতি ও উৎসব-অনুষ্ঠান মূল থেকে বহুদূর সরে এসেছে ' নিম়বর্ণের জন-
সমাজের ধর্মবিশ্বাস এবং মানসিকতার অবশেষ কিঞ্চিৎ এর মধ্যে থকলেও সমস্ত
ব্যাপারটি নোতুন ক'রে ঢেলে সেজে ব্যক্তি-প্রাধান্তের প্রতীক রূপে গাড়
করানো হয়েছে।
মনসা-পুজা উচ্চবর্ণে তেমন প্রাধান্ট বিস্তার করতে পারেনি, যদিও শৈব-
ধর্মের সঙ্গে সমস্থিত হওয়াঁব ফলে দেবতার স্ব'ভাঁব-চরিত্রে কিছু পরিবর্তন নিশ্চয়ই
দেখা দিয়েছে। কিন্তু চণ্ডীর পুজ! প্রায় বিলুপ্ত হয়ে মঙ্গলচণ্ডীরূপে সাধারণ
নারীসমাজে কিছু প্রতিপত্তি রেখে দুর্গাপূজার মধ্যে নিঃশেষে আত্মধান
করেছে। পৌরাণিক মহাশক্তির সাড়ম্বর আরাধন1 আরণ্য চণ্ডীকে নিশ্পরাভ ক'রে
দিয়েছে এবং তিনি এখন নোতুনতর শক্তি-পুজার কিঞ্চিৎ অবশেষ লাভ ক'রে
লোকচক্ষুর অগোচরে কথঞ্চিৎ জীবনধারণ কবছেন মাত্র। হ্র্গাপূক্জ1! যে এদেশে
বৃহৎ জমিদারদের দ্বারা প্রারন্ধ এবং অপেক্ষাকৃত স্বপ্পবিত্ত ভূ-ন্ব।মীদের অঙ্থন্থত
এ সকলেই জানেন। এর! উচ্চতববর্ণের মানুষ, অর্থপ্রতিপ্রত্বিশালী এবং
সংখ্যায়ও অতি্বল্প । চগণ্ডীপুঙ্জার বিবর্তনে আমর! দেখছি প্রথম কিরাত-শধর-
ব্যাধ পূজিত পণুরক্ষয়িত্রী দেবতা আরণ্য চণ্ডী, পরে উচ্চবর্ণের নারীদের
পূজিত মঙ্গলদণাত্রী মঙ্গলচণ্ডী, পবে পৌরাণিক শিবছুর্গার সঙ্গে অভিন্নভাবে
পৃজিতা চণ্ডী । এই সমন্বয় ও চণ্তীপু্জার্র পরিণাম পঞ্চদশ শতাব্ীর মধ্যেই
সম্পূর্ণ হয়েছিল এবং আমাদের প্রাপ্ত চণ্তীমঙ্গল কাব্যগুলিতে এই লমন্বয়েব
অবস্থাই দেখতে পাচ্ছি। ষোড়শ শতাব্দীতে রিপুদলনী দুর্গার পুজা প্রতিষ্ঠার
পর যেমন ধীরে ধীরে মঙ্গলচণ্ডার বিনাশ, তেমনি চণ্ডীমঙ্গল কাব্যেরও অবলুঞ্চি।
এই ধারায় উল্লেখ্য মুকুন্দ কবিকঙ্কণ ও শেষ কবি সমতটের ছ্বিজ রামর্দেব।
এককালে সার বাঙ্লায় অগ্ষ্ঠিত জনপ্রিয় মঙ্গলধর্ম ও মঙ্গলকাব্য ব্যক্তিম্বার্থে
সীমাবদ্ধ হয়ে জনসমাজে এই্বর্য, প্রতাপ ও অঙ্গলের ছায়। বিশ্তার করেছিল ।
এরই ফলে ধীরে ধারে প্রেমের আখ্যান সং'লিত কৃষ্ণলীলার প্রতি সাধারণ
মানষের আগ্রহ, যথার্থ ধর্মের ও নবজীবনের জন্ত তীব্র ব্যাকুলতা এবং অবতার-
রূপ মহামানবের আবির্ভাব কামন।। এরই ফলে “পরিজ্রাণায় সাধৃনাং বিনাশায়
১২ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
চ ছুদ্ধৃতাং ধর্মসংস্থাপনার্থায়” মহাপ্রভূর আবির্ভাব । সুতরাং শ্রীচৈতন্টের প্রকাশ
আকম্মিক নয়, কার্ষকারণস্থত্রে আবদ্ধ। তিনি সাধারণ মানুষের জীবনের মহত্তম
মূল্য নির্ধার করলেন, এশ্বর্ব এবং প্রতাপের আস্কালনকে বশীভূত ক'রে মূল্যহীন
প্রতিপন্ন করার পথ দেখালেন, স্বার্থসর্বস্ব বুদ্ধিকৌশলে চালিত জীবনধাত্রাকে
তিরস্কৃত ক'রে, ভাবলোকে নিমজ্জিত ক'রে পরমানন্দময় নবজীবন দান করলেন।
অদ্বৈতাচার্য এই পীড়িত জনসাধারণের প্রতিনিধি হয়ে তাদের বাসনাকেই
প্রকাশ করেছিলেন। তারপর প্রান ছু'শতাব্বী ধ'রে সে কী ভাবের
আলোড়ন, কী জীখনোচ্ছ।স, কী আশ্চর্য স্ুম্ম বিচির বাসনার স্ফুরণ, কী মে
উদার জীবগ্ুক্তি ! এই মুক্তি নিঃসন্দেহে বুদ্ধি খেকে ভাবের; আস্মরী বৃত্তি
থেকে দেবী সম্পদের , দ্ত, প্রতাপ, এশ্বর্য থেকে ব ধ'ণা, ক্ষমা ও প্রেমের | একটি
মন্ত্রেই মহাপ্রভু যুস্থিত, দীন অসহায্র জনতাকে দেবতাব মর্াদাষ উন্নীত ক'রে
ধিলেন-_দে হল নামমন্ত্র। পু নয়, অন্ুষ্ঠঠন নয়, ভীতভাবে কোনে। শাঞ্রের
বিধান অহ্ুসবণ নয়, শুধু নামে রুচি ঘটলেই আচগাল সকলেই দেবজীবনের
আঁধকারী হতে পারনে, জীবনের শ্রেচ কাম্যব্তর দ্বার আপনা থেকে উনুক্ত
হয়ে যাবে_ বুদ্ধদেবের পর এ আর এক আশ্চর্য নব মানবধয । এশ্বর্ে ও বুদ্ধি-
কৌশলে সমাজে যাব! উচ্চাসন লাভ করেছিল তাদের হাতে লাঞ্ছিত ও নিপীড়িত
মনুষ্যত্বকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত যিনি কবলেন ভিন যে নরদেহধারী ও আতর
ঈশ্বর এ বিষয়ে সন্দেহ কী?
ধর্মের গ্লানির অন্ত পুষ্ঠ] হ'ল জীবনের গ্লানি_ উগ্রস্থার্থনিষ্ঠ বৈষয়িকতা।
তখনকার নবদ্বীপ এবং মোটামুটি খহর-অঞ্চল একশ্রেণীর ধনী ও বিলাসী মানুষের
জীবনযাপনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। এরা সম্পদ বিত্ত সঞ্চয় করলেন কীভাবে
ত] বুঝতে হ'লে ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তু'কর অশ্ব ও তরবারি
কিছুকাল ধ'রে বাঙলার গুরুত্বপূর্ণ নগর, বিহার এবং রাজশক্তির কেন্ত্রম্বরূপ
দেবালয়গুলির উপর আক্ষালিত হয়ে শ্রান্ত হ'লে পর এবং বিদেশী শাসকদের
শারস্পরিক কলহ ইত্যাদি কতকটা প্রশমিত হ'লে পর যখন স্থায়ীভাবে দেঁশ-
শাসনের প্রয়োজন অন্তত হ'ল তখন প্রতিষ্ঠাবান্ হিন্দুর্দের ডাক পড়ল।
এতিহাসিকেরা ইলিয়ান শাহী বংশের রাজত্বের প্রারভ থেকে বাঙলার
, আপেক্ষিক স্বাধীনতা ও শাস্তি-শৃঙ্খলার সন ধরেছেন। কিন্তু পূর্ব-পশ্চিম-
উত্তরে বিভক্ত গোঁড়-বাঁওলার যথার্থ শাসনকার্ধের প্রারস্ত কিছু আগে থাকতেই
ধর! যেতে পারে। সে যাই হোক, শ্রীষ্টয় চতুর্দশ শতকের প্রারভ থেকেই তুকি-
আফগানদের সঙ্গে সঙ্গে বহু হিন্ুও রাজদরবারে প্রতিষ্ঠী লাভ করতে থাকেন
এবং বৈণেশিক শাসনের সহায়ক হন। জায়গীর-জমি এবং খেতাব নিয়ে এরাই
ক্রমশ: গ্রাম-সমাচ্ছন্ন বাঙলার নেতা হন এবং সমাঞ্জনীতি অর্থনীতি খিদ্তা
প্রভৃতির ধারক ও রক্ষক হতে থাকেন। পঞ্চদশ শতাব্দীতে এদের মহিম।
আরও বিস্তৃত হ'লে, সাধারণ জনের অস্থপাতে সংখ্যায় মুষ্টিমেয় হয়েও, সেকালকার
উচ্চ মধ্যবিত্ত লে একটি শ্রেণীর হুগ্টি এর] সম্ভব করেছিলেন। হুসেন শাহের
রাজত্বকালে পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষে এরকম কিএ ভূম্যধিকারী এবং রাজ-
কর্মচারীর পরিচয় আমর পাচ্ছি, এদের কেউ কেউস্থানীয় এলাকার শাসনের
কাজও করতেন। বুন্ধাবন দাসের চৈতন্যভাগবতে উল্লিখিত এদের কয়েকজনেব
নাম হল পুরন্দর খাঁ, স্থবুদ্ধি রায়, শতানন্ন খাঁ, বুদ্ধিমন্ত খা, রামচন্দ্র খাঁ, হিরণা,
গোবর্ধন ; ন্বয়ং রূপ, সনাতন, এদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বাকলার জমিদার এবং
আরও বনু ভূ'ইয়। ও ুন্ুকপতি | রাজা এবং প্রজার মধ্যবর্তী এরকম সম্প্রধায়ের
অস্তিত্ব পূর্বেকার ইতিবৃত্তে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না, যদিচ ধনবান্ বণিক, শ্রেষ্ঠ
এবং রাজকর্মচারীর কিঞ্চিৎ অন্তিত্ব তখনও অনুমান কর! যায়।
কতকটা যেমন এখনকার কলকাতা, তেমনি সেকালের নবদ্বীপ পণ্তিত ও
ধনী ব্যক্তিদের প্রতাপ ও এখর্ের লীলাভূমি হে উঠেছিল। অশ্মান, নবদ্বীপ
ছাড়া অন্তান্ত নগর-কেন্দ্রেও অন্ধরূপ পরিস্থিতি গড়ে উঠেছিল। নৃতন শাসন
ব্যবস্থায় সংবধিত লব্ধভূমিবিত্ত এই সব ব্যক্তি রাজদরবারের বিলাসিতা
অন্থসরণ করতেন, বিবাহে অশ্প্রাখনে যৎ্পরোনাস্তি এঙ্বর্য প্রদর্শন করতেন আর
ধর্মেব নামে চণ্ডী-মনসী-যগ্ভীপুজ। সাড়ম্বরে নির্বাহ করতেন। জীবিক1-ব্যপদেশে
অথব। আরও নান! কারণে এদের পিছনে বিশ-পঞ্চাশজন হীনবিত্ত মান্য স
সময়েই ঘুরতেন । দোলায় অথব। ঘোড়ায় চ'ড়ে ছড়া এর। রান্তায় বের হতেন
না। নিসেন্দেহে এদের মধ্যে দয়ালু ভালে? মান্ুয কিছু কিছু ছিলেনই, কি
রূপ-সনাতনের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার মত (“জীব পশু মারি সন বাকল] কৈল খাস”)
নিঠুর দর্পা ব্যক্তিরও অভাব ছিল না। সমাদর বৃন্দাবন দাস এদেরই বনাগ্
বলেছেন__
দস্ত করি বিষহরি পূজে কোন জনে।
পুত্তলি করয়ে কেহে। দিয়া বহু ধনে ॥
বিষয়-নুখেতে সব মজিল সংসার | ॥*
১৪ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
সকল সংসার মৃত ব্যব্হার-রসে | **
জগৎ প্রমত মিথা। ধনপুত্র-রসে | **
তারে বোলে স্থকৃতি যে দোল] ঘোড়। চডে
দশ বিশ জন যার আগে পাছে লড়ে ॥ **
নানারূপে পুত্রাদির মহোৎসব করে।
দেহ-গেহ ব্যতিরিক্ত আর নাহি স্ফরে ॥-. ইত্যাদি
সমাজ-জীবনে যে পরিমাণে কামকাঞ্চনময় বৈষয়িকতার বুদ্ধি, সেই পরিমাণে ধর্মের
অবনতি । শহ্রাঞ্চলে অভিজাত শ্রেণী এবং তাদের অন্কারী সাধারণ য।চষ,
আর গ্রামাঞ্চলে শিক্ষাহীন, ভূমিবিত্তহীন এবং ধর্ষের আশ্রয় থেকে বঞ্চিত অগণিত
নর-নারী-_-এই হ*ল পঞ্চদশ এবং প্রথম যোভশ শতাব্দীর বাঙলার অবস্থা |
ধর্মের গ্লানির তৃতীয় পরিচয় হ'ল সেকালের বিদ্যার এই্বর্ব। বহিরঙগদৃষ্টিতে
বিদ্যাবুদ্ধির প্রকাশ প্রশংসনীয়। কিন্তু অস্তরঙ্গে ত1 ভয়ংকর, যেহেতু বিদ্যার
প্রতাপও লোককল্যাণ-বিরোধী । পূর্বে আমর। দেখলাম তুকি আক্রমণের
প্রাথমিক সংঘাতের অবস্থা অতিক্রান্ত হ'লে উচ্চবর্ণের হিন্দুর রাজ্যশাসনের
কাছে প্রবেশাধকার পেতে ল।গলেন। এর অনিবার্ফলরূপে নব ব্রাক্গণ্য
সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন ঘটতে লাগল। বাঙলার প্রধান নগর ও জনপদ্দগুলিতে
সংস্কত শিক্ষা এবং ভ্তাষ, স্থৃতি, বেদাস্ত, ব্যাকরণ, অলংকার, কাব্যের চচা
নোতৃন ক'রে প্রারন্ধ হ'ল। চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতাবীতে ভাগীরথী-পদ্মাতীরবর্তী
অঞ্চলগুলিতে রাজা অথব] ভূম্যধিকারীর অনুগ্রহে পুষ্ট বহু চতুষ্পাঠী গ'ড়ে ওঠে।
ভারতের পূর্বাঞ্চলে জ্ঞানচর্চার পীঠতমিই ছিল বারাণসী-মিথিলা-নবন্ধীপ।
বাঙ্লায় নব্যন্তায়ের প্রতিষ্ঠাতা রঘুনাথ এবং মীমাংসক ও ম্মার্ত রঘুনন্দন
সেকালের বনু অধ্যাপকের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এক এক জন ছিলেন মাত্র । অছৈতবাদী
সার্বভৌম ভট্টাচার্য, তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা বিগ্যাবাচম্পতি, তাদের পিত। খ্যাতিমান্
বিশারদ, কাশীবাসী মধুস্দন বাচস্পতি প্রভৃতি সেকালকার বিশ্রুত বাঙালি
পণ্ডিত। এদের এঁতিহা ষোড়শ-সঞ্চদশ শতাব্দী পর্বস্ত বাহিত হয়েছিল তাহ্টিক
রুষ্ণানন্দ এবং অছৈতসিদ্ধির নির্ণেত) মধুস্থদূন সরম্বতীর পাগ্তিত্যে। লক্ষণীয় এই
যে, পঞ্চদশ শতাব্দীর চতুপ্পাঠীগুলি পাণ্তিত্যের সঙ্গে দাভিকতারও আশ্রয়স্থল হয়ে
দাড়িয়েছিল। বিদ্যার উন্নাসিকতায় পগ্ডিতবর্গ নিজেদের জনসাধারণ থেকে
উচ্চশ্রেণীর জীব ব'লে মনে করতেন, এমন কি গঙ্গার ঘাটে নিজেদের মধো
শ্রচৈতন্তের আবির্ভাবে সমাজ-পরিবেশ ১৫
সাক্ষাৎকার ঘটলেও কেউ কারুর সঙ্গে শিষ্ট সভ্ভাষণাদি না ক'রে পাশ কাটিয়ে
চ'লে যেতেন। বৃন্দাবন দাস বলছেন, এ'রাও অর্থবান্ ব্যক্কিদ্দের মতই বিষ্ার
এন্বর্ষে প্রতাপবান্ ছিলেন। অথচ বৃত্তি-প্ী-টীকা-ভাস্ত ছাড় আর কিছুই
জানতেন না, শু পাণ্ডিত্য এবং বুদ্ধির কসরৎ অবলম্বন ক'রে জনসাধারণ থেকে
নিজেদের দূরত্ব বজায় রেখে জীবন কাটাতেন। শ্রীগৌরাঙ্গ তার কৈশোরে ও
তারুণ্যে বিদ্ভার যে গুদ্ধত্য প্রকাশ করতেন, সে এ পণ্ডিতদেরই চারিজ্রের
মনস্তাত্বিক অজ্ঞাত অন্থকরণে। তার দিগ্থিজয়ী-পরাঁভব সত্য ঘটন৷ না হলেও
এরকম ঘটনার বাস্তব সভাবাতা অস্বীকার করা যায় না। পঞ্চদশ শতাব্দীর
এই নোতুন সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে, এই অমানবীয় বিষ্াশক্তি সঞ্চয়ের সঙ্গে
জনসমাজ পূর্বে পরিচিত ছিল না। নিঃসন্দেহে একে সামাজিক গ্লানি বলা
চলতে পারে, আর যেহেতু জীবনাচরণে নীতিহীন' অমানবীয়তাই অধর্ম, সেই
হেতু গৌড়ীয় বৈষ্বধর্ষের ভূমিকায় এবং চৈতন্যজীবনী গ্রন্থে পুনঃ পুনঃ কথিত
ধর্মের নি এবং অধর্মের অত্যরখান নিরোধের জন্য ঈশ্বরম্ববূপ শ্রীচৈতন্যের
আবির্ভাবের তত্বটিকে এ অবস্থার সঙ্গে স্বচ্ছন্দ মিলিয়ে দেখা যায়। বুন্দাবনদাঁস
এই ভাবেই চৈতন্যাবতারের কারণ নির্দেশ করেছেন এবং বলেছেন যে, সমাজের
এই অসহনীয় অবস্থাই অঠ্বত আচার্ষকে ঈশ্বরাবিতভাব ঘটানোব জন্ত তগশ্ায়
প্রবৃত্ত করেছিল।
এই ধর্মের গ্লানি বধিত হতে হতে কিভাবে দরিদ্র এবং সৎ ব্যক্তির জীবনকে
আহত করছিল তার পরিচয় মহাপ্রতুর পারিবারিক অবস্থার মধেই পাওয়।
যাবে। জীবনীকার প্রত্যক্ষদর্শী মূরারি গুপ্ত এবং পরোক্ষদর্শী বৃন্দাবন দাস
উভয়েই চৈতন্য-জনক জগন্নাথ মিশবকে “ন্থুদরিদ্র' বলে বর্ণনা করেছেন-_“ঘরে
মাত্র হয় দরিদ্রতার প্রকাশ”। গৌরাঙ্গ-অগ্রজ বিশ্বরূপের গৃহত্যাগের পর
চিন্তিত হয়ে যখন মিশ্র-পুরন্দর গৌরাঙ্গের পড়াশুন বন্ধ ক'রে দিলেন তখন
তিনি শচীদেবীর অন্থযোগের জবাব নিয়লিখিত ভাবে দ্িয়েছিলেন__
পাগ্ডিত্যে পোষয়ে কেব! কহিল তোমাতি ॥ **
সাক্ষাতেও এই কেনে না দেখ আমাত |
পড়িয়াও আমার ঘরেত নাহি ভাত ॥
প্রচৈতন্য নিজে আগ্রহশ্ীল হয়ে যে লম্ষ্মীদদেবীকে বিবাহ করেন তিনিও অতি
'নবরিত্রের কন্তা। সম্বদ্ধ নির্ণয়ের কালে লক্ষমীদ্দেবীর পিত। ঘটককে বলছেন-_
সভে এক বচন কহিতে লজ্জা পাই।
আমি সে নির্ধন, কিছু দিতে শক্তি নাই ॥
কন্ত। মাত্র দিব পঞ্চ হরীতকী দিয়! ।
এই আজ্ঞা সভে তুমি আনিবে মাগিয়া ॥|
প্রথম বিবাহের পর শ্রীচৈতন্যের পূর্ববঙ্গ ভ্রমণ সম্ভবতঃ অর্থাহরণের জন্য ।
শ্রীহট্রের পুরুষানুত্রমাগত পূর্ববীয় শিষ্যদের গৃহে তিনি গিয়েছিলেন এই অন্রমান
হয়। যে সব পরিকর নিয়ে নবদ্বীপে শ্রীচৈতন্ের কীর্তনবিলাস ও ভক্তিখর্মের
প্রকাশ তাঁরা কেউই ধনী ছিলেন ন।, অধিকাংশই ম্বল্পবিত্ত। খোলাবেচা শ্রীধর
অথবা শক্রান্বর ব্রন্চারীর মত নিতাস্ত নিংস্ব বাক্তি মহাপ্রভূর সর্বাধিক অনুগ্রহ
লাভ করেছিলেন । হরিদাঁস ঠাকুব জাতিতে মুসলমান হলেও মহাপ্রভু তাকে শ্রেষ্ঠ
সমাদর প্রদর্শন করেছিলেন । জগাই-মাধাই তখনকাব নবদ্বীপের বিষয়ী এবং
অর্থবান্ ব্যক্তিদের প্রতিনিধি-স্থনীষ ছিলেন এমন মনে করা যার । মানবতাময়
ভক্ভিধর্ম, যাতে 'চগ্ডালোইপি দ্বিদশেষ্ঠঃ, পরিগণিত হয় তার বিবোধিতা যে
কুসংক্কার-সম্থল গ্রতিষিত-স্বার্থ বিষয়ীরা করবেন তাতে সন্দেহ নেই। আর যে
সব বিশুবান্ ব্যক্তি মহাপ্রভুর পাধ্দ হবাব সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন, যেমন,
পুগতরীক বিদ্যানিধি, রঘুনাথ দাস, রূপ-সনাতন, রায় রামানন্দ, তার। সর্বন্ব
ত্যাগ কেই প্রেমধর্মের পথিক হতে পেরেছিলেন । মনে রাখতে হবে মহাপ্রভু
সাক্ষাংদানের ছারাও রাজ! প্রতাপকদ্রকে অনুগ্রহ করেননি । প্রতাপরুদ্র
সম্পর্কে ভার উক্তি হ'ল-_
যপি প্রতাপরুদ্র সবগুণবাঁন।
তাহারে মলিন রে এক রাজ নাম !। ( তণন্য-চরিতামূত )
মহাপ্রভুর নিতান্ত অন্তরঙ্গ সঙ্গী রায় রামানন্দের ভ্রাতা গোপীনাথ পট্টরনায়ক
রাজকাধে গুরুতর ত্রুটির জন্য মৃত্যুদণ্ডের সম্মুখীন হ'লে এবং সাবভৌম ভট্টাচার্য
কর্তৃক পুনঃ পুনঃ অন্ুকদ্ধ হ'লে তিনি এবিষয়ে প্রতাপরুদ্রকে অনুরোধ করা
ধর্মবিরুদ্ধ বলে মনে করেছিলেন এবং তীব্র বিরক্তি ও আক্ষেপ প্রকাশ
করেছিলেন। মনে পড়ে, মহা প্রতৃর স্বরূপে আত্মপ্রকাঁশে নবছীপবাসী ভক্তবুন্দ
যেদ্দিন উল্লসিত এবং আচার্য অছৈত নিঃসংশয়, সেদিন আচার্য মহাপ্রভৃকে কী
নির্দেশ দিয়েছিলেন ব' তার কাছে কী প্রার্থন! জানিয্েছিলেন__
অদ্বৈত বোলেন "ষদ্দি ভক্তি বিলাইবা
স্ত্রী শৃত্র আদি যত ঘূর্ধেরে সে দিবা ॥
শ্রীচৈতন্তের আবির্ভাবে সমাজ-পরিবেশ ১৭
বিষ্তা ধন কুল আদি তপন্যার মদে।
তোর ভক্ত তোর ভক্তি যে যে জনে বাধে ॥
সে সব পাপিষ্ঠ দেখি মরুক পুড়িয়। |
চণ্ডাল নাচুক তোর নামণ্ডণ গাইয়1॥
অছৈতের বাক্য শুনি করিল। হুংকার |
প্রভু বোলে “সত্য যে তোমার অঙ্গীকার |)
এ সব বাক্যের সাক্ষী সকল সংসার ।
যুর্খ নীচ তি কৃপা হইল তাহার |
চণ্ডালাদি নাচয়ে প্রভুর গুণগ্রামে ।
ভষ্ট মিশ্র চক্রবর্তী সভে নিন্দ1 জানে ॥
( চৈতন্যভাগবত, মধ্য-_যষ্ঠ )
বাঙলার সমাজ-পরিবেশের এই যে ভূমিক। গ্রস্থন করা গেল এ থেকে
এমনতব সিদ্ধান্তে য্দ কেউ আসেন যে পূর্ণভগবান্ কৃষ্ণের লীলাবাদকে আমরা
উপেক্ষা করছি, তাহ*লে সে সিদ্ধান্ত সমীচীন হবে ন!। লীলাবাদের তত্ব
এখানে উল্লিখিত হ'ল না, যথাস্থানে হবে, এই মাত্র । ঈশ্বরীয় নিজ লীলাবিলাস
তার যুগধর্মপালন থেকে স্বতন্ত্র নয়। একটি থাকলেই অন্যটি থাকছে। বুন্দাবনের
গোম্বামীগণ যদিও কৃষ্ণের প্রেমরস আম্বাদনের আগ্রহকেই তার নরদেহ গ্রহণের
মুখ্য কারণ বলেছেন এবং অস্থর-মারণাদ্ির দ্বারা অথব। নামপ্রেম-প্রবর্তনের দ্বার
যুগধর্ম রক্ষাকে আমন্বষঙ্গিক কার্য বলে অভিহিত করেছেন, তবু আহুষঙ্গিক কার্ষের
প্রয়োজনীয়তা তারা সম্যক্ স্বীকার করেছেন। বস্তুতঃ লীলার মুখ্য এব” গৌণ ভেদ
তত্বের দিক থেকে কর] হয়েছে মাত্র । ব্যবহারিক দিক থেকে, ভক্তের সাধন ৩ক্তি
এবং কৃষ্ণপ্রেমান্ছভবের দিক থেকে এর কোনে প্রয়োজনীয়তা নেই | পরব্যোমেই
হোক আর মর্যেই হোক, লীলাময় কৃষ্ণের নিগৃঢ় "নিজ কাধ তারই মধ্যে সীমিত,
এ জেনে আমর! তার নিত্যস্বরূপের একটা পরিচয় পাই মাত্র, কিন্তু যে লীলায়
তিনি মানুষের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তাই-ই আমাদের আয়ত্গম্য, আমার্দের কাছে
তাই-ই তার সর্বস্ব। এর অতিরিক্ত যা, ত। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ভগবানের নরদেহে অবতীর্ণ হওয়ার ছটি কারণের মধ্যে অস্থুর সংহারের দ্বার]
ভূ-ভার হরণের চেয়ে মানবিকতাময় নবধর্ম প্রচারের উপরই জোর দেওয়া হয়েছে
এইমাত্র । ধর্মপ্রবর্তনকে নিতান্ত গৌণভাবে দেখ। হয়নি, যেমন-_
এ
১৮ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
যে লাগি অবতার কহি সে মূল কারণ ॥
প্রেমরসনির্ধান করিতে আস্বাদন ।
রাগমার্গ ভক্তি লোকে করিতে প্রচারণ | * *
ব্রজের নির্মল রাগ শুনি ভক্তগণ।
রাগমার্গে ভজে যৈছে ছাড়ি ধর্মকর্ম ॥ * *
ছুই হেতু অবতরি লঞা৷ ভক্তগণ।
আপনে আশ্বাদে প্রেম নাম-সংকীর্তন ॥
সেই দ্বারে আচগালে কীর্তন সঞ্চারে।
নামপ্রেম-মাঁল। গাথি পরাঅল সংসারে ॥ * *
স্থথরূপ কৃষ্ণ করে স্থখ আস্বাদন।
ভক্তগণে স্বখ দিতে হলাদিনী কারণ ॥ ইত্যাদি, চৈ-চ
বস্তত: বৃন্দাবনবিহারী কৃষ্ণের রাগাত্সিক ধর্মের প্রচার এবং নবদ্ীপচন্দ্রের নাম-
সংকীর্তনের দ্বার! আচগ্ালে গ্রীতিময়ী ভক্তির সঞ্চার তাদের স্বকীয় লীলার সঙ্গে
একত্র জড়িত, সুতরাং পৃথক দেখার অবকাশ নেই। ইন্ট্িয়-মন-বুদ্ধির বিচিত্র
অভিনিবেশ, স্থ-ছুঃখ মিলন-বিরোধ, জীবধর্ম ও প্রজ্ঞান, স্থল ও স্ক্ম নিয়ে
চলেছে যে বৃহৎ মানষজীবন তা-ই ধর্মের আশ্রয়ভূমি ৷ হৃষ্টি নিয়ে তার যে লীল।
তার মূলে রয়েছে জীব, তাঁরই বিশেষ শক্তি । সৃতরা" নরলীলায় তার অন্যতম
সম্পর্ক মানুষেরই সঙ্গে, আর এতে মানুষের পক্ষে পরম পুরুষার্থ হ'ল প্রেমভক্কি-
লাভ। যে অবসরে এই নবধর্ম প্রবর্তন করার জন্য নরদেহে তিনি অবতার
করেন, সেই ক্ষণটিকে ছুই শ্রেণীর মাহ্ছষের সংঘাত এবং স্বার্থস্কীত উগ্র ব্যক্তিত্ব-
বারের দ্বারা সমাজ-স্থিতির নিগ্রহ ব'লে আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে আমর
দেখছি। জীবনের গ্লানিতেই ধর্মের প্লানি এবং অধর্মের অভ্যুত্থান অঙ্কুভব করছি।
॥ ভ্রীতিতন্দ্যেক্স ন্বির্ভাবে্প সহান্্কণ শব মীস্স পুর্ভুঙ্মি ॥
বৈষ্ণব মহাজন বহুনিদ্দিত কলিষুগকে নমস্কার করেছেন 'প্রণমহে! কলিযুগ
সর্বযুগসার” বসলে । কলিযুগের একটি বিশেষ অবস্থাতেই যগ্যপি মহাপ্রভুর আত্ম-
প্রকাশ ও “আপনি আচরি ভক্তি” জীবকে শিক্ষাদান, তবু পূর্ব থেকে তার
আগমনের প্রস্ততিপর্ব চলেছিল, প্রায় লোকচস্কুর অন্তরালে । এই পর্বকে তিনটি
ভাগে বিভক্ত ক'রে দেখ যেতে পারে। (১) আবির্ভাবের অবাবহিত পূর্বেকার
অর্থাৎ চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকের সীমিত 'ভক্তিভাবুকতা ও ধর্মের গ্লানি বিষয়ে
ভক্তবুন্দের আক্ষেপ, (২) দশম থেকে ছাদশ শতাব্দীর মধ্যে ক্ফুর্ত বাঙল! ও
সহির্বাঙলার ভক্তিরসিকতণ ও দার্শনিক চিন্তনের ধারা, (৩) তারও পূর্বেকার
ভারতীয় কৃষ্ণ-ভক্তি।
(১) চৈতন্যভাগবতের বর্ণনাক্রমে মহাপ্র্তুর আত্মপ্রকাশেব পূর্বে অর্থাৎ
ঈশ্ববপুবীর কাছে প্রেরণা গ্রহণ ক'রে গয়| থেকে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে নবন্বীপে
একটি সংকীর্ণ গোঠির মধ্যে ধর্ম আচরিত হ”ত। এই গোঠির কেন্দ্রে ছিলেন অছৈত
আচার্য । তিনি গীতা-ভাগবত পাঠ করতেন ও কৃষ্চভক্তির
অনুকূলে ত' ব্যাখ্যা করতেন। 'ভক্তিব আবেগে তার দেহে
বিভিন্ন বিক্রিয্ন। দেখ। যেত । ছীবন ও ধর্মের তাৎকালিক
মানি অন্থভব ক'রে তিনি মর্মপীড়। বোধ করতেন এণং নরদেহে অবতীর্ণ হবার
চন্য কৃষেের কাছে ব্যাকুল কণ্ঠে প্রার্থন। জানাতেন। নি যে বর্ণাশ্রমবিরোধী
ভক্তিপর্মের দৃঢ় স্তভ ছিলেন তান প্রমাণ পাওয়া যায় তার হরিদাস ঠাকুরকে
স্থগৃহে আশ্রয় দেওয়ার মধো। নুপলমান হরিদাস ঠাকুর ঠ১তন্য-পূর্ব হরিভক্তির
একটি আশ্চর্য দৃষ্টান্ত । নামে-অনবক্তির এত বড় পরিচয় মহাপ্রতুর আবির্ভাবের
পরেও দেখ! যায়নি । তিনি স্ফী "ভাবুক ছিলেন । কলে তাকে আশ্রয় দিয়ে
ব্রাহ্মণা সমাজ থেকে প্রত্যাশিত বাধার সম্মুখীন আচার্ধকে হতে হয়েছিল + কিন্তু
তিনি এ সমাজকে ধর্মের উধ্বে স্থান দেননি । এদিকে নবদ্বীপে কীর্তনভজনে
রত লক্ষ্মীনানায়ণের প্রৌঢ় সেবক শ্রীবাস, শ্রীচৈতন্যের আবাল্য সঙ্গী মুকুন্দ
এবং গর্দাধর পণ্ডিত আর রামোপাসক মুরারি শ্রীচৈতন্তের পূর্বেই ভক্তির পথ
অনুসরণ করেছিলেন। মহাপ্রভু যখন ব্যাকরণেই নিমগ্র আছেন এবং মুকুন্দ ও
মুরারিকে ব্যাকরণের ফাকি জিজ্ঞাসা করে বিব্রত করছেন তখনই তার ধাগ্নিক
গ ভক্ত। তাঁর *উপরের ক্লাসের ব্যাকরণপাঠের সঙ্গী মুরারিগুধ যোগ-বাশিষ্ঠ
আন্ৈত আধাস
মুরাগি
২০ বৈষ্ণব-রস-প্রকাঁশ
মতের রামের সেবক ছিলেন। ফলত: দেখ যায়, মহাপ্রভুর পূর্বে রামায়েত
সম্প্রদায়ের ভক্তিভাবুকতাও এদেশে প্রচলিত ছিল। বিগ্রহ হিসাবে কৃষ্ণের
পূজা না! ক'রে এর রামের পৃজা। করতেন, কিন্তু ভক্তিভাবের দিক দিয়ে বৈষ্ণব
সম্প্রদায় থেকে স্বতন্ত্র ছিলেন না। এদের সকলের সহজ ভক্তিভাঁবকে নবদ্বীপের
এশ্বর্যবাদী ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের স্থনজরে দেখতেন না এবং নানাভাবে বিদ্সিত
করারও চেষ্ট! করতেন ।
পঞ্চদশ শতাব্দীতে বাঙ্লায় প্রেমভক্তির অন্য একটি সংকীর্ণ নিঝরও
সকলের অগোচরে ধীরগতিতে প্রবাহিত ছিল। এই নিঝরের জন্ম শ্রীমৎ
মাধবেন্ত্র পুরী থেকে। শ্রীচৈতন্ত একে ভক্তিরসের আদি স্ত্রধার ব'লে
উল্লেখ করেছিলেন । যে সব অন্ুভাব, দৈহিক বিকার ও
চেষ্টা (গৌড়ীয় বৈষব মতে “সাত্বিক ভাব”) অস্তরস্থ
প্রেমভক্তির অস্গমাপক, সেগুলি মাধবেন্দ্রপুরীৰ মধ্যে পূর্ণ বিকাশ লাভ
করেছিল। চৈতন্যভাগবত এবং চৈতন্যচরিতামুত উভয় গ্রস্থেই লিখিত আছে
যে মেঘ-দর্শনে কৃষ্ণবিরহভাব উদ্দীপিত হওয়ায় তিনি যুছিত হয়ে পড়তেন । *
পুরী সম্প্রদায়ের ঈশ্বরপুরী এবং পরমানন্দপুরী এ ছুই ভক্তিভাবুক তার শিশ্কয
ছিলেন। এ ছাড় তিনি কেশবভারতী, অদ্বৈত আচার্য ও পুণুরীক বিদ্যানিধিকে
প্রেমভক্তি বিষয়ে মন্ত্রদীক্ষা দেন। মহাপ্রভু নিত্যানন্দের তিনি দীক্ষাণ্ডর ন
হলেও তাঁকে প্রেমভক্তি বিষয়ে প্রবল প্রেরণ। দিয়েছিলেন ; আর এই সব
মহাপুরুষ শ্রীচৈতন্যে সন্যাস গ্রহণের পূর্বেই প্রেমভক্তিব একটি আবহাওয়'
বাঙল। দেশে যথাসাধা সঞ্চারিত করছিলেন। ঈশ্বরপুরীর কাছ থেকে প্রেরণা
নিয়ে শ্রীচৈতন্তের গয়া থেকে প্রত্যাবর্তনের পর শ্রীচৈতন্ত-অদ্বৈত-হরিদাঁস-
শ্রীবাসাদির সঙ্গে মিলিত হলেন নিত্যানন্দ এবং পুগুরীক বিদ্ভানিধি।
পরমানন্দপুরী নীলাচলে মহাপ্রভুর সঙ্গে মিত হন। দেখা যায়, এতদিন
একটি কেন্দ্রবর্ত ভাবস্থজ্র ও মধামণির অভাবে বিক্ষিপ্ত মণিখগ্তগুলি সংগ্রথিত
হয়ে দিব্য মালো পরিণত হুতে পারছিল না। শ্রীচৈতন্যের উন্নতোজ্জলরসময়
সীমাহীন ভাবপ্রকাশ হ্বর্ণকত্রের কাজ কবেছিল। কোন একটি পদে
মহাপ্রভৃর পূর্ববর্তী প্রেমিকরূপে নিত্যানন্দকে লক্ষ্য করা হয়েছে “প্রেমনদ্বী
নিতাই হৈতে, অছৈত তরঙ্গ তাতে, চৈতন্য-বাতাসে উলিল, | বাঙ্লায়
সী স্পা
মাধবেকন্দ্র পুরী
* মাধবেত্রীপুরীর কথ! অকথ্য কখন।
মেধ দরশন মাতে হয় অচেতন | ( চৈ-চ)
শ্রীচৈতন্তের আবির্ভাবের সহায়ক ধমীয় পূর্বতৃমি ২১
প্রেমের অভুত্ান সম্পর্কে এও ষথার্থ কথা। নিত্যানন্দ অহ্বৈতের যে প্রেম-
প্রবাহ নিজ গণের মধ্যেই সীমিত ছিল, গৌরকুষ্ণের আত্মপ্রকাশে ত। সীমার
বন্ধন ভেঙে মানবভূমিকে প্রাবিত করেছিল । শ্রীচৈতন্যের ভাববিলাস প্রকাশের
পূর্বেই শ্রীনিত্যানন্দে প্রেমের আবির্ভাব। তা ছাড়া বাঙলা দেশকে
মত্তহস্তী নিত্যানন্দই প্রেমসমূদ্দে নিমজ্জিত করেছিলেন । চৈতন্য-চরিতাষুতে
দেখি তিনি মহাপ্রভুর সঙ্গী হয়ে নীলাচল গিয়ে কিছুদিন অবস্থানের পর
মহাপ্রতৃর নির্দেশে ধর্মপ্রচারের জন্য বাওলায় ফিরে আসছেন। " বাঙ্লায় সহজ
'অন্ুভবযুক্ত রাগান্থগ। ভক্তির ধর্ম তিনিই স্থাপন করেছিলেন, দীনহীন সমাজে-
পতিত চগ্ডাল থেকে বিপ্রী সকলকেই প্রেমধর্মে দীক্ষিত ক'রে মর্যাদায় মণ্ডিত
করেছিলেন। * এই দানের মৌল আদর্শ শ্রচৈতন্তের হলেও এর বাস্তব
অধিকার নিতাই-এরই ঘটেছিল। এইভাবে দেখা যায়, মহাঁপ্রতৃর স্বব্ূপে
প্রকাশের পূর্বে বাঙলায় (এবং বহির্বজেও), সীমিত আকারে হলেও, ভক্তি-
ধর্মের একটি পরিমগ্ডল গড়ে উঠেছিল।
এ ধর্ম সহজ অহ্ুওব বা' সদয়ভাবুকতার ছিল ব'লে সেকালকার সাহিত্যের
মুখ্য অবলম্বন হয়েছিল। 'ীতগোবিন্দ', চগ্ীদাসের “কষ্ণকীর্তন” বিদ্ভাপতির
রাধাকষ্ণ লীল। বিষয়ক পদ এর অবিসংবাদী প্রমাণ, এ ছাড়া সম্ভবতঃ কৃতিবাসের
রামায়ণ অবলম্বনে প্রবতিত রামলীলা-গীত এবং মালাধর বস্থর ভাগবতান্থবাদ
শ্রীকৃষ্ণবিজয়” মহাপ্রভুর আবির্ভাবের অব্যবহিত পূর্বে ভক্তিভাবুকত প্রসারের
সহায়ক হয়েছিল। বর্ধমানের কুলীনগ্রাম কৃষ্ণভক্তির জন্য পূর্ব থেকেই প্রসিদ্ধ
ছিল। মালাধর বস্থর শ্রীরুষ্ণবিজয়ের প্রশংসাকালে মহাপ্রভূ কুলীনগ্রামের
কৃষ্ণভক্তি বিষয়ে প্রসিদ্ধিরও উল্লেখ করেছেন। ণ* ভাগবতের অপর বিখ্য1ত
অন্থবাদক হলেন মহাপ্রভুর বয়েজ্যে্ট রঘুনাথ আচার্ধ | & বৃন্দাবনপথে ভক্তসঙ্গে
1 মহাপ্রভুর দক্ষিণ ভ্রমণে যাত্রা এবং প্রত্যাবর্তনের যাঝখানেও স্স্ভবতঃ নিত্যানচ্দ বাঙগায়
চ'লে এসেছিলেন ।
* সহজেই নিত্যানন্দ কুকপ্রেমোদ্দাষ।
প্রভুর আভ্ঞার় কেল যাহ তাহ! দান ॥। ( চৈশ্চ)
1 কুলীনগ্রামীর ভাগ্য কহুনে না বার়।
শুকর চরায় ডোষ সেহে। কুক গায়।॥
£ নিগ্্িতা পুম্তিক1 যেন কৃষপ্রেমতরঙগিমী ।
শ্রমদূ ভাগবতাচার্ধে! গৌরাঙ্গা ত্য বল্পভঃ || (চৈ-্চ)
২২ বৈষ্ব-্রস-প্রকাশ
মিলন-রাসনায় মহাপ্রভু দক্ষিণভ্রমণের পর যখন গৌড়ে এসেছিলেন তখন প্রত্যা-
বর্তনের পথে বরাহুনগরে রঘুনাথ আচার্ষের সঙ্গে মিলিত হয়ে তার ভাগবতব্যাখ্য।
শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে ভাগবতাচার্য আখ্য। দেন। অন্ততঃ দ্বাদশ শতাব্দী থেকেই
সাহিত্যে অন্থরাগমিশ্রিত কৃষ্ণভক্তির দীপ্তি লক্ষিত হলেও চতুর্দশ-পঞ্চদশ
শতাব্দীতেই এর বিস্তার ঘটেছিল নিঃসন্দেছে । গীতগোবিন্দের রাধাসহ প্রণয়-
বিলাসে যে প্রেমধর্ষের ভিত্তি সাহিত্যিক বাওলায় স্থাপিত হয়েছিল ত1 আরও
দৃঢ় হ'ল চণ্ডীদাস এবং বিগ্াঁপতির “বিবিধ মতে” বণিত রাধাকৃষ্ণলীলায় । জয়দেব
গ্রস্থারভ্ভে “হরিম্মরণ করেছেন এবং গ্রস্থমধ্যে ভাগবতের দশমস্কন্ধে বণিত
রাসলীলাকে পৃর্ণতর করার অভিলাষ ব্যক্ত করেছেন, “কংসারিরপি স'সার-
বাসনাবন্ধশৃঙ্খলাম্। রাধামাধায় হৃদয়ে তত্যাঞ্জ ব্রজস্থন্দরীঃ ॥” প্রভৃতির মধ্যে '
রাধ। সহ প্রেমলীল।র বিস্তৃত চিত্র প্রদর্শনে চণ্ডীদ্াস এবং বিদ্যাপতিও ভক্তিধমে
নবীনতার দ্বার উনুক্ত করেছিলেন। রাধাপ্রেমের সুস্ম ভাবমুহূর্তগুলি প্রথম
এ'রাই ভালোভৰবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন । মহাপ্রভু তার অন্ত্যলীলায় জয়দেব-
চণ্তীদাস-বিদ্ঠাপতির লীলাগীতি শ্রবণ ক'রে তার চিত্তের বিরহরেশ অপনোদন
করতেন ।* চণ্তীদাস-বিদ্যাপতি যে লৌকিক প্রণয়-বিরহ চিত্রিত করেননি,
পূর্ণভগবান্ এবং অবতারী রুষ্ণের শক্তিসহ লীলাবিলাসই বর্ণন। করেছেন এবিষয়ে
বৈষ্ণব রমিকগণও একমত । তবে কবিরা ঠিক এ তত্বকে অগ্রে স্থাপন ক'রে
কাব্যরচনা করেননি । এ তত্ব তাদের আয়ত্তে না থাকা সত্বেও অনায়াসে
স্কুরিত হয়েছে।
আধুনিক একশ্রেণীর সাহিত্য-সমালোচকের মতে জয়দেব-বিষ্ঞাপতি-চণ্তীদ্দাস
( কুষ্ণকীর্তনকার ) ধর্মভাবুকতা নিয়ে রাধাকুঞ্ণলীলাপ্রসঙ্গের অবতারণা করেননি,
তার সাধারণ প্রেমের কাব্যই লিখে গিয়েছেন, নাম্ক-নাঘ্সিকা হিসাবে
কষ্ণরাধিক্কীকে অবলম্বন করেছেন মাত্র। তাদের এরকম
ধারণার মূলে ছুটি উপাদান কাজ করেছে_-এ'দের পদ্দসমূহের
কাব্যকলাগত রম্যতাসহ লৌকিক আবেদনের প্রবলতা
জয়দেব বিস্তাপতি
চণ্ীদাস
এবং সমালোচকদের পরিচিত এবং প্রত্যাশিত গৌড়ীয় বৈষব অতি স্ুচ্ু
পেশ টি টপিক?
+চণ্তীদাস, বিদ্ভাপতি, রায়ের নাটকগীতি,
কর্ণামৃত, প্রীগীতগো বিন্ব ।
রূপ রামানন্দ দনে মহাগ্রভু রাতিদিনে
গায় গুনে পরম আনন্দ (চৈ-্চ)
শ্রীচৈতন্তের আবির্ভাবের সহায়ক ধর্মীয় পূর্বসূমি ২৩
ভাববৈচিত্র্য সহ ধর্মীয় তাৎপর্ধের প্রতিপদদে অবিদ্যমানত। এবিষয়ে আমাদের
বক্তব্য এই যে, জয়দেব-বিষ্তাপতির রচনায় কাব্য এবং ধর্ম পরস্পরকে উপচিত
ক'রে একাত্মভাবে বিদ্যমান । বৈষ্ণবধর্ম নিতান্ত হৃদয়ভাবের ধর্ম বলেই, 'রষ্য।
কাচিছপাসনা*র ধর্ম বলেই পূর্ণ কাবামূতি লাভ করেছে। এ ধর্ম যূলে
রোমান্টিক কাব্যলক্ষণাক্রাস্ত। বংশীর্বনি শ্রবণে পুবরাগ, বূপবিহ্বলত,
অপ্রাঞ্চিতে এমনকি প্রার্থিতেও তীব্র বিরহ, কৃষ্চভাবনায় শ্রীমতীর কষ্শ্বভাব-
প্রাপ্তি, কুলগৌরব লঙ্া৷ আত্মমর্ধীদা! সব কিছু ত্যাগ ক'রে পথে যাত্রা--এ যেমন
রোম্যান্টিক কাব্যের বিষয় তেমনি বৈষ্ণব ধর্ষেরও। উপরি-উক্ত তিন কবি
শৃঙ্গাররসের বিস্তার ঘটিয়েছেন্ব বলেই তাদের কাব্য কেবল লৌকিক পর্যায়ে
পড়বার যোগ্য নয়। দেখতে হবে যে এরা যেমন ধর্মান্ছপ্রাণিত ছিলেন,
তেমনি উচ্চ কবিপ্রতিভারও অধিকারী ছিলেন। রমা প্রেমধর্ধ এবং রম্য
কাব্য যুগপৎ তাদের হৃদয়ে স্কুরিত হয়েছিল, আর স্থকবি ছিলেন ব'লে রসের
বিষয়টিকে তারা এত বৈচিত্র্যের সঙ্গে বরন ক'রে মানবিকতারও চূড়াস্ত
করেছেন। তাঁদের চিত্তে ধর্মপ্রেরণ! না থাকলে তারা লৌকিক কাব্যই
লিখতেন, কিন্ধ “কাগ্ছ বিনা গীত নাই” ব'লে বাধ্য হয়ে তার। কবিওয়ালাদের
মত কৃষ্ণকথা অবলম্বন করেছিলেন এ অভিমত শ্রদ্ধেয় নয়। সত্য বটে,
মহাপ্রভুর এবং বিশেষভাবে বুন্দাবনের গোম্বামীগণের ও িরিতামুতের'
পরবর্ত মহাজন-পদ্াবলীতে গৌড়ীয় বৈষ্ব ধর্মতত্বের যেমন পরিস্ফুট প্রভাব
দেখ যায় ঠিক তেমনটি এদেব ক্ষেত্রে ঘটেনি, কিন্তু তাই ব'লে ধর্মপ্রেরণার
অভাবও কল্পনা কর! যায় না। এপ্রতিষ্ঠিত তত্ব এবং বৈষ্ণবীয় রসবিবেচন
তখন ছিল ন] ব'লে তাদের রচনায় যা পাওয়। যায় তা সাধারণভাঁবেই পাওয়।
যায় এবং এজন্য প্রাচীন অলংকারশান্ত্নের অনুগত রচনাব নিদর্শনও তাঁদের
মধ্যে দুর্লভ নয় । অপরপক্ষে, ধার) গ্রতিপদে ধর্মীয়ত]। দেখতে চান তারা কি
জ্ঞানদাস-গোবিন্দদাসের রচনাতেই ত। সর্বত্র পাবেন? এদের এবং ষোড়শ-
সপ্তদশ শতকের পরদকারদের অনেক রচনাকেই স্বচ্ছন্দে ধর্মসম্পর্কহীন লৌকিক
রচনার পরধায়ভূক্ত করা যায়। অথচ, যেহেতু এর] চৈতন্য-পরবতণ সেজন্যই
সম্ভবতঃ কাকতালীয় ন্যায় অন্থলরণ ক'রে উক্ত সমালোচকের। এদের বিশুদ্ধ
মানবিকতা নির্ণয় করতে দ্বিধাগ্রন্ত হয়েছেন। দেখা যায়, রসের পোষকতার
জন্য চণ্ডীদাস-বিদ্কাপতির মত পরব্তণ বহু মহাঞ্জন পূর্ববত্ত সংস্কৃত কাব্যের উপর
ভর করেছিলেন। এমন ক্ষেত্রে যদি পূর্ববরতীদ্দের ধর্ষের অভাবের বিষন্ন চিন্ত1
২৪ বৈষব-রস-গ্রকাশ
করতে হয়, পরবর্তীদের ক্ষেত্রেও তে তা-ই করণীয় । অলংকারে, রাগবৈচিত্রোে
বিদ্যাপতি আমাদের মন হরণ করেছেন বলেই তিনি একেবারে লৌকিক কবি,
এমন ধারণ! সমীচীন নয়, যেমন নয় রাজসভার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল ব'লেই
তার কাব্যে অলংকার ও রীতিগত চমৎকারিতার অনুমান করা। আসলে এ
ধরনের সাহিত্য-সমালোচনা পক্ষপাতহীন রসবিচারের ফল নয়, মনগড়।
আত্মমাত্রলীন বিবেকহীন দর্শনের ফল। হরপ্রসাদ্দ শাস্ত্রী মহাশয় তার উচ্ছল
কাব্যরসিকত] নিয়ে প্রথম জয়দেব-বিগ্যাপতির ধর্মীয়ত। সম্বন্ধে সংশয় প্রকাশ
করেন। পরে রবীন্দ্রনাথ তাঁর একটি কবিতায় এবং নানান আলোচনায়
মহাক্নপর্দের কাব্যিকত৷ বিষয়ে উচ্ছবদিত অভিমত ব্যক্ত করেন। রবীন্দ্রনাথ
পদাবলীর ধর্মীয়তাকে অস্বীকার করেননি, নিজভাবে দেখেছিলেন এইমান্র।
তার অন্থুভবে মানবীয় প্রেমই মহৎ-ধর্ম, ভালোবাসাই পুজা, মানবিক নিঃস্বার্থ
আকর্ষণের মধ্যেই ধর্মের বীজ নিহিত রয়েছে এবং এই প্রেমের সীমান্ত বর্ণনা
ক'রে বৈষ্ণব কবির! অপূর্ব ধর্মের নিদর্শন দেখিয়েছেন । রবীন্দ্রনাথ তার স্বকীয়
ধর্মমতের অন্কূলে বৈষ্বধর্মের ব্যাখ্যা করেছেন মাত্র, পদাবল্লীতে ধর্মাক্ছভব নেই
একথ| বলেননি । যাই হোক, এই সব মতামতের প্রভাবে এবং ন্তন কিছু
বলার চাপল্যবশতই-_বিগ্যাপতি বিশুদ্ধ কাব্য নির্মাণ করেছেন, গীতগোবিন্দে
গীত মাত্র আছে গোবিন নাই-_এরকম অভিমত সাম্প্রতিক এক শ্রেণীর
সমালোচকের মুখরোচক বুলিতে পরিণত হয়েছে, বৈষ্ণব সাহিত্যের তদ্গত
অঙ্কভব অবহেলিত হয়েছে ।
কবি জয়দেব যে নিছক কাব্য নির্মাণ করেননি তা তার গীতগুলির ভূমিকা-
ক্লোক থেকে স্পষ্ট, ত1 ছাড়! বিভিন্ন কাকুকার্ধের সংকেতসহ ধার] গানগুলিকে
যথার্থভাবে শ্রুতিপখ থেকে মর্মে নিয়ে যেতে সমর্থ তারাই দেখবেন যে লৌকিকের
মধ্যে অলৌকিক পর্বদা স্ফৃতিলাভ করছে। কবি জয়দেবই রাধাপ্রেমতত্বের
প্রতিষ্ঠাতা । ভাগবতের রাসলীলায় প্রচ্ছন্ন কৌতুকের সঙ্গে গোপীমুখে রাধার
কথ। উল্লিখিত হয়েছে এমন মনে করা গেলেও,* রাধাসহ প্রেমলীলার বৈচিত্র্য
বণিত হয়নি। রাধা-কুষ্ণ নিয়ে লোককথার স্থষ্টি বকাল আগেই ছিল।
অঙ্গমান হয়, দশম-একাদশ শতাববীতেও জনসমাজে রাধাকষ্প্রণয় নিয়ে
কিছু উপকথা ও কথার স্স্তি হয়ে থাকবে। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে এরকম জনশ্রুতি
কিছু সংগৃহীতও হয়েছে দেখতে পাই। ব্রহ্ষবৈবর্তের সঙ্গে গীতগোবিন্দের
* 'জনয়া রাধতে! নুনং ভগবান্ হররীঙ্বরঃ' ইত্যা।
্ীচৈতন্যের আর্ভাবের সহায়ক ধর্মীয় পূর্বত্মি ২৫
প্রথম শ্লোকের মিলও দেখা যায়। তা] ছাড়া বর্ণনরীতি এবং ভাষাভঙ্গির দিক
থেকে লীলাশুকের কৃষ্ণকর্ণীম্বতের গীতাত্মক রচনাগুলির সঙ্গে গীতগোবিন্দের
'আত্ীয়তা স্পষ্ট। চতুর্দশ শতাব্দীর শেষে বড়ু চণ্তীদাস তার কৃষ্ণকীর্তনে
রাধাকরুষ্ণলীলার সবচেয়ে বিস্তৃত বর্ণনা উপস্থাপিত করেন। বিভিন্ন পুরাণে গ্রথিত
কৃষ্ণকথা ও রাঁধাকৃণ লন্বন্ধে প্রচলিত লৌকিক কাহিনী মনে রেখে কল্পনাশক্তিতে
সেগুলিকে একস্তত্রে গ্রথিত ক'রে রাধাকৃষ্ণ-প্রণয়ের কৈশোর-যৌবন সমন্বিত
একটি মৌলিক ও পূর্ণাঙ্গ চিত্র তিনি গঠন করেন। স্থানবিশেষে জয়দেবের
কবিকৃতির অন্থসরণ করতেও তিনি দ্বিধা করেননি । এই প্রণয়ের প্রারভ্ থেকে
পরিপাকাবস্থা বর্ণন। করতে এই বিখাত চণ্ডীদামকে জনপ্রিয় এবং সেই সঙ্গে
নিজ মনোমত চমৎকারজনক কয়েকটি অধ্যায় নির্মাণ করতে হয়েছে । এর মধ্যে
দানখণ্ড এবং নৌকাখগড প্রায় মৌলিক । বংশীথণ্ডের বাঁশি-চুরি নিয়ে প্রেমরহস্তের
'চারুতাময় গ্রস্থনও কম চাতুর্ষের বিষয় হয়নি। আর পরিশেষে নিবিষয় রাধা-
বিরহভাবুকতায় কৈশোর প্রেমচাপল্োর সমাধান বর্ণন৷ ক'রে তিনি রাধারুষ্ণের
প্রণয় নিয়েই নোতুন পুবাণ রচন] করেন। স্পষ্ট বোঝা যায়, চণ্ডীদাস একটি
আদর্শ অন্থসারে চলেছিলেন। তিনি দেখিয়েছেন রাধ। যদিও লক্ষ্মীর অবতার,
নিজন্বরূপ সম্বদ্ধে তিনি অনভিজ্ঞ ছিলেন ঝলে কৈশোরারভে তিনি কৃষ্ণের প্রতি
বিমুখ ছিলেন, নিজসংসারে আসক্ত ছিলেন, আর কৃষ্ণ প্রণয় নিবেদন কঃরে, এক্বরয
দেখিয়ে প্রয়োজনে অর্ধাঙ্গিনীর উপর বলপ্রয়োগে তাকে উন্মুখী করবার চেষ্টা
করেছেন এবং শেষ পর্যস্ত নিঃনীম ভাবের রাজ্যে তাঁকে সমুত্তোলিত করতে সমর্থ
হয়েছেন । কৃষ্ণকীর্তনকারই প্রথম দেখালেন যে মূলে যে-রাধা স্বকীয়! (লক্ষ্মী),
তিনি নরলীলায় পরকীয়ারূপে প্রতিভাসিতা, তার কৌলীন্য গুরুজন ম্বামী সবই
আছে, এমনকি লৌকিক গ্রামসম্পর্কে তিনি কৃষ্ণের অনধিগমাও বটেন। কিন্তু
কৃষ্ণের সঙ্গে রাধার ভাগিনেয়-মাতুলানী বাহাসম্পর্ক রুষ্ণকীর্তনকারের নিমিত নয়,
পুরাণ-অনুসারে গ্রথিত। লৌকিক প্রণয়ের ব্যাপারে বিষয়টি রসাভাসে দ্রাড়ায়
(মুনি-গুরুপত্বীগত প্রণয় হ'লে রসাভাস হয়, তবে তাতেও কাব্যের নিতান্ত হানি
ঘটে ন।), কিন্তু এক্ষেত্রে পরকীয়া-প্রীতির ধামিক কবির কোনে] উপায় ছিল ন]1।
ধার! কৃষ্-কীর্তনের এই গায়ের-জোরে প্রণয় এবং বিরুদ্ধ সম্পর্কের ব্যাপারে
নাদিক! কুঞ্চন করেন তার] ধর্মসম্পর্কে কথা বলেন, অথচ লোকাচারকেই প্রাধান্য
দেবেন, এর চেয়ে আশ্চর্য আর কী আছে? রুষ্ের এশ্বর্য প্রদর্শন, বলপ্রয়োগ এবং
প্রণয়রীতিবিরুদ্ধ লোকসম্পর্কই প্রমাণ করে যে কাব্যটি মূলতঃ লৌকিক নয়।
৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
কষ্ণ-বলরাম নারায়ণের এবং রাধা লক্ষ্মীর অবতার এই পৌরাণিক বিষয়টি ধ'রে
নিয়েই কৃষ্ণকীর্তনের প্রণয়রসান্থসরণে প্রবৃত্ত হতে হবে, বৃদ্ধ চণ্তীদাসেরও তা-ই
অভিপ্রেত। আর গৌড়ীয় বৈষ্ণব প্রণয়তত্ব কৃ-কীতে নেই (নেই কি?) এমন
আক্ষেপ নিক্ষল, কারণ পূর্বেকার রাঁধাকুষ্ণ-প্রণয়ে তা থাকা স্বাভাবিকও নয়।
মোটের উপর একথা অস্বীকার করা যায় ন। যে বৃদ্ধচণ্ডীদাস ধর্মকে মূল রেখে
তার উপর কাব্যান্থগত প্রণয়কলাবিলাসের চুড়াস্ত দেখিয়েছেন। মহাপ্রভু যে
দ্ানখণ্ড নৌকাখণ্ড বংশীখণ্ড ও রাঁধাবিরহভাবের পদ্দ আম্বাদন ক'রে তৃপ্তি
পেতেন এবিষয়ে সন্দেহ কি? ৰ
কবি বিগ্ভাপতিও যে ধর্মের বিবয় স্মরণে ন। রেখে শুধু কাব্যের জন্যই কৃষ্ণ-
রাধাকে অবলম্বন করেছিলেন, এমন ধারণায় বাঁধা আছে। বাঁধ! তার মাথুর,
ভাঁবসম্মিলন প্রভৃতির পর্দে এবং অনিবার্ধভাবে তার প্রার্থনার পদে। আমাদের
মনে হয়, বৃদ্ধ চণ্ডীদাসের নবীন সমসাময়িক কবি বিদ্যাঁপতি চণ্ডীদ্বাসের ঘ্বারা
অন্ুপ্রাণিত হয়েই রাধারুষ্ণ-প্রণয়লীল1 নিয়ে কাব্যরচনায় উৎসাহিত হন।
সেকালে পশ্চিমবঙ্গ-গৌড়-মিথিল। ভাষা ও সংস্কতিগত সম্পর্কে পরস্পর খুবই:
নিকটবতর্থ ছিল এবং চণ্ডীদাসের সঙ্গে বিদ্যাপতির সাক্ষাৎকার এবং পরে
বি্ভাপতির মানসিক পরিবর্তন নিছক জনশ্রুতি না-ও হতে পারে ।
অতএব, বাঙ্লা-মিখিলার এই তিন কবির দ্বিক লক্ষ্য ক'রে একথা স্বচ্ছন্দ
ব্ল। যায় যে কাব্য-সাহিত্যের মধ্য দিয়েও বৈষ্ঞবধর্মের তৎকালীন ধারায় বিস্তৃতি
ঘটছিল।
একালে শাস্ত্রান্গত ভক্তিভাবুকতার সঙ্গে সহজ অঙ্ুরাগের পথ কবি এবং
ভক্তিসাধকদের আকর্ষণ করেছিল। এবিষয়ে স্ফী সাধকদের দান অবশ্ু
স্মরণীয় । ই্লাম ধর্ষের স্থফী শাখার সাধনার অঙ্গে ভারতীয়
ধর্ম ও দর্শনের সম্পর্ক আরও পূর্বেকার । এমনও মনে কবা
যেতে পারে যে খলিফাদের রাজত্বের সময় সঞ্ম-অষ্টম শতাব্দী; থেকে দক্ষিণ-
পশ্চিম উপকূল ধরে ভারতবর্ষের সঙ্গে আরব ও তুরস্কের যে বিস্তৃত বাণিজ্য
সম্পর্ক এবং ভাবগত আদান-প্রদানের সম্বন্ধ স্থাপিত হয় তার ফলেই ইস্লামধর্ষে
বৈরাগ্যমূলক জীবনাদর্শ ও রহস্তভাবুকতার স্পর্শ লাগে এবং পৃথক আচার-
আচরণ নিয়ে সন্গ্যাস আশ্রয় ক'রে স্থফীর। ধীরে ধীরে প্রায় নোতৃন ধর্মস্পরদায়ে
পরিণত হয়ে পড়েন। এই সময়েই দাক্ষিণাত্যের আলবার সম্প্রদায়ের প্রেয়-
ভক্তির স্পর্শও তার] লাভ করেন। কিন্তু স্থ্ফী সাধকের] সকলেই যে বিশুদ্ধ,
সুক্ষী ধসমাধন।
শ্রীচৈতন্তের আবির্ভাবের সহায়ক ধর্মীয় পূর্বসূমি ২
ভক্তিপথের পথিক ছিলেন এমন নয়। এ'র। অনেকেই অছৈত জ্ঞানের পথও
নির্বাচন করেছিলেন, আবার কেউ কেউ দেঁহতত্বগত সাধনাতেও নিযুক্ত
হয়েছিলেন। মোটের উপর সমগ্রভাবে এদের সাধনার ধার! লক্ষ্য করলে প্রথম
দিকে ভারতীয় বিভিন্ন দর্শনের খগুছিন্ন রূপ এবং মিলন-মিশ্রণই দেখা যায়। পরে
অন্রাগ ও প্রেমের পথ প্রাধান্ত লাভ করে। নবম শতান্বীর বিখ্যাত সুফী
সন্গ্যাসিনী রাবেয় শুদ্ধা ভক্তির পথ প্রদর্শন করেন। এ শতকেই হযল্লাজ,
শামন্থদ্দীন তাত্রিজী, সাধুশ্রেষ্ট বায়াজিদ্ প্রমুখ সাঁধকগণ মধ্য-প্রাচ্যের ধর্সআোতে
নব ভাবুকতার জোয়ার এনেছিলেন। এই ভাবুকতা কাব্য-ববিতাঁয় সঞ্চারিত
হতে বিলম্ব হয়নি এবং দাক্ষিকাত্যের আলবার সম্প্রদায়ের মত এক শ্রেণীর
সাধক-কবি দ্বাদশ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে পারস্থদেশে আবিভূ্ত হয়ে
পার্খবব্তা সমস্ত রাজ্যগুলিতে তাদের ধর্ম ও সাহিত্যকীতির প্রভাব বিগার
করেন। এদের মধ্যে শাস্ত্রীয় ধর্মাচরণের বিরোধী এবং রাগমক্রী ভক্তির
পক্ষপাতী জালালুদ্দীন বূমী, সাদী, নিতান্ত ঈশ্বরপ্রেমিক হাফিজ, স্বন্দরের
উপাসক জামী প্রভৃতি বিখ্যাত। বূমীর বহু কথিতার ভাবাঙ্ছবাদ উর্দুহিন্দীর
মধ্য দিয়ে বাওল। পদদেও অচুস্থত হয়েছে ।
মনে হয় ভারতে তুক্ণী আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পূর্ব থেকেই স্থফী ফকির-
দরবেশের। এদেশে আমতে আরম্ভ কবেছিলেন, তবে দ্বাদশ শতাব্দীর পর থেকেই
এদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসাম পর্যস্ত বন
নগর জনপদে এ দের সাধনপীঠসমূহ গড়ে ওঠে । নৃত্যগীতে মনের ভাব উৎসারিত
করতেন এমন চিত্তি সম্প্রদায়ের প্রবর্তক খাজ] মৈহুদ্দীন মহম্মদ-ঘোরীর সঙ্গেই
এসেছিলেন | এই সব সিদ্ধ পীর-ফক্রদ্দের ঈশ্বরাসক্তি এবং অলৌকিক কার্য
(কেরামত, ) দর্শনে যেন বছ হিন্দু স্বেচ্ছায় ইস্লাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন,
তেমনি এদের রাগভক্তির প্রভাবে বৈঝ্বদের পূর্বপ্রচলিত বৈধভক্তির ধারাও দ্রুত
পরিবতিত হতে আরম্ভ করেছিল। মাধবেন্ত্রপুরী ও নিত্যানন্দের অশ্রু কম্প
মুছাদি বিকার তৎকালীন ভক্তিসাধনায় এক অদ্ভূত বন্ব। এদের প্রত্যক্ষ
স্থধী সংসর্গের কথা জান] যায় না, কিন্তু অনুমান করায় যে তার তীর্ঘভ্রমণে
বহির্গত হয়ে এই অলৌকিক সম্পদের স্পর্শ লা ঞরেছিলেন। হরিদাস ঠাকুর
সম্ভবত: প্রত্যক্ষ সফী-সংসর্গ থেকেই এসেছিলেন।
বৈষ্ণব রাগমার্গভক্তির লাধনার সঙ্গে স্ফী সাধনার কতকগুলি বিষয়ে আশ্চর্য
মিল দেখ! যায় এবং অন্্মানে এই সিদ্ধান্ত অনিবার্য হয়ে ওঠে যে, যে-সুফীধর্ম
২৮ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
মূলে ভারতীয় ভাবসাধনা থেকে জন্ম ও পু্টিলাভ করে তা-ই আবার পরিপুষ্ট
হয়ে বাঙ্লায় উৎপন্ন নব ভক্তিধর্মকে প্রবৃদ্ধ করেছে।
স্ফীরা চ81)011519) এবং পরিণামবার্দে বিশ্বাসী । ঈশ্বরের শুহ্গসতা
সম্বদ্ধেও তাঁর আস্থাবান। তাদের তমজ্জুলাৎ, হুবিয়াৎ, অনীয়াৎ, ওয়াহিদিয়াৎ
প্রভৃতি তত্ব ঈশ্বরের নানাত্বের মধ্যে একত্বের নির্দেশক। “লতাইফ* ব।
যোগাবস্থা অবলম্বন ক'রে, এবং “ঝিকৃর? বা ম্মরণ-মননের যোগে তারা “তজলী
অর্থাৎ ব্রহ্মবোধ অনুভব করেন। পরমসত্ায় বিশ্রামলাভই শ্থফীদের উদ্দেশ্ত।
কিন্তু কেবল ফন” অর্থাৎ অদৈতানুভবজাত মুক্তি বা নির্বাণই তার্দেব কাম্য
নয়। “ফিল্লাহ, অর্থাৎ ঈশ্বরের মধ্যে নিজ অশ্তিত্বের অনুভব, “বজ্দ্* ভাঁবসম্মিলন-
জাত আনন্দ-আবেগময় অবস্থা এব" "বকা" অর্থাৎ দিব্যরসাবস্থাও তাদের সাধনার
অভিপ্রেত শেষ অধ্যায়। স্থফীদের “হাল” এবং প্রেমাধীন বৈষ্বের দশাপ্রাথি
একই ব্যাপার। সাধনভক্তির পর শেষ হ'লে ঈশ্বরক্কপায় আপনা থেকেই
প্রেমের উদ্ভব ঘটে ( তু” “নিত্যপিদ্ধ কৃষ্ণপ্রেম সাধ্য কু নয়। শ্রবণাদি-শদ্ধ চিত্তে
করয়ে উদয় ॥১)। স্ুফীদের 'হাল?ও সাধনা-নিরপেক্ষ ঈশ্বরের দান। ভক্তের
ইচ্ছা! ব1 চেষ্টার অধীন “হাল” নয়। স্থফীদের এই সব ভাবাবস্থার পূর্বপরিচয়
অবশ্ট শ্রীমদ্ভাগবতেও রয়েছে । যেমন একাদশ স্বক্ধে_
এবংব্রতঃ ন্বপ্রিয়নায়কীত্য। জাতানুরাগে ভ্রুতচিত্ত উচ্চৈ:।
হসত্যথো৷ রোদ্দিতি রৌতি গাম্নত্যুন্নাদবন্ নৃত্যতি লোকবাহ্ঃ॥
কিন্ত সাধকদের চরিতে তার প্রত্যক্ষ পরিচয় স্ফীদের মধ্যেই প্রথম পাওয়া
গেল। আবার শ্রীমদ্ভাগবতে কথিত শ্রবণার্দি সাধনভক্তির বিবিধ পথগুলির
প্রয়োজনও স্ফীধর্মে স্বীকুত হয়েছে দেখতে পাই, যেমন নমাঁজ (বন্দনা),
তিলাবৎ ( অধ্যয়ন ও শ্রবণ ), ঝিকৃর্ (স্মরণ, জপ ), মুরাকাব৷ (ধ্যান), ওরাদ্
(অভ্যাল ) প্রভৃতি । স্ফী আউলিয়ার৷ তীর্থভ্রমণের উপর ঞোর দিয়ে থাকেন,
তা ছাড়া এই পথে গুরুর ( শেখ বা পীর) প্রয়োজনও তারা স্বীকার ক্রেন ।
তাদের গুরুও অলৌকিক শক্তিবলে শিষ্তের দেহে শক্তি সঞ্চার করতে অমর্থ।
স্ফীদের সঙ্গে রাগভক্তিপথের লাধকদের এসব সাধনপথ ও চারিত্রিক সাদৃশ্যের
বিষয়টি আলোচন। ক*রে গবেষণার দ্বার। সত্য নির্ণয়ে প্রবৃত্ত হওয়া উচিত।
আমর বিষয়টি সমানভাবে এখানে উপস্থাপিত করলাম মাত্র ।*
+ ডঃ সুনীতিকূমার চট্টোপাধ্যায়ের [5180210 ১175065শ55 & [5415 প্রবন্ধ ভ্রষ্টব্য।
শ্রীচৈতন্টের আবির্ভাবের সহায়ক ধর্মীয় পূর্বভূমি ২৯
(২) দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে ভক্তিধর্মের দ্রার্শনিক আলোচনার
প্রসার ঘটে। অষ্টম শতকের পূর্বে ভারতবর্ষে বৌদ্ধ দর্শনের সক্ষম তর্ক-বিতর্কের
কাল। অষ্টম-নবম শতাব্দীতে শংকরাচার্য বৌদ্ধ শৃন্যতাবাদ খণ্ডন ক'রে নিবিশেষ
ব্হ্ষবাদ স্থাপন করেন। তার মতে ব্রক্ষই সত্যবস্ত এবং ব্রহ্ম ব্যতীত দ্থিতীয়
অপর কোনও সত্য নেই। বৌদ্ধ শৃম্ততাবাদে অস্তিত্ব আছে এমন কোনে চরম
পদার্থ স্বীকৃত হয়নি । শংকর সেই স্বীকৃতি দিলেন, বৌদ্ধদের সঙ্গে তার দার্শনিক
অনুভবের এই গুণগত পার্থক্য । কিন্তু সদ্বস্ত বলে কোনে! সত্তা আছে এই
বিষয়টি স্থিরীকৃত হ'লে পর শংকরাচার্য তার যে স্বরূপ নির্ণয় করলেন ব্রহ্গ-
সুত্ত্রভান্তে এবং যেভাবে সৃষ্টি এবং জীবের ব্যাখ্য! করলেন তাতে ভক্তিভাবুক
দার্শনিক সম্প্রদায় সন্তষ্ট না হতে শ্পেরে স্বতন্ত্রভাবে এগুলি সম্পর্কে নিজ মনন
প্রকাশ করলেন, শংকরাচার্ষের অভিমত খণ্ডন করতেও প্রয়াপী হলেন । এইভাবে
বিশিষ্টা্বৈত, শুদ্ধাদ্বৈত, দ্তাদৈত, শুদ্ধদ্বৈত গ্রভৃতি অভিমত গড়ে উঠল । এই
অভিমতগুলির"পারস্পরিক নগণ্য কিছু কিছু পার্থক্য থাকলেও এদের সবগুলিই
অদ্বৈত থেকে বিশেষভাবে পৃথক এবং এইখাঁনে এগুলির একাভিমুখিত|।
ংকরাচার্য ও তত্সম্প্রদধায়ের অদ্বৈতবাদ্দীদের মতে জ্ঞানম্বরূপ ব্রহ্মই সং,
অন্ত যাকিছু অ-দৎ। এজ্ঞান শুদ্ধ, নিবিশেষ, নিগু৭ণ। চরম সত্যের দিক
থেকে সষ্টিও অসৎ, দৃষ্ট অদৃষ্ট যাবতীয় বস্ত ব্রদ্দই, অবিদ্য]
ব। মায়ার প্রভাবে অসৎ বিষয়ে আমাদের সদ্বুদ্ধি আসে,
বস্ত ও জীবময় বিশ্বকে আমর] সত্য ব'লে মনে করি। ্ৃষ্টজগৎ ব্রন্মের
“বিবর্ত'। বিষয়টিকে তিনি রজ্ঘ্ুতে সর্পভ্রম বা শুক্তিতে রজতভ্রমের সঙ্গে তুলনা
করেছেন। জীবপক্ষে অজ্ঞান ব! প্রমযুক্ত জ্ঞানকে লক্ষ্য ক'রে বিদ্যা” শব্দ
ব্যবহৃত হয়েছে । আর ব্রহ্গপক্ষে স্থগ্টির দিক থেকে "মায়া? শব্ধ প্রয়োগ করা
হয়েছে । শংকর-সম্প্রদায়ের মতে অবিদ্যার ছুটি বৃত্বি-_আবরণ এবং বিক্ষেপ।
আবরণবৃত্তির দ্বার? ব্রদ্দন্বূপ জীবের শ্দ্বঙ্তঞানকে আবৃত কর হচ্ছে আর
বিক্ষেপের হবার। মিথ! জ্ঞান জন্মানো হচ্ছে । জীবের স্বরূপ নির্ণয়ে তিনি জীবকে
্রত্ষই বলেছেন। অনিগ্যাজাত উপাধির জন্যই জীব নিজের পৃথকৃ অস্তিত্ব অনুভব
করে। এবিষয়ে শ্রীশংকর প্রতিবিষ্ব এবং পরিচ্ছেদের দৃষ্টান্ত দবিয়েছেন। যেমন
একই আকাশ ঘটের দ্বার৷ পরিচ্ছিন্ন হয়ে ঘটাকাশ আখ্য] গ্রহণ করতে পারে।
তেমনি একই ব্রহ্ম বুদ্ধি বা অবিগ্ঠাজাত উপাধি দ্বারা সীমিত হয়ে জীবরূপে
প্রতিভাত হয়। আবার অবিষ্য! ব1 বুদ্ধির দর্পণে ব্রন্মের প্রতিবিস্ব পড়লে যা হয়
শংকর--অদ্বৈত
৩০ বৈষব-রস-প্রকাশ
তাকেই বলা হয়ে থাকে "জীব? | তার মতে জীবের মধ্যে অবস্থা চিৎ রয়েছে, কিন্তু
তা উদ্দাসীন সাক্ষী-ভাবে আছে। তার সঙ্গে রূপাদদি-বিষয়ভোগের কোনে।
সন্বন্ধ নেই। ভোক্তী হল উপাধিজন্য বৃত্তিবিশিষ্ট অন্তঃকরণ। লৌকিক
ব্যবহারিক জ্ঞানও এতেই সীমিত। তবে অস্তকরণের জ্ঞানরূপ বৃত্তি এ
সাক্ষীম্বরূপ শুদ্ধ চিৎ-এর দ্বার অনুপ্রাণিত হয়ে থাকে। অন্তঃকরণে সর্বদা
অবিষ্যাজাত উপাধির যোগ থাকে ব'লে শুদ্ধ চিৎ প্রত্যক্ষীভূত হয় না। এ
উপাধির বিনাশেই অস্তঃকরণের বিনাশ এবং জ্ঞানের হ্বপ্রকাশে মুক্তি। তখন
জীব ব্রহ্মবিৎ হয়ে ব্রদ্মই হয়ে পড়ে।
বেদাস্তের অতৈতা্ছগ ব্যাখ্যায় “মায়া'র উপস্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।
সাংখ্যের “প্রকৃতির মত জড় হলেও মায়াকে শংকর ব্রহ্ম থেকে পৃথক্ বলেন না,
কারণ তাহ'লে দ্বৈততত্ব এসে পড়ে। আবার ব্রহ্ম থেকে অপৃথকৃও বলছেন
না, কারণ, বিজ্ঞানের আবির্ভাবে মায়া আর থাকে না। মায়াকে সৎ ব।
অনৎ কোনে অভিধাদ্বারাই নির্দেশ করতে পারা যায় না। মায়ার সঙ্গে ব্রন্মের
সম্পর্ক “তাদাত্ময”। মায়া অনাদিও বটে। মায়াই জীবপক্ষে অবিষ্যা বা
অজ্ঞানের কাজ করে। মায়ার আশ্রয় এবং বিষয় উভয়ই ব্রহ্ম হলেও ব্রচ্ম মায়ার
দ্বার। স্পৃষ্ট হন না, যেমন হন ন1 যাদুকর ইন্দ্রজালের ছ্বারা। শংকর কিন্ত
লৌকিক সংসার এবং ব্যবহারিক জ্ঞানকে ডাহা মিথা। বলেননি । প্রাতিভাসিক
সত্য বলেছেন। এ থেকেই পরমার্থে পৌছানো যায় এমন মনে করেন। শুধু
'অবিছ্যার বিনাশ ঘটলেই হ'ল। শংকরমতে ব্রহ্ম বিশ্বের নিমিত্তকারণ এবং
উপাদান কারণ-_ছুই-ই, কিন্ত যথার্থভাবে দেখতে গেলে কোনো সষ্টিই হচ্ছে না,
তার মায়ার ক্ষুরণে বূপরসগন্ধময় বিশ্ব সত্য বলে প্রতিভাত হচ্ছে মান্্।
জলের যেমন তরঙ্গ বুদ্ধ ফেন1, তেমনি স্থষ্ট পদার্থনিচয়ের ভিন্ন নাম, কিন্ত
তত্বতঃ একই বস্ত।
নিপুণ বর্ম জীবের আয়ত্তগম্য নয় বলে, ধারণ[র অতীত ব'লে, ধাখিকর্দের
ঈশ্বরোপাসনার প্রয়োজনে শ্রীশংকর সগুণ ব্রদ্মেরও স্থাপনা করেছেন। ইনি
মায়াযুক্ত, উপাধিগত ব্রদ্ম। ইনি ঈশ্বর, মায়াস্পৃষ্ট হয়ে স্থ্টি পালন লয়ের কার্য
করেন। জীব এই ব্রহ্ষকে ধারণার মধ্যে এনে তার ধর্মরসতৃষিত চিত্তকে
পরিতৃপ্ধ করে। অবিদ্যাবিমোহিত জীবের এই পর্যস্ত সীম] ।
প্রীশংকর-ভাবিত যূলতত্ব এবং অন্যান্য তত্বগুলি পরবর্তী ভক্তিবা্দীর। গ্রহণ
করেননি এবং যুক্তির দ্বার! খণ্ডন ক'রে ভিন্নমত স্থাপনের প্রয়াস করেছেন । এ
শ্রীচেতন্তযের আবির্ভাবের সহায়ক ধর্মীয় পূর্বভূমি ৩১
সম্পর্কে প্রথম এবং লবচেয়ে উল্লেখষোগা অভিমত হ*ল একাদশ শতার্ীর
ন্বাক্ষিণাত্য ভক্তি-সম্প্রদায়ের অন্তর্গত শ্রীরামান্জাচার্যের | আলবার অম্প্রদায়ের
উচ্ছৃদিত রাগভক্তিপ্রবাহ নিরুদ্ধ হয়ে আচার্য ব] তাত্বিকর্দের উতদ্তব হয়। এদের
মধো নাথমূনি, যামুনাচার্ধ, ভাস্কর প্রসিদ্ধ। এদের ভক্তিতত্বে পরিপুষ্ট হয়ে
শ্রীএামাছজ নিয়মান্থগভাবে অদ্বৈতমতথগুনে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তিনি
নধিশেষ ব্রক্ষবারদ অস্বীকার ক'রে শ্রীভাস্ত বলে প্রচলিত বেদাস্তভাঙ্কে
বিশিষ্টাছৈত মত প্রবর্তন করেন। তার অভিপ্রায় সংক্ষেপে বিবৃত হচ্ছে।
রামাহজ শংকরকথিত জ্ঞানের স্বরূপ, ব্রক্ষব্বরূপ, মায়া এবং জীবস্বরূপ প্রায়
সমস্ত কিছুকেই তার বিচারের অস্তভূক্ত ক"রে এই ধারণায় আসেন যে, ব্রচ্গ
নিগ্তণ নিবিশেষ কেবলজ্ঞানম্বরূপ বস্ত নন। তিনি সপ্তণ,
তিনি বিশিষ্ট, তিনিই ব্রহ্ধাণ্ডে ও জীবজগতে পরিণত
হয়েছেন। শ্রীপাদ রামানুজ শ্রীশংকরের মতই উপনিষদের
মন্ত্রমূহ উদ্ধার ক'রে এবং ব্যাসন্থত্রের ব্যাখ্যা ক'রে স্বাভিমত স্থাপন করেছেন
তার শ্রীভাঙ্কে । এছাড়া! “গগ্চত্রয়+, “বেদার্থ-সংগ্রহ* প্রভৃতি নিবন্ধেও তার বিবিধ
বক্তব্য সপ্বন্ধে আলোকপাত করেছেন।
রামান্থজ শংকরের জ্ঞানের স্বরূপ বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন। তার মতে
শুদ্ধজ্ঞানের অনুভব সম্ভব নয়। নিবিকল্প শুদ্ধজ্ঞান কল্পিত তত্ব মাত্র । তার মতে
জ্ঞান সর্বদাই সবিকল্প, বিশিষ্ট, কারণ জ্ঞেয় পদার্থ ছাড়] জ্ঞান থাকতে পারে না।
জ্ঞন নিজেকে জানতে পারে না। জ্ঞান অন্তাপেক্ষী। আবার জ্ঞানকে তিনি
জ্ঞাত আত্ম। ব। ঈশ্বরের গুণ বলে মনে করেন। জ্ঞ/ত। এবং জ্ঞেয় এ দুয়ের মধ্যে
জ্ঞান একট] সন্বন্ধের কাজ করে মাত্র। শংকর এই বিশিষ্ট লৌকিক জ্ঞান নিয়ে
শুদ্ধ জ্ঞানকে কিভাবে প্রত্যক্ষ করছেন তা বোঝা যায় ন|।
শংকর-মতে ব্রহ্ম নিগুণ, নিরাকার, নিবিশেষ, শুদ্ধ চিত, শুদ্ধ জ্ঞানন্বরূপ |
স্থতরাং ব্রহ্ম অদ্বৈত। শংকর এই সিদ্ধান্তের সপক্ষে উপনিষদ থেকে “অশবমস্পর্শ-
মরূপমব্যয়ম্* 'অপাণিপাদে। জবনে। গ্রহীতা” “নেহ নানাস্তি কিঞ্চন' প্রভৃতি বাক্য
প্রমাণম্বর্ূপ উদ্ধাপ্ন করেছেম, এবং এভাবে বেদাস্তস্থত্রের ক্্যাখ্যা লিপিবদ্ধ
করেছেন। রামাহুজের মতে ব্রহ্ম অদৈত, কিন্তু নিবিশেষ নয়, সর্বদাই সবিশেষ,
সগ্তণ। বেরাস্ত্যত্রের ব্যাখ্যায় তিনি ব্রক্দের সবিশেষত্ব এবং সগুণত্বই উপলব্ধি
করেছেন। তা ছাড়া 'সত্যং জানমনস্তং ব্রদ্* বিজ্ঞানমানন্দং ব্রহ্ম 'রসো বৈ সঃ ।
রসে! হেবায়ং লব্ব আনন্দী ভবতি” প্রতৃতি বছ শ্রুতিবাক্য তার বক্তব্যের
রামানুজ-_
বিশিষ্টাদ্বৈত
৩২ বৈষ্ব-রস-গ্রকাশ
সমর্থনে উপস্থাপিত করেছেন। বিভিন্ন উপনিষদে ব্রদ্দের শ্বরূপ সম্বন্ধে যে-সব
উক্তি আছে তার অনেকগুলিই পরম্পর-বিরোধী | ষে-যে শ্রুতি ব্রদ্মকে নিধিশেষ
বলেছে তারাই আবার স্থানান্তরে তাকে সবিশেষ বলেছে । দার্শনিকেরা শ্বমতের
অন্থকূলে সেগুলির ভিন্ন “ভিন্ন ব্যাখ্য। গ্রথিত করেছেন । রামান্থজাচার্ষের মতে
জীবাত্মা এবং জড়বগ্ নিয়ে এই যে বিশ্ব এ হল ব্রন্মের দেহ। ঈশ্বর এবং ক্ষ
মিলে তবেই একটি সমগ্র সত্তা। বিশ্বের যাবতীয় পৃথক পদার্থ তাতেই নিহিত।
চিৎ সত্য, অচিৎ সত্য, ঈশ্বর সত্য । ঈশ্বর এই হিসাবে অদ্বৈত যে তার বহিরক্গ
পৃথকৃ বস্ত কিছু নেই। কিন্তু অন্তরঙ্গে বৈচিত্র্য বিদ্যমান । তার দেহই বছ
বিচিত্র । স্যর সঙ্গে ঈশ্বরের দেহ-দেহী সন্বন্ধকে তিনি আর-এক ভাবে প্রকাশ
করতে চেয়েছেন। একে তিনি একাত্মকতার সম্বন্ধ বলেননি, বলেছেন অ-
পৃথকৃসিদ্ধি। স্ৃতরাং শ্রীরামাহুজ ব্রদ্মের সঙ্গে জীব ও জগতের “ভেদ নিয়ে তবেই
অভেদ” এরকম সম্পর্ক স্থির করেছেন। এখানে স্পষ্টতই পাশ্চাত্য দার্শনিক
77০8০1-এর সঙ্গে তাঁর উপলব্ধির মিল দেখা যায়। 17০901-এর 4১0501016
শুধু 735118 নয়, 7০002018-ও | বিচিত্র নিয়ে বিরোধ নিয়ে নিজকে ব্যক্ত
করাই এই অদ্বৈতের স্বধর্ম।
শ্রীরামান্ছজ বিশ্বের সঙ্গে ঈশ্বরের যে সম্পর্ক নির্ণয় করেছেন তাতে মায়া বা
প্রকৃতিকে ক্র পৃথকৃ-কারণরূপে গ্রহণ করেননি । তার মতে ঈশ্বরের
স্বরূপে যে চিৎ এবং অঠিৎ রয়েছে ত1 থেকেই জীব ও জগৎ পরিণাম লাভ
করেছে। ন্থুষ্টি বিষয়ে মায়ার কর্তৃত্ব স্বীকার ন। করায় শংকরের মায়াবা্দ বা
বিবর্তবাদকে তিনি মেনে নেননি । “বিবর্ত' শবের অর্থ ভ্রান্তি। ভ্রাস্তির-
তশ্মিস্তদবুদ্ধিঃ। এ বিষয়ে শংকরের বিখ্যাত দৃষ্টান্ত 'রজ্জুতে সর্প্রম” বা "শুক্তিতে
রজততভ্রম”। রামাছ্ভ বলছেন, ভ্রমের কোনে ব্যাপারই নয়, এ সব সত্য।
ভ্রাস্তি'র বিষয়টি আলোচনা ক'রে তিনি দেখিয়েছেন যে ভ্রমের মধ্যেও সত্য
উপলব্ধির স্পর্শ থাকে | স্থষ্টিবিষয়ে বিবর্তের স্থানে তাঁন পরিণামবাদ অঙ্গীকার
করেছেন। দুগ্ধ যেমন দধিতে পরিণত হয়, কতকট। তেমনি ম্বাভাবিকভাবে
বিকারী সগুণ-ঈষ্্ক ত্বীয় সত্তাকে অবিকৃত রেখেও জগত্-বূপে পরিণত হয়েছেন ।
যেমন মৃত্তিক| থেকে ঘট হলেও ঘটের মৃত্তিকাগ্ণের পরিবর্তন হয় ন]।
শ্রশংকরের মতে এরকম হওয়1 যুক্তিসিদ্ধ নয়, না! সমগ্রের পরিণাম, না কল্পিত
অংশের পরিণাম । সমগ্রের পরিণাম হ'লে ব্রহ্ম বলতে কিছুই থাকে না, প্রত্যক্ষ-
জগৎই ব্রহ্ম হয়ে পড়ে, আর, ব্রদ্ধ অংশের দ্বারা বিভক্ত হবেন কিরূপে'?
শ্রচৈতন্তের আবির্ভাবের সহায়ক ধর্মীয় পূর্বসূমি ৩৩
শ্রীরামানুজ যুক্তির দ্দিকে ন! গিয়ে বরং শ্রুতির ব্যাখ্যার দ্বারাই বিষয়টি প্রাতিপদ্ন
করতে চেয়েছেন | পরে আমর! দেখব, বুন্দাবনের গোস্বামীবুন্দ কিভাবে
শক্তিতত্বের আশ্রয়ে বিষয়টির সমাধানমূলক ব্যাখ্য। দিতে চেয়েছেন । শংকরের
কল্পিত যায়াবাদের উপর রামানুজ অবশ্য যুক্তির দ্বারাই রূঢ় আঘাত হানতে
প্রয়াসী হয়েছেন । শংকরমতে মায়] অনির্বচনীয়। অর্থাৎ সৎ কি অসৎ এই সব
বিশেষণে বোঝা যায় না। রামানজের মতে মায়া ঈশ্বরের বাস্তব শক্তি, স্থি-
পালন-লয়কত্র। অবিগ্ধা বলতে তিনি জীবের অজ্ঞানকে লক্ষ্য করেছেন।
শংকরের মত তিনিও মনে করেন যে পরজ্ঞান ব1 ঈশ্বরজ্ঞানে অবিছ্ার বন্ধন ছিন্ন
করা যায়। কিন্তু অবিদ্যা, জ্ঞান, বন্ধন, মুক্তি প্রভৃতি বিষয়ে তার ধারণা শংকর
থেকে ভিন্ন । মায়াবাদের বিরুদ্ধে রামান্জ যে সব আপত্তি তুলেভেন তা
একরকম ভক্তিবাদী বিভিন্ন সম্প্রদায় সকলের সপক্ষেই প্রযোজ্য । (১) মায়! বা
অবিদ্যার আশ্রয় কোথায়? যদি ব্রন্মে হয় তাহলে ব্রন্মের শুদ্ধজ্ঞানন্বরূপের হানি
ঘটে, ব্রহ্ম সগুণ হয়ে পড়ে। (২) যে অবিদ্া/ জীবের অজ্ঞানের কারণ, তা
আবার কার্ষর্ূপে জীবে থাকে কিভাবে? যে অবিদ্যা জীবের আশ্রয়, তার
আশ্রয় আবার জীব এ স্ববিরোধী কথা। (৩) জ্ঞানের আব্ভণবে অবিদ্ভার
বিনাশ ঘটে ব+লে অবিগ্যাকে শ্রীশংকর “সদসতিরনির্বাচ্যা” বলেছেন । কিন্তু সং ও
নয়, অসৎও নয় এমন বস্ত যুক্তিতেও সিদ্ধ নয়। অবিষ্তা “সৎ হলে অসত্া-
বাচক অর্থাৎ নেতিবাচক হবে কেন? যদি অসং হয় তাহ'লে ব্রদ্ধে বিশ্বভ্রমই
ব! ঘটায় কি ভাবে? (৪) নিবিকন্প জ্ঞানকে অবিগ্যার নিরাকরণকারক বল
হয়েছে, সে জ্ঞান যখন সম্ভব নয় (কারণ জ্ঞান মাত্রেই সবিকল্প ) তখন
অবিগ্ভার নিরাকরণও সম্ভব নয়। অবিগ্ভা যদি 'ভাবরূপ” হয় তাহলেও তার
নিরাকরণ সম্ভব নয়। (৫) শংকর-সম্প্রদ্দায় বিবর্তকে অধ্যাপের কার্য
বলেছেন। যেমন শুক্তিতে রজতের অধ্যাবশতঃ ভ্রম, ত্রদ্মে জগতের
অধ্যাসবশতঃ ভম। অধ্যাস পূর্বম্তিরূপ ৷ রজতের পূর্বস্বতি থাকলে তবেই
সেই সুত্রে অধ্যাপ আসতে পারে । তাহলেই তো৷ জগতের স্বৃতি অর্থাৎ জগতের
বাস্তব অস্তিত্বের প্রসঙ্গ এসে -াড়ে। তা] ছাড়া ভ্রাস্তির মধ্যেও সত্যের ধারণা
ঘটে। রজ্জুতে সর্পভ্রম হয় সর্পবৎ ব'লে। প্রস্তর-কুকুরার্দির ভাস্তি তো] ঘটে
না। ভ্রান্তিনিরপেক্ষ জ্ঞান সম্ভব কিনা তা-ও বিচার্ধ। (৬) অবিগ্যার প্রমাণ
নেই । জ্ঞানে এ বস্তকে ধর] যাচ্ছে না, প্রত্যক্ষে নয়, অন্মানেও নয় । শ্রুতিতে-_
'মায়াং তু প্রকৃতি" বিগ্তান্মায়িনং তু মহেশ্বরম্” এবং 'পরান্ত শক্তিবিবিধৈব শ্রুয়তে
তু
৩৪ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
স্বাভাবিকী জ্ঞানবলক্রিয়েতি' ( শ্বেতাশ্বতর )-_প্রভৃতিতে ব্রদ্মের সত্য শক্তির
কথাই বলা হয়েছে । অতএব রামান্জ মায়াকে ঈশ্বরের শক্তি ব'লে স্বীকার
করেছেন। মায়ার সত্যত! নির্ধারণ করেছেন, কিন্তু ঈশ্বরের অধ্যক্ষতায় মায়ার
কার্যকারিত৷ নির্ণয় করেছেন।
শংকরের মতে জীব স্বরূপতঃ ত্রহ্মই (“তত ত্বম অসি')। উপাধি এবং সেই
সঙ্গে অবিদ্ভার বিনাশে জীব তার স্বরূপ লাভ করে। ব্রহ্ষবিৎ ব্রদ্মেব ভবতি।
রামান্ুজের মতে জীব ঈশ্বরের চিদংশ। আত্মা অনাদ্দি, অজর, অমর হলেও
পরমাত্নার আশ্রিত। জীব কর্মফলভোক্তা । অজ্ঞান এবং কর্মের জন্য সংসারে
বদ্ধ। স্থৃতরাং কর্মবন্ধ নাশ হলে জ্ঞানও আবরণহীন হয়ে পড়ে এবং জীবাত্বা।
ঈশ্বরসাযুজ্য লাভ ক'রে তার পরিবারতূক্ত হয়ে পড়ে ও অনন্ত জ্ঞান, অনন্ত
আনন্দ ভোগ করে। মুক্তির জন্য শ্রীরামান্গজ জ্ঞান-কর্ম-সমুচ্চয় গ্রহণ করতে
বলেছেন। তার মতে পরজ্ঞান এবং শ্রেষ্ঠ ভক্তি একই বস্তু। ফলাকাজ্ষাহীন
কর্ম করতে করতে জ্ঞান ও ভক্তির উদয় হুয়। জীব যখন ম্মরণ, উপাসনা,
নিদিধ্যাসনে রত হয় এবং শরণাগতি বা প্রপতি প্রার্থনা করে, তখন ঈশ্বরকৃপায়
চরম জ্ঞানের আবিভণবে সে মুক্ত হয়ে যায়। আমর পরে দেখব অন্তান্য বিষয়ে
রামান্থজের অভিমতের সঙ্গে গৌড়ীয় বৈষ্ণব অচিস্তাভেদাভেদতত্বের বহু মিল
থাকলেও সাধ্য-সাধন বিষয়ে মিল নেই। বিশিষ্টা্ৈতাবাদী ঈশ্বরের শক্তি-
হিসাবে লক্ষ্মী ব শ্রীকে স্থাপন করেছেন, কিন্তু শক্তিতত্বের সহায়তায় অভেদের
মধ্যে ভেদকে ব্যাখ্যা করার প্রয্মোদনীয়তা বোধ করেননি । প্রমাণ হিসাবে
তিনি বেদ (উপনিষদ) এবং ব্রহ্গস্থত্রকে অবলম্বন করেছেন, কোনো পুরাণকে
(বিশেষত: ভাগবতকে ) নয়। তার মতে নারায়ণ বা বাহদেবই ঈশ্বর, কৃষ্ণ
নন। বান্থদদেব, সংকর্ষণ, গ্রাম ও অনিরুদ্ধ__ভক্তদের অনুগ্রহ করার জন্য
ঈশ্বরের এই চার মুতিতে বিলাস (চতুব্শৃহ ) এবং যুগাবতাররূপে প্রকাশও
শ্ররামান্ছজের চিন্তিত বিষয় । শ্রী বা লক্ষ্মীর কল্পনার জন্য এবং শ্রী-ভাস্ক রচনার
জন্য তার বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী-সম্প্রদ্দায় শ্রী-সম্প্রায় ব'লে প্রসিদ্ধিলাভ করেছে।
শ্রীবামান্জের আবির্ভাবের স্বল্পপরবর্তা সময়ে নিদ্বার্ক উদিত হয়ে পূর্ববর্তী
ভাস্কর-মতকেই কিঞ্চিৎ পরিবর্তনসহ উপস্থাপিত করার প্রয়াস করেন।
ভাক্করের মতে তার অভিমতকেও ভেদাভেদ (যুগপৎ ভেদ ও অভেদ) বা]
দ্বৈতাদ্বৈত নামে অভিহিত করা হয়েছে, এবং তার সম্প্রদায়কে বল] হয়েছে
সনক-সম্প্রদায়। রামান্থজের মত ইনিও ঈশ্বরকে সচ্চিদানন্দম্বর্ূপ, জগৎ-
শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের সহায়ক ধর্মীয় পূর্বস্ৃমি ৩৫
কারণ, অপ্রাকৃতবহুগুণাধার প্রসভৃতিকূপে উপলব্ধি করেন। পার্থক্য এই যে,
ব্ শ্রীকষ্চকেই ঈশ্বর এবং রাধাকে তার শক্তি ব'লে তিনি অন্থুভব
করেছেন। এ বিষয়ে গৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিমতের সঙ্গে
তার সাদৃশ্য । রামাহ্থজের মত তিনিও জীবাত্মাকে স্বরূপতঃ চেতন, জ্ঞানাশ্রয়,
ঈশ্বর-নিয়ন্ত্রিত, ঈশ্বরাশ্রিত, পরিমাণে অণু এবং সংখ্যায় অনস্ত প্রভৃতি মনে
করেন। পার্থক্য এই যে, চিৎ এবং অচিৎ-ময় বিশ্বকে তিনি ঈশ্বরের দেহ বলে
মনে করেন না, শক্তির পরিণাম ব*লেই চিন্তা করেন। রামানুজাচার্য ভেদ্দকে
ত্বীকার করলেও তার মতে অভেদের প্রাধান্য, জীবজগৎ বা যাবতীয় প্রত্যক্ষ-
অপ্রতাক্ষ নিয়ে ঈশ্বর একটি স্ত্রমগ্র একক সত্তা । নিম্বার্কের মতে কেবল অভেদ
হ'লে ঈশ্বরও ছুঃখভাগী হয়ে পড়েন, তার পূর্ণ শুদ্ধ সত্ব। থাকে না। ঈশ্বরের এক
অংশ বিকারী, অন্ত অংশ নিবিকার এমন পার্থকাও তো হতে পারে ন।।
আবার ভিন্ন হ'লে বিশ্ব তার নিয়স্তংত্বের বাইরে থেকে যায়, আত্মা এবং জড়ের
স্বতন্ত্র সত্তার প্রসঙ্গ এসে পড়ে । স ঈশে। যদ্ধশে মায়া, স জীবে যস্তয়াদিতঃ,
ইত্যাদি বচনে মায়াধীশ এবং মায়াবশ ঈশ্বর-জীবে তিনি প্রভেদ নির্দেশ করেছেন।
আবার চিৎ ও অচিৎ যেহেতু তাব শক্তি-পরিণাম বা অংশ, সেইহেতু অভেদও
তার মতে সত্য । ব্রদ্ধের সঙ্গে জীবের ও জগতের (চিৎ ও অচিৎ-এর ) ভেদ
এবং অভেদ্দ বিষয়ে নিম্বার্ক কারণ-কার্ষের দৃষ্টাত্ত উপস্থাপিত করেছেন। ব্রদ্গ
কারণ এবং জীব ও জগৎ তার কার্য । ব্রন্গ অংশী-_জীব ও জগৎ অংশ, ব্রদ্ধ জেয়
_জীব জ্ঞাতা, ব্রঙ্গ উপাস্ত--জীব উপাসক, অন্তর্যামী ত্রদ্ম নিয়স্তা-_জীব
নিয়ন্ত্রিত। আবার ব্রহ্ম জ্ঞানস্বপ, জগৎ জ্ঞানহীন। যেমন, কারণই কার্ধূপে
অভিব্যক্ত হ'লে কারণণ্ণ কার্যগুণে বর্তমান থাকে, তেমনি ব্র্ধ এবং জীবের
মূলে কিছু এক্য আছেই | নিম্বার্ক এই ভেদ ও অভেদকে ম্বাভাবিক মনে কবেছেন
ব'লে তার অভিমতকে বাস্তব ভেদাভেদদববাদও বল। হয়। জীব ভঙ্ির চর্চ।
ক'রে শুদ্ধজ্ঞানলাভে সাধুজ্যাদি পঞ্চবিধ মুক্তির অধিকারী হয়--এসব তত্ব তিনি,
রামান্তুজাচার্ষের সদৃশভাবেই উপস্থাপিত করেছেন।
শ্রীচৈতন্য-পূর্ব অপর উল্লেখযোগ্য ভক্তি-সম্প্রদায়ের প্রবর্তক হলেন ত্রয়োদ*
শতাব্দীর মধবাচার্য । ইনি ভেদবাদী ব1 দ্বৈতবাদী-_অর্থাৎ ঈশ্বর থেকে জীব বা
জড়জগৎ বাহ্তবিক ভিন্ন এরকম মত পোষণ করেন। সুতরাং ভক্তিবাদী দার্শনিক
সম্প্রদায়ের মধ্যে মধবই শংকরের সবচেয়ে প্রবল বিরুদ্ধবাদদী। শংকরের অছৈ'
্রহ্গবাদকে তিনি মাধ্যমিক সম্প্রদায়ের বৌদ্ধদের শৃন্যবাদ বলেই মনে করেন ।
৩৬ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
তিনি পাচ প্রকারের ভেদ দেখিয়েছেন-_ঈশ্বরে ও জীবাত্মায় ভেদ, জীবাত্মা ও
জীবাত্মায় ভেদ, আত্মা ও জড়ে ভেদ, ঈশ্বরে ও জড়ে ভেদ
এবং জড়ে ও জড়ে ভে্দ। এমন কি তিনি মুক্ত আত্মার
মধ্যেও বিজ্ঞান ও আনন্দ উপভোগের তারতম্য নির্দেশ করেছেন। মধ্বের মতে
সমন্ত জ্ঞানই হচ্ছে ভেদমূলক। কোন বস্তকে জানার অর্থ অন্য বস্ত থেকে
পৃথক ক'রে জানা । রামাহুজের মত তিনি বিশ্ব এবং তাঁর যাবতীয় বৈচিত্র্যকে
সতা ব'লে মনে করেন, কিন্তু রামান্থজের মত অ-পৃথকৃসিদ্ধির ধারণা অঙ্গীকার
করেন না| রামান্জ যাকে গুণ ও ধর্ম বলেছেন, ইনি তাকেই পৃথকৃত্ব বলেছেন।
রামান্ুজের মতে ভেদ দ্বতত্ত্র সত্য ব্যাপার নয়, এক্যের ধর্ম মান্র। মধ্যের
মতে বিভেদই বাস্তব সত্য । আবার ঈশ্বরের সর্বময় কর্তৃত্ব স্বীকার করে জীব
ও জড়কে ব৷ প্রকৃতিকে ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল ব। ঈশ্বরেচ্ছায় ক্রিয়াশীল ব'লে
তিনি বিবেচনা করেছেন । তাঁর মতে সবিশেষ ব্রহ্ম স্বতন্ত্র, আর জীব অ-স্বতন্ত্র।
রামাস্থজের মতে ব্রঙ্গ জগতের নিমিত্ত কারণ এবং উপার্দন কারণ দুই-ই, মধ্বের
মতে নিমিত্ত কারণ মাত্র, উপার্দান কারণ প্রকৃতি । রামানুজের মতে সব
জীবাত্মাই ঘমান। মধ্বের মতে এক জীবাত্বা অন্য থেকে পৃথক, এমন কি,
মুক্তির পরেও আনন্দ-তারতম্য লাভ ক'রে পৃথক্ সত্তা নিয়েই বর্তমান থাকে,
যেমন,
মধবাচার্ধ
মুক্তা: প্রাপ্য পরং বিষুং তদ্দেহং সংশ্রিত। অপি।
তারতম্যেন তিষ্ঠস্তি গুণৈরানন্দপূর্বকৈঃ ॥
সাযৃজ্য, সালোক্য, সামীপ্য এবং সারূপ্য এই চারপ্রকার মুক্তির মধ্যে সাযুজ্য
মুক্তিতেও ঈশ্বর জীবাত্মার পার্থক্য বিছ্ধমান থাকে । মাধ্ধমতে উপাস্য হলেন
বৈকুঞ্ঠনাথ নারায়ণ ব! লন্দ্মীনারায়ণ, ব্রচ্লীলারসিক কৃষ্ণ নন। এই অংশে
রামানুজের সঙ্গে তার মিল, কিন্তু পাধনপথ সম্পর্কে কিছু পার্থক্য আছে।
রামানজ-মতে ভক্তিসহায়ক কর্মানুষ্ঠান ও জ্ঞানের চর্চা, মাধ্বমতে বর্ণাশ্রমধর্মপালন
এবং কর্মফল কৃষ্ে সমর্পণ, পরিশেষে জ্ঞান | মহাপ্রতু-প্রদশিত গৌড়ীয় মতে
রাগাম্থগ। ভক্তির সাধনই অনন্য পথ, আর লক্ষ্য মৃক্তি নয়, ব্রজপরিকরদের মধ্যে
স্থান লাভ ক'রে স্থায়ী ভাবে কৃষ্ণসেবানন্দের অধিকার লাভ । এসব আমরা একটু
পরেই বিস্তৃতভাবে আলোচন। করছি। মধ্বাচার্য জীবের যুক্তি বিষয়ে কৃপণতা
দেখিয়েছেন । তিনি মুক্তির অধিকারভেদ প্রদর্শন করেছেন। দেবতা, খষি
এবং উচ্চবর্ণ অর্থাৎ ত্রাহ্মণবর্ণের মুক্তি হয়, সংসারে আসক্ত মানুষের, বিশেষতঃ
শ্রীচৈতন্তের আবিঙ্ডাবের সহায়ক ধর্মীয় পূর্বভূষি ৬৭
আস্থরভাবসম্পন্ন ব্যক্তিদের কদাপি হয় না, এরকম অভিমত পোষণ করেছেন ।
এ বিষয়ে ভক্তিতত্ববাদীর্দের সকলের থেকেই তিনি পৃথকৃ।
ভক্তিবিষয়ে তত্ববাদীদের চতুর্থ হলেন আচার্য বল্পভ, ধার আবির্ভাব শ্রীচৈতন্তের
সমকালে । তার সম্প্রদায় রুদ্র-সম্প্রদ্দায় নামে খ্যাত। সনক-সম্পদায়ের নিশ্বার্কের
মত ইনিও শ্রীকুষ্ণকেই সচ্চিদানন্দবিগ্রহ পূর্ণব্রঙ্গ বলে নির্ধারণ করেছেন। এই
ঈশ্বর সমস্ত সদ্গুণের আধার এবং যাবতীয় বৈচিত্র্য এবং বিরুদ্ধতারও আশ্রয়।
একই সময়ে এক এবং বু । একোহ্হং বহু স্তামূ। তার ইচ্ছায় তিনি নিজেকে
জড় ও চিত্রূপে প্রকাশ করেছেন । স্থ্টি ভ্রম নয়, অসৎ
মায়াও নয় । সং মায়াশক্তি অবলম্বন ক'রেই ব্রহ্ম নিজেকে
বহুরূপে প্রকাশ করেছেন। স্যগ্রি যেমন বিবর্ত নয়, তেমনি পরিণামও নয়,
অবিকৃত পরিণাম । এজন্ ত্রন্ধকে বিশ্বের উপাদ্দান-কারণ না বলে “সমবায়ী
কারণ' ব'লে তিনি অভিহিত করতে চান। অগ্নির সঙ্গে স্ষুলিঙ্গের অথবা
মণির সঙ্গে জ্যোতির যে সম্বন্ধ তা-ই ব্রদ্ষের সঙ্গে বিশ্বের। তিনি মায়ার
সঙ্গে ব্রঙ্গের সম্বন্ধ স্বীকার করতে চাননি । এজন্য তার মতবাদকে শুদ্ধাদ্বৈত
নাম দেওয়া হয়েছে। সচ্চিপদ্ানন্দের সৎ থেকে জীবর্দেহ, চিৎ থেকে
জীবের জ্ঞান এবং আনন্দ থেকে তার আত্মা বা অন্তর্যামী গঠিত বলে
তিনি মনে করেন। এই হিসাবে জড়বস্ত জীব ও অন্তর্যামী ব্রহ্ম থেকে
মূলতঃ অভিন্ন ।
ভাঙ্করমতে জীবাত্ম! ঈশ্বরের সঙ্গে অভিন্ন, কেবল কর্মের জন্ত ভিন্নাকার
প্রাপ্ত । রামান্জমতে ঈশ্বরের সঙ্গে জীবাত্মার দেহ-সম্পর্ক। নিষ্বাকের মতে
জীবাস্মা পৃথকূ এবং অপৃথক্ দুই-ই, সপীম এবং আশ্রিত এই অর্থে পৃথকৃ।
মধ্বের মতে জীবাত্মা ঈশ্বরাধীন হলেও স্বতন্ত্র অন্তিত্বসম্পন্ন। বল্লভের মতে
অংশ বা অণু, সেজন্য কোনে? গুণ প্রকাশিত, কোনো গুণ আচ্ছন্ন। পরব
আলোচ্য অচিস্ত্য-ভেদবাভেদ-বাদে জীব ব্রন্মের তটস্থ। শক্তির প্রকাশ, ঈশ্বরের
চিদংশ) যেমন মণির জ্যোতি বা অগ্নির ক্ষুলিঙ্গ ; বহিরঙ্গ! মায়াশক্তির দ্বার]
আবৃতম্বরূপ |
বল্লভাচার্ষ শুদ্ধা ভক্তির পথিক। এই ভক্তি তার মতে কর্ম বাঁ জ্ঞান থেকে
আসে না। ঈশ্বররুপাই এর আবির্ভাব ঘটায়। ভক্তিকে তিনি বলেছেন ঈশ্বরে
সুদুঢঃ সর্বতোহধিকঃ স্নেহ: । বল্লভাচার্ধ কথিত ভক্তিবাদে ঈশ্বরের মায়াসম্পর্ক-
রহিতত্ব, জীবন্বর্ূপ এবং আরও" নান৷ গৌড়ীয় বৈষ্ব মতবাদের কথা রয়েছে
বল্পভ
৩৮ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
ব'লে শ্রদ্ধাদ্বৈতবাদকে অনেকে অচিস্ত্যভেদাভেদবাদের দ্বারা প্রভাবিত ব'লে
মনে করেন।
সে যাই হোক, দেখা গেল শ্রীচৈতন্তের লীলা প্রকাশের পূর্ব থেকে বাঁঙ্লায়
এবং বহির্বঙ্গে ঈশ্বরস্বরূপ এবং ভক্তিমত একট তাত্বিক গ্রতিষ্ঠাও লাভ করছিল।
মহাপ্রতূর আবির্ভাব এবং নবধর্মের দ্বরূপ-প্রদর্শন এসব তত্বের প্রতি নিরপেক্ষ-
ভাঁবে সিদ্ধ হলেও এবং তাঁকে তত্ব-প্রতিষ্ঠাত। এবং প্রচারক সম্প্রদায়গুরুদদের মত
কোনো একজন মনে করা না গেলেও, মায়াঁবাদ-নিরসন এবং অচিস্ত্য-ভেদাঁভেদ
মত স্থাপনে এই সব তত্ববিচার যে পরবর্তীকালে বহুল পরিমাণে সাহায্য করেছিল
সেকথা বলা বাহুল্য ।
(৩) খ্রীস্টীয় ছাদশ-একাদশ শতাব্দী থেকে পিছনের দিকে খ্রীস্টপূর্বাব্
পর্যন্ত দৃষ্টিনিক্ষেপ করলে উপলব্ধি করা যায়, ইতিহাসলভ্য অনল্প দেঁডহাঁজার বছর
ধ'রে ভক্তিভাবুকতার বিস্তৃত চর্চা ভারতে হয়েছিল। দ্াাক্ষিণাত্যের আলবারদের
উচ্দৃদিত রাগভক্তিসংগীতকে বদি প্রার্দেশিক ব*লে মনে করাও যায়, গীত] এবং
ভাগবতপুরাণের সর্বভারতীয় প্রসারের কথা কোনোমতেই
অস্বীকার কর। যায় না। এ ছাড়া বহুধা বিচিত্রীকৃত
রামচরিত, বিস্তৃত পঞ্চরাত্র-সংহিতা, দাক্ষিণাতো বচিত
ব্রদ্ষনংহিত এবং কর্ণামৃতাদি স্তবগীতগ্রস্থ, বিষণ, বায়ু, পঞ্ম, মংস্ত, স্কন্দ প্রভৃতি
ক্য়েকটি পুরাণ এবং আরও পিছনে গেলে উপনিষদ, এমন কি, ব্রাহ্মণ গ্রন্থে
ভগবদ্তক্তিপ্রতিপাদ্দক উপলব্ধির বিন্যাস দেখা যাবে। ব্যাসরচিত বেদাস্তক্ত্রের
বিপুল গুভাব তো! রয়েছেই । বিশিষ্টাদ্বৈত, দ্বৈতাদ্বৈত, দ্বৈত, শুদ্ধাদ্বৈত এবং
পরিশেষে অচিস্ত্যভেদাভেদবাদের প্রতিষ্ঠাতা গোস্বামীগণ এই সব গ্রন্থ থেকে
তাদের স্বাভিমতের পরিপোৌঁষক বহু অংশ উদ্ধার করেছেন। এই সমস্ত
ভগবদ্ধর্শনযূলক রচনার মধ্যে ভাগবতপুরাণকে মৃখ্যভাবে অবলম্বন কবে গৌড়ীয়
৫বঞষ্চব রাগ।ত্মিক সাধনার ধার! পুষিলাভ করেছে।
ইতিহাসবিদ্ ডঃ ভাগারকর, ডঃ হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী প্রমুখ" আধুনিক
পণ্ডিতগণ নারায়ণ-বাস্থদেব-কষ্ণ উপাসনার প্রাথমিক ইতিবৃত্ত নির্ণয়ের প্রয়াস
করেছেন। তার] দেখিয়েছেন যে, বৈদ্িক দেবত। বিষণ ধাকে এতরেয় ও শতপথ
ব্রাহ্মণে যক্ঞপুরুষ ব'লে অভিহিত করা হয়েছে এবং “ইদনং বিুবিচক্রমে ত্রেধা
নিদধে পদম্* “তদ্িফোঃ পরমং পদং সদ। পশ্থাস্তি স্থুরয়ঃ” প্রভৃতি বৈনক মন্ত্রে
পূর্ব ইত্তিবৃত্তে
কৃষ্ণপ্রসঙ্গ
শ্রীচৈতন্তের আবির্ভাবের সহায়ক ধ্মীয় পূর্বভূমি ৩৯
ধার গৌরব কীতিত হয়েছে তিনি শ্রেষ্ঠ দেবতা মাত্র, হতে পারেন সূর্য । নারায়ণ
শব্দও প্রথম শতপথ ব্রাঙ্গণে দেখ যাচ্ছে, কিন্ত তৈত্তিরীয়-আরণ্যকে বিষণ এবং
নারায়ণকে এক দেবত। ব'লে কল্পনা করা হয়েছে । ছান্দোগ্য উপনিষদে গ্রথম
কৃষ্ণের কথ পাচ্ছি, তিনি দেবকীপুত্রও, কিন্তু তিনি ধধিমাত্র, অজিরসশিষ্য
কুষ্*-নারায়ণকে ভক্কিধর্ষের উদ্গাতাবূপে এতিহাসিকের। দেখেছেন । পরে তিনি
বিষ্ণুর সঙ্গে অভিন্ন হয়ে পড়েছেন লৌকিক ধারণায় । স্র্য-বিষণণ এবং সবিতৃ-
মণ্ডলমধ্যবর্তা নারায়ণ একই কল্পনার বিকাশ মাত্র। বিষণ-নারায়ণ ও বাস্থদেব-
কৃষ্ণের অভিন্নতা যে খুস্টপূর্বাব্ধ অন্ততঃ সপ্তম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত ত। জানা
যায় তৈত্তিরীয় আরণ্যক থেকে--“নারায়ণায় বিদ্বহে, বাসুদেবায় ধীমহি,
ত্ো বিষুঃ প্রচোদয়াৎ” ইত্যাদি । বৈয়াকরণ পাণিনিও এই অর্থেই বাহ্থদেব
শবের ব্যসহার করেছেন। খ্রীস্টপূর্ব চতুর্২-পঞ্চম শতাব্দীতে বাস্থদেব-কৃষ্ঃের
মূল কাহিনীগুলি এবং কৃষ্ণের অবতারত্ব প্রায় স্থপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মহাভারতই
তার প্রমাণ। তা ছাড়) পতঞ্জলির মহাভাষো গ্রথিত-_অসাধুর্মাতুলে কৃষ্ণ এবং
জঘান কংসং কিল বাহ্থদেবঃ প্রভৃতিও একালে পূর্ণ সংগঠিত কৃষ্ণকাহিনীর
পোষক। ঘটজাতকে কৃষ্ণের লক্বাচুলের বিবরণ রয়েছে । বহু পরবর্তাঁ কালে
হলেও শ্রীরুষ্ণকীর্তন কাব্যের বর্ণনায় কৃষ্ণ “ঘোড়াচুলা”। আমাদের অনুমান
কৃষ্ণের গোবিন্দত্ব বা গো-পালকত্বের কাহিনীও খ্রীস্টপূর্বাবেই প্রসারলাভ
করেছিল। একই সময়ে বান্ুদেব-কৃষ্ণ যে ভগবান ব'লে গৃহীত হয়েছিলেন তার
স্থদৃঢ প্রমাণ পাওয় যায় বেসনগরে আবিষ্কৃত শিলালেখ থেকে । এঁ শিলালেখ
অন্থসারে গান্ধারের নিকটবত্ত গ্রীক রাজ বানদেব কৃষ্ণের উদ্দেশে গরুড়ধ্বজ
উৎসর্গ করছেন। এ হ'ল খ্রীস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর কোনে। সময়ের ঘটন|।
প্রাচ্যবিদ্ভার এতিহাঁসিক ডঃ বীন্টারনীৎস্ও মনে করেন যে অন্ততঃ দ্বিতীয়
শতাব্দীতে ভারতের গ্রীক নরপতিরা ভাগবতধর্ম গ্রহণ করেন। ভক্কিপথিক
সাত্বত বা ভাগবতধর্ম-সম্প্রদায়ের স্থ প্রাচীন অস্তিত্ব ইতিহাসের সমর্থন লাভ করেছে
দেখা গেল। গুপ্তযুগের আরম্ভ থেকে কিছুকালের জন্য ভগবান্ হিসেবে শিবের
প্রতিষ্ঠা । যি ডঃ হ্মে রায়চৌধুরীর মতে গুরগযুগের পূর্বেই কৃষ্ণোপাননার
বহুল প্রচলন ঘটে গেছে। লেখাস্থাপন ও মন্দিরাদি নির্মাণ এবিষয়ের পরিচয়
বহন করে। আর বুদ্ধচরিত'কাব্যের গোপীলীল! ও কালিদাস-উল্লিখিত
“বহেণেব স্ফুরিতরুচিনা গোপবেশস্য বিষ্টোঃ* নিঃসংশয়ে ভাগবতের কৃষ্ণেরই
উপাসনার কথ। জানায়।
6৬ বৈষ্ণব রস-প্রকাশ
স্থতরাং উপনিষর্দের সময় থেকেই যজ্ঞাদি কর্মের পাশাপাশি ভক্তিযূলক
ধর্মাচরণের একটি ধার! বহমান ছিল এমন মনে কর অসংগত হবে না। সে-
ভক্তি প্রথম বিষ্ণকে নিয়ে অথব! বাস্থদেবকে নিয়ে, অথব। গোপ-বিষুণ কি
বাস্থদেব-কৃষ্ণকে নিয়ে এ তথ্যের সমাধান অসম্ভব বললেই চলে, কিন্তু কৃষ্ণ যে
এতিহানিক পুরুষ ছিলেন এবং লৌকিক-অলৌকিক বনৃবিধ শক্তির অধিকারী
ছিলেন এ বিষয়ে সন্দেহ ক্লে মহাভারতাদি বন্ু গ্রন্থকে কাল্পনিক বলে বর্জন
করতে হয়। ইতিহাস-জনশ্রতি কথা-উপকথ! মিলে, ব্রা্মণ্য-অতব্রাঙ্মণ্য সংস্কৃতি
ঘিরে কষ্ণবিষয়ক কাহিনী এত বিচিত্র ও অদ্ভুত রূপ পরিগ্রহ করেছে যে তা
থেকে নিবিবাদ ইতিহাস রচনণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে । মনীষী বঙ্কিমচন্দ্র তান
স্বমতে মহামানব কৃষ্ণের এতিহাসিকত। নিণয়ে একটা প্রারভ্িক উদ্যোগ
করেছিলেন, কিন্তু ত1 অসম্ভব ব*লেই হয়ত সে-পথে আর কারে অগ্রগতি ঘটেনি।
এদেশের মনস্বী ভক্তের অধ্যয়নে কৃঞ্চকথাই সাহিত্য-ইতিহাস-ধর্মগ্রন্থে সর্বত্র
ব্যাপ্ত রয়েছে, এ দেশ শরণাগতের, ভক্তের । দেখা হয়েছে__বেদে রামায়ণে
চেব পুরাণে ভারতে তথা । আদাবস্তে চ মধ্যে চ হরি: সর্বত্র গীয়তে ॥ কবি
নবানচন্দ্র সেন তার 'রৈবতক” কাব্যের প্রথম সর্গে অজু'নের মুখ দিয়ে কষ্কথা
বিষয়ে যে বিল্ময়-বিমিশ্র প্রশ্ন প্রকাশ করেছেন, সে প্রশ্নে আমাদের সকলেরই
মনের কথ। ব্যক্ত হয়েছে £
“শুনিয়াছি জনরব সহত্ জিহবায়
কহিতে সহশ্রর্ূপে জীবন তোমার ।
'**সেই বাল্যক্রীড়া, সেই কৈশোর প্রমোদ,
যৌবনের সে বীরত্ব, দেবত্ব তোমার,
সর্বশেষ প্রকৃতির শোভাঁর ভাগ্ার
রৈবতকে এ দুর্ভেছ্য ছুর্গের নির্মীণ,
সিন্ধুগর্ভে দ্বারাবতী অলক সমান-_
অন্তুত কাহিনী সব।”
“অদ্ভুত কাহিনী”_ ধীরে ইষৎ হাসিয়'
উত্তরিল৷-_"সত্য পার্থ, অদ্ভুত কাহিনী
আমার জীবন ।”
উপনিষদ্গুলি নিগুণ-সগুণ অসৎ-সৎ ত্যাগ-বৈরাগা জ্ঞান-ভক্তি প্রভৃতি
নিয়ে বিভিন্ন খষির বহুবিচিগ্র উপলব্ধি বহন করছে, ব্যাপকভাবে বেদের সংলগ্ন
শ্রীচৈতন্তের আবির্ভাবের সহায়ক ধর্মীয় পূর্বভূমি ৪১
ক'রে এগুলিকেও শ্রুতি আখ্যায় অভিহিত কর! হয়েছে, যদিচ বৈদিক মন্ত্র ও
্রাহ্মণার্দির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে উপনিষর্দের গৃঢ়ার্থদর্শনের কোনে। মিল নেই।
শংকরাচার্য তার জ্ঞানভিত্তিক ব্রদ্ধাহভবের ক্ষেত্রে বৈদিক কর্ষকাণ্ডের উপর
নির্ভরশীল হওয়ার যৌক্তিকতা বোধ করেননি । একমাত্র
মীমাংসকের1 এবং ভক্তিবাদী সম্প্রদায়ের মধ্যে রামানুজ
এবং মধ্ব কর্ষকে বহমান করেছেন । গৌড়ীয় বৈষ্ঞবধর্মে বেদবিহিত
কর্ষাষ্ঠানের বা. বর্ণশ্রমধর্ষ পালনের কোনো স্থান নেই। জনেরও নেই, তবু
যেহেতু বিভিন্ন উপনিষদে সগুণব্রন্দের ম্বরূপ এবং উপাসনার পরিচয় দিয়ে
ভক্তির পথ উন্মোচন কর হয়েছে সেজন্য ভক্তিবাদী তত্বদশর্শর। সকলেই উপনিষদ
থেকে বিভিন্ন স্থান গ্রহণ ক'রে ম্বাভিমত সমর্থন করেছেন। বাদরায়ণকৃত
্র্মজিজ্ঞাসা হত্রগুলিকে অনেকেই পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন, ওর "মাম়াবাদী
ভাষ্ে'র প্রতিবাদকল্পে রামান্ুজ শ্রীভাষ্য রচনা করেছেন। ব্যাসস্থত্রের
'জন্মাগ্ধন্ত যতঃ' 'আত্মকৃতেঃ পরিণামাঁৎ 'আত্মনি চৈবং বিচিত্রাশ্চ হি* প্রকাশবচ্চ
অবৈয়র্থ্যাৎ” “লোকবত্ব, লীলাকৈবল্যম্, প্রভৃতি বহুস্ত্র ভক্তিবাদীগণ পরিণামবাদ,
ভ্দোভেদবাদ, লীলাবাদ প্রভৃতি বোঝাতে বারংবার উদ্ধত ক'রে ব্যাখ্যা
করেছেন। তেমনি বিভিন্ন উপনিষদের নিয়-উদ্ধৃত মন্ত্রগুলিকেও ভক্তি-সম্প্রদায়ে
প্রায়শঃ অবলম্বন করতে দেখ যায় £ সগুণ ব্রদ্ধের স্বব্প প্রমাণ করতে-_“সত্যং
জ্ঞানম্ অন্ত ব্রহ্ম ( তৈত্তিরীয় ), “বিজ্ঞানমানন্নং ব্রহ্ম” ( বৃহদারণ্যক ), 'সদেব
সৌম্যেদমগ্র আসীৎ' (ছান্দোগ্য ), “আনন ত্রন্মেতি ব্যজানাৎ? ( তৈতভিরীয় ),
'যতে। বা ইমানি ভূতানি জায়স্তে'..তদেব ব্রদ্ধণ (তৈত্তিরীয় ) প্রভৃতি ।
এ ব্রঙ্গের এশ্বর্য ও সর্বময় কর্তৃত্ব বোঝাতে খশ্মিন্ বিজ্ঞাতে সর্বমিদং
বিজ্ঞাতং ভবতি* (মুণ্ডক), “তমেব বিদিত্বা অতিমৃত্যুমেতি নান্যঃ পন্থাঃ
বিদ্যতেহয়নায়” ( স্বেতাশ্বতর ), “তমীশ্বরাণাৎ পরমং মহেশ্বরম্ত ( শ্বেতাশ্বতর ),
'তমেব ভাস্তমন্ুভাতি সর্বং তশ্ত ভাস! সর্বমিদ্ং বিভাতি' (মুণ্ডক ), 'এতস্ত বা
অক্ষরস্ত প্রশাসনে গাগি স্থ্যাচন্দ্রমসৌ বিধৃত তিষ্ঠত:, (বৃহদারণ্যক ) প্রভৃতি ।
ব্রদ্মের মধ্যে পরস্পর-বিরুদ্ধ ধর্মের আশ্রয় এবং ব্রহ্গকে অপ্রারুতদেহী বোঝাতে
'অণোরণীয়ান্ মহতো৷ মহীয়ান্ ( শ্বেতাশ্বতর ), “তদদেজতি তন্নৈজতি তদ্দুরে
তদ্ বা অস্তিকে” ( ঈশ ), 'আসীনে! দুরং ব্রজতি শয়ানো! যাতি সর্বত* (কঠ ),
'অপাণিপাদ!। জবনে গ্রহীতা পশ্ঠত্যচচ্ষঃ ল শৃণোত্যকর্ণ ( শ্বেতাশ্বতর )
প্রভৃতি | শক্তিতত্ব এবং মায়ার বাস্তবতা প্রতিষ্ঠাকল্পে "পরাস্ত শক্তিবিবিধৈব
প্রমাণমূলক শান্ত
৪২ বৈষ্ণব-রস-গ্রকাশ
শ্রয়তে স্বাভাবিকী জ্ঞানবলক্রিয়েতি ( শ্বেতাশ্বতর ), 'অজামেকাং লোহিতশুু-
কৃষ্ণা বহুবীঃ প্রজাঃ স্জামানাঃ স্বরূপাঃ' (শ্বেতাশ্বতর), 'মায়াং তু প্রর্ৃতিং
বিগ্বান্মায়িনং তু মহেশ্বরম্* (শ্বেতাশ্বতর) প্রভৃতি । ঈশ্বরের রসম্বরূপত্ব এবং ভক্তের
রসানন্দ লাভ বিষয়ে 'রসো৷ বৈ সঃ। রসং হোবায়ংলব্কপানন্দী ভবতি” (তৈত্তিরীয় ),
“আনন্দ ব্রচ্মণো বিদ্বান নবিভেতি কুতশ্চন ( তৈত্তিরীয়), 'আনন্দান্ধ্েব
খম্বিমানি ভূতানি জায়ন্বে আনন্দেন জাতানি জীবস্তি' ইত্যাদি ( তৈত্তিরীয় ),
“কে। হেব অন্যাৎ কঃ প্রাণ্যাৎ যন্যেষ আকাশ আনন্দো। ন শ্ঠাৎ। ( তৈত্িরীদ )
প্রভৃতি । জীবের সঙ্গে ব্রন্গের ভেদাভেদ, ব্রন্দের অপ্রাকৃত দেহবত। ও অপ্রাকৃত
বাসনা বোঝাতে “তদৈক্ষত বহ স্যাং গ্রজায়েয়” (ছান্দোগ্য ), “সোঙকাময়ত বনু
স্তাং প্রজায়েয় ( তৈত্তিরীয় ), “বালাগ্রশতভাগন্য শতধ] কল্পিতশ্য চ ভাগে জীবঃ
স বিজ্ঞেয়ঃ, ( শ্বেতাশ্বতর ), “ভিষ্ভতে হ্থাদয়গ্রস্থিঃ ছিছ্যান্তে সর্বসংশয়াঃ-"'দৃষ্
এবাত্মনীশ্বরে' (মুণ্ডক) প্রভৃতি । ঈশ্বরকৃপার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে “নায়মাত্ম'
প্রবচনেন লভ্যঃ-*'যমেবৈষ বৃণুতে তেন লভ্যঃঃ (কঠ); ঈশ্বরেই প্রিপ্তা
সম্পর্কের স্থিতি বোঝাতে “তদেতৎ প্রেয়ঃ পুত্রাৎ প্রেয়ে! বিত্তাৎ প্রেয়োইন্ম্মাৎ
সর্বস্মাদস্তরতরং যদয়মাত্ম!” (বৃহদদারণ্যক ) প্রভৃতি ।
বেদ এবং উপনিষদের মন্ত্রমূহ বিভিন্ন সম্প্রদায়-গুরুর! ম্বমতের অন্থকৃলে
ব্যাখ্যা করেছেন। শংকরাচার্য করেছেন অছৈত নিগুণ ব্রহ্ম স্থাপনের অন্কুলে»
রামানুজাচার্য করেছেন তার বিশিষ্টাদ্বৈত স্থাপনের অভিপ্রায় । বাদরায়ণের
ব্রহ্মজিজ্ঞাসাস্ত্র সম্বন্ধেও একই কথা বলা চলে। বস্ততঃ এ সব তত্বচিন্তা
স্প্রাচীন কালের ব'লে এগুলির ভাষ। ও ইঙ্গিত নিগৃঢ় এবং জটিল হয়ে পড়ায়,
বিভিন্ন অর্থ নিয়ে বিভিন্ন মনীষীর কাছে প্রতিভাত হয়েছে। এজন্য গৌড়ীয়
বৈষ্ণবগণ শ্রুতিকে গৌণ-প্রমাণ হিসাবেও উপস্থাপিত করতে চাননি । গোস্বামীগণ
মহাপ্রভূ-প্রদদশিত নবধর্মের তত্বরূপ দিতে গিয়ে পূর্ব-পূর্ব ভক্তি-সম্প্রফায়-গুরুদের
পদ্ধতি প্রয়োজনমত অন্থদরণ করেছেন । গোস্বামীগণ ইতিহাস-পুরাণকেই
প্রামাণ্য শাস্ব রূপে শিরোধার্য করেছেন। এর মধ্যে আবার ভাগবতই তাদের
কাছে শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য গ্রন্থের মর্যাদায় ভূষিত হয়েছে । শ্রীজীবগোত্বামী তার
“তত্বসন্দর্ভ' বিভাগে বিষয়টিকে নিয়ে বিস্তৃতভাবে আলোচন। ক'রে প্রমাণ হিসাবে
ভাগবতের শ্রেষ্ঠতা সিদ্ধান্ত করেছেন। বেদের ন্বতঃপ্রামাণ্যের খর্বত1 সাধন ন।
ক'রেও তিনি কিভাবে ধীরে ধীরে ভক্তিবিষয়ে ভাগবতকেই একমাত্র শাস্ত্র স্থাপন;
করেছেন তা গ্রসঙ্গত্রমে মংক্ষেপে দেখা যেতে পারে £
শ্রচৈতন্যের আবির্ভাবের সহায়ক ধর্মীয় পূর্বসূমি ৪৩
“তত্র চ বেদ-শবস্য সম্প্রতি ছুষ্পারত্বাৎ দুরধিগমার্থত্বাচ্চ তার্থনির্ণায়কানাং
মুনীনামপি পরম্পরবিরোধাঁদ্ বেদরূপে! বেদার্থনির্ণায়কশ্চেতিহাসপুরাণাত্মক:
শব্দ এব বিচারণীয়ঃ। তত্র চ যো বা বেদশবে। নাত্মবিদদিত: সোহপি
তাদৃষ্ট্যান্থমেয় এবেতি সম্প্রতি তন্তৈব প্রমোত্পার্দকত্বং স্থিতম। তথাহি
মহাভারতে মানকীয়ে চ 'ইভিহাসপুরাণাভ্যাং বেদং সমুপবৃংহয়েৎ, ইতি।
***ঝগার্দিভিঃ সমম্ অনয়োরপৌরুষেয়ত্বেনাভেদে। মাধ্যন্দিনশ্রতাবেব বাজাতে
“এবং বা অবেহস্ত মহতো। ভূতশ্ নিংশ্বসিতমেতদ্ ধগ্থেদে। যন্তুর্বেদঃ সামবেদোই
থর্বাঙ্গিরম ইতিহাস: পুরাণম্ ইত্যাদিন11-"পুরাঁণং পঞ্চমো। বেদঃ 'ইতিহাসঃ
পুরাণধ পঞ্চমো বেদে উচ্যতে” েদানধ্যাপয়ামাম মহাভারতপঞ্চমান্,
ইত্যাদৌ।**অথ বেদার্থনির্ণায়কত্বক্ক বৈষ্ণবে "ভারতব্যপদেশেন হ্থাম্ায়ার্থ:
প্র্দশিতঃ| বেদাঃ প্রতিষ্ঠিতাঃ সর্বে পুরাণে নাত্র সংশয়ঃ॥ ইত্যাদৌ।
'**বেদশব্দেনাত্র পুরাণাদিদ্বয়মপি গৃহাতে। তরদ্দেবমিতিহাসপুরাণ-বিচার
এব শ্রেয়ানিতি সিদ্ধমূ। তত্রপি পুরাণাশ্যব গরিম| দৃশ্যতে | উক্তং হি
নারদীয়ে “বেদার্থাদধিকং মন্যে পুরাণার্থং বরাননে। বেদাঃ প্রতিষ্ঠিতাঃ সর্বে
পুরাণে নাত্র সংশযঃ ॥৮*-অথ পুরাণানামেবং প্রামাণ্যে স্থিতেইপি তেযামপি
সামস্ত্যেনাপ্রচরদ্রপতাৎ নানাদেবতাপ্রতিপাদকপ্রায়ত্বাৎ অর্বাচীনৈঃ ক্ষুদ্র
বুদ্ধিভিরর্থে1 দুরধিগমঃ ইতি তদবস্থ এব সংশয়ঃ।
তর্দেবং সতি তত্তৎকল্পকথাময়তেনৈব মাংস্ত এব প্রসিদ্ধানাং তৎপুরাণানাং
ব্যবস্থা জ্ঞাপিতা, তারতমন্ত কথং স্তাঁৎ যেনেতরনির্ণয়ঃ ক্রিয়েত। সত্বাদি-
তারতম্যেনৈবেতি চে “িত্বাৎ সঞ্জায়তে জ্ঞানম্, “সত্বং যদ ব্রহ্মদর্শনমি*তি চ
হ্যায়াৎ সাত্বিকমেব পুরাণাদিকং পরমার্থ-জ্ঞানায় প্রবলমিত্যায়াতম্। তথাঁপি
পরমার্থেইপি নানাভঙ্গ্যা বিপ্রতিপছ্ধমানানাৎ সমাধানায় কিং শ্যাৎ। যদি
সর্বস্তাপি বেদস্য পুরাণন্য চার্থনির্ণযাঁয় তেনৈব শ্রীভগবত) ব্যাসেন ব্রহ্গস্থত্রং
কুৃতম্ঃ তদবলোকনেনৈব সর্বোইথো। নির্ণেয় ইত্যুচ্যতে তি নান্তস্থত্রকার-
ুন্তনগতৈঃ মন্যেত। কিঞ্চাত্যন্তগৃঢ৭থানমল্লাক্ষরাণ।ং তংস্থত্রাণামন্যা বং
কশ্চিদাচক্ষীত, ততঃ. কতরদিবাত্র সখাধানম্্। তদেবং সমাধেয়ম্
যগ্যেকতমমেব পুরাণলক্ষণমপৌরুষেয়” শান্বং সর্ববের্দেতিহাসপুরাণানামর্থসার,
্্ষসথত্রোপজীব্যঞ্চ ভবদ্ তৃবি সম্পূর্ণ প্রচরজ্রপং স্তাৎ ! সত্যমুক্তম। যত এব
চ সর্বপ্রমাণানাং চক্রবতিতৃতমন্ম্দভিমতং শ্রীমস্তাগবতমেবোদ্ভাবিতং ভবতা]।
অর্থাৎ_“বহুকাল অতীত হওয়ায় বৈদিক সাহিত্যের কিছু কিছু লুগ্ত ব৷
৪৪ বৈষ্ণব-রস-প্রকশি
অদূল-বর্দল হয়ে পড়েছে, তা? ছাড়! ওর অর্থও ঠিক ঠিক অনুধাবন করা
ছুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে, আর যে-সব মনীষী বেদ-উপনিষদের “অর্থ নির্ণয় করতে
চেয়েছেন তাদের অভিমতে বিরোধ এত বেশি ষে সেগুলির অথথ পরিষ্ফুট
ক'রে বল! হয়েছে এমন ইতিহাস-পুরাঁণের আশ্রয় গ্রহণ করাই শ্ররেয়স্কর পন্থা
বেদ-উপনিষর্দে ষ উহা রয়ে গেছে এমন বিষয়ও এ ইতিহাস-পুরাণ থেকে
স্বচ্ছন্দে অনুমান ক'রে নেওয়া যাবে। এই জন্তেই ভারতকার এবং ম্মার্ত
মন্ট ধলেছেন 'ইতিহাস পুরাণের সাহায্যে বেদার্থ পরিপূরণ ক'রে নিও? ।
.*খগবেদাদির সঙ্গে ইতিহাসপুরাণের অপৌরুষেয়ত্বের বিষয়ে অভেদ সম্পর্কে
বৃহদারণ্যকের এই অভিমত প্রণিধানযোগ্য--সেই মহান্ দেবাদিদেবের
নিঃশ্বাস থেকেই কৃ, যজুং, সাম, অথর্ব এই চার বেদ এবং ইতিহাস-পুরাণ
বিনির্গত হয়েছে ।”...পুরাণ হ'ল পঞ্চম বেদ। উক্ত আছে-_-ইতিহাস এবং
পুরাঁণ পঞ্চম বেদ” “মহাভারত যার পঞ্চম এমন বেদসমূহ অধ্যাপন!
করেছিলেন; ।---বিষ্ণপুরাণেও এইভাবে বেদার্থ স্থির করা হয়েছে “মহাঁভারত-
রচনায় সুকৌশলে বেদার্থ প্রকটিত কর হয়েছে । অখিল বেদকে যে পুরাণেই
প্রতিষ্ঠা দেওয়া! হয়েছে এতে সংশয় নেই” ।"**বেদশব্বে এখানে ইতিহাস
এবং পুরাণ এ ছুইও গ্রহণীয়। স্থতরাং এই ছাড়ায় যে ইতিহাস-পুরাণের
ব্যাখ্যানই শ্রেয়। ইতিহাস-পুরাণের মধ্যে আবার পুরাণেরই গৌরব সমধিক ।
নারদীয় পুরাণে বলা হয়েছে “বেদার্থের চেয়েও পুরাণার্থের মহিম! বেশি।
অখিল বেদকে পুরাণসমূহের মধ্যেই প্রতিষ্ঠ। দেওয়! হয়েছে? ।**.এইভাবে
পুরাণসমূহকে যর্দি প্রমাণ ব'লে স্থির করা যায়ও, তবু সংশয় ঘোচে না,
কারণ, পুরাণগুলিও যথাযথ হাবে আমর পাচ্ছি না, তা ছাড়া এগুলির মধ্যে
নানা দেবতার বিষয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলে সাম্প্রতিক এবং স্বত্পবুদ্ধি
মানুষের পক্ষে ওগুলির বক্তব্য নির্ণয় কর! ছুব্ধহ হয়ে পড়েছে।
এরকম অবস্থায় ডাঁবীকালের মানহ্িষ উতস্থক হয়ে নিজ নিজ মতান্রসারে
নির্বাচন করবে এই বিষয় বিবেচন। করে মতস্যপুরাণ পুরাণের সত্ব, রজঃ, তম:
এই তিন গুণ অনুসারে বিভাগ স্থির করেছে। তিন গুণের মধ্যে সত্বগ্তণের
প্রাধান্তের জন্য তাহ”লে সাত্বিক পুরাণগুলিই পরমার্থতত্ব বিষয়ক জ্ঞানের জন্য
গৃহীত হোক, যেহেতু উক্ত 'সাছে 'সত্বের থেকে জ্ঞান জন্মে “সত্বগুণের ফলে
্রহ্মদর্শন হয়” । ঠিক কথা, কিন্ত সাত্বিক পুরাণগুলিতেও তো পৃথক পৃথক্
রীতিতে পরমার্থ নিরূপণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রেই ব। সমাধান কে।খায়?
শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের সহায়ক ধর্মীয় পর্বসূমি ৪৫
ব্যাসের বেদ্াস্তস্ত্রের কথা এখন স্বাভাবিক ভাবেই উঠতে পারে। তাতে
ব্যাসদেব সমস্ত বেদপুরাণের সারার্থই নির্ণয় করেছেন, আর, বেদাস্তসুত্রকে
শান্সপ্রমাণরূপে গ্রহণ করলেই সর্বার্থ বিনির্ণয় হতে পারে একথাও ঠিক, কিন্ত
পরমার্থতত্বনিকূপণে (গৌত্মাদি) আরও অনেকে রয়েছেন, তার্দের
অন্গগামীরা তে। ব্যাসস্ত্রের দিকেই যেতে চান না। তা ছাড়! গৃঢার্থময়
অল্নাক্ষরযুক্ত এই স্ত্রগুলিরও ভিন্ন ভিন্ন অর্থ কেউ কেউ নির্দেশ করতে
পারেন। এতেও সমাধান হচ্ছে না। হতে পারে, যদি এমন একটি পুরাণ
থাকে যা অপৌরুষের শাস্ত্রের মত হয়, যার মধ্যে সমস্ত বেদ-ইতিহাস-পুরাণের
অর্থসার নিহিত থাকে, যার, মধ্যে ব্রহ্মস্ত্রের বক্তব্যগুলি পরিস্ুট হয়, আর
যার সম্পূর্ণ প্রচার থাকে । এতক্ষণে বোধ হয় ঠিক পথ পাওয়া গেল।
এরকম পুরাণগ্রস্থ একটি মাত্রই আছে যা সমস্ত প্রমাণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং
আমাদের মনোমত, ত] হ'ল শ্রীমদ্ভাগব্ত ৮
বস্তুতঃ শ্রীমদ্ভাগবতকে ভাগবতধর্মের আকরগ্রস্থ বল। যায় এবং মহাপ্রভু
প্রীচৈতন্তের মতেও ভাগবতই রাগাত্মিক ভক্তিবিষয়ে মুখ্য অবলম্বন। এই
গ্রস্থের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়েই শ্রীজীব তাঁর গৌড়ীয় ধর্মের দর্শনানুগত
প্রতিষ্ঠাপক গ্রন্থ ষট্সন্দর্ভ নির্মাণ করেছেন । তার উক্তিমতে গোসম্বামীপ্রবর
শ্রীগোপালভট্ট এই গ্রস্থের একটি খসড়। পূর্বেই প্রণয়ন করেছিলেন, তা ছাড়।
তিনি তৎকালে প্রত্যক্ষভাবে সাহাধ্য পেয়েছিলেন তাঁর পিতৃব্যদ্ধয়ের রচিত
বৃহদভাগবতাম্বত, বৈষ্বতোষণী-টাকা, লঘুভাগবতাম্ত, ভক্তিরসামৃত সিন্ধু,
উজ্জলনীলমণি প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে । সেযাই হোক, শ্রীমন্মহাপ্রভূর মনোভাব
অনুসরণ ক'রে স্বরূপদামোদর, সনাতন-রূপ-ভট্রাদদি এবং তদনসরণে জীবগোন্বামী
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মকে যুক্তিতর্কনিষ্ঠ যে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাড় করালেন তাতে
সাধারণ্যে প্রচলিত ও গৃহীত পুরাণগ্তলিই অশেষ মর্ধাদায় ভূষিত হ'ল।
শ্রীমদ্ভাগবতের পরই প্রাচীন যে গ্রন্থ তাদের বিশেষ অবলম্বন হয়েছে ত1 হ'ল
ভগবদ্গীতা। ভাগবতের মত গীত1 থেকেও গোস্বামীগণ প্রচুর প্রমাণ পুন:পুন
উদ্ধার করেছেন । গীতায় কর্ম, জ্ঞান এবং ভক্তির পথ প্রদর্শন ক'রে কর্মাপেক্ষা
জ্ঞানের এবং সুসাধ্যতার দিক দিয়ে জ্ঞানাঁপেক্ষা ভক্তিযোগের উৎকর্ষ স্থাপন কর!
হয়েছে। এজন্য গৌড়ীয় বৈষবধর্মে ভাগবতের পরেই গীতার স্থান। এই ছুটি
গ্রন্থের যে সব অংশ ভক্তিধর্ম স্থাপনে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছে ত1 থেকে
কিছু কিছু দৃষ্ান্তশ্বর্ূপ উদ্ধার কর] গেল :
৪৬ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
ক. শ্রীমদ্ভগবদ্গীত।
ভূভারহরণের জন্য ঈশ্বরের অবতার গ্রহণ বিষয়ে £
যদ] যদ] হি ধর্ম ইত্যাদি ছুই শ্লোক ( ৪র্থ অধ্যায়)
** তার মানুষদ্দেহে লীল] বিষয়ে £
অবজানস্তি মাং মুঢ়া মানুষীং তন্মাখ্িতম্।
পরং ভাবমজানন্তে। মম ভূতমহেশ্বরম্ ॥ (নবম অধ্যায় )
৩. জড়! গ্রকৃতি, মায়, জীবশক্তির স্বরূপ, মায়ার উপর ঈশ্বরের কর্তৃত্ব এবং
ঈশ্বরভক্তির সাহায্যে মায়াকে অতিক্রম করার বিষয়ে £
ভূষিরাপোহনলো বায়ুঃ খং মনে? বুদ্ধিরেব চ।
অহংকার ইতীয়ং মে ভিন্ন! প্রকৃতিরষ্টধা ॥
অপরেক্মমিতভ্বন্তাং প্রকৃতিং বিদ্ধি মে পরাম্।
জীবভূতাং মহাবাহে] যয়েদং ধার্যতে জগৎ ॥ (সপ্তম )
দৈবী হোষ। গুণময়ী মম মায়? ছুরত্যয়। |
মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরস্তি তে ॥ (সপ্তম)
ঈশ্বরঃ সর্বভূতানা; হৃদ্দেশেইজুন তিষ্ঠতি ।
ভ্রাময়ন্ সর্বভূতানি মন্ত্রারূঢানি মায়য়া ॥ ( অষ্টাদশ )
ময়াধ্যক্ষেণ প্রকৃতিঃ স্মতে সচরাচরম্। (নবম)
৪, ঈশ্বরাশ্রয়ে মুক্তি এবং অব্যভিচারিণী ভক্তি প্রভৃতি বিষয়ে £
আব্রন্মভুবনালেকাঃ পুনরাবতিনোইজূ্ন।
মামুপেত্য তু কৌন্তেয় পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে ॥ (অষ্টম )
অনস্থাশ্চিন্তয়স্তে। মাং যে জনা: পযুপাসতে |
তেষাঁং নিত্যাভিযুক্তানাং যোগক্ষেমং বহাম্যহম্॥ (নবম )
যৎকরোষি যদক্নাসি যজ্কুহোষি দদাসি যৎ।
যৎ তপস্যসি কৌন্তেয় তত কুরুষ মদ্র্পণম্ ॥ ( নবম)
মতৎকর্মক্ণ্মত্পরমে | মদ্তক্তঃ সঙগবজিতঃ |
নির্বেরঃ সর্বভূতেষু যঃ স মামেতি পাগুব ॥ (একাদশ)
ভক্ত্য। মামভিজানাতি যাবান্ যশ্চাম্মি তত্বতঃ |
ততে। মাং তত্বতো। জ্ঞাত্বা! বিশতে তদনভ্তরম্ ॥ ( অষ্টাদশ )
মন্মন। ভব মদ্তক্তে মদ্যাজী মাং নমস্কুরু।
মামেবৈষ্যসি সত্যং তে প্রতিজানে প্রিয়োহপি মে ॥
শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের সহায়ক ধর্মীয় পূর্বতৃমি ৪৭
সর্বধর্ান্ পরিত্যজা মামেকং শরণং ব্রজ।
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যে। মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ ॥ (অষ্টাদশ)
£ ঈশ্বর সাধকের অভীষ্ট বিশেষ উপাসনারীতির অন্কৃলেই আত্মস্বরূপ
গ্রকটিত করেন এ বিষয়ে £
যে থ। মাং প্রপদ্ধান্তে তাংশ্ুখৈব ভজাম্যহম্।
মম বক্মনবর্তৃস্তে মন্গ্তাঃ পার্থ সর্বশ: ॥ (চতুর্থ) ইত্যাদি!
খ. শ্রীমন্ভাগবত
১. শ্রীকষ্ণের যুগাবতারত্ব ও বর্ণবপবেশ সম্বন্ধে। তৃতীয় শ্লোকটিতে
গৌরাবতারের কথ! £
আন্ ব্্ণাস্্রয়োহহস্য গৃহতোহন্যুগং তনৃঃ।
শুর্লো! রক্তস্তথা পীত ইদানীং কৃষ্ণতাং গতঃ ॥ (দশম স্বন্ধ)
দ্বাপরে ভগবান্ শ্যাম: পীতবাস। নিজায়ুধঃ।
শ্রীৎসাদিভিরহ্কৈশ্চ লক্ষণৈরুপলক্ষিত: ॥ ( একাদশ )
রুষ্ণবর্ণ, ত্বিষারুষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্পার্যদং |
যজ্ৈঃ সংকীর্তনপ্রায়ৈর্যজস্তি হি স্রমেধস: ॥ ( একাদশ )
২. ভক্তদের কৃপাপূর্বক আরাধনার পথ প্রদর্শনের জন্য মানুষরূপে অবতার
বিষয়ে :
অন্রগ্রহায় ভক্তানাং মান্ষং দেহমাশ্রিতঃ।
ভজতে তা দৃশীঃ ক্রীড়া যাঃ শ্রুত্বা তপরো ভবে : দশম)
৩. মায়াশক্তির বহিরঙগত?, ঈশ্বরাধীনত্ব ও জীবপীড়ন বিষয়ে £
খতেংর্থং যৎ প্রতীয়েত ন প্রতীয়েত চাত্মনি |
তছিগ্ঠাধাত্মনে। মায়াং যখাভাসে। বথা তমঃ ॥ ( প্থিতীয় )
বিলজ্জমানয়] যস্থয স্থাতুমীক্ষাপথেহমুয্ব। |
বিমোহিত বিকথন্তে মমাহমিতি ছুধিয়ঃ ॥ ( ঘ্িতীয় )
৮. ভক্তিধর্মের শুদ্বত্ব, অহৈতুকত্ব এবং মুক্তি অপেক্ষা শ্রেয়স্করত্ব প্রতিপন্ন
করতে £
ধর্ম: প্রো ঝিতকৈতবোহত্র পরমে
নির্য্সরাণাং সতাম্ ইত্যাদি ॥ (প্রথম )
আত্মারামাশ্ মুনয়ে নিগ্রন্থা অপুযুরুক্রমে।
কুর্বস্ত্যহৈতৃকীং ভক্তিম্ ইৎস্ভৃতগুণে! হরি: ॥ (প্রথম )
বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
৫, অহৈত জ্ঞানম্বর্ূপ আত্মন্বরূপ ও ভগবৎস্বরূপের একত্ব সম্বদ্ধে :
ধ্স্তি তততত্ববিদস্তত্বং যজ,জ্ঞানমব্যয়ম্।
ব্রন্মেতি পরমাত্মেতি ভগবানিতি শব্যতে ॥ ( প্রথম )
৬. রুষ্র পূর্ণভগবত্তা এবং অন্যান্ত অবতারগণের তার অংশত্ব বিষয়ে £
এতে চাংশকলাঃ পুংসঃ কৃষ্স্ত ভগবান্ ত্বয়ম্।
ইন্দ্রারিব্যাকুলং লোকং মৃড়য়স্তি যুগে যুগে ॥ (প্রথম )
৭, শুদ্ধা অন্ুরক্তির শেষ্ঠতা বিষয়ে £
ময়ি ভক্তিহি ভূতানাম্ অমৃতত্বায় কল্পতে। ূ
দিষ্ট্যা যদাসীন্ মৎন্েহো। ভবতীনাং মদাপনঃ ॥ (দশম )
ন সাধয়তি মাং যোগে! ন সাংখ্যং ধর্ম উদ্ধব।
ন স্বাধ্যায়ন্তপন্ত্যাগে। যথ। ভক্তির্মমোজিত। ॥ ( একাদশ )
সালোক্যসাষ্টিশামীপ্যসারপ্যৈকত্বমপ্যুত।
দরীয়মানং ন গৃহৃত্তি বিনা মৎসেবনং জনা: ॥ (তৃতীয় )
৮, ভগবানের ভক্তবৎসলতা। সম্বন্ধে ও গোপীপ্রেমের শ্রেষ্ঠতা সম্বন্ধে :
সাঁধবে। হাদয়ং মহাং সাধূনাং হৃদয়ত্বহম্।
মদন্যত্তে ন জানস্তি নাহুং তেভ্যে। মনাগপি ॥ (নবম)
ন পারয়েহহং নিরবছ্যসংযুজাং
স্বসাধুরৃত্যং বিবুধাযুষাপি বঃ।
যা মাভজন্ দুর্জরগেহশৃঙ্খলা:
বৃশ্য তথ: প্রতিযাতু সাধুনা || (দশম )
৯. সাধনভক্তি সম্বন্ধে £
সতাং প্রসঙ্গান্মম বীর্যসংবিদঃ
ভবস্তি হৃৎকর্ণরসায়না; কথাঃ !
তজ্জো ষণাদাশ্বপবর্গবত্মঁনি
শ্রদ্ধা রতির্ভক্তিরনুক্রমিহ্যতি || (তৃতীয় )
শ্রবণং কীর্তনং বিষ্ণো: স্মরণং পাদসেবনম্।
অর্চনং বন্দনং দ্াশ্তং সখামাত্সনিবেদনমূ।॥ ( সপ্তম)
১১৯
১২০
১৩,
১৪০
১৫,
শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের সহায়ক ধর্মীক্ পূর্বভূমি ৪৯
ভক্তে কষ্ণপ্রেমের আবির্ভাবের লক্ষণ বিষয়ে £
এবংত্রতঃ স্বপ্রিয়নামকীত্যা
জাতান্রাগে দ্রুতচিত্র উচ্চৈ:।
হসত্যখে| রোদিতি রৌতি গায়-
ত্যুন্মাদবন্ন ত্যতি লোকবাহাঃ || ( একাদশ )
গোপীপ্রেমের গাঁচত) বিষয়ে £
হা] নাথ রমণ প্রোষ্ঠ কাসি কাসি মহাভূজ।
দা্যাস্তে কপণায়! মে সথে দর্শয় সন্গিধিম্ ॥ (দশম)
অেষ্ঠা গোগী বা রাঁধ! বিষয়ে £
অনয়] রাধিতো নৃনং শগবান্ হরিরী শ্বরঃ |
যন্নো বিহায় গোবিন্দ: প্রীতে। যামনয়দ্রহঃ ॥ (দশম)
রাসবিলাসী শ্রীরুষ্ণের সৌন্দ্যযূলক আকর্ষণ-যোগ্যতা বিষয়ে £
তাসামাবিরভূৃৎ শৌরিঃ ন্মপমানমুখাম্বজ:ঃ।
পীতাম্বরধর: ত্রপ্বী সাক্ষান্ মন্মথমন্মথ; ॥
বহাপীড়ং নটবরবপুত কর্ণয়োঃ কণিকারং
বিভ্রদ্বাসঃ কনককপিশ* বৈজয়ন্তীঞ্চ মালা ম্।
রন্ধন বেণোরধরস্থধয়। পূরযন্ গোপবৃন্দৈঃ
বৃন্দারণ্যং স্বপদরমণং প্রাবিশদ্ গীতকীতিঃ ॥ (দশম)
গোপীপ্রেমে ঈশ্বর।রাধনার পরাকাণ্ঠ। বিষয়ে :
ন পারয়েহহং নিরবগ্যসংযুজাং ইত্যার্দি |
“কষ্ণতজনে নাহি জাতিকুলাদি বিচার” বিষয়ে £
অহো! বত । শ্বপচতে গরীয়ান্
যজ্জিহবাগ্রে বর্ততে নাম তুভ্যম্।
তেপুস্তপন্তে জুনুবুঃ স্স,রার্ধী
রহ্ধানূচুন্নাম গৃণস্তি যে তে ॥ (তৃতীয়)
শ্রীমদ্ভীগবত ও গীতা ছাড়া গ্রীস্টপূর্বাব্ধে বিরচিত বিষুপুরাণ থেকে ধষ্ণব
তাত্বিকগণ তাদের যূল্যবান্ শক্তিতত্ব প্রতিষ্ঠা বিষয়ে নিয়লিখিত শ্লোকগুলির
সাহায্য পেয়েছিলেন__
বিষুশক্তিঃ পর। প্রোক্ত। ক্ষেত্রজ্ঞাখ্যা তথা২পর]।
অ+বদ্যা কর্মসং্ঞান্। তৃতীয়! শক্তিরিষ্যতে ॥
৫০ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
ও নী
হলাদিনী সন্ধিনী সংবিৎ ত্বয্যেক। সর্বসংশ্রয়ে ।
হলাদতাঁপকরী মিশ্র! ত্বয়ি নে। গুণবজিতে ॥
পল্মপুরাণের কয়েকটি অংশ, এমনকি মহাভারতের দুচারটি শ্লোকও এই
নবভক্তিধর্মের রাঁধা ও পরকীয়াবাদ, নামম়াহাত্ম্য, গৌরাঙ্গ-অবতারের বান্তবত।
স্থাপনের সহায়ক হিসাবে তারা স্বচ্ছন্দে গ্রহণ করেছেন । মহাপ্রভূ থেকে ইঙ্গিত
গ্রহণ করে লোকপ্র$লিত প্রণয়-কবিতাকেও গৌড়ীয় বৈষ্বের। রাগাত্মিক ভক্তির
শীর্ষে তুলে ধরেছেন । এ ছাঁডা একাদশ-ছাদ্শ শতাব্দীর কাছাকাছি কোন সময়ে
গ্রথিত ব্রদ্মনংহিত, কৃষ্চকর্ণামুত, নারদীয়তন্ত্র, গৌতমীয়তন্ত্র এবং গোপালতাপনী
উপনিষদ্ প্রভৃতি থেকেও কৃষ্ণের ভগবত্া, রাধা ও গোপীমহ লীলার শ্রেষ্ঠতা এবং
শুদ্ধ! ভক্তির সমর্থক প্রমাণ তাদের সংগ্রহ করতে হয়েছে। কিন্ত এ বিষয়ে গৌড়ীয়
বৈষ্ণবধর্ম বিশেষ প্রেরণ! লাভ করেছিল শ্রীধরস্বামী-কৃত বিখ্যাত ভাগবতের টাক!
থেকে । মহা প্রভুর স্বামীরৃত টীকায় আস্থার সংবাদ চরিতামুতের পাঠকমাত্রেরই
জান1। শ্রীপাদ জীবগোস্বামীও তার সন্দর্ভগুলিতে প্রয়োজনমত স্বামীর ভক্তিযূলক
ব্যাখ্যাকে বহুমান করেছেন। অতএব একথা স্বচ্ছন্দ বলা যায় যে, চৈতন্পূর্ব
ভক্তিধর্মের পরিবেশের মধ্যে শ্রীধরত্বামী* প্রবল উদ্দীপনার সঞ্চার করেছিলেন ।
বাস্থদেব-নারায়ণ-কৃষ্ণের লীল?, বৃহতত্ব কৃষ্ণের অবতারশ্রেষ্ঠতা, চিৎশক্তি ও
জড়শক্তির পার্থক্য, শুদ্বা ভক্তির মাহাত্ম্য প্রভৃতি বহু বিষয়ে তার সঙ্গে গৌড়ীয়
বৈষ্বগণের উপলব্ধির সামপ্রস্ত লক্ষ্য কর] যায়। শ্রীধরস্বামী শিস্তপরম্পরায়
অদ্বৈত-সম্প্রদ্ধায়ের হলেও মাধবেন্দ্রপুরীর মতই সগ্ুণ ব্রঙ্গে ও বিগ্রহে আস্থাবান্
ছিলেন, যদিও রাগাজ্মিক ভক্তি পর্যস্ত অগ্রসর হননি ।
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ষের যূল কথা হ'ল রাধাকৃষ্ণনীলার সত্যতায় ও নিত্যত্বে
বিশ্বাস । অথবা, কষ্ণলীলায় রাধাপ্রেমের গুরুত্ব অন্তধাবন। প্রকট এবং অপ্রকট
লীলায় বুন্দাবনে 'রাধাসহ ক্রীড়া” মাধুর্ষৈকম্বরূপ রসিক রুষ্ণের শ্রেষ্ঠ কার্য এ
তত্বটি বিশেষভাবে বাঙলার বেষ্ঞবধর্মের, কিন্তু এব পূর্বাভাস কোথাও রয়েছে
কিনা দেখতে হবে। প্রথমতঃ বাঙ্লাতেই তিনজন প্রধান কবি রাধারুষ্লীল।
নিয়ে বিস্তৃত কাব্য লিখেছেন--এ র জয়দেব, বিগ্ভাপতি আর চণ্তীদ্দান। এর!
থে শুধু লৌকিক কাব্যরস পরিবেশন করার জন্য লেখেননি, সেবিষয়ে বহিরঙ্গ
» হ্রীহীয় অয়োদণ শতকের শেব থেকে চতুর্শের মধ্যভাগ
শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের সহায়ক ধায় পূর্বতৃমি ৫১
এবং অস্তরঙ্গ প্রমাণ যথেষ্ট । অবশ্ঠ বিক্ষিপ্ত ভাবে রচনায় রাধাকষ্গপ্রসঙ্গ নিয়ে
কোনো কোনে কবি যে সেরকম লিখতে পারেন না তা নয়। এরকম কিছু
লৌকিক রচনা কয়েকটি সংস্কৃত-প্রাকৃত কোষগ্রন্থে এবং রসবিবেচনায় স্থান
পেয়েছে। অঙ্গরূপ-_হুরগৌরী-শক্তিতত্বের আশ্রয়ে কবিরা অপূর্ব পূর্বপ্রণয় 'ও
দ্াম্পত্যপ্রণয়চিত্র নির্মাণ করেছেন। কিন্তু ভক্ত কবিদের রচনাকে তা. খেকে
পৃথকৃ করতে কষ্ট পেতে হয় না। রাধা-কষ্চ প্রণয় নিয়ে লৌকিক
কাব্যের কিছু প্রসার ঘটলেও, একথা ঠিক নয় যে
গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মতত্বে রাধার প্রবেশ ও প্রতিষ্ঠা এ
লৌকিক কাব্যচিত্ত্র থেকেই ।* রাধা যদি লৌকিক নায়িক! হন, অর্থাৎ চপল।
কোনে। আভীর গোপী, যাকে' নিয়ে পলীতে পল্লীতে প্রেমকাহিনী গড়ে উঠেছিল,
তিনিই পৰে ধর্মে ও দর্শনে স্থান পান এমন যদি হয়, তাহ'লে কষ্ণকেও তো
কেবল প্রেমিক গোপযুবক হিসেবে ধরতে হয়, আর তাহ'লে বৈদিক যুগের
ধর্মপ্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণের এবং পৌরাণিক যুগেব বিষুর অবতার ভগবান্ কৃষ্ণের
এতিহ্ৃ মূল্যহীন হয়ে পড়ে। যদি বল! যায় কৃষ্ণের একট] শাখা-কাহিনী
পল্লী প্রেমগীতিকায় বহুপূর্ব থেকেই ছিল, পুরাণকারর। অবতার রুষ্ণের সঙ্গে
তা মিলিয়ে নিয়ে ভগবান্ ক্ুঞ্ণচ গঠন করেছেন তাহ*লেও সংগতি রক্ষিত
হয় না, কারণ, লৌকিক কাব্যে সর্বপ্রথম যেখানে রাধার প্রসঙ্গ পাওয়।
যায় (ধরা যাকৃ পঞ্চম শতাব্দীর “গাথাসপ্তশতী” ) ৩1 ষে পুরাণগুলির
পূর্ববর্তী এমন প্রমাণ নেই। যদ্দি বল! হয় যে পণ্মপুরাণ এবং মতন্যপুরাণে
রাধার উল্লেখ গৌড়ীয়-বৈষ্ণব বুগের প্রক্ষেপ, আর ব্রক্ষবৈবর্তের বিস্তৃত
রাধাকুষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ একেবারে অর্বাচীন, তাহলেও সমশ্যা| মেটে না। কারণ,
ধর্মীয় বু রচনাতেই কৃষ্ণের সর্বাধিক প্রীতিপাত্র প্রধানতম একজন গোগীর
বিবরণ ! ভাগবত, গোপাল-তাপনী উপনিষদ্ প্রভৃতিতে ) রয়েছে। ঝকৃ-
পরিশিষ্টে স্পষ্টতই রাঁধা-মাধবের যুগল স্থিতির বিষয় বল। হয়েছে এবং
বৈষ্ণবাচার্ষের দ্বার) তা উল্লিখিতও হয়েছে__রাধয়] মাধবো! দেবে! মাধবেনৈব
পাধিকা”। দাক্ণাত্যের আলবারগণের মধ্যে অগ্ডালের গীতেও এক প্রধান।
গোপীর বিরহাতির পরিচয় ফুটে উঠেছে। তা ছাড়া লীলাশুক বিন্বমঙ্গলের
রাধ-প্রসঙগ
* ডক্টর শশিভৃষণ দাশগুণ্ের “শ্রীরাধার ক্রমবিকাশ £ দর্শনে ও সাহিতে) গ্রস্থের প্রতিপ্রাছ £
সম্প্রতি শ্রীযুত জনার্দন চক্রবরী মহোদয় প্রদত্ত কমলা-বন্রৃতামালায় রাধাপ্রণয়ের লিখিত লোক-
কাব্য-মৌলত। নিপুণভাবে থণ্ডিত হয়েছে ।
৫২ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
'ুষ্ণকর্ণামৃত” গ্রস্থের অন্ততঃ ছু,তিনটি শ্লোকে রাধার কথা পাওয়। যাচ্ছে 1
কষ্ণকর্ণামৃত একাদশ শতকের পরবত্ণা রচনা! নয়। কারণ, জয়দেবের
রচনায় এর ভাষা ও ছন্দের প্রভাব স্পষ্ট । এছাঁড়। নারদ-পঞ্চরাত্রঁ নামক
ভক্তিতত্ব সম্বন্ধীয় গ্রন্থে রাধার তত্ব বিস্তৃতভাবে প্রতিষিত হয়েছে। এতগুলি
ধর্মীয় গ্রন্থে বণিত রাধারুষ্ণলীলাকে সর্বাংশে প্রক্ষিপ্ত মনে করার কোনো
কারণ নেই। শ্রীমদ্ভাগবতের রাঁসলীলায় কৃষ্ণ যে-প্রধানা গোঁপীকে গ্রহণ
ক'রে অন্য সকলকে ত্যাগ করেছিলেন তিনি যে শ্রীরাধাই এ কেবল
গৌড়ীয় বৈষ্ণব সিদ্ধান্তবাদীর্দেরই মত নয়, কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দেব
উৎ্সও এ থেকেইঞ্চ এবং দশম শতাবধীর ভট্নারায়ণরুত বেশীসংহারের
নান্দী শ্লোক** এ ণ“অনয়। রাধিতেরই” ব্যাখ্য। শ্লোক মাত্র । কিন্তু কেবল
গৌড়ীয় বৈষ্ণবাচার্গণই নয়। রাধাকে কৃষ্ণের শক্তিরূপে শাস্বে স্থাপন
করেছেন তৎপূর্ববর্তী সনক-সম্প্রদায়ের নিম্বার্ক। রাধাতত্ব সম্বন্ধে নিগৃঢড
বিস্তৃত কথা গোর্দাবরীতীরের রায় রামানন্দই মহাপ্রতৃকে জানিয়েছিলেন।
এই সমস্ত বিষয় পর্যালোচনা ক'রে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসছি যে £
অবতার ব1 ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে শ্রীরাধার প্রেমলীলাতত্ব অন্-মার্য লোকমূল
হ'লেও গোডভা থেকে ধর্মীয় সহজ ভাবুকতার সঙ্গে মিশ্িতই ছিল, অর্থাৎ
লিখিত শুদ্ধ সাহিত্যের পূর্বে ভক্তিধর্মেই এই প্রেমযূলক মানদিকতা। প্রথম
গডে ওঠে । পশ্চাৎ কবিরা একে কাব্যরসের বিষয়ীভূত ক"রে বিক্ষিপ্তভাবে
শ্লোক রচনা কবেন। যেমন করেন কর্ধের অস্থরবিনাশ, গোবর্ধনধারণ
এবং গোচারণ প্রতৃতি নিয়েও। প্রাচীন পুরাশগুলিতে বিষুর শক্তি
লম্ষ্রী, কিন্ত মনে হয়, কৃষ্ণের অবতারত্ব প্রতিষ্ঠায় রুক্মিণী এবং ভগবত!
প্রতিষ্ঠায় রাধার সঙ্গে কৃষ্ণের সম্পর্ক দৃঢ়ভাবে স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা উপলৰ
হয়।*** জ্যোতিবিগ্যার কুর্য-চন্দ্র-নক্ষত্রের মহাকাশে পরিভ্রমণের বিষয়টি
.* “তেজসেহস্ত নমে। ধেনুপাঁলিনে লোকপালিনে। য়াধাপয়োধরোৎসঙ্গশায়িনে শেবশায়িনে ॥।
“যে বা চপলশৈশবব1ঞব1 রাধাবরোধোনুখা:*"” “রাধ। পুনাতু জগদচ্যুতদত্তচিত্ত মস্থানমা-
কলয়তী” ইত্যাদি ।
1 অনয! রাধিতে। নুনং ভগৰান্ হরিরীহ্বরঃ। ইত্যাদি পূর্বেই উল্লিখিত ।
1 কংসারিরপি সংনারবাননাবন্ধশৃঙ্খলাম্। পাঁধামাধায় হৃদয়ে তত্যাজ ব্রজহন্দরীঃ ॥
** “কালিন্দ্যাঃ পুলিনেধু কেপিকুপিতাম্ উৎস্থজা রাসে রসং গচ্ছন্তামমুগচ্ছতো ইশ্রকলষাং
কংসছিষে। রাধিকাম্” ইত্যাদি ।
*** তু০--রুত্ধিণী দ্বারাবত্যাং তু রাধা বৃন্দারনে ৰনে। ( মতস্তপুরাণ )
শ্রীচৈতন্তের আবির্ভাবের সহায়ক ধর্মীয় পূর্বভূমি €₹৩
(ন্ব্গত রায় যোগেশচন্দ্র বিষ্ভানিধি মহোদয়ের অভিমত ) এই সময়ে রাঁধারুষ-
লীল প্রতিষ্ঠায় সহায়ত! করেছে। রাধা হ'ল বিশাখা নক্ষত্রের অপর
নাম। অর্্ববেদের “রাধো বিশাখে” এই পরিচয়ের পূর্বে রাধার নাম আর
কোথাও মেলে না। এইভাবে রাধাকৃষ্ণলীল। গড়ে উঠলে পর রাধ। লক্ষ্মীর
অবতার এরকম একটি অভিমতও স্থাপিত হয়। বিভিন্ন পুরাণে নারায়ণ-
বিষণু-লক্ী এবং কৃষ্ণ-রাধা শক্তির পরিচয় পাচ্ছি। বু চণ্ীদদাস তার
শ্্ীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যে রাধাকে লক্ষ্মীর অবতাররূপে গ্রহণ করেছেন এবং
রাধার জন্মবৃত্বাস্ত স্বাধীনভাবে বর্ণনা করেছেন (পছুমার-পল্মার গর্ভে,
সাগরের গুরপে)। রা+ধ। ধাতু থেকে রাধা শব্ের বুৎপত্তি অনেক
পরে নির্দেশিত হয়। যাই হোক, ঈশ্বরীয় লীলাবাদের জন্মক্ষণ থেকেই
রাধার কৃষ্ণসম্পকের প্রতিষ্ঠা । লিখিত রচনায় ভাগবতপুরাণকেই রাধার
ভিত্তিরপে গ্রহণ করা যেতে পারে।
আমরা এই অংশে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ভক্তিধর্মের প্রকাশের পূর্ব-পরিশ্থিতি
আলোচনা ক'রে এখন মহাপ্রভুর লীলায় এই ভক্তিধর্মের আবির্ভাব ও
বিকাশের স্বরূপ পর্যালোচন] করতে প্রয়াসী হচ্ছি। এর পরবর্তী অধ্যায়
থেকে আলোচ্য মূলবিষয়ে প্রবেশ করব। আমাদের পূর্ব-আলোচিত ভক্তিধর্ম
ও দার্শনিক পটভূমির বিবরণ থেকে এই সিদ্ধান্তে আস। সংগত হবে ন।
যে পূর্বন্ুত্র অবলম্বন ক'রেই কারণ-কার্ষের নীতিতে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম গড়ে
উঠেছে । আমরা শুধু এতিহা এবং পরিবেশ চিত্রিত করলাম । রাগাত্মিক
ভক্তিধর্ষ একান্তভাবে বাঁঙলারই বিশেষ সম্পদ । স্ফিধর্মে এবং মাধবেন্দ্র-
ঈশ্বরপুরীর মধ্যে এর অস্কুর দেখা গিয়েছিল। কিন্তু মহাপ্রতৃই এর পুষ্প-
পত্রসমন্থিত মহীরুহ। শ্রীমদ্ভাগবত, কর্ণামুত, গীতগোবিন্দ, স্থফিভাবুকতা'
চণ্তীদ্াস-বিগ্ভাপতির পর্দাবলী প্রভৃতির গ্রীতিবারিনিষেক এই মহীরুহকে
বধিত হতে সাহায্য করেছে। চরিতামতের নিয়লিখিত বর্ণনা এই প্রসঙ্গে
ল্মুরণীয়_
এত চিন্তি লৈল প্রভু মালাকর ধর্ম।
নবদ্ীপে আরভিল ফলোছ্ান কর্ম ॥
প্রীচৈতন্ত মালাকর পৃথিবীতে আনি।
ভক্তিকল্পতরু রুপিল। সিঞ্চি ইচ্ছাপানী ॥
৫৪
বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
জয় শ্রীমাধবপুরী কৃষ্প্রেমপুর |
ভক্তিকক্পতরুর তেঁহে। প্রথম অঙ্কুর ॥
প্রীঈশ্বরপুরী রূপে অঙ্কুর পুষ্ট হৈল।
আপনে চৈতন্তমালী স্বদ্ধ উপজিল ॥
নিজাচিস্ত্যশজ্যে মালী হেয়? স্বন্ধ হয়।
সকল শাখার সেই স্কন্ধ যূলাশ্রয় |
(আদি, নবম )
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন
(আবির্ভাব ১৪৭ শক, ফান ২৩ সন্ধ্যা ।
তিরোভাব ১৪৫৫ "শক, আষাট, রথ-পরৰর্তঁ সপ্তমী )*
বৈজ্ঞানিক তথ্যান্গসন্ধানের রীতিতে লেখা কোনো কোনো, নব্য
ইতিবৃত্তগ্রন্থে চৈতন্যজীবনীকারদের বর্ণন-বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ কমর বলা
হয়েছে যে, তারা সকলেই শ্রীচৈতন্তের মানবীয় জীবনকে ভক্তবুদ্ধি-
সমাচ্ছার্দিত সুতরাং অতিশয়িত ক'রে দেখেছেন এবং অলৌকিক ঘটনার
বাড়াবাড়িও করেছেন, যার ফুলে তাদের লেখ! থেকে ঘটনাসমৃছের বাস্তব
স্বরূপ জানবার এবং যথার্থ জীবনী পাবার উপায় নাই। তা ছাড়া, বনু
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ব্যাপারে জীবনীকারদের মধ্যে মতভেদ থাকায় ইতিহাস-
নির্ণয়ের প্রয়ান বিফল হয়ে পড়ে। এসম্বদ্বে আমার্দের কয়েকটি বক্তব্য
বিবৃত ক'রে পশ্চাৎ আমরা গৌড়ীয় নৈষ্ণবধর্ষের যৃখ্য আশ্রয় চৈতন্য-
জীবনে প্রবেশ করব।
জীবনীকারদের বিপক্ষে এতিহাসিকর্দের অভিযোগের সারবত্বা মোটামুটি
স্বীকার ক'রে নিয়েও বল! যায় যে: বৈষ্ণবজীবনীকারের1, গবেষণালৰ
ইতিহাস লিখব, এমন প্রতিজ্ঞা ক'রে লেখনী গ্রহণ করেননি। তারা
চৈতন্য-জীবনে যে সব অপূর্বদৃষ্ট এবং অপূর্বকল্পিত ভাবসমূহের প্রকাশ
দেখেছিলেন এবং তার আচরণে জীবনের যে সমুন্নতি লক্ষ্য করেছিলেন তাই
মুখ্যভাবে চৈতন্য-জীবন বিষয়ক রচনায় তাদের প্রবৃত্ত করে। শ্রীচৈতন্থে
ঈশ্বরের প্রকাশ বা তার ঈশ্বরত্ব সম্বন্ধে যখন তারা
নিঃসন্দেহে তখন লীলাবর্ণনের ব্যাকুলতা কেউ কেউ
অন্থভব করেন। এ বিষয়ে তার লীলার প্রত্যক্ষদ্র্টাদের পদ্দরচন। অগ্রগণ্য ।
অথাৎ নরহরি সরকার, গোবিন্দ-মাধব-বান্থঘোষের পদরচন! শ্রীচৈতন্যের
* পাঠারভ শক ১৪১১-১২, বিশ্ববূপের গুহতাগ ও প্রভুর পাঠচ্ছেদ্র ১৪১৬, পুনঃ পাঠারভ
১৪১৬, মিশ্র পুরন্্রের মৃত্যু ১১২, প্রভুর বিবাভ ১৪২২, পাঠের সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাপনা! আরস্ত
১৪২৪, পূর্ববঙ্গ গমন ও লঙগ্পীদেবীর তিরোধান ১৪২৬, বিষুণপ্রিয়াদেবীর সঙ্গে বিবাহ ১৪২৮, গর
গ্রমন ১৪৩০, প্রেমওজির প্রারস্ত ১৪৩০, সন্ধ্যান ১৪৩১ মাঘ সংক্রান্তি, নীলাচল যাত্র। ১৪৩১ ফাল্জুন,
দক্ষিণ যাত্রা! ১৪৩২ বৈশাখ, দক্ষিণ থেকে প্রত্যাবর্তন ১৪৩৪ বৈশাখ-লোষ্ঠ, গৌড় বাত্রা ১৪৩৬ ও
প্রত্যাবর্তন ১৪৩৭ বৈশাখ, বৃন্দাবন যাআ। ১৪৩৭ ও প্রত্যাবর্তন ১৪৩৮ বৈশাখ, স্থিরভাবে নীলাচলে
স্থিতি ১৪৩৮-১৪৫৫ শক।
চট নগ্রস্কব প্রাণ
৫৬ বৈষণব-রস-প্রকাশ
ঈশ্বরীয় লীলারভ্ভের সমকালীন ব'লে এগুলির মূল্য সর্বাগ্রে। কিন্ত
গৌরাঙ্গ-বিষয়ক পদরচয়িতারা ভাবুকতা৷ এবং কাব্যকুশলতার উপরই অধিক
নির্ভরশীল ছিলেন ব'লে তাদের রচনা থেকে তথ্যের দিক দিয়ে খুব বেশি
লাভবান হওয়া যায় না। এদিকে আবার নীলাচল জীবনচিত্র নিয়ে
সেখানকার প্রত্যক্ষ-্র্টাদের সংস্কৃত কড়চা এবং তাদ্দের কাছ থেকে জেনে
নিয়ে লেখা বাওল। চরিতামৃতও রয়েছে। কিন্তু কি সংস্কৃত কি বাঙলা,
জীবনীকাব্যগুলিই তথ্যের অভাব পূর্ণ করতে অগ্রসর হয়েছিল। চরিত-
কাব্যকারদের মধ্যে আর্দিলীলার় শ্রীচৈতন্ত-জীবনের প্রত্যক্ষত্রষ্টা মুরারি গুগ্চ
আছেন, প্রত্যক্ষপ্রষ্টার্দের কাছ থেকে শ্রোতা আছেন কয়েকজনই, আবার
মাত্র জনশ্রুতির উপর নির্ভরশীল লেখক এবং বহুপরবত্তাঁকালের লেখকও
কিছু রয়েছেন, এমনকি কা্ননিক লেখকও ছুর্লভ নন। এর মধ্যে বেশ
পরবতী যুগের এবং কেবলমাত্র জনশ্রতির উপর নির্ভরশীল লেখকর্দের বাদ
দিলে ধার! প্রত্যক্ষত্রষ্টী বা প্রত্যক্ষদ্রষ্টাদের সঙ্গে ঘনিষ্ভাবে পরিচিত তার।
নিজেদ্দের বিচার ও প্রত্যয়মতেই ঘটনা ও চারিত্র্যের বিন্তাপ করেছেন।
জনশ্রুতি থেকে কোনো উপাদান নিলেও সেগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা সম্বন্ধে
সন্দেহাতীত হয়েই তার! গ্রন্থমধ্যে তা সন্নিবিষ্ট করেছেন । উদ্ভট ব! স্বকপোল-
কল্পিত ঘটনার অনুপ্রবেশ সম্পর্কে তারা সাবধানই ছিলেন। গ্রন্থরচনাকে
তার। গুরুতর ব্যাপার বলেই মনে করতেন, বিশেষতঃ শ্রীচৈতন্ত সম্পর্কে
গ্রস্থরচনায় তার। জ্ঞান-বিশ্বাস অঙন্ছসারে মিথ্যাচার করেননি । শ্রীচৈতন্ুকে
অতিশয়িত ক'রে দেখার এবং তাঁর জীবনের বহু কার্ধকে অলৌকিকভাবে
দেখার উপার্দান তার জীবনের ঘটনায় এবং আচরণে বসল বিদ্যমান ছিল,
নতুবা তিনি অবতার, এমনকি স্বয়ং ভগবান্রূপে পূজিত হতেন কিন।
সন্দেহ । ধারা এই লোকোত্তরতায় আস্থাবান্ নন, তার] বোধ হয়
শ্রীচৈতন্তকে শংকর, নানক, কবীরেব মত প্রচারক বূপেই দেখতে চান,
কিন্ত একথ! ভূলে যান যে তিনি নিজে কিছুই প্রচার করেননি, তার
জীবনে অদ্ভুত প্রকাশের দ্বারা প্রচারের চেয়ে বেশি কাজ হয়েছিল। আর যে
ধর্মাহুভূতি তার জীবনে স্ষুরিত হয়েছিল তার অনায়াস প্রচার ঘটেছিল
অঙ্গ-উপাঙ্গরূপ-পার্ধদগণের ব। তাদের কৃপাপ্রাঞপ্ত জীবনীকার ও পদকর্তাদের
দ্বারা ।
তারপর অলৌকিক ঘটনার সন্নিবেশ, যেমন--শিশু গৌরচন্দ্রের হরিনাম-
মহাপ্রতৃর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৫৭
শ্রবণে রোদন সংবরণ, গৌরাঙ্গের সর্পের উপর শয়ন, শিশু গৌরাঙ্গের মুখে
শচীদ্দেবীর বিশ্বনূপ দর্শন, গৌরাঙ্গ কর্তৃক তৈথিক ব্রাক্ষণের নিবেদিত অস্ত
ভক্ষণ ও পশ্চাৎ স্বরূপ প্রকাশ, গয়। থেকে প্রত্যাবর্তনের পর প্রথম ভাব-
প্রকাশের মধ্যে বরাহ-নৃনিংহ-বলরামার্দির চারিত্র্য প্রকাশ, লার্বভৌমকে
ষড়তুজ মৃতি প্রদর্শন, দক্ষিণভরমণাবসরে কুছীর রোগমোচন, বৌদ্ধদের
সর্বনাশ, শিবানন্দের সঙ্গে আগত কুকুরের অস্তর্ধান, মৃত গায়ক হরিদাসের
অদৃশ্তে সংগীতধবনি, মহাপ্রভুর সমাধির অবস্থায় সমুদ্রে পতন ও হ্ুলিয়ার
জালে উদ্ধার প্রতৃতি আরও অনেক। ভক্তদের কাছে এসব ঘটনা সম্পূর্ণ
বিশ্বাসযোগ্য এবং সেই হিসেখেই এগুলির সন্নিবেশ জীবনীকারেরা করেছেন।
অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস এক হিসেবে মানুষের স্বভাবসিদ্ধ, যুক্তিবাদ এই
স্বভাঁবকে লঙ্ঘন করতে শিক্ষা দেয়, আবার ভক্তি, যা! বিশ্বাসের সঙ্গে 'নত্য-
সম্বন্ধমুক্ত ত৷ প্রাকৃত অপ্রারৃতের তারতম্য করে না। এইজন্য যাবতীয়
মহাপুরুষের জীবনের সঙ্গেই অতিপ্রাকৃত ঘটন। অল্পবিস্তর জড়িত। এই
ঘটনাগুলিকে আমরা সত্য বলতে পারছি না, কিন্ত মিথ্যা বললে একমাত্র
প্রত্যক্ষ ছাড়া অন্য প্রমাণগুলিকে অস্বীকার করতে হয়। আধুনিক
এতিহাসিকের ও-রকম্ম অলৌকিক ঘটনাকে সত্য-মিথ্য। কিছুই বলা উচিত
হবে না। দেখতে হবে, শ্রীচৈতন্তের জীবনচরিতকারেরা সকলেই কিছু কিছু
অলৌকিক ঘটনার বিন্তাম করেছেন। এবিষয়ে বৃন্দাবনদাসের স্থান শীর্ষে
হলেও চৈতন্যলীলার প্ররত্যক্ষদ্রষ্টী মুরারিও কিছু কম যান না। আমরা
মনে করি এ ঘটনাগুলিকে বর্জন ক*রেও এতিহাসিক উপাদান ন্বচ্ছন্দে
আহরণ কর] চলে। যেমন বলা যায়, শ্রীচৈতন্ত সার্বভৌমকে ষড়তভুজ ও
চতুভূজ মূতি দেখিয়েছিলেন কিনা এ তথ্যে না গিয়েও বল চলে অদ্বৈত-
মতের একজন প্রধান প্রবক্তাকে শ্রীচৈতগ্ত তাঁর প্রগাবে সহজেই ভক্তিধর্ষে
আস্থাবান ক'রে তুলেছিলেন। মুরারি গুপ্তের গৃহে শ্রীচৈতন্ত একেবারে
বরাহ হয়ে পড়েছিলেন এ ব্যাপার প্রতীতিযোগ্য না হলেও একথা স্বচ্ছন্দ
মনে করা যায় যে, গয়! থেকে প্রত্যাবর্তনের পর শ্রীচৈতন্ডের আচরণে
বহু বিচিজ্র এবং অসাধারণ ভাবাবেশ ঘটেছিল। এরকম কিছু অতিরগ্ুন
এবং স্বপ্প কিছু অলৌকিক ঘটনার বিষয় বাদ দিয়ে স্বচ্ছন্দে চৈতন্ত-জীবনের
বাস্তব ইতিবৃত্ত লাভ কর! সম্ভব, সে উপাদান চরিতকারেরা যথেষ্ট রেখে
'গেছেন। তা সব্বেও ধারা পাশ্চাত্য জীবনচরিতের নিরিখে যাবতীয়
৫৮ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
ভালোমন্দ খুঁটিনাটি চাইবেন তাঁর! অসভ্ভাব্য বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ কারে
ব্যর্থমনোরথ হলে সে দায় চরিতকারের নয়।
আধুনিক ইতিবৃত্ব-সদ্ধিংহ্বর চরিতকাব্যগুলি সম্পর্কে অপর অভিযোগ
শ্রীচৈতগ্ত-জীবনের কয়েকটি ঘটনার বর্ণনায় চরিতকারদের পারস্পবিক এঁক-
মত্যের অভাব। এ বিষয়ে বলা যায় যে, চরিতকারের। দেেশকালে পরস্পর
দুরবত্ত্ণ ছিলেন, সকলের সংবাদের উৎস এক ছিল না, এমন কি চৈতন্ত-
লীলার ধারা প্রত্যক্ষদ্রষ্টা তারাও শ্রীচৈতন্যের জীবনের সমস্তটাই দেখেছেন
কিনা সন্দেহ। সংবাদের স্তর অল্পবিস্তর বিভিন্ন হওয়ায় সব ঘটনায় এক্য
পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ এরকম ক্ষেত্রে যা স্বাভাবিক তা-ই ঘটেছে।
তবু ঠৈতন্য-জীবনের প্রধান ঘটনাগুলি এবং চৈতন্য-চরিত বলতে যা বোঝায়
মে বিষয়ে মুখ্য চরিতকারদের মতৈক্যই লক্ষণীয়। এর উপর প্রাচীন গ্রন্থ
ব'লে প্রক্ষেপের কথাও চিস্তা করতে হবে এবং কেবল জনশ্র্তির উপর
নির্ভরশীল অথব1 একেবারে কাপ্পনিক গ্রন্থ নির্মাণের বিষয়টিও ভাবতে হবে।
চরিত্তগ্রস্গুলির প্রামাণিকতা-অপ্রামাণিকতার বিষয় আধুনিক চরিত-চিস্তকেরা
অনেকেই বিচার ক'রে দেঁখেছেন। কিন্তু কার্ষক্ষেত্রে অর্থাৎ কোনো নিজ-
অন্গমানের পোষকত। করতে গিয়ে সন্দিপ্ধ গ্রন্থ বা সন্দিগ্ধ অংশ থেকে
প্রমাণও তুলতে চেরেছেন দেখি। হিসেবে দেখা যায় ইতিবৃত্তসহ ধার!
চৈতন্তচরিত লিখছেন ( কেবল লীলাব বর্ণন। দিচ্ছেন না! , তাদের মধ্যে
নবদ্ীপলীল। পর্যস্ত প্রত্যক্ষত্রষ্টাী মুরারি গুণের ঠচতশ্তচরিতামৃতের এ অংশ
( প্রচলিত পুস্তকেব নীলাচল-লীলা৷ অংশের বর্ণনা বিষয়ে বিচারকগণ যথার্থ-
ভাবেই সন্দিঞ্ধ), প্রত্যক্ষদ্রষ্টাদের কাছ থেকে ধার! শুনেছেন তাদের মধ্যে
বৃন্দাবনদাসের চৈতন্য-ভাগবতের এ নবদ্বীপলীলা পর্যস্ত অংশ, কবিকর্ণপূরের
চৈতন্যচন্দ্রোদয় নাটক এবং ক্কষ্দাস কবিরাজের চরিতাম্তই নির্ভরযোগ্য ।
লোচনদাসের চৈতন্যমঙগল ছৃ"একটি বিষয় ছাড়া মুরারি গুপ্তের কডচার উপর
নির্ভরশীল; তা ছাডা এতে তথ্যের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া! হয়নি।
জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল নিতান্ত জনশ্রুতি অবলম্বনে রচিত উদ্ভট জল্পন1-
কল্পনায় পূর্ণ গ্রন্থ । এতে উপবের বিখাত গ্রন্থগুলির বিরোধী এবং অবিশ্বাস্য
বন্থ বিবরণ লিপিবদ্ধ হয়েছে। গ্রীষ্টীয় ষোড়শ শতাব্ীর বহু পরবর্তী
কালের যে সব চরিতে প্রাসঙ্গিক ভাবে চৈতগ্য-জীবনের কোনো কোনো,
ঘটন] বণিত হয়েছে, ষোড়শ শতকে বা কাছাকাছি সময়ে রচিত গ্রন্থগুলির.
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৫৯
বিবরণের সঙ্গে বিরোধে সেগুলির অধিক প্রামাণিকতা স্বীকার কর! যায় না।
প্রামাণিক চরিতগ্রন্থগুলির মধ্যে পরম্পরবিরোধের কয়েকটি দৃষ্টাত্ত দেওয়।
হচ্ছে এবং আমার্দের ধারণামত সেগুলির সমাধান-পথের ইঙ্গিত দেওয়। হচ্ছে।
(১) বৃন্দাবন-যাত্রার সংকল্প নিয়ে শ্রীচৈতন্ত যখন গৌডের নিকটবর্তী
রামকেলি গ্রামে এসেছিলেন তখন সনাতন এবং রূপ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ
করেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, অথচ বুন্দাবনদাস এ ঘটনার বিববণ
দেননি । মহাপ্রভুর দক্ষিণ-ভ্রমণ এবং রামানন্দ-মিলনও বৃন্দাবনদাস বর্ণনা
করছেন ন]। বৃন্দাবন-ভ্রমণের বিষয় তাব স্তরে সংক্ষিপ্ুভাবে রয়েছে মাত্র ।
এছাড় সার্বভৌম-মিলন প্রসঙ্গে খদখানে। হয়েছে, সার্বভৌম আগে থেকেই
ভক্তিবাদী ছিলেন। এ বিষয়ে বল] যায় যে, বুন্দাবনদাস মহাগ্রভর
নবদ্বীপলীল পর্যস্ত অংশ যেরকম অনুসন্ধানারি ক'রে নানা স্থান থেক
তথ্যস*গ্রহ ক'বে লিখেছিলেন, পরবর্তী লীল। সম্পর্কে তা পারেননি । এতেই
তার উদ্যম অবসিত হওয়ার কথা । নীলাচল-লীল। সম্পর্কে কিছু কিছু যা
সংবাদ পেয়েছিলেন তা-ই তিনি পাঁরবেশন করেছেন । বৃন্দাবনর্দাস যখন
লিখছেন সে সমযে রূপ-সনাতনের কীতিসমূহ ও কর্ণপূর-রচন৷ প্রসাব লাভ
করেনি । দেখা যায়, নরহরি-শিষ্য লোচন বূপ-সনাতনের প্রসঙ্গই উতাপন
করেননি। আর কবিকর্ণপূরও তার চৈতন্যচরিতামূত মহাকাব্যে রামকেলির
রূপ-সনাতন-মিলন বিষয়ে উল্লেখ করছেন না। মুরারি করেছেন, কিন্ত
মুরারির এসব অংশকে অনেকেই প্রক্ষিপ্ত বলে সন্দেহ করেন এব' সে
সন্দেহ অহেতুক নয়। সনাতন-রূপের কাহিনী আছ্যস্ত যখাষথভাবে গ্রথিত
করতে পেরেছেন কুষ্দ্রাস কবিরাজ, এবং তাঁর সে অধিকারও ছিল।
প্রীরপেব কাছ থেকেই এ ঘটনার সমস্ত বিবরণ তিনি পেয়েছিলেন।
চৈতন্যজীবনের নীলাচল-লীল।-শেষ পর্যন্ত বর্ণন-বিষয়ে কবিরাজ গোস্বামী
যে অধ্যবসায় করেছেন, তা অন্যত্র দুর্লভ, এমন কি কবিকর্ণপুর-বিরচিত
চৈতন্যচন্দ্রোদয় নাঈকেও এ প্রতিভার স্পর্শ পাওয়। যায় না। কৃষ্দ্রাস
কবিরাজ চৈতন্ভাগবতের এই অপূর্ণতাঁর বিষয়ে অবহিত ছিলেন এবং
কতকট। সেইজন্যই তিনি চরিতামৃত রচনায় প্রবৃত্ত হন। বৃদ্দাবনদাস,
কবিকর্ণপূর, মুরারি এবং লোচনের গ্রন্থের নীলাচল-লীলা বিষয়ে নানান্
অসম্পূর্ণতা দৃষ্টে যদি কেউ অঙন্গমান করেন যে বৃন্বাবনের গোস্বামীদের
সঙ্গে বাঙলার ভক্তদের ঈর্ষা ও বিরোধের সম্পর্ক ছিল তাহ'লে ত৷ শ্রদ্ধেয়
৬ . বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
হবে না। তথ্যসংগ্রহের অসামর্থ্য এবং অপরিচয়ের দুরত্ব উভয়পক্ষে নান!
ব্যাপারের অঙ্ল্লেখের কারণ হয়েছে।
(২) বুন্দাবনদাস ঠতন্ভাগবত গ্রন্থে নরহরি সরকারের উল্লেখ করেননি ।
অথচ নরহরি গৌরাঙ্গভক্ত পরিকরদের অন্যতম ছিলেন; গয়া থেকে
প্রত্যাবর্তনের পর শ্রীচৈতন্য যে সব আশ্চর্য ভাবপ্রকাশ করেছিলেন, নরহরি
তার শুধু প্রত্যক্ষব্রষ্টাই ছিলেন না, এ বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে বিস্তৃতভাবে
পদ্দরচনাও করেছিলেন । গোরাঙ্গ বিষয়ক পর্দকর্তা কেউ কেউ নবদ্বীপলীলায়
সরহরির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উল্লেখ করেছেন। বুন্দাবনদাসের এই অঙ্ুল্লেখ
বিষয়ে আধুনিক কোনো! গ্রন্থকারের অভিমত এই যে, নরহরি সরকার
গৌর-নাগরীভাবের প্রবর্তক ছিলেন। কিন্তু দেখতে হবে মুরারি গুপ্ত তার
কড়চায় এবং তান্থপরণে কবিকর্ণপূর তার মহাকাব্যেও নবদ্বীপ-লীল।
প্রসঙ্গে নরহরির নাম করেননি । মনে হয় নরহরি শ্রীখ্ড থেকে মাঝে-
মধ্যে নবদ্বীপে আসতেন এবং হয়ত বা নবদ্বীপের পরিকরদের সঙ্গে ব্যবধান
রেখে স্বতন্ত্র ভজন-সম্প্রদ্দায় গঠন করেছিলেন । হয়ত চৈতন্যের ভাবপ্রকাশ
লীলার প্রথমের দিকে নরহরি যেরকম যোগ দ্দিতে পেরেছিলেন পরে আর
তেমন পারেননি । সেজন্/ ভক্তবৃন্দ তার গুরুত্ব তেমন শ্মরণে রাখেননি ।
কিন্ত নিত্যানন্দ বিঘিষ্ট হয়ে নরহরির কথ! লিখতে বুন্দাবনকে নিষেধ
করেছিলেন এমন অনুমান শ্রদ্ধার যোগ্য নয়। তাহ'লে নরহরি-শিষ্য
লোচনদ্বা-কৃত চৈতন্য-মঙ্গলে বৃন্দাবনের বন্দনা থাকত ন1। লক্ষণীয় এই
যে, কবিকর্ণপূর তার নাটকে নবহরি সরকারের নীলাচলে আগমনকে মহী-
প্রভুর সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎকার ব'লে বর্ণন। করেছেন। অনুরূপ ভাবে বলা
যায়, বৃন্দাবনদাস রঘুনাথদাস গোস্বামীরও নামোল্লেখ করেননি, যদিও এ
রঘুনাথ নীলাচল-চৈতন্যের শরণার্থ হয়ে পানিহাটিতে নিত্যানন্দের আশীর্বাদ-
ভিক্ষু হ'লে নিত্যানন্দ তাকে দিয়ে পুলিন-ভোজন ব1] চি'ড়ার্ধি মহোৎসব
করিয়েছিলেন । রঘুণাথদাদ গোম্বামীর ব। রূপগোস্বামীর নিত্যানন্দ-বন্দন
পাওয়া যায় না। বলা যেতে পারে, এর ঠতন্টের ব। কৃষ্ণের বন্দনা
করায় বলরামের বন্ধনার আবশ্কতা বোধ করেননি । তা ছাড়। অদৈত-
নিত্যানন্দের কার্বক্রম ও চৈতন্তাবতার প্রসঙ্গে এদের গুরুত্ব অম্পর্কে এব
সবিশেষ অবহিতও ছিলেন মা, এ বিষয়ে চর্চার কোনো অবকাঁশও
এদের ছিল কিন! সন্দেহ। চরিতামৃতকার গোপালভট্রের কাহিনী বর্ণন।
মহাগ্রভূর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৬১
করেননি । তার খুল্পতাত এবং শিক্ষাগ্ডর প্রবোধানন্দের চৈতন্যচন্দ্রামৃত
গ্রস্থ থেকে কোনে প্রমাণ উদ্ধত করেননি । এর কারণ, প্রথমতঃ এবিষয়ে
গোপালভট্রের নিষেধ ছিল, তিনি আত্মপ্রচার চাননি। দ্বিতীয়তঃ চৈতন্থা-
চন্দ্রামৃতের পুঁথি কবিরাজ গোস্বামীর হাতের কাছে হয়ত ছিল না। হয়ত
বা এসব বিষয়ে গ্রন্থকারদের তুল হয়ে গেছে। কোনে বিষয়েই আপত্তি
উঠতে পারে না এমন নির্মাণ পৃথিবীতে ছূর্লভ। এসব বিষয়ে তর্ক যেমন
সম্ভব, বিতর্কও, তেমনি সম্ভব, এবং সমাধান অসভ্ভব। এ নিয়ে অন্য কিছু
অন্থমান কল্পনারই সামিল হবে।
(৩) মুরারিগ্ুপ্ডের অধুনা-প্রচলিত গ্রস্থে এমন একটি ঘটনার বর্ণনা রয়েছে
যার সমর্থন অন্ত কোনো জীবনীকাব্য থেকে পাওয়া যায় না৷ এবং বিচারের
দিক থেকেও য! অসভভাব্য ৭লেই মনে হয়। বিবরণটি মহাপ্রভুর বৃন্দাবন থেকে
প্রত্যাবর্তনের পথে পুনরায় গৌডভ্রমণ নিয়ে । মুরারির বর্ণনামতে মহাপ্রভু
এ সময় ফুলিয়া! থেকে নবদ্বীপ এসে মাতাকে প্রণাম করেন এবং বিষ্ণুপ্রিয়া
দেবীকে তার মৃতি প্রস্তত ক'রে পুজী করতে বলেন। পরে অন্বুয়।-
কালনায় যান এবং সেখানকার গৌরীদাস পণ্ডিতকে গৌরনিতাই মৃতি
প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেন। মহাপ্রভুর যে-চরিত্র চরিতগ্রস্থে লিপিবদ্ধ
হয়েছে এবং মুরারি গুপ্ত নিজে যে চাঁরত্র একেছেন তার সঙ্গে এরকম
ঘটনার সম্বন্ধ অসম্ভব। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আধুনিক কোনে।
এতিহাসিক মুরারির কড়চায় প্রাপ্ত এই অংশটিকে একটা ভালো সত্যের
আবিষফার ব'লে ধরে নিয়েছেন এবং বলেছেন যে নবদ্বীপে স্বগৃহের সমীপে
গমন এবং ঝিষ্ুপ্রিয়াদেবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ক'রে নির্দেশ দান প্রভৃতিতে
তার্দের কল্পিত চরিত্রের মর্যাদ রক্ষিত হয় না বলে অন্য জীবনীকারের!
যেন পরস্পর যোগাযোগ ক'রে এই ঘটনাটির বর্ণনা করেনান। আমাদের
ধারণায় মুরারি গুপ্তের কড়চার এ সব অংশ অন্যেব গ্রথিত। এই
বিবরণটিই তা বিশেষভাবে প্রমাণ করে। কবিকর্ণপূর তার মহাকাব্য
মুরারির নবদ্বীপলীল। পর্যস্তই অন্থুসরণ করেছেন। পরবর্তী অংশ নিজ
আহ্বত জ্ঞান অনুসারে লিখেছেন । আর কবিরাজ গোস্বামী কেবল আদি-
লীল। বিষয়েই মুর্নারির রচন স্বীকার করেছেন ।*
" আদি লীলা মধে। প্রভুর বতেক চরিত।
হুত্ররূপে মুরারি গুপ্ত কলা গ্রথিত ॥ ( চৈ-চঃ আদি--১৩ )
৬২ বৈষব-রস-প্রকাশ
(৪) কয়েকটি ছোটখাটে| বিষয়ে চরিতকারদের পরস্পর মতৈক্য দেখা
যায় ন। যেমন; “চতন্তভাগবত+-এ বাস্তব বর্ণনার মধ্যে জগন্নাথমিশ্র-গৃহের
দারিদ্র্যের ছবি দেওয়া] হয়েছে। মুরারি গুঞ্ও মিশ্রপরিবারের সচ্ছলতার
বর্ণনা দেননি । বরং তাঁকে হ্বদরিদ্রই বলেছেন। কিন্তু গৌরাঙ্গবিষয়ক
পদাবলীতে এবং তদদন্থসরণে কবি-কর্ণপুরের মহাকাব্যে ধনরত্ব-মণিমাণিক্যের
বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে দেখতে হবে পদকতার্দের কাব্যকল্পনায়
শ্রীচৈতন্তকে এশ্বর্মপ্ডিত ক'রে দেখাই স্বাভাবিক । আর কিশোরকবি
কর্ণপুর মুরারির কড়চায় পরিস্ফুটভাবে যা পাননি তা নিয়েছেন পদাবলী
থেকে । চৈতন্যপরিবারে চৈতন্যের বাল্যজীবন সম্বন্ধে কর্ণপুর-পিত। দূরাবস্থিত
শিবানন্দসেনের বিশেষ জানা সম্ভব ছিল না। বুন্বাবনদাস শুধু নিত্যানন্দ
ও মাত নারায়ণীর মুখেই শোনেন নি, ব্ীয়ান পরিকরদের কাছ থেকেও
তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
সন্াস গ্রহণের পর শাস্তিপুর হয়ে নীলাচল যাত্রাপথে মহাপ্রভুর সঙ্গী
কে কে ছিলেন সে বিষয়ে চৈতন্য-ভাঁগবত বলছেন-_নিত্যানন্দ, গদাধর, মৃকুন্দ,
গোবিন্দ ঘোষ, জগদ্দানন্দ এবং ব্রদ্ধানন্দ। চৈতন্ত-চরিতামৃত বলছেন-_
নিত্যানন্দ, জগণানন্দ, দামোদর পণ্ডিত এবং মুকুন্দ দর্ত এই চারজনকে অদ্বৈত
আচার্য সঙ্গে দিলেন। বুন্দাবনদ্াসের বর্ণনা বিষয়ে অবহিত হয়েও যখন
কবিরাজ গোস্বামী এই সংবাদ দিচ্ছেন তখন বুঝতে হবে তিনি পরবতণ-
কালে সন্ধান নিয়ে পূর্ববর্তী বর্ণনায় য। পরিবর্তনযোগ্য ত1 পরিবর্তন করে
লিখেছেন। এইভাবে বলা যায়, নিত্যানন্দ কর্তৃক মহাপ্রভুর দণ্ডভঙ্গের
স্বনি বিষয়ে, ও মহাপ্রভুর প্রথমে সার্বভৌমগৃহে গমন অথব। জগন্নাথ
মন্দিরে গমন প্রভৃতির সন্দেহ নিরাকরণে চৈতন্যচরিতামৃত্বই অধিকতর
নির্ভরযোগ্য । চরিতামূতে লিখিত বৃন্দাবনদাম ও চৈতন্তভাগবত বিষয়ে
উচ্ছ্বসিত মন্তব্যগুলি স্মরণে রেখে একথ! স্বচ্ছন্দে বল যায় যে কৃষ্দ্াস কবিরাজ
ঘটনার সত্যত। বিষয়ে নিঃসন্দিপ্ধ ন। হ'লে বুন্দাবনদাসকে লঙ্ঘন করতেন না।
পরিশেষে আমাদের নির্ধারণ এই যে, চৈতন্তভাগবত এবং ঠচৈতন্তচরিতাম্বত
নিয়ে শ্রীচৈতন্তের যে জীবনালেখ্য ফুটে ওঠে, বস্ত এবং ভাবের দিক্ থেকে
তা-ই আমাদের প্রয়োজন মোটামুটি পিদ্ধ করে। এই ছুই গ্রন্থ ছুই দ্িকৃ
থেকেই পরস্পরের পরিপূরক । টঠচতন্যচরিতামত শুধু চৈতন্যভাগবতেরই
অসম্পূর্ণতার পূরণ করেনি। কবিরাজ গোস্বামীর সামনে পূর্বলিখিত যে সব
মহাপ্রভূর লৌকিক ও দিবা জীবন ৬৩
চরিতগ্রস্থগুলি ছিল, যেমন, মুরারি গুপ্তের সংস্কৃত কড়চা, কবিকর্ণপূরের
মহাকাব্য ও নাটক, সে-সবের উপাদান ও ভাবসার পর্যালোচনা ক'রে তিনি
একটি প্রণালীবদ্ধ, অত্যন্ত স্থুসমগ্জস ও উন্নতশ্রেণীর গ্রস্থ নির্মাণ করেছেন ।
মূরারি গুপ্ের সংস্কৃত কডচ? এবং বৃন্দাবনদাসের চৈতন্যভাগবত তুলনা করলে
দেখা যাবে, উভয়ের মধ্যে যুল বিষয়গত পার্থক্য সামান্যই, অথচ বৃন্দাবনদাস
নবদ্বীপের, মিশ্রপুরন্দর-গৃহের, চৈতন্যের বাল্যচাপল্যের, অধ্যয়নের, পরিহাস-
প্রিয়তার এবং সর্বোপরি প্রথম প্রকাশ ও আশ্চর্য লীলাসমূহের যে বিস্তৃত
বিবরণ দিয়েছেন, আর শচীর্দেবী ও অদৈত নিত্যানন্দ শ্রীবাসাদির জীবন
যেরকম বাশুবতার সঙ্গে ত্র গ্রন্থে বণিত হয়েছে তা মুরারি গুপ্তের
বর্ণনাতে৪ পাওয়। যায় না। লোচনদাস উপাদানের দিক দিয়ে নিবিচারে
মূরারি গুপ্তের অনুসরণ করেছিলেন। কিন্ত বুন্দাবনদাস স্বকীয়ভাবে তথ্য-
সংগ্রহে ব্রতী হয়েছিলেন । চরিতামুতকার যে অবসর পেলেই বৃন্দাবনদাসের
উচ্চ প্রণংসা করেছেন সে কেবল বিনয়বশতঃ ণ্য়। আর কবিরাজ গোস্বামীর
গ্রন্থে ধর্মতত্ব যতই থাক, তিনি গ্রচৈতন্টের বহিরঙ্গ জীবন এবং ভাবজীবনের
বর্ণনায় যুক্তিবিচারের পদ্ধতিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। এ তার
বর্ণনরীতিতে স্পষ্ট । ষোড়শ শতাব্দীর অন্থান্ত গ্রস্থের মধ্যে লোচনদাসের
চৈতন্তমঙ্গলে তথ্যের দ্িকৃ (য়ে এাচৈতন্ের সঙ্গে নরহরির সম্পর্কের বিষয়টি
ছাড়া মুরারিগ্রপ্ত বা! বুন্দাবনদাস থেকে নোতুনতর কিছুই নেই। কবিত্ব
কর্নার দিক থেকে এটি গৌরাঙ্গবিষয়ক পদ্রাবলীর সমশ্রেণীর রচন]।
গোবিন্মদাসের কড়চা নিঃসন্দেহে প্রচুর পরিমাণে কাল্পনিক রচন]। অন্ততঃ
এর আংশিক সত্যও মিথ্যায় ঢাক! পড়ে গেছে। কড়চাটিতে শ্রীচৈতন্তের
লৌকিক জীবন ফুটেছে মনে ক'রে কোনো কোনো আধুনিক গ্রন্থকার
এর স্থানবিশেষ কাজে লাগাবার চেষ্টা করলেও গ্রস্থটির কৃত্রিমতা ও
অপ্রামাণিকত। এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য। জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্জল নেহাৎই
জনশ্রতির উপর লেখ) গ্রন্থ। জয়ানন্দ পালাগানের রীতিতে লিখেছেন এবং
লোকের চমৎকার লাগে এমন বহু উদ্ভট ও অবিশ্বাস্য তথ্য পরিবেশন
করেছেন। সুতরাং এটি কেবল ভক্তের দৃষ্টিতেই দৃষ্য নয়, ইতিবৃত্বের দ্দিকৃ
দিয়েও অবিশ্বান্ত । এসব বিষয় বিস্তৃুতভাবে আলোচনায় পরিস্ফুট হবে।
সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দীতে অদ্বৈত, নিত্যানন্দ এবং শ্রীনিবাস-নরোত্তমের কাহিনী
অবলম্বনে .যষে সব আখ্যান-গ্রস্থ নিমিত হয়েছিল সেগুলি চৈতন্ত-জীবনের
৬৪ বৈষণব-রস-গ্রকাশ
প্রাসঙ্গিক তথা কিছু পরিবেশন করলেও সেগুলির উপর বিনা বিচারে
নির্ভর করা যায় না। বিশেষতঃ চৈতন্তভাগবত এবং চৈতন্তচরিতামত-
এর সঙ্গে ভাবগত বিরোধের ক্ষেত্রে অদ্বৈতপ্রকাশ' এমনকি 'ভক্তি-রত্বাকরে'র
তথ্যকে বহুমান কর] সমীচীন হবে না।
শ্রচৈতন্যের জীবনে রাগভক্তির উদয় আকম্মিকভাবেই ঘটেছিল। একে
আবির্ভাব বা প্রকাশ বল] যেতে পারে, বল! যেতে পারে “ভেঙেছে ছুয়ার,
এসেছ জ্যোতির্ময়।” গয়ায় পিতৃকৃত্য করতে গিয়ে আপনা থেকেই ঘটুক,
রামকেলি গ্রামের কাছে কল্পনায় কৃষ্দর্শন থেকেই হোক, অথবা ঈশ্বরপুরীর
সংসর্গেই ঘটুক* যে মুহুর্তে তার চোখে অশ্রু দেখা দিয়েছিল সেই
মুহূর্তটি বাঙ্লাদেশ এমনকি ভারতবর্ষের পক্ষে অতুলনীয় শ্রভমুহূর্ত।
জীবনীকারের1 এ দিনটিকে চিহ্নিত করেননি | কিন্তু নিঃসন্দেহে শ্রীচৈতন্তের
নিজ জীবনেও এটি একটি স্মরণীয় দিন। তার ঠিক পূর্বে তিনি কলাপ
ব্যাকরণে অধীতী, দশকর্মের শিক্ষানবীশ, কাব্য-শ্বতি-ব্যাকরণের একক্রে,
ছাত্র ও অধ্যাপক, দ্বাক্তিক পণ্ডিতের গর্বনাশকণ্চ এবং সেই সঙ্গে সংসারের
সম্বল-চিন্তায়ও ব্যস্ত। বৃন্দাবনদান আভাস দিচ্ছেন যে সহপাঠী মুকুন্দ-গদ্দাধর
যখন কিছু কিছু ধর্মচ্চা করছেন, আর অদৈতের বাসায় গীতা-ভাগবতের
* চৈতগ্তভাগবত মতে বিধু'পদের মাহাত্ম্কীর্তন শুনে প্রথম তার হৃদয় দ্রবীভূত হয়,
বিষুপাদপন্ম দর্শনে অলৌকিক ভানাবেশে তার চিত্ত বিহ্বল হয় এবং ঈশ্বরপুরীর সংসর্গে তা বর্ধিত
হয়। এ সময়ে ঈশ্বরপুরী দশাক্ষর নামমন্ত্র দানে তার কৃষ্ণবিরছ উদ্দীপিত করেন।
তুৎ-_-পাদপন্মতীর্থের লইতে প্রভু নাম । অঝোরে ঝরয়ে ছুই কমল নয়ান || (মধ্য_-১)
1 আনুমানিক ১৪৩*শক আশ্বিন-শেষ বা কাতিক প্রথমেই তিনি গয়াগমনে বহির্গত হন।
গুতরাং ঘটনাটি কািক-অগ্রহায়ণের। ঠৈতশ্থভাগবতের বর্ণনানুসারে গয়1 থেকে প্রত্যাবর্তনের
পপ তার অধ্যাপনায় বেশ ক্ছুদদন |বচ্ছেদ এটেছিল এবং এার পড়,য়ারা আর কারও কাছে
পড়তেও চায়নি । কৰিকর্ণপূরের চৈতগ্থচরিতামৃত মহাকাব্য মতে পৌষমাদে তিনি গরা থেকে
নবদ্ধীপে প্রত্যাবৃত্ত হন। আবার চ্ববশ বৎসর শেষে ১৪৩১ শকের মাধ-সংব্রান্তি দিবসে তার
সম্ঠান গ্রহণ। চৈতন্তভাগবতের মতে “*বৎসরেক কীর্তন করিল! যেন মতে” ধ'রে গয়া থেকে
প্রত্যাবর্তন এঁ সময়ে ধরা যায।
দিথিজয়ী-পরাভব ঘটনা গুথম বৃন্দাবনদাস ছাড়া প্রত্যক্ষদশা মুরারি গুপ্ত বর্ণন! না করলেও
কবিপক্ষীয় অতিরপ্রন বাদ 1দয়ে, এই ধরণের কোনো ঘটনার সম্ভাব্যতাঁয় অবিশ্বাস করা যায় ন1।
মূলে কোনে সত] না ধাকলে কবিরাজ গোম্ব/ম।ও দীর্ঘ বর্ণনা গ্রথিত করতেন কিন] সন্দেহ। তবে.
দিগ.বিজরী থে কেশব-কাশ্মীরা সে বিষয় অবন্থ নিতান্তই অনুমানমূলক।
নখ
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৬৫
ব্যাখ্যা চলছে তখন নিমাই পণ্ডিত নিতান্তই কৃষ্ণবিমুখ ।* তার ব্যাকরণের
পাগ্ডিত্য লোকব্যবহ্ারে প্রায় ওদ্ধত্যে পরিণত্ত হয়েছিল। বয়োজ্যোর্ঠ
মুরারি গুণ, শ্রীবাস পণ্ডিতও তাঁর ফ্লাকি-জিজ্ঞাসা থেকে রেহাই, পেতেন ন৷।
চঞ্চলতাময় বুদ্ধিদীপ্ত দুর্ঘট-ঘটক ব্যাকরণবিদ্ায় তিনি এমনই খ্যাতি অর্জন
করেছিলেন যে শুহ্ৃভক্তিবা্দী ঈশ্বরপুরী এই প্রতিভাদীপ্ফ তরুণের মধ্যে
ধর্মীয় সম্ভাবনা আবিফ্ফার করতে এসে ঘনিষ্ঠতা স্থাপনের উদ্দেশ্যে তার
নিজ রচনার ত্রুটি দেখিয়ে দিতে বলেছিলেন। কিন্ত নিমাই-পণ্ডিতের এই
ওঁদ্ধত্যের জন্য কেউ যে তার প্রতি ক্রুদ্ধ হননি তার কারণ তার চরিত্রের
স্বাভাবিক সরলতা, ব্যবহারে ওদীর্ধ, যথাস্থানে নম্রতা, পরিহাসপটুতা,
অন্যায়-অসহিষ্ণতা, নেতৃস্থলভ দৃঢ়তা প্রভৃতি বহগুণ। অন্যকে বিরক্ত ক'রে
তিনি যে নির্দোষ আনন্দ উপভোগ করতেন তার দৃষ্টান্ত খোলাবেচা
শ্রীধরে*র সঙ্গে কি মুরারি-মুকুন্দের সঙ্গে তার রদ্ষরসিকতা ।ণ* এর পূর্বথত্র
রয়েছে তার শাণিত বুদ্ধিযুক্ত বাল্যচাঁপল্যেক মধ্যে-_গঙ্জার ঘাটে এবং
তীরবর্তী সমগ্র পলীতে বিশেষ বিশেষ গৃহস্থকে উদ্বেজিত করার মধ্যে।
জীবনীকার ও কবি বৃন্দাবন এই জীবনের নিপুণ বর্ণন৷ গ্রথিত করেছেন।
* ছেনমতে বৈকুছটনায়ক নবদ্বীপে ।
গৃহস্থ হইয়। পঢায়েন বিপ্ররূপে
প্রেমভক্তি প্রকাশ নিমিত্ত অবতার ।
তাহা কিছু ন। করেন, ইচ্ছ। সেড়াহার ॥। (চৈন্ভা, আদি-_-১১)
প্রভূ সে আবিষ্ট হই আছেন অধ্যয়নে।
ভক্ত মতে দুঃখ পার,দেখেন আপনে ॥॥ ( চে-ভা, আদি--১২)
সপ
ন! চিন্তে মুরারি গুপ্ত পুথি গ্রভূস্থানে ।
অতএব প্রভু কিছু চালেন তাহানে || * *
প্রভু বোলে 'ইথে আছে কোন্ বড় জন।
আসিয়া খণ্্ক দেখি আমার স্থাপন...”
শনয়ে মুরারি গুপ্ত আটোপ-টংকার।
ন। বোলয়ে কিছু, কার্য করে আপনার ||
প্রভু বোলে, বৈস্ক, তুমি ইহা কেনে পড়।
লত। পাত। নিয় গিয্প রোগী কর দঢ়।।
ব্যাকরণশান্ত্র এই বিষম অবধি।
কফ পিস অজীর্ণ ব্যবস্থা! নাহি ইথি।॥ ইত্যাদি ( চৈ-্ভা, আঘি--৭)
৬৬ বৈফব-রস-প্রকাশ
আমর। এই নিয়ে বাগবিষ্তার করতে চাই ন1। তার বর্ণনায় ষে স্বাভাবিক
সৌন্দর্য ফুটেছে তার অন্থুবৃত্তিও আমাদের ক্ষমতার বাইরে । আমাদের মস্তব্য
এই যে, তেইশ বৎসর পূর্ণ হয়নি এমন সময়ে গয়ায় বিঞুপদদর্শনে ও
শ্রান্ধা্দি-বিহিতউ মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে এক মুহর্তে যে কাণ্ড ঘটল তা শ্রীচৈতন্ত
নিজেও বোধ হয় প্রত্যাশ। করতে পারেননি । কিন্তু যা অনিবার্ধ তা
ঘটবেই। মহানিক্ষমণ দিবসে ভগবান্ বুদ্ধেরও এরকম ঘটেছিল।
গয়াগমনের পূর্বে মহাপ্রভুর চারিক্র্যে এমন কিছু দেখা যায় না যা! থেকে
তার পরবত্ত ধর্মাভিভব স্থচিত হয়। তথাপি বহিরঙ্গ কোনো! ঘটনা
এবিষয়ে গৌণভাবে ক্রিয়াশীল হয়েছিল কিন। তাও দেখ। প্রয়োজন । তিনি
সাংসারিক জীবনে তিনটি উল্লেখ্য ভবিতব্যের সম্মুখীন হয়েছিলেন :
(১) অগ্রজ বিশ্বরূপের গৃহত্যাগ ও সন্ন্যাস গ্রহণ* (২) পিতা জগন্নাথ
মিশ্রের দেহত্যাগণণ এবং (৩) ম্বনির্বাচিত প্রথমা পত্বী লক্ষমীদেবীর
দেহত্যাগ।% এর মধ্যে প্রথম এবং তৃতীয় ঘটন। ছুটিই অপেক্ষাকৃত গুরুতর,
এবং তৃতীয়টিই বিশেষভাবে, এমন অন্থমান বোধ হয় অসংগত হবে না।
এই তিনটি ঘটন! তার অস্তঃকরণে বৈরাগ্য এবং ঈশ্বরাহ্ুসন্ধানের উপযুক্ত
ভূমিক1 প্রস্তত ক'রে চলেছিল এমন হতেও পারে। এছাড়। দেখা যায়,
দররিপ্র, অথচ সাধুপ্রকৃতি ও পণ্ডিত জগন্নাথ মিশ্র পুরন্দরের গৃহে প্রায়শই
সাধু-সন্ন্যাসী আতিথ্য গ্রহণ করতেন। শ্রীচৈতন্তের সন্ন্যাস গ্রহণের কয়েকমাস
*1বহ্বরূপ নিমাই থেকে আনুমানিক ৭৮ বৎসরের বড় ছিলেন । কারণ বিশ্বরূপ যখন অদ্বৈতের
নিকট পাঠ নিচ্ছেন তখন 'দিগন্বর সর্ব অঙ্গ ধুলায় ধুসর' গৌরাঙ্গ তাকে আহারের জন্ত ডাকতে
যেতেন। বিবাহের কথাবার্তা চলছে এমন সময় বিশ্বরূপ সন্ন্যাসী হন আনুমানিক ১৭ বৎসর বয়সে।
সুতরাং গৌরাঙের বয়ন তখন ১* ৰৎসর। চৈতন্তভাগরত লিখছেন £
যে অবধি বিশ্বরূপ হইল! বাহির ।
তদৰধি প্রভূ কিছু হইল! সুস্থির |
**"খেল। সন্বরিয়! প্রভু ঘত্ব করি পডে।
তিলার্ধেকো পুস্তক ছাড়িয়া নাহি নড়ে ॥
1 অনুমান শ্রীচৈতস্তের বয়স তখন ১৪, তিনি ৬খন গলাদাস পণ্ডিতের মধ্যম কোনে" শ্রেণীর
ছাএ্।
1 চৈতগ্য-বয়ঃক্রম আনুমানিক ২০-২১। এই সময়েই অধ্যাপনার ছার! বা শিত্ঠগুহে দর্শন দিয়ে
অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্টে তার পদ্মাতীরভূমি গমন সংগত মনে হয়। দেখ। যায় ১৬ বংসর পর্যস্ত তিনি
পঙ্গাধাস পগ্ডিতের নিয়মিত ছাত্র । পাঠ কিছুট। সমাপ্ত হ'লে বিবাহ ধ'রে ১৭বৎসরের প্রথমে বিবাহ।
( চৈ-ভা--'যোড়শ বৎসর প্রভুর প্রথম যৌবন' ১ আদি--৭ম)
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৬৭
পূর্বে ভার সন্ন্যাসগুরু কেশবভারতী এসেছিলেন, গয়্াগমনের কিছু পূর্বে
ঈশ্বরপুরী নবদ্বীপে এলে শ্রীচৈতন্ত তাকে নিজগৃহে একদিন এনেছিলেন ।
শ্রীচৈতন্যের শৈশবে এসেছিলেন এক পতৈথিক ব্রাক্ধণ, ধার নিবেদিত
অন্ন নিমাই পুনঃংপুন ভক্ষণ করেছিলেন ব'লে প্রকাশ। এছাড়া সম্ভবতঃ
শ্রীচৈতন্যের জন্ম-পূর্ককালে স্বয়ং মাধবেন্্রপুরী সশিষ্ব (শ্রীরঙ্গপুরী, ধার
সঙ্গে মহাপ্রভূর সাক্ষাৎ ঘটে তার দক্ষিণ ভ্রমণের সময়ে, “চৈতন্তচরিতাম্ৃত"
দ্রঃ) মিশ্র পুরন্দরের গৃহে ভিক্ষা! নির্বাহ করেছিলেন।
এসব বাহ ঘটন। শ্রীচৈতন্তের ব্যক্তিগত জীবনে বৈরাগ্যগ্রবণত] জাগিয়ে
তুলতে সাহায্য করেছিল এমন মনে কর। গেলেও কিন্ত রাগাত্মিক ভক্তি
উদয়ের ব্যাখ্য। করা যায় না। আমরা মনে করি এর মধ্যে দৈব বুগ-
প্রবণতাই তঃর লৌকিক ব্যক্তিত্বের অস্তরালে কাজ করেছিল এবং তিনি
ছুজ্ঞেয়-ম্বরূপ যুগাবতারই । বৌদ্ধধর্মের অবনতির পর থেকে ভারতে মান্ষ-
'জীবনে বিদ্যা, ধনসম্পদ ও জাতিগত কৌলীন্টের পার্থক্যবুদ্ধিতে যে 'কায়েমী
স্বার্থ, সমুচ্চ হয়ে উঠেছিল, ক্ষতরাং ধর্ষে যে গ্লানি দেখ! দিয়েছিল,
আভ্যন্তরীণ ইতিহাসের দিক থেকে তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম অনিবার্ষ হয়ে
উঠেছিল। ভভ্তিতত্ববাদীরা এই সংগ্রামের আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্ত তার!
এ গপ্লানির বিপক্ষে আত্যস্তিক বিদ্রোহ করেননি, আপোস ক'রে চলেছিলেন
মাত্র । মাধবেন্দ্রপুরীর চারিত্র্যে বিপ্লবের বীজ নিহিত হয়েছিল, যা তৎ-
স্প্রদদায়ে অঙ্কুরিত হয়েছিল। কিন্তু মহাপ্রভু এবং তার পরিকরদের চেষ্টার
মধ্যেই এর বনুশাখাসমন্বিত বিকাশ চিহ্নিত হয়েছিল। মানবগোষ্ঠীর
অস্তরতম মানুষের আকাজ্ষারই মূর্তবিগ্রহরূপে তার আবির্ভাব। তার
বৈশিষ্ট্য এই যে, ভগবান্ বুদ্ধার্দির মত তিনি নব-উপলব্ ধর্মের প্রচারকার্ষে
ব্রতী হুননি,* এ ধর্ম তার চারিত্্যে এমনভাবে স্ফুর্ত হয়েছিল যে জাতিতে
নিতান্ত হীম ব'লে পরিগণিত, পতিত এবং ধর্মহীন মান্ছষকেও মহত্ম
অধিকার দান সম্ভব করেছিল ।খ* সাধারণভাবে যাকে আমর] মানবগ্রীতি
* আপি আচরি জীবে শিখাইল। ভর্তি । (চৈ-১)
1 নীচজাতি নহে কুষ্ষভজনে অযোগ্য।
সৎকুল বিপ্র নহে ভজনের যোগ ||
যেই ভজে সেই বড়, অভভ্ঞ হীন ছার।
কৃষ্ণভজ্গনে নাহি জাতিকুলাদি বিচার || ( চৈ-১, অন্ত্য--৪)
চগ্ডালোহগি দ্িজশ্রেষ্ঠঃ হরিভক্িপর়ায়ণঃ।,
৬দে বৈষ্ঞব-রস-্রকাশ
ব'লে থাকি, যা! সীমিত এবং একদেশিক, এ তার চেয়ে ঢের বেশি সমুন্নত
এবং প্রকারে বিভিন্ন ছিল। পূর্বেকার কোনো ভক্তিমত অথবা সোহ্হংবাদও
মানুষকে এই ন্যায্য ও পরিপূর্ণ অধিকার দিতে পারেনি। অতএব
প্চৈতন্যের মানসে ধর্মাভিভবের বিষয়টিকে আধুনিক যে সব গ্রন্থকার তার
বাল্য ও কৈশোরের ক্রমিক অভিব্যক্তি ব'লে বর্ণনা করেছেন, তাদের সঙ্গে
আমরা একমত হতে পারছি না।*
গয়ায় নবধর্ম-উপলব্ধির পরবর্তী অনিবার্ধ প্রতিক্রিয়া তার সন্াস গ্রহণ,
মোটামুটি এক বৎসর ছু” মাস পরে ।+ এটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিঃসন্দেহে,
কিন্ত পৃথকৃভাবে এর আভ্যস্তরীণ মূল্য তত প্রবল নয়, যতটা বহিরঙ্গ
* 'তুগ চৈ-ভা--“আরভিল। মহাপ্রভু আপন প্রকাশ”
“প্রেমবৃষ্টি করিতে প্রভুর শুভারভ্ত”
“পরম অভ্ভুত কথা মহা-অসম্ভব।
নিমাঞ্জিপগ্ডিত হৈল! পরম বৈষ্ণব ||”
1 চরিতাম্ৃতকাঁর এই ভাবে তারিখ দিচ্ছেন £
চবিবশ বৎসর শেবে যেই মাঘ মাস।
তার শুক্লপক্ষ প্রভু করিলা সন্ত্যাস ॥
অর্থাৎ ১৪** শক ফাল্তুনী পুণিম! (২৬ ফান্ধন ) দিবসে (১৪৮৬ হীঃ৮/৯ মার্চ) তার জন্ম ধ'রে ১৪৩১
শক মাঘী সংক্রান্তি (১৫১* যীঃ ১৩১৪ ফেব্রুআরি ) শুক্লপক্ষ, ধর] যাক, দ্বাদশী-ত্রয়োদশী। চব্বিশ
ৰৎসর প্রায় পূর্ণ হয় চান্দ্র মাস তিথি ধ'য়ে এবং মাস-হিসেৰে মেয়েলি গণনাতেও ।
মুরারি ও বৃন্দাবন আরও নির্দিষ্ট ক'রে বলছেন “নংক্রমণ-উত্তরায়ণ দিবস? ।
! তু” পবাত্মনিষ্ঠ! মাত্র বেশধারণ।
মুকুন্দসেবায় হয় সংসার-্তারণ ॥ ( চৈ-চ+ মধ্য--১)
এই সন্নযান যে তার লীলার সঙ্গে একাত্ম তা একজন পদকর্তা হ্ন্দরভাবে নিবদ্ধ করেছেন---.
এ বড বিশ্ময় লাগে মনে।
জিনি নব জলধর পুবেধার কজেবর
দে এবে গৌরাঙ্গ ভেল কেনে ॥
শিখিপুচ্ছ গুপ্াবেড়া মনোহর ধার চুড়!
সে মস্তক কেশশুন্য দেখি।
যার বাকাচাহনিতে মোহে রাধিকার চিতে
এবে প্রেমে ছলছল আখি।!
সদা গোপী সঙ্গে রহে নানারঙ্গে কথ! কহে
এবে নারীনাম ন। শুনয়ে |
ভুজযুগে বংশী ধরি আকরধয়ে ব্রজনারী
সেই ভুজে দ্বণ্ড কেনে লয়ে ॥
যহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৬
লোকসম্পর্ক-মূলা। যে নবজীবন পূর্বেই প্রারন্ধ হয়েছিল এই ঘটনায় তাকে
বাহ শ্বীরৃতির মর্যাদা দেওয়! হল এবং লোকমধ্যে প্রতিষ্ঠাও দেওয়া
হ'ল। বিশ্বস্তর-নিমাইপত্ডিত এখন থেকে “কৃষচৈতন্ত+ হলেন, উপবীত
ত্যাগ ক'রে কেশমুণ্তন ক'রে গৈরিক ধারণ ক'রে এবং হাতে দণ্ড নিয়ে
তিনি যেন নৃতন জন্মে উপনীত হলেন। এই ঘটনাটি অভূতপূর্ব কারুণ্যের
সঙ্গে চরিতকারেরা, বিশেষভাবে পদকর্তাগণ বর্ণনা করেছেন। মানুষ যে
মান্ষের কাছে কত প্রিয় হতে পারে এই পদ্দসযূহ তার উজ্জ্বলতম দৃষ্টাস্ত।
কবি বুন্দাবনদাসের বর্ণনামতে পাষণ্ডী অবিশ্বাসীদের যাতে নবধর্ে প্রত্যয়
জাগে তার জন্য গৌরাঙ্গ দ্রুত ঈন্যাস আশ্রয় করলেন। রাগভক্তি আচরণের
পথে সন্যাসের প্রয়োজন আত্যন্তিক ন। হলেও লোককল্যাণের জন্য অবশ্ঠ-
করণীয় ছিল। তা ছাড়া, বুঝতে হবে, কৃষ্ণপ্রেমে রাধার মত সর্বন্বত্যাগ
তার পক্ষে স্বাভাবিকই হয়েছিল। বল? বাছল্য, কঠোর সন্গযাস মহাপ্রত্
শেষদিন পর্যস্ত ত্যাগ করেননি । কিন্তু এর মহান্ ব্যতিক্রম ছিল, সে
তার মাতৃভক্তি। ন্তাসী হয়ে মাতার চিত্তে গুরুতর বেদন1 দিয়েছেন এই
করুণ অনুভব তাঁর চিত্রকে মাঝে মাঝে বিচলিত করত। তিনি লোক
পাঠিয়ে শচীদেবীকে তাই প্রবোধ দিতেন এবং বস্্রাদি প্রেরণ ক'রে
যথাসাধ্য সেবারও প্রয়াস করতেন।* এছাড়া গৌড়ীয় ভক্তদের সঙ্গে
মিলন-বাসনাও তার চিত্তের বৈশিষ্টোর অন্তর্গত । কিন্তু সন্ন্যাসের পর তিনি
পূর্বাশরমে ফিরেও যাননি, আর বিষুপ্রিয়ার জন্য কোনে] উৎক্া! কোনোদিন
বোধ করেননি ।শ* এবিষয়ে তার লোকাপেক্ষা কিরকম বলবান্ ছিল তা
ক এ ৮ ০৮০৮ খগীছেশ 5 -
“তোমার সেব। ছাড়ি আমি করিল সন্গ্যাস।
ৰাতুল হইয়। আমি কৈল ধর্ম নাশ ॥
এই অপরাধ তুমি না লইহ আমার ।
তোমার অধীন আমি তনয় তোমার |
নীলাচলে আমি আছি তোমার আচ্ঞাতে।
যাবৎ জীব তাবৎ আমি নারিৰ ছাড়িতে ॥”
ধা সং ঙঃ
মাতৃতক্তগণের প্রভু হয় শিরোমণি।
সন্গাদ করিয়! সদ! দেবেন জননী ।। ( অন্ত/--১.)
1মুদ্রিত সংস্কত কড়চ। মতে বৃন্দাবন থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে মহপ্রেভু নৰন্বীপে এসে
বিঝুপ্রিয়াকে তার মুতি গড়িছে পুজ! করতে বলেন. কিন্তু এই অনভ্ভব ঘটনা! আর কোনে! জীবনী-
কার পিপিষদ্ধ করেননি । তাছাড়। মুদ্রত কড়গর নবন্বীপনীল। ব্যতীত পরবতা অংশের রচন!
মুবারির পক্ষে সম্ভব ছিল কিনা এবিধবে মামর। সন্দদ্ধী।
৭০ বৈষুব রস-প্রকাশ
জগদাননের গ্রীতিপূর্ণ সেবাকে কয়েকটি ক্ষেত্রে অস্বীকার এবং তার প্রতি
বহক্ষেত্রে তিরস্কারই প্রমাণ করে। নিতাস্ত প্রীতিবংসল পরিকরদের
নির্বন্ধাতিশয্যে প্রদত্ত ভিক্ষান্ন উপেক্ষা করতে সমর্থ না হলেও, আহার বিষয়ে
রামচন্ত্রপুরীর কটাক্ষ শুনে তারপর থেকে তিনি দৃঢ়ভাবে অর্ধাশন গ্রহণ
করতে থাকেন। যাই হোক, সন্ন্যাস যে তাঁর ভক্তির আচরণে এবং লোক-
শিক্ষণে প্রবল সহায়ক হয়েছিল এ সম্বন্ধে সন্দেহ নেই ।
শ্রীচৈতন্যের গয়া থেকে প্রত্যাগমন এবং সন্গ্যাসাশ্রয়ের মধ্যবর্তী এক
বৎসরের কিছু বেশি সময় রাগভক্তি প্রকাশ এবং বিস্তারের দ্দিকু থেকে
যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ঘটনাবনুলও। এই সময় অশ্রু কম্প রোদন যৃছণদি
অদৃষ্টপূর্ব বিকারসমূহের প্রকাশ, অধায়ন-অধ্যাপন1* বর্জন, শ্রীবাসগৃহে বান্ধব
ও পরিকরসহ সংকীর্তনারভ্ভ,** নিত্যানন্দ-মিলন, হরিদাস ঠাকুরের যোগদ্রান,
মহাপ্রভূর কুষ্তাবতারত্বে পরিকরগণের দুঢপ্রত্যয় এবং তদর্থে অভিষেক,
জগাই-মাধাইয়ের উদ্ধার, চন্দ্রশেখর আচার্ষের গৃহে বড়াই-ঘটিত রুক্সিণীলীলার
অভিনয়, নগরসংকীর্তনের রীতিস্বাপন ও কাজী-প্রবোধ, সন্ন্যাস গ্রহণের
সংকল্প এবং ক্ষুদ্রবৃহৎ নানান্ আভ্যন্তরীণ ও বহিরঙ্গ ঘটন]। মহাপ্রভুর
এই আশ্চর্য প্রকাশ প্রসঙ্গে নরহরি-বাস্থঘোষ-গোবিন্দঘোষ, বুন্দাবনদাস
(এবং মুরারি গুপ্ত, কবিকর্ণপূর প্রভৃতি সকলেই ) অক্লবিস্তর অলৌকিক
ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। এগলির যথাযথতায় বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন
তোলা অযৌক্তিক। কিন্তু এবিষয়ে সন্দেহ করা চলে না যে অশ্র-প্রলাপ-
যুছণর্দি বিকারের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীচৈতন্যের হাবভাবে আরও বনু অদ্ভুততর
প্রকাশ দেখ! গিয়েছিল । এগুলি বাস্তবেই ঘটেছিল কিন্তু অন্য কোথাও
এমন দৃষ্টাস্ত দেখা যায়নি ব'লে পূর্বপরিচিত অবতারাদির অলৌকিক কূপ ও
ভাবের সঙ্গে এগুলির সাদৃশ্য দর্শন সহজ হয়েছিল। মহাপ্রভুর জীবনচিত্রের
এই অংশের শ্রেষ্ঠ রূপকার বৃন্দাবনদাস।
* দেখ! যায়, গঙ্গাদাস পণ্ডিতের কাছে অধ্যয়ন সমাপ্ত হয়নি এমন সময় তিনি অধ্যাপনাও
করছেন। গঙ্গা্দাস পণ্ডিতের টোলে সহায়ক অধ্যাপকের কাজ করছেন এমন অনুমান করা ধায়।
** গঁয়] থেকে প্রত্যাবর্তনের গর আনুমানিক ছু'তিন মাস তিনি ছাত্রদের নিয়ে বসার চেষ্টা
করেছিলেন সংকীর্তনে মত্ত হবার আগেই অসমর্থ হয়ে অধ্যাপনা-গ্রহসন ত্যাগ করেন। চৈতণ্থ-
চরিতানৃত এবং চৈতন্কভাগবত উভয়েরই মতে তিনি প্রায় এক বৎসর নবন্বীপে নৃ'ত্য-সংকীর্তনে
অতিবাহিত করেন। অর্থাৎ ১৪৩ শকের ফাস্তন-চৈত্র থেকে ১৪৩১ শকের মাধ পর্যস্ত তিনি
সংকীর্তন করেছিলেন ।
মহাপ্রত্র-লৌকিক ও দিব্য জীবন ৯১
নিমাই পণ্ডিতের অধ্যাপনা-ত্যাগের বিষয়টি লীলাচারী বৃন্দাবন প্রত্যক্ষ" '
দর্শার মত বর্ণনা করেছেন, এবং ছু চগর কথাতেই সমাঞ্ধ করেননি । পল্লীর
মৃকুন্দসঞ্য়ের চণ্তীমণ্ডপে টোল বসত এবং তার পুত্র পুরুযোতমসঞ্য় নিমাই
পণ্ডিতের ছাত্রদের মধ্যে একজন ছিলেন। কিন্তু নব-অঙ্থরাগের রক্তচ্ছটায়-
ধার চিত্ত রপ্রিত হয়েছে, তার পক্ষে পাঠগ্রহণ এবং ব্যাখ্যান অসম্ভব হয়ে
উঠল | ধাতু ও প্রত্যয়ে, বর্ণে ও আগমে তিনি কৃষ্ণের আভাস দেখতে
লাগলেন এবং ছাত্রদের কষ্ণভাবনার উপদেশ দ্রিতে লাগলেন। ব্যাপারটি
পণ্ডিতের গোচরে আনা হ'লে তিনি নিমাইকে ডেকে উপদ্দেশ দিলেন
ভালোভাবে অধ্যয়ন করতে, কারণ ঠিক মত জান হ*লে ভক্তি আরও
স্থদঢ হবে | গুরু-উপদেশে নিমাই পণ্ডিত একবার প্রাণপণ চেষ্টা ক'রে
দেখলেন, কিন্তু প্রয়াস বিফল হ*ল। স্ত্র বৃত্তি টীকা সর্বত্র হরিকথাই
দেখতে পেলেন এবং অধ্যাপন-প্রহসন সাঙ্গ ক'রে জন্মের মত পুঁথি বন্ধ
করলেন।* চৈতন্যভাগবত মতে বিষ্যাবিলাস সমাপ্ত করেই গৌরাঙ নৃত্য ও
সংকীর্তনে নিরত হলেন। প্রথমে পড়ুয়া, শি্যর্দের সম্মুথেই তিনি নামকীর্তন
আরম্ভ করেন_হুরয়ে নম: ইত্যার্দি। গয়া গমনের পর থেকে তিনমাস
মাত্র ব্যবধানে বিশ্বস্তরের এ এক আশ্চর্য নৃতন যৃতি। কোথায় গেল
সেই বি্যার ওদ্ধত্য, কোথায় সেই চপলতা।, সেই ছিদ্রান্বেষণপর পরিহাস-
রসিকতা! ক্রমে সারা নবদীপে এবং শাস্তিপুরে ব্যাপারটি রাষ্ট্র হয়ে
দ ***কুফবণ এক শিশু মুরলী বাজায়।
সবে দেখে! তাই ভাই বোলে 1 সর্বধায়।।
ধত শুনি শ্রবণে--সকল কৃষ্ণনাম।
সকল ভুবন দেখো-গোবিন্দের ধাম ॥
তোম। সভা স্থানে মোর এই পরিহার
আজি হৈতে আর পাঠ নহিল আমার ॥
তোম! সতাকার-_যার স্থাঁনে চিত্ত লয়।
তার ঠাঞ্ি পড়- আমি দিলাও নির্ভয় ॥
কুঙ্চ বিন আর বাক্য ন' স্ফুরে আমার ।
সত্য আন্ধি কহিলাঙ চিত্ত আপনার ।।”
এই বোল মহাপ্রভু সভারে কহিয়।।
দিলেন পু'খিতে ডোর অশ্রধুক্ত হৈয়া।1”
( চৈ-ভা, মধ্য--১)
খ২ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
,পড়ন। অদ্বৈত আচার্য তার ঈশ্বরোপাসনার মধ্যে বছদিন ধ'রে ধর্মের
মানির বিনাশ এবং ডক্তিধর্ম প্রতিষ্ঠায় অবতারের আবির্ভাবের জন্ত প্রার্থন।
জানাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি ধীরভাবে অপেক্ষা করতে লাগলেন । শ্রীবাসাদি-
স্বচক্ষে দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হলেন। গর্দাধর, মৃকুন্দ নিয়ত শ্টৈতন্তের
পাশ্ববর্তী রইলেন | এদিকে অত্যন্ত অপরিচিত ও কল্পনাতীত ভাববিকার
দৃষ্টে* অনেকেরই ধারণ] হ'ল নিমাইয়ের ব]য়ুরোগে জন্মেছে। শচীমাত।
যারপরনাই ভীত ও ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। ওষুধ, তেল, ঝাড়ক,ক
চলল কয়েকদিন, কিন্তু শীত্রই সকলে বুঝলেন এ বাসর পিছনে গভীর
অর্থ নিহিত রয়েছে, এ ভূতপ্রেত ব। সাধারণ দেবতার ভর নয়__এ “কদত্ব- '
বনদেবতা নবতমালনীলছ্যুতিঃ১ আর এ অশ্র-কম্পদি নব কৃষ্ণাহুরাগের
ফল মাত্র | শ্রীবাসই শচীমাতাকে বুঝিয়ে বললেন, এ বাযুরোগ নয়,
কৃষণভক্তি । এখন শচীমাতার ভয় ভিন্ন প্রকারের হ'ল,_বিশ্বরূপের মত
নিমাইও যদি সন্যাপী হয়। আর ঘন ঘন ভূমিতে পতন দেখে তিনি
অপরিসীম বেদনাবোধ করতে লাগলেন | শ্রীবাসই প্রস্তাব করলেন, তার
গৃহ ভক্তবৃন্দসহ সংকীর্তনের স্থান হোক। ইতিমধ্যে অছৈতের আকর্ষণে
মহাপ্রভু নিজেই অদ্বৈতগৃহে উপস্থিত হয়ে ভাবভক্তির নোতুন প্রকাশের
স্বরূপ দেখানোতে অদ্বৈত বুঝলেন তার এতর্দিনের প্রত্যাশা বোধ হয় সফল
হতে চলেছে।
«* শতেক-জনেও কম্প ধরিবারে নারে।
লোচনে বয়ে নদী শতশত ধারে ॥
কনক-পনস যেন পুলকিত অঙ্গ।
ক্ষণে ক্ষণে অটট অটুট হাসে বছ ক ॥
ক্ষণে হর আনন্দমুদ্ছিত প্রহরেক ।
বাহ হৈলে না বোলয়ে কৃষ-ব্যতিয়েক ॥
হুংকার শুনিতে হুই শ্রবণ বিদ্বরে |
তার অনুগ্রহে তার ভক্ত সব তরে।।
সব-হঙ্গ ভ্তস্তাকুতি ক্ষণে ক্ষণে হয়।
ক্ষণে হয় সেই অঙ্গ নবনীতময় ॥
অপূর্ব দেখিয়া সব ভাগবতগণে।
নর-জ্ঞান আর কেহে1! না করয়ে মনে |
চৈ-ভাঃ মধ্য--১
মহাপ্রভৃর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৭
আরম্ভ হ'ল সংকীর্তন নবদ্বীপের পুরাতন রীতির রামোপাসক নারায়ণ-
উপাসকদের মিলনক্ষেত্র শ্রীবাসগৃহে । উচ্চকণে, স্থুর সহযোগে নামগ্ডুণ-
কীর্তন যে ভক্তিসাধনার মুখ্য অঙ্গ তা শ্রীচৈতন্যই প্রথম দেখালেন |*
শাস্তিপুর থেকে ছুটে এলেন ইশ্বর-উপাসনার নেত। ও গুরু প্রবীণ অদ্বৈত,
সঙ্গে নিয়ে স্্ফী সাধক ও নামমন্ত্রে অনুরাগী হরিদাসকে, কোথা৷ থেকে
এসে জুটলেন সহজ-অনুরাগ ধর্ষের অন্য শ্রেষ্ঠ পথিক নিত্যানন্দ, শ্রীচৈতন্তের
ন*বৎসরের জ্যেষ্ঠ, সমতট থেকে এলেন মাধবেন্ত্র-শিষ্য পুগুরীক বি্যানিধি,
শ্রীথণ্ড থেকে এসে কচিৎ যোগ দ্রিতে লাগলেন «রহরি সরকার । নবদ্বীপের
গদাধর, মুকুন্দ দত, মুরারি গুপ্ত, খোলাবেচ শ্রীধর, শুক্লান্বর ব্রক্ষচারী,
বক্রেশ্বর, গোবিন্দ ঘোঁষ, মাধব ঘোঁষ, বান্র্দেব ঘোষ, চন্দ্রশেখর আচার্যরত্ু,
পুরুষোত্তম আচার্ধ (1), দামোদর পণ্ডিত, শ্রীমান্ পণ্ডিত, ব্রদ্ধানম্দ। কচিৎ
দিবসে এবং প্রায়শঃ নিশাভাগে নবদ্বীপের গঙ্গাতীরবত্তা এই পল্লী খোল
মর্দল করতাল যোগে কীর্তনে মুখরিত হতে থাকল। সংকীতন-চিত্রে
দেখতে পাই প্রিয়তম গদ্দাধর সব সময়েই তার বীদিকে রয়েছেন, ভাইনে
আছেন নিত্যানন্দ-_- আছাড় থেকে শ্রীচৈতন্তকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন,
সঙ্গে নৃত্য করছেন অক্লাস্ত-নর্তক বক্রেশ্বর, গাইছেন কিন্নরক মুকুন্দ এবং
বান ঘোষ, খোলবাদন করছেন গোবিন্বাদি, আর অদ্বৈত, নরহরি,
দামোদর, শ্রীবাস ভাবে আত্মহার1। হয়ে ঘুরছেন। কখনে। বা দেখা যায়,
ভক্তসংখ্য। বেশি হ'লে অধৈত শ্রীবাসাদি পৃথক পৃথকৃ সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে
'নৃত্যু-কীর্তন করছেন । ধর্মপথের ধার! পথিক তার] যেমন এতে নবচৈতন্ত
লাভ করলেন, তেমনি বিষয়ী পণ্ডিত ব্রাহ্মণের এসব ব্যাপারকে উৎপাত মনে
-ক্রলেন এবং লোকধর্ম-বিরোধীরা এদের বিদ্বেষের চোখে দেখতে
লাগলেন। একদিকে দীন অবহেলিত পতিত মানুষ, অন্যদিকে “বিদ্যা ধন
কুল জ্ঞান তপন্তার মদে” প্রমত্ত নবদ্বীপের অভিজাত নাগরিক, এ ছুয়ের
মধ্যে প্রথমোত্ত শ্রেণীই দ্দিব্জীবনের অধিকার পেলেন। কিন্তু লক্ষ্য
করবার বিষয় এই যে, অছৈত-শ্রীবাস-মুরারি প্রমুখ ভক্তবৃন্দও প্রথমে শুদ্ধ-
ভক্তিবাদী ছিলেন কিন। সন্দেহ। শ্রীল অছৈত অধ্যাত্মপ্রিয় এবং তত্বদ্শী
ছিলেন, নেই মর্মেই গীতা-ভাগবতের ব্যাখ্যা করতেন। মূরারিও যোগবাশিষ্ঠ
* *চৈতন্তের স্যষ্টি এই প্রেম"নংকীর্তন?
“সংকীর্তন-প্রবর্তক শ্রীকৃকচৈতন্ত' ( চৈ-চ)
৭৪ | বৈষব-রস-প্রকাঁশ
অনুসারে শ্লোক রচনা! করতেন,* মহাপ্রভূর প্রথম প্রভাবেই তারা এই পথ
ত্যাগ করেন। এই ব্যক্তিগত প্রভাব যা সকলকে মুহূর্তে অভিভূত *ক'রে
ফেলত, এই উন্মাদক সংকীর্তন-স্থরা, এই কষ্জাঙ্গরাগের আশ্চর্য অভিবাক্তি
এবং ভক্তচিত্তের রূপাস্তর সব মিলিয়ে শ্রীচৈতন্যের ভগবত্তাত্বীকাঁর অনিবার্ধ
হয়ে উঠল। ভক্তের স্বাভাবিকভাবেই শ্রীচৈতন্যের ভাববিকার সযূহে
অলৌকিক প্রকাশ উপলব্ধি করতে লাগলেন ।
শ্রীচৈতন্যের ভগবত্তা বা কৃষ্তাবতারত্ব সম্পর্কে অছৈত-শ্রীবাসাদি নিঃদংশয়
হ'লে পর তাঁরা ভগবান্রূপে শ্রীচৈতন্তকে অভিষিক্ত করার ব্যাকুলতা
অনুভব করলেন । এই অভিগ্গেক ঘটনাটি গৌড়ীয় বৈষ্বধর্ষের প্রতিষ্ঠ। ব।
প্রচারের দিক থেকে অতিশয় গুরুত্বপুর্ণ। শ্রীবাসগৃহে এদিন শ্রীগৌরাক্ন
ভাবাঁবেশে বিষণুখট্টায় উপবেশন করলে অদ্ৈতার্দি নান উপচারে তার পুজা
করেছিলেন এবং নারীপুরুষ নিবিশেষে নবশীপলীলার সমূহ পরিকর নান
উপহার দিয়ে কৃতার্থ হয়েছিলেন। গৌরাঙ্গের রুষ্ণত্ব অধৈতাঁচার্য কয়েকদিন
পূর্বেই অন্রভব করেছিলেন। এই দিন সকলের মনে & সত্য বদ্ধমূল
হল এবং অতঃপর গৌরাঙ্গকে পরিচিত অসাধারণ মান্ষমাত্ররপে দেখ আর
ভক্তর্দের পক্ষে সম্ভব হ'ল না। বিশেষ এই যে, এখন থেকে নিত্যানন্দও
কৃষ্ণ-চৈতন্তের দ্বিতীয় এবং অভিন্ন প্রকাশরূপে চিহ্নিত হলেন এবং অদ্বৈতাচার্য
এসবের মূলাধার রূপে পরিগণিত হলেন। এখন থেকেই প্রারব্ধ হ'ল
নরহরি সরকার, গোবিন্দ ঘোষ, মাধব ঘোষ, বাস্থদদেব ঘোষ, পরমানন্দ
গুপ্ত গ্রভৃতি প্রত্যক্ষদর্শীর গৌরলীলাবিষয়ক পদদরচন।। এদের কেউ কেউ
তরুণ গৌরাঙ্গের নৃত্য ও ভাবপ্রকাঁশকে বৃন্দাধিপিনবিহারী নটবববেশী
কৃষ্ণের প্রেমলীলার সঙ্গে অভিন্নভাবে দেখে স্বমাধুর্যরমে গৌরপ্রেমলীলা
অনুভব করলেন, কেউ তাকে কৃষ্ণ হিসেবে, কেউ বা বিরহসম্তপ্। 'রাধ।
হিসেবে তাকে অনুভব করলেন, আবার কেউ বা কালবিলুপ্ত প্রেমের মহান্
দাতা যুগাবতার রূপে দেখলেন ।
সন্্যাস-পূর্ব নবছীপ-লীলায় শ্রীচৈতন্যের একটি কীতি হ'ল বাঙ্ল।
রীতিতে যাত্রাভিনয়- পৌরাণিক রুকঝ্সিণী-কষ্চলীলার সঙ্কে বাঙ্লায় প্রচলিত
চশ্ডীদাস-প্রদদশিত বড়াইঘটিত রাধাষ্জরুষ প্রেমলীলা মিলিয়ে। এই অভিনয়ে
* চৈচন্্রোদয়-নাটক ও চৈজ্তম্তচরিতান্ৃত মহাকাবা, ডঃ বিমানবিহারী মজুমদার কর্তৃক-
উল্লিখিত।
মহাপ্রতুর লৌকিক ও দিব্য জীবন শ৫
গদাধর ও শ্রীচৈতগ্ধ পর পর রুল্সিণী ও রাধা, ব্রদ্ষানন্দ ও নিত্যানন্দ
এ দুয়ের বড়াই, শ্রীবাস নারদ, হরিদাস কোটাল, এছাড়া অত, মুরারি,
শ্রীরাম পণ্ডিত প্রভৃতি কষ্চাদ্ি বিভিন্ন ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ।
চন্ত্রশেখর আচার্ষের স্থবৃহৎ প্রাঙ্গণে অভিনয় হয়েছিল ব'লে বুন্দাবনর্দাস
আমাদের জানিয়েছেন। বেশ বুঝ! যায়, স্থপ্ত লৌকিক ভাবসম্পদগুলির
পুনরুজ্জীবনও প্রত্যক্ষে অথবা! পরোক্ষে মহাপ্রভু ছারাই সংঘটিত হয়েছিল।
অন্ত যে-ছুটি ঘটন। ভক্তিধর্মগ্রচারে ও শ্রীচৈতন্ত-নিত্যানন্দের ভগবত্তার প্রতিষ্ঠায়
সাহায্য করেছিল তা! হ'ল জগাই-মাধাই উদ্ধার, এবং কাজীর বিরুদ্ধাচরণ
গ্রশমন ।%*
বাঙলার সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্রে আভিজাত্য-বিরোধী নবলোকধর্মের অভ্যু-
দয়-সংঘটন এইভাবে সিদ্ধ হলেও অর্থবিষ্া-কুলীনের কেউ তখনই প্রবুদ্
হয়েছিল কিনা সন্দেহ। কতকট1 এই কারণে এবং বিশেষভাবে নিজ
আভ্যস্তরীণ প্রেরণায় শ্রীচৈতন্য সন্যাসগ্রহণে কৃতসংকল্প হলেন। বুন্দাবনদাস
এবং কোন কোন পদকর্তা সন্্যাসের এ বহিরঙ্গ প্রয়োজনের বিষয়ই লিপিবদ্ধ
করেছেন।শ* সম্ভবতঃ: ভক্তদের ধারণায় যুগাবতারী পূর্ণ ভগবানের পক্ষে
* বৃদ্বাবনদাস-কর্তৃক প্রদত্ত আখ্যান অতিরঞ্জিত হলেও, মুরারি গুপ্ত ভার কড়চায় ঘটনাটির
বিশন্দ বর্ণন। ন1 দিলেও এবং ঘটনার দিক থেকে চরিতামৃতে কিছু পার্থক্য দেখ। গেলেও মুল ঘটনা
অবিশ্বান্ত মনে হয় ন1। কাজীদের উপর বৃন্দাবনদাসের ব্যক্তিগত ক্রোধ হয়ত কাজী-প্রবোধের
বযাপারটিকে কাজীদলনে পরিণত করেছে। অনুরূপভাবে বল! যায়, দিখ্বিজযী-পর্ডাভব বা কোনে
বৈদেশিক পণ্ডিতের পাণ্ডিত্যগধনাশের বর্ণনা মুরারি গুপ্ত এবং কবিকর্ণপূর না দিলেও অধ]াপক
শ্রীচৈতন্ঠের পক্ষে তা অসম্ভব মনে হয় না।
1 “করিল পিপ্পলিখণ্ড কফ নিবারিতে।
উলটিয়। আরও কফ বাড়িল দেহেতে |”
রং নর
প্রভু বোলে “শুন নিত্যানন্দ মহাঁশয়।
তোমারে কহিয়ে নিজ হদয়-নিশ্চয় ৷
ভালে আন্লাঙ আমি জগৎ তারিতে।
তারণ নহিল আইলাঙ সংহারিতে ॥
আমারে দেখিয়া কোথা পাইব বন্ধ-নাশ।
একগুণ বন্ধ আরে হৈল কোটি-পাশ ॥
ফু ( পরপৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য)
৬ বৈষ্ণব রস-প্রকাশ
সন্গযাস গ্রহণের কোনো! আবশ্তকতা ছিল না, লোকাপেক্ষায় এবং লোক-
শিক্ষণের জন্যই শ্রীচেতন্তের সন্াস। সমসাময়িক পদ্কর্তারাও_ এইভাবে
লিখে গেছেন। এইজন্যই নিত্যানন্দ নীলাচল যাত্রার সময় শ্রীচৈতন্যের
দগুটি ভেঙে দিয়েছিলেন। আর তার পূর্বে শ্রীবাস-গৃহে তার নিজের দণ্ড-
কমগুলুও ভেঙেছিলেন। নিত্যানন্দ অবধৃতমার্গের অর্থাৎ সহজানন্দ পথের
পথিক ছিলেন। আরও লক্ষণীয় এই যে, শংকর-সম্প্রদায়ের দশনামীর্দের
মধ্যে যেমন অভিমতের তেমনি বেশতৃষা আচরণের বিষয়েও নানা বিভিন্নত।
এসে পড়েছিল। প্রেমধর্মে বাহ্ সন্যাস গ্রহণের প্রয়োজনীয়ত৷ ন| থাকলেও
নান দিক বিবেচনা! কঃরে মহাপ্রভু জন্যাসেই সংকন্ন স্থির করেছিলেন
এবং দগ্ড-কমণ্ডলু থাক্ না থাক্ সন্ধ্যাসীর স্থকঠোর বৈরাগ্য শেষদিন পর্যস্ত
পালন করেছিলেন ।' তার আভ্যন্তরীণ কষ্ণ-অপ্রাপ্তি এবং বিরহ-ব্যাকুলতার
সঙ্গে এই স্বাভাবিক সঙ্্যা-আচরণ সর্বথ! সংগতও ছিল ।
মুরারি গুপ্তের মতে মহাপ্রভু সন্ন্যাস নিয়েছিলেন রবির মকর থেকে
কুম্তে যাওয়ার দ্দিবসে কুম্তং প্রযাতি মকরাৎ্*। বুন্দাবনদাসের মতেও
সংক্রমণ-উত্তরায়ণ দিবস। শ্রীচৈতন্যচরিতাম্ততে মহাপ্রভুর বয়ঃক্রম ধঃরে__
“চব্বিশ বংসর শেষে যেই মাঘ মাস। তার শুক্ুপক্ষে প্রভু করিল। সন্ন্যাস ।”
এই বর্ণনায় মনে করা হয়, “এদিন শুরুপক্ষ শেষ হয়ে কৃষ্ণপক্ষও পড়েছিল।
মহাপ্রভু শুরুপক্ষ থাকতে থাকতে দিনের পূর্বভাগে সন্গাস গ্রহণ করেন ।”
ডঃ বিমানবিহারী মজুমদার হিসেব ক'রে দেখিয়েছেন, সন্যাস-গ্রহণের দিনরাত্রি
কাটোয়ায় অতিবাহন ক'রে পরের দিন প্রত্যুষে বৃন্দাবন যাত্রার দ্য
দেখ কালি শিখ!-সুত্র সব মুণ্ডাইয়!।
ভিক্ষ1! করি বেড়াইমু সঙ্গ্যাস করিয়া
যে যে জনে চাহিয়াছে মোরে মারিবারে।
ভিক্ষুক হইমু কালি তাহার ছুয়ারে ॥
সং স
তোমারে কহি'লু এই আপন হৃদয়।
গারিহস্থ বাদ আমি ছাড়িব নিশ্চয় || ( চৈ-ভা। মধ্য--২৫)
“গগ্ডিত পড়া যার! আমারে না যানে তার!
মোর উপদেশ নানি লয়।
ভাৰি হই বুদ্ধিহারা কিরূপে তরিবে তারা
দুর হব নর়'কর ভয়।। (পরপৃষ্ঠায় )
মহাগ্রভূর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৭
পশ্চিম দিকৃ লক্ষ্য ক'রে চলতে থাকেন। আর, সন্্াসের জন্য গৃহত্যাগ
সংক্রাস্তির তিন দিন আগেই করেছিলেন।* বান্থদেবাদির পদে দেখা যায়
মহাপ্রভূ সকলের অজ্ঞাতেই গৃহত্যাগ করেন। কিন্তু বুন্দাবনদাসের বর্ণনায়
তিনি তারিখ নির্দেশ ক'রে - নিত্যানন্দ, গদ্দাধর, মুকুন্দকে তার গোপন
অভিপ্রায় জ্ঞাপন. করেন এবং নিত্যানন্দকে নির্দেশ দেন যেন শচীর্দেবী,
চন্ত্রশেখর আচার্য এবং ব্রদ্থানন্দকেও তিনি পূর্বাহেই জানিয়ে রাখেন।
এ রাত্রে গদাধর এবং হরিদাস ঠাকুর মহাপ্রভুর নিকট শয়ন করেছিলেন।
মুরারি গুপ্ত বলেন যে, মহাপ্রভু তাকেও জানিয়েছিলেন । মহাপ্রভুর মাঁতি-
ভক্তি এবং সহায়হীন মাতার জন্য পরবর্তা উদ্বেগ প্রভৃতি থেকে ধ'রে
নেওয়! যায় তিনি শচীদেবীর অন্ুমতি-ভিক্ষা না ক'রে হঠাৎ গৃহত্যাগ
করেন নি। সুতরাং বুন্দাবনদ্াস পরিবেশিত নিম্নলিখিতরূপ বর্ণনাই ঠিক
এবং যেমন বাস্তব তেমনি করুণ £ণ'
আই জানে--আজি প্রতু করিব গমন ।
আইর নাহিক নিন্দা, কান্দে অন্থুক্ষণ |%*
আই জানিলেন মাত্র প্রভুর গমন।
দুয়ারে বসিয়া রহিলেন ততক্ষণ ॥
জননীরে দেখি প্রভু ধরি তান কর।
বসিয়৷ কহেন তানে প্রবোধ উত্তর ॥
“বিস্তর করিল। তুমি আমার পালন।
পট়িলাঙ শুনিলাঙ তোমার কারণ |
অনেক চিস্তার প্র দঢ়ায়িনু এ অস্তঃ
আমি ত্বর|ছাড়ি গৃহবাস।
মন্তক মুণ্ডন করি এ ডোর কৌগীন পরি
অবিলম্বে লইব সন্গ্যাস॥৮” (গোবিন্দ ঘোষ)
* কিন্ত এত আগে গৃহত্যাগ কখনই সমীচীন মনে হয়না। আমাদের মনে হয় ২৯ মাধ
সন্গাস-খ্রহণের দিন নির্বাচন ক'রে ২৮ প্রত্যুষ অর্থাৎ ২৭ রাব্রিশেষেই তিনি নিক্কাত্ত হন। চত্দ্রশেখর
আচার্য গিয়ে সব ব্যবস্থা করেন। পরদিন ক্ষৌরকর্ম-গঙ্গান্নানান্তে দীক্ষা নেন। এবিষয়ে বৃদ্দাবন-
ঘাসের বর্ণনারীতিই যথাধথ মনে হয়।
1 এবং চরিতামৃতে নানাস্থানে বণিত মহাপ্রভুর মাতৃভকি-প্রকাশের সঙ্গে এই বর্ণনার ভাবাত্মক
মিলও রয়েছে।
"৭৮ বৈষব-রস-গ্রকাশ
আপনার তিলার্ধেকো না ভাবিয়। দুখ ।
আজন্ম আমার তুমি বাঢ়াইল। সুখ ॥
দৃণ্ডে দৃণ্ডে যত তুমি করিল। আমার ।
আমি কোর্টি-কল্পে নারিব শুধিবার ॥
তোমার সাদগুণ্য সে তাহার প্রতিকার ।
আমি পুন জন্ম জন্ম খণী সে তোমার |
শুন মাত! ঈশ্বরের অধীন সংসার ।
স্বতন্ত্র হইতে শক্তি নাহিক কাহার ॥
সংযোগ বিয়োগ যত করে সেই নাথ।
তান ইচ্ছ। বুঝিবারে শক্তি আছে কাঁত।
দশ দিন অন্তরে কি এখনে ব।৷ আমি।
চলিলেও কোন চিন্তা না করিহ তুমি ॥
ব্যবহার পরমার্থ যতেক তোমার ।
সকল আমাতে লাগে সব মোর ভার ॥'
বুকে হাথ দিয়া প্রভু বোলে বার বার।
“তোমার সকল ভার আমার আমার ॥”
যত কিছু বোলে প্রভূ সব শচী শুনে।
উত্তর না ক্ষরে কান্দে অঝর-নয়নে ॥
পৃথিবী-স্বরূপা হৈল1 শচী জগন্মাতা ।
কে বুঝয়ে কৃষ্ণের অচিস্ত সর্ব কথ! ॥
জননীর পদধূলি লই প্রত শিরে।
প্রদক্ষিণ করি তানে চলিল] সত্বরে ॥
( মধ্য--২৬ )
শ্রীচৈতগ্ের মহানিক্ষমণের কিছুক্ষণ পরে পূর্বনির্দেশমত নিত্যানন্দাদি
কাটোয়ায় কেশব ভারতীর নিকটে হাজির হলেন। প্রথম দিন আয়োজন
এবং সংকীতুনে কাটল। পরদিন নৃতন জীবন, বিশ্বস্তর-নিমাইয়ের নোতুন
নাম। পরিকরের! কেশমুণ্ডন দেখে অশ্রসংবরণ করতে পারলেন না সেই
তরঙ্গিত কেশদাম, স্বন্ধবিলম্বিত, নৃত্যকাঁলে বিক্ষিপ্ত উদ্দাম, তন্ময়াবস্থায়
মেঘচ্ছায়াবিকীর্ণভ্রি_সেই কেশরাজি আর পরিকরের। দেখতে পেলেন 'না।
মহাগ্রতুর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৯
এই ঘটনার পর ভাবাবিষ্ট শ্রীচৈতন্তয সেদিন" কাটোয়ায় নবছীপ-সহচরদের
সঙ্গে কোনোমতে সংকীর্তনে কাটিয়ে, প্রত্যুষেই বৃন্দাবনের উদ্দেশে ক্রতবেগে
বহির্গত* হলেন। প্রায় আহার-নিত্রী ত্যাগ ক'রে তিন দিন ঘুরলেন
বর্ধমান-বীরভূমে। তার সঙ্গে কিছুদূর গেলেন কেশব ভারতী পথ
দেখিয়ে, নিত্যানন্দ যথাসম্ভব তার কাছে কাছে থাকলেন, আর কিছু দূরে
অন্ুদরণ করতে লাগলেন মুকুন্দ, গদাধর এবং গোবিন্দ ঘোষ । **
বক্রেশ্বর তীর্থের কিছু আগেই কিন্ত নবীন সম্গ্যাসী বিপরীতমুখে ফিরলেন ।£
চতুর্থ দিনে সন্ধ্যায় গঙ্গাতীরে এলে শ্রীচৈতন্যের বাহজ্ঞান ফিরে আসে
এবং পরের দিন তিনি নিত্যানন্দকে নবদ্ীপে পাঠিয়ে দিলে নিত্যানন্দ
চার-পাচ দিনের মধ্যে নবর্ধীপে এসে শচীমাতাকে সব সংবাদ দেন।
মহাপ্রতুর গৃহত্যাগের পূর্বমধ্যাহ্ন থেকেই শচীদেবী অন্নজল ত্যাগ করেছিলেন।
নিত্যানন্দ যেদ্দিন নবদ্ধীপে ফিরলেন সেদিন “আইর ছ্বাদশ উপব|স”।
এদ্দিকে মহাপ্রভু ফুলিয়ায় হরিদাসের কুটিরে উপস্থিত হলে পর অদৈত
আচার্য এসে তাকে শাস্তিপুরে নিজগৃহে নিয়ে গেলেন। সেখানে উপস্থিত
হলেন নিত্যানন্দ সহ (অথবা! আচার্ধরত্ব সহ) শচীদেবী এবং ক্রমান্বয়ে
নবদ্বীপের পরিকরবৃন্দ।** শাস্তিপুরে লোকসংঘ্ট হ'ল প্রচুর। সন্ধ্যায়
অদ্বৈত আচার্য কীর্তন আরম্ভ, করলেন-_-“কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।
চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর | অশ্রু কম্প পুলক মুছণীয় নবীন সন্গ্যাসীর
দেহ বিদলিত হ'ল। মুকুন্দ এই বিরহবিকারের সমুচিত পদ ধরলেন-__
“1 হা প্রাণপ্রিয় স্থি কি না হৈল মোরে । কান্প্রেমবিষে মোর তন্গমন
জারে ॥, শচীদেবী স্বহস্তে রন্ধন করে পুত্রকে ভিক্ষা দিয়ে মাতৃহৃদয়ের
-সম্তাপ কথঞ্চিৎ দূর করতে পাঁরলেন। পরে তারই অনুরোধে মহাপ্রতু
বৃন্দাবনে থাকার অভিলাষ বর্জন ক'রে নীলাচলে থাকার প্রতিশ্রুতি
* ১ল] কাজ্তন, ১৪৩১ শক, ১৫১০ স্রীষ্টাব্ব।
1 চৈ-5 মতে নিতানন্দ, চন্ত্রশেখর আচার্য এবং মুকুন্দ এই তিনজন তার সঙ্গী হয়েছিলেন।
চৈ-চ মতে নিত্যানন্দ কৌশলে তাকে ফিরিয়েছিলেন এবং আচাধরত্ুকে শাস্তিপুরে অন্বৈততগুছে
ও পরে নবন্বীপে পাঠিয়েছিলেন মহাপ্রভুকে নিয়ে যাচ্ছেন এই সংবাদ দিরে। টৈ-ভা মতে মহাপ্রভু
সনীলাচল যাবেন ব'লে নিজেই ফিরেছিলেন।
ক চৈ-চ মতে অধৈতগুহে আগমনের পরের দ্বিন প্রভাতে শচীদবেৰীর উপস্থিতি ।
৮৬ বৈষ্ব-রস-গ্রকাশ
দিলেন।* শ্াস্তিপুরে এইভাবে তিন চার দিন বিশ্রামের পর মহাপ্রভু
নীলাচল যাত্রা করলেন। এই যাত্রায় সঙ্গী হলেন নিত্যানন্দ, গদাধর,,
মুকুন্দ, গোবিন্দ, জগদানন্দ এবং ক্রহ্ষানন্দ ।% গঙ্গাতীর ধ'রে চলতে চলতে
শ্রীচৈতন্য স্থলভ্রমণে আ্টিসারা-ছত্রভোগ পর্যস্ত এলেন। তখন গড়ের
রাজা হুসেন শাহের সঙ্গে উড়িস্তারাজ প্রতাঁপরুদ্রের বিবাদ চলছিল।
হুসেন শাহের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানার রাজকর্মচারী রামচন্দ্র খা প্রভু 'এবং
সঙ্গীদের কৌশলে গঙ্গাপথে স্ববর্ণরেখার কাছাকাছি পর্বস্ত পৌছে দিলেন
রাত্রে নৌকার ব্যবস্থা ক'রে। স্থ্বর্ণরেখ পার হয়ে জলেশ্বর, তারপর
বাশদা, রেমৃণা, যাঁজপুর এবং বৈতরণী নদী পার হয়ে ভুবনেশ্বর, পরিশেষে
নীলাচল। ইতিমধ্যে একটি ম্মরণযোগ্য ঘটনা ঘটে। তা হ'ল নিত্যানন্দ
কর্তৃক মহাপ্রভুর দগভঙ্গ। চৈতন্যভাগবত মতে স্থবর্ণরেখা পার হ*লে এটি
ঘটেছিল। চৈতন্ব-চরিতাম্তত মতে ভার্গী নদীতে মহাপ্রভৃব স্নানকালে,_
নীলাচলের সন্গিকটে। যাই হোক, এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মহাপ্রভু সকলের
সঙ্গ ত্যাগ ক'রে একাকী ছুটলেন নীলাচলের দিকে । ক্রমে জগনাথদর্শনের
ব্যাকুলতাও তীর বেড়ে উঠল। দ্রত-পদক্ষেপে মন্দিরে ঢুকে দুহাত
বাড়িয়ে জগন্নাথের দিকে ছুটে চলেছেন এমন সময়ে দ্বারের কাছে তিনি
মৃছিত হয়ে পড়ে গেলেন ।**
* চৈ-চ গ্রন্থের এই কারণ-নির্দেশই যথাযথ ব'লে মন হয়।
1 কবিকর্ণপুর ও চৈ-চ অনুসারে “দশধিন ভেজন কীর্তন'। কিন্তু হাহলে ঠৈচ কথিত
ফাল্ুনশেষে মহাপ্রভুর নীলাচলে দোলযান্র! দেখা কী ভাবে ঘটে? নীলাচল যেতে অন্ততঃ ১৩ দিন
লেগেছিল এবং দোল পুপিমা ফান্ঠানের ২৭-২৮ তারিখে হয়েছিল ধরলে মহাপ্রভু ১৩-১৪ ফাল্তুন
শাস্তিপুর ত্যাগ করেছিলেন বলতে হবে । বৃন্দাবনদাঁস কোনে! কাল-পরিমাণ নির্দেশ করেননি।
স্বতরাং এমন মনে করাই ঠিক যে শান্তিপুরে ৪ দিন কাটিয়ে নীলাচল যাঁত্র' করেছিলেন এৰং
চরিতাম্বতকার হয়ত বা রাঢ় থেকে প্রত্যাবর্তন ধ'রে দশ দিন বলেছেন।
+ চৈশ্চ মতে-এনিত্যানন্দ গোসাঞ্চি, পণ্ডিত জগদানন্দ ।
দামোদর প্ডিত আর দত মুবুন্দ ॥
এই চারিজনে আচাধ দিল! প্রভু মনে ।”
অত্যন্ত স্পষ্ট ভল্লেখ এবং নান। কারণে এই বিবরণই ঠিক থ'লে মনে হয়।
*% কবিকর্ণপুর এবং লোচনের মতে শ্রীচৈতন্য প্রথম সার্বভৌম-গৃছে বান, জগন্লাথমন্দিরে নয়।
কিন্ত এ বিষয়ে পরবর্তা' জীবনীকার কবিরাজ গোত্বামীর বিবরণই ঠিক।
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন হু
এ সময়ে নীলাচলে অবস্থান করতেন প্রাক্তন নদীয়াধাসী, নৈয়ায়িক ও
অদ্বৈত-মতে আস্বাবান্ খ্যাতনামা! পণ্ডিত সার্বভৌম ভট্রাচার্য। তিনি
প্রতাপরুদ্রের সভাপগ্ডিত ছিলেন। মহাপ্রভু যখন প্রস্তর-চত্বরে পড়ে গেছেন
এবং মন্দিররক্ষী উৎপাত মনে ক'রে তাকে মারতে উদ্যত এমন সময়ে
দৈবে সার্বভৌম মদ্দিরে প্রবেশ করলেন। নবীন সম্্যাসীর শ্রীমপ্ডিত অবয়ব
দর্শনে তিনি প্রতীক্ষককে নিবৃত্ত করলেন এবং যৃছ্িত অবস্থাতেই তাঁকে
স্বগৃহে নিয়ে এলেন। সার্বভৌমের ভগিনীপতি গোপীনাথ ত্বাচার্ধ, যিনি
মহাপ্রভুর নবদ্বীপ-লীলার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন, তিনি সার্বভৌমের গৃহেই
তখন ছিলেন। স্থতরাঁং অ$র কিছুই অজান। রইল না। ইতিমধ্যে
নিত্যানন্দ-মুকুন্দার্দী খোজ করতে করতে গোঁপীনাথ আচার্ষের সঙ্গে
সার্বভৌমের গৃহে এসে হাজির হলেন। নীলাচলে উপস্থিতির এই সময়
(১৪৩১ শক, ফাল্গুন প্রায় শেষ ) শ্রীচৈতন্যের বয়স পূর্ণ চব্বিশ, সৌর গণনায়
কয়েকদিন বেশি হতে পারে ।
এই সময়কার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটন। হ'ল অদ্বৈতবাদী সার্বভৌমের
মত পরিবর্তন এবং ভক্তিমতে বা অচিন্ত্যভেধাভেদবাদে পূর্ণ প্রত্যয় ।*
শ্রীচৈতন্যের ব্যক্তিগত প্রভাবের ফলেই এটি বিশেষভাবে সম্ভব হয়েছিল। তার
অপূর্ব ক্রষ্ণবিরহ, অশ্রু কম্প পুলক যুছণ প্রভৃতি অ-লৌকিক ভাবাবেশই
অদ্বৈতমতের নিঃশেষ শ্রেয়স্করত্ব সম্বন্ধে সার্বভৌমকে সন্দিহান ক'রে
তুলেছিল। চৈতন্য-চরিতকার বলেছেন যে স্পর্শমণির স্পর্শে [লোহা
যেমন সোন। হয়ে যায়, তেমনি সার্বভৌমের কুতর্কমলিন চিত্তও ভাবস্পর্শে
উজ্জল হয়ে উঠেছিল। অবশ্ঠ কবিকর্ণপূর এবং কবিরাজ গোন্বামীর বর্ণন-
মতে শ্রীচৈতন্য যুক্তিতর্কের ছারাঁও অদ্বৈতমত খণ্ডন করেন। যাই হোক,
নীলাচলে পদক্ষেপ ক'রেই মহাপ্রভু অনায়াসে যে ঘটনা সম্ভব করলেন
তা গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রসারে প্রভৃত সহায়ত। করেছিল।
তীর্থপর্যটন সন্যাসের অঙ্গ । ফলে মহাপ্রভু নীলাচলে বেশিদিন অপেক্ষা
না ক'রেই দাক্ষিণাত্য ভ্রমণে বহির্গত হলেন 1 ত। ছাড়। দাক্ষিণাত্য বহু
পূর্ব থেকেই ভক্তিধর্মের প্রধান কেন্ত্রপে বিখ্যাত | রামানুঞ্জ, ভাস্কর,
* বৃন্বাবনদাসের বর্ণনা মতে সার্বভৌম পূর্ব থেকেই ভক্তিমতে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু একথ।
টিক মনে হয় না। চৈতন্যচন্দ্রোদয় নাটক এবং ঠৈতন)চরিতাম্তের বর্ণনাই এবিবয়ে বিশ্বাসযোগ্য ।
4 ১৪৩২ শকের বৈশাখ প্রথমেই এীচৈতন্যের দাক্ষিপাত্যের পথে গদক্ষেপ।
৬
৮২ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
ষামুন গ্রভৃভি আচার্ধ, কষ্ণকর্ণাম্বত-রচয়িতা লীলাশুক এবং বু আলবার
ভক্তের প্রেমময় সাধনায় পবিত্র এ দক্ষিণ দেশ । মহাপ্রভু মুখে শুধু
বললেন যে তার জ্ষ্ঠভ্রাত1 বিশ্বরূপ-শংকরারণ্যের সন্ধানে তিনি যাচ্ছেন
তাই এই ভ্রততা | এ যাত্রায় মহাপ্রভু তার সঙ্গীদের সাহচর্য অস্বীকার
করলেন, কিন্ত সকলের আগ্রহাতিশয্যে কাল৷ কৃষ্দাস নামে এক বাঙালী
ব্রাহ্ষণকে জলপান্র-করক্কবাহীরূপে সঙ্গে নিলেন।* যাত্রার পূর্বে সার্বভৌম
তাঁকে বললেন 'কৃষ্ণলীলারসিক রায় রামানন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ ক'রে যেতে ।
তিনি রাজ। প্রতাপরুদ্রের অধীনে গোদাবরী তীরবত্তা বিদ্যানগরের প্রধান
কর্ষচারী, কিন্তু প্রেমমার্গের উন্নত ভক্তিভাবুক | বলা বাহুল্য, এই
সাক্ষাৎকার এবং কয়েকদিন ধ'রে উভয়ের ভাবের আদান-প্রদানও
রাগভক্তির প্রতিষ্ঠা বিষয়ে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা | ব্রজভাব, গোপীপ্রেম,
রাধিকার মহাভাব, রাগাত্মিক কৃষ্জভজনের বিবিধ রীতি, প্রেমরসের সুস্ষ
বৈচিত্রী-সমূৃহ উভয়ের আলাপ-আলোচনায় পরিশ্ফুট হ'ল | এবিষয়ে
মহাগ্রভূর যা জানবার তিনি রামানন্দ রায়ের কাছ থেকে জেনে নিলেন
এবং নিজভাবের সঙ্গে মিলিয়ে অপরিসীম আনন্দ লাভ করলেন, আর
কৃষ্ণপ্রেম ও রাধাভাবের ঘূর্ত বিগ্রহের সাহচর্য লাভ ক'রে রায় রামানন্দের
হদয়ও অরুণরাগে রপ্চিত হ'ল, তিনি বিষয়নিষ্ট ত্যাগ ক'রে বৈরাগ্যে
কৃতসংকল্প হলেন | কথা হ'ল মহাপ্রভুর দক্ষিণ ভমণাস্তে রামানন্দও
নীলাচল আশ্রয় ক'রে তার সঙ্গস্থখ আন্বাদন করবেন, ইতিমধ্যে বিষয়-
কর্ষের ব্যবস্থা ক'রে নেবেন ও রাঁজাজ্ঞ৷ নিয়ে রাখবেন।
হরিনামমৃতি শ্রীচৈতন্য বিছ্যানগর ত্যাগ ক'রে চললেন দক্ষিণ দিকে।
জ্ঞানবাদী, কর্মবাদী, পাশুপতত্রতধারী এবং ধর্মবিরোধী বহু পাষণ্তী ব্যক্তি
তার সংস্পর্শে এসে মনুষ্যত্ব পেলে, নিম্বার্ক-সম্প্রদায় শ্রী-সম্প্রদায়ের বহু ভক্ত
* 'গোবিন্দদাসের কড়চা” অনুসারে তার সঙ্গী হয়েছিলেন গ্রন্থকার গোবিন্দ কর্মকার। কিন্তু
এ বিষয়ে প্রধান জীবনীকাব্যগুলিতে কোনে উল্লেখই পাওয়া যায় না। গোবিন্দ নামে পাওয়া যায়
নবদ্বীপলীঙ্গার পরিকর এবং গায়ক কবি গোবিন্দ ঘোষকে, খোল-বাজিয়ে গোবিন্বানন্দ ব।
গোবিন্দ দত্তকে এবং এ ঈশ্বরপুরীর ভৃত্য এবং তারই আজ্ঞায় মহাপ্রভুর পর্িচারকরূপে নিষুক্ত
শেষদিন পর্যন্ত নীলাচল বাসের সঙ্গী, ভৃত্য এবং আত্মসচিব গোবিন্দকে। কিন্তু ইনি তখনও
প্রভূসংস্পর্শে আসেননি । কড়চা এবং গোবিন্দ কর্মকার দুই-ই কাল্পনিক এই হ'ল পণ্ডিতদের
অভিমত।
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৮৩
রাগান্থগা ভক্তি ধর্মের শ্রে্ঠতা স্বীকার করলেন | শ্রীরঙ্গমে এসে মহাপ্রতু
সাক্ষাৎ পেলেন রামান্থজ সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ভক্ত বেঙ্কট ভট্টের ও তার
অন্গজ প্রবোধানন্দের।* সেখানে চার মাস থেকে বেঙ্কট ভট্রের পুত্র
গোপাল ভট্টকে সংসার করতে নিষেধ ক'রে শিক্ষান্তে বৃন্দাবন যাওয়ার
কথা ব'লে এলেন | এরপর মাছুরায় তার সাক্ষাৎ ঘটল মাধবেন্্রপুরী-
শিষ্ত পরমানন্দপুরীর সঙ্গে | মহাপ্রভু গুরুসম্পর্কে তার এই অগ্রজের
সঙ্গে তিন দিন কাটিয়ে তাকে পুনঃ পুনঃ প্রণাম ক'রে নীলাচলে এসে
অবস্থান করতে বললেন । তারপর তাত্ত্পণী অতিক্রম ক'রে কন্যাকুমারীর
দিকে অগ্রসর হলেন | সেতুবন্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে মহাপ্রু
দাক্ষিণাত্য “ক্তিস্প্রদায়ের একটি অমূল্য গ্রন্থ _'ব্রগগসংহিতা” পেয়ে তার
অনুলিপি করিয়ে সঙ্গে নিয়ে এলেন 1 এর পর উত্তরপথে যাত্রায়
শ"করাচার্ধ-প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত শুঙ্গেরী মঠ দর্শন ক'রে মহীশূরে তুজভদ্রা
অতিক্রম ক'রে মাধব-সম্প্র্দায়ের সাধনকেন্দ্রে এসে উপস্থিত হলেন |
উদ্দিপিতে মধ্বাচার্য স্থাপিত গোপালরুষ্জ দর্শন ক'রে মহাপ্রভু যদ্যপি
পরমপ্রীতি লাভ করলেন, তবু ছুঃখিত হলেন মাধ্ব-সম্প্রদায়ে রাগভক্তির
অভাব লক্ষ্য ক'রে । দেখলেন এই সম্প্রদায়ের তাত্বিক ভক্তের মুক্তিলাভকেই
সাধ্যবস্ত ব'লে ধরে আছে, কষ্প্রেমকে নয়। আর বর্ণাশ্রমধর্মানুগত ব্রাঙ্গণ
শূদ্রার্দির পৃথক্ পৃথক্ কর্মান্ছসরণকেই লাধনপথ ব'লে মনে করছে । এদের
শতদ্ধাভক্তি বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে মহাপ্রভু এনে পৌহালেন পন্ধরপুরে বিট ঠল-
নাথ মন্দিরে, কোলাপুর অতিক্রম ক'রে | এখানে এসে গ্রামে আকস্মিকভাবে
অপর এক মাধবেন্দ্র-শিষ্য শ্রীবঙ্গপুরীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হ'ল । শুনলেন
মাধবেন্দ্রপুরীর সঙ্গে ইনি একবার নবদ্বীপে এসে জগন্নাথ মিশ্র-পুরন্দরের
আতিথ্য গ্রহণ করেন এবং তখন শচীদেবীর রাম্নী মোচার ঘণ্ট খেয়ে
অপৃর তৃপ্তি পেয়েছিলেন। কথাপ্রমঙ্গে তিনি সংবাদ দিলেন যে সেই
তীর্থেই মহাপ্রভুর অগ্রজ বিশ্বরূপ-শংকরারণ্যের সিদ্ধিগ্রাপ্তি ঘটেছে।
সেখান থেকে অগ্রসর হয়ে মহাপ্রভু কৃষ্ণবেণ্-তীরবর্তী এক মন্দিরে
লীলাশুক বিশ্বমঙ্গলের বিখ্যাত রাগভক্তিকাব্য কৃষ্ণকর্ণামতের আবৃত্তি
শুনলেন এবং কৃষ্ণকর্ণামুতের প্রি নকল করিয়ে সঙ্গে নিলেন। এরপর
নর্মদা ও নিবিদ্ধ্যা তীরবর্তী তীর্থসমূহ পরিক্রম ক'রে দণ্ডকারণ্যে প্রবেশ
স্পা পিপিপি
* প্রথমে তত্ববাদ্ধী* পরে চৈতন্যচন্দ্রামৃত নামক বিখ্যাত চৈতন্যনীলা-কড়চার কর্তা।
৮৪ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
করলেন " এবং দক্ষিণমুখী হয়ে পঞ্চবটী, নাসিক প্রভৃতি পরিভ্রমণ ক'রে
গোদাবরী নদীর উৎপত্তি স্থান থেকে অগ্রসর হয়ে পুনরায় বিদ্যানগরে
রামানন্দ রায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। সেখানে ব্রহ্মসংহিত] এবং কৃষ্ণ-
কর্ণামৃতের পুথি ছুটি রামানন্দের হাতে সমর্পণ ক'রে, পাঁচ-সাত দিন
রুষ্ণপ্রেমপ্রসঙ্গে যাপন ক'রে রামানন্দের নীলাচলবাসের আয়োজন
দেখে তৃপ্তি পেয়ে জগন্নাথের নিকটবত্র্ আলালনাথে এসে পৌছালেন।
সঙ্গী কুষ্দাসকে সেখান থেকে নীলাচলে পাঠাতেই নিত্যানন্দ, জগদানন্দ
মুকুন্দাদদি সেখানে এসে পড়লেন । এদের সঙ্গে মহাপ্রভু নীলাচলে পৌছালেন।
এখানে রাজ৷ প্রতাপরুত্বের আয়োজনক্রমে রাজগুরু এবং জগন্নাথমন্দিরের
অধ্যক্ষ কাশীমিখের গৃহে মহাপ্রভুর স্থায়ী বাসস্থান নির্দিষ্ট ছিল। আর-_
“কাশী মিশ্র পড়িলা আসি প্রভুর চরণে |
গৃহ-সহিত আত্ম তারে কৈল নিবেদনে 1৮
প্রায় ছুবছর ধরে দক্ষিণভ্রমণ সমাধ্ধ ক'রে মহাপ্রভু নীলাচলে ফিরলেন
১৪:৪-এর প্রথমে, আন্থমানিক বৈশাখ-শেষে | কাশীমিশ্রের আবাসে
মহাপ্রভু-সমীপে একে একে ওুড়িয়] ভক্তগণ এসে প্রণত হলে সার্বভৌম
৮ শি লী শী শিস শিপ শী শাপলা পিসি দীীশীপাঁিলতা
*মহা প্রভু দক্ষিণ ভ্রমণে কোন্ কোন্ পথ দিয়ে কোন্ কোন্ তীর্থ পর্যটন ক'রে কিভাবে প্রত্যাবর্তন
করেন সে সম্বন্ধে যথাযথ সংবাদ পাওয়। হয়ত বা ছুক্ষব। মোটামুটি এই বলা যায় ষে, তিনি ওড়িসা
থেকে অন্ধ-মাদ্রাজ উপকূল ধ'এে কন্যাকুমারী এবং সেখান থেকে কর্ণাট-মহীশৃর রাজের ভিতর দিয়ে
উত্তরে নর পর্যন্ত গিয়ে দরক্ষিণ-পুধে গোদাবরী ধ'রে ফিরে আসেন। বৃন্দাৰন্দান দক্ষিণঅরমণের
কোনে] বিবরণ দেননি । মুশাপ্ত তার কড়চায় (1) দিয়েছেন, আর দিয়েছেন কিছু কিছু
কবিকর্ণপূর তার চৈ-্চ মহাকাব্যে ও নাটকে । উপরের বিবরণ কবিরাজ গোম্বামীর চৈ-্চ
থেকে দেওয়া। যদিও এ বর্ণনায় স্থান ও পথের ক্রম সম্বন্ধে বিচু গোলমাল থাক স্বাভাবিক, তবু
অনুমান কর! যায়, মুকারি গুপ্ত এবং কবিকর্ণপূরের লেখার উপর পরবতাঁকালে যে সংশোধন
প্রয়োজন হয়েছিলঃ চৈ-চতে তা-ই আছে। গোবিনদদ্বাসের কড়চার বিবরণ অবিশ্বাস্ত।
কিন্ত একথা ঠিক যে, মহপগ্রভু কোনো প্ল্যান নিয়ে বর্গিত হন্নি। আর যাবতীয় তীর্থ পর্টনও
তার লক্ষ্য ছিল না । “ভাবে বিহবল মানুষ, বেরিয়ে পড়েছিলেন। যেখানে ভালে! লেগেছিল
মেখানে-কিছুদিন বেশি ছিলেন এবং কিছু অগ্রপশ্চাৎ গতাগতিও করেছিলেন” । (ডঃ বিমানবিহারী)
1 আরও পরে অর্থাৎ ১৪১৪-এ হেষস্তকালে ফিরেছিজেন এমন মনে করলে মহাপ্রভুর প্রত্যাবর্তন
সংবাদ পেয়ে গৌড়ীয় ভক্তগণের ত্র বৎসর রখযাত্তায় আগমন সম্ভব হয়না । চরিতীমুতের বর্ণনার
প্র ৰৎসরই নবদ্বীপ-পরিকরের1 এসেছিলেন। স্্ানযাত্রার সময়ে জগন্নাথদর্শন ন! হওয়ায় শ্রীচৈতন/
আলালনাথে চলে যান। সেখান থেকে দার্বভৌম তাকে নীলাচলে নিয়ে এলে দে1 গেল নবদ্বীপ-
পরিকরের। এসে গড়েছেন
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৮৫
ভট্টাচার্য সকলের বিববণ দিলেন__জগন্নাথ-সেবক জনার্দন, আয়-ব্যয়াদির
লিখন-অধিকারী শিধী মাইতি, ভক্তব্রাঙ্গণ প্রহ্যায় মিশ্র, জগন্নাথের প্রধান
স্থপকার চন্দনেশ্বর, সিংহেশ্বর, পরমানন্দ মহাপাত্র প্রভ্তি | সবশেষে
এলেন রায় রামানন্দের পিত1 ভবানন্দ রায় মহাপ্রভুর সেবায় তার পাচ
পুত্রকে উৎসর্গ করার অভিলাষ নিয়ে। মহাপ্রভু বাশীনাথ রায় পট্টনায়ককে
তার কাছে রাখলেন। এই বাণীনাথকে শ্রীচৈতন্ত-সমীপে আগত যাবতীয়
ভক্তদের আবাস নির্ধারণ এবং ভিক্ষার্দির ব্যবস্থা করার ভার দেওয়া হ*ল।
এদ্দিকে একে একে মহাপ্রভুর নীলাচল-সঙ্গী খ্যাতনামা ভক্তবুন্দও
এসে পড়তে লাগলেন। প্রথম পরমানন্দ পুরী, ধার সঙ্গে মহাপ্রভুর
দরক্ষিণভ্রমণে সাক্ষাৎ ঘটেছিল। তিনি দক্ষিণ থেকে নীলাচল হয়ে গৌড-
গঙ্গানবদ্বীপ ঘুরে এসেছিলেন এবং নবদ্বীপের পরিকরদদের ও খচীদেবীকে
মহাপ্রভুর দক্ষিণভ্রমণের সংবাদ দিয়েছিলেন। শ্রীচৈতন্য নীলাচলে
ফিরেছেন শুনে তিনি নবছ্ীপভক্তদের আগেই নীলাচলে এসে পৌছালেন।
ইনি মহাপ্রভৃব গুরুর গুরুভ্রাতী, হ্থতরাং মহাগুতুর সগৌরব গ্রীতির
অধিকারী হলেন। কাশমিশ্রের গৃহে নিজসমীপেই মহাপ্রভু একে রাখলেন।
এরপর এলেন মহাগ্রভুর নিরন্তর লীলাম্থহদ্ নিগৃঢ-ব্রজরসবেত্তা স্বরূপ
দামোদর । ইনি সম্ভবতঃ নবদ্বীপ-লীলতেও সহচর ছিলেন।* কিন্তু
মহাপ্রভুর সন্যাস দেখে নিজে সন্যাম নিয়ে কাশী চলে যান। সেখানে
বেদান্ত অধ্যয়ন ক'রে তৃপ্তি না পেয়ে পুরীতে মহাপ্রভুর কাছে চলে আসেন।
সন্ন্যাস গ্রহণ করলেও ইনি সন্গ্যাসের বেশভৃষা এবং উপাধি গ্রহণ করেননি ।
স্বরূপে থাকতেন ব'লে স্বরূপ দ্বামোদর নামে প্রসিদ্ধ হয়েছিলেন । যেমন
সংগীতে কৃতিত্ব তেমনি ভক্তিশাস্ত্রে এর স্থগভীর পাপ্ডতিত্য ছিল। নীলাচল-
লীলায় মহাপ্রভুর বিরহোন্মাদ অবস্থায় ইনি এবং রায় রামানন্দ ঘনিষ্ঠ
সাহচর্য দান করতেন। এই স্বরূপ দামোদ্রই মহাপ্রভুর নিগৃঢ় ভাবময়
অবস্থাগুলি সংস্কৃত ক্লোকে গ্রথিত ক'রে রাখতেন এবং মহাপ্রভু যে
রাধাভাবান্বিত কৃষ্ণবিগ্রহ এ তিনিই প্রথম ভালোভাবে ধরতে পারেন।
এরপর ক্রমে এলেন ঈশ্বরপুরীর সেবক গোবিন্দ, ধাকে সেবকরূপে গ্রহণ
লাশ? শী শপ শা পপি সপ জপ
০৯ ০ শিশির স্পেশাল
* পুরুবোত্তম আচার্য। নবদ্বীপ লীলানঙ্গী ইনি ছিলেন কিনা সে বিষয়ে মতভেদ আছে, কিন্ত
এ বিষয়ে চরিতাম্বতের বর্ণনই বিশ্বামযোগ্য। নবন্বীপলীলার মধ্যেই ইনি প্রভূসঙ্গ ত্যাগ করেন, পরে
বঅনুতণ্ড হয়ে নীলাচলে ফিরে আসেন ।
৮৩ বৈষ্ঞব-রন-গ্রকাশ
করতে মহাপ্রভু প্রথমে অস্বীকার করলেন গুরুমর্ধাদ1] লঙ্ঘন হয় বলে,
কিন্ত পরে গুরুর আদেশ ব'লে পরমানন্দপুরী ও সার্বভৌমের অনুমতি নিয়ে
সেবকরূপে স্বীকার করলেন। গোবিন্দ কীরকম নিষ্ঠা ও বুদ্ধিমতার সঙ্গে
সেবাকার্য সম্পাদন করেছিলেন ত1 চৈতন্যচরিতাঁম্তের পাঠক-মান্দ্রেরই
জান। আছে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এসে পড়লেন ভক্তিমতে পরিবতিত খ্যাত-
নামা অধৈতবাদী পণ্ডিত সন্ন্যাস-গুরু কেশবভারতীর গুরুভ্রাত1 ব্রন্ধানন্
ভারতী, হালিশহরের বিষয়ী ধনী শতানন্দ খাঁনের পুক্র ভগবান আচাধ,
রামভদ্রাচার্য এবং বলিষ্ঠদেহ, মহাপ্রভুর আজ্ঞাবহ ও পরে বৃন্দীবনের গোবিন্দ-
বিগ্রহের অধিকারী কাশশ্বর গোস্বামী । নিত্যানন্দ, মুকুন্দ, জগদানন্দ এবং
দামোদর পণ্ডিত মহাগ্রতুর সঙ্গে নীলাচলে এসে থেকে গিয়েছিলেন ।*
ইতিমধ্যে এ দামোদর-ভ্রাত। মহাপ্রভুর অতিপ্রিয় শংকরও এসে পড়েছিলেন ।
রথযাত্রার আগে রায় রামানন্দও এলেন। ফলে ভক্ত এবং পরিকর-
গণের সমাবেশে নীলাচলে যেন চার্দের হাট বসে গেল। বল] বাহুল্য,
মহাপ্রতুর দিব্য প্রভাব ইতিমধ্যে ভারতের পূর্ব দক্ষিণাঞ্চলে সম্যক্ বিস্তৃত
না হ'লে তার সঙ্গলাভেচ্ছায় এতগুলি সাধক একত্র মিলিত হতেন কিন?
সঙ্দেহ। চৈতন্চরিতামৃতকার ঠিকই বলেছেন £
যত নদনদী যৈছে সমুদ্রে মিলয়।
এছে মহাগ্রতুর ভক্ত ধাহ] তাহ] হয় ॥
সভে আসি মিলিল প্রতুর শ্রাচরণে।
প্রভু কূপ করি সভাএ রাখিলা নিজস্থানে ॥
“গৌড়ীয় বৈষ্ণব” নামক নব লোকধর্মের স্থায়ীত্ব অত:পর সন্দেহাতীত হয়ে উঠল।
এদিকে দক্ষিণভ্রমণ থেকে শ্রীচৈতন্য ফিরেছেন এই সংবাদ কাল কৃষ্দদাস
নবদীপে বহন ক'রে নিয়ে গেলে রথধাত্রার পূর্বেই নবদ্বীপ থেকে শচীমাতার
আজ্ঞা নিয়ে এসে পড়লেন পুত্র অচ্যুতানন্দ সহ অদ্বৈত আচার্ধ, হরিদাস
ঠাকুর, শ্বাস পণ্ডিত, শিবানন্দ সেন, চন্দ্রশেখর আচার্য, মুরারি ওপ্চ,
গদাধর প্ডিত, বত্রেশ্বর, শ্রীবাস-ভ্রাত। শ্রীরাম, শ্রীমান্ পণ্ডিত, খোলাবেচা শ্রীধর,
মুকুন্দের জ্যেষ্ঠ ভ্রাত। বাস্থদেব দত্ত, গোবিন্দ-মাধব-বাস্থঘোঁষ, পুরুযোতম-
সপ্য়, শুক্লান্বর, পানিহাটি থেকে এলেন রাঘব পণ্ডিত, কুলীনগ্রাম থেকে
* মহাপ্রভুর অনুপস্থিতিতে নিত্যানন্দ বৎসর-ধানেকের মত গৌড়ে কাটিয়ে কিরে এমে ছিলেন
এমনও হতে পায়ে ।
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিবা জীবন ৮৭
এলেন সত্যরাজ খান (রামানন্দ বস্থ ), আ্রীথণ্ড থেকে চিরধীব সেন, নরহয়ি
সরকার, তশ্তভ্রাত1 মুকুন্দ ও তার পুত্র মহাবৈষ্ব রঘুনম্দন এবং আরও
অনেকে । শিবানন্দ সেন ধনী ব্যক্তি হওয়ায় সব যাত্রীদের রাহা-খরচ
যোগালেন (এবং প্রতিবারই যোগাতেন )। প্রভৃসগলোভাতুর গৌড়ীয়
ভক্তদের এই প্রথম নীলাচলে আগমন ।
নিঃসন্দেহে নীলাচলে শত শত ভক্তপরিকরঘহ মহাপ্রভুর এই লীলা
এবং সেই সঙ্গে গৌড়ীয় বৈষ্বধর্ষের প্রচার তদানীস্তন উড়িষ্যার রাজ
প্রতাপরুত্রের সাহ্থগত্য-সহায়ত। ব্যতিরেকে সম্ভবপর ছিল না। কিন্তু রাজা
প্রতাপকুদ্রও সার্বভৌমের ও প্ৰায় রামানন্দের কাছ থেকে এবং সম্ভবতঃ
অন্তান্য পাত্রদের কাছ থেকে মহাপ্রতুর অ-লৌকিক চারিজ্র্যের সংবাদ শুনে
তার নিতান্ত অনুরাগী হয়ে পড়েছিলেন। মহাগ্রতু প্রতাপরুদ্রকে কিভাবে
কৃপা করেন তার একটি মনোজ্ঞ চিত্র কবিরাজ গোস্বামীর চরিতামুতে প্রদত্ত
হয়েছে।* শ্রীচৈতন্তের দক্ষিণ গমনের পর একদিন প্রতাঁপরুত্র সার্বভৌমের
কাছে শ্রীচৈতন্কে দর্শনের আগ্রহ জানালে সার্বভৌম তাঁকে বলেছিলেন__
তিনি উদাসীন সন্গ্যাসী এবং মহাপ্রতাপ, নিজের খুশিমত চলেন। রাজদর্শন
করবেন কিনা বলতে পারি না, তবু দক্ষিণ থেকে ফিরে এলে তাকে বলব।
প্রত্যাবর্তনের পর এবং মহাপ্রভু নীলাচলবাসী ভক্ত ওড়িয়াদের দর্শনদানে
কৃতার্থ করলে পর প্রতাপরুদ্রের দর্শনেচ্ছা বেড়ে গেল। সার্বভৌম একদিন
অবসব বুঝে মহাপ্রভুর কাছে কথাট। পাড়লে তখন-_
কর্ণে হস্ত দিয় প্রভু ম্মরে নারায়ণ ।
-**আন্যাসী বিরক্ত আমার রাঁজ-দরশন।
স্্রী-দরশন সম বিষের ভক্ষণ |
রাজার ভক্তি এবং বৈষ্ণবান্থগত্য বিষয়ে সার্বভৌম যুক্তি উপস্থাপন করতে
চাইলে মহাপ্রভু বললেন “তথাপি রাজ! কাল-সর্পাকার”_
এছে বাত পুনরপি মুখে না আনিবে।
পুনঃ যর্দি কহ আম এখ। ন। দেখিবে ॥
সার্বভৌম আপাততঃ নিবৃত্ত হলেন। এদিকে রায় রামানন্দ যখন সব ছেড়ে
* ব্ষয়টি সংক্ষপ্তভাবে কাবকণপুগের গ্রন্থরে, মুরারি গুপ্তের কঝড়চার এবং বৃন্দাবনদাসের
চৈতন্যভাগবতেও দেখা যায়। কিন্ত কবিরাজ গোম্বামী যেভাবে গুছিয়ে বিষয়টির বিন্যাস করেছেন
তাতেই বাস্তবতা চমৎক।র ফুটে উঠেছে।
৮৮" বৈষ্ণব-রল-প্রকাশ
দিয়ে বিদ্যানগর থেকে শ্রীচৈতন্তের নিকট এসেছিলেন প্রতাঁপরুত্রও তাঁর সঙ্গে
এসেছিলেন নীলাচলে। যখন তিনি প্রতাপরুদ্রের অজন্র গুণকীর্তন ক'রে
তার উপর প্রগাঢ় ভক্তির কথা উল্লেখ করলেন তখন মহাপ্রভূ শুধু বললেন
কুঞ্জ তাঁকে নিশ্চয়ই কূপ] করবেন” । সে-যাত্রা রায় রামানন্দ তাকে অনুগ্রহ
করার জন্য অন্থুরোধ করলেন না। রাজার কিন্তু উৎকণার শেষ নেই।
নীলাচলে এসেই তিনি সার্বভৌমকে পুনরায় ডাকলেন এবং বললেন-_
প্রতাঁপরুত্র ছাঁড়ি করিব জগৎ উদ্ধার।
এই প্রতিজ্ঞা করি জানি করিয়াছেন অবতার ॥
তার প্রতিজ্ঞ না করিব রাজ্দরখন ।
মোর প্রতিজ্ঞা তাহা বিন! ছাড়িব জীবন ॥
স।র্বভৌম ভট্টাচার্য রাজাকে আশ্বস্ত ক'রে একট! উপায় ঠিক করলেন।
রথযাত্রার দ্বিনে প্র রথের আগে আবিষ্টভাবে নৃত্য করবেন, তখন রাজ তাকে
দেখতে পাবেন, আর প্রেমাবেশে যদ্দি মহাপ্রভু নিকটবর্তা উপবনে প্রবেশ করেন
তাহ'লে ভাগবতের রাসপঞ্চাধ্যায়ীর শ্লোক পড়তে পড়তে তার পাদস্পর্শ
করবেন। পরে রাজ! একটি পত্রেও সার্বভৌমকে তার অন্থনয়ের বিষয় স্মরণ
করিয়ে দিলে সার্বভৌম নবদীপ-পরিকরদের সভায় বিষয়টি উপস্থাপিত
করলেন। তখন নিত্যানন্দ সাহস ক'রে সব ব্যাপার মহাঁপ্রভুব গোচরে আনলে
পরে মহাপ্রভু দামোদর-পণ্ডিত প্রমুখ সকলের উপর গ্াায়ান্যায় বিচারের ভার
ছেড়ে দিলেন। কিন্তু কেউই সাহস ক'রে মহাপ্রভৃকে অন্গরোধ করতে
পারলেন না। তখন নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর একটি বহির্বাপ চেয়ে নিয়ে
রাজার কাছে পাঠিয়ে দ্রিলেন। এর পর রামানন্দ রায়ের পালা । তিনি
পূর্বেই প্রতাপরুদ্রের গুণাবলী এবং বৈষ্ণবতা সম্পর্কে ভূমিকা করেছিলেন,
আজ ভেঙে বললেন, এবং যুক্তি দেখালেন-_
রামানন্দ কহে তুমি ঈশ্বর ম্বতন্ত্।
কারে কর ভয় তুমি নহ পরতন্ত্র॥
তখন,
প্রভু কহে, আমি মন্ুত্য, আশ্রমে সন্ধ্যাসী |
কায়মনোবাক্যো ব্যবহারে ভয় বাসি ॥
সন্যাসীর অল্প ছিদ্র সর্বলোকে গায় |
শুরু বন্ধে মসীবিন্দু ষৈছে না লুকায় |
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৮৯
রায় কহে কত পাপীর করিয়াছ অব্যাহতি |
ঈশ্বর-সেবক তোমার ভক্ত গজপতি ॥
প্রভু কহে পূর্ণ যৈছে ছুগ্ধের কলস।
স্থরাবিন্দুপাতে কেহে। না করে পরশ ॥
য্দ্যপি গ্রতাপরুদ্র সর্বগুণবান্।
তাহারে মলিন কৈল এক রাজ নাম ॥
ঠিক হ'ল রাজার পুত্রকে মহাপ্রভু দর্শন দেবেন এবং দ্িলেনও। এন্দিকে
রথযাত্রার দিন নিকটবর্তাঁ হ'লে এ ১৪৩৪ শকাব্দে মহাপ্রভু স্বীয় পরিকরদের
সঙ্গে জগন্নাথের বিশ্রামস্থান 'গুপ্রিচা-গৃহ মার্জন করলেন। স্বহন্তে সন্মার্জনী
ধ'রে পুঙ্থান্থপুঙ্খভাবে সমস্ত আবর্জনা পরিষ্কার করলেন।* রথযাত্রার দিন
মহাপ্র্ু জগন্নাথের রথ বেষ্টন ক'রে সাত-সম্প্রদধায়ের এক অপূর্ব নৃত্য-কীর্তনের
আয়োজন করলেন। নিজে এই সাত-সম্প্রদায়ের মধ্যে হরিধ্বনি ক'রে
উত্সাহ দিয়ে ঘুরতে লাগলেন। পরে সাতি-সম্প্রদ্দা় একত্র ক'রে মধ্যে
নিজে নৃত্য আরম্ভ করলেন। এই দৃশ্ঠ প্রতাপরুদ্র দেখলেন, পাশে সার্বভৌম
ভট্টাচার্যকে নিয়ে-_
উদ্দগু-নৃত্যে প্রভূ করিয়া হুংকার |
চক্রক্রমি ভমে ধৈছে অলাত-আকার ॥
'"*স্তস্ত স্বেদ পুলকাশ্র কম্প বৈবণ্য ।
নানাভাবে বিবশত] গর্ব হর্য দৈন্য ॥
আছাড় খাইয়] পড়ি ভূমে গড়ি যায়।
স্থবর্ণ পবত যেন ভূমিতে লোটায় ॥
এই মিলনভাবের নৃত্যের পর মহাপ্রভুর ভাবাস্তর ঘটল। এশ্বর্ধযূতি জগন্নাথকে
দেখে তার মনে হ'ল এ কুরুক্ষেত্রের নায়ক কৃষ্ণকে দেখছেন, বুন্দাবনের উচ্জ্বল-
রসমূতি গোপীচিত্তহারী অখিলভুবনাকর্ষক রুষ্ণকে নয় । সুতরাং তিনি
বিষণ হলেন, শৃত্য থেমে গেল। “যঃ কৌমারহরঃ১ ক্লোক পুনঃপুন আবৃত্তি
করতে লাগলেন। চোখে অশ্রর ফোষার। ছুটল। মাটিতে বসে তর্জনী
দিয়ে কী যেন লিখতে লাগলেন। স্বরূপ-দামোদর ভাবাবস্থা৷ বুঝে কীর্তন
* এই সময়কার ঘটনাবলীর বর্ণন। কবিরাজ গোম্বামী যেমন দিয়েছেন, তেমনটি অন্য কোনে!
জীবনীকাব্যে পাওয়া বার না।
+ রথস্থ জগন্নাথকে দেখে এই ভাবাস্তর তর প্রায়ই ঘটত।
৯৪ বৈষব-রস-প্রকাশ
ধরলেন--“সোই ত পরাণনাথ পাইলু' | ধাহ] লাগি মদনদহনে ঝুরি গেলু' ॥৯
প্রতাপরুত্র পাত্রমিত্র পরিবেষ্টিত হয়ে বিস্ময়ে সব দেখছেন। এই ভাব প্রশমিত
হলে প্রতু আবার নৃত্য আরম্ভ করলেন । এবার নাচতে নাচতে বাহ হারিয়ে
প্রতাপরুদ্রের সামনেই আছাড় খেয়ে পড়ে যাবার মত হলেন। নিত্যানন্ধ,
কাশীশ্বর কাছে ছিলেন না যে তাকে ধরে ফেলবেন। প্রতাপরুদ্রই ছুটে
এসে তাঁকে ধরে ফেললেন। বিষয়ী-সংস্পর্শ হতেই প্রভুর চেতনা
ফিরে এল। তিনি পরিকরদের ভত্দনা করতে লাগলেন। সার্বভৌম
রাজাকে আশ্বাস দিয়ে বললেন, ভয় নেই, মনে হয় অন্তরে প্রতু আপনার
উপর বিরক্ত হননি। অতঃপর সার্বভৌম এবং রাজ ষে স্থযোগ খুঁজছিলেন
তা এসে গেল। রথচলার মধ্যবত্তা বিশ্রামস্থানে আসতেই মহাপ্রভু বৃন্দাবন-
ভ্রমে নিকটবর্তা পুষ্পোন্ানে প্রবেশ করলেন এবং প্রেমাবেশে অভিভূত
হয়েছেন এমন অবস্থায় গ্রতাপরুদ্রে রাঁজবেশ পরিত্যাগ ক'রে সামান্ত
বৈষ্ণবের বেশে প্রভুর পদঘ্য় ধারণ ক'রে রাঁসলীলার শ্লোক পড়তে আরম্ত
করলেন। আর সেই অবসরে ভাবের আবেশে মহাপ্রভু তাকে আলিঙ্গন
করলেন। রাজার অভিলাষ এতদিনে পূর্ণ হল। এর পর তিনি পূর্ণচেতন
স্বাভাবিক অবস্থায় মহাপ্রভুর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন তার গৌড়ে যাবার সময় ।
যাত্রাপথে কটকে রামানন্দ রায়ের গৃহোগ্ানে মহাপ্রতু যখন বিশ্রাম করছিলেন
তখন প্রতাপকুপ্র বিহ্বল হয়ে পুনঃপুন প্রণাম করলে পর মহাপ্রভু তাকে
আলিঙ্গন করেন। মহানদী পার হওয়ার সময় হস্তীপৃষ্ঠ থেকে রাজার স্ত্রীগণও
মহাপ্রতৃকে দর্শনের সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন। প্রতাপরুদ্রের বৈষ্ণবরধ্ম
আশ্রয়ের ঘটনায় সারা কলিক্ষে বৈষ্ণবধর্ম প্রসার লাভ করেছিল। এই
ঘটন। ঘটল মহাপ্রতুর সন্ধ্যাসের ষষ্ঠ বৎসরে অর্থাৎ ১৪৩৬ শকে ।*
দক্ষিণ-ভ্রমণ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর শ্রীচৈতন্য বৃন্দাবন যাওয়ার জন্য
ব্যাকুল হয়েছিলেন। আজ বর্ষা, কাল শীত, রথের পর যাত্রা! করবেন,
দোৌলট। দেখেই যাবেন, এরকম ক"রে রামানন্দ ও সার্বভৌম ছু'বংসর আটকে
রাখলেন। পরবৎসর (১৪৩৬ শক) গৌড় থেকে ভক্তের এসে রথ দেখেই
চলে গেলেন। এ বৎসর প্রামানন্দ-সার্বভৌম দেখলেন আর ঠেকাতে চেষ্টা
করা ঠিক হবে না। এ বৎসর রথযাত্রার পর বিজয়া দশমীর দিন মহাপ্রভু
* বিস্তুবৃন্দাবনদঘাসের বর্ণনা অনুসারে মহাপ্রভু গৌড় থে.ক নীলাচলে প্রত্যাবর্তপর পর
গ্রতাপরদ্রকে অনুগ্রহ করেন।
মহাগ্রভূর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৯১
যাত্রা করলেন। ঠিক করলেন জাহ্বীতে স্নান ক'রে জননীর পদধূলি
নিয়ে গৌড় হয়ে বৃন্দাবন যাবেন।* প্রভুর সঙ্গে আসতে লাগলেন রায়
রামানন্দ, বাস্থদেব সার্বভৌম, পরমানন্দ পুরী, স্বরূপ দামোদর, হরিদ|স
ঠাকুর প্রভৃতি প্রায় সকল অন্তরঙ্গ । মহাপ্রভু গর্দাধর পণ্ডিতকে ফিরে
যেতে বললে গদ্দাধর রাজি হলেন না। ক্ষেত্র-সন্ন্যাস না ছাড়িহ গ্রস্ত
নিষেধিল1।*__গঞ্দাধর শুনলেন না, কারণ শ্রীচৈতন্তের সঙ্গই তার কাছে
নীলাচল-বাঁস। বিগ্রহের সেবা? গদ্দাখর বললেন, সেজন্য যে অপরাধ
হবে তার ভাগী আমি হব। মহাপ্রভু পুনঃপুন নিষেধ করলে গদাধর
বললেন-_ তোমার সঙ্গলোভে আমি যাচ্ছি নী, শচীমাতাকে দেখতে যাচ্ছি।
এই বলে তিনি পৃথক্ চলতে লাগলেন। কটকে এসে মহাপ্রভু গদ্দাধরকে
ডাকালেন এবং পুনরাকস বোঝাতে লাগলেন কেন তার নীলাচলে থাক
প্রয়োজন । গদাধর যখন কোনে] কথাতেই কান দিলেন না) তখন মহাপ্র
রুষ্ট হয়ে শপথ দিয়ে বললেন, আমার সুখ যদি চাও ফিরে যাও। এই
বলেই নৌকায় চড়লে গদাধর দেখানে যুছিত হয়ে পড়লেন। মহাপ্রভু
সার্বভৌমকে বললেন গদাধর পণ্ডিতকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে । মহানদী
অতিক্রম ক'রে চৌদারের পথে যাঁজপুরে এসে প্রতাপরুদ্র-প্রেরিত সঙ্গী ও
সেবক রাজপাত্র ছুজনকে বিদায় দিলেন, তারপর ভদ্রকে এসে বিদায়
দিলেন রামানন্দকে। ওড়িয্যার সীমানায় এসে হুসেন শাহের অধিকার
গৌড়-বাঙ্লায় যাওয়ার ব্যবস্থার জন্য ছুচার দ্রিন অপেক্ষা করতে হ'ল।
সেখানকার মুসলমান রাঁজ-কর্মচারী সব শুনে এবং গ্রভূসহ বৈষ্ণব সমাজকে
দেখে গ্রীত হয়ে রূপনারায়ণ পর্যন্ত সকলকে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা
করলে। সেখান থেকে গঙ্গাপথে মহাপ্রস্ত পানিহাটি এসে রাঘব পণ্ডিতের
গৃহে উঠলেন। সেখান থেকে হালিশহরে শ্রীবাস-গৃহে, তারপর কাচড়া-
পাড়ায় শিবানন্দ সেনের ওখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে ন্বদ্ীপ-সঙ্গিকটে
সার্বভৌম-ভ্রাত1 বিগ্যাবাঁচস্পত্ির গৃহে এসে পাঁচর্দিন থাকলেন ৭ সেখানে
* গোৌড়দেশে হয় মোর দুই সমাশ্রয়। জনশী জাহধী এই দুই দংাময় || তৈ-চ৮২-১৬
1 বৃন্দাবনদ্াদ আগমন পথে পাশিহাটি প্রভৃতির বিষয় উল্লে্ধ করেননি । একেবারে বিদ্যা-
বাচম্পতি-গৃহে এস ওঠার কথা বঙ্গেছেন। প্রত্যাবর্তনের সময় নান-গৃহে এবং রাঘৰ পণ্ডিতের
গুহে গমনের কথা উল্লেখ করেছেন । জায়নন্দের চৈতন্যমঙ্গল মতে মহাপ্ভূ ভিন্রপথে গ্বৌড়ে আসেন।
জলেশ্বর থেকে দীঁতন হয়ে বর্ধমানের মধ্য দিয়ে। পথে আমাইপুরা গ্রামে জয়ানন্দের শিতার
(পরপৃ্ঠায় ভ্রু)
৯২ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
মহাপ্রভৃকে দেখবার জন্যে-_দিবারাত্রি অগণিত লোকের ভিড় হতে লাগল।
ক্রমে লোকসমাগম এমন হল যে মহাগ্রতৃ রাত্রে লুকিয়ে চ'লে গেলেন
মাইল ছুই দূরে নবদ্বীপের বিপরীতে ও গঙ্গার পশ্চিম তীরে কৃলদ্বীপ
বা কুলিয়। গ্রামে। মাধবদ্দাসের গৃহ কুলিয়াতেও লক্ষ লক্ষ নরনারীর
সমাগম হতে লাগল।* তার! মহাগ্রতুর পশ্চাদগমন করতে লাগল।
শ্রীচৈতন্য কুলিয়। থেকে চলে এলেন শাস্তিপুরে অছৈত আচার্ষের গৃহে এবং
সেখানে শচীমাতার পদধূলি নিয়ে কালক্ষেপ না করেই চললেন রাজধানী
গৌড়ের কাছাকাছি রামকেলি পর্ন্ত। ইতিমধ্যে এই আশ্চর্য লোক-
সমাগম এবং সন্ত্যাসীর কথা হুসেন শাহের কানে গিয়ে পৌছালে এবং
রাজ। তার দেহরক্ষী কেশব ছত্রীকে ব্যাপার কী তা জিজ্ঞাসা করলে কেশব
ছত্রী সাবধান হয়ে ব্যাপারটিকে লঘু বলে উড়িয়ে দিলেন। হুসেন
শাহের সন্দেহ হওয়াতে তিনি দবীর খাসকে (আত্মসচিব, রূপ গোস্বামী )
ডেকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি রাজাকে সব বুঝিয়ে দ্রিলেন। হুসেন শাহ
আদেশ প্রচার করলেন যাতে কেউ তার কোনও অনিষ্ট না করে।
গৌড়-সংলগ্ন এই রামকেলি গ্রামে এমন আর একটি ঘটন1 ঘটল ধার ফল
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ষের ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে সদৃবপ্রসারী হ'ল। শ্রীরূপ গোম্বামী
ও শ্রীসসাতন গোস্বামী এখানে মহাপ্রভুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করলেন।ণ*
এরা হুসেন শাহের অধীনে উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিলেন। রাঁমকেলিতে
এদের বাসভবন হিল। রূপ ছিলেন পবীর খাস সনাতন “সাকর মাক
এবং এব্যবহারিক পদবীতেই তাদের পরিচয় ছিল। শুধু তা-ই নয়,
এদের পূর্বপুরুষ কর্ণাট দেশীয় ব্রাক্ষণ হলেও, সম্ভবতঃ পিতৃপক্ষে এবং
আতিথ্য গ্রহণ করেন । “গুইপা' নাম পরিবতিত ক'রে তর জয়ানন্দ নামকরণ করেন, ইত্যাদি।
কিন্তু জয়ানন্দের এ সব তথ্য কাল্পনিক বলেই মনে হয়।
মুরারি গুপ্তের কড়চার মতে মহা প্রভু বৃন্দাবন থেকে ফেরার পথেও গোড়ে আসেন এবং নবদ্বীপেও
আসেন। বিধুণপ্রিয়! দেবীকে নিজমৃি স্থাপনের অনুমতি দেন, কালনার গোৌরীদাস পশ্ডিতের গুহে
আসেন ইত্যার্দি। কিন্ত কড়চার এই অংশ মুখাপি গুপ্তের রচনা] কিন সে বিষয়ে আমর] সন্দিহান ।
% লক্ষ লক্ষ লোক আসে কৌতুক দেখিতে |
লোকের সংঘট্টে পথে না পার্সি চলিতে ॥
যথ1 রহি তথ! ঘর প্রাচীর হয় চর্ণ।
যথ| নেত্র পড়ে তথা লোক দেখি পুর্ণ ॥
1 বৃন্দ।বনদান এই সাক্ষাৎকার বর্ণনা করেননি। ঘটনাটি তার অজ্ঞাত ছিল।
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন নত
নিজেদের পক্ষে মুসলমান সংস্পর্শে পাতিত্য দোষ ঘটেছিল।* তাই এ'র!
এ নামেই পরিচিত ছিলেন মহাপ্রতু-প্রদত্ত রূপ-মনাতন আখ্াব পূর্ব
পর্যন্ত । বস্ততঃ এঁদের তৃতীয় ভ্রাতা শ্রীজীব-পিতা অনুপম বা বল্পঙের
মত এদের নাম জানা যায় ন)। এদের মধো সনাতন ন্যায়ম্বীততে পণ্ডিত
এবং ভাগবতধর্মে আস্থাবান্ ছিলেন। আঁর রূপছিলেন একাধারে পণ্ডিত
ভক্ত এবং সর্বোপরি রসজ্ঞ কবি। শ্রীরূপ শ্রীচৈতন্য-মিলনের পূর্বেই অন্ততঃ
ছুখানি কৃষ্ণভক্তি বিষয়ক দৃতকাব্য “হংসদূত” এবং 'উদ্ধব-সন্দেশ এব কিছু
কৃষ্ণস্তবও রচনা! করেছিলেন এবং সম্ভবত: দাঁনকেলিকৌমুদী রচনায়
হন্তক্ষেপ করেছিলেন। মহাগ্রু্ছুর নিকট আত্মসমর্পণের পূর্বে শ্রীরূপ নিজ
মনোভাব জানিয়ে মহাপ্রভুর কাছে পত্র পাঠিয়েছিলেন এনং মহা প্রভু
তাদের রাজকর্মের অবসরে ভক্তিরন আস্বাদন করার জন্য শ্নোকে উপদেশ
পাঠিয়েছিলেন | তার সম্মুখে করজোড়ে দ্লাড়িয়ে দৈন্য সহকারে আত্ম-
পরিচয় দিতেই মহাপ্রক্ত তাদ্দের আলিঙ্গন করলেন, সনাতন-বূপ নামকরণ
করলেন এবং সম্ভবতঃ তাদেরও বুন্দাবন যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে বললেন।
সনাতন মহাপ্রভৃকে এত লোক সঙ্গে নিয়ে এইভাবে বুন্দাবনে না যাওয়ার
জন্য উপদেশ দিলে তিনি এত পরিবর্তন করলেন এব গৌড়াভিমুখে
কানাইয়ের নাটশাঁল। পর্যস্ত গিয়ে প্রত্যাবর্তন করলেন শাস্তিপুর হয়ে
নীন(চনে ফিরে যাওয়ার জন্য । শাস্তিপুরে দশদিন থাকলেন এবং শচীমাতার
কাছে ভিক্ষাগ্রহণ ক'রে ও অদ্বৈতাদি ভক্তদের সঙ্গে নৃত্যসংকীতনে কাটিয়ে,
বৈরাগী শরণার্থী তরুণ রঘুনাথ দাসকে [ পরবর্তাকালে বিখ্যাত রথুনাথ
দাস গোস্বামী ] উপদেশ দিয়ে গৃহে পাঠিয়ে নীলাচলে ফিরে এলেন শুধু
দামোদর পণ্ডিত এবং বলদেব ( বলভদ্র?) ভট্টাচার্যের সঙ্গে ১৪৩৭ শকের
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে । এখানে এসে রায়-রামানন্দ, সার্বভৌম, প্রদ্যন্ন মিশ্র,
কাশী মিশ্রার্দি ভক্তগণের কাছে সব পরিস্থিতি বুঁঝয়ে একাকী বৃন্দাবন
* শ্রীরপ-সনাতনের বিশেষ কপাপ্রাপ্ত কৃষ্ণদাস কবিরাজ যথন তার চরিতামুতে পুসঃপুন এবং
ম্পটভাবে এ'দের নিঞ্জ উক্তিতে নীচজাতি, শ্লেচ্ছজাতি ব'লে উল্লেখ করেছেম এবং বুঝিয়েও দিয়েছেন
তখন সন্দেহ থাকে না যে এরা পঠিত হয়েছিলেন, আর মখাপ্রভু তে৷ পতিতকে মানুষের অধিকার
দেওয়ার জন্যই অবতীর্ণ হযেছিলেন।
1 পরবাসণিনী নারী ব্যগ্রাপি গৃহব নস ।
তদেবাস্বাদয়ত্যন্তনবসঙ্গরসায়নস্ ॥
৪৪ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
যাওয়ার প্রসঙ্গ পাড়লেন। গদাধর পন্ডিতের আগ্রহাতিশষ্ো ঠিক হ'ল বর্ষা
চার মাস গেলে রথযাত্র! দেখে বৃন্দাবন যাবেন। গৌড়ের ভক্তবৃন্দ এবৎসর
নীলাচলে এলেন না। কারণ, বৃন্দাবন যাবেন ব'লে মহাপ্রভূ এদের আসতে
নিষেধ ক'রে এসেছিলেন। শরত্কাল এসে পড়লে মহাপ্রভু আর থাকতে
চাইলেন না, একাই যাওয়। ঠিক করলেন, কিন্তু স্বরূপ দামোদরের অনুরোধে
বলভব্দর ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিলেন । কেউ না জানতে পারে এমনভাবে ঝাড়খণ্ডের
ধ্যবর্তা বনপথ দিয়ে সাঁওতাল ভীলদের গ্রামের পাশ দিয়ে অগ্রসর হলেন
এবং আঙ্থমানিক একমাস মধো কাশীতে এসে তপনমিশ্রের গৃহে ভিক্ষা
নির্বাহ ক'রে চন্দ্রশেখর বৈদ্যের গৃহে কয়েকদিন যাপন করলেন। এখানে
তপন মিশ্রের পুত্র রথুনাথ (পরবর্তীকালে গোস্বামী রঘুনাথ ভট্ট) মহা-
প্রশ্ুকে সেবার দ্বার। তুষ্ট করলেন। মহাপ্রভু কাশীতে প্রকাশানন্দ প্রমুখ
অছৈতবাদীদের ভক্তিধর্মবিদ্বেষের কথা শুনলেন মাত্র । সেখানে কয়েকদিন
কাটিয়ে প্রয়াগ হয়ে বুন্দাবন-মথুরা চললেন । মথুরায় মাধবেন্দ্র-শিষ্য ও তৎ-
প্রতিষ্ঠিত গোপাল-বিগ্রহের সেবক এক পতিত ব্রাহ্ষণের সাহায্যে প্রেমে-
ব্যাকুল অবস্থায় তীর্থাদ্ি পর্যটন করলেন, গোবর্ধন-প্রদক্ষিণ করলেন এবং
এবং কয়েকটি লুপ্ত তীর্থের নির্দেশ দিলেন। এখানে এক রাজপুত 'কষ্দাস'
গৃহস্থ অথচ কষ্খপ্রেমিক, তার অন্থচর হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করলেন।
বৃন্দাবনেও *সেই লোক-কোলাহল, মহাপ্রভুর কুষ্ণোন্সাদ। অন্রুর তীর্থে
একদিন তে। তিনি জলে ঝাঁপ দিয়ে ডুবেই থাকলেন। সঙ্গী বলভত্র শঙ্কাকুল
হয়ে ঠিক করলেন বৃন্দাবনে বেশিদিন থাকা চলবে না। কোনে! প্রকারে
মহাপ্রভুর সম্মতি নিয়ে নিলেন এবং মাঘের প্রথমেই মহাপ্রভৃকে চালিত করলেন
প্রয়াগের দিকে । মহাপ্রভু পথমধ্যে স্বপ্রভাবে পাঠান ভুইয়ার পুত্র বিজুপল
খাকে ভক্তির পথে নিয়ে এলেন। প্রয়াগে এসে সেই গোপাল-বিগ্রহের
সেবক এবং প্রেমিক রাজপুত রুষ্দ্রাসকে বিদায় দিলেন এবং মকরন্নান
প্রসঙ্গে দশদিন যাঁপন করলেন।
প্রয়াগে মহাপ্রভুর অবস্থিতিকালের উল্লেখ্য ঘটন। হ'ল শ্রীরূপের সঙ্গে মিলন ।
রামকেলিতে মহাগ্রতুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর থেকেই শ্রীসনাতন রাজকার্য
ত্যাগ ক'রে অস্থথের ছলে গৃহে শাস্বালোচনায় দিন কাটাচ্ছিলেন। গৌড়রাজ
এসে অনুরোধ করাতেও তিনি গেলেন না। এদিকে হুসেন শাহ ওড়িয্যা-
রাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রী কবেন। সনাতনকে তার সঙ্গে যেতে বললেন,
মহাগ্রভৃর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৯৫
কারণ, তার সন্দেহ দৃঢ় হয়েছিল যে সনাতন বৈরাগ্য নিয়ে চলে যাবেন।
সনাতন তাতেও অন্বীরূত হলে পর তাকে বন্দী ক'রে রেখে গেলেন। এই
অবসরে রূপ নিজের এবং জ্যেষ্টভ্রাতার পলায়নের সুবিধার জ্ন্য বৈষয়িক
ব্যবস্থার সমাধান ক'রে কনিষ্ঠ ভ্রাতা অন্থপম্কে সঙ্গে নিয়ে প্রয়াগে এসে
শ্রীচৈতন্যের সঙ্গে মিললেন। ইতিমধ্যে তিনি চর পাঠিয়ে সংবাদ সংগ্রহ কবে
রেখেছিলেন মহাপ্রভু কখন নীলাচল থেকে বৃন্দাবন যাত্রা করেছেন। প্রেম-
ব্যাকুলতা নিয়ে টৈন্য ও আতির সঙ্গে দপ নিজেকে নিবেদন করলেন ।*
সেখানে গল্গী-যমূনা সংগমে ছু'একদিন কাটাবার পর নিকটবর্তী 'আড়ায়েল* গ্রাম
থেকে দক্ষিণাত্যের বিখ্যাত প্বপ্তিত ও ভাগবতরসজ্ঞ বল্পভভট্ট এসে মহাপ্রতুকে '
রূপাি সহ নিমন্ত্রণ ক'রে নিয়ে গেলেন। সেখানে ত্রিছতের বিখ্যাত কৃষ্ণ-
প্রেমিক রঘুপতি উপাধ্যায়ও এসে যোগ দিলেন। মোটামুটি দশদিন
মহাপ্রভু প্রয়াগে কাটালেন । রামানন্দ রায়ের কাছে মহাপ্রতু পঞ্চরসে ভজন,
রাধাভাব, গোগীপ্রেম প্রভৃতি বিষয়ে যা শিখেছিলেন তার কিছু বর্ণনা করলেন
রূপের কাছে এবং রাধাকৃষ্ণলীল বিষয়ে গ্রস্থাদদি নির্মাণ করতে উপদেশ
দিয়ে এবং পরে নীলাচলে সাক্ষাৎ করার নির্দেশ ধিয়ে বুন্দাবনে পাঠিয়ে
দিলেন রূপকে। রূপ-অঙ্গপমের সঙ্গে ফিরে গেলেন মাধবেন্দ্র-শিষ্যা এবং
প্রেমিক কৃষ্দাস। গঙ্গাতীর-প্থ দিয়ে কাশীতে শ্রীচৈতন্ত ফিরে এলেন মাঘ
মাসের মাঝামাঝি । কাশীতে ছু'মাস চন্দ্রশেখর বৈচ্ের গৃহে বাম এবং তপন
মিশরের গৃহে ভিক্ষা নির্বাহ ক*রে রইলেন। এ'র! দুজনই বাঙালী ।
কাশীতে মহাপ্রভুর ছু" মাস অবস্থিতির কারণ ছুটি (১) নিজ সঙ্গ দ্বার
এবং আলোচন] দ্বারা সনাতনের চিত্তে রুষ্ণভক্তির সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠা দেওয়া! ও
তাঁকে বুন্দাবন কেন্দ্রে নবধর্ম প্রচারের নেতৃত্বপদে অভিষিক্ত করা এবং (২)
প্রকাশানন্দ-প্রমুখ কাশীর অদ্বৈতমতের সন্গ্যাসীদের ভক্তিধর্মের তীব্র প্রতি-
স্পা শেপ পাপা শী
* তু০ তৎকৃত চৈতন্য-বন্দণ। £
নঙে। মহাবদান্তায় কৃষ্প্রেমপ্রদায়'তে।
কষ্ধায় বৃষ্ণচৈতন্যনায়ে গৌরত্বিষে নমঃ |
1 ব্রীসনাতনকে শিক্ষার্দান অবলম্বনে কৃষ্ণদাস কবিরাজ মধ্যঙীলার ছ'ট দীর্ঘ তধ্যায়ে গোঁডীয়
বৈষ্ণবধর্মের ভগবৎ-দ্বরূপ, জীবন্ববূপ, রাগমার্গ ভক্তিসাধন এবং সাধ্য প্রেমতদ্ব বিষয়ে যে বিশুত
বর্ণন প্রীচৈতন্যসুখে গ্রথিত করেছেন তার দস্ভাব্য সত্যত] সম্পর্কে চৈতন্য-জীবনী ও বৈঝ্ধধর্মের
(পরপৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য)
৯৬ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
কূলত। বিষয়ে চিত্ব-পরিবর্তন-সাধন।* মহাপ্রভু কাশীর পণ্ডিতদের ভক্তিধর্ম-
নিন্দা বিষয়ে অবহিত ছিলেন এবং বুন্দাবন-দর্শনের ত্বরায় যাত্রাপথে
কাশীতে অবস্থান কালে এদের উপেক্ষা ক'রে গিয়েছিলেন, কিন্তু নিজহদয়ে
উপলব্ধ রাগভস্তিতত্বের সত্যতা অদ্বৈতবাদীরা! উপলব্ধি করুক এরকম ইচ্ছ!
মহাপ্রভুর পক্ষে পোষণ কর! স্বাভাবিক । চরিতামুতের বর্ণনা অন্কসারে দেখ৷
যায়, শিশ্য-সম্প্রদায় সহ প্রকাশানন্দ গৌড়-নীলাচলের নব ভাবধর্মের আন্দোলন
এবং মহাপ্রভুর ভূমিক1 সম্বন্ধে অবহিতই ছিলেন। ভক্তিবাদ বিষয়ে তার
গ্বণা ছিল তীব্র। উত্তরভারতে তখন একমাত্র তিনিই যাবতীয় ভক্তিধর্মকে
তুচ্ছ প্রতিপন্ন ক'রে অছৈতের গৌরব অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়াসী ছিলেন। তার কাছে
যাতায়াত ছিল এমন একজন মহারাষ্্রদেশীয় ব্রাঙ্ষণ মহাপ্রভুর অলৌকিক
আকৃতি, সন্নযাসবেশ এবং সেইসঙ্গে ভাবাবেশসমূহ দেখে বিস্মিত হয়ে তার
কাছে জানালে তিনি অবজ্ঞাসহ বিদ্রীপ ক'রে বললেন £
শুনিয়াছি গৌড়দেঁশে সন্ন্যাসী ভাবক।
কেশবভারতী-শিষ্ত লোক-প্রতারক ॥
আধুনিক এতিহাসিক কোনে! কোনে গ্রন্থকার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন । কারণ, দেখ! যায়,
পরবততাঁকালে লিখিত বগ-সনতন-জীবৰগোম্ামীর ভক্তিতত্ব বিবরক বিচার ও সিদ্ধান্তসমূহই এর
মধ্যে রল্লেছে। আস মহাপ্রভু নিজে ভক্তিতত্ব ও রসতত্ সম্বন্ধে এত খুটিনাটি বিষয় অধ্যয়ন ও চিন্তা
করেছেন এ অসম্ভব । যুক্তিসংগত কথা সন্দেহ নেই, কিন্ত মনে হয়, নামমহিমাদি সম্বন্ধে, রাগাত্সিক
ভক্তি সম্বন্ধে বা রাধাবৃষ্ণ লীলার এবং বৈষ্বীয়তার মূল বিষয়গুলি নিয়ে সনাতনের সঙ্গে সাধারণ
ভাবে মহাপ্রভুর কিছু আলোচনা নিশ্চিতই হয়েছিল। মহাপ্রভু রায়রামানন্দের সঙ্গে প্রথম এবং
পরবতাঁ বহু সম্ভাব্য আলোচনায় রাগওক্তির তত্ব সন্বক্ষে অনেক বিছু জেনে নিয়েছিলেন। সেসৰ
বিষয়ের উতাপন খুবই সম্ভব। তবে 1ারতাম্বতকার মুল বিষয়টিকে কিছু বিস্তৃত আকারেই
হয়ত ৰ। পরিবেশন করেছেন।
"* প্রকাশানন্দ-উদ্ধার কাহিনী অন্য কোনে গ্রন্থে বাঁণত হয়নি ব'লে এবং এ অদ্বৈতবাদার উপর
বৃন্দাবনদ (সাদি চরিতকারের ক্রোধ লক্ষ্য ক'রে অনেকেই এই ঘটনাটির সত্যতা সম্বন্ধে সন্দেহ
করেছেন। কিন্তু প্রকাশানন্দের ভভিমুথে সম,ক পরিবর্তন হয়েছিল এ বিষয় ম্বীকার না করা
গেলেও ডার ভাবধর্ম-বিরোধিত। যে বনুলপরিমাণে প্রশমিত হয়েছিল এ মনে করতে বাধা নেই।
ঘটন1 হিসেবে উভয়ের সাক্ষাৎকার হওয়া অসম্ভব নয় এবং মহাপ্রভুর রূপ, আকৃতি ও
ভাবাবেশসমুহ সন্ন্যাসী সম্প্রদধায়ে চাঞ্চল্য আনার পক্ষে বথেষ্ট ছিল। মনে রাখতে হবে সনাতন
গোম্বামী তখন কাশীতে, আর সনাতনের কাছে না হোক, রূপের কাছে কবিরাজ গোম্বামী এ ঘটন।
নিশ্চয়ই গশুনেছিলেন। এ বিষয়ে চরিতামৃতের বর্ণনাও অন্পষ্ট নয়। কবিরাজ গোসশ্বামী আদি ৭ম,
মধ্য ১৭শ এবং ২«শ পরিচ্ছেদে এর বর্ণন! দিয়েছেন।
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন ৪৭
চৈতন্য মাম তার, ভাবকগণ লৈয়]।
দেশে দেশে গ্রামে গ্রামে বুলে নাচাইয়। ॥
যেই তীরে দেখে সেই ঈশ্বর করি কহে।
এছে যোহন-বিছ্যা। যে দেখে সে মোহে ॥
সার্বভৌম ভট্টাচার্য পণ্ডিত গ্রবল।
শুনি চৈতন্টের সঙ্গে হইল পাগল ॥
সন্ত্যাসীর নামমাত্র মহ। ইন্দ্রজালী।
কাশীপুরে না বিকাবে তার ভাবকালি ॥
বেদান্ত শ্রবণ কর, না! যাইহ তার পাশ।".. ইত্যাদি।
অহাপ্রভু তখন বুন্দাবনযাত্রাপথে। তিনি শুনে মৃদু হাস্ত করলেন এবং
বললেন, “কাশীতে যদি গ্রাহক না মিলে ভাবের বোঝা মাথায় কনে গৃহেই
ফিরে যাব।' এরপর ফিরে আসার পথে যখন কাশীতে অবস্থান করছেন
তখন সেই মারাঠী ব্যক্তি মহাপ্রভুর সঙ্গে প্রকাশানন্দ ও তার সাক্ষাৎ-
কারের জন্য একদিন স্বগ্ুহে সন্ন্যাসীদের ভিক্ষানির্বাহের নিমন্ত্রণ করলে এবং
কাকুতি-মিনতি করে মহাপ্রভুকেও নিয়ে গেল। মহাপ্রভুর বয়স তখন
ত্রিশের মত আর প্রকাশানন্দ সম্ভবতঃ: প্রৌঢত্বের শেষ প্রাস্তে। মারাঠী-গৃহে
ভিক্ষাগ্রহণের সময় সন্ন্যাসীর। শুদ্ধ মাজিত স্থানে আসন নিয়েছেন, মহাগ্রতু
সেখানে আসন ন! ক'রে পার্দপ্রক্ষালন ক'রে সেই জায়গাতেই বসে পড়লেন।
লক্ষ্য ক'রে প্রকাশানন্দ ওখানে বসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে মহাপ্রভু বললেন
আমি হীন সম্প্রদায়ের সঙ্গ্যাসী, আপনাদের সঙ্গে একাঁসনে বসার অধিকারী
নই ।” প্রকাশানন্দ তখন হাতে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলেন এবং কথা প্রসঙ্গে
জিজ্ঞাসা করলেন সন্গাসী হয়ে অদ্বৈত বেদান্তের দিকে না গিয়ে ভাবে
অস্থির হয়ে গান করেন নাচেন কেন। তখন মহাপ্রভু বিনয়সহকারে
বললেন, “আমি মূর্থ জ্ঞানহীন। আমার যূর্থতা দেখে গুরু আমাকে শুধু
কষ্ণনাম করতে বলেছেন। কৃষ্ণনাম করতে করতে আমার যেটুকু জ্ঞান-বুদ্ধি
ছিল সব সমাচ্ছন্ন হয়ে গেছে। নামজপ করতে করতে এমন হ'ল যে নাম
নিয়ে নাচবার এবং গান করবার প্রবল বাসনা আমি রোধ করতে পারি না।
তখন আমার গুরু বললেন_-এই হ'ল ভাবের অবস্থা। এর তুলনায়
আনন্দের অবস্থা জার কিছু নেই। এরকম কৃষ্ণপ্রেমের কাছে মোক্ষও তুচ্ছ
হয়ে যায়। এই জন্তেই আমি নিরস্তর হাসি, নাচি, গাই, নিজের ইচ্ছায়
রণ
৯৮ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
নয় ।” মহাপ্রভুর এরকম আত্মদৈন্মূলক বিনয়বাক্যে সন্ধ্যাসী-সম্প্রদায়ের বিদ্বেষ-
ভাব কমে গেল। এরপর কথাপ্রসঙ্গে ব্রহ্মতত্ব, জীবতত্ব, শক্তির কথ।, রা'গভক্তি
প্রভৃতি বিষয়ে তর্কের মধ্যে না গিয়েও মহাপ্রভু নিজের মনোভাব জ্ঞাপন
করলে পর এবং উপনিষদ, বেদাস্তস্থত্র ও গীতাভাগবতের কিছু শ্লোক নিজ-
ভাবামুযায়ী ব্যাখ্যা ক'রে শোনালে পর সন্গ্যাসীর৷ অভিভূত হলেন। গ্রকাশানন্দ
সার্বভৌমের মত রাগভভ্তিবাদী হুয়ত হননি, কিন্তু ভক্তিধর্ম-বিরোধের পথ যে
ত্যাগ করেছিলেন সেবিষয়ে সন্দেহ নেই। আসলে দেখা যায়, মহাপ্রতুর
ভগবত্বা ও নবভাবধর্ম মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হবার পরও ন্যায়-বেদাস্ত-স্থৃতির
পগ্ডিতির অনেকেই অবিচল ছিলেন। সার্বভৌমের প্রতি রাজ। প্রতাপরুদ্রের
সংশয়ভঞ্জনাত্মক প্রশ্নই বিষয়টি নির্দেশ করে। “রাজ। কহে শাস্বগ্রমাণে চৈতন্য
হয় রুষ্খ। তবে কেনে পণ্ডিত সব তাহাতে বিতৃষ্ণ ॥” কিন্তু ক্রমশঃ যে তারা
বিদ্িষ্টত] ত্যাগ করেছিল এ তো ঠিক। 'প্রকাশানন্দ-পরাজয় এই পরিবর্তনের
প্রবল স্্চক হতে পারে। কাশীতে সন্নযাসী-সম্প্রদায় প্রত্যক্ষ বিরুদ্ধত ত্যাগ
করলে পর মহাপ্রভুকে দেখবার জন্য লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশ ঘটতে লাগল।
রাত্রিদিন লোকসংঘটে ব্যতিব্যস্ত হয়ে মহাপ্রভু সনাতনকে বুন্দাবনে পাঠিয়ে
দিলেন এবং নিজে যে পথ দিয়ে এসেছিলেন সেই ঝাড়খণ্ডের পথেই
নীলাচল যাত্রা করলেন।
মহাপ্রভু নীলাচলে ফিরে এলেন ১৪৩৮ শকের বৈশাখ প্রথমের দ্দিকে।
প্রত্যাবর্তন সংবাদ নবদ্বীপে পাঠানো হতেই গৌড়ের ভক্তেরা রথযাত্রার
পূর্বে আসবার আয়োজন করতে লাগলেন। এদিকে বূপগোস্বামী তার
ভ্রাতা অন্পমের সঙ্গে বুন্ধাবনে কয়েকদিন কাটিয়ে সাধনার স্থান ঠিক
ক'রে ফিরলেন গৌড়ের দ্রিকে। রূপের অভিলাষ গৌড়ে ফিরে, সাধনার
প্রতিকূলতা জম্মাচ্ছিল এমন কিছু বৈষয়িক ব্যাপার সমাধা ক'রে,
নীলাচলে মহাপ্রভূর সঙ্গে কিছুদিন কাটিয়ে বুন্দাবনে স্থায়ীভাবে থাকবেন
এবং সনাতনের সঙ্গে মিলিত হয়ে ভক্তিযূলক কাব্যশাস্্রাদি রচন1 করে,
বিগ্রহ স্থাপন কবে লুপ্ততীর্থাদি উদ্ধার ক'রে মহাপ্রভুর উদ্দেশ সিদ্ধ
করবেন। কব্ধূপ আসছেন বৃন্দাবন থেকে, আর সনাতন যাচ্ছেন বৃন্দাবনের
দিকে, কিন্তু উভয়ের সাক্ষাৎ ঘটেনি, কারণ রূপ ফিরেছিলেন গঙ্গাতীর
পথ দিয়ে, আর সনাতন গিয়েছিলেন রাঁঞপথ ধ'রে । যাই হোক, শ্রীব্প
গৌড়ে গিয়ে শেষবারের মত সংসারের ব্যবস্থা কঃরে ফিরবেন এমন সময়
মহাগ্রথর লৌকিক ও দিব্য জীবন তি
কনিষ্ঠ ভাতা অন্থপমের মৃত্যু হ'ল।* রূপ গরোস্বামীব নীলাচলে ফিরতে
আরও কিছু বিলম্ব হয়ে গেল। নবদ্বীপ হয়ে আসার সময় তিনি মহা-"
প্রভুর নীলাচল-প্রত্যাবর্তন শুনলেন। তখন ভক্তেরাও নীলাচল যাত্রার
জন্য গ্রস্তত হয়েছেন। কিন্তু রূপ তার আগেই ক্রতবেগে নীলাচলে এসে
হাজির হলেন, উঠলেন ঠাকুর হুরিদরাসের বাসায়। মহাপ্রভুর নিয়ম ছিল
প্রতিদিন জগন্নাথের বাল্যভোগ দর্শন ক'রে হরিদাস বা সনাতন-রূপ
থাকলে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা কয়ে স্বমন্দিরে ফিরে যাবেন। রূপের
উপস্থিতির দিন তার আগেই এসে হাজির হলেন। রূপ দৃণগ্ডবৎ করলেন,
মহাপ্রস্ব আলিঙ্গন করলেনশ ক্রমে নীলাচলবাসী সমস্ত ভক্তদের সঙ্গে
মহাপ্রক্ত রূপের পরিচয় করিয়ে দিলেন। অহ্বৈত নিত্যানন্দ এসে পৌছালে
তাদের বললেন শ্রীরূপকে সমস্ত শক্তি দিয়ে আশীর্বাদ করতে।
দু'খানি দূতকাব্য এবং সম্ভবতঃ 'দানকেলি' লিখে শ্রীরপ তখনই
ভক্তকৃবি হিসেবে প্রসিদ্ধ। ইতিমধ্যে তিনি ললিতমাধব এখং বিদগ্ধমাধব
নামে ছুখানা নাটকেরও ভূমিক। ক'রে ফেলসেন।ণ ঠিক ছিল দ্বারকা,
মখুরা, বৃন্দাবন একত্র ক'রে দূতী সখীসহ রাধার প্রেমবিস্তাবের একখানা
পূর্ণাঙ্গ নাটকই লিখবেন, কিন্তু, কথিত হয়, সত্যভাম। স্বপ্ন দিয়ে দ্বারকা-
লীলা! বিষয়ে পৃথকৃ গ্রস্থ লিখতে বলেন। যাই হোক নান্দী শ্লোকের
শ্রীচৈতন্ত-বন্দনা, স্ত্রধারের ভূমিকা এবং পাত্রপ্রবেশ ও ছু'চারটি শ্লোক
পর্যন্ত লেখার পর একদিন স্বরূপ-দামোদর ও রায় রামানন্দের (এবং
হরিদাসি-ঠাকুরের ) সম্মুখে কপেব কৃতিত্ব পর্যালোচনা কর] হ'লে সকলে
তার ভূয়সী প্রশংসা করলেন। মহাপ্রভু সাবধান করে দিলেন, বৃন্দাবন-
লীল| থেকে যেন কৃষ্ণকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ক'রে না! দেখানো হয়। আর
শি সা
ধ' অনুমান হয়, অনুপমের পুত্র এী্গীব তখন ২৩ বৎসরের শিশু ।
1 গ্রন্থকার প্রত পুষ্পিক। থেকে জান। যায়ঃ বিদগ্ধমাধব দমাপ্ত হয় ১৪৫৫ শকে অর্থাৎ মহাপ্রত্তর
তিরোধান বৎসরে এবং ললিতমাধব সমাপ্ত হয় আরও চার বৎসর পরে। ফলে ১৪৩৮ শকাব্দ
বপের নীলাচলে অবস্থানের সময় এ দুই নাটক সম্পূর্ণ হয় কী ক'রে এই ভেবে কোনো! আধুনিক
ইতিবৃত্তকার চৈ-চ এর এ বর্ণনকে অমূলক প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন। এই প্রসঙ্গে আমাদের মনে
হয়, এই সময় নাটক ছুটির প্র্যান ঠিক হয়েছিল, কিন্তু মহাপ্রভুর নির্দেশ ( কৃষ্ণকে বাহির নাহি করিস
ব্রঙ্গ ফৈতে) পালন করতে গিয়ে পরে নোতুন ক'রে ঘটন'র উদ্ভাবন করতে হয় এবং এইহাবে
অর্ধনমাপ্ত হয়ে পড়েই থাকে ।
রি বৈষব-রস-প্রকাশ
একদিন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটন! ঘটল। রখযাত্রার সময় নৃত্য এবং কীর্তন
করতে করতে মহাপ্রভু কখনো কখনো জগন্নাথের এন্ব্যূতি নিরীক্ষণ
ক'রে.বিরহভাবে আবিষ্ট হতেন, ভাবতেন, এই তে। সেই আমার প্রিয়
কৃষ্ণ, কিন্ত এ কৃষ্ণের সঙ্গে মিলনে স্থখ কই? মুখে একটি সংস্কৃত কবিত?
পড়তেন, যা লৌকিক পরকীয়া রতির কবিতা, যার ব্যঞ্চিতার্থ এ।*
একমাত্র স্ব্প দামোদর ছাড়া এ গ্লোকের ব্যঞ্তিতার্থ আর কেউ বুঝতে
পারতেন না। এইবার রথাগ্রে নৃত্য করতে করতে যখন স্তন্ধ ও বিষ
হয়ে মহাপ্রভু এ শ্লোক আবৃত্তি করলেন তখন রূপ নিজ গ্রতিভায় ওর
ব্যঞ্জিতার্থ ধরে ফেললেন, এমন কি সঙ্গে সঙ্গে মনে মনে বুন্দাবন-লীলায়
পরকীয»। রতির উৎকর্ষ প্রতিপাদক একটি গ্লোকও রচনা করে ফেললেন ।
পরের দিন এ গ্লোকটি বাসার চালায় গুজে রেখে সমুদ্রন্নান করতে
গেছেন এমন অবসরে মহাপ্রভৃ এসে চালে-গোজা শ্লোক (প্রিয়; সোইয়ং
কৃষঃ সহচরি' ইত্যার্দি) পেয়ে পশ্ড়ে আবিষ্ট হলেন। রূপ ফিরে আসতেই
তাকে চাপড় মেরে আলিঙ্গন করলেন এবং বন্প্রশসা করলেন। যহাপ্রতু
বুঝলেন রূপের নবধর্ষে দীক্ষা! সম্পূর্ণ হয়েছে।
এইভাবে দশমাস নীলাচলে মহাগ্রভুব সঙ্গে কাটিয়ে শ্রীব্ূপ মহাপ্রভুর
আশীর্বাদ নিয়ে ও বুন্দাবন-কেন্দ্রে নব বৈষ্ণবধর্মের প্রতিষ্ঠা ও প্রচারের
বিষয় বুঝে নিয়ে গৌড়যাত্রা করলেন এ ধকাবেরই শেষে ফাল্গুন-চৈত্রে।
গৌড়ে একবৎসরের মত কাটিয়ে ১৪৪০ শকের প্রারভে বুন্দাবনে গিয়ে
সেখানেই স্থায়ী হলেন।
এদিকে শ্রীবূপের নীলাচল ত্যাগের দশদিন পরেই বৃন্দাবন থেকে
প্রীপাতন এমে উপস্থিত হলেন। ঝাড়খণ্ডেক আরণ্যপথ দিয়ে আসতে
তার চর্মরোগ জন্মেছিল। পথে আসতে তিনি মনে মনে ঠিক করেছিলেন
ষে এ দেহ রাখবেন না, জগন্নাথের রথের চাকায় আত্মবিসর্জন দেবেন।
কারণ, হীন জাতি বলে তিনি মন্দিরে জগন্নাথ দেখতে পাবেন না, এদিকে
দৈহিক ব্যাধির জন্য মহাপ্রভুর কাছে দেখা দিতেও পারবেন না। যাই
হোক, নীলাচলে এসে তিনি হরিদাস ঠাকুরের সাধন-কুঠিতে উঠলেন ।
জগন্নাথের বাল্যভোগ দেখে নিয়মমাফিক মহাপ্রভু হরিদাস ঠাকুরের ওখানে
* “বঃ কৌমারহরঃ স এব হি বরস্তা এব চৈত্রক্ষপাঃ” ইত্যাদি কাব্যপ্রকাশ্ধৃত নিয়লংকার
বাকোর কাব্ত্ব গ্রতিপা্নকল্পে গ্রধিত কোনও কবির ল্লোক।
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন ১৪১
এলে তাঁর সঙ্গে সনাতনের সাক্ষাৎ ঘটল। মহাপ্রভু দুহাত বাড়িয়ে
আলিঙ্গন করতে গেলে সনাতন সবেগে পিছিয়ে গেলেন, কিন্ত মহাগ্র
জোরপূর্বক তাকে আলিঙ্গন করায় সনাতনের চর্মক্ষত থেকে ক্ষরিত রস
মহাপ্রভুর সর্বাঙ্গে লেগে গেল, সনাতন হায় হায় ক'রে উঠলেন।
এইভাবে নিত্য সনাতনের সঙ্গে মহাপ্রতু সাক্ষাৎ করেন, আলিঙ্গন করেন
এবং ইঠ্টগোষ্ঠী ক'রে ত্বমন্দিরে চ'লে যান। তার দূষিত কু উপেক্ষা
ক'রে মহাপ্রভু আলিঙ্গন করেন, এতে সনাতনের ক্ষোভ বেড়েই চলল।
দ্রেহত্যাগে কৃতনংকল্প হ'লে মহাপ্রভু তার মনের কথা জানতে পারলেন
এবং বোঝালেন যে দেহত্শাগে রুষ্কে পাওয়| যায় না, সাধন-ভজনেই
পাওয়া যায়, অতএব জীবন রক্ষা করাই উচিত। ত৷ ছাড়া সনাতনের
জীবনে বৈষ্ণব-ধর্মের অনেক প্রয়োজন সিদ্ধ হবে। রথের সময় চারমাস
গৌড়ের ভক্তের! এসে থাকলে মহাপ্রভু সকলের সঙ্গে সনাতনের পরিচয়
করিয়ে দিলেন। গ্রীষ্মের মধ্যাহ্ছে একদিন মহাপ্রভু এক দূরবর্তা উদ্ভানে
আছেন এমন সময় সনাতনকে ডেকে পাঠালে সনাতন জগন্নাথমন্দিরের
সিংহদ্ধার অতিক্রম ক'রে ছায়াশীতল পথ দিয়ে না গিয়ে তগ্ঠবালুকার
উপর দিয়েই হেটে গেলেন, পায়ে ফোস্ক। পড়ল, কিন্ত তিনি বুঝতেই
পারলেন না। নীলাচলে পণ্ডিত জগদানন্দ মধুরভাব আশ্রয় ক'রে
মহাপ্রভুর প্রতি প্রীতি প্রদর্শন করতেন। সনাতনের কণ্ড উপেক্ষা ক'রে
মহাপ্রভু তাকে দিন দিন জোরপূর্বক আলিঙ্গন করেন এ নিয়ে জগদানন্দ
অন্তরে ক্ষ ছিলেন। একদিন জগদানন্দের কাছে নানা কথা প্রসঙ্গে
সনাতন মহাপ্রভুর আলিঙ্গন নিয়ে নিজের মনোছুঃখ প্রকাশ করলে পর
জগদানন্দ এবিষয়ের সমাধান হিসেবে সনাতনকে বুন্দাবনে ফিরে যাওয়ার
পরামর্শ দ্িলেন। এ সংবাদ মহাপ্রতুর কানে গেলে তিনি জগদানন্দের
উপর ক্রুদ্ধ হয়ে বলতে লাগলেন £
কালিকার বটুয়া জগা এছে গবাঁ হৈল।
তোমাকেহ উপদেশ করিতে লাগিল ॥
ব্যবহার পরমার্থে তুমি গুরুতুল্য।
তোমারে উপদেশ করে না৷ জানে আগ্মূল্য ॥
আমার উপদেষ্টা তুমি প্রামাণিক আর্ধ।
তোমারে উপদেশে, বালক কয়ে এছে কার্য।
১০২ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
শ্রীসাতন এ ভতসনা শুনলেন, বললেন, এ ভৎ্সন! ধার উপর তিনিই
প্রভুর যথার্থ আত্মীয়, মর্যাদার ভাগী আমি এক্ষেত্রে কতই না দূরবর্তী !
অন্থযোগ ক'রে মহাপ্রভূকে বললেন £
জগদ্দানন্দে পিয়াও আস্ীয়স্থধাঁধার |
মোরে পিয়াও গৌরবস্ততি নিষ্বসিসিন্দাসার ||
মহাপ্রভু বোঝালেন যে, ঠিক তা নয়, জগদানন্দ তার কাছে সনাতনের
চেয়ে প্রিয়তর নন, তিনি যথার্থই মর্ধাদীলজ্ঘন সহ করতে পারেন না।
আব আলিঙ্গন সম্বন্ধে বোঝালেন যে সনাতনের দেহ তার কাছে অতি
প্রিয়। তা ছাড়৷ ভদ্রাভদ্র জ্ঞান মনোধর্ম মাত্র, শুচি-অশুচিবোধও তাই, পঙ্কে
চন্দনে নন্ন্যাসীর সমবুদ্ধি, এইজন্যও সনাতনের দেহে তার বিনুষ্নান্ত্র ঘ্বণ?
নাই। এইভাবে সনাতনকে এক বৎসরের মত নিজের কাছে রেখে,
বন্দাবনে তাঁর কবণীয় সম্পর্কে নির্দেশ দিয়ে বিদায় দিলেন। ঝাড়খণ্ডের
যে আরণ্যপথ দিয়ে বুন্দাবনযাত্রার সময় মহাপ্রভু গিয়েছিলেন, বলভদ্র
ভট্টাচার্যের কাছে সে পথে মহাপ্রভুর গমনের বিবরণ জেনে নিলেন এবং
যে যে বুক্ষ, প্রস্তর, নদী, গ্রাম মহাগ্রভুর স্পর্শলাঁভ করেছিল তা! দেখতে
দেখতে শ্রীসনাতন গোস্বামী মহান্বখে বৃন্দাবনে চলে এলেন। স্বল্প পরে
শ্রীবূপও গৌড় থেকে নীলাচল হয়ে প্রত্যাবর্তন করলেন ।
মহাপ্রভুর নীলাচল-লীলার মধ্যেকার আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা
হ'ল রঘুনাথদাসের আগমন। সপ্তগ্রামের করশুক্ক-আদায়ের ভারপ্রাপ্ত জমিদার
হিরণাদাসের ভ্রাতুষ্পুত্র ও গোবর্ধনদাসের পুত্র রঘুনাথ প্রথম যৌবনেই বৈরাগোোর
অভিমুখী হয়ে শ্রীচৈতন্যের শরণ গ্রহণ করতে শাস্তিপুরে আসেন। প্রথমবার,
খন সন্যাসের পরেই মহাপ্রভূ শাস্তিপুরে ফিরে এসেছেন এবং দ্বিতীয়বার
গৌড়-রামকেলি থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে। তিনি রথুনাথকে সে সময়
গৃহে ফিরে যেতে এবং অনাসক্ত হয়ে বিষয়-ভোগ করতে উপদেশ দেন।
রঘুনাথ বসরখানেক সেইরকম চেষ্টা ক'রে দেখলেন, কিন্তু গৌর-কৃষে নিবিষ্ট
চিত্তকে সংসারে ধরে রাখতে অসমর্থ হলেন। ইন্দ্রসম এশ্বর্ব এবং
অপ্পরাসম স্ত্রী তাকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হ'ল। পিতামাঁত। বার বার
তাকে ধ'রে রাখার চেষ্টা করেন, তিনি বারবার পালিয়ে যেতে থাকেন।
অবশেষে গৌরাঙ্গশরণলাভ মানসে তিনি নিত্যানন্দের কূপা।ভক্ষা করার
জন্য বহিগত হলেন। নিত্যান্দ তখন পানিহাটিতে তার “গোপবৃন্দ”
মহাগ্রতুর লৌকিক ও দিব্য জীবন ১০৩
সহ গঙ্গাতীরে বৃক্ষমূল উজ্জ্বল ক'রে আছেন। রধুনাথ দূর থেকে দণ্ডবৎ
করতেই “চোরা! এতদিন পরে এলি, আয় তোর দণ্ডবিধান করব বলে
আকর্ষণ ক'রে তাঁর মাথায় পাঁদস্পর্শ করলেন। বললেন, তাঁর সব
গোঁপবৃন্দকে যমূনাপুলিন-লীলার অন্থকরণে দধি-চি'ড়া মহোৎ্সবের ছার!
পরিচধা করতে। সেই আয়োজনই হ'ল। মহোৎসবের নাম শুনে দূরবর্তী
স্থান থেকেও বনুলোক আমতে লাগলেন। পণ্ডিত ভট্টাচার্য থেকে
হীনতম শু্র পর্ধস্ত এই মহোৎসবে এসে ধন্য হয়ে গেলেন। সন্ধ্যায় রাঘব
পণ্ডিতের গৃহে নৃত্যকীর্তনার্দি সংঘটিত হ'ল। পরদিন প্রাতে রাঘব
পণ্ডিতের মধ্যস্থতায় রঘুনাথ নিত্যানন্দ-সমীপে নিজ মনোভাব জ্ঞাপন ক'রে
তার কৃপা চাইলেন £
মোরে চৈতন্য দেহ গোসাঞ্ি ! হইয়। সদয় ||
মোর শিরে পদ ধরি করহ প্রসাদ ।
নিবিস্লে চৈতন্য পাগ্ড-কর আশীর্বাদ ॥
নিত্যানন্দ আশীর্বাদ করলে পর রঘুনাথ সানন্দচিত্তে ঘরে ফিরে গেলেন।
কিন্তু গৃহের অভ্যন্তরে গেলেন ন1। ছূর্গামগুপে থাকলেন এবং সেই অবস্থায়
তাকে নজরবন্দী করা হ*ল। এরই ফাকে একরিিন স্থকৌশলে তিনি
পালালেন। দিনে পনের ক্রোশহেটে পথে মাত্র তিন দ্িন অন্ন গ্রহণ
ক'রে বারে। দিনে নীলাচলে এসে হাজির হলেন। এবার আর মহাপ্রভৃ
তাকে ফিরিয়ে দিলেন না11* শিক্ষার জন্য স্বকূপ দামোদরের কাছে তাঁকে
সমর্পণ করলেন। আরম্ত হ'ল রঘুনাথের কঠোর বৈরাগ্যব্রত। সেখানে
প্রথম প্রথম রঘুনাথ অন্যান্য ভক্তের মত জগন্নাথের প্রসাদান্নে শরীর রক্ষা
করতেন। পরে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করতে লাগলেন । সিংহদ্বারে ভিক্ষার জন্য
দাড়িয়ে থাক! বেশ্টাবুত্তির মত দ্রেখায় ব'লে সে পথ ছেড়ে দ্রিয়ে অন্নসন্তে
ভিক্ষ। ক'রে থেতে লাগলেন । পরে তাও ছেড়ে দিলেন এবং গাঁভীগণের
কাছে ফেটে দেওয়া বাপি প্রসাদান্ন, যা গাভীতেও খায় না, তা-ই তুলে
নিয়ে এসে ধুয়ে ধুয়ে এক আধ মুষ্টি খেয়ে জীবন নির্বাহ করতে লাগলেন।
মহাপ্রভু এই ব্যাপার শুনে একদিন এসে হাজির হলেন এবং স্বয়ং জোর
ক'রে এ অন্নের এক মুষ্টি মুখে দিয়ে তার অমৃতান্বাদ্বের গৌরব কীর্তন ক'রে
ভক্তবুন্দকে শিক্ষা দিলেন। রঘুনাথের অত্যান্্য নিষ্ঠায় আনন্দিত হয়ে
* আনুমানিক ১৪৪* শকাব্দ।
১০৪ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
মহাগ্রতু রঘুনাথকে তার নিজের পূজিত ও অশ্রজলে বছধৌত গোঁবর্ধন শিল?
এবং সেই সঙ্গে গুধামালা দ্রিলেন। এইবার আরম্ভ হ'ল রঘুনাথের
কঠোর ভক্তিসাধনা। এ গোবর্ধন শিলার পুজার্দিতে তিনি কঠোর নিয়ম
সহকারে নিযুক্ত হলেন। স্বরূপ গোস্বামী মহাপ্রভুর বিচিত্র ভাবাবেশ নিয়ে
নিগৃঢ় রাধাভাবলীল1 বিষয়ক শ্লোক রচনা! ক'রে যেতেন, আব তারই
আদেশে রঘুনাথ তার অর্থ পরিষ্ফুট করতেন। এই ভাবে ষোল বৎসর
মহাপ্রভুর নিকট কাটিয়ে তার এবং স্বরূপের তিরোধানের পর ১৪৫৬
একে তিনি বুন্দাবন গিয়ে শ্রীরূপের শরণ গ্রহণ করেন। তিনি গৌরাঙ্গ বিষয়ক
তব, রাধারুষ্চলীলা বিষয়ক কিছু কিছু রচনা লিখে যেমন তার একনিষ্ঠ
ভক্তচিত্তের তৃপ্চিসাধম করেছেন, তেমনি এই নবধর্মের আন্দোলনকে
অগ্রসর করেও দ্িয়েছেন। চৈতন্তচরিতামুতকার কৃষ্দান কবিরাজ তার ও
শ্রীপের কাছে প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষালাভ করেছিলেন।
এই সময়ে শ্রীচৈতন্যের আর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হ'ল নিঃশেষ
রাগভভ্তি প্রচারের জন্য শ্রীপাঁদ নিত্যানন্দকে বাঙ্লায় প্রেরণ। নিত্যানন্দ-
প্রভু শ্রীচেতন্যের নীলাচল আগমনের সঙ্গী হয়ে এসেছিলেন। মহাপ্রভু
দক্ষিণ যাত্রা করলে সম্ভবতঃ তিনি গৌড়ে কিছুদিনের জন্য যাঁপন ক'রে
নীলাচলে ফিরে আসেন। মহাপ্রভুর প্রত্যাবর্তন কালে তিনি ছিলেন,
তারপর প্রথমবার গৌড়েব ভক্তেরা এলে পর রথধাত্রার্দী উৎসবে যে-সব
আনন্দ-সম্মিলন ও প্রেমভক্তির প্রবল প্রকাশ ঘটেছিল তার মধ্যে তার
স্বভাবস্থলভ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। গৌড়ের ভক্তবুন্দের
প্রত্যাবর্তনের পূর্বে মহাপ্রভু নিভৃতে নিত্যানন্দের সঙ্গে যুক্তি করলেন।
এবং তাঁকে বাঙ্লায় থেকে প্রেমধর্ম প্রচারের নির্দেশ দিলেন। তবু
সদাচঞ্চল নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর সঙ্গ-স্থখের লালসায় পরবৎস্র এবং তার পর-
ব্সরও যখন এলেন তখন মহাপ্রভু আবার তার সঙ্গে নিভৃতে যুক্তি
করলেন এবং এবার অধৈতাচার্যের সঙ্গে মিলে নিত্যানন্দের গৌড়ে
স্থায়ীভাবে বসবাসের, নির্দেশ দ্িলেন। এই সময় অদ্বৈতাচার্য হেঁয়ালি
ভাষায় ষে তর্জা বলেছিলেন, মহাগ্রত সহান্তে তার অনুমোদন ও
করেছিলেন।* কিন্ধু মহাপ্রভুর নিষেধ থাকলেও প্রেমোন্াদ নিত্যানন্দ
% কেউ কেউ মনে করেন প্রীপাদ নিত্যানন্দ প্রভৃকে মহাপ্রভু বিবাহ ক'রে গৃষ্ঠী হবার উপদেশও
দ্বিয়েছিলেন। চৈ-চ, মধ্য-১৬ প্রঃ।
মহাপ্রতুর লৌকিক ও দিব্য জীবন ১৭৫
গৌড়ের ভক্তবৃন্দের সঙ্গে নীলাচলে আসতে ছাড়েন নি। যাই হোক,
'নিত্যানন্দপ্রতু মহাগ্রভূর নির্দেশে বাঙলার মধ্যভাগে সহজ গৌরকষ্ত্রেমের ষে
প্রসার ঘটিয়াছিলেন তা অতুলনীয় এবং ত] নিত্যাননোর মধ্য দিয়ে মহাগ্রতুর
কার্যকারিতা প্রমাণ করে। নিত্যানন্দ জাতিকুল একেবারেই মানেননি।
সন্ন্যাসী হলেও মহাপ্রভুর লোকাপেক্ষা ছিল। নিত্যানন্দের কিছুই ছিল না।
এ বিষয়ে চরিতামুতকার বলছেন £
সহজেই নিত্যানন্দ কষ্তপ্রেমোদ্দাম |
প্রভুর আজ্ঞায় কৈল যাহ] তাহ] দান |
একটি গীতেও বল। হয়েছে £ *
যারে দেখে তারে কয় দৃস্তে তৃণ করি।
আমারে কিনিয়? লহ, ভজ গৌরহরি ॥
নিত্যানন্দের অপার প্রেমদাতৃত্বের বিষয় স্মরণ ক'রে বাউল কৰি গেয়েছেন__
নিত্যানন্দের জাহাজ এসেছে।
কে পারে যাবি ধর এসে ॥
নিত্যানন্দ প্রভুর অপর কাতি হ'ল তরুণ কবি বুন্দাবনদাসকে চৈতত্ত-
চরিত রচনায় অন্গপ্রাণিত করা]। মহাপ্রভুর তিরোভাবের পর ন"বৎসর
ধরে নিত্যানন্দ প্রধানতঃ নদীয়া-বর্ধমানের গ্রামে ভক্তগুহে গমনাগমন করে
প্রেমধর্মকে স্থপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তার তিরোধানের পর তার পত্রী
জাহৃবাদেবী এবং পুত্র বীরচন্দ্র বাঙলার বৈষ্ণবধর্ষের নেতৃত্ব করেন।
ইতিহাস ঘটন চায়। সেরকম ঘটনা বলতে শ্রীচৈতন্যের জীবনে কিছু
নেই, বিশেষতঃ তাঁর অস্ত্যলীলার শেষ দ্বাদশ বৎসরে ।* তবু অন্তরঙ্গ
ভাবে বিচার করলে বল! যায় যে ঘটনার বিরলতাও ছিল না। চরিতামুতের
'লেখক দিগদর্শন হিসেৰে তার কিছু বর্ণনা করেছেন মাত্র । প্রথমতঃ লোকযাতা-
রাতের বিরা* ছিল ন1। রথধাত্রার পূর্ব থেকে চারমাস গৌড়ের ভক্তবুন্দ
থাকতেন, এদের নানান্ জনের ধর্মাচরণে নানান্ প্রশ্থ, নানান সমস্তা।
এদ্বের সঙ্গে কীর্তনারদদিতে যোগ দিতে গিয়ে এবং নিমন্ত্রণ-ভিক্ষা। নির্বাহ
করতে গিয়ে মানবীয় স্েহপ্রীতি, মান-অভিমানের নানা ব্যাপারের সম্মুখীন
মহাপ্রভৃকে হতে হ'ত। তারপর নানা স্থান থেকে ধামিক ও বিদগ্ধ
+১৪৪৩-২৫শকাদ।
১০৬ বৈষণব-রস-প্রকাশ
ব্যক্তির সমাবেশ প্রায়ই ঘটত। কারুর দাবি, মহাপ্রতুকে তীর ভাগবত
ব্যাখ্যা শুনতে হবে এবং অনুমোদন করতে হবে, কারুর ইচ্ছ। মহাঁপ্রতৃকে
স্বরত ভক্তিবিষয়িণী কবিতা শোনাবেন, কেউ ব শুধু দেখার, শোনার
এবং সাহচর্যলাভের বাসন! নিয়ে কয়েক দিন যাপন ক'রে চলে যেতেন।
রঘুনাথ ভট্ট, রঘুপতি উপাধ্যায়, বল্পভ ভট্ট, উচ্ছিষ্টভোজী কালিদাস
প্রভৃতির নাম এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য ।
দ্বিতীয়ত: নীলাচলে ধারা স্থায়ীভাবে তার সঙ্গে অবস্থিতি করতেন
তাদের নিয়ে ঘটনাও কম ছিল না। কীর্তনিয়া ছোট হরিদাস বেষ্বী
মাধবী দেবীর কাছ থেকে চা'ল ভিক্ষা! করতে গিয়েছিলেন এই অপরাধে
মহাপ্রভু তাকে ত্যাগ করায় এবং কোনোমতেই ক্ষমা না করায় ছোট-
হরিদাস প্রয়াগে গায় আত্মবিসর্জন দ্রিলেন। কোনো বিধব। ব্রাহ্মণীর
একমাত্র পুত্রের উপর মহাপ্রতুর স্গেহপ্রীতি লক্ষ্য ক'রে দামোদর পণ্ডিত
মহাপ্রতৃকে তিরস্কার করলেন ভিক্ষা গ্রহণ কালে মহাপ্রভুর ভোজনের
পরিমাণ লক্ষ্য ক'রে রামচন্দ্র পুরী মন্তব্য করলে পর মহাপ্রভু ভিক্ষা কমিয়ে
অর্ধাশন করতে লাগলেন । জগরদানন্দ পণ্ডিতের প্রীতির আতিশয্যে সন্যাস-
ধর্ম লঙ্ঘনের ভয়ে মহাপ্রভূ বিক্ষুন্ধ হতেন, আবার অন্রোধ ন। মানলে
জগদানন্দ প্রবল অভিমান করতেন ব'লে মহাপ্রভু মনে মনে ভয়ও করতেন ।
ভাঁববিহ্বল অবস্থায় থাকতে থাকতে মহাপ্রভুর বায়ুবুদ্ধি হ'ত, রাত্রে নিত্রা
হ'ত না বলে জগদানন্দ মহাপ্রভুর জন্ত এক তুলার বালিশ তৈরি ক'রে
তার উপর মাথা রাখবার অন্ুনয় করলে মহাপ্রভু তা অঙ্গীকার করলেন
না। আরম্ভ হ'ল জগদানন্দের অনশন । শেষে শ্বরূপ-দামোদর কলার'
পাতা নখে চিরে চিরে তাই দিয়ে বালিশ তৈরী করে দিলে মহাপ্রভু ত।
অস্বীকার করতে পারলেন না। জ্গদানন্দেরও কোনে প্রকারে মানভ-
ঘটল। একবার জগদ্দানন্দ নবদ্ধীপে মাতৃসমীপে মহাপ্রভু কর্তৃক প্রেরিত
হ'লে পর সেখান থেকে চন্দনার্দি-তৈল এক হাড়ি নিয়ে আষেন, ইচ্ছা
তৈললেপনে মহাপ্রভুর বাযুশান্তি ঘটাবেন। মহাগ্রভৃ যখন কোনে! মতেই
অঙ্গীকার করলেন না, তখন জগদানন ক্রোধে সেই হাড়ি উঠোনে নিক্ষেপ
ক'রে ভেঙে ফেললেন । এরকম বহু ঘটন! প্রায়ই ঘটত।
তার অলৌকিক চরিত্রে একাধারে সাতিশয় মৃদৃতা এবং অনমনীয় দৃঢ়-
চিত্ততা লক্ষিত হ'ত। চরিতামৃতকার এটি বোঝাঁবার জন্য ভবস্ৃতি-বণিত
মহাপ্রভূর লৌকিক ও দিব্য জীবন | ১৩৭
রামচরিত্রের বিষয় উল্লেখ করেছেন_-বজাদ্পি কঠোরাণি মৃদৃনি কুস্থমাদপি।
মহাপ্রভুর মৃছুতা৷ এবং কারুণ্য তাঁর জননীবাৎসল্যে, অধম পতিত হীন
জাতির প্রতি পক্ষপাতে এবং ভক্তবৎসলতায় প্রকাশিত ) তার কঠোরতা ফুটেছে
বিষয়ীর আচরণের বিরুদ্ধে, বৈরাগ্য-ডঙ্গে, মর্যাদ1-লজ্ঘনে, এবং তার নিজের প্রতি
স্তুতিবাদে। এই ভাবস্থিরমেত্র, আজান্লম্িততৃজ এবং স্মেরাশ্ত দেবমানব সহসা
বিচলিত হতেন না, আবার বিচলিত হ'লে নিজ সিদ্ধান্ত থেকে তাঁকে নড়ানোও
সম্ভবপর ছিল না। কিন্তু একদ্রিনকার একটি ঘটনায় মহাপ্রতৃকে সাতিশয়
কুব্ই হতে হয়েছিল। রায় রামানন্দের এক ভ্রাতা গোপীনাথ পট্রনায়ক
রাজ। প্রতাপরুদ্রের অধীনে" শুক্ক-আদায়কারী কর্মচারী ছিলেন। রাজাকে
দেয় টাকার অনেক বাকি পড়ায় এবং পুনঃপুন তাগাদা সত্বেও নান
অছিলায় কালক্ষেপ করায় এবং সেই সঙ্গে যুবরাজকে অপমাশ করায়
গোপীনাথের কঠোর শান্তির আদেশ হয়। ঠিক হয় প্রত্যক্ষ মৃত্যুভয় দেখিয়েও
টাক আদায় না হ'লে তাকে চাঙে চড়িয়ে অর্থাৎ বুকের উপর পাথর চাপ।
দিয়ে টাক] দেওয়ার প্রতিশ্রতি আদায় কর] হবে। আটক ক'রে নিয়ে যাওয়।
হচ্ছে এমন সময় গোপীনাথপক্ষের লোকজন এসে মহাপ্রভুর পার্ধদদের ধরলে
ষে, একমাত্র মহাপ্রভুর কথাতেই রাজা বা যুবরাজ গোগীনাথকে মুক্তি দিতে
পারেন। সার্বভৌম বিষয়টি মহাপ্রতুর গোচর করলে মহাপ্র্ত বললেন,
রাজার তঙ্কা আত্মসাৎ ক'রে সে অপরাধ করেছে, আর আমি সন্যাসী
মানুষ, পুনর্বার এ অন্থরোধ করলে এখানে আর আমাকে দেখতে পাবে না।
সার্বভৌম তখনকার মত নিরন্ত হলেন, কিন্তু গোপীনাথকে সত্য সত্য চা
চড়াবার আয়োজন কর! হচ্ছে এই কথা শুনে পক্ষীয় লোকজন সার্বভৌমের
কাছে এসে কেঁদে পড়লে পর সার্বভৌম যখন এ অবস্থার কথা পুনরায়
মহাপ্রভৃকে জানালেন তখন মহাপ্রভু ক্ষুব্ধ হয়ে-_এখানে বিষর়ীদ্দের কাছে
আর নয়, বলে উঠে পড়লেন। সার্বভৌম আর অনুরোধ করবেন ন!
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হ'লে মহাগ্রভৃ শান্ত হ'লেন। কিন্ত অবস্থার গুরুত্ব বুঝে
সার্বভৌম প্রতাপরুদ্রের কাছে ছুটে গেলেন এবং রামানন্দ রায়ের পরিবারবর্গ
মহাপ্রভুর বিশেষ অগ্ুগৃহীত এই বিষয় জানিয়ে গোপীনাথের মুক্তি করিয়ে
নিলেন। মহাপ্রভুর কানে ঘখন এই সংবাদ পৌছাল তখন তিনি আর
ক্রোধ প্রকাশ করতেও অসমর্থ হলেন, অশ্ররুদ্ধ কঠে আক্ষেপ ক'রে শুধু
বললেন £
১০৮ বৈষণব-রস-প্রকাশ
প্রভু কহে ভট্টাচার্য কি মোর করিলে ।
রাজপ্রতিগ্রহ তুমি মোরে করাইলে ॥
এসব ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হ'ল হরিদাস ঠাকুরের দেহরক্ষা
(আহ্মানিক ১৪৫০ শক)। হরিদাস ঠাকুরের নাম-সাধনার একাগ্রত। এবং
অন্যান্ত চারিত্রিক গুণসম্পদ্দের জন্য মহাপ্রভু তার প্রতি নিতান্ত প্রীতিবংসলত।
এবং শ্রদ্ধা পোষণ করতেন। হরিদাস মুনল্মান ভক্ত ছিলেন ব'লে তার
দৈম্তবোধের জন্যও মহাপ্রভু অন্যান্য পার্ধদের চেয়ে তাকে অধিক সমাদর
করতেন। মহাপ্রভুর অবশ্য-পাল্য নিয়ম ছিল প্রতিদ্দিন জগন্নাথের উপলভোগ
দর্শন ক'রে হরিদাসের সঙ্গে মিলিত হয়ে কুশল প্রশ্নাদি ক'রে তবে নিজ কুটিরে
ফিরে যাওয়া । হরিদাসের নিয়ম ছিল লক্ষ নাম জপ না ক'রে তিনি অন্নগ্রহণ
করতেন না। তিনি নাম করতে করতে এবং মহাগ্রভুকে দেখতে দেখতে
দেহত্যাগ করলে মহাপ্রভু অন্যের সঙ্গে নিজ হাতে তার দেহ সমাধিস্থ
করেন এবং তার পাদোদক ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করেন। স্থতরাঁৎ বলা
বায়, এতিহাসিক কোনো ঘটন1 না ঘটলেও নীলাচলে তাঁর পরিকরবুন্দ,
ওড়িয়। ভক্তবুন্দ, গৌড়ের ভক্তবুন্দ এবং বহিরাগত নান লোকের সঙ্গে লৌকিক,
আধ্যাত্মিক বিভিন্ন ব্যবহার রক্ষ1 মহাপ্রভুর কর্তব্যের মধ্যে ধাড়িয়ে গিয়েছিল ।
এ ছাড়া জগন্নাথের বারো! মাসে তের পার্বণে যোগদান তো৷ আছেই।
পঞ্চমতঃ মহাপ্রভুর কীর্তন শ্রবণ, কীর্তনগান এবং সর্বোপরি তার
দিব্যোন্নাদের অবস্থাবৈচিত্র্য । অর্ধবাহ দশায় কখনে শ্রবণ কীর্তন করতেন,
কখনেো৷ বিলাপ করতেন, কখনো স্বরূপ দ্রামোদরের গলা ধ'রে অন্তরের বিরহ-
শোক নিবেদন করতেন। রায় রামানন্দ এবং স্বরূপ দামোদর মহাপ্রভুর এই
অস্তরঙ্গ-লীলায় অনুক্ষণ সাহচর্য দিয়ে তাঁকে শাস্ত রাখার চেষ্টা করতেন।
চরিভামৃতকার বলছেন £
যদ্ধপি অস্তরে কষ্চবিয়োগ বাধয়ে।
বাহিরে না প্রকাশয়ে ভক্তছঃখ ভয়ে ॥
উতৎ্কট বিয়োগদুংখ যবে বাহিরায় |
তবে যে বৈকল্য প্রভুর বর্ণন ন] মায়
রামানন্দের কৃষ্ণকথা স্বরূপের গান ।
বিরহবেদনায় প্রভুর রাখয়ে পরাণ ॥
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন ১০৯:
দিনে প্রভূ নান সঙ্গে হএ অন্যমন]।
রাত্বিকালে বাড়ে প্রভুর বিরহ বেদন) ॥
জগন্নাথ দর্শনে, কৃষ্ণলীলা শ্রবণে কখনও বা বহিরঙ্গ কারণ ব্যতিরেকেই-
মহাপ্রভুর বাহদ্দশ। একেবারে লোপ পেয়ে যেত এবং তিনি উন্মাদের
ক্যায় আচরণ করতেন । বিভিন্ন ভাবের আবেশে তার দেহেন্রিয় একেবারে
বিকল ও জর্জরিত হয়ে পড়ত। কখনও বিরহের কাতরতণ ব্যক্ত করতে
না করতেই মিলনের উৎসাহে অধীর হতেন । নির্বেদ, বিষাদ, দৈন্য, চাপলা,
হর্ষ, স্থতি, গর্ব প্রভৃতি বিরুদ্ধ সঞ্চারী ভাবের আঘাত-সংঘাতে দলিত-পিষ্ট
হয়ে পড়তেন। শ্তন্ত, ম্বেদ, অশ্রু, রোমাঞ্চ, কম্প প্রভৃতি সাত্বিকভাবগুলি
এক লঙ্গে গার দেহে প্রকাশিত হ'ত | কবিরাজ গোশ্বামী এই বিরহ্-বিকার
অবস্থার বর্ণনায় বলেছেন £
নিরস্তর হুএ প্রতৃর বিরহ-উন্মা্দ।
ভ্রমময় চেষ্টা, প্রলাপময় বাদ ॥
রোমকৃপে রক্তোদ্গম দত্ত সব হালে।
ক্ষণে অঙ্গ ক্ষীণ হয়, ক্ষণে অঙ্গ ফুলে ॥
এইসব দেখে স্বরূপ-দামোদর মহাভাবের প্রকাশ ব'লে তার যাবতীয় বিকাঁরকে
রক্তের রাঁধাভাবের সঙ্গে মিলিয়ে নিতেন। মহাপ্রতুর এই অদ্ভুত প্রকাশ
অবলম্বন ক'রেই রাধাকৃষ্-লীল। স্বরূপ-রঘুনাথ-বূপগোশ্বামীর কাছে নূতন
আলোকে দী্চ হয়ে উঠেছিল।
এইসব ভাবজীবনের আশ্চর্য লীল] শোকে গ্রথিত ক'রে রেখেছিলেন,
স্বরূপ-্দামোদর । বূপ গোস্বামীর চৈতন্যাষ্টক এবং প্রবোধানন্দের চৈতন্য-
চন্্রামতেও তা বণিত হয়েছিল। কিন্তু পরে চরিত্রলীলার উত্তরাধিকার
এসেছিল রখনাথনদ্বাসের রচনায় ও কঠে। শ্রীল রঘুনাথ দাস এবং তাকে
অবলম্বন ক'রে কৃষ্দ্াস কবিরাজ রাধাভাবান্বিত মহাপ্রভুর এই চিত্র
পরিবেশন করতে কথঞ্চিৎ প্রয়াস করেছেন। কুষ্দদ্াস কবিরাজ এবং তাঁর
শিক্ষাণ্তর রঘুনাথদাসের মতে নিগৃঢ় এ লীলার লম্যক্ বর্ণন অমস্ভব।
এরকম তীব্র উৎকণ্ঠা ও ব্যাকুলতার প্রকাশ এর পূর্বে মানুষে কেউ,
কখনে। দেখেনি। এই অবস্থায় মহাপ্রভুকে পতনাদদি থেকে রক্ষা করার
১১০ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
জন্য বিশেষভাবে সেবক গোবিন্দ এবং স্বরূপ দামোদর সতত চেষ্টিত
থাকতেন। একদিন নিকটবত্র্ণ চটক পাহাড় দর্শনে গোবর্ধন ভ্রম হওয়ায়
মহাপ্রভু উধ্বশ্বাসে ছুটতে ছুটতে ভাবে মৃছিত হয়ে পড়ে গেলেন। আর
একদিন দেবদাপীদের গীত জয়দেবের পদ শুনে ছুটে গিয়ে তাদের
আলিঙ্গন করতে যাবেন এমন সময় সেবক গোবিন্দ পিছন থেকে চীৎকার
করতে করতে তাকে নিবৃত্ত করলেন। শেষের কিছুদিন বিরহশোকে
ব্যাকুল হয়ে মহাপ্রভু জগন্নাথ মন্দিরের গভীরায় আশ্রয় নিতেন। সেখানে
বিরহ বৃদ্ধি পেলে দেয়ালে মুখ ঘনতেন, পল্লবতুল্য ওষ্ঠছয়ে রক্তবিন্দু দেখ!
যেত। একদিন উন্মাদ অবস্থা বধিত হলে প্রাচীর লঙ্ঘন ক'রে মহাগ্রতু
পড়ে গেলেন সিংহঘদ্বারের নিকটবর্তা গাভীদের কাছে। গরুড় স্তম্তের
কাছে দ্রাড়িয়ে তিনি জগন্নাথকে দেখতেন এবং অশ্রুতে তার বক্ষ প্রাবিত
হ'ত, এ দৃশ্য অনেকেরই পরিচিত হয়ে পড়েছিল। শেষ কয়েক বৎসর
মৃহমুহু তার বিরহ-বিকার ঘটতে থাকে।
এই ভাবে মহাপ্রভুর অন্তরে যে তীব্র আলোড়ন চলছিল তার
প্রতিঘাত তার মরদেহ সহা করতে অসমর্থ হ'ল এনং তিনি লীলা
ংবরণ করলেন আটচল্িশ বৎসরে, ১৪৫৫ শকের আঁষাটে, রথযাত্রার
পরবর্তী ৩।৪ দিনের মধ্যে ।*
গয়া থেকে প্রত্যাগমনের পর থেকে প্রায় পঁচিশ বৎসরের অধিকাংশ
সময় কুষ্চ-বিরহকাতরতায় স্বান্ভবের অধীন থাকলেও নবলোকধর্ম-স্থাপনে
কর্মতৎ্পরতাতেও মহাপ্রভুর কম সময় ব্যয়িত হয়নি। সাধারণ মহাপুরুষ
* কী ভাবে মহাপ্রভুর তিরোভাৰ ঘটে এ সম্বন্ধে উল্লেখযোগা চরিতকাক্েরা নীরব? এ
নীরবতার কারণ অনুমান করতে কষ্ট হয় না, কিন্তু বাঙ২ল1 চরিতকার ছু'জন এ সম্বন্ধে পৃথক ভাবে
বিববণ দেওয়ার চেষ্টা কবেছেন। লোচনদান জানিয়েছেন ষে, গুণিচামন্দিরে মধ্যাহ্নের 1দূকে
জগন্নাথের মুত্তির সঙ্গে মহাপ্রভু বিলীন হয়ে যান। এ বিবরণ লোচনদান সম্ভবতঃ ওড়িস্যার জনশ্রুতি
থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। এটি অলৌকিক। অপরপক্ষে জয়ানন্ব-প্রদত্ত বিবরণ অনুসারে
রথযাত্রীর সময় নৃত্য করতে গিয়ে মহাপ্রভুর পায়ে ইটের আঘাত লাগে,জর হয় এবং কয়েকদিন
পরে তিন দুহত্যা্ করেন। এই সংবাদ দুশ্যতঃ বিশ্বীমযৌগ্য হলেও জয়ানদ্দের গ্রন্থে বছ উদ্ভট
সংঙ্গাদের পরিচগ্ পাওয়া যায় ব'লে এটিও সেইরকম সন্দেহ নিয়ে আমে । আধুনিক কোনে ইতি-
বুত্তকায়ের অনুমান--জগন্নাথ মন্দিরের পুরোহিতের] তাকে মেঝে ফেলে-_ এও নিতাত্ত অবিশ্বাস্ত।
৯ ৬৮৯ সিট, দি সিইটসি নদ সুজি আছিস ত্বেন গু আর ফেরেন না, এম । অনুমানই
অধিকতর সমীচীন।
মহাপ্রভুর লৌকিক ও দিব্য জীবন | ১১৯
বা ধর্মগ্রচারকদের সঙ্গে তার এবিষয়ে পার্থক্য এই যে, তার জীবনাচরণ
থেকে অনায়াসেই কার্য সিহ্ধ হয়েছিল। স্বতঃগ্রবৃত্তভাবে যেন কোনে'
কর্ষেই তাঁকে হাত দিতে হয়নি। নবধদ্বীপে ও নীলাচলে ভক্তপরিকরদের
সমাবেশ, দাক্ষিণাত্যে এই নবধর্ষের প্রচার, এবং পূর্বেকার বৈষয়়িকতা-
সহচর দম্তময় মিথ্যাধ্মের অপসারণ এসব তার প্রভাব এবং প্রকাশে
স্বতই ঘটেছিল। তিনি দৃশ্ঠত:ঃ নিজে কিছু করেননি, পরিকরদের ছার
সাধন করেছেন। জীবনীকারের৷ এই কারণে যুক্তিযুক্তভাবেই 'দাঙ্গোপাঙ্গা-
স্্পার্ধদ” কৃষ্ণরূপে তাকে দেখেছেন। স্থতরাং তার যা-কিছু কর্মতৎপরত।
তা এই পরিকরদের নিয়েই । কাজ করেছেন তারা, শ্বতঃ-উৎসারিত
নির্দেশ এসেছে তার জীবনাচরণ থেকে । কচি পৰিকরবুন্দ তার পরামর্শ
পেয়েছেন, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার লীলার অন্তরঙগেরাই সব সমাধান
কবে দিয়েছেন। মহাপ্রভুর দৃরদৃষ্টির শ্রেষ্ঠ পরিচায়ক হ'ল রূপ-সনাতনকে
বুন্দাবনে স্থাপন, হরিদাস ঠাকুরকে নিজ সমীপে স্থানদ্ান এবং নিত্যানন্দ
প্রভুকে বাঙ্লায় স্থায়ীভাবে যাপনের নির্দেশদান। এইভাবে এই নবধর্মের
প্রতিষ্ঠ। সম্ভব হয়। এর বিন্তার ঘটে বুন্দাবনে রপ-সনাতনের কাব্যরস
ও তত্বময় অজশ্র গ্রস্থরচনায় ও শ্রীক্জীবের দার্শনিক গ্রন্থ নির্মাণে, ষোড়শ
শতাঁবীর শেষভাগে শ্রীনিবা নরোত্তম ও শ্যামানন্দের গৌড়ে উত্তরবঙ্গে-
কামরূপে এবং ওড়িক্যায় বৈষ্ণবধর্ম প্রচারে, বৃন্দাবনদাস, কৃষ্দাঁ
কবিরাজ ও নরহরি চক্রবর্তী প্রমুখ ভক্তবুন্দের জীবনীগ্রন্থ রচনায় এবং
নামকীর্তন ও লীলাকীর্তনেব বিস্তারে। এর ব্যাপকতার চরম মুহ্্ত
সপ্তদশ শতাবীর মধ্য-পূর্ব ভাঁগ। এই সময় ভারতের পূর্বাঞ্চলে এমন
গ্রাম ছিল না যা কীর্তনে ও কষ্চকথা বা ঠৈতন্যকথায় মুখরিত
হয়নি, এমন সাহিত্যস্থষ্টি ছিল ন। যার মধ্যে ভক্তিভাব উৎসারিত হয়নি,
এমন সমাজ ছিল না যা বিষয়-এশর্-কৌলীন্ত থেকে মানুষকে ছোট
ক'রে ভেবেছে । অষ্টাদশ শতাব্ধীর মাঝামাঝি সময় থেকে তত্ত্রবাহিত
শাক্তধর্মের পুনরুখান ঘটলেও ভাবপ্লাবনে নিমজ্জিত হয়ে ত) নবীকৃত হয়েই
গকাশ পায়। আর উনিশ শতকের পর থেকে আজ পা্যস্ত বিচিত্র
চিন্তা, বহু বিতর্ক, বহু মতামত এবং রা ও জাতীয়তা-বোধের
মধ্যেও যেএবীট মীধীয় ধরমিকভ আসনে আন্ভক ক হতে কট
সে এঁ ভাবুকতারই প্রাধান্য | শ্রীরামকৃষ্ণের সাধনায় এবং বিবেকানন্দের
১১২ বৈষ্ণব-রষ-প্রকাশ
চিন্তা ও কর্মপ্রবণতার মধ্যে ভাবের প্রেরণাই প্রাধান্তলাভ করেছে।
ভারতের পূর্বাঞ্চলে কোটি কোটি মানুষের যে স্বরূপ-পরিবর্তন একদ'
প্রকট হয়েছিল গ্রবং আজকের প্রগতিশীলতার মধ্যে যা সংস্কার-রূপে
কাজ করছে তার মূল হ'ল নেই বৈপ্লবিক ভাবমূতি, যিনি দেবত1 হয়েও,
মানষ এবং ম্বাস্থুষ হয়েও দেবতা
€বেষ্ব,
বা
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দ্বার্শনিক প্রতিষ্ঠা
কোনে দার্শনিক তত্ব কোনো ধর্মাহুভবের জন্ম দিয়েছে এমন দৃষ্টাস্ত নেই।
ধর্ম লোকচিত্তের বিভিন্ন অন্থভবেরই অন্যতম প্রকাঁশবিশেষ, যা শক্তিমান কোনে?
ভাবুকের হৃদয়ে সম্পুর্ণ এবং নবীন রূপ নিয়ে আবিসতি হয়। পরে বুদ্ধি
এবং চিন্তায় সামপ্শ্তপূর্ণ ক'রে সেই আবির্ভাবকে যুক্তিগ্রাহহ আকৃতি কেউ কেউ
দিয়ে থাকেন। এ-ধর্ম যুগচিত্তসত্ঘাতের ফলে প্রকাশিত হয় এমন দেখা যায়।
এরই অপর পৃষ্ঠায় রয়েছে রাষ্রবিপ্রব, যার মুখ্য আশ্রক্প বহিরঙ্গ জীবন, যারও
উদ্ভব বিশেষ-ধরনের ভাবের আন্দোলন থেকেই। গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের
আবির্ভাবের মূলে সহজ অন্থ্ভব কিভাকে কাজ করেছে তার দৃষ্টাস্ত গয়াপ্রত্যাবৃত্ত
মহাপ্রহ্থর ভাঁবাবস্থা। কোনো কার্ধ-কারণস্থত্রে ব্যাপারটিকে স্পষ্টভাবে ধর! যায়
না ব'লে একে ধর্ষের প্রকাশ বা আবির্ভাব বলা যেতে পারে। তিনি
মীধবেন্দ্রপুরীপার্দের নিতাস্ত পক্ষপাতী ছিলেন এবং
ক পাননাও _ তশিত্ত ঈশ্বরপুরী পাদের সংসর্গে তার ভাবোদ্গম হয়েছিল
বৃন্দাবন ও নবদ্ধীপ_ ব'লে এই ধর্মকে বিশেষ ভাবে বাওলারই ধর্ষ বল! যায়,
টি রি আর মহাপগ্রভুকে এই ভাবধর্ম-সম্প্রদায় প্রভাবিত করেছিল
এমনও স্বচ্ছন্দে বলা যেতে পারে। বাঙলার রাধাকষ-
গীতিকাব্য এবং ন্মরণকীর্তনপরায়ণ ও পুলকাশ্রযুছণাময় স্থফীসাধকর্দের
ধর্মসাধনাকেও এ ধর্মের ভূমিকারূপে দেখা যেতে পারে। মহাপ্রভুর জীবনী
থেকে আমরা দেখেছি তার মধ্যে সহদা-উদ্দিত এই ধর্মসন্বদ্ধে তার কোন
সঙ্ঞান প্রস্ততি ছিল না। তিনি ব্যাকারণ, কাব্য এবং পৌরোহিত্য-ক্রিয়াবিধির
ছাত্র ছিলেন। কথকতা প্রভৃতি শোনার মধ্য দিয়ে পুরাণ এবং বিশেষতঃ
শ্রীমদ্ভাগবতের সক্ষে আর পাঁচজনের মতই তার ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ গ'ড়ে উঠেছিল ।
কিন্ত রাগান্থগ৷ ভক্তির কোনে। পরিচয় তাঁর মধ্যে বা তার বয়োজোষ্ঠ অছৈত-
শ্রীবাসারদির মধ্যে প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি। তার চিত্তে নবভক্তিধর্মের
আবির্ভাবের পরও দেখা যায় ভক্তিতত্ব বিষয়ে তার অজিত জ্ঞান সামান্যই
ছিল। রাগাত্মিক প্রীতি, গোপীভাব, রাধাভাব প্রভৃতি বিষয়ে রায় রামানন্দ
তার কৌতুহল চরিতার্থ করেন। আর দাক্ষিণাত্য ভ্রমণে নানান্ তীর্থে
৮
১১৪ বৈষব-রস-গ্রকাশ
সাধুমহাজনদের সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে সম্ভবত: শ্রীসনকাদি তত্ব-বাদীদের অভিমতও
তিনি কিছু কিছু জেনে নেন। তিনি নিজে তত্বের চেয়ে আচরণের উপরেই
জোর দেওয়ার নির্দেশ দিতেন এবং এইজন্য ঠাকুর হরিদাস তাঁর গৌরবের পাত্র
ছিলেন এবং রঘুনাথ দাস বিশেষ ন্বেহভাজন হয়েছিলেন। তিনি স্বয়ং
রাধাক্কষ্খলীলাতত্ব বিষন্বে কিছু লেখেননি এবং কেউ তার কাছে এ বিষয়ে
উপদেশপ্রার্থী হ'লে, হয় স্বরূপ-দামোদর, নয়, রায় রামানন্দের কাছে তাকে
যেতে বলতেন। তবে তিনি রূপ-সনাতন-গোস্বামীকে তার সাধ্যমত এবং
অতি সাধারণভাবে কৃষ্ণলীলাতত্ব, নাম-মাহাত্ম্য এবং বৈষ্ণবাচরণ পন্বদ্ধে
কিছু কিছু প্রেরণ! দিয়েছিলেন নিঃসন্দেহে” এবিষয়ে চৈতন্যচন্দ্রোদয় নাটকের
বর্ণন অবিশ্বাস্য মনে হয় না এবং ভক্কিরসামৃতসিন্ধুর প্রারস্ভে শ্রীরূপের
স্পষ্টোক্তি__“হৃদি যন্ত প্রেরণয়! প্রবতিতোহ্হং বরাকরূপোহপি”__অর্থহীন
নয়। কিন্ত তাহলেও একথ! ঠিক যে, যে-নবধর্ম তার চরিত্রের মধ্য দিয়ে
স্বত:-আবিস্তি এবং নিয়ত নৃতনতর হতে হতে প্রগাঢ়তা লাভ করেছিল,
তার যৌক্তিক বিচার-বিশ্নেষণে তিনি নিজে অক্ষম ছিলেন। নিরস্তর
আন্বাদতন্ময় অবস্থায় যিনি যাপন করতেন, ধার চিত্েন্দরিয়কায় স্ববশে ছিল না,
তার পক্ষে আত্মবিষ্লেষণ এবং তুলনামূলক বিচার প্রভৃতি অসম্ভবই ছিল।
তার লীলাসহচরের! তার বিচিত্র ভাববিলাস এবং বিবিধ, বিকার দৃষ্টে
রাগভক্তির শ্রেষ্ঠতা বিষয়ে এবং শ্রীচৈতন্তের অস্তঃকৃষ্ণ-বহির্গোরত্ব সম্বন্ধে
স্দূঢ় প্রত্যয়ে উপনীত হয়েছিলেন। আশ্চর্য গৌরলীলাদুষ্টে ক্রমে
শ্রীকুষ্ণলীলাকেও নৃতন তাৎ্পর্যে গ্রথিত করার প্রয়োজন উপলব্ধ হ'ল। এই
প্রয়োজন সিদ্ধ করলেন বূপ-সনাতন, গোপাল ভট্ট এবং জীব গোস্বামী ।
প্রয়াগ ও বারাণসীতে মহাপ্রভু রূপ-দনাতনের উপর নির্দেশ দিয়েছিলেন
কঞ্চলীলাতত্বকেই নৃতন এবং ষথার্থতর আলোকে উপস্থাপিত ক'রে সাধারণ্যে
* স্ব্গত ডঃ ৃশীলকুমার দে তার ৬৪1908৮8 [518; &. ?1০০৫৪৫০৮ গ্রন্থে চরিতামৃতে প্রত
(মধালীলা ১৯-২৪ ) রাপদনাতন-শিক্ষণের বাণ্ভবতা1 সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কারণ,
রূপ-স্নাতনাদি গোম্বামীদের রচিত ভ্তিগ্রস্থের সারাংশই ওতে দেখা ধায়। এবিষয়ে আমাদের
বক্তব্য--ভক্তপ্রবর কৃষ্দাদ কবিরাজ এই অবকাশে পাঠকদের অভীষ্ট পুরণের জন্ত যগ্তপি বৃন্দাবনের
গোম্ামীগণের যাবতীয় সিদ্ধান্ত সংক্ষেপে*্প্রকাশ করতে চেয়েছেন, তবু বারাণসীতে ছু'মাস
অবস্থানকালে মহাপ্রভু সনাতনের কাছে রাগানুগ! ভক্তির মুখ্য ব্যাপারটি নিশ্চয়ই উপস্থাপিত
করেছিলেন। নিজ উপগ্রন্ধি ছাড়! ষাপ্রভু ইতিমধ্যে বিষয়ে কিছু জ্ঞানও সঞ্চয় করেছিলেন।
গৌড়ীয় বৈষ্বধতর্মর দাশ দিক প্রতিষ্ঠা ১১
প্রচার করতে। শ্রীক্ূপের রাধারুষ্-লীলাবিষয়ক কাব্যগীতের সঙ্গে এবং
শ্রীনাতনের ভাগবতান্রাগ সন্বদ্ধে মহাপ্রত পূর্বেই অবহিত হুয়েছিলেন,
হ্তরাং যোগ্যতম পাত্র নির্বাচনে তার কোনো সংশয়ই ছিল না। শ্রীরূপরদি
গৌরাঙ্গকে পূর্ণ ভগবৎম্বর্ূপ জেনেও গৌরলীলাবর্ণনে প্রবৃত্ত হননি এবং কেবল
গৌর-লীলার ভিত্তিতে রাগভক্তির দার্শনিক রহমত বিশ্লেষণ না ক'রে কৃষ্ণ-
লীলার ব্যাখ্যান কেন করতে গেলেন তাই নিয়ে কোনে! পর্যালোচক
নানাবিধ জল্পনায় উপনীত হয়েছেন। তার সমগ্র অভিষ্বোগটি এই £
5090 05 99091 90915900099 100 170108%6 1০0 109101059
170 5610612] 102582895 (89501191705 1০9 115 106106169 %/101) 0016
811016105 ৫6105) 10515 13 10095410615 ॥10 0106 650610051৬6 0115 ০01
(10956 68119 9000116901৩ 03955100105 ( 5২9009১ 9810809109, & 012)
210 01150 19109191599 60 1215 061591791 ড16৬9 2100 (69০1)11)55.
[1955 0175010951905 200 115110590191)575 216 01786619 90179911090
101) £0৫1)690 01 1151009) 11191017921 1719 1:119 29 16৬০৪16
10 10116 01091 50111000195, 800 71191)1)9 10 (11617 11)6015 25 জ6 810911
[01956101015 959, 15 1001 20 4৯%21918, 06 05 99101651106 6119 1)17009911,
1)59 21765 211)950 210611515 511910 20096 012109099-1118, 5150 115
[01906 10 00617 06৬96101091] 30109705200 1 13 50100654190 5012080
(026 117 01999151175 2 5৮96210) 10 01191059915 09206 (1865 1615
53010151515 11901) 01061 9011095 2170 ৫09 1801 16067 2 211 (0 1015
11691 19911590101 01 31001116591 11001),
(ডঃ স্থশীলকুমার দে-সম্পাদিত “পদ্াাবলী”র ভূমিকা )
ঘটনার অভ্যন্তরে দৃষ্টিপাত করলেই বোঝ! যায় রূপসনাতন এক্ষেত্রে
প্রভৃনির্দেশই আক্ষরিকভাবে পালন করেছিলেন। কৃষ্ণ-লীলাকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে
উপস্থাপিত করার পর এমন অবকাশ মেলেনি যাতে গৌরলীলায় হস্তক্ষেপ
করেন। তা ছাড়া, ইতিমধ্যে নবদ্ীপের প্রত্যক্ষদর্শীদের বহু পর্দরচনা, সংস্কৃত
কড়চা এবং প্রত্যক্ষশীদের কাছ থেকে উপকরণ সংগ্রহ ক'রে গ্রথিত চৈতন্ত-
ভাগবত রচিত হয়ে গেছে। শ্রীক্পা্দি যে নিত্যানন্দ সম্পর্কে নীরব ছিলেন
তারও কারণ এই এবং কিছুট। অনভিজ্ঞতাও হ'তে পারে, কিন্তু নিত্যানন্দ-
বিমুখতা কোনো ক্রমেই নমন। আমরা আরও অন্থুমান করি যে মহাপ্রভু
১১৬ বৈষ্ণব-্রস প্রকাশ
রূপ-দনাতনকে তার নিজলীলাবর্ণনে প্রকারাস্তরে নিষেধই করেছিলেন। কৃষ-
নাম ত্যাগ ক'রে তার নাম গ্রহণ করায় তিনি কিরকম ক্ষু্ধ হতেন তার পরিচয়
চরিতামূুতে নানাস্থানে রয়েছে। বদপক্তত বিদগ্ধমাধব নাটকের প্রারস্তে গ্রথিত
“অনপিতচরীং চিরাৎ*-ইত্যার্দি বন্দন। শুনে মহাপ্রভু মন্তব্য করলেন_-“এই
অতি-স্ততি গশুনিল”। ললিতমাঁধব নাটকের “নিজপ্রণয়িত1” প্রভৃতি নান্দীতে
পুনরায় আত্মগ্ততি শুনে বিরক্ত হয়েই মস্তব্য করলেন ঃ
কাহা তোমার কষ্ণরস কাব্যস্থধাসিন্ধু।
তার মধ্যে মিথ্যা কেনে স্ততিক্ষারবিন্ু ॥
রামানন্দ রায় কৌশলে রূপ গোস্বামীকে সমর্থন জানালে পর ঃ
প্রভু কহে রায় তোমার ইহাতে উল্লাস।
শুনিতেই লজ্জা, লোকে করে উপহাস ॥ ( চৈ-চ, অস্ত্যলীলা )
মহাপ্রভূ নিজ বৈরাগ্য এবং বৈষ্ণব-শ্িক্ষণের জন্যই যে কৃষ্চলীলার উপর
জোর দিয়েছিলেন তা নয়। নবধর্মের সুদৃঢ় প্রতিষ্টাৰ জন্য বুন্দাবনলীলার
দার্শনিক ভিত্তিতে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং নোতুন রসসিদ্ধাস্ত প্রণয়নের
প্রয়োজন তিনি উপলব্ধি করেছিলেন । নীলাচলে রূপ-সনাতনেব আঁগমন-
প্রসঙ্গ বর্ণনের উপলক্ষ্যে চরিতামৃতকার মহাপ্রভুর এই অভিলাষ সম্পর্কে
আলোকপাত করেছেন £
সবে কপা করি ইহারে ( -শ্রীবূপকে ) দেহ এই বর।
ব্রজলীল!-প্রেমরস বর্ণে নিরস্তর ॥
ও বং চ
এই ছুই ভাই আমি পাঠাইল বুন্দাবনে ।
শক্তি দিয়! ভক্তিশান্ত্র করিতে প্রবর্তনে |
পুনশ্চ, দেহত্যাগে কৃতসংকল্প সনাতন গোম্বামীকে নিবৃত্ত করতে গিয়ে মহাপ্রভুর
উক্তি :
তোমার শরীর আমার প্রধান সাধন ।
” এ শরীরে সাধিব আমি বহু প্রয়োজন ॥
ভক্ত-ভক্তি-কৃষ্প্রেমতত্বের নির্ধার |
বৈষ্ণবের কৃত্য আর বৈষব আচার ॥
কৃষ্ভক্তি কষ্ণপ্রেম সেবা প্রবর্তন ।
লুগ্ততীর্ঘ-উদ্ধার আর বৈরাগ্য-শিক্ষণ |
গোৌঁড়ীক্ বৈষবধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১১৭
এই নব ভক্কিধর্ম সম্পর্কে শ্রীচৈতন্তের যা কিছু উপলব্ধি ও বাণী দে তে
এ রাঁধারুফ্লীলা বিষয়েই । কৃষের পূর্ণ ভগবত, বৃন্দাবনলীলার মুগ্যতা, গোপী-
প্রেম ও রাধাঁভাব এবং প্রেমার পরষপুরুযার্থত্ব--এই সবই তো মহাপ্রত্র
উপলব্ধি এবং বক্তব্য । স্বর্ূপ-দামোদর (1) একটি গ্লোকে মহাগ্রতুর
অভিমতের সারসংক্ষেপ ক'রে বলছেন £
আরাধ্যো ভগবান্ ব্রজেশতনয় স্তদ্ধাম বৃন্দাবনং
রমা কাচিছ্পাসন। ব্রজবধৃবর্গেণ যা কল্পিত ।
শাস্ত্বং ভাগবতং প্রমাণমমলং প্রেম পুমর্থো মহান্
শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভোর্মতমিদং তত্রাদরে। নঃ পরঃ ॥
এ ছাঁড়া, বহিরক-শিক্ষণ হিসেবে মহাপ্রভু নামগ্রহণের উপরেই জোর
'দিয়েছেন। তাঁর রচিত “শিক্ষাষ্টক* নামে প্রচলিত আটটি ক্লোকে তিনি
যেমন নিজ মনোভাব জ্ঞাপন করেছেন, তেমনি বৈষ্ণব-শ্ক্ষণের দিকৃটি যথাসাধ্য
সম্পূরণ করেছেন। তারই ইঙ্গিতে মনাতন তার হরিভক্কিবিলাসে এবং রূপ তার
ভক্তিরসামবৃত-সিদ্ধৃতে নামমাহাত্ম্য প্রচার করেছেন। স্বতরাং মহাপ্রতুর
'উপলব্ধিকে উপেক্ষা ক'রে তারা কৃষ্ণলীলাবর্ণনে আগ্রহী হয়েছিলেন এরকম
অভিমত শ্রোতব্য নয়।
& ভূমিকাতেই ডঃ দে-র দ্বিতীয় অভিযোগ হ'ল এই গোস্বামীন্রয়
মহাপ্রতুর প্রত্যক্ষান্ভূতির দিকৃগুলি উপেক্ষা ক'রে পুরাণবণিত বিষয় এবং
পরম্পর-বিরোধী আখ্যান-উপাখ্যানের সমাধান করতে গিয়ে অনর্থক তাদের
প্রতিপাগ্ধকে জটিল ও দুরবগাহ ক'রে তুলেছেন । “***10115 005 10-
(61150609] 96110055655 01 019 6010199] 100%115 0£ 13981 19 11911)
70:00817060 16) 10102 01 01606 169119861005 17) 89 000001) ৪9 0065
816 ০0700161619 0)61560 11) 2 10901108 10985 ০1 0109910217 107501)5,
1659705 200 (0:9016101091 01165, বল! বাহুল্য, এ ধরনের আলোচন।
ভারতীয়ের লেখনী থেকে নির্গত না হয়ে বৈদেশিকের লেখনী থেকে
নির্গত হলেই যথাযথ হ'ত। গোম্বামীরা পৌরাণিক ব্যাপার নিয়ে চুলচের!
বিস্তৃত আলোচনা! করেছেন ঠিকই, কিন্তু এর প্রয়োজনীয়ত। অনন্বী কার্ধই ছিল,
অন্ততঃ সেকাঁলে। হৃদয়ে উপরন্ধ এ নবধর্মটিকে প্রচলিত বন্ুধা বিচিত্র
ধর্মীয়তার উপরে তাদের স্থাপন করতে হয়েছিল। শুধু শ্রীকুত্রাদি সম্প্রদায়ে
প্রচলিত তত্বেরেই খণ্ডন করতে হয়নি। বিষণ, নারায়ণ, অবতার, লক্ষ্মী,
১১৮ বৈষব-রস-গ্রকাঁশ
রুঝ্িপী-সতাভাষ। গ্রভৃতি নিয়ে যে সব কাহিনী এবং তাত্বিকতা প্রচলিত
ছিল তার. গ্রহ্ণ-বর্জন করতে হয়েছিল এবং সর্বোপরি গোঁপীভাব এবং
রাধাবারদ্দের উপর ব্রজলীলার ভিত্তি স্থাপন করতে গিয়ে নোতুন যুক্তি
বিন্াস করে সমস্ত পুরাণকে ঢেলে সাঁজতে হয়েছিল। গোস্বামীর!
বেদোক্তির প্রামাণিকতাঁর উপর নির্ভর ন! করে পুরাণের উপর জোর দ্বিতেই
পুরাণ-প্রসঙ্গগুলির পুনবিচার অত্যাবস্াক হয়েছিল। “কৃষ্ণত্ত ভগবান্ স্বয়ম্”
এই উপলব্ধিতে আস্থাবান্ হওয়ায় অবতারবাদকে তার ঢেলে সাজালেন।
গুণাবতার, লীলাবতার, প্রকাশ-বিলাসাদির পার্থক্য, দ্বারকা-বুন্দাবনের সামঞ্রস্ত
এসব বর্জন ক'রে পূর্ণাঙ্গ দার্শনিকতা৷ কিভাহে বা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে?
কেবল গ্রত্যক্ষান্থভূতির বিষয় বিশ্লেষণ ক'রে তো কবিতা-গান রচনা চলে।
সে প্রয়াস তে। এ সময়ে নরহরি-বাখ্দেবাদ্দির রচনায় এবং মুরারিগুপ্ত-
কর্ণপূর-বৃদ্দাবনের জীবনীতে বা কর্ণপূরের চৈতন্চন্দ্রোদ্য় নাটকে সিদ্ধ
হয়েছে। শ্রীবূপ যদি দ্বিতীয় চৈতন্যচন্দ্রোদয় লিখতেন--সমালোচক কথিত
“৫87৩0 15811596101”-এর বিষয়টি আর কতদূর বধিত হ'তে পারত ?
আর নিগৃঢ শ্রীচৈতন্ত-জীবনী রচনার ধা সারাংশ তাই তে! তাদের
নবভক্তি-উদ্দীপিত গ্রস্থাদিতে বিস্তৃত। ভক্তিরসামৃতসিন্ধু, উজ্জবলনীলমণি এবং
পদ্যাবলী প্রভৃতির গ্রস্থন কি মহাপ্রভুর হৃদয়াঙভবকেই বিস্তৃতভাবে প্রকাশ
করছে না? বস্ততঃ বপ-সনাতন এবং জীব এঁ ছ২6911880101-এর যৌক্তিক
এবং কাব্যিক রূপ দিতে গিয়ে তাদের জীবৎকালে যা ক'রে গেছেন
তার তুলনা বিরল। এক হাতে অছৈতবাদীদের সঙ্গে, অন্য হাতে বিশিষ্টা-
ছৈত বা প্রচলিত ছৈতবাদীদের সঙ্গে সংগ্রামে তারা যে বিজয়ী হয়েছেন
এবং প্রতুদত প্রেরণার মর্যাদা নিঃশেষে রক্ষা করেছেন এর চেয়ে গৌরবের
বিষয় তাদের এবং আমার্দের আর কী হ'তে পারে?
গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শন বলতে যা বোঝায় তা মৃখ্যত: এ ম্বূপ-সনাতন-
রূপ-জীব গোস্বামীর স্থাষ্ট । মহাপ্রতুর মতান্ুষায়ী ভাঁগবতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে
এই দর্শনের সারকথা-সমূহ নিহিত এবং ভক্ভিরসাম্বতসিক্কু ও উজ্জ্রলনীল-
মণি প্রস্ততি রসব্যাখ্যানে এই দর্শন পল্পবিত। শ্রীপাদ জীব গোস্বামীর
ভাগবত-সন্র্তে বপ-সনাতন'গোপালভট্রের আলোচনার সারনিকর্ষ যেমন
উপস্থাপিত হয়েছে, তেমনি এঁদের সকলেরই গ্রন্থের সার সন্গিবেশিত হয়েছে
কষ্গদাস কবিরাজের বাঙলা গ্রস্থ চৈতক্যচরিতামতে ! চরিভামৃত আধার
গৌড়ীয় বৈষ্ঞবধর্ষের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১১৪৯
উক্ত গ্রস্থাদি থেকে অধিকগুণও বটে। শ্রীচৈতন্যের মিগৃঢ় রাঁধাঁভাবলীলা।,
শ্বরূপ দামোদর ও ততশিষ্য রঘুনাথদাস গোস্বামী বর্ষ বর্ষ ধরে যা প্রত্যক্ষ
করেছিলেন তার অধিকার লাভে ধন্য হয়েছিলেন কবিরাজ গোস্বামী ।
গোসম্বামীগণের ভক্তিসিদ্ধাত্ত এবং মহাপ্রভুর অস্তরঙ্গলীলা ( বহিরঙ্গ লীল।
তো বটেই) একাধারে সমীকৃত হয়ে এ গ্রন্থে বিরাজ করছে। কবিরাজ
গোস্বামীকে নমস্কার । এই একটি গ্রস্থেই তিনি তাত্বিক, রসলিগ্ম, এবং
লীলাশ্রবণোৎ্স্থক পাঠককে সম্যক পরিতৃপ্ত করেছেন, রসরাজ শ্রীকৃষ্ণ এবং
মহাভাবস্বরূপ। রাধাকে একাধারে ভক্তচক্ষুর গোঁচর করেছেন। কৃষ্ণলীল।
এবং গৌরলীলার নিঃশেষ একত্তাস্ছভব নবদ্বীপের লীলাপরিকরদের অস্তরে
প্রতিভাত হয়নি, তার! গৌরকৃষ্ণের অভিন্নতা যদিচ অনুভব করেছিলেন, তা
আরও বিস্তৃত কঃরে পূর্ণাঙ্গ প্রেমললীলাবাদের যৌক্তিক অথচ হার্দিক
বিশ্লেষণ তারা উপস্থাপিত করতে পারেননি । ন্স্যাসাশ্রিত শ্রীগৌরের নীলা-
চল-লীলার অভিজ্ঞতা যাদের হয়েছিল একমাত্র তাঁরাই পূর্বাপর মিলিয়ে
সমগ্রভাবে বিষয়টিকে অঙ্কুভব করতে পেরেছিলেন। এদিক থেকে ক্রমান্থসারে
রামানন্দ-স্বরূপ-রূপ-সনাতন-রঘুনাথদাস-জীব-কৃষ্ণদাস কবিরাজ প্রমুখ সাধকদের
অন্ুভবই অগ্রগণ্য । নবদ্ীপ-লীল।-সহচরেরা, মুখ্যভাবে অদ্বৈত-ন্ত্যানন্দ
এবং সহায়কভাবে শ্রীবাস, মুরারি, গদাধর, নরহরি, গোবিদ্দ-বাস্থদেব,
মুকুন্দ দ্বত্ত প্রভৃতি এক. অতি মহৎ কর্তব্য সাধন ক'রেছিলেন, তা হ'ল
শ্রগৌরের কৃষ্ণত্ব অর্থাৎ ঈশ্বরত্ব উপলব্ধি ক'রে ঈশ্বরীয় ' লীলার প্রকাশের
আনুকূল্য বিধান। এর! লক্ষ্য করেছিলেন ধর্মস্স্থাপক কৃষ্ণ নামুকীর্তনমুখে
কলিযুগের উপযোগী প্রেমভক্তি প্রচার ক'রে আচগ্াল মাহ্ষকে উদ্ধার
করতে এসেছিলেন। সন্যাসপূর্ব বসরের সময়কার বিবিধ আবেশময় ও ক্ষণে
ক্ষণে পরিবর্তনশীল নবদ্বীপ-লীলায় অভিভূত এবং সন্যাসে নিতাস্ত ব্যাকুল
বিষুঢ় পরিকরবৃন্দের কাছে এ ছাড়া আর কিছু প্রতিভাত হয়নি। কেন
তীব্র বৈরাগ্য, কেন অশ্র-কম্প-যৃছণদি, কেন কৃষ্ণের গৌরবর্ণ, এ সবের সমাধানে
তার] অগ্রব্ণ হুননি। শীলাচল-বৃন্দাবনের যে-সব বিদগ্ধ প্রেমিক খু'টিয়ে
গৌর-লীল। অধ্যয়ন করলেন তার! নবছীপ-পরিকরদের দর্শনের উপর ভিত্তি
ক'রেই পূর্ণাঙ্গ রাঁধাভাবান্বিত কৃষ্ণদর্শন গড়ে তুললেন। এ দুই রীতির
দর্শনে মৌলিক পার্থক্য কিছু নেই। ঘিতীয়টি প্রথমটির উপর নির্ভরশীল
এবং পরিপুরকভাবে স্বভাবতই গড়ে উঠল। ফলে কেউ ভগবান্-বোধে
১২৭ বৈষবস্রস-গ্রকাশ
গৌন্নবিগ্রহের আরাধনা! করতে লাগলেন, আবার কেউ নবহ্বীপলীলার চেয়ে
ব্রজলীলাতেই বেশি আসক্ত হলেন।* কবিকর্ণপূর যদিচ পিতৃ-এতিহা অনুসরণ
ক'রে গৌরভজনেই নিরত ছিলেন এমন মনে কর] যায়, তবু তিনি এ
বিষয়ে সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক অভিমত পোষণ করতেন না এবং এর সমাধানের
ইঙ্গিতও তিনি তার নাটকে দিয়েছেন। চৈতন্তচন্দ্রোদয়ের দ্ধিতীয়াঙ্কে গৌর-
রূপ এবং শ্তামবূপ বিষয়ে অছৈতের সংশয়ে নাট্যকার তদানীস্তন “মহামহিমশ-
দের উপলব্ধিই ব্যক্ত করলেন--গৌর এবং শ্ঠাম অভিন্ন, লীলায় রূপভে্ব
এবং ভাবভেদ মাত্র । উপান্য শ্যাম এবং গৌর ছুই-ই হ'তে পারে, অহেতুকী
প্রীতি যদি আকর্ষণের হেতু হয়্। চরিতাম্বতে দেখা যায়, রায় রামানন্দ
শ্রীচৈতন্যের মধ্যে রাধান্বরূপাবুত শ্তামকে লক্ষ্য ক'রে সংশয়ী হয়ে মহাগ্রতৃকেই
জিজ্ঞাসা করছেন £
পহিলে দেখিলু' তোম। সন্ন্যাসী-স্বরূপ।
এবে তোম। দেখে মুঞ্ডি শ্যাম গোপরূপ ॥
তোমার সন্মুখে দেখে কাঞ্চন-পাঞ্চালিকা।
তার গৌরকান্ত্যে তোমার সর্ব অঙ্গ ঢাক1॥
রামানন্দ লীলাশুকের মতো মাধুর্ধ-সিন্ধু গোপকৃষ্ণের উপাসক হ'লেও শুদ্ধসথ্যে
চৈতন্যোপাসকও ছিলেন (“পুরীর বাৎসল্য মুখ্য, রামানন্দের শুদ্ধ সখ্য” )।
সার্বভৌম ভট্টাচার্য নীলাচললীলা-তত্বজ্ঞ হয়েও সম্ভবতঃ গৌবভজনেই আমক্ত
ছিলেন। স্বরূপদামোদর মহাপ্রভুর অতি প্রিয় এবং মুখ্যলীলাসঙ্গী হ'লেও
সম্ভবতঃ রাধাভাবান্বিত কৃষ্ণরূপেই তিনি অঙ্থরক্ত ছিলেন। সনাতন-রূপ-জীব
গোস্বামী কৃত বিভিন্ন গ্রন্থের মঙ্গলাচরণে এবং ন্তবাদিতে গৌরাঙ্গের ভগবত
পুনংপুন কীর্তন করা হয়েছে, তবু তার ভাগবতপ্রতিপাগ্ভ রাসরমিক রুষের
লীলাঁতেই সম্ভবতঃ নিহিতচিত্ত ছিলেন। শ্রীচৈতন্তের দ্বারা অন্ুপ্রেরিত
হওয়ার পূর্বেই রূপ-সনাতন ভাগবতধর্মী ছিলেন। তখন লনাতন লিখনে
কিছু প্রকাশ করেননি, কিন্তু রূপ রচন! করেছিলেন অন্ততঃ "হংসদূত” এবং
'উদ্ধবসন্দেশ' | শ্রীচৈতন্য এ'দের এঁতিহা এবং মানদিকতা উপলব্ধি ক'রে
* তবু মহাপ্রভুর জীবৎকালে গৌরবিগ্রহের পু প্রারন্ধ হয়েছিল একথাও মনে কর! যায় ন।।
মুরা র গুপ্তের কড়চার যে অংশে বিঞুপ্রিয়! দেবী কর্তৃক এবং অন্থিকা-কালনার গৌরীদাস পশ্তিত
কর্তৃক গৌরবিগ্রঃ স্থাপনের তথা পাওয়া যায় পে অংশ 1নঃসন্দেহে প্রক্ষিপ্ত।
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১২১
কৃষণলীলা-ব্যাখ্যানেই এদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বস্ততঃ এই রাধাভাববিগ্র্
ষখনই অবকাশ পেয়েছেন তখনই “গোপবেশ বেখুকর নবকিশোর নটবর*
কৃষ্ণের আরাঁধনারই প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেছেন। শ্রি্ুতের 'রথুপতি
উপাধ্যায়ের চৈতন্ত-সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গ ( চৈ-চ, মধ্যলীলা দ্রঃ) অন্য বহু দৃষ্ান্তের
একতম--
প্রভু কহে উপাধ্যায় শ্রেষ্ট মান কায়।
ঠামমেব পরং দপং কহে উপাধায় ॥
শ্যামরূপের বাসস্থান শ্রেষ্ঠ মান কায়।
পুরী মধুপুরী বরা কহে উপাধ্যায় ॥
বাল্য পৌগপ্ড কৈশোর শ্রেষ্ঠ মান কায়।
বয়; কৈশোরকং ধ্যেয়ং কহে উপাধ্যায় ॥
রসগণ মধ্যে তুমি শ্রেষ্ঠ মান কায়।
আগ্য এব পরে! রসঃ কহে উপাধ্যায় ॥
প্রভূ কহে ভাল তত্ব শিখাইল! মোরে।
এত বলি শ্লোক পড়ে গদ্গদন্বরে ॥
শ্রীচৈতন্যের সর্বাধিক গৌরবের পাত্র ঠাকুর হরিদাস উচ্চকঠে কোন্ প্রিয়-
নাম কীঙ্ডন করতেন এবং তাঁর অভিলাষই বাকী ছিল? দেখা যায়, চৈতন্ত-
নাম নয়, হরিনাম, এবং অন্ততঃ অছৈত-চৈতন্য সংঘর্গে এসে তার অভিলাষ
জন্মেছিল-“নামের ফলে কৃষ্ণপদে প্রেম উপজয়ে'। নিজনাম গ্রহণ করায়
শ্রীচৈতন্য কি রকম বিক্ষুব্ধ হতেন তার পরিচয়ও চরতামুতে রয়েছে :
একদিন শ্রীবাপাদি যত ভক্তগণ।
মহাপ্রভুর গুণ গাঁঞা। করেন কীর্তন ॥
শুনি ভক্তগণে কহেন সক্রোধ বচনে।
কৃষ্ণনাম গুণ ছাড়ি কি কর কীর্তনে ॥
ওদ্ধত্য করিতে হৈল সভাকার মন।
স্বতন্ত্র হইন্মা সভে নাশাবে ভুবন ॥
এ-বিবরণ অবিশ্বাস্য হ'তে পারে না। প্রবীণ সার্বভৌম ভট্টাচার্যের ছুই গ্লোকে
চৈতন্যত্ততি তিনি ছিড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। অথচ এই শ্রীচৈতন্তই প্রথম
ভাবাবেশ সময়ে নবদ্বীপে অছৈতাচার্য প্রমুখ প্রবীণ ভক্তদের মস্ত্রোচ্চারণে
নিয়মিত পূজা স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু সে একদিন, আর সন্যাস
১২২ বৈষ্ব-রস্প্রকাশ
গ্রহণের পর এ আর একদিন। হিসেবে দেখ! যায়, রায় রামানন্দের পর
স্বব্ূপের অভিমনতই মহাপ্রভুর একাস্ত সমাদরযোগ্য ছিব্ী। এবং তিনি ষে
তার অশেষ প্সেহভাঁজন রঘুনাথ দ্বাসকে ম্বরূপের নিকট সমর্পণ করেছিলেন
তা অর্থহীন নয়। নবলগীপের পরিকরদের অনেককেই মহাপ্রভু গৌর-
আরাধনা থেকে নিরন্ত করতে পারেননি । নরহরি বাস্থদেবার্দি মমতাধিক্য-
বশতঃ যে পথ ধরেছিলেন তা থেকে নিরস্ত করা সহজও ছিল না।
মুরারিকে রামভক্তি থোক নিরম্ত করার ইচ্ছাও মহাপ্রভুর ছিল না।
কিন্ত নিত্যানন্দের সঙ্গে মহীপ্রভূ যথার্থই পেরে ওঠেননি। তিনিই
বাঙ্লাদেশে জাঁতিকুল নিবিচারে সকলকে গৌরহরি নাম গ্রহণ করিয়েছিলেন ।
ফলত: এই দাড়াল যে, একালের বাঁঙ্লায় লিখিত পদ্দে, চরিতাখ্যানে
এবং আরাধনায় কুষ্ন্বরূপ গৌরই কিছুকাল পর্যস্ত কীতিত হ'তে থাঁকলেন
এবং নীলাচল-বুন্দাবনে অধিকতর চমৎকার স্থক্বৈদগ্ধ্যপূর্ণ রাধাভাবাদ্বিত
কুষই প্রচারিত হ'লেন। ক্রমশঃ স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয় অনুভব প্রথমটিকে
সমাচ্ছন্ন ক'রে বাঙ্লায় সর্বত্র গৃহীত হয়। কিন্তু তা ষোড়শ শতকের
সপ্তম দশকের আগে নয়। মহাপ্রভুর তিরোধানের পর মথুর1-বৃন্দাবনের
সঙ্গে বাঙলার সংযোগ দৃঢতর হ'তে থাকে। বাঙলার বর্ষীয়ান মহাস্তেরা
স্বাভাবিকভাবেই পূর্ণাঙ্গ লীলাঁবারদের অভিমুরখখীন হয়ে নীলাচল-বৃন্দাবনের
অভিমতের সমাদর করতে থাকেন। এ প্রসঙ্গে নরহরি সরকার রচিত
চৈতন্যের নবধ্ধীপ-লীলার পদের সঙ্গে নীলাচস-লীলার পদ্দের পার্থক্য
প্ররণীয়। অধৈত-নিত্যানন্দের অপ্রকটের পর বাঙলার বৈষ্ঞব সম্প্রদায়ের
নেতৃত্ব আংশিকভাবে শ্রীথণ্ডে চালিত হয়। «গৌর-নাগর” ভাবের প্রবর্তক
বিখ্যাত নরহরি সরকার ঠাঁকুর এবং তার ভ্রাতুদ্পুত্রও শ্রীচৈতন্যের নিতান্ত
প্রিয় রঘুনন্দন উদ্যোগী হয়ে শ্রীনিবাস আচার্যকে বৃন্দাবনে অধ্যয়ন করার
জন্য পাঠান । জাহৃব1। ঠাকুরাণী, বীরভত্র, অচ্যুতানন্দ প্রভৃতিরও বুন্দাবনের
সুষ্্রতত্বসমূহ জানবার আগ্রহ কম ছিল না। বুন্দাবন-প্রত্যাগত ঠাকুর
নরোভমের বিগ্রহ-প্রতিষ্টা-উৎসবে জাহ্ৃবাদেবীর আহ্কৃল্য সকলের জান।
এ লময়েই কবিশ্রেষ্ঠ গোবিন্দ্াসের পদদে রূপ-প্রবতিত নূতন ও স্ৃঙ
বৈদগ্ক্যের সন্নিবেশকে সকলেই অভিনন্দিত ক্রেছেন।
বলা হয়েছে, চৈডস্যভাগবতকার বৃন্দাবনদাস যখন তার গ্রস্থ লমাপ্ত
করেন ( আছ্ধানিক ১৫৫* থ্রী: ) তখন ম্বরপ-দামোদর-প্রমুখ নীঙগীচল-
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১২৩
বাসীদের অভিমত এবং সেইসঙ্গে সনাতন-রূপের কিছু কিছু অভিমত
নিশ্চয়ই নব্ধীপে এসে পৌছেছিল ; সেক্ষেত্রে বৃন্দাবন এ নৃতন অভিমত
সম্পর্কে নীরব রইলেন কেন? এবিষয়ে আমাদের বক্তব্য এই যে,
রূপ-সনাতনের ভক্তি ও রসশান্ত্রে অভিনিবেশ নবহ্ীপবাসীদের কর্ণগোচব
হ'লেও তখনও ঠিকমত জানবার কথা নয়। আর ্ব্বপ-দামোদরের
সিদ্ধাস্ত হয়তো মহাপ্রভুর লীলার শেষের দিকে অদ্বৈত-মূরারি-শিবানন্দের
গোচর হয়েছিল, কিন্তু তা সাধারণ্যে প্রচারিত হয়মি। শ্রীপাদ নিত্যানম্দ
জানলেও এসব গ্রাহ্হ করতেন না। স্ব-ভাবেই মত্ত থাকতেন। কবিকর্ণপূর
তো তখনও বালক। আর মুরারি সম্ভবতঃ সংস্কৃত জীবনীতে মহাপ্রভুর
নীলাচল-অবস্থানের প্রথম দিক্ পর্যস্ত বর্ণনা করেছেন। এ জীবনীর
তৃতীয়ার্ধ ও চতুর্থ প্রক্রম মুরারির কিন! সন্দেহ। মহাপ্রভুর তিরোধানের
স্বল্প পরেই হ্বরূপ-দামোদর তিবোহিত হন। রঘুনাথদাস গোস্বামী, যিনি
তার সিদ্ধান্ত ও লীলা-কড়চা কণস্থ করেছিলন, তিনিও বুন্দাবনপ্রয়াণ
করেন। ফলতঃ অস্ত্যলীল লেখার -সময় বৃন্দাবনদাস মহাপ্রভুর রসরাজ-
মহাভাবত্ব কানে শুমলেও সম্যক না জানায় গ্রন্থমধ্যে স্থান দিতে পারেননি ।
দেখা যায়, মহাপ্রভূর সন্ন্যাস গ্রহণ ও নীল'চল যাত্র। পর্যস্ত ঘটন। বৃন্দাবন
যেরকম মনগ্রাণ দিয়ে প্রকাশ করেছেন অন্ত্যলীল। লেরকম পারেননি ।
অস্তালীলার ঘটনার বর্ণনায় তার গ্রন্থে নানান অসংগতিও লক্ষ্য করা
যায়। এরকম ক্ষেত্রে নীলাচল-বুন্দাবনের নোতুন মত বুন্দাবনদাস
অধিগত ক'বেও তার গ্রন্থমধ্যে স্থান দেননি এ অভিযোগ যথার্থ নয়।
লোচনদ্বাসের চৈতগ্যমঙ্গল যে রীতির গ্রন্থ তাতে ইতিবৃত্ত রক্ষা বা
তত্বরসের কোনে বৈদগ্ধা তার কাছে প্রত্তাশাই করা যায় না। নীলাচল-
বৃন্দাবনের রাধাভাবিত-কুষ্ণ মত শ্রীনিবাস-নরোত্তমের বৃন্দাবন গমনের পূর্বে
বাঙ্লায় প্রতিষ্ঠিত হওয়। সম্ভবপর ছিল না। বিশেষতঃ কষ্পাস-কবিরাজের
চরিতামৃত গ্রন্থের প্রচারের পূর্বে নয়। এরপর থেকে বাঙলার আচগাঁল-
দ্বিজ বৈষ্ব-সমীজ মোটামুটি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। এক, শিক্ষার্দীক্ষাহীন
বৈষবজন ধার নিত্যানন্দ-বীরচন্দ্র প্রচারিত সহজ প্রেমভক্তিকে ধরে রইলেন,
আর এক, ধার শিক্ষার আভিজাত্যসম্পর, নব গোম্বামী-শানিত
বাদাহবাদনিষ্ঠ পণ্ডিত-ভক্ত, শান্সাধ্যায়ী ও কবিসমাজ। উভয়পক্ষের
যৎংকিঞিং যোগাযোগ অবশ্ঠ অনুমেয় ।
১২৪ বৈষব-রস-প্রকাশ
উপরিলিখিত বিবরণ থেকে সহজেই উপলব্ধ হবে যে, নবহ্বীপ নীলাচল
বন্দাবনে এই নবলোকধর্মের উদ্গাত। সম্পর্কে স্বপ্পভিন্নরীতির ধারণা যোড়শ
শতকের মাঝামাঝি প্রচলিত থাকলেও তা এমন প্রকট ও সাম্প্রদায়িক
হয়ে ওঠেনি যাতে মহাস্ত ও ভক্তদের মধ্যে বিদ্বেষ মনোমালিন্য ঘটে।
অথচ ইতিবৃত্তাশ্রয়ী আধুনিক কোনো কোনে বিচারক জীবনী ও
তত্বগ্রন্থের উল্লেখাদ্ির বিচার ক'রে নবদ্বীপ-বৃন্দাবনের মধ্যে বিভেদ ও
বিদ্বেষের বীজ দেখতে পেয়েছেন। আমরা পূর্বেই 'পদ্ভাবলী"র ভৃমিক।
থেকে ডঃ স্থশীলকুমার দে-র অভিমত উদ্ধার করেছি। বিষয়টিকে আরও
বিস্তৃত ক'রে তিনি দেখেছেন 819022 7810) 20৫ 11056109171 গ্রন্থে ।
এর পঞ্চম অধ্যায়ে তিনি বলছেন £
70011065005 ৬ 110092109 093৬2101109), 006৮ 1916
€0119118758) 25 018 ০0611016 ০ 61617 11100051) 2170. 102011011,
8100 16958101117) 29 6176 171151755 1681165 200 01996 ০91
৪8001811011 ০1 [11611 19101), 1101)19 195 05610. 070818016511590 93
« [116 090721081810/9-৬ 2508), ৮/11101) 0116 ৬1111099109, 03093%81011118
1196] ৫1501199 ০1 96 10111) 11) 11061] 0)991951091 £5201999.
হু 009 9595 01 006 0010661701909121% 90171995619 ০1 19098 ০1
(01191091058 007 111502006) (01081621198 15 15115109, 111709911 %/1)0
10 1019 19001160610) 107 ড11009%209) 1017)99 01 1২801)9,
1759 21509 06116%6 11) 0109 7২80108 13178৬8 01 00179112059 89
0০৮) %71509. 8100 180119 17) 0105 76190191115. [1165 ৫০
101) 110%/0$01, 09010810617 1 11609955815 6০0 150098 6116
00691011) ৮] (810 1 89 8179809 69191151)60. 099 4১000179858
07 106150119] 95009119109. 19191191200 113 ৫19011)19
7,00199119) 1)05/661) 06০10] ৪ 0901109 ০? 00919-1788918-
1010858 117 আ1)101) 016 09019 (1) 0106 796517058, ৪5) 1989109
(01181191799 85 0179 [56915 2100 11105611925 2 88918. 8৮1
0715 0000100 15961599 11615 07901 10 076 ০01011090%.
01:9195..."*"ইত্যাদি |
এই অভিমতের প্রতিধ্বনি ক'রে ডঃ বিমানবিহারী মজুষদার তার শ্রীচৈতন্-
গোঁড়ীয় বৈষ্ববধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১২৫
চরিতের উপাদান গ্রন্থে একেবারে স্পষ্ট অভিমত প্রকাঁশ করেছেন--
*“গোঁড়মগ্ুলে একপ্রকার মতবাদ এবং বৃন্দাবনমণ্ডলে অন্তগ্রকার মতবাদ
স্থাপিত হইয়াছিল।” এবং “বুম্াবনে ও গোঁড়দেশে উখিত ছুই মতবাদে
শ্রীচৈতন্যের স্থান সম্বন্ধে বলা যাইতে পারে যে, বৃন্দাবনের গোস্বামীদের
নিকট গৌরাঙ্গ হইতেছেন উপার়মাত্র (2068109 €09 ৪ 90) আর
গৌড়ে উথিত মতবাদে তিনি স্বয়ং উপেয় (60৫ 10 1361 )”% এই
দ্বিতীয় বিবৃতিটিই অভিযোগ হিসাবে গুরুতর এবং শ্রীচৈতন্যের জীবৎকালে
তার প্রত্যক্ষেই এরকম দ্বান্িক মত প্রচলিত হয়েছিল এই ইঙ্গিতে
প্রকারাস্তরে তার প্রতিও কটাক্ষ*কর৷ হয়েছে । কিন্তু আগে ডঃ দে-র
প্রথম বক্তব্য পরীক্ষা ক'রে দেখা যাক। তিনি বলছেন, নবদীপের
পরিকরবৃন্দের মধ্যে কোনো স্থসংগ্রথিত মতবাদ গড়ে ওঠেনি। তাল৷
নিজ অন্তর দিয়ে শ্রীগৌর বিষয়ে যে-যে ধারণায় উপস্থিত হয়েছিলেন
তা-ই ব্যক্ত করেছেন। নরহরি ও তৎশিষ্য লোচন যে-পথে গেছেন,
শ্রীবাস, মুরারি, অদ্বৈত, নিত্যানন্দ সে পথে যাননি। নরহরি সরকার
বিরচিত পর্দে যেমন গৌর-নাগর ভাব দেখ! যায়, তেমনি গোঁপীভাব বা
রাঁধাভাবের পরিচয়ও পাওয়া যায়। আবার কবিকর্ণপূর তার চৈতন্য-
চরিতামূত মহাকাব্যে চৈতন্তজীবন যেমনভাবে বর্ণনা করেছেন, নাটকে ঠিক
তেমনভাবে করেননি । অথচ একটি বিষয়ে এ'রা সকলেই একমত যে,
শ্রীচৈতন্ত কলিযুগে আবিভূ্ত কৃষ্ণ ছাড়া আর কিছুই নন। নরহরি-
বাস্থদেব যখন গৌরাঙ্গকৈ নাগরদ্ধপে এবং নবদ্বীপবাসীদের নাগরীবরূপে
বর্ণনা করছেন তখনও গৌরাঙ্গে ভাঁগবতের কুষ্কত্ব উপলব্ধি করেই তাঁর!
তা করেছেন, আবার যখন সন্্যাসী গৌরাঙ্গের কৃষ্ণসঙ্গপ্রাপ্তির ব্যাকুলতা
বর্ণনা করেছেন তখনও কৃষ্ণবোধেই করেছেন; রাধাভাব-অবলম্বনকারী
কৃষ্ণবোধে এই যা তফাৎ। কিন্তু তাহ'লে রূপ-শ্বরূপ-রঘুনাথদাসের সঙ্গে
কতু০ 10 03636 09৫98, 2৪ 10 0১৩ 10765 ০1 :91090768 9101) 46756 0৩1৮ 50801580090
£008 075 ব8৮৪৮198 ০1:06, 2০৭ 0০ 91101) 01550 1555 2 080015] 56005105 00 20500555
2১6০1০৪7 95001651175 9120015 500 085310002106 68107 00 0500 05155055 150906 20
10595 ০1 0১615 80015206061) 8৩৫ 05 0510 [20561 120500963) 00002 0068055 596
80 604 10 106511
5, 8৩১ 106--৬৪1808 1791018 & 11০56510606,
১২৬ বৈফব-রস-প্রকাশ
এদের পার্থক্য কোথায়? যদি বলা যায়, নবহ্বীপ-পরিকরদের নহুজ
উপলব্ধি ছিল ( 45100015 200. 79951011816? ), স্বরূপ-রূপের তা ছিল ন।,
তাহলে নে তে অত্যন্ত বিপজ্জনক অথবা খামখেয়ালী মন্তব্যে দ্াড়ায়।
এর প্রমাণই বা কী, খন বরূপ-সনাতন-জীব তাদের শতাধিক বন্দনায়
এবং অন্যপ্রকারেও শ্রীচৈতন্তকে ভগবান্ বলেই বিবৃত করেছেন? আবার
এই ছুই মতবাদীদের একজনকে বলতে দেখা যাচ্ছে--“ভাবের দিক দিয়া
দেখিতে গেলে বিরহ-কাতরা শ্রীরাধার সহিত শ্রীচেতন্যের সাদৃশ্য হুষ্পষ্ট।
এই হিসাবে ম্বরূপ-দামোদর যে প্রকারে শ্রচৈতন্যের তত্ব নিরূপণ
করিয়াছিলেন এবং বৃন্দাবনের গোম্বামীগণের রচিত সাহিত্যে যাহ।
প্রচারিত হইয়াছিল ভাহার সহিত এতভিহাসিক চৈতন্যের অনেকট। মিল
আছে” ( চৈ-উপাঃ)। তাহ*লে তেো৷ গোল চুকেই গেল। তাস্ছলে আর
লেখক তার্দের উন্ভাবিত গৌর-পারম্যবাদ্দর দোহাই দিয়ে কবিকর্ণপুরের
“গোস্বামী” না হওয়ার জন্ত আক্ষেপ করেন কেন?_-পবুন্দাবনের বৈষণবের।
যে ছয়-গোস্বামী নিরূপণ করিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে কবিকর্ণপূর
মহাপ্রতৃর সাক্ষাৎ কৃপাপাত্র হইয়াও এবং অতগুলি গ্রন্থ লিখিয়াও স্থান
পাইলেন ন]; অথচ শ্রীীবগোস্বামী শ্রীচৈতন্তের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে না আসিয়।
এবং রঘুনাথ ভট্ট কোনো গ্রন্থ না লিখিয়াও স্থান পাইলেন।” কিন্তু
"গৌর-পারম্য” শব্ের অর্থ কি? এতে কি এই বাধিত করে যে, কৃফ-
সম্পর্কহীন গৌরই স্বয়ং ভগবান? ডঃ হ্থশলকুমার শুধু সাশ্প্রদায়িকতারই
আভাস দিয়েছেন, ভিতরে প্রবেশ ক'রে ব্যাখ্যা! করার প্রয়োজনবোধ
করেননি । ভেবে দেখেননি যে, কোনে ভক্ত “রসরাজ মহাভাব ছুই এক রূপ”
প্রত্যক্ষ করেও ভজনের জন্য গৌরবি গ্রহকে শ্বচ্ছন্দে অবলম্বন করতে পারেন
ডঃ বিষানবিহারী বলছেন “শিবানন্দ সেন, নরহরি সরকার ও সম্ভবতঃ
মুরারি গৌরমন্ত্র-দ্বারা রাধাকুষের সম্মিলিত রূপ গৌরাঙ্গেরই উপাসন।
প্রবর্তন করেন।” রক্ষ। করেছেন, ভাগ্যিস বলেননি যে, কৃষ্ণ-সম্পর্কহীন
গৌরেরই ভজন করেছেন দ্বিতীয় ন্বয়ং-ভগবান্ হিসাবে ! কিন্ত ওকথার
কোনো প্রমাণ নেই, নরহর শিবানন্দ গোৌরবিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেননি।
আদলে এ হ'ল ভজন-সাধমের ব্যাপার, “যে যথা মাং প্রপদ্ভযন্তে”। যেমন
একজন বনু পরবর্তী পর্দকার বলছেন প্যার মনে লেগেছে যারে ভারা
ভজুক তারে গে, মোর মনে লেগেছে ভালে! শচীর ছুলাল গোরা গো ।”
গৌড়ীয় বৈষবধর্মের দার্শনিক গ্রতিষ্ঠ। ১২৭
"সব নিয়ে ইতিবুত্বের কার্-কারণের কোনো যোগ নেই। একথা
'কোনোমতেই মনে করা যাক্স না যে নরহরি, শিবানম্দ, মুরারি মহাভাব-
ব্যাকুলিত প্রত্যক্ষ কৃষ্ণের ধারণার উপর বিতৃষ্ণচ ছিলেন। তারপর এ
গৌর-নাগর ভাঁব। এর ভিতি যদি বৃন্দাবনের নটবর কৃষ্ণের উপর ন৷ হয়
তাহলে এর কোনো অর্থই হয় না। গয়া-গ্রত্যাগত বিশ্বস্ভরের নৃত্য-
কীর্তনাদি-সমন্বিত ভাবাবেশ ও পুষ্পমালাঢ্য টাচরচিকুর শ্থুশোভিত নবীন
রূপ ভাগবত-গীতগোবিন্দ-চণ্ডীদাস-পদাবলীর পাঠক ভক্তের মুগ্ধ দৃষ্টিতে
গোগীচিত্বার্ষক কৃষের ব'লে প্রতিভাত হুওয়াতেই গৌর-নাগর ভাবের
বর্ণনা । রাধামোহনঠাকুর এইজন্তই নরহরি-লোচন-বাস্থঘোষের পদকে
“ভাব-বিতর্ক' বলে এর যথাযথ যূল্যায়ন করেছেন। বুন্দাবনদাপ এর সপক্ষত।
করেননি, কারণ, ব্যাপারটি এতিহামিক বান্তব নয়। লোচনদাস যে
করেছেন তার কারণ গুক্ নরহরির নিবিচার অস্তুসরণ এবং এঁতিহামিক
দৃষ্টির অভাব, ভাবকল্পনার প্রাবল্য। তবু গৌরনাগর-ভাবনাকেও অস্তঃকৃফ-
বহির্গে রত্ব থেকে সম্পুর্ণ পথকৃ কর! যায় না।
এ'রা ধারা চৈতন্তজীবনী এবং জীবনীগ্রস্থসমূহের উপর ইতিহাসের দৃষ্টি
নিক্ষেপ ক'রে ছোটখাট বিরুদ্ধতা এবং অসংগতির সমন্বয় সাধন না করতে
পেরে নানান্ জন্ননা-কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন, তারা৷ কলহু-সমাচ্ছন্ন বুদ্ধিতে
মাঝে মাঝে কিরকম ভ্রম-গ্রমাদদ ক'রে ফেলেন তার দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। “$81519%2
চ910) & 1100101606৮ গ্রন্থে চৈতন্ত-জীবনের উপকরণ সংগ্রহে নিরত
লেখক বলেছেন ;
%/85005৬9, 1091015 01721691799 25 ৪ ৫6৬০0 1001501) 6৬910 1011
1015 0110) 3 900. 1105 বি 21810211 2100. 90106 00167 7১902-5/110919১ 116
09115565 10 1190 1২20178-01156, 01 076 01791021095, 1119811090191) 8,
00০0106, 11101) 19 190100 1000960 1 016 9/010185 ০? 009৬2110105
8100 10 1116 [২2191081009 2 €015006 ৫69৪০:199৫ 069 1119780939
75৬1812,) ৮০৮ 0101) 1005 1085 09010 8. 00592 01 21) 6811161
[29019 ০071810.” এর পাদটাকায় উদাহরণ দেওয়! হয়েছে £
নরহুরি : গৌরাঙ্গ ঠেকিলী পাঁকে। ভাবের আবেশে রাধা রাঁধ! বলি
ডাকে ॥ বাস্থর্দেব * আরে যোর গোরা দ্বিজমণি। রাঁধ। রাধা বলি কাছে
১২৮ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
লোটায় ধরণী ॥ শিবানন্দ সেন : রাধা রাধা! বলি পু পড়ে মূরছিয়! ।
শিবানন্দ কাদে পর ভাব না বুঝিয়া ॥
পাঠক বিচার করুন, একে কি “রাধাভাব” বলে? না এ কষ্জভাব?
অবস্ত রাঁধাসঘবস্বীয় ভাব এমন মধ্যপদলোপী সমাসের কষ্টকল্পনা করলে
প্রযুক্ত রাধাঁভাবের অর্থ হ'তে পাঁরে। কিন্তু মনে রাঁখতে হবে, "রাধার ভাব”
এই অর্থেই শব্ঘটি পারিভাষিক হয়ে পড়েছে, খুশিমত ব্যাখা] করার কারো!
অধিকার নেই। এ গ্রন্থকারের ব্যাখ্যানের সঙ্গে প্রীচৈতন্তচরিতের উপাদানের
্রস্থকারের অভিমতের সাদৃশ্য লক্ষণীয়। ইনি কুষ্ণভাবকে রাধাভাব ব'লে
বিষয়টিকে গোলমেলে করেননি, কিন্তু নীলাচল ও বৃন্দাবনের গোস্বামীদের
উপলব্ধির মহিমা খর্ব করতে বদ্ধপরিকর হয়ে শ্রীব্প লিখিত চৈতন্যাষ্টকের
রাধাভাবাবস্থার সঙ্গে সরকার ঠাকুর রচিত পদের কৃষ্ণভাবাঁবেশের এক্য
নির্ধারণ করেছেন। কারণ বৃন্দাবন-ম্মরণের কথা ছুয়েতেই আছে। ব্যঞুন।
এই যে, সরকার ঠাকুরের রচনা অবলম্বনেই বূপগোশ্বামী লিখেছেন । যেমন-_
“গৌরাঙ্গ ঠেকিলা পাকে ।
ভাবের আবেশে রাধা রাধা বলি ভাকে ॥
স্থরধূনী দেখি পু যমুনায় ভ্রমে।
ফুলবন দেখি বুন্দাবন পডে মনে ॥
পূরব আবেশেতে ত্রিভঙ্গ হইয়! রহে।
পীতবসন আর সে মুরলী চাহে ॥:"*ইত্যাদি।
-**শ্রীবপ গোস্বামীর শ্রীচৈতন্যা্ইকে প্রভুর নীলাচলের সমুদ্রতীরস্থ উপবন
দেখিয়া বৃন্দাবন মনে পড়ার কথ। আছে-_
পয়োরাশেস্তীরে স্ফুরহুপবনালিকলনয়।
মুহুবৃন্দারণ্য-ম্মরণজনিত-প্রেমবিবশঃ |
কচিৎ কৃষ্তাবৃত্তিপ্রবলরসনে। ভক্তিরসিকঃ
স চৈতন্যঃ কিং মে পুন্রপি দৃশোর্যান্ততি পদ্ম্ ॥
“*নরহরি সরকার ও শ্রীরূপ শ্রীচৈতন্ের একই রূপ ভাবাবেশে (1) ভ্রম
বর্ণনা করিয়াছেন ”
্বমতের পোষকতা করতে গিয়ে এরকম অনেক বিষয় তিনি তার বিখ্যাত
“উপাদানে” কৌশলে সজ্জিত করেছেন যাতে নীলাচল-বৃন্দাবন-1:81102
এবং গ্রস্থরচনাদি পাঠকের কাছে যথার্থই কৃত্রিম ও স্বল্পমূল্য প্রতিভাত হয়।
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১২৯
তিনি নিশ্চিত বুঝেছেন যে গৌর-নাগরভাব-বিষয়ে প্দরচনা করেছিলেন
বলেই মুরারি, কবিকর্ণপূর এবং বুন্দাবনদাস নরহরির উল্লেখ করেননি !
নরহরির নবদ্বীপ-লীলাপরিকর হিসাবে অবিসংবাদিত প্রাধান্যের প্রমাণ
তাকে সংগ্রহ করতে হয়েছে ভক্তিরত্বাকরে উদ্ধত শিবানন্দ সেন, গোবিন্দ
ঘোষ প্রভৃতির ভণিতা-দেওয়া পদ থেকে । তার ষতে চরিতাম্বতকার কবি
কর্ণপুরের মহাকাব্য ও নাটক থেকে মহাপ্রভূ-রামানন্দ সাক্ষাৎকার হুবন্ু
অনুবাদ করেছেন, অথচ কর্ণপূরের কাছে খণের কথা চেপে গেছেন। যেন
রামানন্দ রায় থেকে স্বরূপ-দামোদর, রঘুনাথদাস এবং তীার্দের থেকে
কবিরাজ গোস্বামীর জানা সম্ভবই ছিল না। কবিকর্ণপূর যে শিবানন্দ-পুত্র,
আর সব তথ্যের ভাগার তে। শিবানন্দের হাতেই ছিল ! আরও দেখ যায়,
জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গলকে একখানি পুরাপুরি অনৈতিহাসিক গ্রন্থ এবং
গোবিন্দদ্াসের কড়চাকে কান্লনিক স্য্টি জ্ঞান ক'রেও লেখক শ্বমতের
পরিপুষ্টির জন্য এদের থেকে প্রমাণ সংগ্রহ কব্তে একটুও দ্বিধা করছেন
না। আবার উপযুক্ত প্রমাণ ছাড! গৌরগণোদ্দেশদীপিকা এবং মুরারির
কডচার সর্বাংশই তিনি সত্য মনে করেন। মুরারি যে শ্রীচৈতন্যের
তিরোভাবের পর সংস্কৃত চরিতামৃত লেখেন তা তিনি যখন ধরে নিচ্ছেন
তখন আর কথা কী? কিন্তু “উপাদানের লেখক চরিতগ্রন্থগুলির
তথ্যস্থাপনে ও বর্ণনায় যথার্থ কতকগুলি বৈষম্য দেখিয়েছেন, হয়ত বা।
এইগুলির উপর ভিত্তি করেই নবদ্বীপ এঁতিহের সঙ্গে নীলাচল-বুন্দাবন
এতিহোর তিনি বিরোধ অন্থমান কবেছেন এবং সম্ভবতঃ মহতের মতই
ছুর্বল-পক্ষ অবলম্বন করতে চেয়েছেন। তার নিদিষ্ট কয়েকটি বৈষম্য নিয়ে
পূর্বেই আমর। আলোচনা করেছি, কল্পিত তত্ববিরোধ মীমাংসার প্রয়োজনে
আরও দু-একটি বিষয় মস্তব্যসহ উল্লেখ করতে হচ্ছে। তিনি বিরোধ-বৈষম্যকে
অতিশয়িত ক'রে দেখেছেন কিনা এবং অন্যবিধ অনুমান সম্ভব কিন! তা
পাঠকেরাই বিচার করবেন ।
১। কর্ণপূর ম্বরূপ-দানোদরের কড়চার নাম করেন নি, যদিও তার
নাটকে তিনি শ্রীগৌরাঙ্গের মূখ্য লীলাপরিকর হিসেবে স্বরূপ-
দামোদরের উল্লেখ করেছেন।
এবিষয়ে আমাদের বক্তব্য, এই অন্ুল্লেখের ফলে স্বরূপগোস্বামীর রচনা বিশেষ
কিছু ছিল না এমন প্রমাণ হয় না। কৃষ্তদাদ কবিরাজ পুন:পুন লিখেছেন
ঞি
১১৪ বৈষব-রস-প্রকাশ
যে রঘুনাথদাসের কঠ থেকে তিনি এ কড়চায় লিখিত বিষয়সমূহ জেনেছিলেন
এবং তদন্যায়ী অন্তযলীলা লিথেছেন। মহাপ্রভুর অস্তরজ এবং বহিরিঙ্গ
লীল। সম্পর্কে স্বরূপের রচনা, নবছীপলীলা-পরিকরদেরঃ ধারা বর্ষে বধে
আসতেন এবং দু-চার মাস থেকে যেতেন, তাদের তেমন জানার কথ] নয়,
তাই কর্ণপূরও জানেননি। তত্বদৃষ্টির বৈষম্যের জন্য তিনি ম্বরূপের মতের
উল্লেখ করেননি, এ অলীক কল্পন। মাত্র। অথচ, লেখকের মতে, স্বরূপ-
দ্ামোর্দরের পঞ্চতত্ব বিষয়ক অভিমত কর্ণপূর তাঁর গৌরগণোদ্দেশ-দীপিকাক্স
গ্রহণ করেছেন। আবার কর্ণপূর ধার শিষ্য, সেই শ্রীনাথ চক্রবর্তা তার
“চৈতন্যমতমঞ্জুষার মঙ্গলাচরণে “আরাধ্যো ভগবান্ ব্রজেশতনয়ঃ* প্রভৃতি
ব্রজমগ্ডলের মত তে পূর্বেই গ্রহণ করেছেন দেখছি। অবশ্য আমর] সন্দেহ
করি, এই শ্লোকটি চক্রবতীপাদদের নিজের নয়। যাই হোক, সত্য হ'লে
কর্ণপূরের ব্রজ-বিমুখতা। এবং লেখক-উক্ত গৌর-পারম্যবাদ টেকে কী ক'রে?
২। কবিরাজ গোস্বামী কবিকর্ণপূরের সংস্কৃত চরিতাম্বত থেকে কোন
শ্লোক উদ্ধার ধরেননি, “চন্দ্রোদয়” থেকে করলেও প্রমাণ বিষয়ে
যেমন বুন্দাবনদ্দাস, মূরারি গুধ এবং স্বরূপ দামোদরের নাম উল্লেখ
করেছেন, তেমন কবিকর্ণপূরের নাম করেননি-_ ইত্যাদি ।
এবিষয়ে আমাদের বক্তব্য, সংস্কত চরিতামূৃত থেকে তিনি একটি শ্লোক
নিয়েছেন, তার মধ্যলীলার অষ্টাদশ পরিচ্ছেদে, বুন্দাবনে গিয়ে মহাপ্রভু
গোবর্ধন আরোহণ করতে ন1 চাওয়ায় স্বয়ং কৃষ্ণ নেমে এসে তাকে দর্শন
দিলেন এই ঘটনার সমর্থনে । কেবল রূপ-সনাতনের সঙ্গে মহাপ্রভুর মিলন
ঘটনার বর্ণনাতেই নয়, অন্য বহু বিষয়েও তিনি আত্মপক্ষ-সমর্থনে কর্ণপুরের
চৈতন্যচন্দ্রোদয় নাটক থেকে শ্লোক গ্রহণ বকরেছেন। যেমন, গঙ্গায়
যমূনাভ্রমবশতঃ মহাপ্রভুর ষমুনান্তব (মধ্যলীলা, ৩য়)$ সার্বভৌমের সঙ্গে
ব্রদ্ষবিষয়ে বিতর্কে সবিশেষ-ত্রক্ষস্থাপনে শ্লোক ( মধ্যলীলা, ৬ষ্ঠ )১ নীলাচল-
আগত ্ববূপ-দামোদরের চৈতন্যান্তৰ ( মধ্যলীলা, ১ম); সার্বভৌমপপ্রস্তাবিত
প্রতাঁপরুত্রকে দর্শনদান বিষয়ে মহাগ্রভূ কর্তৃক অনৌচিত্য নির্দেশে ছুটি শ্লোক
(মধ্যলীলা, ১১শ); রথুনাগ্দাসের নীলাচলে মহাপ্রভু মিলনে (অস্তালীল। ৬);
এ ছাড়া অধুনা-লুপ্ত কর্ণপূরের আর্ধাশতক-উদ্ধ'ত তার সাত বৎসর বয়সে
রচিত এবং মহাপ্রভুর সামনে উচ্চারিত শ্লোক (অস্ত্যলীলা, ১৬শ)।
স্থৃতরাৎ দেখ। যাচ্ছে কবিরাজ গোম্বামী তাঁর পূর্বগ্রী কবিকর্ণপুরের রচনার
গৌড়ীয় বৈষ্বধ্ষের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৩১
উপব যথেষ্ট শ্রদ্ধা! দেখিয়েছেন। তিনি আদর্িলীলার ও মধ্যের কিয়দংশের
বর্ণনায় বৃন্দাবনদাস ও মুরারির উপর প্রধানভাবে নির্ভর করেছিলেন, যেমন
অন্ত্যলীলার জন্য স্বরূপ-রূপ-রথঘুনাথের উপর, কারণ এ'র। অস্ত্যলীলার
প্রত্যক্ষব্র্ী। এ ছাড়া তিনি আরও নানান্ স্থত্্র থেকে প্রমাণ বা সমর্থন
সংগ্রহ করেছিলেন। সেগুলি গৌণ ব্যাপার বলেই উল্লেখ করেননি কিন্ত
“উপাদ্দানে”র লেখক যেভাবে প্রমাণপঞ্জীতে কর্ণপূরের নাম দাবি করেছেন,
সেরকম প্রমাণপঞ্জী দেওয়ার তিনি প্রয়োজনীয়ত। বোধ করেননি। গ্রস্থপন্ধীর
উল্লেখ আধুনিক রীতি; এটি ভালোও বল! চলে, মন্দও বলা চলে। আর
সকলের নাম করা এবং কাউকে ন! চটানো এটিও আধুনিক গবেষণাব
বৈশিষ্ট্য! সেকালের লেখকের এসব কথ। ভেবে দেখেননি ।
৩। কবিরাজ গোস্বামী প্রবোধানন্দ সরম্বতী-বিরচিত চৈতন্তচন্দ্রামূতের
নামও কবেননি। লেখকের অন্যান এই যে প্রবোধানন্দ্ গৌর-পারম্য-
বাদের ভক্ত ছিলেন ব'লে বুন্দাবনের দল কেউ তার সপক্ষতা। করতে
চান নি।
এবিষয়ে আমাদের বক্তব্য, প্রবোধানন্দের চৈতন্তচন্দ্রান্বত গ্রন্থ সম্বন্ধে কেউ
কিছু জানতেন না, তাই কেউ নাম করেননি ব। উদ্ধৃতি তোলেন নি।
শু কবিরাজ গোস্বামীর উপর দোষারোপ করলে চলবে কেন? গৌর-
গণোদ্দেশদীপিকায় প্রবোধানন্দের গ্রন্থের উল্লেখ আছে, অতএব চন্দ্রামৃত
১৫৭৬ খ্রীস্টাব্ধের পূর্বেই রচিত হলেও এবং গৌরগণোদ্গেশ-দীপিকার
অরুত্রিমতায় সন্দেহ না কর! গেলেও ঠৈতন্যচন্দ্রামৃত স্তবের প্রচার ছিল ন]
এমন মনে করা যায় স্বচ্ছন্দে। আমাদের আরও মনে হয়, অঙ্গরাগবলী-
রচয়িতা মনোহুরানই প্রবোধানন্দের গ্রন্থের প্রচার করেন। তার
দক্ষিণাত্যে য।তাপ়াত ছিল এবং সে অঞ্চলে তার বহু শিশ্ত৪ ছিল।
গ্রবোধানন্দের উপর সাম্প্রদায়িক মত আরোপ করার আগে তার শিষ্য ও
ভ্রাতৃপুত্র অন্যতম গোস্বামী গোপাল ভট্রের কথা চিস্তা করতে হবে। তা
ছাড়া দেখতে হুবে প্রবোধানন্দ কেবল গৌরেরই অর্চনা করেননি, বুন্াবনের
কৃষের সঙ্গে শ্রীচৈতন্যের অভেদ এবং শ্রীচৈতন্যের মধ্যে রাধাকষ্ণ-সশ্মিলিত
বিগ্রহও বারংবার লঙ্গ্য করেছেন। বাহুল্যভয়ে ত। দেখানো৷ গেল না ।
স্থতরাং শ্রীচৈতন্ত সম্পর্কে বাঙল৷ দেশে প্রবতিত প্রাথমিক ধারণার
সঙ্গে নীসাচক্স-বুন্দাবনের স্ক্মতর ও প্রবুদ্ধতর ধারণ।র বর্দি কিছু পার্থক্য
১৩২ বৈষব-রস-প্রকাশ
থাকে তা পরিমাণগত মাত্র, গুণগত নয়। এই নিয়ে কোনে ঘন্ব-বিরোধ
থাকলে জীবনীকার, প্রচারক বা ব্যাখ্যাতারা নিশ্চয়ই তা কোনে! ন।
কোনে! রীতিতে নির্দেশ করতেন। নীলাচল-বুন্দাবনের রাধাভাবান্বিত-কৃষ্ঃ
তত্ব নিঘ্বন্বে সর্বত্র গৃহীত হয়েছিল, তবে কিছু সময় লেগেছিল । ইতিমধ্যে
অদ্বৈত-নিত্যানন্দ-শ্রীবাস-মুরারি-শিবানন্দ-কর্ণপূর তা সম্যকু অনগত হতে
পেরেছিলেন কিন। সন্দেহ। পারলেও ক্ষতি কিছুই অন্থভব করেননি, কারণ,
কল্পিত দু'পক্ষের পার্থক্য সামান্যই । আর আমাদের প্রার্থনা, ধারা উক্ত
বিরোধ সম্পর্কে দৃঢ়মত তারা ইতিহাসাহ্গত প্রমাণ দিন, বিন! প্রমাণে
লোকচিত্তে কোনো সংস্কার গড়ে তোলার প্রয়াম যেন না করেন। আরও
দুঃখের কথা, সাম্প্রতিক কোনো কোনে! সাহিত্য-ইতিবৃত্তকার এরকম
কলহদশী মতবাদ্দকে বিনা-অচ্কসন্ধানে, কেবল অভিনবতার খাতিরে অথব।
গড্ডরিকারীতিতে মেনে নিয়েছেন, যার ফলে ছাত্র ও জিজ্ঞাস্থ সাধারণ
পাঠকের চিত্তে বৈষ্ণব ধর্ম, যুগ ও লোকমান্য সাধকর্দের সম্পর্কে সন্দেহের
উত্তব ঘটেছে। দলগত কলহ বিশেষভাবে আধুনিকের স্বভাব। অপ্রমাণে
এই স্বভাব ত্যাগী বৈরাগী নিষিঞ্চন মান্থ্ষগুলির উপর আরোপ কর!
হয়েছে । গৌড়ীয় বৈষ্ণব দার্শনিক তত্বের আলোচনায় স্বভাবতই উক্ত মত-
প্রসঙ্গ এনে পড়ল ব'লে সে বিষয়ের সমাধান ক'রে আমরা এখন “বৈষ্ণব”
তত্বালোচনায় প্রবৃত্ত হচ্ছি। এবিষয়ে আমাদের প্রয়োজন নির্বাহ করছে
মুখ্যভাবে শ্রীজীবের ষট্দন্দত এবং কবিরাজ গোপ্বামীব চরিতামৃত।
মনে রাখতে হবে_ শষ, জীব অর্থাৎ মাগষ, এবং ঈশ্বর সম্পর্কে তাত্বিক
চিন্তাই হ'ল দর্শন। বন্পূর্বে এই তত্বচিন্তন ভারতবর্ষে উপনিষর্দের যুগে
করা হয়েছিল, অথবা, একথা বলাই ঠিক যে এ সময় 'খষি আখ্যায়
অভিছ্থিত 'প্রতিভাবান্ ব্যক্তির! তাদের প্রজ্ঞানময় বিচিত্র উপলব্ধিসযূহ প্রকাশ
করেছিলেন। সেগুলি পরবর্তাঁ দর্শনের বীজ, কিন্তু ঠিক যননমূলক দর্শন-
পদ্ধতির গঠন নয়। ঈশ, কেন, কঠ প্রভৃতি প্রধান দশ-এগারোটি
উপনিষর্দ যা যা বল! হয়েছে তাতে নানান্ মত ও পথের কথা আছে।
ভারতে প্রথম মননযুলক দার্শনিক চিন্তার সুত্রপাত করেন যজ্ঞকর্মবাদীর।
এবং তারপর সাংখ্যযোগ-চিস্তকেরা। এদের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বৌদছ্
দ্বার্শনিকেরা। তাদের শৃন্ততাবাদ, ক্ষণিকতাবাদ গ্রস্ৃতি প্রসিহ্ধ। বৌদ্ধ,
গৌড়ীয় বৈষবধর্ষের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৩৩
দর্শনে জগংঅষ্টারূপে ঈশ্বরকে স্বীকার কর! হয়নি । অথচ উপনিষণেঘ বনু
মন্ত্রে ঈশ্বরের অস্তিত্বের কথ! বলা হয়েছে । এ ছাড়া ব্যামদেব-বিরচিত বলে
কথিত ব্রঙ্ষস্থজেও ঈশ্বরের অন্তিত্ব, স্যন্টির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রভৃতির বিষয়
চিন্তিত হয়েছে । মহাভারতের অন্তর্গত গীতা-অংশে, বিষুপুরাণ প্রমুখ অন্ততঃ
দুণ্চারটি পুরাণেও বৌদ্ধধর্মের অভ্যুদয়ের সমসাময়িক আস্তিক-বিশ্বাসের পরিচয়
প্রাপ্তব্য। বিচারদৃষ্টি নিয়ে উপনিষদ এবং গীতা লক্ষ্য করলে বোঝা! যায়,
ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করতেন না এবং জীবনধর্মকেই চরম বস্ত বলে মনে
করতেন এমন সম্প্রর্ধায় (বোধ হয়, চাবাক এবং বাহ্ম্পত্য ) তখন অপ্রধান
ছিল ন1। মুখ্যত: এদের উপলব্ধির ঘিকুদ্ধতার জন্যই যে উপনিষদের প্রারভ,
তার প্রমাণ এসব পর্যালোচনের মধ্যেই রয়েছে। স্ট্িতে যা আছে বায
হচ্ছে, যা হয়েছে এবং য1 হবে, সমস্ত কিছুর মূলীভূত চরম একটি সত্যবস্ত লক্ষ্য
ক'রে তার সাধারণ আখ্যা দেওয়। হয়েছে ব্রহ্গ। এমন বহু মন্ত্র অবশ্য আছে
যাতে স্থত্িকে অসত্য বল। হয়নি, স্যপ্টিসহ ত্রদ্ম সত্য এমন কথাও বলা হয়েছে।
্রঙ্ষদত্য উপলন্ধিকে আশ্রয় ক'রে পূর্ণাঙ্গ দার্শনিক চিস্তনের প্রতিষ্ঠা
করেন শংকরাচার্য। তার পূর্বে বৌদ্ধ মহাযান ও হীনযান সম্প্রদায়ের নাস্তিক
দর্শন মাধ্যমিক, যোগাচার, সৌত্রাস্তিক এবং বৈভাষিক মতবাদে পল্পবিত
হয়ে প্রায় সমস্ত ভারত ব্যাপ্ত ক'রে বিদ্যমান ছিল। অসংবাদকে নিরন্ত
ক'রে সং-বাদ প্রতিষ্ঠায় শ্রীপার্দ শংকর শৃন্যতাসমর্থক যুক্তিতর্কের সাহাষ্য
নিয়েই শৃন্যতার খণ্ডন করেন। তাই তার ব্রহ্ম সত্যবস্ত হলেও শৃন্যের মতই
নিরাকার, নিবিশেষ, অনির্বাচ্য । ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষের জগৎও ক্ষণিকতাবাদীদের
মত তাঁর কাছে অসত্য। কিন্তু মৌল সংবাদ স্থাপন করতেই দার্শনিক
মননের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় উপলব্ধির ক্ষেত্রেও ভারতে বিপ্লব ঘটে গেল। বিশেষত:
নিপুণ ব্রদ্ধের প।শাপাশি সগ্ুণ ব্রন্মের কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠিত করায়
শ্রীশংকর প্রকারাস্তরে পরবর্তী কেবল-সগুণ ঈশ্বরতত্ব এবং ভক্তিবাদের পথও
চিহ্নিত ক'রে রেখে গেলেন। কিন্তু নিগুণ ব্রহ্ম তার যুক্তিসিদ্ধ অনন্য তত্ব
হওয়ায় তিনি পরবর্তী ভক্তিবাদী ঈশ্বরোপাসকদের দ্বারা তীব্রভাবে সমালোচিত
হলেন। আমরা পূর্ববর্তী ভূমিকায় অদ্বৈতবাদ থেকে উদ্দীপিত ভক্তিশাখার
তত্ববাদ্দের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিঁয়েছি। বর্তমান প্রসঙ্গে তাদের মৃলস্ুত্রগুলির
পর্ধীলোচনা ক'রে তা থেকে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ভক্তিদর্শনের পার্থক্য প্রদর্শনের
প্রয়োজন অনুভব করছি।
১৩৪ বৈষবশ্রস-প্রকাশ
ক. ব্রচ্গ-ঈশ্বর--শংকরের মতে ব্রহ্মই একমাত্র সা, ব্রদ্ধ ছাড়! আর
কিছুই নেই। এই ব্রদ্গ শুদ্ধজ্ঞান-স্বরূপ। মায়ার মধ্যে প্রতিবিশ্বিত এই
ব্রদ্মের আভাসই ঈশ্বর। মায়িক জীবের ধারণার শেষ সীমা এই নশ্বর
পর্যস্ত। মায়ার আবরণ ছিন্ন করতে পারলে মানুষের শুদ্ধ চিৎ স্বগ্রকাঁশ
হয়ে পড়লে পর, বর্ষের সঙ্গে সেই চিৎ অভিন্ন হয়ে পড়ে। তখন জীব
ব্রহ্ধবিৎ এবং ব্রহ্ম ছুইই হয়ে পড়ে। রামাঁছজের মতে ব্রহ্ম কখনোই শুদ্ধ-
জ্ঞানম্বূপ, নিগুণ নিবিশেষ এবং অনির্বাচ্য নন। তিনি সগুণ ঈশ্বরই এবং
এই সগুণ বা সবিশেষ ঈশ্বরই শেষ সত্তা। জীব এবং ভড় কোনে! মায়িক ব্যাপার
নয়; ঈশ্বরের মতই সত্য, যথান্ৃত বাস্তব; এ যেন ঈশ্বরের দেহ। চিৎ
অর্থাৎ জীবসত। এবং অচিৎ অর্থাৎ জড় পদার্থের বিবিধ বৈচিত্র্য পার্থক্য
নিয়েই ঈশ্বর ঈশ্বর, এ সব বাদ দিয়ে নয় ( জার্মান দার্শনিক [76861
এবিষয়ে রামান্ুজের ত্নুগামী )। ঈশ্বরই জগৎ-রূপে পরিণাম-প্রাপ্ত হয়েছেন
স্বেচ্ছায়, যেমন কারণ কার্ষে পরিণত হয়। এ দ্গেত্রেকিস্ত ঈশ্বর পরিবতিত
হন না, তার গুণ ও ধর্ম পরিবতিত হয় মাত্র, তিনি অবিকৃত
থাকেন। অচিৎ এবং চিৎ অর্থাৎ জড় এবং জীবাত্মী তাদের স্থিতির
জন্য ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল। তিনি জীবের অন্তর্যামী এবং পরমী-গতি ।
তিনি অপ্রাকৃত দেহ-বিশিষ্ট, বাহুদেবাদি চতুব্্হ সমন্বিত, কৃষ্টি স্থিতি.
লয়ের কর্তা । তাঁকেই নারায়ণ বা পর-বাস্থদেব বল] হয়, শক্তি এবং
করুণার বিগ্রহম্বূপিণী শ্রী বা লক্ষ্মী তার অনপায়িনী শক্তি। জীবের
উদ্ধারের জন্য তিনি অবতীর্ণ হম। জীবাত্মার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভিন্ন,
এবং অভিন্ন ছুইই, যেমন ব্যক্তির দেহের সঙ্গে অস্তরাত্মার সম্পর্ক।
্রদ্মসন্প্রদ্দায়ী মধ্বের ঈশ্বরতত্ব-বিষয়ক অভিমত বহুলাংশে রামান্জাচার্ষের
মতই | কিন্তু মধবাঁচার্য রামান্থজের মত ভেদাভেদবাদী (- ভেদ সহ অভেদ )
নন। তিনি নিঃশেষ ভেদদবাদী, অর্থাৎ জীবাত্সা এবং বস্তনিচয়, যা জড়-
প্রকৃতির হষ্টি, তার মতে ত1 ঈশ্বরের দেহ স্থতরাং মূলতঃ অভিন্ন ব্যাপার নয়।
চিরস্তন ছৈত বা নানাত্ব অর্থাৎ পার্থক্যই সতা। রামাহ্জ-মতে ভেদ
অভেদের ধর্ম মাত্র। রামানুজের মতই মধ্ব ঈশ্বর, জীবাত্া ও জড় এই
তিনের সত্যতা ও অনার্দিত্বে বিশ্বাসী এবং বিষুণ ব1 ঈশ্বরের নেতৃত্ব, ব্যুহ,
অবতার, লক্ষ্মী গ্রভৃতিও স্বীকার করেন, কিন্ত তিনি ঈশ্বরকে কেবল নিমিত-
কারণ মনে করেন, উপারদান-কারণ নয়। ঈশ্বরতঘ্ব বিষয়ে নিশ্বার্ক বা সনক-
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্ষের দাশনিক প্রতিষ্ঠা ১২৫
সম্প্রদায়ের ধারণ রামান্জেরই অনুসারী, যদ্দিচ তারা মনে করেন যে, দ্বৈত
এবং অদ্বৈত ছুইই সত্য। পার্থক্য এই যে, তার! শ্রীকষকেই ঈশ্বর মনে
করেন এবং রাধাকে তার শক্তি মনে করেন। শ্দ্ধাছৈত বা বল্লভ-সম্প্রদাষ
এবং গৌড়ীয় বৈষ্ণব অচিস্ত্য-ভেদাভেদ-বাদীর। ঈশ্বর-স্বরূপ বিষয়ে রামান্থজ
প্রভৃতির সঙ্গে একাত্ম। অর্থাৎ ঈশ্বরকে সচ্চিদানন্দময়, অবতার-ধাম-
বিগ্রহাদিসম্পন্ন, এবং সর্ককারণ-কারণ বলে মনে করেন। একই সঙ্গে ভেদ
এবং অভের্দের বিরুদ্ধধর্মতা গৌড়ীয় বৈষ্বের মতে ঈশ্বরের অনস্ত অচিস্ত্য
শক্তির জন্য । এরা লীলাবাদী এবং শক্তিবাদী। মধ্ব সম্প্রদায়ের মত
কেবল-ভেদবাদী নন। এই অচিস্ত্া শক্তির কল্পনা! ক'রেই তারা ঈশ্বর এবং
জীবের যাবতীয় বিরুদ্ধ ধর্মেব সমাধান করতে চেয়েছেন। শ্দ্ধাদিত ব।
বললভ সম্প্রদায়ের সঙ্গে এদের পার্থক্য যৎসামান্য এবং নিশ্বার্ক সম্প্রদ্দায়ের যত
এ'র' শ্রীক্ৃষ্কেই ভগবান্ এবং রাধাকে তার শ্রেষ্টা শক্তি বলে মনে করেন।
বিখেষ এই ষে, গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনে নারামণ-বাস্থদেবকে শ্রীকৃষ্ণের বিলাল-
যৃতি এবং অবতার ও ব্যৃহাধিপতিদের শ্রীরুষ্ণের অংশ এবং কল! বলে গ্রহণ কর!
হয়। নারায়ণ এই্বর্মৃতি এবং শ্রীকৃষ্ণ মাধুরযযৃতি ব'লে নারায়ণ থেকে শ্রীকৃষ্ণের
গুণাধিক্য কল্পিত হয়। ভক্তদের বাসনাপুরতির জন্য শ্রীরুষ্ণ বিভিন্ন বিগ্রহে
নানা যুতিতে নিজকে প্রকাশ করেন। অচিস্ত্য-ভেদ্দাভেদ মতে 'এই নানাত্ব
কৃষ্ণের ম্বরূপশক্তির বিলাসের ফলেই হয়ে থাকে, এমন কি রাধাও কষ্খের
নিজ হলাদ্দিনী শক্তির পরিণাম মাত্র, যূলে একাত্ম লীলায় পৃথক । এসব নিয়ে
সৎ চিৎ আনন্দের পূর্ণ তম বিকাশ ধার মধ্যে তিনি স্বয়ং ভগবান্ শ্রীকষ্ণ।
আর তার বৈশিষ্ট্য হ'ল এই যে, তিনি ত্রিবিধ শক্তির অধিকারী। স্বরূপ-
শক্তি, মায়াশক্তি এবং জীবশক্তি। অস্তরঙ্গা, বহিরঙগা ও তাটস্থা।
খ. জীব--অছৈতমতে জীব ব্রহ্মই, মায়াতে প্রতিবিদ্বিত হয়ে, অবিদ্যা-
সংস্পর্শে অথবা অবিগ্ভার দ্বার] পরিচ্ছিন্ন হয়ে জীব নিজকে পৃথকৃ ব'লে
মনে করে ও সংসারভোগ করতে থাকে । ইন্দ্িয়াদি এবং অহং নিয়ে জীবের
যে অস্তঃকরণ তা মায়িক উপাধি মাত্র, অথচ অজ্ঞান-বিমোহিত জীব একেই
সর্বস্ব বলে জানে, সাক্ষীচৈতন্তন্বূপ তার যে আসল সতা রয়েছে,
অবিগ্ার জন্য তা তার কাছে প্রতিভাত হয় না। স্বরূপতঃ জীব ব্রদ্দের
অংশ বা কণিকা নয়, বিতু অর্থাৎ ব্রন্মই। অবিষ্তার আবরণ অপস্থত
হলেই জীব ব্রদ্দের সঙ্গে মিশে যায়, বদ্ধনমূক্ত হয়ে পড়ে। এই অদ্বৈত
১৩৩৬ বৈষব-রস-প্রকাশ
মতের সঙ্গে পরবর্তা তত্ববারদী সকলেরই মতের পার্থক্য রয়েছে। বিশিষ্টা-
দ্বৈত মতে জীব চিৎ-অণু, ব্রহ্ম-আশ্রিত, ব্রন্মের শরীর । ব্রহ্ম জীবাস্তর্যামী,
জীবাত্মারও আত্মা এবং নিয়ামক। এক ক্রদ্ধই জীবরূপে বছ হয়েছেন।
অবিষ্ঠা এবং অনৃষ্ট বা পূর্বকৃত কর্মের জন্য জীব স্থখছুংখ ভোগ করে। উত্তম
কর্ষ এবং জ্ঞানের ফলে সে মুক্ত হয়ে সচ্চিগানন্দের, অনস্তের মধ্যবর্তী হয়ে
পড়ে। শ্রীরামান্থজ জীবকে তিন ভাবে ভাগ করেছেন- বদ্ধ, মুক্ত এবং
নিত্যমৃক্ত। মুক্ত এবং নিত্যযুক্ত জীব বৈকুষ্ঠে স্থান লাভ ক'রে লম্দ্মীনাথ
বিষুটর পারিষদ্বশ্রেণীতৃক্ত হয়ে থাকেন। রামানুজ বদ্ধ জীবকে অবিদ্যাপ্রভাবে
বন্ধ মনে করেন না, কর্মবন্ধনে অনার্দি বন্ধ বলে মনে করেন। ভেদবাদী
মধ্বাচার্য জীবকে ঈশ্বর থেকে পৃথক সত্তা ব'লে মনে করেন, এমন কি
জীবের সঙ্গে জীবের অর্থাৎ এক আত্মা থেকে অন্য আত্মার গুণগত পার্থক্য
নির্বাণ করেন। অথচ এসবকে অস্বতন্ত্র এবং ঈশ্বরের আশ্রিত বলেন।
রামান্থজের মত ইনিও অগণিত চিৎ্কণ জীবাত্বাকে কর্মহেতু বদ্ধ, এবং বদ্ধ,
মুক্ত, নিত্যমুক্ত শ্রেণীভুক্ত মনে করেন। মুক্ত অবস্থায়ও তার মতে ঈশ্বরে-
জীবে ভেদ থাকে । সাযুজ্য মুক্তিতেও জীব পূর্ণ সচ্চিদানন্দের অধিকার লাভ
করে ন1* এ ছাড়া অস্থরাদিযোনিতে জাত জীবের মুক্তি মধব স্বীকার
করেন না। তার তে জীব এবং জড় বিশেষত্বের জন্তই ঈশ্বর থেকে
অনার্দি-পৃুথকৃ। রামাছ্ছজের মত তিনি ঈশ্বর থেকে জীবের অ-পৃথকৃপিদ্ি
দ্বীকার করেন না। ভেদাভেদ (ভেদ ও অভেদ্দ )-বাদী নিশ্বার্কের মতে জীব
মৌলিক জ্ঞানম্বরূপ, আবার জ্ঞানাশ্রয় স্ত্বাও। ধর্মী-ধর্ম-ভাবযুক্ত; জ্ঞাত?
এবং জ্ঞান ছুইই। ঈশ্বরের সঙ্গে জীবাত্মা ভিন্ন এবং অভিন্ন; ঈশ্বরাশ্রিত,
ঈশ্বর-নিয়ন্ত্রিত। একটি শ্লোকে জীবের এই বৈশিষ্ট্য নির্ণাত হয়েছে :
জ্ঞানস্বরূপং হরেরধীনং শরীরসংযোগ-বিয়োগ-যোগ্যম্।
অণুং হি জীবং প্রতিদেহভিন্নং জ্ঞাতৃত্ববস্তং যদনস্তমাহঃ ॥
আত্মন্বূপ জীবের কর্ম এবং অবিদ্যার বশে শরীরধারণ প্রভৃতি বর্ণনে নিম্বার্ক
প্রায়শঃ রামাচজাচার্য এবং কচিৎ মধ্বাঁচার্ষের মতান্ুসরণ করেছেন । বল্পভ1-
চার্ষের বা শুদ্ধাদ্বৈতবাদের মতে জগৎ ও জীব অন্তর্যামী ঈশ্বরের সঙ্গে মূলতঃ
অভিন্ন। এ ব্রন্মেরই অবিরূত পরিণাম মাত্র। সৎ চিৎ এবং আনন্দ ম্বরূপ
* মুক্তা; প্রাপ্য পরং বিষুং তর্দেহং সংশ্রিতা অপি।
তারতম্যেন তিষ্ঠস্তি গুণৈরানন্দপূর্বকৈঃ ॥
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৩৭
ঈশ্বর যথাক্রমে দেহ, দেহ ও দেহী (অর্থাৎ জীব ) এবং অন্তর্ধামীতে পরিণত
হন। ব্রদ্ধের সঙ্গে বিশ্বের সম্বন্ধ, যেমন অধির সঙ্গে স্ষুলিলের। অথবা যেমন
মণির সঙ্গে মণির জ্যোতির। জীব সচ্চিদ্বানন্দের নিতান্ত অধুপরিমাণ বলে
জীবে ঈশ্বরের কোনে গুণ প্রকাশিত, কোনে গুণ আবৃত।
রামান্ছজ-মতে জীবাত্মা পৃথক হলেও ঈশ্বরের দেহের অস্তভূতি। মধ্বমতে
জীবাত্মা ঈশ্বরাধীন হলেও পৃথকৃ-অন্তিত্ব-সম্পন্ন। নি্বার্কমতে পৃথক এবং
অপৃথক্ ছুই-ই। জীবাত্মা সসীম এবং আশ্রিত বলেই পৃথক । ভাস্করমতে
ঈশ্বরের সঙ্গে অভিন্ন, কর্মদোষে ভিম্নাকার লাভ করেছে মাত্র। তার মত
অছ্বৈতমতের কাছাকাছি । বল্লভাঙ্গর্ষের মতে ঈশ্বরের অণুপরিমাণ অংশ।
এদের মধ্যে শ্ুদ্ধাদ্বৈত বা বল্লভ সপ্প্রদ্দায়ের সঙ্গেই অচিস্ত্যভেদাঁভেদবার্দের মিল
সব চেয়ে বেশি। অচিস্ত্যভেদাভেদবাদীর। ঈশ্বরের অচিন্ত্য শক্তির কল্পন।
ক'রে জীব ও ঈশ্বরের ভেদ ও অভেদ্ বিষয়ে যাবতীয় ছন্দের সমাধান করতে
চেয়েছেন। এদের মতে জীব হ*্ল শশ্বরের তাটস্থা শক্তির পরিণাম।
মায়াশ্িত ব*লে ভিন্ন, কিন্ত মায়। ছিন্ন করতে পারে ব'লে প্রায় অভিন্ন, অর্থাৎ
পরিশেষে স্বরূপ-শক্তির অন্তভূতি। জীবের বা' স্থষ্টির এই ভিন্নত্ব এবং অভিন্বত্ব
অচিস্ত্য, এ তার শক্তির লীলাবিলাস। জীবের স্বরূপ হ'ল চিদংশ, অণু
সুর্যের যেমন রশ্মি। জীব নিত্য এবং সংখ্যায় অনস্ত। গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা
জীব-ঈশ্বরের রামানুজ-মতাশুযায়ী শরীর-শরীরী সম্বন্ধ স্বীকার করেননি। ঈশ্বর
শরষ্টা অন্তর্যামী ও নিয়স্তা হওয়ায় জগৎ ও জীবের সঙ্গে জড়িত এরকম
ধারণারই প্রশ্রয় দেন। ঈশ্বর শক্তিমান্, জগতজীব শক্তি; ঈশ্বর মায়াধীশ,
জীব মায়াবশ। ব্যব্হারিকভাবে ঈশ্বরে-জীবে, চিচ্ছন্তি এবং জীবশক্তির মধ্যে
গৌড়ীয় বৈষ্ণব আত্যন্তিক ভে্দই অন্থভব করেন। মহাপ্রভু তার মনোভাব
জ্ঞাপনে নানান স্থানে এই বিভেদের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন।
চরিতামুত বলছেন £
ঈশ্বরসরূপ যৈছে জ্বলিত জলন।
জীবের স্বরূপ যৈছে স্ফুলিঙ্গের কণ॥
তার! জীব-ঈশ্বরের পার্থকাবোধক নিয়োক্ত ইঙ্গিতেরই অন্থসরণ করেন £
হলাদিন্া। সংবিদাঙ্গিষ্টঃ সচ্চিদাননদ ঈশ্বরঃ।
অবিষ্যাসংবৃতে। জীবঃ সংক্লেশনিকরাকরঃ ॥
গ. মাস্সা--গ্ররূতি, অবিষ্া, অজ্ঞান, বীজশক্তি, ভ্রান্তি প্রভৃতি নানা
১৩৮ বৈষ্ণব-রস-গ্রকাশ
আখ্যায় মায়াকে অভিহিত করা হয়েছে। উপনিষদে “মায়ার বিষয়
কোথাও স্পষ্টভাবে কোথাও পরোক্ষভাবে বল হয়েছে 1 “কেন” উপনিষর্দের-
কাহিনীতে মায়াকে হেমবর্ণা নারীমূতি ঈশ্বরী বলেও দেখ! হয়েছে।
বৌদ্ধ মাধ্যমিক এবং বিজ্ঞান মতে ইন্দ্রজাল ব স্বপ্নের মত অলীক
বোঝাতে মায়া শব্ষের বাবহার করা হয়েছে। ত] ছাড় বলা হয়েছে,
মায়! দৃষ্ট বৈচিত্র্য থেকে পৃথক নয়, অপৃথকৃও নয়। সাংখ্য দর্শনে
মায়াকে ভিন্ন নাম দিয়ে একটি মূলতত্বরূপে দেখা হয়েছে। সাংখ্য মতে
বাস্তব তত্ব ছুই, এক নয়,_পুরুষ এবং প্ররুৃতি। বিশ্বজগৎ জীব প্রভৃতি
এ ত্রিগুণাত্মক প্রকৃতি-তত্বেরই পরিণাঁম। মায়! বিকারী, পুরুষ নিবিকাঁর।
বেদান্তভিত্তিক অদ্বৈত মতে মায়! ব্রহ্ম থেকে পৃথক্ কোনো সত্তা নয়,
আবার ব্রদ্ধও নয়। ব্রহ্ম হলেন শুদ্ধ চিৎ মায়! হচ্ছে জড়, সাংখ্যের
প্রকৃতির মত। কিন্তু প্ররূতি যেমন বাস্তব স্বতন্ত্র সতা, অদ্বৈতের মায়!
তাও নয়। সং অথবা অসৎ এ দ্বয়ের কোনে! ধারণার দ্বারাই মায়াকে
বোঝানে? যায় নী; অথচ মায়া একেবারে মিথ্যা নয়, কারণ এর একটি
বৃত্তিতে এ বাস্তব সত্তা য] ব্র্ধকে আবৃত করে (আবরণবৃত্তি ), আর
একটি বৃত্তি দ্বারা বৈচিত্র্যময় জগতের ভ্রান্তি জন্মায় ( বিক্ষেপবৃত্তি ) ব্রন্দের
উপর। মায়া হ'ল বিবর্ত, ব্যবহারিক জ্ঞানের নিমিত্ত । যতক্ষণ এই
জ্ঞান থাকে, বা অবিদ্ধা থাকে, ততক্ষণ মায়। থাকে, শুদ্ধ জ্ঞান উদয়ের
বা ব্রদ্ঘসাক্ষাৎকারের সঙ্গে সঙ্গেই এর তিরোভাব। এই মায়া অনাদি।
প্রলয়ের পর স্থির মৃহ্র্ত হতে কার্ধরূপে এর প্রকাশ ঘটতে থাকে, জীব
এর দ্বারা অভিভূত হয়ে দেহ-ইন্দ্রিয় প্রভভৃতিকে এবং সংসারকে সত্য বস্ত
মনে করে বদ্ধ হতে থাকে।
শংকরাচার্ধের এই মায়াবাদ বিশিষ্টাছৈতবাদী রামান্থজেব হাতে বিশেষভাবে
আহত হয়েছে। এর পূর্বে তাত্বিক ভান্বর মায়াবা?কে মহাযান বৌদ্ধমতের
তত্ব বলেছিলেন । তাঁর মতে জীব আর ব্রহ্ম একই, ব্রহ্ম পঞ্চভৃতের ফাদে
পড়ে জীব হয়ে গেছেন। এটি বাস্তব সত্য, জড়ের বাস্তব কাজ, মিথ্য'
বা মায়া নয়। তার মতে শুদ্ধ কর্ম এবং জ্ঞানের দ্বারা এই বাস্তব
অবস্থা অতিক্রমণীয়। ভাস্করের এই অভিমতের নানান্ অসংগতি শুধরে
নিয়ে রামান্থজ বলেছেন যে, যথার্থভাবে সচ্চিদদানন্দ ত্রচ্ম ল্ড়ের দ্বারা
সীমিত হচ্ছেন নী, হতে পারেন না। তার দেহ, যার মধ্যে চিৎ এবং
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৩ত্র
অচিৎ মিশ্রিত রয়েছে, তা-ই পরিণত হয়ে জীব-জগৎ হচ্ছে। রামাহ্ছজ
মনে করেন ভে্কে নিয়েই অভেদ সত্য, স্থতরাং মায়ার কার্যকারিতা
এ আবরণ এবং বিক্ষেপ-তিনি স্বীকার করেন না, রজ্জুতে সর্প ব৷
শুক্তিতে রজত ত্বার মতে কোনে ভ্রাস্তির ব্যাপার নয়। রামাহুজ প্রকৃতি
বা জড়কে ঈশ্বরের অংশ এবং ঈশ্বরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ব'লে মনে করেন।
জ্ঞানও তার মতে যথার্থ এবং সব সময়েই বিশিষ্ট। মায়ার স্থানে
রামান্থজ কর্মকে বসিয়েছেন। ঈশ্বরেচ্ছায় জড়ের কাঁজ এবং ঈশ্বরেচ্ছায়
কর্মের দ্বারা জীবের বন্ধন, স্থতরাং ঈশ্বরে ভক্তি এবং শরণাগতির
মনোভাবই জীবকে মুক্ত করতে পারে। তার মতে কর্মফলত্যাগ, উপাসনা,
প্রপত্তি-_অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ ভক্তিই অজ্ঞান দূর করে, ঈশ্বরজ্ঞান নিয়ে আসে। যাই
হোক, তিনি শংকরের মায়াবাদকে নিম্নলিখিত ভাবে আক্রমণ করেছেন £
১ মায়! বা অবিদ্ভাব মূল আশ্রয় কোথায়? ব্রদ্দে থাকতে পারে না,
কারণ, তাহ'লে তে ব্রহ্ম সবিশেষই হয়ে যান। তা ছাড। জড় মায়া এবং
অজ্ঞান অবিদ্যা, আর শশুদ্ধবুদ্ধ ব্রহ্ম, এ ছুই পরস্পর অত্যন্ত পৃথকৃ। অবিদ্যার
আশ্রয় ব্যষ্টি জীব, এও বল! যায় না, কারণ জীবের ব্যগ্টিগত উপাধিই তো
মায়ার স্থ্টি। জীবকে মায়ার আশ্রয় বললে অন্টোনাশ্রয় দোষ এসে পড়ে।
২. মায়] ব্রহ্গকে আবৃত করবে কী ক'রে? ব্রহ্ম তো স্বপ্রকাশ।
অন্ধকার কি আলোককে আবৃত করে?
৩, অবি্তা সংও নয় অসৎও নয়, এ কেমন বিরুদ্ধ কথা? তর্কে
তো! এরকম উপপত্তি দাড়ায় না। আছেও নয়, নেইও নয়, এ মিথ্য।
জল্পনা । তাছাড়া অবিদ্ভাকে যদি জান যায় না, তো! বলা যায় কী কঃরে?
হুতরাৎ মায়া বাস্তব এবং ঈশ্বরের শক্তি-_এ মনে করতেই হবে।
৪, মায়াবাদীরা শুদ্ধ জ্ঞানের দ্বারা অবিষ্ভার নিরাকরণের কথ?
বলেছেন, কিন্তু শুদ্ধ জ্ঞান কখনোই সম্ভব নয়, শুদ্ধ সত্তাও সম্ভব নয়।
স্থতরাং অবিদ্ভাকে দূর কর! যায় না। আবরণ এবং বিক্ষেপ কার্ষে
যার যথার্থতা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, তাকে দূর করা অসম্ভব ।
রামাহজাচার্য অজ্ঞান এবং কর্ষকে ঈশ্বরাধীন এবং অনার্দি বলে মনে করেছেন ।
মধ্ব-সম্প্র্ায়ীও রামান্ুজের অনুসারে অহ্বৈতের মায়াকে স্বীকার করেননি।
তার্দের মতে স্ষট্টি ঈশ্বরেচ্ছায়, প্ররূৃতির ছারা । এই প্রকৃতি এবং সৃষ্ট বস্ত
ঈশ্বর থেকে ভিন্ন বাস্তব সত্তা । তার] কর্ম এবং জ্ঞানকে মুক্তির সহায়ক
১৪৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
ব'লে মনে করেন। বিশ্বের বাস্তব ও পৃথক সত্তা স্বীকার করার অন্ত
তাদের ক্ষেত্রে বিবর্ত স্বীকারের প্রসঙ্গই ওঠে না। বস্তত: এরাও
মায়াবাদীদের শৃন্বাদী বলেই মনে করেছেন। "যৎ শৃন্যবাদিনাং শৃন্যং
তদেব ব্রহ্ম মায়িন: |”
শাক্তধর্মে মায়]! বা মহামায়াকে ঈশ্বর শিবের শক্তিরপে দেখ। হয়েছে।
শিব ও শক্তির উপর স্ট্ি-স্থিতি-সংহারের সমস্ত কর্তৃত্ব অর্পণ কর! হয়েছে।
শিবকে যোগী পুরুষ বা শব এবং শক্তিকে ক্রিয়াশীল রূপে বর্ণন। করায় সাংখ্য-
মতের প্রভাব এতে স্পষ্ট। আবার এই মায়াকে জীবের অজ্ঞান মোহ
এবং সংসার-বাসনার কারযিত্রীরূপে দেখায় অদ্বৈতের প্রভাবও লক্ষণীয় ।
বস্তৃতঃ প্রচলিত শাক্তমতে শৈব দর্শন থেকে আরম্ভ ক'রে বিভিন্ন দার্শনিক
মতের ছায়। পড়েছে। শাক্ত সাহিত্যে শক্তির নারীরূপ কল্পন। কর! হয়েছে
এবং তদন্ুসারে ছূর্গরক্ষয়িত্রী দুর্গা এবং অনার্ধ নারীদেবত] চণ্ডী বা কালিকার
সঙ্গে শিবশক্তির শক্তিকে মিলিয়ে নেওয়া হয়েছে। বস্ততঃ ঈশ্বর, মহেশ্বর
বা শিব এবং তার শক্তির ধারণ! স্থপ্রাচীন। এর থেকেই গড়ে উঠেছে
এক্তিতত্ব। ব্রহ্ম ও তার শক্তির বিষয় মীমাংসক এবং অদ্বৈতবাদীর! পূর্বেই
স্বীকার করেছেন। এই শক্তির সঙ্গে অভেদদ বা নিত্যসিদ্ধ সম্বন্ধ এ'দের
অভিপ্রেত । পরবর্তীকালে এবং সম্ভবতঃ ক্ৃষ্টিবব্যাখ্যানে ও সাংখ্যের প্রভাবে
ভেদসন্বন্ধও গ'ড়ে ওঠে ।
গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শন এই শক্তিতত্বের উপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়েছে।
পূর্ণ ভগবান্ বা কৃষ্ণ এদের মতে শক্তিমান্। তার শক্তিকে তার সচ্চিদানন্দ-
স্বরূপ হিসেবে তিন ভাগে ভাগ ক'রে দেখা যায়। সদ্ধিনী শক্তি, সংবিৎ-
শক্তি এবং হলাদদিনী শক্তি।
আনন্দাংশে হলাদিনী, সদংশে সদ্ধিনী।
চিদংশে সংবিৎ যারে জ্ঞান করি মানি ॥
কিন্তু এই তিন হ'ল ষড়ৈশ্বর্যময় শক্তিমান্ ব্রন্মের নিজ অন্তরঙ্গ ব৷ শ্বরূপ
শক্তি। এছাড়া তার আরও ছুই শক্তি আছে। একটি হ'ল মায়া-শক্তি,
অন্যটি জীব-শক্তি। মায়! তার বহিরঙ্গ! শক্তি। জীব-শক্তি তার না-
অন্তরঙ্গ! না-বহিরজা, এ দুয়ের মাঝে অবস্থিত। স্থতরাং তস্থা। এইভাবে
গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনে মায়াকে ঈশ্বরের বাইরে অবস্থিত অথচ সম্পকিত
শক্তি ব'লে গ্রহণ কর) হয়েছে। আর বল! হয়েছে যে, এসব শক্তির সঙ্গে
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্ষের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৪১
ভগবানের সম্বন্ধ অভিন্ন এবং ভিন্ন দুই-ই। কী ভাবে, তা বোঝাতে বৈষ্ণব,
দরার্শনিকেরা শক্তিমানের শক্তিসম্বত্ধের অচিস্ত্যতা। হ্বীকার করেছেন। অর্থাৎ
এই ছুই পরম্পর-বিরুদ্ধ সম্পর্ক বাস্তবিক, কিন্তু তর্কের ব৷ চিস্তার অগোচর।
এজন্য এ'দের দর্শনের নামই হয়েছে অচিস্তা-ভেদাভেদ।
মায়াকে এইভাবে বহিরঙ্গ! শক্তি বলে তার! !নানান্ বিরোধের সামঞ্র্য
বিধান করতে চেয়েছেন। একদিকে যেমন ঈশ্বরের সঙ্গে জড়ের সম্পর্ক
নিরোধ করতে চেয়েছেন, অন্যদিকে তেমনি চিদংশ জীবের সঙ্গে মায়ার
সথদৃঢ় সম্পর্ক নির্ধারণ ক'রে অগ্বৈতের অজ্ঞান অবিষ্ভার মৌলিক প্রভাবকেও,
তার! ত্বীকার ক'রে নিয়েছেন,। ব্যাখ্যায় তাঁর! বলছেন, মায়! ঈশ্বরের
দাসী, বাইরে থাকে এবং তার কটাক্ষেই কাজ ক'রে যায়। আবার বলেছেন,
ঈশ্বরের চিদ্ংশ জীবকে বিষয়বদ্ধ ক'রে মায়া যেন লজ্জাবশেই বাইরে বাইরে
থাকে, ঈশ্বরের দৃষ্টিপথ এড়িয়ে যায়। যদি প্রশ্ন করা যায় ঈশ্বর তে!
ইচ্ছ! করলেই মায়ার এই অত্যাচার দূর করতে পারেন, জীবকে মায়ামূক্ত
ক'রে দিতে পারেন। তার উত্তরে বল। হয়েছে যে, ত। পারেন না, কারণ
অনাদিকাল থেকে যে ব্যবস্থা হয়ে গেছে তা তিনি উন্টে দিতে পারেন ন।।
তা ছাড়। এই তার লীলা । মায়াবশে দুঃখ পেতে পেতে জীব আপন
নিষ্ঠায় বা পরিশেষে তার কৃপায় শুদ্ধ ভক্তির পথে এসে মায়ার এলাকা
ছাড়িয়ে তার এলাকায় এসে পড়,ক এই তার ইচ্ছা, এই-ই তার লীল]।
এইভাবে স্যপ্টির ব্যাপারট। তার পরিকল্লিত। যেমন একদ্দিকে অন্তর
শক্তি গোপীদের নিয়ে মিলন-বিরহ-লীলায় তার আনন্দ, শ্রীরাধাকে তীব্র
বিরহের মধ্যে ফেলে মহাভাবরূপ প্রেমের পরাকাষ্ঠা উৎপাদন ও অনুভব
করে তার আহ্লাদ, অন্যদিকে জীবকেও নান। বিপাকের মধ্যবর্তা ক'রে
কৃষ্পোম্ুখ করায় তাঁর অভিপ্রেত অন্য লীলা । এতে “কেন'র প্রসঙ্গ নেই।
এই কার্ধের সহাঁয়িক1 হিসেবেই মায়ার বাস্তব অগ্ঠিত্ব। শ্রীমত্ভাগবতে এই
মায়ার সম্বন্ধে বল। হয়েছে ং
ঝতেহ্থং যত প্রতীয়েত, ন প্রতীয়েত চাত্মনি।
তথিষ্ঠার্দাত্সনে। মায়া যথা ভাসে। য্থা তমঃ ॥
অর্থাৎ, পরমার্থকে বাদ দিয়ে যার প্রতীতি ঘটে, আবার নিজে স্বাধীনভাবে
যে গ্রভীত হয় না, তাঁকেই পরমাত্মার মায় ব*লে জানবে । কেমন?
১৪২ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
না, যেমন জ্যোতির প্রতিবিষ্ব ব1 ছায়া, অথব] যেমন অন্ধকার। এই
'প্রতিভাস বিচিত্র বণ বিচিত্র আকারের রূপ পরিগ্রহ করে।
এখানে মায়াশক্তিকে যেমন অভিন্ন বল হয়েছে, তেমনি বহছির ও
বল। হয়েছে ।
ঈশ্বর, জীব এবং মায়! এই তিন অনার্দি তত্ব ছাড়া কোনো কোনে
তে কাল+ এবং “কর্ম” ব'লে আরও ছুটি তত্ব গ্রহণ কর হয়েছে ।
ঘ. পুরুধার্থ__বৈদিক কর্মকাগুময় প্রাচীন ভারতে ভ্রিবর্গ সাধন (কাম,
অর্থ, ধর্ম) এবং মৃত্যুতে স্বর্গপ্রাপ্তি মান্ষের অভিলষিত ছিল। ক্রমে জ্ঞানেব
প্রাধান্ত বিস্তৃত হ'লে এ ত্রিবর্গের সঙ্গে মোক্ষ বা কৈবল্যও লক্ষ্যবস্ত হয়ে
দাড়ায়। এইভাবে আখ্যা দেওয়া! হয়েছে “চতুর্বর্গ” এবং সেকালে ম্মার্ত-
মীমাংপকেরা এই ধারণ। পোষণ করেছেন যে_ ধর্মার্থকামাঃ সমমেব সেব্যাঃ,
_ধর্ম অর্থ কাম প্রভৃতির প্রত্যেকটি একই সঙ্গে ও সমভাবে সেবিত হওয়।
উচিত। জ্ঞান এবং দার্শনিক চিন্তার বিস্তৃতির ফলে প্রাচীন ভারতেই এই
ধারণ! পরিবতিত হয়। জীবনযাপনের অভিপ্রেত লক্ষ্য ভিন্নতর হয়ে পড়ে।
বুদ্ধদেব প্রাচীন ধারণায় বিপ্লব এনে বললেন, লক্ষ্য হ'ল নির্বাণ, বিষয়ভোগ
নয়। মানুষ তষ্ণাবশে জন্মায় এবং দুঃখ ভোগ করে। নিদিষ্ট সাধনার পথে
এগিয়ে গেলেই তৃষ্ণার মূল উৎপাটিত হবে এবং নির্বাণ লাভ করা যাবে।
সাংখ্যের মতে মান্থষের লক্ষ্যস্থল হ'ল ত্রিবিধ দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তি।
উত্তর-মীমাংসক্রো এর নাম দিলেন কৈবল্য, অর্থাৎ ব্রচ্ধে লীন হয়ে যাওয়া,
যেমন তরঙ্গ অথবা জলবিম্ব জলে লীন হয়ে যায়। অদ্বৈত দর্শনে এরই
সপক্ষতা কর হ'ল প্রবলভাবে এবং ব্রহ্ম সত্য, স্ষ্টি প্রাতিভাপিক ব'লে
জ্ঞানাধীন সন্যাসকে তুলে ধরা হ'ল মোক্ষসাধনের পথ ব'লে ।
ভক্তিধর্মের অভ্যুত্থানে ভক্তিকে যছ্যপি ঈশ্বরপ্রাপ্তির উপায় ব'লে গ্রহণ
কর] হ'ল, প্রাথমিক তত্ববাদীর1 পুরুষার্থ বলতে মুক্তিরই বর্ণনা দ্িলেন।
রামানজ, মধ্ব, নিষ্বার্ক কি বল্লভের সম্্ীদরায়ও মুক্তিকেই চরম অন্বিষ্ট ব'লে
উল্লেখ করেছেন। এই মুক্তি চার বা মতান্তরে পাচ প্রকারের-_সাযুজ্য,
সারূপ্য, সালোক্য, সার্টি ও সামীপ্য। ভজন-বৈশিষ্ট্য অন্্যায়ী ভক্তের
এই পঞ্চবিধমুক্তির যেকোনো একটির অধিকারী হতে পারেন। নাযুজ্য
হ'ল সংযুক্ত হওয়া, কিন্তু সাযুজ্য বলতে একেবারে বিলীন অবস্থা এরা
বোঝেন না। অণু. বা! অংশপরিমাণ জীব ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত হলেও নিজ
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৪৩
স্বতন্ত্র রক্ষা করে। সারপ্য হ'ল ষমানবূপত। প্রাঞ্ধি। ভক্ত ঈশ্বরের সদৃশরূপ
লাভ ক'রে বৈকুষ্ঠে বাস করতে পারেন। লালোক্য-সমান লোকে বাস।
সার্টি-ঈশ্বরের সমান এশ্বর্লাভ। সামীপ্য অর্থে নিকটে বর্তমান থাঁক।।
ভক্তের। এই সামীপাই চান, কারণ, নিকটে থাকলে সতত ঈশ্বর দর্শনের
অভিলাষ তাদের তৃপ্ত হবে। নির্বাণ বা কৈবল্যের সঙ্গে তুলন] ক'রে এই
প্রকারের মুক্তিকে গৌণ মুক্তিও বলা হয়েছে।
উপবে লিখিত মুক্তিসমূহের যে মূল্যই থাক, গৌড়ীয় বৈষ্ণব সিদ্ধান্তে
মুক্তিমাত্রকেই তিরস্কৃত কর হয়েছে । কারণ, মুক্কিকামনাও স্বার্থময়, কৈতব-
যুক্ত। তাদের ধারণায় শ্ুদ্ধাভক্তিজাত কষ্ণপ্রেমাই পরম পুকুযার্থ, তা মুক্তির
উপরের বস্ত, মুক্তি এর থেকে নিয়মানের। শ্রীবূপগোস্বামীপারদ বলছেন £
ভৃত্তিমুক্তিষ্পৃহ৷ যাবৎ পিশাচী হৃদি বর্তৃতে।
তাবদ্ভক্তিন্তরথম্তাত্র কথমত্যুদ্রয়ে৷ ভবেখ॥
অর্থাৎ “বিষয়ভোগস্পৃহী যেমন, তেমন মুক্তিষ্পৃহাও কলঙ্কিত। এই ছুই
পিশাচীর একটিকেও বক্ষে ধারণ ক'রে ধামিক ভক্তিস্থখ পেতে পারেন ন11,
ভক্তিরসামবতসিদ্কৃতে অন্ত্র তিনি শ্ুদ্ধা-ভক্তির স্বরূপ নির্ণয়ে বলছেন :
অন্যাভিলফিতাশৃন্যং জ্ঞানকর্মাদ্যনারৃতম্।
আন্ুকৃল্যেন কৃষ্ণাঙ্গশীলনং ভক্তিরুত্তম। |
অর্থাৎ অন্যবাঞ্থ। অন্যপূজ। ছাড়ি জ্ঞান কর্ম।
আন্কৃল্যে সর্বেন্তরিয়ে কষ্তান্ুশীলন ॥ ( চৈ-চ)
স্থতরাং জ্ঞানকর্মবাদীদের অভিপ্রেত মুক্তিকে ধিক্কার দিয়ে এ'র! প্রেমের প্রয়োজন
প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গৌড়ীয়-বৈষ্ণৰ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মধ্যে এটিও একটি
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত । বলা বাহুল্য, এ বিষয়েও শ্রীমত্তাগবতের ঈগল তার!
অনুসরণ করেছেন। এ সম্পর্কে পরে বল। হচ্ছে।
মহাপ্রভ্ শ্রীচৈতণ্য তার লৌকিক ভাবপ্রকাশের মধা দিয়ে এবং কচিৎ ভাষণে
ও আলাপে যে ধর্মের স্বরূপ পরিস্ফুট করেছিলেন তাই হ'ল গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের
গৌড়ীর-বৈষৰ দর্শন অন্প্রেরণা, আর এই ধর্মানততিকে ঘুক্তি-তর্কে প্রতিষ্ঠা দিতে
বণ গিয়ে শ্রীরপ-সনাতন ও শ্রীজীব যে-সব সিদ্ধান্ত করেছেন__
অচিত্তয ভেদাভেদ বাদ রমভাগবতের ব্যাখ্যা এবং নূতন রসশাস্ত্ প্রণয়ন ক'রে
যে-সব অভিমতের পর্যালোচন। করেছেন, বিশেষতঃ শ্রীজীবগোস্বামীর যট্সন্দর্ডে
১৪৪ বৈষব-রস-গ্রকাশ
যে বিচারধার! প্রবতিত হয়েছে, তার সারম্বদূপই হ'ল গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শন ।
এই দর্শনকে অচিন্ত-ভেদাভেদ নাম দেওয়! হয়েছে _ ঈশ্বরের সঙ্গে জীবজগতের
সম্পর্ক-নির্ণয়ের দিকৃ থেকে । বস্ততঃ স্্টিটা কী, আমিই বা কী এবং জীব-
জগতের স্বরূপ বা ঈশ্বরের সঙ্গে এর সম্পর্ক নির্ধারণই ব৷ কিরকমের এই চিস্তাই
যাবতীয় দর্শনের মুখ) চিস্তা এবং এই চিন্তার মূল বিষয় অবলম্বনে অদ্বৈতবাদ
( শ্রশংকর ), বিশিষ্টাদৈতবাদ (শ্রীরামানুজ ), ছৈতবাদ বা ভেদবাদ (শ্রীমধ্ব ),
দ্বৈতাদ্ত ব। ভেদাভেদবাদ (শ্রীনিষ্বার্ক ) এবং শুদ্ধাদ্বৈতবাদ (শ্রীবল্পভ ) প্রভৃতি
দার্শনিক মতের উদ্ভব। এই ভাবে ঈশ্বর এবং জীবের সম্পক নিয়েই গৌড়ীয়
বৈষ্ণব দর্শনের নাম হয়েছে অচিন্ত্য-ভেদাভেদ। এর অর্থ হ'ল ঈশ্বর-জীবে
ভেদ এবং অভেদ দুই সম্বন্ধই বর্তমান; কিন্ত এ ছুই বিপরীত সম্ধদ্ধ তর্কে
প্রতিষ্ঠা পেতে পারে না, তাই অচিস্ত্য বা তর্কাতীত। প্রশ্ন হ'তে পারে,
যা তর্কের বিষয় নয় তাকে র্শন” নাম দিচ্ছি কেন? তার উত্তরে এই
বলতে হয় যে তা ছাড়া ভিন্ন কিছুও বল] যায় না। মূলতঃ ধর্মান্ুভৃতি
এবং বিশ্বাসের ব্যাপার হ'লেও তা পর্যালোচনা-সাপেক্, ঠিক কী তা
বোঝাতে যুক্তিতর্কের প্রয়োজন, সেজন্য বিবিধ শাঙ্রের ও গ্রস্থাদির মন্থন
এবং পরমত খগ্ডনও আবশ্তক এবং এইভাবে ষে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আস।
যায় তাকে দর্শন ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়। ভক্তিধর্ম আন্তরিক
অঙ্গভব এবং সুদৃঢ় বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। আবার উপনিষদের বিভিন্ন
উপলব্ধির যূলেও রয়েছে এ অন্থভব এবং বিশ্বাস। ব্রহ্ম বা ঈশ্বরকে সত্য
পদ্দার্থ ব'লে যার ধারণা এমন সব দর্শন বেদাস্ত ও উপনিষকেই সাক্ষ্য
মেনেছে। তাঁর উপরেই ভাষঙ্কের দ্বারা নিজের নিজের যুক্তিঙ্ঞাল বিস্তার
করেছে। এদিক দিয়ে কঠোর যুক্তিময় অদৈত দর্শনের ব্রহ্ষত্যবাদও'
মূলতঃ বিশ্বাসের বস্তই। আমল কথা৷ এই যে, যুক্তিতর্কে ঈশ্বর অপ্রমাণিত।
তাই গৌড়ীয় বৈষবেরা তর্ককে মৌলিক সমাদর ন] জানিয়ে হৃদয়াহ্মত
বিশ্বাসকেই বরণ করেছেন, মহাভারত অনুসরণে বলেছেন-__অচি্ত্যাঃ খলু যে
ভাবা ন তাংস্তর্কেন যোজয়েৎ। তারা বেদকে সর্বজ্র প্রমাণ বলে গ্রহণ
না ক'রে পুরাণ, বিশেষতঃ ভাগবতপুরাণকেই প্রমাণের শ্রেষ্ট মর্যাদা দিয়েছেন।
আর প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্তস্বরূপ শ্রীমৎ মহাপ্রভু যে-ধর্ম প্রকাশ করেছেন, তার
সমর্থন ও ব্যাখ্যানই চরম দার্শনিক কর্তব্য বলে নির্ধারণ কারছেন।
প্রধান প্রধান উপনিষদে পরতত্ব ব্রন্ধ বিষয়ে যে-সব মন্ত্র রচনা করা
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৪৫
হয়েছে তার মধ্যে কতকগুলি ব্রহ্মকে স্পষ্টভাবে নিগুণ বোঝাতে চেয়েছে,
কতকগুলি স্পষ্টত: স্গ্ডণ ব'লে অভিহিত করেছে,
ব্রহ্ম ব৷ ঈর টা
টিউজিং কতকগুলি মন্ত্র এমন রয়েছে যার সগুণ নিগুণ উভয়
মতান্ছসারী ব্যাখ্যাই সম্ভব। এরকম কয়েকটি মন্ত্র
আমর! পূর্বাভাষে উল্লেখ করেছি। আবার ব্যাসরচিত বেদাস্তস্ত্রকে শংকর,
রামান্জ, মধ্ব প্রভৃতি নিজের বোধ অনুসারে ব্যাখ্যা করেছেন। এসব
মতকলহের মধ্যে না নিয়ে আমর! শুধু গৌড়ীয় বৈষ্বদের অভিমতই
উপস্থাপিত করার প্রয়াস করব ।
গৌড়ীয় বৈষ্বর্দের অভিমতে ব্রহ্ম শক্তিমান যড়ৈশ্বর্যময় সাকার ।
অতএব তিনি ঈশ্বর বা ভগবান্। এই ঈশ্ববের তিনটি স্বাভাবিক শক্তি
রয়েছে, সন্ধিনী সংবিৎ এবং হলাদ্িনী। এ তিনটি একত্রে তার “অন্তরঙ্গ”
শক্তি। এ ছাড়া তার আরও ছুই শক্তির পরিচয় পাওয়। যায়__জীবশক্তি
এবং মায় । এও তার ম্বাভাবিক শক্তি, তবে এ ছুটি তার অন্তরঙ্গ নয়।
যদি প্রশ্ন করা যায়, এই শক্তির ধারণাব অন্তকৃল প্রমাণ গৌড়ীয় বৈষ্ণবের!
পেলেন কোথায়? তার উত্তরে বলা যায় এব প্রমাণ দিয়েছেন পঞ্চরাত্র,
বিষুপুরাণ, গীতা এবং ভাগবত থেকে, তা ছাডা উপনিষদেও এর ইঙ্গিত
পেয়েছেন । যেমন, শ্বেতাশ্বতব উপনিষৎ__
ন তন্য কার্ধং করণঞ্চ বি্যতে ন তৎসমশ্চাভ্যধিকশ্চ দৃশ্যতে ।
পরাস্ত শক্তিবিবিধৈব শ্রয়তে স্বাভাবিকী জ্ঞানবলক্রিয়। চ ॥
«এই ব্রদ্ধের (নিজ) কার্ধ এবং কর্মেক্দিয় নেই, তাঁর সমান বা অধিক
কিছু দেখা যায় নী। এর বিবিধ পরা শক্তি বা স্বাভাবিক জ্ঞান বল
ক্রিয়ার শক্তির কথা শোনা যায় ( এসবের সহায়তাতেই তিনি যা কিছু
করেন )।,
মায়াং তু প্রকৃতিং বিদ্যান্মা।য়িনং তু মহেশ্বরম্।
মায়াকে প্রকৃতি বলে জানবে । আর এই মায়ার অধীশ্বর হলেন যহেশ্বর |
আবার __
অজামেকাং লোহিতশুক্লকুষ্ণাং বহুবীঃ প্রজা: ক্জ্যমানাঃ স্বরূপাঃ
_বহুতর প্রজান্থট্টির কারফিত্রী লোহিত শুরু কষ (রজ: সত্ব, তম: )
বর্ণান্িতা এক অনাদি শক্তি ।
পাঞ্চরাত্রে বল! হযেছে, ঈশ্বরের যা আত্মত্ৃত দৈবী শক্তি ত৷ প্রলক্
১৩ |
১৪৬ বৈষব-ঙ্গ-গ্রকাশ
কালে স্তিমিত থাকে, আবার প্রলয়ান্তে বিছ্যতের মত স্ফুরিত হত়্। এই
শক্তির শ্বরপ বোঝাতে গিয়ে নারদপঞ্চরাত্র বলছেন £
শক্তয়ঃ সর্বভাবানাম্ অচিন্ত্যা অপৃথকৃম্থিতাঃ |
স্বরূপে নৈব দৃষ্তান্তে দৃশ্বন্তে কার্যতস্ত তাঃ॥
হুক্াবস্থা তু সা তেষাং সর্বভাবানুগামিনী |
ইনস্তয়া বিধাতুং সা ন নিষেদ্ধং চ শক্যতে ॥
অর্থাৎ) সকল বস্তরই শক্তি অচিস্ত্য; তা আবার 'এ বস্ত থেকে
অ-পৃথকৃ ভাবে বর্তমান থাকে । এই শক্তির অস্তিত্ব পূর্ব থেকে জানা
যায় না, কার্ধ-পরিণাম থেকে জান! যায়। এ হ*ল কার্ষের সুস্মাবস্থা,
কারণরূপ। একে ইচ্ছা করলে কেউ ওলটাতে-পালটাতে পারে ন!।
(বপ্তর শক্তির দৃ্টান্তে ঈশ্বরের শক্তিও অনুমেয় )। বিষুপুরাণেও এই প্রশ্ন
উত্থাপন করা হয়েছে। মৈত্রেয় পরাশরকে জিজ্ঞাসা করছেন :
নিগুণস্তাপ্রমেরস্ত শুদ্ন্তাপমলাত্মনঃ।
কখং সর্গাদিকর্তৃত্বং ব্রহ্মণোহত্যুপগম্যতে ॥
অর্থাৎ, নিগুণ শুদ্ধ অপরিমেয় ব্রন্দের স্থষ্টি-প্রভৃতি কাজ স্বীকার করা যায়
কী ভাবে? তার উত্তরে পরাশর বলছেন £
শক্তয়ঃ সর্বভাবানামচিন্ত্যজ্ঞানগোচর12 |
যতোহতো। ব্রহ্মণন্তাত্ত সর্গাগ্য1া ভাবশক্তয়ঃ ।
ভবস্তি তপতাং শ্রেষ্ঠ পাবকন্ত যথোষ্ণত৷ ॥
অর্থাৎ, পদার্থের শক্তি যুক্তিতর্কের গোচর যেমন নয়, তেমনি ত্রন্মের সৃষ্টি
প্রভৃতি কাজও তর্কে বোঝা যায় না। এখানে শক্তি মানতেই হয়, যেমন হল
অগ্নির উত্তাপ। বিষুপুরাণে বিষ্ণুর শক্তির তিনটি বিভাগ নির্দেশ করা
হয়েছে। এই বিভাগ তিনটি গৌভীয় বৈষ্বের| গ্রহণ করেছেন £
বিষ্ুশক্তিঃ পর] প্রোক্ত। ক্ষেত্রজ্ঞাখ্য। তথাপবা৷ !
অবিদ্যা কর্মসংজ্ঞান্তা তৃতীয়া শক্তিরিষ্যতে ॥
বির পর! ব' স্বরূপভূতশক্তি হ'ল এক, অপরা বা ক্ষেত্রজ্ঞা শক্তি (জীব-
শক্তি) আর এক এবং তৃতীয়া অন্তশক্তির নাম হ'ল অবিদ্যা ব! কর্মশক্তি |”
বিষুশক্তি বা পরা শক্তির পরিচয় দিতে গিয়ে এ পুরাঁণে বলা হয়েছে £
হলাদিনী সন্ধিনী সংবিৎ ত্বয্যেকা সর্বসংশ্রয়ে |
হলাদতাঁপকরী মিশ্রা ত্বয়ি নো গুণবজিতে ॥
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্ষের দারশশধিক প্রতিষ্ঠা ১৪৭
“সকলের আশ্রয়ম্বদূপ তোমাতে (ভগধানে ) হলাদিনী, সদ্ধিনী এবং সংবিৎ
এই তিন শক্তির একত্র প্রকাশ রয়েছে । এসৰ কিন্ত মায়িক জগতের
মানুষ প্রভৃতির ভোগ্য হলাদকরী, তাপকরী অথব। এ ছুয়ের ষিশ্রণ নয়।১
অর্থাৎ এ স্বরূপশক্তি অপ্রাকৃত। এ পুরাণেই জগংকে তার শক্কির
প্রকাশ ব'লে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে :
একদেশস্থিতস্াগ্রের্জোত্নস। বিস্তারিণী যথা।
পরন্য ব্রহ্ষণ: শক্তিন্তথেদমখিলং জগৎ ॥
“এক জায়গায় যেমন অগ্নি থাকে আর তার উত্তাপ বা আলে। যেমন
অন্থাত্র বিস্তৃত হয়, তেমনি পরব্রদ্ের শক্তির প্রকাশ হ'ল এই সমস্ত বিশ্ব ।”
গীতার সপ্তম অধ্যায়ে বিজ্ঞানযোগে ঈশ্বরের জড় মায়ারপ। গ্রকৃতি-শক্তি
এবং জীবশক্তির্র কথ নিয্নলিখিতভাবে বিবৃত করা হয়েছে :
ভূমিরাপোইনলে। বাস্ুঃ খং মনে। বুদ্ধিরেব চ।
অহংকার ইতীয়ং মে ভিন্ন প্ররুতিরষ্টধা ॥
অপরেয়মিতত্বন্তাং প্রকুতিং বিদ্ধি মে পরাম্।
জীবভূতাং মহাবাছো। ষয়েদং ধার্যতে জগৎ ॥
“ভূমি, জল, অনল, বায়ু, আকাশ ( পঞ্চ মহাভূত পঞ্চতন্মাতজ সহ )মন
(-.দশেক্দত্রিয় সহ) বুদ্ধি এবং অহংকার এই হ'ল আমার আটপ্রকারের এক
প্রকৃতি, অপর। অর্থাৎ জড়প্ররূতি। আর এ থেকে ভিন্ন আমার এক পরা
প্রকৃতিও আছে-_ত! হ'ল জীবভৃত, চেতনাত্মক । এর দ্বারাই আমি স্থষ্টিকে
ধারণ ক'রে আছি। কারণ, জীবরহিত অচেতন জগৎ ধারণ করা যায় না।”
এঁ অধ্যায়েই মায়াশক্তির কথা উল্লেখ ক'রে, ঈশ্বরের শরণ গ্রহণেই যে এ
মায়া অতিক্রম করা যায় সে কথাও বল হয়েছে £
দৈবী হ্যেষ। গুণময়ী মম মায়] ছুরত্যয়। |
মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে ॥
“আমার এই ত্রিগুণাত্মিকা দৈবী মায়া ছুরতিক্রম্যআা। একমাত্র আমার
আশ্রর গ্রহণ করলে এই মায়ার বন্ধন কাটানে। যায়।;
অন্তরঙ্গ বহ্রিঙ্গা এবং তটস্থা__্বরূপশক্তি, মায়াশক্তি এবং জীবশক্তি,
এই তিন শক্তি-বিভাণের উপর দাড়িয়ে আছে অচিস্ত্য-তেদাভেদবাদ এবং
বাঙ্লার বৈষ্বদের নিতান্ত অভিলধিত পরম পুরুযার্থ-- প্রেমভক্কি |
১৪৮ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
অস্তরঙ্গ1 চিচ্ছক্কি তটস্থ। জীবশক্তি।
বহিরঙ্গ। মায়! তিনে করে প্রেমভক্তি ॥ ( চৈ-চ)
উপনিষদ বেদান্ত থেকে আরম্ভ ক'রে পুরাণাদি সর্বশাস্ত্রে ব্রহ্ম বাঁ
ঈশ্বরকে সৎ, চিৎ এবং আনন্দ (সত্য, জ্ঞান এবং অনন্ত) ব'লে বর্ণনা
কর। হয়েছে। এই তিন গুণ আছে বলেই ব্রন্ধ সগ্ুণ। এই তিন গুণ
অবলম্বন ক'রে রয়েছে তার একেবারে স্বকীয় তিন শক্তি, যথাক্রমে সন্ধিনী,
সংবিৎ এবং হলাদিনী। এই তিন শক্তির পরিণামের দ্বার তার নিজ
লীলাবিলাস। এতিন শক্তি তার অন্তরঙ্গ বা স্বরূপশক্তি। সৎ অবলম্বনে
সদ্ধিনী হচ্ছে ঈর্বরকুষ্ণের সত্তার প্রকাশ, তার আবিরাবস্থান যেষন
বৃন্দাবন, মথুরা, দ্বারকা; তার পিতা-মাতা, গৃহ প্রভৃতি । সংবিৎ হচ্ছে
তার জ্ঞানাত্মক প্রকাশ, যা দিয়ে তিনি জানেন এবং অন্তকেও জানতে
সাহায্য করেন। আর হ্লাদিনী হচ্ছে তার আনন্দাত্মক বৃত্তির প্রকাশ,
বৃন্দাবনের গোপীরা এবং গোপীশ্রেষ্ঠা রাধা এই হলাদিনীরই সারভূত বস্ত।
এই হলার্দিনীতেই আবার স্বরূপশক্তির শ্রেষ্ঠ প্রকাশ। কাবণ, কুষ্ের
মধুররসলীলাই তার নিতান্ত অভিপ্রেত এবং শ্রেষ্ঠ লীলা। এই নিজস্ব
অন্তরঙ্গ শক্তির সহায়তাতেই পূর্ণ ভগবান্ শ্রীরুষ্ণের লীলা--প্রকটভাবে
বন্দাবনাদিতে, অপ্রকটভাবে বৈকুষ্ঠে, যেখানে নিত্যলীলা চলছেই ।
কিন্ত এই নিজলীলাতেই তার পূর্ণ তপ্তি নেই। স্ষ্ট জীবকে সেই
লীলার অংশীভূত কবাতেই তার অভিলাষের চরিতার্থত। এই জন্যে
জীবশক্তির পরিণাম দান, বিশ্বের প্রকাশ এবং বহিমুখখ জীবকে জড়শক্তি
মায়ার গ্রাস থেকে রক্ষা করার কৌশল রচন1। জীব ব। মান্য ঈশ্বরের
চিদ্ংশ থেকে আবিভূতি। বলা যায় কেশাগ্রকে শতভাগ ক'রে সেই সেই
অংশকে আরও শত শত ভাগ করলে যা দাড়ায় তা-ই হ'ল চিদ্ংশ জীবের
স্বরূপ। এ পরিমাণেই সে কৃষ্ণের সন্ধিনী সংবিৎ এখং হলাদিনী শক্তির
অধিকারী । কিন্তু ত। হ'লেও এই নিজ ম্বরূপ সে মায়াবশে ভুলে থাকে
এবং বিষয় ও সংসারকেই আপনার ব'লে মনে করে। ফলে সে ক্ষুদ্র স্থুখ
বা ছুঃখই ভোগ করে, জর মৃত্যু জন্মান্তরের মধ্যে দিয়ে পুনঃপুন আবতিভ
হতে থাকে।
কৃষ্ণ ভূলি সেই জীব অনার্দি-বহিমু।
অতএব মায়। ভারে দেই সংসারছুঃখ ॥
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৪৯
এই জীবকে নিজ অভিমুখী কর! এবং পরিশেষে জড়ের বন্ধন থেকে মুক্ত
ক'রে পূর্ণানন্দে স্থাপন করাও তার এক লীলা। এই লীলার চরিতার্থতার
জন্যই মায়াশক্তি এবং জীবশক্তির কল্পনা । জীবশক্তি তার ম্বরূপশক্তির
মধাবর্তী না হলেও সংলগ্ন, মায়ার মত বহিরঙ্গ নয়। ব্যষ্টি জীব মায়ার
দ্বারা অভিভূত হতে পারে, কিন্তু চিৎকণ বঃলে এই অভিভব থেকে মুক্তও
হতে পারে, বৈধী এবং রাগানুগ ভক্তির সহায়তায় এবং ঈশ্বরকৃপায়।
এই বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে কলে জীবশক্তি না-অস্তরঙা, না-বহিরঙ্গা অর্থাৎ
তটস্থা। জীব মায়াবদ্ধ আবার মায়ামুক্ত দুই-ই হতে পারে। এর জন্যও এ
হুলাদিনী শক্তির প্রকাশের প্রয়োর্জনীয়তা বয়েছে। চরিতামুতে বল। হয়েছে :
স্থথরূপ কৃষ্ণ করে সুখ আস্বাদন
ভক্তগণে স্থথ দিতে হলাদিনী কারণ ॥
হলাদিনী শক্তির প্রসারে তিনি ভক্ত-ভক্তি নিয়ে বিলাস করেন। চিদ্দংশ
জীবের মুল স্বগৃহ হ'ল কৃষ্সসামীপ্য, কৃষ্ণের ম্বূপশক্তির অন্তত্তি হওয়া,
কার্য হল কুষ্ণসেবা, প্রাপ্তি হ'ল আনন্দময়তা। এ বিষয়ে পথ দেখাবার
জন্য বুন্দাবনে ও বিশেষভাবে নবদ্বীপে তাঁর প্রকটলীল1। বুম্দাবনে স্বরূপে
এবং নদীয়া অবতারে ৷ ভক্তদের উদ্ধারের জন্য এই প্রকটলীল! আহ্ষঙ্গিক
হ'লেও অপ্রধান নয়, কারণ এর মধ্যস্থতায় তার স্ববাসনারও পুতি ঘটছে।
চরিতামুতকার বলছেন £
প্রেমরসনির্যাস করিতে আস্বাদন ।
রাগমার্গ ভক্তি লোকে করিতে প্রচারণ ॥%*
ব্রজের নির্মল রাগ শুনি ভক্তগণ।
রাগমার্গে ভজে যৈছে ছাড়ি ধর্ম কর্ম ॥
পূর্বেকার বর্ণাশ্রমধর্ম এবং মোক্ষের সহায়ক কর্মের পথ ত্যাগ ক'রে ভক্তের
যাতে অহেতুকী অকৈতব কৃষ্ণপ্রেম লাভ করতে পারেন এজন্ও দ্বাপরলীল'
এবং কলিষুগীয় লীল1। উভয়ত্রই কৃষ্ণ নিজ আচরণের দ্বারা মুমুক্ষ জীবকে
ষথার্থ পথের সন্ধান দিয়েছেন !
জীবের স্বরূপ বিষয়ে গৌড়ীয় বৈষবদেব এই যে শক্তপরিণামবাঘ
স্থাপন এতে জীবকে ব্রহ্ম থেকে পৃথক এবং বাস্তব সত্ব! হিসেবে দেখ! হয়েছে
আবার ব্রনের অধু-পরিমাণ অংশ বলে ব্রদ্ধের সঙ্গে জীবের যোগও নিদিষ্ট
হয়েছে। শ্রীল রামান্জাদি তত্ববাদীরাও জীবকে অধু এবং অংশ বলে গ্রহ
৪৫০ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
করেছেন, কিন্ধ শক্তিবাদের আশ্রয়ে বিষয়টির যেমন হুন্দর সমাধান পাওয়া
বাচ্ছে এমন কোথাও নয়। আসল কথা হ'ল অদ্বৈতৈ জীবকেই প্রকাঁরাস্তরে
ব্রহ্ম বলা হয়েছে। বুদ্ধিবা মায়ার দর্পণে প্রতিবিদ্বিত ব্রন্মই হ'ল জীব।
অথচ ভক্তিমতে জীবে এবং ব্রন্ধে প্রবল পার্থক্য, জীব মায়াবশ আর ব্রহ্ম
মায়াধীশ। অভেদ আছে, সে অভেদ এ শক্তির দিক থেকে । দৃষ্টান্ত হ'ল :
মুগমদ তার গন্ধ যৈছে অবিচ্ছেদ।
অগ্নিজালাতে যৈছে নাহি কোনে] ভেদ ॥
অগ্নি এবং জাল] কারণ-কার্ধস্থত্রে অথবা শক্তির স্থত্রেই অভিন্ন আবার বস্ত
হিসেবে ভিম্নও বটে। এই ভিন্নাভিন্নত্ব ছূর্ঘট ব্যাপার, তাই অঠিস্ত্য।
এইভাবে জীব-শক্তির সঙ্গে শক্তিমান্ ব্রর্মের সম্পর্ক অচিন্ত্য-ভেদাভেদ।
ব্ষ্টি জীব এ শর্ষিব মধ্যবতিতাতেই ঈশ্বরের অংশ, অণু, পরিমাণে অগণিত ।
সে কৃষ্ণ নয়, কৃষ্দাস , শুদ্ধ চিৎ নয়, জড়মিশ্রিত চিৎকণ মাত্র। জীবশক্তিও
কষণনিয়ন্ত্রিত, কৃষ্চ্ছোর বশীভৃত। ঈশ্বরের সঙ্গে জীবের এই পার্থক্যের
বিষয় বোঝাতে গিয়ে চরিতামূুতকার বলছেন £
ঈশ্বরের তত্ব যেন জলিত জলন।
জীবের স্বরূপ ষেন স্ফুলিজের কণ॥
অস্থি এবং শ্ফুলিজ, স্থর্য এবং রশ্মিরেখা এই সম্পর্কের কতকট। দৃষ্টাস্তস্থানীয়
হতে পারে । আবার অদ্বৈতের প্রতিবিষ্ববাদের উপম! গ্রহণ করেও এ
পার্থক্য প্রতিপন্ন কর। যেতে পারে-_
অনন্ত স্কটিকে যৈছে এক স্্য ভাসে।
তৈছে জীব গোবিন্দের অংশ পরকাশে ॥
গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতে মায়াঁও ঈশ্বরের স্বাভাবিকী শক্তি ত্রিগুণাত্মিকা,
জভবিশ্বগ্রসবিনী । এই মায়৷ জীবের সংসারবন্ধন-হেতু । এ মায়া শংকরবণিত
বিবর্ত নয়, এ ঈশ্বরের শক্তির পরিণাম, বাস্তব । ইশ্বর জগতের নিমিতভ-কারণ
(কর্তা) এবং উপাদ্দান-কারণ দুইই। তবে সেই আত্ম-উপাদ্দানকে
তিনি আত্মশক্তির সহযোগে কার্যসামর্থ্য দ্রান করেন। কিন্তু এই মায়াশক্তি
ঈশ্বরকে স্পর্শ করতে পারে না। এ তাঁর বহিরঙ্গাী শক্তি। মায়ার
প্রভাবের ক্ষেত্র জীবজগৎ, জীবকে কৃষ্ণ-বহিমূ্থ করাই তার স্বভাব।
এজন্য একে অবিগ্ভা বল। যায়। মায়া অনার্দ এবং বাস্তব পদার্থ,
শংকর করিত 'সাসন্ভিরনির্বচনীয়া নন। ঈশ্বর এই মায়ার নিয়স্তা,
গৌড়ীয় বৈফ্বধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৫১
মায়া তার দ্াসীরপা। বহিদ্বারের পরিচারিক1 বলেও বটে, আবার চিদ্ংশ
জীবকে অভিভূত করে বলেও বটে, মায়া যেন ঈশ্বরের দৃষ্টিপথ থেকে দূরে
দূরেই থাকে । শ্রীমন্তাগবতে বল] হয়েছে ২
বিলজ্জমানয়। যস্থ স্থাতুমীক্ষাপথেইমুয়।
বিমোহিতা৷ বিকথস্তে মমাহমিতি ছুধিয়ঃ ॥
ঈশ্বরের দৃষ্টিপথে যেতে এই মায়া লজ্জিতা হন, কিন্তু ইনিই আবার
জীবের বুদ্ধিবিভ্রাট ঘটিয়ে সংসারে “আমি, আমার” এই বোধের সৃষ্টি করে
তাকে নিজ স্বরূপ উপলব্ধি থেকে বঞ্চিত ক'রে রাখেন। মায় ঈশ্বরেরই
শক্তি ব'লে ঈশ্বর থেকে অশ্ডিম্ন হ'লেও কার্ধতঃ ভিন্ন হয়ে পড়েছেন, এই
দূরত্বের বিষয় বোঝাতে গিয়ে চরিতামৃতকার বলছেন :
কৃষ্ণ সূর্যসয, মায়! হয় অন্ধকার |
ধাহা কৃষ্ণ তাহা নাহি মায়ার অধিকার ॥
মায়ার সঙ্গে স্গির সম্বন্ধ, কিন্তু রুষের সম্বন্ধ নাই_এ বোঝাতে গিয়ে
বলা হয়েছে, পূর্ণ ভগবানের নিবাস হ'ল বৈকৃণ্ঠে, যা পরব্যোমেরও উপরে ।
আর পরব্যোমের বাইরে রয়েছে বিশাল কারণার্ণব, তারও পারে মায়ার
অধিকার। এমন কি কৃষ্ণের অংশ যে মহাবিষু। কারণার্ণবশায়ী, মায়া
তাকেও স্পর্শ করতে পারে না।
মায়ার এই বহিরঙ্গত্ব কল্পনাও অধ্বৈতমত-বিরোধী । অদ্বৈত মভে মাঝ
ব্রদ্ধকেও উপাধিযুক্ত করতে পারে, তখনই নিগু৭ ব্রদ্ষ সগ্ুণ হয়ে পড়েন।
গৌড়ীয় বৈষ্ণবের। ঈশ্বরে মায়ার স্পর্শ মানেন না। কিন্তু স্বরূপ-শক্তির অন্তর্গত
নিজলীলার সহায়িক হিসেবে অন্য এক মায়ার কথা এর! কল্পনা! করেছেন,
তিনি হলেন যোগমায়া। ইনি শ্রীরুষ্ণের অন্তরঙ্গ । ইনি বিশুদ্ধ সত্বযৃতি।
এইভাবে শক্তি ও শক্তিমানের ভেদ ও অভেদ ছুই সম্পর্ককেই মান্য
ক'রে গৌড়ীয় বৈষব দর্শনে যেমন জীবজগৎ এবং ঈশ্বরের সম্পর্ক নৃতনভাবে
স্থির করা হছে, তেমনি নৃতন সাধনমার্গ শুদ্ধাভক্তির যাথার্থ্যও স্থাপন
করা হয়েছে। এজন্য যেমন রামানুজাদি তত্ববাদীদের অভিমতের গ্রহণ-
বর্জন করতে হয়েছে, তেমনি ভক্তিবার্দের প্রবল প্রতিপক্ষ
শংকরের বিবর্তবাদ খণ্ডন করতে হয়েছে । শংকরাচার্ধ
তার ক্রহ্স্থত্রভাষ্যে জীবজগতের স্বরূপের সমাধানকল্পে
বিবর্তবাদ স্থাপন করেছেন। বিবর্ত শব্দের অর্থ ভ্রান্তি, এক বস্ততে অন্য
বিবর্তবাদ ও
পরিণামবাদ
১৫২ বৈষব-রস-প্রকাশ
বস্তর ভ্রম বোধ। ভ্রান্তিরতশ্মিংস্তদবুদ্ধিঃ। কোনো! পদার্থ তার স্বরূপে
থাকলেও জীবের ধারণায় অন্য বস্তর প্রতিভা জাগাতে পারে। এই
ভ্রম বা! প্রতিভাসই বিবর্ত। যেমন রজ্জু সর্পের, শ্তক্তি রজতের । এই
বিবর্তবাদ অঙ্ছসারে এবং মায়ার কার্ষকারিত। কল্পনা ক'রে তিনি তার
অদ্বৈত মত প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার মতে রজ্জুতে সর্পভ্রমের মত ব্রদ্ধে
জীবজগতের ভ্রম ঘটছে। আসলে জীবও নেই, জগৎও নেই। স্যন্টি ব'লে
যা মনে হচ্ছে পরমার্থতঃ তা নেই, আছে ব্রন্ম। এরকম সাংঘাতিক ভ্রম
কিসের জন্য হচ্ছে? তার উত্তরে শংকরাচার্য মায়ার কথা বলেছেন।
শংকরাচার্য জ্ঞানমার্গের পথিক। ভক্তিমার্গের পথিক ধার] তার জীব-
জগতের বাস্তবসত্ব। স্বীকার করেন ব'লে বিবর্ত-মত গ্রহণ করেননি । তাদের
মতে ব্রক্জীবজগৎ সম্বন্ধে বিবর্তবাদ ঠিক কথা বলে না। এ অভিপ্রায়
ব্যাসের বেদস্তস্তত্রেও নেই। শংকরাচার্য অদ্বৈত মত স্বাপনের আগ্রহে
বেদাস্তস্থত্রের বিকৃত ব্যাখ্যা করেছেন। আত্মক্তেঃ পরিণামাৎ্ব_এই
ব্যাসস্ত্রে ব্রহ্ম নিজেকে জগংরূপে পরিণত করেছেন এ কথা স্পষ্ট বলা
হয়েছে। স্থতরাং পরিণামবাদই ঠিক কথা, ভ্রান্তিবাদ নয়। কিগু এ
বিষয়ে অদ্বৈতবাদীর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গোটা ব্রন্মের পরিণাম কন্পন।
করলে শুদ্স্বরূপ ব্রদ্ধ বিকারী হয়ে পডেন। আর ব্রন্ষের অংশবিশেষের
পরিণাম শ্বীকার করলে ব্রদ্ষের ছুই পৃথক বিভাগ অনিবার্য হয়ে পডে।
এই যুক্তি খুবই সমীচীন । সেজন্য বাঙলার বঞ্চব দীর্শনিকেরা বর্গের
অচিস্ত্য শক্তি কল্পনা! ক'রে এর সমাধান করতে চেয়েছেন। তার বলেন,
ব্রন্ধের পরিণাম হচ্ছে না, ব্রদ্মের শক্তির পরিণাম হচ্ছে, তাই ব্রহ্ম বিকারী
হচ্ছেন না এবং পরিণত ব্রক্ষশক্তির সঙ্গে অপরিণত ব্রন্দের কোনো ভেদই
ঘটছে না। এক্ষেত্রে ব্রহ্ম অবিকৃত থেকেও পরিণত হচ্ছেন, যেমন দুধ
পরিণত হচ্ছে দধিতে, স্থ্বর্ণ পরিণত হচ্ছে অলংকারে। এই পরিণামে
দুগ্ধ বা! ম্বর্ণের মৌলিক পদার্থের পরিবর্তন হচ্ছে না। চরিতামৃতকার
উদ্দাহরণ দিচ্ছেন £
মণি যৈছে অবিকৃত প্রসবে হেমভার।
জগব্প হয় ঈশ্বর তবু অবিকার ॥
ঈশ্বর বিকারী ন] হয়েও পরিণত হচ্ছেন। এখানেও তাদের ঈশ্বরের
অনস্ত অচিস্ত্য শক্তির আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়েছে।
গৌড়ীয় বৈষ্ঞবধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৪৩
এর পর আমরা গোৌড়ীক্স বৈষ্বদর্শনে উপস্থাপিত ঈশ্বরতত্বের সম্মুখীন
হুচ্ছি। অচিস্ত্য-ভেদাভেদের ম্বরূপ বোঝাতে গিয়ে শক্তিতত্বকে সাধারণ-
ভাবে উপস্থাপিত ক'রে, পরে বিশেষ বিশেষ বিভাগও আলোচিত হচ্ছে।
মহাপ্রতু শ্রীচৈতন্যের ইঙ্গিত গ্রহণ করে বুন্দাবনবাসী বাঙলার বৈষ্ণব
তাত্বিকেরা বছকথিত ব্রদ্ধকে পরতত্ব বলে স্বীকার করেননি । তাদের মতে
সগ্তুণ, সবিশেষ, সশক্তিক ঈশ্বরই চরমতত্ববস্ত । এবং এই
ঈশ্বর হলেন শ্রীকষ্ণ। তিনিই পূর্ণ ভগবান্। বিষ্ণু
নারায়ণ, অবতারার্দি তার অংপ্লা বা কলা, এমন কি অংশেরও অংশ।
শ্রীমস্ভাগবতের কষ্ণলীলার উপর, বিশেষত: নিম্নলিখিত উক্তির উপর জোর
দিয়ে তার! কৃষ্ণের স্বয়ং বাঁ স্বাধীন ভগবত্ব। প্রতিষ্ঠায় যত্ববান্ হয়েছেন :
এতে চাংশকলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্ত ভগবান্ স্বয়মূ।
ইন্দ্ারিব্যাকুলং লোক ৃড়য়স্তি যুগে যুগে ॥
অর্থাৎ, এই সব (মত্স্ত-কৃর্যাদি) অবতারেরা পুকুযোত্বমের অংশ এবং
কলা, কিন্তু কৃষ্ণ হলেন স্বাধীন স্বয়ংসম্পূর্ণ ভগবান। এ অবতারের।
অস্থর-উপদ্ত পৃথিবীকে নিরুপদ্রব করেন মাত্র। এছাড়া কৃষ্ই যে
পূর্ণততম ঈশ্বর এ ধারণায় তাদের সাহায্য করেছে ব্রহ্ষসংহিতার কৃষণ-
গোবিন্দ-ভগবত্তা-বাদ এবং গীতার শ্রীরুঞ্চের স্বমুখবচন। ব্রক্ষসংহিতায় বয়েছে 2
ঈশ্বরঃ পরম: কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ |
অনাদিরাদিগোৌবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্॥
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ নানাভাবে বলেছেন যে--আমিই সব। যেমন,
গতির্ভর্তা প্রভু: সাক্ষী নিবাসঃ শরণং স্ুহৎ।
প্রভবঃ প্রলয়ঃ স্থানং নিধানং বীজমব্যয়ম্ ॥
আবার, অহং কৎতম্য জগতঃ প্রভবঃ প্রলয়স্তথ! ॥
মং পরতরং নান্যৎ কিঞ্চিদপ্তি খনগ্রয়।
মায় সর্বমিদং প্রোতং স্থত্রে মণি-গণা ইব ॥
অপিচ, মামেব যে প্রপদ্ন্তে মায়ামেতাং তরস্তি তে॥
এবং অহমার্দিহি দেবানাং মহষাঁণাঞ্চ সর্বশঃ |
অহ: অর্বন্ত গ্রভবো মত্ত; সর্বং , প্রবর্ততে |
ন তাত্তি বিনা যংস্ান্ময়া ভূতং চরাচরম্ ॥
ঈশ্বরতত্ত
১৪৪ বৈফব-স-প্রকাশ
অথব] বছনৈতেন কিং জ্ঞাতেন তবার্জুন।
বিষ্টভ্যাহমির্ং কৎস্মমেকাংশেন স্থিতে! জগৎ ॥ ইত্যাদি।
স্থৃতরাং কৃষ্ণকে পূর্ণ ভগবান্ রূপে স্থাপন করতে গৌড়ীয় বৈষ্ণবদদের বিশেষ
তর্কের সম্মুখীন হতে হয়নি। ত1 ছাডা ভগবান হিসাবে রাধাশক্তিসহ
গোপাল কৃষ্ণের উপাসন] নিষ্বার্ক সম্প্রদ্দায়ে পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল,
যদিচ বামান্জ এবং মধব সম্প্রদাম লক্ষ্মী-নারায়ণের উপাসনাতেই আস্থাবান্
ছিলেন। গৌড়ীয় বৈষুবদের কুষ্চজনের অন্য বৈশিষ্ট্য হ'ল উপাশ্য কৃষ্ণের
নবরূপে, বিশেষত: মধুর মততেই আসক্তি।
শ্যামমেব পরং বপং পুরী মধুপুরী বর]।
বয়ঃ কৈশোরকং ধ্যেয়মাছ্চ এব পরে! রসঃ॥
চরিতামৃতকারের ভাষায় ঃ
কৃষ্ণের যতেক খেলা সর্বোত্তম নবলীলা
নরবপু তাহার স্বরূপ।
গোপবেশ বেণুকর নবকিশোব নটবর
নরলীলার হয় অনুরূপ ॥
ছিতূজ নরমূতিরই স্থান তাদের সাধনায়, যদিচ চতুভূজি মূতিকেও তারা,
বর্জন করেন নি, এস্বরময় বিলাসমূতি ব'লে গ্রহণ করেছেন।
গৌড়ীয় বৈষুবগণ পরমতত্বকে “ভগবান আথ্যায় অভিহিত করতে
চান । তাহলে প্রশ্ন, অন্যত্র পরমতত্বকে যে ব্র্গ
(যেমন উপনিষদে ), পরমাত্মা €( যেমন যোগমার্গে )
প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়, সেই আখ্যা! এবং আখ্যাত তত্ব সম্বন্ধে
তাদের কী অভিমত? ব্রদ্ধ পরমাত্মা কি পূর্ণ ভগবান্ নন্? যেমন
ভাগবতেই বল] হয়েছে ঃ
বস্তি তত্তত্ববিদন্তত্বং যজংজ্ঞানমদ্য়ম্।
ব্রদ্মেতি পরমাত্মেতি ভগবানিতি শব্যতে ॥
অর্থাৎ, তত্ববিদেরা৷ যাঁকে অছয় জ্ঞানতত্ব বলেছেন তাই কোথাও ব্রহ্গ,
কোথাও পরমাত্মা, কোথাও ভগবান্ শব্খে অভিহিত। এই ছন্দের সমাধানে
'তার। ভাগবত অন্থসরণে এই তিন আখ্য। গ্রহণ ক'রে এ আখ্যান বিজ্ঞাপিত
তত্ববস্তর পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। উক্ত গ্লোকে নির্দিষ্ট তিন তত্বের পার্থকাও
বরক্ম-পরমাআআ-ভগবান্
গৌড়ীয় বৈষ্রধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠ ১৫৫-
বৈষ্ণবদর্শনে 'শক্তি'র দিক্ থেকে নির্ণীত হয়েছে। এশ্বর্ধময় শক্তির পূর্ণতম
বিকাশে ভগবান্। স্বল্প বিকাশে পরমাত্মা এবং আরও স্বশ্প বিকাশে অথবা!
শক্তির প্রায় অন্ধপস্থিতিতে ব্রহ্ম । ব্রহ্ম, পরমাত্মা, ভগবান্ সবাই সেই অস্
তত্বকেই নির্দেশে করে, তবে শক্তির তারতম্যে এরকম অভিধা। প্রকাশ-
বৈচিত্র্য হিসেবে ভিন্ন নাম। ব্রহ্ম নিবিশেষ এবং অস্ফুরিত-শক্তি। যে সব
ভক্ত জ্ঞানের বিষয় বিবেচন! ক'রে পরতত্বকে উপলব্ধি করতে চান, ব্রহ্ম তাদের
উপান্ত। এই ব্রহ্ম চিৎসত্বা “শক্তিবর্গলক্ষণ-তদ্বর্মীতিরিক্তং কেবলং জ্ঞানম্ ।
পরমাত্মা! শব্দে জীবের অন্তর্যামী যোগীদের ধ্যেয় বস্তকে বোবায়। জীব-
গোস্বামীপাঁদের ব্যাখ্যায়__প্মায়াশক্কিপ্রচর-চিচ্ছক্ত্যংশবিশিষ্ট” অর্থাৎ যার মধ্যে
মায়াশক্তির প্রাচূর্য আছে এবং চিচ্ছক্তির অংশ আছে মাত্র। এই হিসেবে
পরমাত্সা ভগবান্ থেকে ন্যুনশক্তি। চরিতামূতে একে ভগবান্ রুষ্ণেব অংশ
বল] হয়েছে- “পরমা! ধেনো! তেতো কৃষ্ণের এক অংশ” ভগবান্ ব'লে
তিনিই কথিত হন ধার মধ্যে সর্বশক্তি অর্থাৎ স্বরূপশক্কি, জীবশক্তি এবং
মায়াঁশক্তির পূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে । বিষণুপুরাণ মতে মায়াজনিত সত্ব, রজ:,
তমোগুণ যাঁর মধ্যে নেই, ধার মধ্যে শুদ্ধ সব্বগ্ডণ রয়েছে এবং ঘিনি শক্তি,
বীর্ধ, জ্ঞান, তেজ প্রভূতিব আঁধার । ভগ” শব্দে এশ্বর্যার্দির সমগ্র
বোঝায়
এ্বর্য্য সমগ্রন্য বীর্ষশ্য যশস: শ্িয়ঃ।
জ্ঞানবৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষগ্নাং ভগ ইতীঙ্গন] |
ভগবান্ বিশেষণযুক্ত, আর ক্রচ্ম বিশেষণহীন। এই ভগবান্ হলেন শ্রীরুষ্,
আব ক্রক্ম হলেন তিনি যাকে নিয়ে উপনিষর্দে বলা হয়েছে-_-'আনন্দং ব্রহ্ম”,
“দেব ব্রহ্গ ত্বং বিদ্ধি”, “তর্দবিজিজ্ঞাসন্য তদ্ ব্রহ্ম” ইত্যাদি ।
প্রীকর্চের ভগবত, শক্তিমত্তা এবং সাকারত্বের জন্য তাঁকে আনন্দ ঘন,
চিদ্ঘন বিশেষণে অভিহিত কবা হযেছে। ফলে তার ঘনত্ব বা মৃতির উপব
জোর দেওয়। হয়েছে । বৈষ্ঞবর্দের ধারণায় কৃষ্ণের বিগ্রহও কৃষ্ণের মত শুদ্ধ-
সববযুক্ত, অপ্রার্ৃত, লৌবিক বা মাঁয়িক নয়। যৃত্তিতে দেহ-দেহী চে
নির্ধারণও অন্কচিত, কারণ তা জীবদেহ নয়। বস্তুতঃ উপনিষদের ব্রদ্দেব
বর্ণনার মধ্যেই সাকারত্বেব আভাস পাওয়া যায়। যেমন ছাল্দোগ্য উপনিষদের
“তদৈক্ষত বনু স্যাং প্রজায়েয় অথবা কঠোপনিষদের “আসীনে দৃরং ব্রজতি
শয়ানো যাতি সর্বতঃ অথবা শ্বেতাশ্বতর-_'অপাণিপাদে। জবনো গ্রহীতা
১৫৬ বৈষব-রস-প্রকাশ
পশ্যত্যচক্ছ: স শৃণোত্যকর্ণঃ” | ব্রন্মের ইন্জ্িয়াদি, করচরণার্দি নাই অথচ
ইন্জিয়াদির কার্ধ রয়েছে। এতে বোঝা যায় তার প্রাকৃত ইন্ছরিয় মন দেহ
নেই, কিন্ত অপ্রাকত ইন্জিয়ার্দি আছে। এছাড়। শ্রুতিতে নিবিশেষ ব্রক্ম বলার
পরে এরকম বর্ণনা দেওয়ার সমাধান কোথায়? এই প্রসঙ্গ তুলেই মহাপ্রভু
পার্বভৌমের কাছে ব্রদ্দের সবিশেষত্ব বর্ণনা করেছিলেন £
নিবিশেষ তারে কহে যেই শ্ররতিগণ।
প্রাকৃত” নিষেধি করে অগ্রাকৃত স্থাপন ॥
ভগবান্ বহু হৈতে কৈল যবে মন।
প্রাকৃত শক্তিতে তবে কৈল বিলোকন ॥
সেকালে নাহিক জন্মে প্রাকৃত মন-নয়ন।
অতএব অপ্রাকৃত ব্রন্মের নেত্রমন ॥
শুধু দেহেক্জিয়া্দির নয়, ব্রদ্মের রূপের আভাসও উপনিষদ কোথাও কোথাও
মিলছে । যেমন, কোথাও বলা হয়েছে ুক্সবর্ণ”, কোথাও “আদিত্যবর্ণং*
কোথাও বা “নুবর্ণজ্যোতিঃ। বৈষ্ণব ভক্তের ধারণায় ঈশ্বর তমালশ্বামবর্ণ।
কৃষ্ণ শব্দের বাচ্য নির্ণয়কল্পে এই বর্ণের উল্লেখ করা হয়েছে ( নামকৌমুদী ) :
“তমালশ্তামলত্বিষি শ্রীযশোদাস্তনন্ধয়ে |
কুষ্চনাম্ো বূটিঃ
তমালের নায় শ্টাম বর্ণ ধার, আর যিনি যশোদার স্তন্ত পান করেছেন, কৃষ্ণ নামে
তাকেই বোঝায়, আর কাউকে নয়। যুগাবতার নির্ণয়কল্পে শ্রীমদ্ভাগবতে
গর্গবচনে বর্ণ দিয়েই নির্দেশ কর] হয়েছে £
আসন্ ব্ণাস্ত্রয়োহহ্স্ত গৃহতোহইন্যুগং তনৃঃ |
শুরু রক্তস্তথ। পীতঃ ইদানীং কৃষ্ণতাং গতঃ ॥
শুরু রক্ত পীতবর্ণ এই তিন ছ্যতি।
সত্য ত্রেতা৷ কলিকালে ধরেন শ্রীপতি ॥
ইদানীং দ্বাপরে তি'হে৷ হৈলা কৃষ্ণবর্ণ ।%*
কলিকালে যুগধর্ম নামেব গ্রচার।
তথি লাগি পীতবর্ণ চৈতগ্াবতার ॥ (চৈ)
পুনশ্চ ভাগবতে-__
হবাপরে ভগবান্ শ্তামঃ পীতবাসা নিজাযুধঃ।
এই বর্ণ এবং বর্ণলাঞ্থিত বূপ নিয়ে কৃষ্ণবিষয়ক এবং গৌরচন্দ্রবিষয়ক পদাবলীতে
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠ। ১৫৭,
যে রম্য ও সুক্ষ অধ্যাত্মময় ক।ব্যের উৎসার ঘটেছে তার সঙ্গে বৈষুব রসিক-
মাত্রেই পরিচিত। ঈশ্বরের সচ্চিদ্ানন্দ স্বব্ধপ যেমন তার থেকে অভিন্ন,
তেমনি রূপ এবং অঙনপ্রত্যঙযুক্ত দেহও অভিন্ন, বিগ্রহযৃতিও অভিন্ন।
ঈশ্বরের বিগ্রহ যেমন তার স্বরূপভূত, স্বপ্রকাশ, চিদানন্দময়, তার নামও
তেমনি । পদম্মপুরাণে বল! হয়েছে, কৃষ্ণ হলেন নামময়,
নামরূপ, নামসর্বস্ব২ কারণ নামের সঙ্গে নামীর রয়েছে
অভেদ ₹ নামচিস্তামণিঃ রুষ্ণশচৈতন্যরসবিগ্রহঃ। পূর্ণ? শুদ্ধে! নিত্যমুক্তঃ অভিন্ন-
ত্বান্নামনামিনঃ ॥ কৃষ্ণের বিলাস, প্রকাশ, শক্তি হিসেবে যেমন অসংখ্য বিগ্রহ,
তেমনি এসবের নামও অগণিত! অথচ প্রত্যেকটি নামই নামীর সঙ্গে
অভিন্ন। নামের এই মাহাত্ম্য প্রতিষ্ঠা বাঙলার বৈষ্ণবধর্মে মহাপ্রভৃর সর্ব-
শেঠ অবদান। তার নিজের নামজ্পে আগ্রহ এবং হরিদাস ঠাকুরের
নামাসক্তির ভূয়সী প্রশংসা প্রসিদ্ধ।
হরেন্নাম হরেন্নাম হরেন্নামৈৰ কেবলম্।
কলো নাস্ত্যেব নাস্ত্েব নাণ্য্েব গতিরন্যথ| ॥
নারদীয় তন্ত্রোক্তু এই বচন তিনি পুনঃপুন উদ্ধার ক'রে নামের সর্বমন্ত্র-
সারত্ব নির্দেশ করেছেন।
“শিক্ষার্টক” নামে তার যে কটি শ্লোক রচনা পাওয়া যায় তাতে
মুখ্যভাবে নামকীর্তনের উপরেই তিনি জোর দিয়েছেন । তিনি বলছেন,
কলিষুগের অন্ত কোনে সাধন নেই, নামকীর্তনেই চিত্তশুদ্ধি, সংসারনাশ
থেকে কষ্ণপ্রাপ্তি পর্যস্ত যাবতীয় অভীষ্টের সম্পূরণ ঘটবে £
নাম-নামী
চেতোদর্পণমার্জনং ভবমহাদাবাগ্রি-নির্বাপনং
শ্রেয়ঃকৈরবচন্দ্রিকাবিতরণং বিদ্যাবধূজীবনম্।
আনন্দান্বৃধিবর্ধনং প্রতিপদং পূর্ণামৃতান্বাদনং
সর্বাত্মন্পনং পরং বিজয়তে শ্রকৃষ্ণসংকীর্তনম্ ॥
অর্থাৎ দর্পণরূপ যে চিত্ত মলিন হয়ে আছে বিষয়ের স্পর্শে, ত1 নামকীর্তনের
ফলে মাজিত হয়ে যাবে, কৃষ্ণের প্রতিবিম্বধারণের যোগ্য হবে; সংসাররূপ
দ্রাবাগ্রির দাহ নাঁমকীর্তনেই প্রশমিত হবে) মঙ্গলপদ্প
বিকশিত হবে, মঙগল-জ্যোত্নায় উদ্ভাদিত হবে দিকৃ;
অবিষ্তা চলে গেলে বিগ্ভাবধূ প্রাণ ফিরে পাবে, আনন্দসমুদ্র উচ্ছলিত হুবে।.
এবিষয়ে শিক্ষার্টক
১৫৮ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
এ নামের প্রতিবর্ণে পূর্ণামৃতের আস্বাদ ঘটবে এবং অন্তরাত্মা অমতে জান
করবে । মাষের এমনিই মহিমা! অপিচ
নায়ামকারি বন্ধা, নিজশক্তিযোগা-
স্তত্রাপিতা, নিয়মিতঃ স্মরণে ন কাল: ।
এতাদৃশী তব কৃপা ভগবন্ মমাপি
হুর্দৈবমীদৃশম. ইহাজনি নান্থুরাঁগঃ ॥
অর্থাৎ নামের কত বৈচিত্র্যই না তুমি দিয়েছ। হে ভগবন্! তাতে তোমার
যাবতীয় শক্তির যোগ অর্পণ করেছ, আবার নামগ্রহণের কোনে কালাকাল
তুমি নির্দেশ করনি; জীবের প্রতি তোমার এমনই কৃপা! কিন্তু হায়,
আমার এমনই ছুর্ভাগ্য, যে, এত ছৃলভগুণসম্পন্ন অথচ এত সহজসাধ্য নামে
আজও আমার অন্থরাগ জন্মাল না । মহাপ্রতূর আবির্ভাবের বৈশিষ্ট্যই হু'্ল, নায-
প্রেমমূলক ভক্তি শ্িজে আচরণ ক'রে অগণিত সাধারণ মান্ধষকে তিনি
উন্নত ধর্মের পথে প্রবেশাধিকার দিয়েছেন। যাদের মন্দিরপ্রবেশ নিষিদ্ধ,
বিগ্রহসেবায় যাদের অধিকার নেই, এমনকি সমাজ যাদের বিগ্রহদর্শনও
নিষিদ্ধ করেছে, তাদের উদ্ধারের জন্তই ষে মহাপ্রভু এসেছিলেন এতে
স্ব-প্রকাঁশ সত্য । মহাপ্রভূ-উচ্চারিত নিক্নলিখিত মহাবাঁক্যে সেই মানুষকেই
নামের অধিকার দেওয়া হয়েছে, যার] তৃণের চেয়েও নীচ, তরুর মতই
সহিষ্ণু, অর্থাৎ বহুযুগ-লাঞ্ছিত ভারতে শূদ্র নিম্নবর্ণ_
তৃণার্দপি স্নীচেন তরোরিব সহিষ্ণুনা।
অমানিনা মানদেন কীর্তনীয়ঃ সদা হরিং ॥
প্রীচৈতন্যের এই মহা অবদান স্মরণ ক'রেই চরিতকার এবং পদ্দরচয়িত।
মহাজনের মন্তব্য করেছেন £
'নাম়প্রেমমাল। গাথি পরাঅল সংসারে ।,
'সেউ দ্বারে আচগ্ডালে কীতন সঞ্চারে।”
“বরণ আশ্রম কিঞ্চন অকিঞ্চন,
কার কোন দোষ নাহি মানে।
কমলা-শিব-বিহি- ছুলহ প্রেমধন
দান করয়ে জগজনে ॥;
গৌড়ীয় বৈষবধর্ষের ফাশনিক প্রতিষ্ঠা ১৫৯
নামের অন্তর্গত বর্ণেও যে অত নিহিত রয়েছে তা মহাপ্রতুর অনুসরণে
শ্রী্ঘপ এবং জীবগোস্বামীপাদও নির্ধারণ করেছেন। এবিষয়ে শ্রীবূপের
বিদপ্ধমাধবের বিখ্যাত 'তুণ্ডে তাগুবিনী” ক্লোকের শেষাংশ লক্ষীয় “নে!
জানে জনিত! কিয়ততিরমূতৈ: কৃষ্ণেতি বণদ্ধয়ী |,
পুরাণ, গীত। প্রভৃতিতে শ্রীকৃষ্ণকে বিভিন্ন নামে অভিহিত কর! হয়েছে,
যেমন, নারায়ণ, বাসুদেব, বিষ্। এর কারণ কী? তার উত্তরে বৈষ্ণবের৷
বলবেন, সমস্ত রূপ এবং আরুতি যগ্পি কৃষ্ণের তবু ভক্তদের মানসিকতার
অন্ুকূলভাবে তিনি বিভিন্ন মৃতিতে আবিভূতি হয়ে থাকেন, সেই অভিলবিত
যৃতি অনুসারে ভক্ত সেই সেই , নামের অধিকারী হন । উপাস্তের বাহ
তারতম্যতার জন্যই নামভিন্নতা__
মণির্যথা বিভাগেন নীলপীতাদিভিযুতিঃ।
রূপভেদ্মবাপ্রোতি ধ্যানভেদাতথাচ্যুতঃ ॥
যেমন একই মণি নীল পীত নানা বর্ণ ধারণ করে, তেষনি ধ্যানভেদে ঈশ্বরের
রূপভেদ হয়ে পড়ে । তদন্ষায়ী নামভেদও অবশ্ত্ভাবী । গৌড়ীয় বৈষ্ণবন্দের প্রিয়
নাম হ'ল- কৃষ্ণ, শ্যাম, হরি, গোবিন্দ, মাধব, গোপাল । নারাক্মণ এবং বান্থুদেৰ
শ্রীরুষ্ণের বিলাসমূতি । বিষ্ণণ তার অংশন্বরূপ গুণাবতার। এদের মৃতিতে
ধার আকর্ষণ, তিনি সেই নাম গ্রহণ করবেন এবং তাহ'লেও পূর্ণভগবান্ই
ধরা দেবেন। কারণ, কৃষ্ণের গ্রতিজ্ঞাই আছে--যে যথ। মাং প্রপদ্তস্তে
তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্। "গৌড়ীয় বৈষ্বের তার্দের অভীষ্ট দেবতায় এবং
নামে আসক্ত হলেও ভিন্ন পথের পথিকদেরও সমাদর জানিয়েছেন। যে
রূপেই ধ্যান করা যাক এবং যে নামেই ডাকা যাক তিনিই সাড়। দেবেন।
অবতারের উপাসনা করলে অবতারীকেই উপাসন। কর] হবে। কৃষ্ণ এবং
গৌরাঙ্গের পরতত্ব বিষয়ে আস্থাবান্ হয়েও ভক্ত বলছেন £
অবতারীর দেহে সব অবতারের স্থিতি |
কেহ কোনরূপে কহে, যার যেমন মতি ॥
রুষ্ণকে কহয়ে কেহ নরনারায়ণ।
কেহো। কহে কৃষ্ণ ত৩ সাক্ষাৎ বামন ॥
কেহো কহে কৃষ্ণ ক্ষীরোদশায়ী অবতার ।
অসম্ভব নহে__সত্য বচন সভার ॥
"৮৬০ বৈষ্ণব-রস-গ্রকাশ
কেহে। কহে পরব্যোম-নারায়ণ করি।
সকল সম্ভবে রুষ্ণে যাতে অবতারী ॥
ভক্তসম্প্রদায়ের অন্বিষ্ট দেবতার ধাম, লোক অর্থাৎ বাসভৃমি সম্বন্ধে
উল্লেখ পূর্বাপর প্রচলিত। দেবতাদের ধাম ছ্যলোক ব'লে শ্রুতিতে কথিত।
বেদে “স্থান অর্থে পদ শব্দের প্রয়োগ আছে যেমন,
“তদিফোঃ পরমং পদং,, “বিষ্কোঃ পদে পরমো মধ উৎস,
'অক্ুর্ধা নাম তে লোকা: ইত্যাদি। গীতায়ও ভগবানের ধাম সম্পর্কে
উল্লেখ রয়েছে, যেমন, _'যৎ প্রাপ্য ন নিবর্তস্তে তদ্ধাম পরমং মম, 'পিরং
ব্রক্ম পরং ধাম পবিত্রঃ পরমে। ভবান্” ইত্যাদি। গৌড়ীয় বৈষণবেরা ধামকে
শ্রীকষ্ণের স্বব্ূপশক্তির প্রকাশ বলেই মনে করেন এবং শ্রকৃষ্ণ ও তার
বিলাসমূর্তি, বৃহ এবং অবতারাদির স্বতন্ত্র শ্বতত ধাম নির্দেশ করেন।
অপ্রকট লীলায় কৃষ্ণের ধাম হ'ল বৈকৃ্ঠ বা গোলোক। প্রকটলীলায়
বুন্দাবন। মধুর এবং দ্বারকাঁও তার স্থান, তবে তিনি সেখানে স্বয়'বূপে
থাকেন না। তার ব্যৃহ-প্রকাশ মুতি বাহ্থদেব, সংকর্ষণ, প্রদান এবং
অনিকদ্ধ এ ছুই ধামের অধিকারী । লীলারসবিদগ্ধ কৃষ্ণের মত্যলীলার
মুখ্য এমন কি একমাত্র স্থান হ'ল বৃন্দাবন। এবিষয়ে চরিতামতে উক্ত
রূপগোম্বামীর প্রতি মহাপ্রভুর নির্দেশ ন্মরণীয়। কষ্ণলীল। অবলম্বনে
শ্রীরপ একখানা নাটক লেখা আরম্ত করেছিলেন । বুন্দাবনে গিয়েই সেখান
থেকে গৌড় হয়ে নীলাচলে আসার পথে স্বপ্ন দেখলেন, সত্যভাম। নলছেন
রুষের দ্বারকালীলা নিয়ে পৃথক নাটক লিখতে । আবার নীলাচলে,
মহাপ্রভু বিশেষ ক'রে ব'লে দিলেন £
কুষ্ণকে বাহির নাহি করিহ ত্র হৈতে।
ব্রজ ছাঁডি কৃষ্ণ কভূ না যান কাহাতে ॥
এ ছাঁড়া চরিতামুতেই দেওয়া রয়েছে মহাপ্রভুর প্রশ্নে তির্হুতবালী রঘুপতি
উপাধ্যায়ের উত্তর :
প্রভু কহে, উপাধ্যায় শ্রেষ্ঠ মান কায়।
শ্যামমেব পরং রূপং কহে উপাধ্যায় |
শ্যামরূপের বাসস্থান শ্রেষ্ঠ মান কায়।
পুরী মধুপুরী বরা কহে উপাধ্যায় ॥
শ্রীনাথ চক্রবর্তীর রচিত বলে কথিত বিখ্যাত গ্লোকে-- আরাধ্যো৷ ভগবান্
ধাম
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৬১
ব্রজেশতনয়শুদ্ধাম বৃন্দ(বনং--। বাস্থদেবাদিও অপ্রকট শরীরে বৈকুষ্ঠাস্তর্গত
দ্বারকা-মথুরায় ব্যৃহরূপে লীলা করেন। শ্রীকৃষ্ণের বিলাসমূতি চতুভূজি
নারায়ণ হলেন পরব্যোমের অধিপতি । মতস্ত, কৃর্ম, নৃসিংহ, রাম গ্রভাতি
অংশাবতারদের ধামও এই পরব্যোষ। পরব্যোম এবং বৈকু*কে ঘিরে
আছে যে বিরজা নদী, যার এপারে প্ররুতির অধিকার ব্রদ্ধাণ্ড, সেই
বিরজ। হ'ল কারণার্ণবশায়ী প্রথম পুরুষ মহাবিষ্ণুর লীলাতৃমি। এরপর
গর্ভোদক এবং ক্ষীরোদ সমূত্রে অবস্থানকারী বিষুদ্দের ধাম। এগুলি মায়ার
রাজ্যের মধ্যবর্তী হলেও মায়াম্পর্শহীন। বস্ততঃ ভগবান্ ও তার পরিকরদের
সমস্ত ধামই চিন্ময় এবং নিত্যসিদ্ধ। পার্থক্য এই যে, বুন্দাবন মাধুর্ময়,
দ্বারকা-মথুরা এই্বরবময় । বৈকুঞ্ঠ মাধুর্যময়, পরব্যোমাদি এশ্বর্যময় ৷ যেমন দ্বিতূজ
শ্রীকষ্ণ মধুররসবিগ্রহ, অথচ বাস্থদেব-নারায়ণ চতুতূ্জ এবং এশ্বর্যমৃতি।
স্বয়ংভগবানের বা অন্যনিরপেক্ষ চিদ্ঘন পূর্ণসতারও লীলার জন্থ পরিকর-
বৃন্দের প্রয়োজন। তিনি নিজ চিচ্ছক্তি দিয়েই এদের স্থষ্টি করেন। লীলার
ছুই বিভাগ, এক তার নিজ-লীলা-_দ্বারক। মথুর! বৃন্দাবনে, প্রকট-মত্ত্য এবং
অপ্রকট-বৈকুণ্ঠ উভয়ন্ত্রই । এ ছাড়া আছে তাঁর গৌণ৭-
লীল1, জীবজগৎ স্থষ্টি এবং জীবের উদ্ধার। এজন্য এক
অহয়সত্ব। হয়েও তাকে বহুরূপে নিজেকে প্রকাশ করতে হয়। চতুব্যহের মধ্যে
নিজকে প্রতিফলিত করতে হয়; নারায়ণ-বাস্থদেবদূপে নিজের এশ্বর্ষমৃতি
গঠন করতে হয়; আর মস্ত, কৃর্ম, বামন, নৃসিংহ, রাম প্রভৃতি যুগাবতার,
্রষ্ধা-বিষণু-শিব এই গুণাবতার, বিভিন্ন মন্বস্তবাবতার, আবেশাবতারের প্রকটনও
এই প্রসঙ্গে অনিবার্য হয়ে ওঠে । বলা বাহুল্য, এর। সব তার ম্বব্ূপশক্তিরই
বিলাসবৈভব এবং একমাত্র আবেশাবতার ছাড় অন্য কোনে৷ অবতারের সঙ্গেই
মায়িক বিশ্বের জড়ধর্ষমের যোগ নেই। এ ছাড়া প্রেম-রস-নির্যাস আব্বাদদন
করার জন্য “চিচ্ছক্তিবরীয়সী+ হলার্দিনীর সারভূতা গোপীর। সহায়িকা হিসেবে
তে! রয়েছেনই। কিন্তু তাদ্দের বিষয় পরে বিস্তারিতভাবে বল। হচ্ছে।
বৃুন্দাবনের গোম্বামীরা পুরাণ-প্রচলিত নানান্ তত্ব এবং অভিমতকে নিজ
ধর্মবোধ এবং দর্শনের মধ্যে সমগ্সীভৃত করার জন্য যে অপার পরিশ্রম
করেছেন এই নব অবতারার্দির বিভাগ এবং স্বরূপ নির্ণয় থেকে তার
কিছু আভাদ পাওয়া যাবে। কিন্ত তার পূর্বে এদের কয়েকটি বিভাগ-
নির্দেশ অন্বদ্ধে অবহিত হওয়া প্রয়োজন।
১১
পরিকর
১৬২ বৈষব-রস-প্রকাশ
ত্বয়ংরূপ ছিতভূজ গোঁপবেশ বেণুকর, প্রসিন্ধ নরাকৃতি।
তর্দেকাত্মরূপ- একই দেহ, ভিন্লভাবাভাসের জন্য কিছু ভিন্নাকৃতি। এর
প্রধান ছুই বিভাগ-_ত্বাংশ এবং বিলাস। ম্বাংশ' হ'ল- নিজের অংশ
বা অংশাংশের গঠন, এতে শক্তির পরিমাণের স্বল্পতা থাকে । সংকর্ষণ,
পুরুষাবতার, লীলাবতার, গুণাবতার এবং যুগ-মন্বস্তরাবতার এই বিভাগের
অন্তর্গত। “বিলাস” হ'ল--একই মুতির নানা আকারে প্রকাশ, পূর্ণশক্তির
কাছাকাছি শক্তিযুক্ত__
স্বরূপমন্যাকারং যৎ তশ্ত ভাতি বিলাসতঃ |
প্রায়েণাত্মসমং শক্তা। স বিলাস ইতীর্যতে ॥
বিলাস আবার 'প্রাভব* এবং “বৈভব+-ভেদ্দে দ্বিবিধ। 'প্রাভব-বিলাসে'র
মধ্যে রয়েছেন প্রথম চতৃতুর্জ নারায়ণ, পরব্যোমে কৃষ্ের শ্রেষ্ট বিলাসমৃতি।
আর একে কেন্দ্র ক'রে রয়েছেন বলরাম-সংকর্ষণ, বাস্থদেব, প্রচ্যুয়
অনিরুদ্ধ এই “চতুব্্ণহ'। যিনি মথুরা এবং দ্বারকায় বলরাম তিনিই বৈকুঠে
সংকর্ষণ। কারণার্ণবশায়ী নারায়ণ বা বিষুড এরই অংশ, ক্ষীরোদশায়ী
নারায়ণ এবং গর্ভোদকশায়ী নারায়ণ ধার সঙ্গে ব্য জীবস্ষ্টির সম্বন্ধ,
তিনি হলেন সংকর্ণের এ অংশেরও অংশবিশেষ । বাক্দেব সংকর্ষণ
প্রদ্যন্ম অনিরুদ্ধ যথাক্রমে চিত, অহংকার, বুদ্ধি এবং মনের অধিপতি,
যদিও এ কেবল চিচ্ছক্তিরাজ্য-_ মথুরা-ছ্বারকায়, মায়িক রাজ্যে ব্রন্ধাণ্ডে
নয়। এই সংকর্ষণ-বলরামই নবদবীপলীলার ।নত্যানন্ন। এ'রা সব কৃষ্ণের
মতই দ্িভূজ। তবে বর্ণে ভিন্ন ভাবেও ভিন্ন। যেমন বাস্থদেবের
ক্ষত্রিয়ভাব। কায়ব্যহ অর্থে নিতান্ত আত্মীয়, নিজ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মত,
সদ] সঙ্গী। এদের দ্বারা মথুরা-দ্বারকায় কৃষ্ণ বহু কার্য সাধন করেন।
পরব্যোমে যে দ্বিতীয় চতুবৃণহ (এ মথুরা-দ্বারকারই প্রতিবিষ্ব) তার মধ্য
দ্রিয়েই আবার এদের বিলাস। এ বিলাসের বিলাসযূতি কুড়িটি (৪ ৮ ৩+-৪ ১২),
যেমন কেশব, নারায়ণ, হরি, বিষু শ্রীধর, অচ্যুত, জনার্দন প্রভৃতি ।
মর্ত্যের মথুরা নীলাচল প্রয়াগ প্রভৃতিতে এদের কারে! কারে! অবস্থান,
তাছাড়া এদের কেউ কেউ অবতারের মধ্যেও গণিত। শঙ্খ-চক্রা্দি
অস্ত্ধারণ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন নাম। এ কুড়ি এবং চতুবৃণহের চার নিয়ে
প্রাভব বিলাস সম্পূরণ। এর পর বৈভব-বিলাস। আদলে এ থেকে যা
বোঝা। যায় তা হ'ল ঈশ্বর-কৃষ্ণের বহুদৃষ্ট এসব নামের ও ভাবের একট
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৬৩
শ্রেণীবিভাগ গোস্বামীরা করতে চান। শ্রীরূপের লঘুভাগবতাম্তে এর
প্রথম বিবরণ পাওয়া যায়। অবশ্ত এই বৃৃহ-কল্পনা বহু প্রাচীন, হয়তে।
ব। খ্রীস্টপূর্বকালের সাত্বতদ্দের । পাঞ্চরাজর, বিষুপুরাণ, ব্রহ্ম-সংহিতা৷ প্রভৃতির
মধ্যে বাহের পরিচয় রয়েছে। “বৈভব-বিলাপ, আর কিছুই নয়, ভিন্ন
ভিন্ন অস্ত্রধারী এ অংশ-ভগবান্দের (ম্বাংশ নয়) যদি আবার আকৃতি
এবং পরিচ্ছর্দের ভিন্নতা হয় তাহলেই বৈভব-বিলাস-যৃতি বলা যাৰে।
যেমন বলা যায়, পদ্মনাভ, ভ্রিবিক্রম, নুসিংহ, বামন, হরি, কৃষ্ণ ( হ্বয়ংভগবান্
কু নয়) এদের আকারে-বেশে পার্থক্য ।
স্বাংশ” হিসাবে অবতারের বিভাগ উল্লিখিত হয়েছে । এর বিশেষ হ'ল £
১. পুরুষাবতার-_ক্রিয়াশক্তি সংকর্ষণের মধ্যস্থতায় প্রথম পুরুষাবতার
হলেন মহাবিষ্ড। ইনি কারণার্ণবশায়ী। খগ্বেদে একেই “সহশ্রশর্ষা
পুরুষ: সহত্রাক্ষ:ঃ সহশ্রপাৎ ব'লে বর্ণনা করা হয়েছে। স্যষ্বির প্র।রস্তে
ইনি মায়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন, ফলে মহত্তত্বের স্থগ্টি হয়। ্মষ্টির
ব্যাপারে মায়া হলেন আপেক্ষিকভাবে নিমিতকারণ, আর প্রধান হ'ল
উপাদ্দান কারণ। মায়! ব্রিগুণাত্মিকা শক্তি, আর প্রধান জড়। মহতৎ্-তত্ব
থেকে আরম্ভ হ'ল অহংকার, এই নিয়ে স্টি হ'ল ব্রদ্ধাণ্ডের। ক্ষ
অনস্তকোটি ব্রন্ষাণ্ডের মধ্যে এ প্রথমপুরুষ মহাবিষ্ণর অংশ দ্বিতীয়পুরুষ
ব। নারায়ণ গর্তোদকে শয়ান রইলেন। ইনি ব্রন্মাণ্ডের প্রত্যক্ষ অধিপতি ।
এ'রই নাভিপত্ম থেকে ব্রক্ষার উৎপত্তি। এর নালে রইল চতুর্দশ ভুবন।
এর পর এ মহাবিষ্ণুরই অংশের অংশরূপে আবিভূতি হলেন ক্ষীরোদশায়ী
তৃতীয় বিষুণ। ইনি ব্যষ্টি জীবের অন্তর্ধামী হয়ে বিরাঞ্গ করতে লাগলেন ।
২. গুগাবতার- ব্রদ্ষা, বিষু,$ শিব-_এর। যথাক্রমে রজঃ সত্ব এবং
তমোগুণের অধিপতি ৷ মায়ার সঙ্গে সম্বন্ধ থাকলেও এর] মার়াযুক্ত হন ন]।
এরাও আংশিক সচ্চিদানন্দ। জীবের স্থ্টি পালন এবং ধ্বংসের কাজ প্রত্যক্ষ-
ভাবে এ'দেরই হাতে।
৩. যুগাবতার-_সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি এই চার যুগে পৃথিবীতে
ভগবানের এক এক অবতার আবিভূত হুন। এদের বর্ণ, পরিচ্ছদ, অন্াদি
ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের । যেমন ভাগবতে গর্গবচন £
আসন্ বর্ণান্ত্রয়োহ্হাস্ গৃহুতোহম্যুগং তনৃঃ।
শুক্ো! রক্তন্তথ। পীতঃ ইদানীং কৃষ্ণতাং গতঃ ॥
১৬৪ বৈষ্ধর-রল-গ্রকাশ
অথবা, ভাগবতে অন্থজ্র_-দ্বাপরে ভগবান্ শ্যাম: পীতবাসা নিজায়ুধঃ | কলি-
যুগাবতার সম্পর্কে ভাগবতপ্প্রমাণ £
রুষ্কবর্ণং ত্বিষাকষ সাজোপাঙ্গাস্ত্পার্যদম্।
যজ্ঞঃ সংকীর্তনপ্রায়ৈর্যজস্তি হি স্থমেধসঃ ॥
অন্থরূপ মহাভারতে ২
স্থবর্ণবর্ণে। হেমাঙ্গে। বরাজশ্চম্দনাজদী |
সম্গ্যাকুৎ শমঃ শাস্তে। নিষ্ঠাশাস্তিপরায়ণঃ ॥
এ'দের মধ্যে কৃষ্ই হলেন পূর্ণ ভগবান্ হয়েও অবতার ।
৪. মন্বস্তরাবতার- যেমন ম্থায়ভূব, শ্বারোচিষ প্রভৃতি, ব্রহ্মার একদিনের
অন্তর্গত চোদ্দ মন্বস্তরের এক একটির অধিপতি।
এই সব অবতার ছাড়া স্বাংশের অন্তর্গত আবেশাবতারেরও উল্লেখ আছে।
এই অবতারেরা জীবজগতের, তবে ঈশ্বরকোটির অস্তভূক্তি__যেনন, পৃথু,
নারদ, সনক | চৈতন্তলীলায় নকুল ব্রহ্মচারী ।
মূল বিভাগ স্বয়ংরপ এবং তদেকাত্মরূপ ছাড়া “প্রকাশ” ব*লে ভগবান্
কের অন্য এক বিভাগও কথিত। প্রকাশ হ'ল একই কষ্খরূপ যা একই
সঙ্গে বু জায়গায় প্রকাশ পায়। যেমন যোল সহম্র মহিষীর বিবাহে কৃষ্ণ
একই রূপে বিভিন্ন স্থানে উপস্থিত ছিলেন। তেমনি রাঁসস্থলীতে ছুই ছুই
গোপীর মাঝে এক এক ক'রে বনু কৃষ্ণ একই সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছিলেন প্রত্যেক
গোপীকে তৃপ্ত করতে ।
প্রসঙ্গক্রমে গৌড়ীয় বৈষ্বদের স্থক্টিতত্বের ধারণ! এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ
কর! যেতে পারে। স্থষ্টির নিমিত-কারণ বা! কর্তা হলেন ঈশ্বর কৃষ্ণ। উপাদান-
কারণ হ'ল মায়াশক্তি বা জড়রূপা প্রকৃতি । কৃষ্ণ-ভগবান্ সংকর্ষণ ও প্রথম
পুরুষাবতারের সহায়তার মায়ার প্রতি দৃষ্টি দিয়ে তার
মধ্যে শক্তি সঞ্চাব করেন। মায়! বা প্রকৃতি নিজে
স্বাধীনভাবে জগৎ-রূপে পরিণাম পেতে পারেন না (সাংখ্যমতে অবশ্য এটিই
সত্য )। মায়ার ছু'রকমের কাজ হিসেবে মায়াকে বল হয়েছে “গুণমায়া” যা
সত্ব, রজঃ, তমোগুণে আবিষ্ট হয়ে বিশ্ব স্ট্টি করে, আর, 'জীবমায়।-_-য। অবিদ্া!
বা অজ্ঞানের দ্বার জীবকে অভিভূত ক'রে রাখে। ঈশ্বর, জীব এবং মায়। ছ'ড়।
আরও ছুটি স্বীকৃত অনার্দিতত্ব হ'ল কাল ও কর্ম। কর্মকে জীবের অদৃষ্টও
বলা হয়েছে। এরই জন্য জীব অনাদিবহিমূর্থ। যাই হোক, হ্টির
স্ট্টিতব
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৬৫
আদিতে এ কারণার্ণবশায়ী পুরুষ ( সংকর্ধণের অংশ) প্রকৃতির প্রতি দৃষ্টিপাত
করেন। ফলে প্ররুতি বিক্ষুব্ধ! হয়, যে তত্বের স্্টি হয় তাকে বল হয় মহৎ।
প্রকৃতি ত্রিগুণাত্মিক, মহৎও ত্রিগুণাত্ক। মহতৎ-তত্ব থেকে অহংকারের
উদ্ভব। এই অহংকারেও থাকে ত্রিগুণের ক্রিয়া। ফলে, সত্বগুণ থেকে
জ্ঞানবোধ, রজোগুণ থেকে ক্রিয়া এবং তমোগুণ থেকে জড় বস্তর প্রাছুর্তাব
হয়। মৃহতৎ্তত্বে যদিচ সত্ব এবং রজোগুণ প্রধান, অহংকারে তমঃ এর
আধিক্য। ভ্রব্যময় অহংকার থেকে যথাক্রমে ব্যোম, মরু, তেজঃ অপ এবং
ক্ষিতি গড়ে ওঠে । এই পঞ্চতৃতের স্ক্মরূপ শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস এবং গন্ধ
এই পঞ্চ তন্মাত্রও আবিভূতি' হয়। অহংকারের সত্বময় ও রজোময় অংশ
থেকে উৎপন্ন হয় মন, আর দশ ইন্দ্রিয়। মায়ার এ পঞ্চভৃতাদি পরিণাম
নিয়ে এক একটি অণ্ডের সৃষ্টি হয়। অনন্ত অণ্ড নিয়ে হয় ব্রন্মাণ্ড। এমনও
বল? যায় যে এ কারণার্ণবশায়ী মহাবিষ্ণুর দে থেকেই ব্রদ্ষাণ্ডের উৎপতি।
্দ্ষাণ্ড স্থষ্টি ক'রে গর্ভোদকশায়ী দ্বিতীয় পুরুষ ব1 বিরাট এবং ক্ষীরসমৃদ্রশায়ী
তৃতীয় পুরুষ তাঁর মধ্যে এক একটিতে বিরাজ করতে লাগলেন। এ বিরাট
পুরুষের নাভিপান্ম থেকে ব্রহ্মার জন্ম এবং তিনিই প্রত্যক্ষভাবে স্থষ্টিকারে
নিরত হলেন। ঈশ্বরের চিদদংশ অথচ কর্মদোষে বহিমুখ জীব এই স্থষ্টিচক্রের
মধ্যবর্তাঁ হয়ে ছুঃখ ভোগ ক'রে ক'রে পরিশেষে ভক্তিপথে ঈশ্বরান্থুবত্তণ হয়
এখন আমর] স্বরূপশক্তি বা চিচ্ছক্তির ঘা মুখ্যতম লীলা, গোপীসহ
প্রেমলীলা, তার মধ্যে প্রবেশ করছি।
বল! হয়েছে, 'নিজ স্বরূপশ-ক্তর সহায়তায় লীলারসবৈচিত্রোর আন্বাদনই
কৃষ্ণের মুখ্য কাজ, অস্থরার্দি বিনাশ ক'রে পৃথিবীর ভার হরণ নয় । এমনকি
ধর্মপ্রচারও নয়। নবধর্ম প্রবর্তনের কাজ তার অহেতুক লীলার মধ্যে আন্মুষঙ্গিক-
ভাবেই সিদ্ধ হয়। আর অধামিককে দূর ক'রে বা
দুদ্ধতেস বিনাশ ক'রে সাধুব্যক্তির রক্ষণ এ প্রত্যক্ষভাবে
বিষুর কাজ। জীবজগৎ যেমন রু্ণ প্রত্যক্ষভাবে নিজে সঙি করছেন না,
সংকর্ষণের দ্বারা করছেন, অথবা আরও প্রত্যক্ষভাবে, সংকর্ষণের অংশ
কারণার্ণবশারী প্রথম পুরুষ প্রভৃতির ছার। করছেন, তেমনি তার ধারণ, পালন,
ধ্বংস করছেন এরই লহায়তায়। মূলের দিকৃ দিয়ে বিচার ক'রে
এসব কাজ পূর্ণ ভগবানের একথা মনে করা গেলেও বল] যায়, এ তাঁর
বৃন্দাবনলীল।
১৬৬ বৈষধব রস-প্রকা
বছিরঙ্গ কাঁজ। স্থ্টি গ্রভৃতিও তারই লীল?, কিন্তু মৃখ্য নয়, আনুষঙ্গিক ।
কারণ, তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ তার কোনে বাসনা থাকতে পারে না। তবে
ভক্তদের চিত্তে আনন্দবিধানের জন্য হলাদ্দিনী শক্তির বিস্তারবৈচিত্র্য তিনি
প্রকাশ করেন। ব্রজলীলায় তিনি যথেচ্ছ বিহার ক'রে অন্তর্ধান করেছিলেন।
তৰু পরে ছুটি অতৃপ্তি তার থেকে গিয়েছিল এক রাধার মহছিম।
প্রেমরসসীম। তিনি অনুভব করতে পারেননি। ছুই, এস্বর্বযূলক
নিয়মানের ভক্তিকে সরিয়ে উন্নত প্রেমভক্তি বা রাগভক্তি ব1 শুদ্ধ অহেতুক
প্রীতিময় ভক্তি প্রচার করতে পারেননি । এজন্য কলিযুগে তাকে অবতার
হয়ে আসতে হয়েছিল, কারণ, মহাবিষু, নারায়ণ, সংকর্ষণ প্রভৃতির
সাহায্যে প্রেমভক্তির উৎকর্ষ স্থাপন সম্ভবপর নয়। কিন্তু এই মুখ্য-গৌণ,
অস্তরঙ্গ-বহিরঙ্গ লীলা-বিভাগ মহাগ্রতূর অস্ত্যলীলা-দর্শনে স্বরূপ গোসম্বামীপাদ
প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন, পরে বুন্দাবনের গোস্বামীরাও এ অভিমত
শিরোধার্য করেছেন। মহাপ্রভুর নবদীপ-পরিকরবৃন্দের ধারণায়, যেমন
মহাপ্রভু তেমনি শ্রীকষ্ণ যুগধর্ম প্রবর্তনের জন্যই এসেছিলেন। পরে অবশ্ঠ
গোস্বামীদের ধারণাই সর্বত্র সমাদৃত হয়, এবং কবিকণ্পূরও এর দ্বার!
প্রভাবিত হুন।
কৃষ্ণের যাবতীয় লীলা অহেতুক, মানুষ এর হেতু নির্ঁয় করতে অক্ষম ।
স্থান এবং কাল হিসেবে কৃষ্ণলীলার ছুটি বিভাগ। এক বিভাগে বুন্ধাবন-
লীলা-দ্বাপরে, অন্ত বিভাগে নবদ্বীপলীলা--কলিযুগে। বুন্দাবনলীলার
আপাতপ্রতীয়মান হেতু হিসাবে চরিতাম্বতকার বলছেন :
প্রেমরস-নির্যাস করিতে আমন্বাদন। |]
রাগমার্গ ভক্তি লোকে করিতে প্রচারণ ॥
রমিক-শেখর কৃষ্ণ করুণ পরম ।
এই ছুই হেতু হৈতে ইচ্ছার উদ্গম ॥
প্রেমরস-নির্ধাম বলতে বৃন্দাবনের উদ্ধবাদির দাস্ত, শ্রীদামার্দির সথ্য,
যশোদার বাৎসল্য এবং বিশেষতঃ গোপীদের এবং গোপীশ্রেষ্ঠ। শ্রীরাধার
কান্তাভাবের মাধুর্সার বোঝায়। এ হ'ল মুখ্া হেতু। যদি বল! যায়,
১বকুহের অপ্রকট লীলায় তে] তিনি সর্বদ। প্রেমরস আস্বাদন ক'রেই
থাকেন, নোতুন ক'রে পৃথিবীতে এর স্বাদ গ্রহণের কারণ ক্টী? এর
উত্তরে শান্্ বলছেন, এ বৈকুঠে, এমন কি ভারই সুত্র ধ'রে অনস্ত
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ষের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৬৭
ব্ন্ষাণ্ডে কের যে প্রেমলীলা চলে তা থেকে দ্বাপরে মরতে গ্রকটিত
ব্রজলীলার পার্থক্য আছে। বুন্দাবনে গোপীদের সঙ্গে যে লীলা তা
পরকীয়া-প্রীতিরসে উচ্ছলিত, আর, পরকীয়া-প্রীতিতেই যথার্থ প্রেমের
সারভৃত রমণীয়তা বর্তমান_-“পরকীয়! ভাবে অতি রসের উল্লাস। ত্রজ
বিন! অন্যত্র ইহার নাহি বাস|” অন্যত্র রাধা এবং গোপীগণ কষ্চের
স্বকীয়! | স্বকীয়াযম অগপ্রাপ্তি জনিত বিরহোল্লাসপ নাই, নিষেধের ছ্বার।
শাসিত ছুর্গমতার তীর আকর্ষণও নাই, স্থতরাং স্বকীয়ার প্রণয় উপপতি-
ভাবময় পরকীয়া রতির কাছে বর্ণবৈচিত্র্যহীন। এই পরমাশ্চর্য প্রীতিরসের
জন্য লুৰ হয়েই সপরিকর পূর্ণভগবান্ কৃষ্ণের ব্রজে আবির্ভাব। চরিতামুতে
বল। হয়েছে £
বৈকুষ্ঠান্থে নাহি যে যে লীলার প্রচার ।
সেই লীল৷ করিব যাতে মোর চমৎকার ॥
মে! বিষয়ে গোপীগণের উপপতিভাবে।
মোগমায়া করিবেক আপন প্রভাঁবে ॥
আমিহ ন। জানি তাহা না জানে গোপীগণ।
দোহার রূপগুণে দোহার নিত্য হরে মন ॥
ধর্ম ছাড়ি রাগে ফ্লোহে করয়ে মিলন।
কতু মিলে, কভু ন। মিলে, দৈবের ঘটন ॥
অন্তরঙ্গ শক্তির বিলাসস্থল হলেও ছ্ারকা-মথুরায় প্রেমের এই চরম প্রকাশ
নেই, সেখানে কৃষ্ণ এশবরধময়। তিনি সত্যভাম।, রুকিণী এবং আরও বন
মহিষীর পরমগ্ডরু পতি। সেখানে রুষ্ পরিহাস করলেও সত্যভামা ভীত
হয়ে পড়েন। মানে রুষ্ট হতেই পারেন না। নারায়ণশক্তি লক্ষ্মী গোপকুষ্ণকে
পাবার জন্য তপন্যা ক'রেও পাননি । অথচ শ্রীরাধা কৃষ্ণের চতুভূজ মৃতির
সমার্দরই করেন ন।। কৃষ্ণের নিমেষমাত্র ওদাসীন্য দেখলে বক্রভাব অবলম্বন
ক'রে কঠোর কথ শুনিয়ে দিতে দ্বিধা করেন না। আবার, মানিনী রাধিকার
মানভঙ্গ করতে নিজের সমস্ত গৌরব বিসর্জন দিয়ে পদতলে লুটিয়ে পড়তেও
কৃষ্ণের বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। এই পরকীয়া প্রীতিতে গোগীরাই সমস্ত
প্রেমের আশ্রয়, তারাই গুরু, কুষ্ণ শিক্ষানবীশ মাত্র । তাই কৃষ্চই গোপীদের
প্রসন্নতা ভিক্ষ। ক'রে কায়মনোবাক্যে আরাধনা ক'রে থাকেন-তুয়া
আরাধন মোর বিদ্দিত সংসার ।” স্বকীয়! অর্থাৎ বিবাহিত প্রেমে গুরুজন
১৬৮ বৈষ্ঞব-রস-প্রকাশ
পরিজন সমাঁজ মধ্যস্থতা করে, এখানে করে কেবল কন্দর্প। এই প্রীতিরস
নিত্যনবীন, পরিণামহীন, চরিত্রে অসীম এবং ম্বভাবে চিরঅতৃপ্রিময়-_“লাখ
লাখ যুগ হিয়ে হিয় রাখলু', তভে। হিয় জুড়ন ন গেল।” এর উপলব্ধিতে-_
“ন সো রমণ,নহাম রমণী। দুই মন মনোভব পেষল জনি ॥* কন্দর্প
ছুটি হৃদয়কে পিষ্ট ক'রে এমনভাবে একীভ্ৃত করেছে যে পুক্ুষ-নারী
ভেদভাব এতে তিরোহিত হয়ে গেছে। এ প্রণয় অভিলাষশৃহ্য, তিরোহিত-
ত্বার্থ, স্থতরাং বিশুদ্ধ। চগ্ীদাসের ভাষায় 'মান্থষে এমন প্রেম কোথা
না শুনিয়ে। চরিতামুতের বর্ণনায় “হেন প্রেমা নূলোকে না হয়।
আবার '্রজ বিনা অন্যত্র ইহার নাহি স্থিতি'। ফলে মান্ষে পরকীয়।
প্রীতি দৃষ্ট হলেও ব্রজের কামগন্ধহীন অলৌকিক রতির সঙ্গে তা তুলিত
হখার যোগ্য নয়। মর্য্ের প্রণয়মাত্রেই আত্মেক্দিয়-প্রীতি-অভিলাষের বিকার,
রুষেব্দ্িয়-প্রীতির ব্যাপার নয়।
প্রশ্ন হতে পারে, কৃষ্ণের এই প্ররেমাম্বাদ বিষয়ে একক কান্তা বা
রাধিকাই তে] যথেষ্ট, গোপীদের কী প্রয়োজন? এর উত্তরে চরিতামৃত
বলছেন £
বহু কান্ত! বিনা নহে রসের উল্লাস।
লীলার সহায় লাগি বহুত প্রকাশ ॥
কৃষ্ণের অলৌকিক পরকীয়ারসলীল1 মুখ্যভাবে রাধারই সঙ্গে। তিনিই
গোপীশ্রে্ঠা এবং হলাদিনীর সারভৃতা। অন্য গোঁপীদের প্রেম গাঢ়তা
প্রাপ্ত হয়ে “ভাব? পর্যস্ত পৌছাতে পারে। কেবল রাধিকাই 'মহাভাবে"র
অধিকারিণী। কৃষ্ণের সঙ্গে মিলন-বিরহলীলায় গোপীর। নানাভাবে সহাপ্তা
করেছিলেন, রাধাপ্রেমকে মহাভাব-অবস্থায় উন্নীত করা গোপীর্দের সহায়তা
ভিন্ন সম্ভবও ছিল না। সংবাদ বহন ক'রে দৌত্যকার্য করা, মিলনের
স্ান ও সময় নিদিষ্ট করা, শ্রীমতীর প্রসাধন, কুঞ্সজ্জা এমনকি কুষ্ণকে
সঙ্গদানের ভ্বার1 রাধিকার ঈর্ধামান বাড়িয়ে প্রণয়কে পরিপুষ্ট করা, প্রণয়ের
নব নব বৈচিত্র্য উপলব্ধিতে কুষ্ণকে সাহায্য কর, কখনও বিরহিণী
রাধার প্রতি, কখনও বা শ্রীমতীর দুর্জয়মানে নিতাস্ত পীড়িত কৃষ্ের
প্রতি প্রেমাধিক্য প্রদর্শন করা। এইভাবে লীলারসপুষ্টির জন্য য৷ যা
করণীয় গোপীরা তা সংলাধন করেন। এরা আত্মস্থ চান না, রাঁধা-
গোগীপ্রেম ও সথী
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা *২৬৯
প্রেমকে উপচিত ক'রে কষ্ণস্থখের জন্য আত্মসমর্পণ ক'রে থাকেন।
রাধাকে বাদ দিয়ে গোগীদ্ের মধ্যে প্রধানা হলেন চন্দ্রাবলী। তারপর
বিশাখা, ললিতা, শ্যামা, পদ্মা, শৈব্যা, অনুরাধা প্রভৃতি । এরা হলেন
কৃষ্ণের নিত্প্রিয়া এবং এই প্রধানার্দের আবার নিজ নিজ ঘুথে রয়েছেন
সহশ্র সহশ্র গোপীরা। রাধা এবং চন্দ্রাবলীর যুথে কোটি সংখ্যক
ব্রজনারী রয়েছেন। এদেরই নিয়ে যমুনাপুলিনে রাসবিলাস করেছিলেন
শ্রীহরি, যে রাসে সব গোপীর প্রতি কৃষ্ণের সমান সমাদর দেখে মানভরে
স্থানত্যাগ করেছিলেন রাধিকা । চরিতামুতকার বলছেন £
রাঁধাসহ ক্রীড়া বস-বুদ্ধির কারণ ।
আর সব গোপীগণ রসোপকরণ |
বন্ততঃ কৃষ্ণের সর্বার্থমাধিক।, হলার্দিনীসারবিগ্রহ রাধিকাই হলেন শ্রেষ্ঠ।
বুন্দাবনেশ্বরী, কিন্তু বৈচিত্র্য বিলামের জন্য অন্য গোপীদের মূল্যও স্বপ্প
নয়। এদের সঙ্গে রাধিকার সক্বদ্ধও নিত্য। এর! রাধিকার কায়ব্যুহ
অর্থাৎ বিভিন্ন অবয়বে প্রকাশ মাত্র। সখীশৃন্ত একক রাধিকা দীন,
নিপ্রভ। সখীসহায়তা ব্যতীত লীলায় আশ্চর্য চমৎকারের উদ্ভব সম্ভব
নর। চরিতামুতকার রায়-রামানন্দমুখে সখীদের গুরুত্ব প্রচার করেছেন
এইভাবে £
রাধাকৃষ্ণের লীলা এই অতি গৃঢ়তর ।
দাশ্ত বাৎসল্যাপ্দিভাবের ন। হয় গোঁচর ॥
সবে এক সখীগণের ইহ অধিকার ।
সখী হৈতে হয় এই লীলার বিস্তার ॥
সখী বিস্থ এই লীলার পুষ্টি নাহি হয়।
সখী-লীল। বিস্তারিয়া সখী আস্বাদয় ॥
উজ্জ্লনীলমণি গ্রন্থে ক্রমোৎকর্ষ বিচারে সখীদ্দের এইভাবে শ্রেণীবিভাগ ক্র!
হয়েছে_ সখী, ।নত্যসধী, 'প্রাণলখী, প্রিয়সখী, পরমপ্রেষ্টসথী । লীলাসহায়তার
দিক থেকেই এই বিভাগ। শেষোক্ত শ্রেণীতে পড়েন-_-ললিতা, বিশাখা,
স্থচিত্রা, চম্পকলতা', তুঙ্গবিষ্যা, ইন্দুলেখা, রঙ্গদেবী এবং স্থদেবী। গোপীদের
মধ্যে এরাই অগ্রশশ্যা। এদের প্রত্যেকের আবার স্বভাব এবং কার্ধ-
কারিত হিসেবে বিশিষ্ট গণ রয়েছে। এছাড়া গোপিকাদেের মধ্যে কেবল
,সেবিকার এক সম্প্রদায় রয়েছে। এদের বল] হয় 'মঞ্জরী” ; যেমন,
১৭০ বৈষ্ঞব-রস-প্রকাশ
রূপমঞ্জরী, বিলাসমঞ্জরী। এর কেবল সেবা ক'রেই পরিতৃপ্ত, সেবার:
ক্ষেত্রে এদের অধিকারও অন্য সখীর্দের চেয়ে বেশি। ভক্তিপথের সাধকের,
অনেকেই এই মঞ্তরীভাবের সাধনায় আগ্রহাধিত। শ্রীল নরোতম ঠাকুর
এবিষয়ে উৎকৃষ্ট দৃষ্টাত্ত।
গোগীপ্রেমের স্বরূপ বোঝাতে গিয়ে চরিতামূতকার প্রথমে কাম এবং
প্রেমের পার্থকা নির্ধারণ ক'রে নিয়েছেন এবং লীলাশ্রবণোৎস্থক ভক্তদের
সাবধান ক'রে দিয়েছেন যে সাধারণ দৃষ্টিতে জীবজগতের অনুরূপ কামকেলির
বর্ণনা] থাকলেও গোপীপক্ষে ত। প্রেমবিষয়ক বলেই গ্রহণ করতে হবে।
কারণ,
কাম প্রেম দ্োহাকার বিভিন্ন লক্ষণ।
লৌহ আর হেম যৈছে স্বরূপে বিলক্ষণ |
আত্মেজ্িয়-গ্রীতি-ইচ্ছ! তারে বলি কাম।
কষেঞক্জিয়-প্রীতি-ইচ্ছণ ধরে প্রেম নাম ॥
গোপীর্দের ম্বস্থখবাসনা নেই, কৃষ্ণম্থথের জন্তই তাদের দেহের প্রসাধন এবং
গেহসজ্জা। তার কেবল স্থার্থবাসনা-বিক্ষুন্ধ হয়ে গুরুজন পরিজন সংসারধর্ম
এমনকি লজ্জা, আত্মমর্যাদ। প্রভৃতি সর্বস্ব বিসর্জন ক'রে এই দুরূহ কৃচ্ছদাধনে
ব্রতী হননি । কুষ্কপ্রেমগৌরবে গৌরবাদ্বিত হয়ে তার! স্বজনের তাড়ন-ভৎ্সন,
সমাজ ও লোকনিন্টাকে দেহের ভূষণ ব'লে বিবেচনা করেছেন। এমনকি
ছুম্তাজ পাতিব্রত্যকেও তার। বড় ব'লে মনে করেননি । প্রেমের জন্য,
এত বড় ত্যাগের দৃষ্টান্ত ইতিহাসে পুরাণে আর কোথাও নেই। রুষে;
এরকম দৃঢ় অন্ধরাগ স্বার্থময় কামের ব্যাপার হতেই পারে ন1। এ শুদ্ধসত্বের
অলৌকিক বিকাশ। অতএব,
কামগন্ধহীন স্বাভাবিক গোগীপ্রেম |
নির্ষল উজ্জ্বল শুদ্ধ যেন দর্ধহেম ॥
কৃষ্ণপ্রেমের এক অলৌকিক কার্ধকারিত1 হ'ল এই যে, গোশীর1 আত্মস্থখ
ন| চাইলেও কোটিগুণ আনন্দ অনুভব ক'রে থাকেন। কারণ, কুষ্ণস্থখেই
গোগীস্থখের শেষ পর্যবসান। এ যেন, গ্রহণ করেছ যত খণী তত করেছ
আমায়” । কৃষ্ণের শোভা-মাধুর্য, রুষ্ণের চরিতার্থত। বৃদ্ধি করলেই যেহেতু
গোপীদ্বের আনন্দ সেইহেতু গোপীপ্রেমে কামদোষ থাকতে পার না।
প্রীতির বিষয়ের ( অর্থাৎ কৃষ্ণের ) আনন্দে যদি আয়ের ( অর্থাৎ গোপীদের )
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ষের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৭১
আনন্দপ্রাপ্তি ঘটে তাহ'লে শ্বার্থকলুষের প্রসঙ্গই আসতে পারে না। এই
বিশুদ্ধ রাগাত্মিক গোপীপ্রেমের দৃষ্টান্তেই রাগাঙ্ছগাপ্রীতিময় ভজনে নির্দেশ
দেওয়। হয়েছে £
অন্যবাঞ্থ। অন্ত পুজ। ছাড়ি জ্ঞানকর্ম।
আন্গকৃল্যে সর্বেন্দিয়ে কৃষ্ণান্ুশীলন ॥
এমন কি কষ্ণসেবার কাছে ভক্ত মোক্ষকেও তুচ্ছজ্জান করবেন । গোপীপ্রেমের
এই সীমাতিশায়ী এ্বর্ের কাছে কুষ্ণ নিজ প্রেমকে নিতান্ত দীন মনে করেছেন।
ব্রজলীলায় পরাজিত হয়ে গোপীপ্রেমের বিশেষতঃ রাঁধাভাবের স্বরূপ অনুভব
ক'রে কৃতার্থ হবার জন্য পুনরায় তীকে রাধার ভাব নিয়ে অবতার গ্রহণ করতে
হয়েছে । গীন্তায় কৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন-__ষে যথা মাং প্রপন্ন্তে তাংস্তখৈব
ভজাম্যহম্ কিস্তু গোপীর্দের প্রেমোপাসনায় কৃষ্ণের এই প্রতিজ্ঞা ব্যর্থ
প্রমাণিত হয়েছে, কারণ, গোপীর্দের লক্ষ্য ক'রে ভাগবতে তিনি বলেছেন
ন পারয়েইহং নিরবছ্যসংয্জাং স্বসাধুকৃত্যং বিবুধামুষাপি বঃ।
যা মাভজন্ ছুর্জরগেহশৃঙ্খলাঃ সংবৃশ্য তথ: প্রতিষাতু সাধুন। ॥
অর্থাৎ "শুদ্ধাত্ম! তোমর1, আমার সঙ্গে মিলন কামনায় তোঁমর! যে ছুশ্চর
তপন্ত। করেছ তার প্রতিদান দিতে পারি সে সাধ্য আমার নেই। অতি
ছুশ্ছেগ্য সংসারবন্ধন তোমর) ছিন্ন করেছ, এর প্রতিদান তোমর। তোমাদের
ত্যাগময় প্রেমের দ্বারাই লাভ কর।+
প্রেমসারনিদ্ধির জন্য নিমিত শ্রীরাধার কায়বৃহস্বপ গোপীবৃন্দের মধ্যে
রাধিকাই শ্রেষ্ঠা। কুষ্চের শক্তিসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম যে হলাদিনী শক্তি
তারই ঘনসারবিগ্রহ এই রাধিকা-_শ্রী লক্ষ্মী প্রভৃতি এশ্বর্ময়ী পরব্যোমনেত্রী
থেকে প্রেমগ্ডণে গরীয়সী এবং রুক্সিণী সত্যভামা৷ থেকে কৃষ্ণের অধিকতব
প্রেয়সী। কৃষ্ণের রাজকীয় এশ্বর্ষের রূপ সহা করতে রাধিকা নিতান্তই অক্ষম ।
ইনি গরকীয়া-শ্রেষ্ঠটা। গোপীদের মধ্যে ইনি কেবল রূপে
গুণেই উতৎকর্ষশীলিনী নন, ত্যাগের দিক থেকেও আদর্শ
স্থানীয়া। পিতৃকুন এবং পতিকুলের মহৎ গৌরবের নিশ্চিন্ত আশ্রয় ত্যাগ
ক'রে কৃষঝের জন্য ইনি অকৃলে পা! বাড়াতে দ্বিধা করেননি । তাড়ন-ভৎ্সন
লাঞ্ছনী-অপবাদকে শিরোভৃষণ ক'রে নিয়েছেন। কৃষ-আরাধনায় নিজ
দেহকে উপেক্ষা ক'রে মৃত্যুর সমীপবত্তা হয়ে ইনি অন্য গোপীর্দের করুণাময়.
রাঁধাভাব
৮৭২ বৈষব-রস-প্রকাশ
মমত্ব আকর্ষণ করেছেন, আবার প্রেমাধিক্যে কুষ্ণকে এমনভাবে বশীতৃত
করেছেন যে কৃষ্ণ নিমেষমাত্র রাধাবিরহ সহা করতে অক্ষম ) শ্রীমতী
দীর্ঘশ্বাস মোচন করলে তার অন্তরাত্মা চমকিত হয়।
গোপালতাপনীতে ইনি শ্রেষ্ঠ গান্ধবাঁ ব'লে কীতিত হয়েছেন, খকৃ-
পরিশিষ্টে কৃষ্ণের সঙ্গে এর অবিনাভাঁব সম্বন্ধ কথিত, তামিল গীতে ইনি
রুষ্গবল্পভা শ্রেঠা গোপী, ভাগবতে এবং গীতগোবিন্দে- ইনি প্রকুষ্টভাবে
রুষ্ণের আরাধনা করায় এককভাবে কৃষ্ণসঙ্গের অধিকারিণী হয়েছেন, আর
ইনি মানভরে রালমগ্ডলী ত্যাগ করলে কৃষ্ণ ব্যাকুলভাবে এর সন্ধান
করেছেন এবং না পেয়ে পরিশেষে নিষগ্র-হৃদয়ে যমুনাতীরে আশ্রয়
নিয়েছেন। আবার কখনও দূরভ্রমণে ক্লান্ত হয়ে পড়লে কষ একে স্বন্ধে
আরোহণ করিয়ে বহন করতেও দ্বিধা করেননি । পরমস্বকীয়া হয়েও
দৈববশে পরকীয়া এই প্রণয়িনীকে নিজাভিমুখী করার জন্য যে অক্লান্ত
অধ্যবসায় রুষ্ণ করেছিলেন তার ইতিবৃত্ত ফুটিয়েছেন বড়ু চণ্তীদাস।
তত্বের দিক্ দিয়ে রাধা এবং কৃষ্ণ মূলতঃ অভিন্ন, শক্তিমান এবং শক্তির যেমন
অভিন্নতা ৷ লীলায় ভিন্নতা মাত্র । চরিতামুতের কথায় ঃ
রাঁধ! পূর্ণশক্তি, কৃষ্ণ পূর্ণশক্কিমান্।
ছুই বস্ত ভেদ নাহি শান্ত্র-প্রমাণ ॥
মুগমদ তার গন্ধ যৈছে অবিচ্ছেদ।
অগ্নি জালাতে ধেছে নাহি কু ভেদ ॥
রাধ। কৃষ্ণ এছে সদ1 একই স্বরূপ।
লীলারস আস্বাদ্দিতে ধরে ছুই রূপ ॥
কিন্ত তত্বে যাই হোক, লীল1 নিয়েই আমাদের যা-কিছু আগ্রহ । লীলার
স্বরূপ নিয়েই গৌড়ীয় বৈষ্ণবধ্ম। এই লীলায় রাধিকা পরকীয়৷ নায়িকা,
করনায় প্রেমের সীমা যতদূর যেতে পারে তারও অতিরিক্ত সীমাহীন
প্রেমের অধিকারিণী তিনি। স্বয়ং কৃষঃও এ'র প্রীতির পরিমাপ ক'রে উঠতে
পারেননি । তিনি জল্মাবধিই রুষ্ণে অন্ুরাগবতী। অথব। নায়শ্রবণেই
এ'র পূর্বরাগ হয়, তারপর কৃষ্ণের মুরলীরব শ্রবণে, সখীমুখে রুষ-প্রুসে ;
এবং এই পূর্বরাগ প্রগাঢ় হয় বূপ-দর্শনে। পূর্বরাগাবস্থায় ইনি লালসা, উদ্বেগ,
জাগরণ, দেহের কশতা।, জড়ত্ব, ব্যাকুলতা, ব্যাধি, উল্মাদ এবং মুচ্ছার অবস্থ।
ভোগ করেন। পরকীয়াভাবময়্ এই প্রণয়ের নিয়ম হ'ল মিলনের শ্ছুপ্রাপ্যতা
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৭৩
এবং ক্ষণিকতা। আদিতে মধ্যে এবং অস্তে বিরহই হ'ল এর সর্বন্ব। তাই
কী পূর্বরাগে, কী রূপান্থুরাগে, কী মানে, অভিসারে অথবা আক্ষেপাঙ্গরাগে
সর্বত্রই শ্রমতীর অপ্রাপ্থিজনিত তীব্র ব্যাকুলত1। চত্তীদাস-ভণিতার “ঘরের
বাহিরে দণ্ডে শতবার" অথব। "রাধার কী হেল অস্তরে ব্যথা, প্রভৃতি পদে
রাধিকার নিতাস্ত করুণ অবস্থা এবং বেদনার্ড চিত্তের প্রকাশ চিহ্নিত হয়েছে।
পূর্বরাগের পর রূপদর্শনার্দিতে রাগ প্রবৃদ্ধ হ'লে অন্তরাগের অবস্থার উত্তব
হয়। এ অবস্থায় ব্যাকুলত। আরও বেশি, তম্ময়ত] গ্রগাড। জ্ঞানদাস
কয়েকটি পঙক্তিতে এই ভাবাবস্থার চমৎকার ইঙ্গিত দিয়েছেন £
রূপ লাগি আখ ঝুরে গুণে মন ভোর।
প্রতি অঙ্গ লাগি কানে প্রতি অঙ্গ মোর ॥
হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে।
পরাণ পিরিতি লাগি থির নাহি বান্ধে |
কষে লালসাময়ী শ্রীমতীর সর্বেন্দ্িয়চিতকায় কষে সমপিত হওয়ায় যে বহিরকঙ্ষ
ছুবিপাক ঘটেছে তা বিবৃত করতে গিয়ে গোবিন্দদান সখীমৃখে বলছেন £
শ্রনইতে কান্ু- মূরলী-রব-মাধুরী
শ্রবণ নিবারলু তোর ।
হেরইতে রূপ নয়ন-যুগ ঝাঁপলু
তব মোহে রোখলি ভোর ॥
*“**বিনু গুণ পরখি পরক রূপ-লালসে
কাহে ফোপলি নিজ দেহ] ।
দিনে দিনে খোয়সি ইহ তন্ছ লাঁবণি
জীবইতে ভেলি সন্দেহ! ॥
ভরমহি যো তু প্রেমতরু রোপলি
শ্যাম-জলদ-রস আশে।
অব সে নয়ানক নীর দেই সীচহ
কহতহি গোঁবিন্দ্দাসে ॥
কৃষ্ণের জন্য অভিসারে এই কুলবতী নায়িকার প্রণয়ের পরীক্ষা । শ্রীমতী সে-
পরীক্ষা সমুভীর্ণ হয়ে অভিলষিতের জন্ঠ কচ্ছুবরণের চরম দৃষ্টান্ত দেখান । অথবা,
যিনি কুলমর্যাদী আত্মমর্ধাদ1, কৃষ্ণের জন্য সব কিছুই বিসর্জন দিয়েছেন,
বর্ষণপরিষিজ ছুরস্ত পথ ও ঝটিকাক্ষুন্ধ বজ্জবিদীর্ণ রজনীর বাঁধা তার কাছে,
১৭৪ বৈষ্ঞব-রস গ্রকাশ
অতি তুচ্ছই। বস্তত বাধা-বিপত্তির কথা তিনি তুলেই গেছেম এবং
কষ্ণভাবনায় নিজেকে অস্তরে-বাহিরে শ্যামময়ী করে তুলেছেন। রাধার এই
কুষ্ধময়ীত্বের একটি স্থন্দর ছবি গোবিন্দদাসের লেখনীতে ফুটেছে :
নীলিম মুগমদে তন্থু অন্লেপন
নীলিম হার উজোর।
নীল বলয়গণে ভূজযুগ মগ্ডিত
পচিরণ নীল নিচোল ॥
পিয়-অভিসারক লাগি।
কামু-অন্থরাগে গোরী ভেলি শ্ঠামরী
কুহু যামিনী ভয় ভাগি।
কৃষ্ণ মথুরায় যাবেন এই সংবাদে শ্রীমতী অচৈতন্য হয়ে পড়েন, প্রবাসে ন'
গেলেও তিলেক বিচ্ছেদকে যুগ যুগ বিচ্ছেদ ব'লে মনে করেন। এমন কি
বিভ্রাস্তচিত্ত হয়ে মিলনের মধ্যেও বিরহ অনুভব ক'রে বেদনাক্লিষ্ট হতে থাকেন £
দুহু কোরে ছুছ' কাদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া ।
তিল আধ না দেখিলে যায় যে মরিয়৷ ॥
জল বিচ্ মীন জন্ু কব না জীএ।
মানুষে এমন প্রেম কোথ ন। শুনিএ ॥
বস্ততই অবিস্তা-বিমোহিত জীবের স্বার্থময় কৈতবধুক্ত প্রণয়ে এ হেন ভাবোতকর্ষ
মভ্ভব নয়। শ্রীমতী স্বয়ংও এ প্রণয়ের সীম অনুভব করতে পারেন ন?,
শুধু বিচিত্র স্থায়ী ভাব ও সঞ্চারীর মৃক্মূহধ পরিবর্তমান ছন্বের মধ্যে যন্ত্রবৎ
ঘুণিত ও পিষ্ট হতে থাকেন। এই অবর্ণনীয় প্রণয়-মহিম।৷ সম্পর্কে তিনি
সথীর কাছে উত্তর দিতে গিয়ে বলছেন যে এর সীমাই পাওয়] যায় না,
কোথায় পূর্ণতা ?
সোই পিরিতি- অস্থরাগ বখানিতে
তিলে তিলে নৌতন হোয়।
***কত মধুযামিনী রভসে গোয়ায়লু
ন৷ বুঝলু' কৈছন কেল।
লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয় রাখলু
তভে। হিয় জুড়ন ন গেল।॥
প্রেমের এই পরাকাষ্ঠা অন্ত গোপীদের স্বভাবে অনুভূত হয় না। এতখানি
গৌড়ীয় বৈফবধর্ষের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৭৫
কষ্ণতন্ময়তা এবং এত তীব্র বিরহছুখও তার্দের ক্ষেত্রে সম্ভব হয়নি।
রাধাব স্বরূপ বোঝাতে গিয়ে চরিতামূত বলেছেন :
কষ্ণময়ী, কৃষ্ণ ধার অস্তরে বাহিরে।
যাহা ধাহ] নেত্র পড়ে ভাহ। কৃষ্ণ স্ফুরে ॥
রাধা ছাড়া কৃষ্ণ অপূর্ণ, দীন। “রাধাসঙ্গে যদ ভাতি তদ। মদ্দনমোহনঃ |”
রাধার সঙ্গে অবস্থিত কৃষ্ণ মদনমোহন । নতভুব1 স্বপ্বং মদনমোহিত। রাধার
এই গুরুত্বের বিষয়াটি গোবিন্দ অধিকারীর শুকসারী-ছন্দে সুন্দর ফুটেছে।
রাধার জন্যই কৃষ্ণের নটবর বেশ, পীতবসন, মুরলী ধারণ এবং "চুড়ার টালনি
বামে। রাধাপ্রেমের অংশলাজের্র সৌভাগ্য ও লক্ষ্মীর ঘটেনি । কৃষ্ণ বলছেন £
না জানি রাধার প্রেমে আছে কত বল।
যে বলে আমারে করে সর্বদা বিহবল ॥
রাধিকার প্রেম গুরু, আমি শিষ্ত নট ।
সদ] আম। নান] নুত্যে নাচায় উদ্ভট ॥
ললিত। বিশাখা এমন কি চক্জ্রাবলীর মত কৃষ্কপ্রির়াও কৃষ্ণের এই বিন্ময়মিশ্রিত
অন্ধ] আকর্ষণ করতে পারেননি । মহাজন গোবিন্দদাস কবিরাজ একটি
পদ্দে স্থকৌশলে গোপীদের সঙ্গে শ্রীরাধার প্রেম-অন্কুভবের পার্থক্য এবং
রাধিকার উৎকর্ষ খ্যাপন করেছেন £
আধক-আধ- আধ দিঠি-অঞ্চলে
যব ধরি পেখলু কান।
কত শতকোটি কুস্থমশরে জরজর
রহত কি যাত পরাণ ॥
অর্ধেকের অর্ধেক, তারও অর্ধেক দৃষ্টিতে যখন থেকে কৃষ্ণকে দেখেছি তখন
থেকে কত শতকোটি মদনবাণে জর্জরিত হয়ে প্রাণ যাবার মত হয়েছে।
স্থনয়নী কহত কান্ত ঘনশ্ঠামর
মোহে বিজুরি-সম লাগি।
রসবতী তাক পরশ-রসে ভাসত
হামার হৃদয়ে জলু আগি॥
(যে গোপী বলে কৃষ্ণ মিগ্ধ ঘনশ্তাম, দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়, সে স্থুনয়নী ।
তার নয়ন ভালো । আমার কিন্ত দেখামাত্রই বিছ্যাতের মত চোখ ধাধিয়ে
দেয়, জাল। করে। আর কৃষ্ণের স্পর্শলাভে যে ধন্য হয়, বিহ্বল হয়ে পড়ে,
১৭৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
সে রসবতী ; তার জয় হোক । কিন্তু সেস্প্শ আমার দেহমনে অগ্নিময় হয়ে-
ওঠে, আমি এমনিই মন্দভাগ্য |
প্রেমবতী প্রেম লাগি জীউ তেজত
চপল জীবন মঝু সাধ।
প্রেমিক] প্রেমের জন্য আত্মদান করে, আর আমি এই চপল জীবনে বেঁচে.
থাকতে চাই !
বল] বাহুল্য, শ্রীমতীর অন্তরে কেন বিষজাল! হুয়, কেন তিনি প্রাণত্যাগ
করতে চান না--তার কারণ রসিক ভক্তকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। আর
এর মধ্যে রাধাপ্রেম-গ্রদর্শক মহাপ্রভৃই আমাদের সামনে প্রতিভাত হয়েছেন
সেও তারা ইঙ্গিতেই বুঝবেন । গোপীপ্রেম থেকে রাধাপ্রেমের উৎকর্ষ ভ্যোতন।
করতে চরিতাম্ততে বল হয়েছে £
মহাভাবস্বরূপ। শ্রীরাধাঠাকুরানী |
সর্বগুণখনি সর্বকাস্তাশিরোমণি ॥
রাগাত্তিক প্রীতিরসের প্রথমাবস্থাকে যদ্দি “রতি” বল] যার, পরবর্তা অবস্থাকে
বল] যায় প্রেম। রতির গাঢ়তাই প্রেম। এই প্রেম ঘনীতৃত, আরো
ঘ্বনীতৃত হতে হতে ক্রমান্বয়ে নেহ, মান, প্রণয়, রাগ, অন্থরাগ এবং ভাবে
গিয়ে পৌছায় । সাধারণভাবে গোপীদের প্রেম এই ভাব-অবস্থা পর্যস্ত
পৌছাঁতে পাঁরে। কিন্তু ভাবই এর সান্দ্রতম শেষ প্রকাশ নয়। ভাবের উপরে
যে অলৌকিক অপরিমেয় মানসিক অনুভব রয়েছে তা হ'ল মহাভাব এবং
এই অবস্থার অধিকারিণী হলেন শ্রীমতী স্বয়ং। সংসার এবং পাতিত্রত্য
নিঃশেষে ত্যাগ এবং কৃষ্ণের আরাধনায় প্রাঞ্ধ গুরুদুঃখে স্থখান্থভব এই মহা
ভাবের লক্ষণ। রাধিকার চিতেক্দ্রিয়কায় কষ্ণপ্রেমভাবিত, তার সমস্ত বোধই
কৃষ্ণগ্রীতিবোধ, তাই বিরহে অথব। স্বজনতাড়নাদিতে বাইরে কালকুট বিষ-
জালা অন্তত হ'লেও অন্তরে স্থধানিন্তন্দবিশেষ স্বাদিত হয়, তাই রাধাপ্রেম,
তুলনাহীন। এই বক্রমধুরিমার আস্বাদন বোঝাতে চরিতাম্বতকার বলছেন :
বাহে বিষজ্ঞাল। হয় ভিতরে আনন্দময়
কষ্ণ-প্রেমার অদ্ভুত চরিত ॥
এই প্রেম! আস্বাদন তগ্ ইক্ষু চর্বণ
জীভ জলে ন! যায় তাজন।
গৌড়ীয় বৈষবধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৭৭
হেন প্রেমা যার মনে তার বিক্রম সেই জানে
বিষামৃতে একত্র মিলন ॥
এই মহাভাবের অবস্থায় শ্ুস্, স্বেদ, অশ্রু প্রভৃতি সাত্বিক বিকারগুলি মুমুহু
প্রকাশ পেলে তাঁকে বলে রূঢ় মহাভাব, আর সাত্বিক পরাকাষ্টা লাভ করলে
বা স্ব-উদ্দীপ্ত হ'লে সে অবস্থার নাম হয় অধিক মহ্াভাব। অধিবঢ় মহা-
ভাবের আবার 'প্রকাশ-তারতম্যে ছুই বিভাগ_-মোহন এবং মাদন ; এই হ'ল
কৃষ্প্রেমের পরিণামের অবস্থা_এর উপরে আর নেই। মহাপ্রভুর প্রেম-
লীলায় এই ভাবাবস্থা ভক্তের পুন: পুনঃ স্বচক্ষে দেখেছিলেন। এ থেকেই
ব্রজলীলায় রাধার অন্থরূপ* ভাবাবস্থা তারা কল্পনা ক'রে নিয়েছেন।
মোহন হ'ল প্রেমের বিরহাশ্রিত একত্বের নীম, আর মাদন হ'ল মিলনগত
একীভাবের ঘনীতৃত অবস্থ।
যোহন-মহাভাব বিশেষ দশার আশ্রয়ে বিরহোম্মীদের আবির্ভাব ঘটাগ্।
শ্রীমতী মথুরা থেকে কুষ্ণপ্রেরিত উদ্ধবদ্র্শনে বিশেষতঃ ভ্রমরকে লক্ষ্য ক'রে
উন্মত্তের ন্যায় বিলাপ, রোদন, ক্রোধ, মান প্রভৃতি প্রদর্শন করেছিলেন ।
উদ্ঘূর্ণা, প্রলাপ, চিত্রজল্প প্রভৃতি হ'ল দিব্যোন্মাদের কার্য । চরিতামৃত
বলছেন :
উন্মারদের লক্ষণ করায় কৃষ্ণ স্মরণ,
ভাবাবেশে উঠে প্রণয় মান।
সোলু& বচনবীতি মদ গর্ব ব্যাজস্তুতি
কভু নিন্দ। কত বা সম্মান ॥
এই অবস্থায় প্রবল মানস-বিকৃতি দেহেবও বিরতি নিয়ে আসে । মহাপ্রতৃতে
লক্ষিত এই অলৌকিক ভাবাবেশের বর্ণনায় ঠতন্যচরিতামৃত বলছেন :
নিরন্তর হয় প্রভুর বিরহ-উন্মা্দ ।
ভ্রমময় চেষ্টা প্রলাপময় বাদ ॥
রোমকৃপে রক্তোদ্গম দত্ত সব হালে।
ক্ষণে অঙ্গ ক্ষীণ হয় ক্ষণে অঙ্গ ফুলে ॥
গভীর1-ভিতরে রাত্রে নিদ্রা নাহি লব।
ভিত্ত্যে মুখ শির ঘসে ক্ষত হয় সব॥
তিন দ্বারে কপাট প্রভূ যায়েন বাঁহিরে।
কু সিংহদধারে পড়ে কভু দিন্ধুনীরে ॥
১৭
১৭৮ বৈষ্ণব রস-প্রকাশ
চটক পর্বত দেখি গোবর্ধন ভ্রমে।
ধাঞা। চলে আর্তনাদ করিয়। ক্রন্দনে ॥
উপবনোদ্ঠান দেখি বুন্দীবনজ্ঞান ॥
তীহা যাই নাচে গায় ক্ষণে যৃছণ যান ॥
কাহা নাহি শুনি যেই ভাবের বিকার।
সেই ভাব হয় প্রভুর শরীরে প্রচার ॥
এই পরমাশ্চর্য ভাবাবস্থা এবং “কোথ। কৃষ্ণ” ব'লে অহরহ রোদন এক মহাপ্রতুর
লীলায় দৃষ্ট এবং রাধাপ্রেমে অন্থমিত হয়েছে । এইজন্ই রাধিকা হলেন
ব্রজকান্তাগণের শিরোমণি। আর এ স্বাভাবিক, কারণ তিনিই কৃষ্ণের
হলাদিনী শক্তি, এক আত্মাঁ-ছুই দেহ, আর ব্রজগোপীর। তার স্বাংশ
নিয়ে গঠিত অনস্ত বিলাসমূতি মাত্র।
রাধাকুষ্ণ যুগলপ্রণয়ের যে মিলনরসাসম্বাদ তার আর এক উল্লেখযোগা
বৈশিষ্ট্য হ'ল উভয়ের ব্যক্তিত্বাতন্ত্য বিলীন ক'রে শুবু ভাবসারাবস্থায় উপনীত
করা। তখন কৃষ্ণের পুরুষ-ব্যক্তিত্ব এবং রাধার নারী-
ব্যক্তিত্বের বিলোপ ঘটে। আস্বার্ঁক এবং আশ্বাগযেরও
ভেদ থাকে না। উভয়ে প্রেমাত্মা-রূপে প্রেমসমুদ্রে ভাসমান হন। চরিতামুত
রামানন্দমমুখে একে প্রেমবিলাস-বিধর্ত বলেছেন । বিবর্ত শব্ের অর্থ ভ্রান্তি
বা অন্যথাবুদ্ধি। পুরুষ শ্রীকুষ্ণ তখন নিজেকে নায়ক আব শ্রীমতী তখন
নিজেকে নায়িকা বলে মনে কবেন না। এরকম বিহ্বলতণ ঘটতে পারে
মহাঁভাবের মিলন-পরিপাকাবস্থায়, মাদনাবস্থায়। বিরহে রুষ্ণস্ফৃতি এবং
গ্রলাপার্দি যেমন এক প্রেমপরাকাকাষ্টা, তেমনি মিলনে সম্পূর্ণ আত্মবিলোপ
এবং ভাবে রূপান্তরিত হয়ে যাওয়া এও প্রেমের এক পরিপাকাবস্থ। ৷
তবু ম্বরূপ বর্ণনায় একে বিবর্ত বা ভ্রমাভ বলা হয়েছে এই জন্য যে
যখার্থই. তো৷ আর নায়ক-নায়িক। স্বাতন্ত্য ত্যাগ ক'রে এক হয়ে যাচ্ছেন
না। প্রেমের বিষয় এবং আশ্রয় দুয়েরই এরকম মনে হয় ব'লে।
দিব্যোন্নাদ এবং বিরহোন্ম।দেও এরকম ভ্রান্তি, যার বিবরণ চৈতন্তচরিতা-
মৃত থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে । প্রেমবৈচিত্ত্যেও একই-প্রকার ভ্রান্তি, মিলনে
বিরহবোধ। স্থতরাং বলা যায়, মহাভাবের অবস্থাই হ'ল ভ্রমবিধায়ক।
দিব্যোন্সাদদের লক্ষণে শ্রীপাদ বূপগোম্বামী বলছেন £
প্রেমবিলাস-বিবর্ত
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের প্রতিষ্ঠা ১৭৯
এতশ্ত মোহনাখ্যস্ত গতিং কামপ্যুপেয়ুষঃ।
ত্রমাভা কাপি বৈচিত্রী দিব্যোম্মাদ ইতীর্যতে ॥
যাই হোক, মিলনে ভ্রান্তিময় এই যে আশ্র্য বিলাস এ বিষয়ে একটি
পদ্বচন] বলায় রামানন্দ মহাপ্রভুকে শুনিয়েছিলেন এবং শুনে মহাপ্রভূ “আর
নয়, যথেই্ট হয়েছে এই বোধে তার মুখ আচ্ছাদন করেছিলেন। নান।
কারণে রামানন্দের এই রচনাটি বিখ্যাত :
পহিলহি রাগ নয়নভরঙ্গ ভেল।
অন্ুদ্দিল বাঁচল অবধি ন গেল॥
ন সে রমণ বন হাম রমণী।
দুই মন মনোভব পেষল জনি ॥
এ সখি, সো৷ সব প্রেম-কাহিনী।
কাছুঠামে কহবি বিছুরল জানি !
ন খোজল দূতী ন খোজল আন।
দুইুক মিলন-মধ্যত পাঁচবাণ |
অব সে৷ বিরাগে তুহী ভেলি দৃতী।
স্থপুরুখ প্রেমক এছন রীতি ॥
পাঁধিকা স্বপ্নে দেখছেন__মানভঙ্গের পর মিলিত হয়ে নিজগৃহে প্রত্যাবর্তন
৭রে কৃষ্ণ ভাবলেন শ্রীমতীর মান বোধ হয় নিঃশেষে ভাঙেনি। তাই
আলে। ক'রে মান ভাঙাবার জন্ত দূতীকে পাঠিয়েছেন । রাধিকা স্বপ্রেই
সেই দূতীকে বলছেন-এমন নিরুপাধি এবং শুদ্ধতম প্রণয়ে আজ এমনতর
সন্দেহ! তুমি তাকে আমাদের সেই প্রণয়ের ব্যাপারটি ভালো ক'রে
স্মরণ করিয়ে দিও, সে সব ভুলে গিয়েছে বোধ হয়। তাই আজ দৃতী
ঠিক ক'রে মধ্যস্থত। করতে পাঠিয়েছে!
আসলে পদটিতে রাধাক্কষ্ণপ্রণয়ের পরমাশ্চর্য বৈশিষ্ট্যগুলি সবই বিবৃত
হয়েছে। তা হ'ল--€১) এ প্রণয় দূতীর মধ্যস্থতায় নয়, এ শুধু চোখের দেখায়।
এ “তারামৈত্রক পূর্বরাগ” | (২) এ প্রণয় শুধু বেড়েই চলে, এর সীম। পাওয়া
যায় না-_-এ নিত্য নব নব ব'লে প্রতিভাত হয়। (৩) এই শ্রদ্ধ স্বারসিকী
রাগ উৎকর্ষ লাভ ক'রে এমন এক অবস্থায় উপনীত হয়, যাতে নায়কের
পক্ষে আমি পুরুষ নই এবং নায়িকার পক্ষে আমি নারী নই এরকম ভ্রম
ঘটে। অর্থাৎ উভয়েই রসনির্যাসবিশেষে বূপাস্তরিত অহ্থভব করে।
১৮০ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
এর উপর প্রেমের আর গতি নেই। কলিষুগে মহাপ্রভু এবং দ্বাপরে
শ্রীরাধা এই প্রেমের আশ্রয়। মহাপ্রভৃ-প্রদশিত এই অধিনঢ মহাভাবের
অনুসরণ ভক্তদের সাধ্যাতীত, এমন কি ভাবাদির, অধিকারও সাধারণ
ভক্তের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে রাগাঙ্গগার অন্গকূল বৈধী মার্গ আশ্রয়
করলে কুষ্ণপ্রেমের আবির্ভাব পর্যস্ত তার্দের ঘটতে পারে এই আশ্বাস
সিদ্ধান্তকারেরা দিয়েছেন ।
॥ গৌরকৃষ্ণতত্ব বা কৃষ্ণের বৃন্দাৰনলীল। ও নবদীপলীলা ॥
গয়া-প্রত্যাবৃত্ত গৌরাঙ্গের ভাবপ্রকাশের স্বপ্নকালমধ্যেই তিনি পূর্ণতত্ব
ও রুষ্ণন্বব্ূপ ব'লে নবঘীপ-লীলাপরিকরদের কাছে প্রতিভাত হয়েছিলেন ।
ভক্তিতত্ববিৎ সাধক অদ্বৈত তার পূজা ও স্তব করেছিলেন, পরিকরবৃন্দ
মিলে তার অভিষেক করেছিলেন। আর নরহরি বাসুদেবাদি গৌররূপী
নটবর কৃষ্ণের লীল। নিয়ে তখনই পদ্দরচন। করতে আরম্ভ করেছিলেন ।
এই সময়ে ভাবাবিষ্ট গৌরাঙ্গ প্রথমে দ্রাশ্তভক্তিভাবে, পরে কান্তা-ভাবে
কৃষ্ণসঙ্গ লাভের জন্য সমূৎস্থক, আবার কখনো রুষ্ণভাবিত হয়ে রাধাসঙ্গ
প্রাপ্তির জন্য ব্যাকুল। অথাৎ তিনি কখনে। গোপীভাবে, কখনো কৃঞ্চভাবে
ভাবিত। সন্্যাস গ্রহণের পর থেকে তার এ কুষ্ণভাবিত প্রকাশ অর্থাৎ
রাধাপ্রাপ্তির ব্যাকুলতা1 আর দেখা যায়নি, এখন থেকে কৃষ্ণের জন্যই
তার লালসা-উদ্েগ-মুছণ, তার অবিরল অশ্রপাত। গৌরাঙ্গই কৃষ্ণ এই
উপলব্ধিতে নবদ্বীপের ভক্তবুন্দ প্রত্যয়বান্ হলেও এরকম ভাববিকারের
তাৎ্পর্য তার] সম্যক অনুধাবন করতে পেরোঁছলেন কিনা সন্দেহ। তাদের
ধারণায় কৃষ্ণ যুগধর্ম প্রবর্তন করতে এসেছেন ভক্তভাব অঙ্গীকার ক'রে।
এই যুগধর্ম হ'ল নামসংকীর্তনের মব্য দ্রিয়ে জাতিবর্ণনিবিশেষে সকলকে
হুরিভক্তির সহজ পথ প্রদর্শন । তিনি বিশেষভাবে এসেছিলেন তাদেরই ভন্য,
শান ও সামাজিক দক্ত যাদের ধর্মের স্থতরাং মনুষ্যত্বের অধিকার থেকে
বঞ্চিত করেছে। যারা হীন এবং পতিত, বিধর্মী এবং বিজাতি বলে
নিন্দিত। নবদীপলীলাপরিকরদের এ অনুভব যথার্থ। কিন্ত এ ছাড়া
প্রীচৈতন্তলীলার গভীরতর তাৎপর্ষের ইঙ্গিত তার শেষ দ্বার্দশবসরের অন্তর
লীলাপহচর ম্বরূপ-দামোদর এবং দেই সঙ্গে গোম্বামী শ্রীরপ ও রঘুনাথ
গেড়ীয় বৈষ্বধর্ষের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৮১
উপলন্ধি করেছিলেন। শেষ বারো৷ বৎসরে মহাপ্রতৃর কষ্ণবিরহ অতান্ত
প্রবৃদ্ধ হয়ে বিরহমূলক কৃষ্ণপ্রেমার কল্পনীয় শেষদশ! দিব্যোন্াদদের অবস্থা
পর্যস্ত অগ্রসর হয়েছিল। এই অবস্থায় কেবল অশ্র-রোমাঞ্চ-কম্পই নয়,
আরও এমন সব বিকার দেখ! গিয়েছিল য৷ পূর্বে দেখ! যায়নি, যেমন
প্রলাপ-_কখনো মানের ভাব এবং সেই সঙ্গে কৃষ্ণনিন্দা, ক্রোধ এবং গর্ব-
প্রকাশ, কখনে। নিতান্ত দেন্য এবং আতি $ বিষাদ, গর্ব দৈন্তোক্তির পর্যায়
শেষ হতে না হতেই বিপরীত ক্রাঞ্চারীর উদয়; কখনে। ভ্রমবশে কৃষ্ণের
অন্থসন্ধান করতে তিনি পুশ্পে][গ্ভানে প্রবেশ করছেন, কখনো অসংবৃত
অবস্থায় বেলাভূমির উপর দিয়ে সমূদ্রের দ্রকে দৌড়ে যাচ্ছেন, দেবদাসীদের
গান শুনে তাদের আলিঙ্গন করবার জন্য ছুটছেন, কখনো বা নিতান্ত
বিকল অবস্থায় বিনিদ্র রজনী যাপন করছেন এবং জগন্নাথ মন্দিরের
গম্ভীরার ভিত্তিতে মুখ ঘসে মুখ রক্তাক্ত করছেন। এ এক অদুষ্টপূর্ব
আশ্চর্য ব্যাপার। নবদীপে এ লীলা দেখা যায়নি । সেখানে প্রায়শই
কৃষ্ণভাবাবেশ এবং এশ্বর্ষের প্রকাশ, যেমন, মুরারিগৃহে বরাহভাব, শ্রীবাস-
গৃহে বিষুখট্রায় উপবেশন, সাতপ্রহর ভাবাবেশ, আমি মেই, আমি সেই”
ভাষণ, নগরসংকীর্তন, কাজি-প্রবোধ, জগাই-মাধাই উদ্ধার, ভক্তবুন্দকে
আকর্ষণ। এরই সঙ্গে নৃত্য, কীর্তন, অশ্রকম্পের মধ্য দিয়ে স্পষ্টতঃ যুগধর্ম
প্রবর্তনের প্রতীতি সঞ্চার। অন্তপক্ষে নীলাচল-লীলায় বিরহপ্রলাপাদদিতে
তিনি নিতান্তই গোঁীশ্রে্ঠা রাধা বলে প্রতীয়মান। দেহকাস্তিতেও
তিনি রাধারই দ্বিতীয় প্রতিম1। তা ছাড়া এ কথাও মনে হয়েছিল ষে,
এরকম স্থৃতীত্র ভাবোন্নাদ, স্দ্দীপ্ত সাত্বিক ভাবের প্রকাশ তো। কেবল
যুগধর্ম প্রচারের জন্য হতে পারে না। এই এক দেহে ছুই লীলার সংগতি
ও সমাধান নীলাচল-জীবনের নিতান্ত অন্তরঙ্গ বিদগ্ধ ও বহছগুণশালী ম্বরূপ-
দামোদরের (এবং সম্ভবতঃ রামানন্দের) সক্দৃষ্টিতে প্রথম ধর] পড়ে।
স্বরূপ সম্ভবতঃ নবদ্বীপলীলারও প্রত্যক্ষ ভ্রষ্টঈ ছিলেন। মহাপ্রতুর নীলাচল-
লীলার ভাববিকারগুলি পর্যালোচনা ক'রে তার তাৎপর্য আবিষ্কার ক'রে
তিনি স্ত্রাকারে শ্লোকে কড়চা ক'রে রাখেন। শিক্ষা-শিষ্য রঘুনাথদাস
তা কঠস্ব ক'রে নেন এবং নীলাচলে রূপ-সনাতন এলে তারাও এ
বিষয়টি উপলব্ধি করেন (মহাপ্রতু-উচ্চারিত “যঃ কৌমারহর:*_শ্লোকের
শ্রীবূপ্রচিত প্রতিশ্সোক পপ্রিয়ঃ সোইয়ং কৃষ্ণ:১ এবং অপারং কন্তাপি
১৮২ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
প্রণয়িজনবুন্নন্ত” প্রভৃতিই তার প্রমাণ )। ভ্রমে চৈতন্যলীলার এই তাৎপর্যটি
কেবল নীলাচল-বুন্দাবনেই সীমিত থাকেনি । প্রতিবর্ষে সমাগত নবঘ্ীপের
ভক্তবৃন্দের হদয়েও অনিবার্ষভাবে রেখাপাত করেছিল। বাহ্ছর্দেক ঘোষ
ও নরহুরি সরকার এই নিয়ে পদও লিখেছিলেন ।
চৈতন্যলীলার এই নিগৃঢ় ব্যাপারটি, চৈতন্য-চরিতামতকারের মতে
স্বরূপ দামোদর থেকেই যার প্রচার, তা হল এই ঃ কৃষ্ণেরই বুন্দাবনলীল!
এবং কৃষ্ণেরই নবদ্বীপলীল1। মুলে কৃষ্ণ তার অন্তর্ভাম্বতী হনাদিনীশক্তিসহ
অদ্বিতীয় একই ছিলেন, নিজনুখ নিজ অন্তরেই উপলব্ধি করতেন, আঁতিরিক্ত
প্রেমস্থখবাসনায় তিনি হলাদিনীকে তার অন্তর থেকে বাইরে এনে পৃথকৃ
করলেন, নিজকে ছিধাবিভক্ত করলেন মিলনবিরহ্ধয় প্রেমলীলা অনুভব
করার মানসে । কোনো এক দ্বাপরে বেণুকর দ্বিভুজ তমালশ্যাম মাস্থষ-
মৃতিতে নিজকে গ্রকটিত করলেন আর তার হলাদিনীকে অবিভূতি করালেন
গোপরমণীসহ রাধারূপে রুন্দাবনে। ছিলেন এক, ছুই হলেন। আবার
অনিবার্য কারণে এ ছুইকে মিলিত ক'রে নৃতনভাবে একরূশে নিজকে
আবিভূতি করানোর প্রয়োজন হ'লে তিনি এ দ্বাপরেরই পরবত্র্ণ কলিষুগে
শচীগর্তে গৌরাঙ্গ হয়ে আবিস্তত হলেন। কৃষ্চৈতন্ত নামে অভিনব
লীলায় হলেন আবিষ্ট। স্বরূপ দামোদরের রচিত ব'লে কথিত নিশ্ললিখিত
শ্লোকে একই কৃষ্ণের এই ছুই লীলাতত্বের বিষয়টি উপস্থাপিত কর। হয়েছে ;
রাধা কৃষ্ঃপ্রণয়বিকৃতি হলাদিনী শক্তিরম্মাৎ
একাত্মানাবপি ভূবি পুরা দেহভেদং গতৌ তো।
চৈতন্যাখ্যং প্রকটমধুন। তত্দয়খৈক্যমাপ্তং
রাঁধাভাবছ্তিস্থবলিতং নৌমি কৃষ্ণম্বরূপম্ ॥
রাধা হলেন প্রেমঘন কৃষ্ণের প্রেমপরিণাম। শক্তিতত্বের দিক দিয়ে
বিবেচনা ক'রে বলতে হয় হ্লাদিনীশক্তি। যূসে এই হ্লাদিনীশক্তিসহ কৃষঃ
একবপুঃ হলেও তারই ইচ্ছায় এ হলাদিনীশক্তি মূতি পরিগ্রহ ক'রে রাধারূপে
পৃথক হয়ে পডেছিলর। এটি ঘটেছিল কৃষ্ণের বুন্দাবনে প্রকট হওয়ার
সময়ে। এখন কলিতে আবার সে ছুই একত্র হয়ে কৃষ্ণচৈতন্মৃতিতে প্রকট
হয়েছে। অহো! নিগৃড এবং আশ্্জনক এই কষ্ণলীলা। যেহেতু
এখন তিনি বহিরঙ্গে, ভাবে ও কাস্তিতে রাধা, কিন্তু অস্তরঙ্গে সেই
ঘ্বিভূজ যূরলীধর শ্যামই !
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের দার্শনিক প্রতি ১৮৩
প্রশ্ন হ'তে পারে, এক রুষ্ণচ ছুই হলেন দ্বাপরে, প্রেমরসনির্ধাস
আম্বাদের বাসনায়, এ না হয় বোঝা গেল, কিন্তু পুনরায় বিপরীত্ভাবে
এক হওয়ার কারণ? ম্বরপ-দামোদর আর একটি শ্লোকে এর অর্থ
নির্দেশ করেছেন £
শ্রীরাধায়াঃ গ্রণয়মহিমা কীদৃশে! বানয়ৈবা
স্বাছ্চো যেনাডূঁতমধুরিম। কীদৃশো বা মদীয়ঃ।
সৌখ্য* চাস) মদনুভবতঃ কীদৃশং বেতি লোভাৎ
তন্তাবাঢ্যঃ সফ্জনি শচীগর্ভসিন্ধৌ হরীন্দুঃ ॥
অর্থাৎ, বুন্দাবনে গোপীশ্রেষ্ঠ। রাধাব সঙ্গে যে মিলন-বিরহলীল! তিনি অনুভব
করলেন তাতে তার পূর্ববাসনার পুরণ ঘটলেও অন্যতর বাঁসন। জাগরিত হু'ল।
কারণ, কৃষ্ণ এই দ্বাপর-লীলায় যা অন্ভব করলেন তা তার অভাবিত।
এ রকম ব্যাপার চাক্ষুষ করবেন ত। তিনি পূর্বে কল্পনাও করেননি । সে
ব্যাপারটি হ'ল রাধার প্রেমরহম্ত । রাধার আস্তর অন্ুভব। পুরুষ কৃষ্ণ
নিজের অনুভবের স্বব্ূপ হয়তে। বা সম্যক জেনেছিলেন, কিন্তু তার থেকে
পৃথক তার নারীরূপা শক্তির অন্তর? যদি বলা যায়, কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান্
হ'লে এ বিষয়টিই ব। তার অজানা থাকে কেমন ক'রে? তার উত্তরে
বল৷ যায় যে, লৌকিক লীলায় যখন কৃষ্ণ আত্মর্ান করলেন, তখন তিনি
দৈবের হাতেও আত্মসমর্পণ করলেন। তখন তিনি ইচ্ছে করলেও রাধার
সঙ্গে যেমন মিলিত হতে পারলেন না, তেমনি রাধাচিতও তার ছুরবগাহই
থেকে গেল। কিন্তু রাধার অন্থভব বোঝবারই বা তার কেন আগ্রহ
জন্মাল? এর উত্তর চরিতামুতকার নিম্নলিখিতভাবে দিচ্ছেন £ রাধার তো
কথাই নাই, গোপীদের প্রণয়ও উচ্চপর্যায়ের, কৃষ্ণের নিজপ্রণয় তার কাছেও
যেতে পারে না। গোপীপ্রেম যেমন সম্পূর্ণ নিংস্বার্থ তেমনি একাস্ত সীমাহীন |
প্রেমবিষয়ে গোপীর। কৃষ্ণের গুরু । এই গোপাঁদের মধ্যে আবার সব বিষয়ে
রাধার শ্রেগতা। তিনি মহাভাবের অধিকারিণী। নিমেষ বিরহে তার
স্থতীব্র আতি, বিরহভয়ে তিনি মিলনেও কাতর]। কৃষ্ণের জন্য তার সর্বন্ব
ত্যাগ, এমন কি লজ্জা এবং আত্মমর্যাদা পর্যস্ত। তার অশ্রু, রোমাঞ্চ, যুছ 1,
আক্ষেপ এবং উন্ম।দ বিকার আর কোথাও দৃষ্ট হয়নি। এ প্রেম সহজ এবং
স্প8ও নয়। এ মুহূর্তে মুহূর্তে নবায়মান, এ পরস্পর-বিরুদ্ধ ভাবের আধারও
১৮৪ বৈষ্ব-রস-প্রকাঁশ
বটে। স্থতরাঁ কৃষ্ণের কাছে এর স্বরূপ অনির্ণেয় এবং তা অগপ্রাপ্যও।
অথচ বৃন্দাবনলীলায় কৃষ্ণ রাধার প্রণয় দেখে যতই বিম্ময় বোধ করেন ততই
এ প্রেমের স্বরূপ নিজ অন্তর দিয়ে বোঝবার আগ্রহ তার প্রবল হয়। কিন্তু
তিনি ত1 পারেন না। কারণ, এ আশ্চর্য রাধাপ্রেমের তিনি বিষয়মাত্র, রাধাই
আশ্রয়। আশ্রয়জাতীয় প্রেম লাভ করতে হলে তাকেও আশ্রয় অর্থাৎ
রাধা হতে হবে। সে তে। আর বুন্দাবনলীলায় সম্ভব নয়। তার ইচ্ছায়
এই নবদ্বীপলীলাঁয় তা ঘটল ।
বিষয়টি সংক্ষেপে অথচ পরিষ্কার ক'রে বলতে গেলে এই দ্রাড়ায় যে, বুন্দাবন-
লীলায় কৃষ্ণচিত্তের অপূর্ণততাবোধ থেকেই নবদীপলীলার উদ্ভব। এই
অপূর্ণতাবোধ মহাভাবরূপ রাধাপ্রেমের তিনটি বিষয় নিয়ে। প্রথমতঃ এ
প্রেমের মহিমা কেমন, দ্বিতীয়তঃ কৃষ্ণের নিজরূপগুণে কী মাধুর্য আছে যাতে
রাধাকে এভাবে ব্যাকুল করে, তৃতীয়ত: কৃষ্ণের অনুভবে রাধাচিত্তে যে সখ
উৎপন্ন হয় তারই ব। প্রকার কী।
ফলতঃ রাধার ভাব ও কান্তি নিয়ে তাকে আবার আসতেই হ'ল।
পার্থক্য এই যে, বুন্দাবনলীলায় তিনি স্বরূপে এসেছিলেন; এবার এলেন
রাধারূপে। তাই গৌরাঙ্গ বাইরে রাধা, অস্তরে কৃষ্ণ । এঅস্তঃকৃষ্ বহির্গোৌরঃ” |
দ্বাপরে তিনি যেমন নিজ লীল। ছাড়! আন্ুষঙ্গিকভাবে বাগধর্মের প্রচার
করেছিলেন, এবারেও তিনি তেমনি নামসংকীর্তনের আদর্শ দেখিয়ে যুগধর্ষ
প্রবর্তন করলেন। সেবার শুধু ভক্তদেরই উদ্ধার করেছিলেন, এবার
জাতিকুলস্প্রদায়-নিবিশেষে আপামর জনসাধারণকে । গৌরলীলার মধ্য
দিয়ে এই বিষয়টি ক্রমে ক্রমে ভক্তদের কাছে পরিস্ফুট হয়েছিল। গৌরলীলাদৃষ্টে
কষ্লীলার নিগৃঢ় স্বরূপ এবং রাগান্ুগভক্তিধর্মের যাবতীয় হুমম বৈচিত্র্যও
ভক্তদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। নতুবা কৃষ্ণলীল! বিষয়ে এই
ধারণাই জনসমক্ষে বিরাজ করত যে রুষ্ণ নারায়ণের অবতার মাত্র এবং
তিনি অসুর সংহার ক'রে এবং কুরুক্ষেত্রের ধর্মযুদ্ধ পরিচালনা ক'রে যুগধর্ষ
গ্রাবর্তনৈর জন্যই এসেছিলেন। এরকম ধারণায় শ্ুদ্ধভক্তিমূলক প্রেমধর্মের
সম্পদ থেকে বিশ্ব বঞ্চিত থাকত। ঈশ্বর মানুষ থেকে যেমন দূরে তেমনি
দূরেই থাকতেন, আর জাতিবর্ণের দত্ত, বিদ্যার এশ্বর্য, মুক্তির গর্ব তেমনি
আধিপত্য বিস্তার ক'রে সাধারণ মাহ্ুষকে পীড়িত ও অভীষ্টলাভে বঞ্চিত
করতে থাকত। শ্রীচৈতন্য পথ দেখালেন । পূর্ণচন্দ্রের মত অন্ধকার দূর করলেন,
গৌড়ীয় ঠবষবধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৮৫
তাই আমর] দেখলাম । এই বিষয়টি স্মরণ ক'রে কোনে পদকর্তা ( বাস্কদেব ?
নরহরি ?) লিখেছেন £
যদি গৌর নহিত কি মেনে হইত
কেমনে ধরিতে। দে।
রাধার মহিম। প্রেমরস-সীম।
জগতে জানাত কে ॥
মধুর-বুন্দা- বিপিন-মাধুরি-
প্রবেশ-চাতুরি-সার |
বরজ-যুবতি- ভাবের ভকতি
শকতি হইত কার ॥
কোনে। পর্দকর্ত (গোবিন্দদাস কবিরাজ ) বাধাভাবছুযতি-স্থবলিত কৃষ্ণের
বন্দন। নিম্নলিখিতভাবে কবেছেন £ |
জয় নিজকাস্ত। -কাস্তি-কলেবর
জয় জয় প্রেয়পী-ভাব-ধিনোদ |
কোনো পদকর্তা ( বলরাম দাস?) বিশ্মিত প্রশ্নের দ্বার] কৃষ্ণের এই রাধাভাবরূপ
গ্রহণের পূর্ব অদ্ভুত বিষয়টি সাধারণের গোচরে আনতে চেয়েছেন £
শিখিপুচ্ছগুঞাবেড়। মনোহর ঘার চূড়া
সে মস্তক কেশশৃন্য দেখি।
যার বাঁক1 চাহনিতে মোহে রাধিকার চিতে
এবে প্রেমে ছলছল আখি ॥
সদ) গোপী সঙ্গে রহে নান! রঙ্গে কথ। কহে
এবে নারীনাম না] শুনয়ে |
তুজযুগে বংশী ধরি আকধয়ে ব্রজনারী
সেই তুজে দণ্ড কেন লএ।
বুদদাবনের গোস্বামীবর্গের মধ্যেও কৃষ্ণের রাধাভাব গ্রহণের তত্ব প্রকাশিত
অথব] প্রচারিত হতে খুব বিলম্ব ঘটেনি। শ্রীরূপের চৈতন্যাষ্টকের এরকম
ছুটি শ্লোক চরিতামূতে উদ্ধত হয়েছে। “স্থরেশানাং ছুর্গং, এবং অপারং
কশ্তাপি। এর মধ্যে দ্বিতীয় গ্লোকটিতে “রুচিংস্থামাবত্রে ছ্যুতিমিহ তরদীয়াং
প্রকটয়ন্, প্রভৃতি শ্রীল স্বরূপদামোদরের রাধাভাবছ্য তিস্ববলিতম্ এরই প্রতিধ্বনি
মনে হয়। যাই হোঁক, নীলাচল-বুন্দীবনে গৃহীত চৈতন্যলীল। সম্পর্কে এই
১৮৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
নৃতনতর উপলব্ধি সমগ্র বৈষ্ণব সমাজে প্রচারিত ও গৃহীত হতে বিলম্ব ঘটেনি ।
এইভাবে কৃষ্ণ এবং চৈতন্যের ব্রজলীল1 এবং নবদ্বীপলীলার সমস্ত্র আবিষ্কৃত
হওয়ায় ভক্তের বৈষ্বধর্মের নৃতন এবং পূর্ণাঙ্গ পথের সন্ধান পেলেন এবং এর
ফলে পূর্বপ্রচলিত বৈষ্ণবধর্ম থেকে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের কতকগুলি অসাধারণ
বৈশিষ্ট্যও সুচিত হ'ল। নোতুন রসশাস্ত্র গড়ে উঠল, পদাবলী তার সহজ
স্বত:স্মৃর্ত ভঙ্গি ত্যাগ না করেও সুঙ্মতর রসবিবেচনার আদর্শ বরণ করে নিলে ।
যেহেতু গৌরাবিভীবে জন্যই এই নৃতন ধর্মের পথ উন্মুক্ত হ'ল এবং
তদন্য়ায়ী রসশৈলী প্রতিষ্ঠিত হ'ল এবং যেহেতু তার লীল? বুন্দাবনলীলাকেই
স্পষ্ট, যথাযথ এবং গভীরতর তাৎপর্যে মণ্ডিত ক'রে প্রতিষ্ঠিত করলে, সেইহেতু,
তার তাৎপর্যপূর্ণ জীবনালেখ্য রাধাকৃষ্ণ লীলাগানের পূর্বত্মিকারূপে গ্রহণ
ক'রে ভক্তের কীর্তন গানকেও পূর্ণাঙ্গ এবং তার ভাববস্তকে প্রতীতিষোগ্য
ক'রে তুললেন। রাধাভাবান্বিত কৃষ্ণের বা গৌরের বিভিন্ন অবস্থার চিত্র নিয়ে
লেখা এই শ্রেণীর পদ “গৌরচন্দ্রিকা” ব'লে কীতিত হ*ল।
গৌড়ীয় বৈষ্ণব প্রেমধর্মের অনন্যসাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলির পরিচয় এখন
সংক্ষেপে দেয়! যেতে পারে £
দ্বিভুজ বেণুকর গোপবেশ কুষ্ণই পূর্ণ ভগবান্ এবং তিনি ছ্াপরে
বুন্দাবনে নিজকে প্রকাশ করেছিলেন তার হলাদ্িনী শক্তি রাধার সঙ্গে প্রেমলীল?
আস্বাদন করার জন্য । ( এ বিষয়টি পূর্বেই ব্যাখ্যাত হয়েছে )
২. ব্রজবধূদের রাগাত্মিক এবং তদনুসরণে ভক্তদের রাগান্্গমার্গে কৃষণ-
ভজনই শ্রেষ্ঠ উপাসন। পদ্ধতি ।
রাগাত্মিক কৃষ্তজারাধনের বৈশিষ্ট্য হ'ল ঈশ্বরকে চিরাচরিত এশ্বর্-মহিমার
আসন থেকে মতের মাটিতে নামিয়ে এনে তাকে আত্মীয়রূপে অচ্ছভব কর
এবং নিঃস্বার্থ প্রীতি দিয়ে তাকে আকর্ষণ করা। অন্ত কোনে বাসনার
জন্য নয়, শুধু আত্মার আত্মীয় বলেই তাকে পাবার অভিলাষ যে-মনোভাবে,
তাকেই রাগময়ী প্রীতি বা৷ শ্রদ্ধা ভক্তি বলা হয়েছে। এর অন্ত কোনো
মূল্য নেই। “তত লৌল্যমপিমূল্যমেকলং জন্মকোটিস্থকৃতৈর্ণ লভ্যতে'_এই
নিঃস্বার্থ কৃষ্ণলালন। কোটিজন্মের বিনিময়েও পাওয়া! যায় না। ভক্ষিরসামৃত-
সিন্ু'তে রাগাত্মিক ও রাগাহগ ভক্তিভাবের নিয়লিখিতভাবে লক্ষণ নির্ণয়
কর। হয়েছে £
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ষের প্রতিষ্ঠা ১৮৭
ইঞ্টে স্বারসিকী রাঁগঃ পরমাবিষ্টত1 ভবেৎ।
তন্ময়ী য! ভবেস্তক্তিঃ সাত্র রাগাত্মিকোর্দিত] |
অর্থাৎ অভীষ্ট প্রিয় ব্যক্তিতে স্বাভাবিক এবং গাঁড় যে আবিষ্টত1 তাঁকে বলা!
যায় রাগ। আর এই রাগময়ী যে কৃষ্ভক্তি তা হ'ল রাগাত্মিক। ভক্তি।
ব্রজবাসী জনের রুষ্ণের প্রতি যে আকর্ষণ তা রাগাত্িক। আর এই
'রাগাত্মিকামনুস্থত্য য! সা রাগাঁছগোচ্যতে | এই ভাবযুলক রমণীয় উপাসনী-
পদ্ধতির অন্থুসরণে আধুনিক ভক্তের রাগানুগ ভজন। এর প্রিয়ত'
কারণশৃন্য, অহেতুক । কোনো শান্মের নির্দেশ অথবা কোনো অভীষ্ট সিছ্ধির
জন্য এ প্রীতির আবির্ভাব হয় না। বরং সমন্ত ত্যাগের দ্বারা এবং ছুঃখের
মূল্যেই এ লভ্য । যে প্রেমের জন্য অকাতরে অপরিমেয় ছুঃখ সহা করা যায় তাই
হ'ল রাগধমী প্রেম। বিরহের জন্যই হোক আর স্বজনের তাড়ন-ভতৎসনের
জন্যই হোক ছৃঃখ অত্যন্ত প্রবল হলেও আঁকধণের মাত্রা প্রবলতর বলেই
গ্রীত্বিভঙ্গ ঘটে না। বরং ৩1 বধিতই হতে থাকে । চরিতাম্ৃতকার
চমৎকারভাবে কৃষ্ণপ্রেমের এই অদ্ভুত স্বভাবটি বুঝিয়েছেন £
বাহে বিষজাল। হয় - ভিতরে অমুতময়
কুষ্প্রেমার অদ্ভূত চরিত ॥ ইত্যাদি
চরিতামূতকার আরও বলেছেন যে এই ধরনের আত্যস্তিকভাবে নিঃস্বার্থ
প্রণয়ের দৃষ্টান্ত লৌকিকে বিরল। কারণ, সমাজ-স্বীকৃত বিবাহিত প্রণয়ে
পারম্পরিক স্বার্থের বিষয়ই প্রবল থাকে । শুদ্ধাভক্তির স্বরূপ বোঝাতে
শ্রীৰ্প বলছেন ;
অন্কাভিলফিতাশৃহ্যং জ্ঞানকর্মাছ্যনাবৃতম্।
আন্ুকৃল্যেন কষ্তান্ছশীলনং ভক্তিরুত্ম |
অর্থাৎ, “অন্য বাগ অন্য পূজ! ছাড়ি জ্ঞানকর্ম।
অনুকূলে) সর্বেক্দ্িয়ে কষ্গান্থশীলন |:
অর্থাৎ এতে কৃষ্ণপ্রেম ছাড়া অন্ত কোঁনে। স্বার্থ থাকবে ন। এবং জ্ঞান
বা কর্ষের উপর নির্ভরতাও থাকবে না। ভক্তির আবির্ভাবের পর সেই
ভক্তির দ্বারাই জ্ঞান ও কর্ম পরিচালিত হবে। শুদ্ধাভক্তি জ্ঞানাধীন বা
কর্মাধীন নয়। এই পথে মন প্রাণ দিয়ে কষ্ণকে তুষ্ট করবার জন্তে সেবা
করতে হবে। “অন্য বাগ” বলতে স্থচিরপ্রসিদ্ধ মুক্তির অভিলাষকেও বিসর্জন
দিতে হবে। শ্রীমন্ভাগবতের প্রারভ্তেই ধর্মের যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে
১৮৮ বৈস্কব-রস-প্রকাশ
তার 'প্রোজঝিত-কৈতব” বিশেষণটির টাকা করতে গিয়ে শ্রীধরগোস্বামীপাদ
বলেছেন প্র“ উপসর্গের দ্বারা মোক্ষের অভিলাষকেও দূরে সরিয়ে রাখা
হ'ল। ঠৈতন্-পূর্ব ভক্তিধর্মে তাত্বিকদের মতে মোক্ষই পরমপুরুযার্থ।
সালোক্যাদি পঞ্চবিধ মুক্তি লাভ ক'রে ভক্ত বৈকুণ্ঠে বাস করেন। এমন
প্রাপ্তিকে কষ্ণসেবানন্দ থেকে নিম্মশ্রেণীর অতিতুচ্ছ প্রাপ্তি বলে রাগমার্গে
কথিত হয়েছে। এবিষয়ে শ্রীমস্তাগবতের প্রমাণ উদ্ধার করা হয়েছে :
সালোক্যসা্টি সারপ্যসামীপ্যৈকত্বমপুযুত।
দীয়মানং ন গৃহুত্তি বিন। মৎসেবনং জন]: ॥
অর্থাৎ সালোক্য, সাষ্টি, সারপ্য, সামীপ্য এবং একত্ব বা সাযূজ্য এই
পাচরকমের মুক্তির গুণগান করা হয়ে থাকে, এ যদি আমি দিতেও চাই,
তাহ'লে শুদ্ধ ভক্ত আমার সেবানন্দ বর্জম ক'রে এ কখনোই গ্রহণ
করেন না। “সিম্ধু'তে বলা হয়েছে, যেমন ভোগবাপনা তেমনি মোক্ষবাসনা_
ছুইই পিশাচী। এ ছুয়ের একটি যদ্দি অন্তরে লুকিয়ে থাকে তাহ'লে
্তদ্ধাভক্তির অপূর্ব আনন্দ ধর্মপথচারী পাবেন না__
তুক্তিমৃক্তিস্পূহ। যাবৎ পিশাচী স্ৃদি বর্ততে |
তাবৎ, ভক্তিস্থথস্যাত্র কথমভ্যদ্রয়ে! ভবেৎ ॥
এই নবধর্মের স্বরূপ সংক্ষেপে বিবৃত করতে গিয়ে চরিতাধৃতকার
কষ্কোক্তিতে বলেছেন £
এশ্বর্যজ্ঞানেতে সর্ব জগৎ মিশ্রিত।
এশ্বর্-শিথিল প্রেমে নহে মোর প্রীত ॥
আমারে ঈশ্বর মানে আপনারে হীন।
তার প্রেমবশে আমি না! হই অধীন ।॥
মোর সখ! মোর পুত্র মোর প্রাণপতি |
এই ভাবে মোরে যেই করে শুদ্ধ রতি |
আপনারে বড় মানে আমারে সম হীন।
সেই ভাবে হই আমি তাহার অধীন ॥
এখানে আত্মীয় সম্পর্কের প্রধান তিনটি মাত্র উল্লেখ করা হয়েছে--সধ্য,
বাৎসল্য এবং কান্তার ভাব। কিন্ত এর নিয়ে আরও ছুটি রয়েছে,
বাহুল্যভয়ে তা বলা হয়নি। সে-ছুটির মধ্যে উত্তম হ'ল দাস্য, তার
নিম্নে শাস্ত। শান্ত রসে রাগ!স্মিকতার অতি ক্ষীণ স্পর্শ মাত্র আছে, আর
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের দাশনিক প্রতিঠ ১০৯
কান্তাভাব বা মধুররসে আছে পূর্ণতা। রসশাস্ত্ে এগুলির পারম্পর্য অনুসারে
গুণাধিকা বণিত হয়েছে। এই পাচটি ভক্তিরস মুখ্য এবং পূর্বতন আলংকারিক
অন্য সাতটি রস গৌণ ব'লে ঘোষিত হয়েছে।
এসব রসবৈচিত্র্য এবং তদনুষায়ী বিভাব, অস্থভাব, সঞ্চারীর বৈশিষ্ট্য, গণ
ও অবস্থ! নিঘ্ে নায়ক-নায়িকার নৃতনতর বিভাগ গৌড়ীয় বৈষ্ণব রসশাস্মকে
প্রচলিত সাধারণ রসশাম্্র থেকে পৃথকৃ ও শুক্মতর করেছে। এই রসশাস্ত্
অনুসারে পদাবলী বচিত হয়েছে এবং কীর্তনগানের পাল! বিভক্ত হয়েছে।
এসব সম্ভব হয়েছে গৌরকৃষ্ণের জীবনধার1 দৃষ্টে। তিনি নিজ আচরণের দৃষটান্তে
জীবকে অমূল্য রত্ব কৃষ্ণপ্রেমের অধিকার দিয়ে গেছেন । যা বেদে উপনিঘদে
নেই, যে বিষয়ে কোনে! পূর্ব অবতার কিছু বলেননি, সেই রাগভক্তির আদর্শ
এবং নামকীর্তনের পথ প্রদর্শন ধর্মজগতে মহাপ্রভুর নৃতন অব্দান |
৩. রাঁধাভাব ॥ মুল রাধাভাব-প্রসঙ্গ পূর্বে বিবৃত হ'লেও এক্ষেত্রে আরও
বিশেষ যা, তা প্রয়োজনক্রমে নিদিষ্ট হচ্ছে। শ্রেষ্ঠা গোপী রাধার প্রণয় চৈতগ্ঠ-
পূর্ব বৈষ্ণব সাহিত্যে এব' লৌকিক সাহিত্যে কীতিত হলেও তা যে এত
উচ্চকোটির এবং লোকোতত্তীর্ণ ত মহাপ্রভুর ভাবজীবন নিরীক্ষণের পূর্বে কেউ
ধারণাই করতে পারেননি । বল] বাহুল্য, বিশেষভাবে মহাপ্রভুর বিরহোন্মাদ
অবস্থা থেকেই রাধাভাবের শ্রেষ্ঠতার বিষয় ভক্তদের চিত্তে উদ্দিত হয়েছিল।
পরবত্তশ ধর্ষসাহিত্যে, রূপগোত্বামীর ললিতমাঁধব, বিদগ্ধমা্ধব প্রভৃতি গ্রন্থে
এবং বলরামদাস-জ্ঞানদাস-শেখর-গোবিন্দদাসের পদাবলীতে যে-রাধার চিত্র ফুটে
উঠেছে ত1 নীলাচলবাসী মহাপ্রভুর চরিত্রেরই বিস্তাব। গোপীভাবের একটি
বিশেষ লক্ষণ হ'ল রুষেের জন্য স্বার্থত্যাগ এবং ছুঃখববণ | এব দৃষ্টাস্ত দিতে
কষ্দ্াস কবিরাজ ভাগবত ও শ্রীরূপের ভক্তিসিদ্ধান্তের সারসংক্ষেপ ক'রে
বলছেন £
লোকধর্ম বেদধর্ম দেহবর্ম কর্ম।
লজ্জা ধৈর্য দেহস্থুখ আত্মস্থ মর্ম ॥
দুন্তাজ আর্ধপথ নিজ পরিজন ।
স্বজন করয়ে যত তাড়ন ভত্সন ॥
সর্বত্যাগ করি করে কৃষ্ণের ভজন ।
কুষ্কন্থখ হেতু করে প্রেম সেবন ॥
প্ররাধায় এই ত্যাগছুঃখময় প্রেমধর্মের পরাকাষ্া। তা ছাড়া বল। হয়েছে যে,
১৯৩ বৈষ্ব-রস প্রকাশ
গোপীদের কৃষ্ণরতি “সমর্থা"। এই সমর্থ রতির প্রৌঢতাও শ্রীমতীতে।
চরিতাম্বতকার রাধার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনাকল্লে বলছেন £
হলাদিনীর সার প্রেম, প্রেমসার ভাব।
ভাবের পরমকাষ্ঠ। নাম মহাভাব ॥
মহাভাবন্বরূপ] শ্রীরাধাঠাকুরানী |
সর্বগুণখনি কষ্কাস্তাশিরোমণি॥
'*ক্লঞ্ময়ী কৃষ্ণ ধার অন্তরে বাহিরে।
যাহা যাহ] নেত্র পড়ে তাহ। কৃষ্ণ স্কুরে
জগতমোহন কৃষ্ণ তাহার মোহিনী ।
এতএব সমস্তের পর! ঠাকুরানী ॥
অপিচ, রাধাপ্রেম বিভূ যাঁর বাড়িতে নাহি ঠাই ।
তথাপি সে ক্ষণে ক্ষণে বাঢ়য়ে সদাই ॥
যাহা বই গুরুবস্ত নাহি স্থনিশ্চিত।
তথাপি গুরুর ধর্ম গৌরব-বজিত ॥
যাহ] হৈতে স্থনির্মল ছ্িতীয় নাহি আর।
তথাপি সর্বদ] বাম্য বক্র ব্যবহার ॥
রাঁধাভাবে প্রেমের বক্রত1, অনির্বাচ্যতা এবং অন্যঠান্ত বিরুদ্ধ ধর্মের বিষয়
মহাজন-পদাবলীতেও চমৎকার ফুটেছে । প্রেমবৈচিত্ বা মিলনেও বিরহহ্থভব
এরকম বৈশিষ্ট্যের একটি । এসবের বর্ণন। দিয়ে কুষ্ণপ্রেমের অসীমতা ফ্োতিন।
করেছেন বাঙালি বিদ্যাপতি, গোবিন্দদাস, জ্ঞানদাস প্রভৃতি অনেকেই।
রাধাকেই' প্রেমকল্ললতার যূলকাণ্ড ধ'রে তুলনায় অন্যান্ত গোপীদের
পুষ্পপশবপত্রে উপমিত করা হয়েছে । আবার বলা হয়েছে ললিতা-বিশাখাঁদি
প্রধানা গোপী এবং সহত্র সহত্র অপ্রধানা গোপী রাধিকারই কায়ব্যুহ, তার
অংশ এবং অংশাংশ। এ'র। রাধার সঙ্গে কষ্ণের নর্মবিলাসের সহায়িকামান্র।
রাধাপ্রেমের অেষ্ঠতা ব্যগনাক্রমে শ্রীমদ্ভাগবতে, জয়দেবের গীতগোবিন্দে,
তামিল লোঁকগীতে এবং বিদ্যারপতি ও ব্ডু চত্তীদদাসের কাব্যে কীতিত
হলেও তত্বে এবং কাব্যে রাধার পুর্ণ প্রতিষ্ঠা ঘটেছে শ্রীচৈতন্ত-পরবর্তী যুগেই।
অন্তান্য গোপীকে এযুগে প্রতিষ্ঠা দিয়েও তার মধ্যে রাধিকাকেই কৃষ্ণের একক
নায়িকারূপে দেখা হয়েছে।
৪. মুধুররসে পরকীয়া বতির শ্রেষ্ঠতা কীর্তন ॥ গৌড়ীয় বৈষবের।
গৌড়ীয় বৈষ্ঞবধর্মের দার্শনিক প্রতিষ। ১৯১
যে প্রচলিত শাস্ত্র এবং লোকধর্মকে চরম উপেক্ষা! দেখিয়ে নৃতন ধর্মমত
প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন এ বিষয়টিতে তা স্পষ্ট। গোপরমণীর। বুন্দাবনের
গোপদের ধর্মপত্বী। কিন্তু পতিতে তাদের আকর্ষণ নেই, কৃষেই একাস্ত
আসক্তি। কৃষ্ণের বংশীধ্বনি যখন থেকে তারদ্দের কর্ণগোচর হয়েছে তখন
থেকেই তার! গৃহস্থথে জলাঞ্জলি দিয়েছেন এবং ক্রমে গুরুজন, পরিজন,
কুন-শীল, বধৃগৌরব, দুস্তাজ স্বামীধর্ম এবং পরিশেষে লজ্জা, আত্মমর্যাদ। এবং
আত্মস্থ, এককথায়, সর্বস্ব ত্যাগ ক'রে পথে বেরিয়ে
পড়েছেন। গুরুজনদের তাড়ন-ভ্ষসন, লোকনিন্দ কিছুই
তাদের পতিধর্মে এবং গৃহ্ধর্ষমে ফেরাতে পারেনি । গোপীদের মধ্যে শ্রীরাধার
ত্যাগ এবং ছুঃখবরণ-ই সবচেয়ে বেশি, তাই তিনি শুধু প্রেমিক! নন, মহাভাব-
স্বক্ূপা একথা পূর্বেই বলা হয়েছে। মহাজনদের পদে এই কুল-ত্যাপ্নী
কষ্কময়ীর চিত্র প্রতিছত্রে এবং তা চমৎকারভাবে ফুটেছে, যেমন জ্ঞানদাস-_
যাহার লাগিয়। কৈলু' কুলের লাঞ্না ।
কত না সহিলু দেহে গুরুর গঞ্চন। ॥
যার লাগি ছাড়িলু' গৃহের যত সখ ।
ন। জানি কি লাগি এবে সে জন বিমুখ |
"কলঙ্ক রহল সব গোকুল নগরে ॥
তিলেকে সে তেয়াগিলু পতি খুরধার ।
শবণে না শুনলু' ধরম বিচার ॥
'-*ছুখের উপরে ছুখ পরিজন বোল ।
সতীর সমাজে দীঁড়াইতে হৈলু চোর ॥
যেমন গোবিন্দদাস-_
গুরুজনবচন বধিরসম মানই
আন কহই শ্রন আন।
পরবিজন-বচনে মুগধী সম হাসই
গোবিন্দদাস পরমাণ ॥
অথবা, নব নব গুণগণে বাদ্ধল মঝু মনে
ধরম রহব কোন ঠাম ॥
গুৃহপতি-তরজনে গুরুজন-গরজনে
অস্তরে উপজয়ে হাস।
পরকীয়। তত্বকথ।
১৯২ বৈষ্ব-রস প্রকাশ
অথবা, অন্ত কোনে পদকর্তার রচনায়,
ধৈর্যশীল-হেমাগার গুরুগৌরব-সিংহদ্বার
ধরম-কবাট ছিল তায়।
বংশীরব-বজ্রাথাতে পড়ি গেল অকম্মাতে
সমভূমি করিল আমায় ॥
চিত্তশালে মত্তহাতী বাধা ছিল দিবারাতি
ক্ষিপ্ত কৈল কটাক্ষ-অঙ্কুশে।
দত্তের শিকল কাটি চারিদিকে যাঁয় ছুটি
না পাইলাম তাহার উদ্দেশে ॥
কালিয়৷ কুটিল বাণে কুল-শীল কোন্থানে
ডুবিল, উঠল ব্রজের বাস।
বাঙলা পদাবলীতে পরকীয়া-ভাবের এই প্রাচ্য নিঃসন্দেহে শ্রীরূপের
রসসিদ্ধান্ত এবং শ্রীম্বূপের ব্রঞ্জলীল।-গৌরলীলার পারম্পরিকতার অভিমতের
প্রভাবে গঠিত, ঘ। মহাপ্রভুর চারিত্র্যের দ্বারা উদ্দীপিত এবং ভাগবত-প্রমাণে
প্রতিষ্ঠিত। অবশ্য চৈতন্য-পূর্ব পদ্ররচনায়, বিশেষ, চগ্ডীদাসের পর্দেও
পরকীয়া! রৃতিন মহিমা উচ্চকঠে গীত হয়েছে, যেমন £
স্বামী মোর ছুরুবার গোঁআল বিশাল
প্রতি বোল ননন্দ বাছে।
সব গোপীগণে মোর কলঙ্ক তুলিয় দিল
রাধিকা কাহ্াঞ্চির সঙ্গে আছে ॥
কুষ্ণকীর্তনাদদির ভিত্তিভূমিরূপ শ্রীমদ্ভাগবতের দশম ক্বন্ধার্দির গোপীচিত্র পরকীয়।!
নায়িকার এবং কৃষ্ণের চিত্র উপপতির। ভাগবতের নানা স্থানে তীব্র আকর্ষণ
এবং অপরিমেয় ত্যাগের দিক লক্ষ্য করে গোপীদ্দের পরকীয়াত্বের গুণ
কীর্তন কর হয়েছে। গোপীদের আশ্চর্য প্রেমের কাছে নিজ প্রেম নিপ্রভ
বোঝাতে গিয়ে কৃষ্ণ বলছেন £
ন পারয়েহহং নিরবগ্যসংযুজাং
স্বসাধুরত্যং বিবুধায়ুষাপি বঃ।
যা মাভজন্ ছুর্জরগেহশৃঙ্খল;ঃ
সংবৃশ্য তছ: প্রতিযাতু সাধুন! ॥
অর্থাৎ, “তোমাদের এই ঘষে প্রণয় এতে বিন্দুমাত্র আবিলতা৷ ব' স্বার্থবাসন!
গৌড়ীয় বৈষ্ববধর্মেব দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৯৩
কোথাও নেই। আমার প্রতি এই আশ্চর্য প্রেমের দ্বারা যে সাধু আচরণ
তোমরা করেছ, দেবতাদের মত অজম্র পরমানু পেলেও তার খপ আমি
কোনোদিনই শোধ করতে পারব ন৷। কারণ, সংসারীরা য| সহজে ছিন্ন
করতে পারে না এমন গাহস্থ্যধর্মসংস্কারের শৃঙ্খল নিছ্ধিধায় ছিন্ন ক'রে
তোমরা আমার ভজন। করেছ। তোমার্দের এ সাধুরুত্যই সে ঝণ পরিশোধ
ক'রে নিক।” এই ছুর্জরগেহশঙ্খলা*র অন্ুসরণেই সম্ভবতঃ গীতগোধিন্দে
রাধার মহিম1 ও রাধার বিশেষভাবে কষ্ণপ্রেমপাত্রত্ব স্থচিত হয়েছে :
কংসারিরপি সংসারবাসনা বদ্ধশৃঙ্খলাম্* ।
রাধামাধায় হৃদজ্ম তত্যাজ ব্রজস্থন্দরীঃ ॥
ভাগবতে গোপীদের প্রতি 'নায়ং শ্রিয়োহঙ্গ উ নিতান্তরতে: প্রসাদ: প্রভৃতি
উদ্ধনবাক্যে লক্ষ্মী থেকে গোপীদের প্রেমের দিক দিয়ে উৎকর্ষ বোঝানে।
হয়েছে। এই অংশ মনে রেখেই মহাপ্রভু দক্ষিণ-ভ্রমণে শ্রী-সম্প্রদায়ী বৈষ্ণব
বেঙ্কটভর্টকে ব্রজ-ভাব-ভক্তির উপদেশ দিয়েছিলেন। বস্তুতঃ শমদ্ভাগবত
এবং যাবতীয় গোপীকুষ্ণগীতের সারার্থ মহাপ্রভুর আচরণেই পরিশ্ফুট হ'প।
মহাপ্রভু যে উপপত্যময় পরকীয়। প্রীতির শ্রেষ্ঠতায় আস্থাবান্ ছিলেন তার
আর একটি প্রমাণ রথস্থ এশ্বরধমৃতি ও শাস্্রবিধিতে পুজিত জগন্নাথকে দেখে
তার আক্ষেপ এবং “যঃ কৌমারহরঃ, প্রভৃতি শ্লোকের উচ্চারণ। শ্সোকটির ভাবার্থ
হ'ল “যে আমার কুমারী অবস্থায় আমার সঙ্গে প্রণয়ে মিলিত হ'ত, তাব
সঙ্গেই আমি বিবাহিত হয়েছি। কিন্তু তখনকার পরকীয়-প্রীতিরসে যে
অনির্বচনীয় স্থখ ছিল, তা ধর্যান্নগত দাম্পত্যজীবনে আর পাই ন1।1” বপ
গোস্বামী তখন নীলাচলে। মহাপ্রভুর উচ্চারিত এ লৌকিক গ্লোকটির
মর্মার্থ অনুধাবন ক'রে তিনি তৎক্ষণাৎ বুন্দাবনের ওপপত্যময় অন্থরাগই যে
রাধার কাম্য এমন ভাবের একটি শ্লোক লিখেছিলেন । উদ্ধবের মুখ দিয়ে
শ্রীশুক ভাগবতে পুনশ্চ বলছেন £
পাপামহো চরণরেণুযুলামহং হ্যাং
বুন্দাবনে কিমপি গুল্সলতৌমধীনাম্।
য] দুন্ত্যজং স্বজনমার্ধপথং চ হিত্ব।
ভেজুমুকুন্দপদবীং শ্রুতিভিবিমৃগ্যাম্॥
৯ বিংসাব। শব্দের 'সমাক্ সার এরকম কষ্টকলিত অর্থের চেয়ে সাধারণ এবং নহজ অর্থ খ্রহণই
যুক্তিযুক্ত মনে করি। যার বন্ধন বেশি তার বন্কনত্যাগের মহিমাও বেশি।
১৩
১৯৪ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
'অভিসারবতী এই গোপীর্দের চরণরেণু বুন্দাবনের যে সব লতাগুল্সে পতিত
হু তার একটি আমি যদি হই। কেননা এই গোপীরা আত্মীয়স্বজন
এমনকি ছুস্তাজ পাতিব্রত্য ত্যাগ ক'বে অপরিষেয় প্রেমে কৃষ্ণকে বশীভূত
করেছে।,
বস্ততঃ গোপীদের কৃষ্ভক্তি অর্থেই নিংস্বার্থ বা শুদ্ধা বা রাগময়ী ভক্কি
এবং পরকীয়াত্বেই তার পরম উতৎকর্ষ। পরকীয়াত্ব ছাড়। নিংম্বার্থতা নেই।
শ্রীপাদ দূপ গোত্বামী উজ্জ্রলনীলমণিতে কৃষ্ণের নায়কত্ব বিবেচনে তার
ওঁপপত্যের এবং নায়িকাবর্ণনে গোঁপীর্দের পরকীয়। প্রীতির উৎকর্ষ প্রতিপাদন
করতে চেয়েছেন। উপ্পতির লক্ষণে তিনি বলছেন £
রাগেণোল্লজ্যয়ন্ ধর্মং পরকীয়াবলাধিন]।
তদীয়প্রেমবসতিবুর্ধৈঃ উপপতিঃ স্বতঃ ॥
পরকীয়। অবলার সঙ্গে প্রণয়ের জন্য যে নায়ক ধর্ম এবং সমাজ লঙ্ঘন ক'রে
সেই অন্যাঁসক্তা নারীর প্রেমে মজে তাকে উপপতি বলা যাঁয়। এই ওপপত্য
সমাজে এবং কাব্যনাটকাদিতে নিন্দনীয় হলেও* কষ্ণপক্ষে নিন্দার গ্রশ্ন নেই।
কারণ তিনি অপ্রাকৃত নায়ক, এবং বৈষ্ণবীয় রতি, ভাব প্রভৃতি অলৌকিক।
কৃষ্ণের নায়িকা ছুই শ্রেণীর_স্বকীয়া এবং পরকীয়!। কৃষ্ণের বিবাহিত রুক্মিণী
সত্যভাম। প্রভৃতি স্বকীয়! আর ব্রজগোপীর হলেন পরকীয়া । পরকীয়ার
লক্ষণে শ্রীবপ বলছেন ঃ
রাগেণৈবাপিতাত্মানে। লোকধুগ্মানপেক্ষিণা ।
ধর্মেণাস্বীকৃতা যাত্ পরকীয়৷ ভবস্তি তাঃ |
“ধাবা কেবল অন্ুরাগবশেই আত্মদ্দান করেছেন, ধারা ইহকাল-পরকাল বিবেচন।
করেননি, যে সব নারীর প্রেমে ধর্মের সমর্থন নেই, সেই গোপীরাই পরকীয়া ।*
এবং এরাই কৃষ্ণের অত্যন্ত বললভা। দেখা যায়, কন্া। হ'লেও পরকীয়। হতে
পারেন, কিন্ত বিধিমতে বিবাহিত হ”লে তারা ম্বকীয়া হয়ে পড়বেন, কারণ তখন
তাদের প্রেমে আর কোনে নিষেধ থাকবে না। গোপন আকর্ষণের
গভীরতাও চলে যাবে এবং তার! মান্র প্রয়োজন নম্পর্কে বা ধর্মসম্পর্কে
কৃষ্ণের সঙ্গে মিলিত থাকবেন। আসলে গোপদের বিবাহিত রমণীরাই
* বল! বাহুল্য, আধুনিক সাহিত্যে এবং সাহিত্যবিচারে এ নিন্দনীয় তে! নয়ই, বরং শ্বমহিমায়
প্রতিষ্ঠিত। আর আলংকারিকের! যাই বলুন, সংস্কৃত-প্রাকৃত কবিতাতেও পরকীয়া প্রীতি নিয়ে
শ্রেষ্ঠ কাব্যের উৎসার ঘটেছে।
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের দার্শনিক প্রতিটা ১৯৫
যথার্থভাবে কৃষ্ণের পরকীয়া নায়িকা । পরকীয়া রতির উতকর্ষের সমর্থনে
শীরপ ভরত, বিষ্ণপগ্প্ঘনংহিতা। প্রভৃতি থেকে প্রমাণ দিয়েছেন, যেমন :
বহু বার্ধতে যতঃ খলু যত্র গ্রচ্ছন্নকামুকত্বং চ।
যা! চ মিথো ছুর্লভত! স। পরম] মন্মথশ্য রতিঃ ॥
যেখানে আপসঙ্গ-কামনায় সমাজ এবং ধর্মের বনু নিষেধ, যেখানে গোপনে
গ্রন়ভাব পোষণ করতে হয়, যেখানে আসঙ্গ নিতান্ত ছুর্লভ-_সেইখানেই
কন্দর্পের বেশি আধিপত্য 1, একই কথা বলছেন রুদ্র £
বামতা ছুর্লভত্বং চ্্রীণাং যা চ নিবারণ !
তদেব পঞ্চবাণস্য মন্যে পরমমায়ুধম্ ॥
বিফুগুপ্তসংহিত।তেও-_
যত্ত্র নিষেধবিশেষঃ শ্ুর্লভত্বং চ যন্মংগাক্ষীণাং |
তত্রৈব নাগরাণাৎ নির্ভরমাসজ্যতে হৃদয়ম্॥
“যেখানে যত বেশি ছুর্লভতা এবং বিধিনিষেধ সেখানে হদয়গত আকর্ষণও
তেমনি সমধিক । কৃষ্ণগোপীপক্ষে এই পরকীয়াত্বের অর্থাৎ প্রেমের
চরমোৎকর্ষের স্থিতি সাব্যস্ত ক'রে অবশ্য শ্রীৰপ লৌকিক প্রণয়ে এর
মন্রসরণ নিষিদ্ধ করতে চেয়েছেন। সে ভিন্ন কথা। গোপীপ্রেমে তিনি
যে পরকীয়াবাদের স্থাপয়িতাদের অন্যতম এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। যর্দিও
একথা ঠিক যে, তিনি মহাপ্রভুর লীলা! থেকে এবং শ্রীমদ্ভাগবত থেকে
এর অবিসংবাদী সমর্থন পেয়েছেন।
শ্রীৰপের অভিপ্রায়সমূহের ব্যাখ্যায় “লোচনরোচনী* টাকায় কিন্তু শ্রীপাদ
জীব গোম্বামী বাস্তব পরকীয়াত্ব স্বীকার করেননি । তার মতে গোপীর।
রুষের একান্ত স্বকীয়া, নিত্যলীলায় কৃষ্চ তাদের সঙ্গে নিরত মিলিত।
কেবল অবতার সময়ে প্রকটলীলায় পরকীয়াভাব অবলম্বন ক'রে নেন।
কৃষ্ণের ওুপপত্য বা গোপীদের পবকীয়াত্ব মার্সিক। অর্থাৎ এভাবে
প্রতীয়মান হয় মাত্র। প্রীতিসন্দর্ভেও তিনি মন্তব্য করেছেন পরমস্বকীয়াঁপি
পরকীয়ায়মাণাঃ, শ্রীব্জদেব্যো ন তু পরকীয়া; ।১ শ্রাজীবের ব্যাখ্যার গতি-
প্রকৃতি দেখে আমাদের মনে হয়েছে, তিনি খুব শিথিল যুক্তির উপর
স্বকীয়ার বান্তবত! গ্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে গৌতমীয়তন্ত্র বা
গোপাঁলতাপনীর উক্তিকে প্রমাণ মানার কোনে হেতু ছিল না। লৌকিক
বসশাস্ত্েরে অভিমত মান্ত করারও সংগতি নেই। শ্ররূপ গোম্বামীর বক্তব্য
১৪৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
অতাস্ত স্পষ্ট এবং ভাগবতের “নায়ং শ্রিয়োহঙ্গ উ” প্রভৃতি শ্লোকের কষ্ট
কল্পিত অর্থ না করলে লক্ষ্মী এবং গোপীকে এক ক'রে দেখা যায় না।
মহাপ্রতুর অভিপ্রায় আমর] পূর্বেই উল্লেখ করেছি। আমাদের মনে হয়,
শান্ত্-বিচার-থেষ। শ্রীজীব এক্ষেত্রে নীতির বিপাকে পড়েছেন এবং বোধ.
করি একটু ভয়ও বা পেয়েছেন। ব্যাখ্যার শেষে তাই তিনি বলেছেন (?)-_
ঘম্বেচ্ছয়া লিখিতং কিঞ্চিৎ কিঞ্চিদত্র পরেচ্ছয়। তার এই উক্তি যে
প্রক্ষিগ্ত নয় তা তার দৌলায়মান টীকাই প্রমাণ করে। অন্যপক্ষে উজ্জবল-
নীলমণির অপর টীকাকার বিশ্বনাথ চক্রবর্তীপার্দ শ্রাজীবের টীকার অভিপ্রায়
খণ্ডন ক'রে পরকীয়া তত্বকেই বাস্তব বলেছেন। তার মতে প্রকট এবং
অপ্রকট লীলার দ্ধ ভাবনা উচিত নয়। তা ছাড়া লীলাময় কৃষ্ণ,
ভাঁগবতে চিত্রিত রুষ্ই যখন ভক্তের উপাস্য তখন গওপপত্য-লীলার
বাস্তবতা স্বীকার না ক'রে উপায় নেই। আর বলাই তো হচ্ছে যে,
এ একমাত্র কৃষ্ণচলীলার ক্ষেত্রে চিন্তনীয়, অন্যত্র নয়। স্বকীয়াই যদি ব্যাস
শুকের অভিপ্রেত হ'ত তাহ'লে তারা তো। স্বচ্ছন্দে দ্বারকার মহিষীর্দের
মত গোপীদের কৃষ্ণের সঙ্গে বিবাহিত কবে চিত্রিত করতে পারতেন ।
পরকীয়া-লীলাকে মায়িক, স্থতরাঁং অনিত্য মনে করলে রাগাত্মিক ভক্তির
ভিতিই নড়ে যায়, রাঁসলীল। মিথ্য। হয়ে পড়ে । মনে রাখতে হবে, গোপীদের
'নিন্াই ভূষণ, স্থতরাং ভাগবতে গোপী-পরীক্ষণের জগ্ত কৃষ্ণমুখে গোপীদের
ধর্মত্যাগের নিন্দা ব্যাজগ্ততি মাত্র । তা ছাড়া যেমন এখানে তেমনি “নাটক
' চক্দজ্রিকা গ্রন্থে শ্রীবূপ স্পইই বলছেন £
যৎ পরোটৌপপত্যন্ত গৌণত্বং কথিতং বুধৈঃ।
তত, কষ্ণং গোপীঞ্চ বিনোতি প্রতিপাগ্তাম্ ॥
'অলংকারশাস্ত্রে পরকীয়াত্বকে রসাভাসের বিষয় এবং অঙ্গরসের বিষয় করা৷
যেতে পারে, অঙ্গীরসের নয়, ইত্যার্দিবপ যে নির্দেশ দেওয়। হয়েছে তা
কৃষ্ণ এবং গোপীদেের পক্ষে প্রযোজা হবে না।” এই সব শষ্টাভিমত
থাকতেও শ্রজীব প্রচলিত শাস্ত্রের ও ব্রাঙ্গণ্য তত্ববাদীদের সঙ্গে আত্যন্তিক
বিরোধ ঘটাতে চানীন বলেই বোধ হয় নিত্যে স্বকীয়], মায়িকে পরকীয়।
প্রভৃতি রূপ অভিমত প্রচার করেছেন। তবে তিনি “স্বেচ্ছয়া লিখিতং কিঞ্চিৎ”
গ্রভৃতি উপসংহাঁরবাক্যে রাগভক্তির পথিকদদের রক্ষা করেছেন।
বিষয়াটকে এখন ভৌকিক জীবের অর্থাৎ মানুষের দিক থেকে দেখা যেতে,
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৯৭
'পারে। ধনজন সত্রী-পুত্র-পরিবার নিয়ে আমর] তে। ঈশ্বরের পরকীয়ই এবং ঈশ্বর
তো আমাদের পরকীয়। “কৃষ্ণ ভূলি সেই জীব অনাদি বহিম্*_ আমরা তো
এসবকেই স্বকীয় মনে করে স্থখে সংবারজীবন কাটাতে চাই, কিন্তু ঘটনাচক্রে
যদি বন্ধনে সামান্য চিড় দেখা যায়, কৃষ্ণ-কপায় কৃষ্ণে নিষ্ঠা, রুচি গ্রভৃতির
আবির্ভাব হয়, তা ক্রমে বাড়তে থাকে, তখন কী অবস্থা হবে; তখন
এই আত্মীয়স্বজন, পাতিব্রত্য, পত্বীপ্রেম প্রভৃতি, এমনকি সর্বস্ব ত্যাগ
ক'রে সন্াস গ্রহণ করতে হবে না?) তখন কি পরকীয়ের প্রবল আকর্ষণ
প্রবল দুঃখের মধ্য দিয়ে স্বকীয়কে ত্যাগ করতে বাধা করবে না?
অতএব পরকীয়া রতি বাস্তব," মায়িক তো নয়। চণ্ডীদাসের কৃষ্ণকীর্তন
কাব্যে রাধাকে কতকট। এই তত্বের অনুগামী ক'রে দেখানে। হয়েছে।
বাধা যগ্যপি লক্ষ্মীরই অবতার, জীব হয়ে জন্মাতেই তিনি পূর্বকথা হুলে
গেছেন। রুষ্ণ তাকে উদ্বোধিত করতে চেষ্টা করছেন, বলপূর্বক এবং
নানাভাবে যৌন-চেতন1। জাগিয়ে রাধার পূর্বস্থতি ফেরে কিনা তার জন্টে
আপ্রাণ প্রপ্নাস করেছেন। কিন্তু বিরাগিণী রাধার কিছুতেই মোহ ভাঙছে
না, তিনি কুলগৌরব, পতিগৌরব উচ্চকঠে ঘোম্ণা করছেন এবং কুষ্ণকে
তীব্র কটুক্তি করছেন। অবশেষে তার বহিমূত্ব ভাঙল, সে কৃষের
মুরলীধ্বনি শ্তনে। তখন দুস্তাজ আর্ধপথ* স্বজন-পরিজন কোথায় রইল
প'ড়ে। তাকে যোগিনী হতে হ*ল। মহাপ্রভূর জীবনেও এই ব্যাপারেরই
পুনরাবৃত্তি দেখি। কৈশোরে ও প্রথম যৌবনে তিনি নিতান্ত কৃষ্ণবহিমখ।
ব্যাকরণ-বিগ্যায় দাম্তিক, অসহিষ্ণণ। পরিহাসপ্রবণ। ন্বেচ্ছায় বিবাহিত,
সংসারের সম্বলচিন্তায় ব্যগ্র, ম্বৃতিমলক অনুষ্ঠান শিক্ষা করছেন। তারপর
অকন্মাৎ কী হতে কী হয়ে গেল। বাহ স্বকীয় যা ছিল গ্ব ত্যাগ করতে হ'ল
'পরকীয়ের জন্য। এ তে। বাঙালীর চোখের সামনেই ঘটেছে । আমার তে!
মনে হয় ব্যাসদেব থেকে চণ্তীদাস পর্যন্ত মব্রমিয়াগণ প্রচলিত ধর্মনাধনার ব্যর্থতার
দিক মনে রেখেই গোপীভাব এবং পরকীয়াত্বের উপর রাধারুষ্জলীলার ভিি
স্থাপন করেছেন। এখন শ্রীজীবের অভিপ্রায়কে সহাঙ্ভৃতির সঙ্গে দেখা যাক।
যদি শ্রীজীব মনে ক'রে থাকেন যে, গোপীর। কৃষ্ণের নিতাস্ত স্বকীয়, এই
জন্যেই যে, তারা কৃষেব অন্তরঙ্গ! হলার্দিনী শক্তি। এবং কৃষ্ণ নিজেই তো৷ এই
স্বকীয়কে পরকীয় করলেন এবং যোগমায়ার সাহায্যে পপত্যময় লীল!
করতে লাগলেন, তাহ'লে গোল চুকেই যায়। কারণ, এক হিসেবে সংসারই
১৯৮ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
তো! গোপীদের তথা চিৎকণ জীবের পরকীয়, ঈশ্বরই তে। নিতান্ত স্বকীয়।
অবিদ্যায় বহিমুর্থকে দ্জের দ্দিকে, বহিমু্খের যথার্থ আপন ঘরে আকর্ষণ
করছেন কষ্চ। গোপীরা ঈশ্বরকোটি ঝলে সহজেই ঈশ্বরের দিকে উন্মুখ,
আর জীব মোহনিব্রাবৃত, ঈশ্বরকৃপ1 ছাড়া তার উপায় নেই। কিন্তু এইভাবে
সমাধান করা গেলেও মায়ারুত বাস্তব অন্তিত্সম্পন্ন সাধক-জীবের পক্ষে লীলার
বাস্তবতা কী ভাবে অস্বীরূত হতে পারে, এ প্রশ্ন থেকেই যায়। বুন্দাবন-লীল৷
গৌরলীলাকে নিতান্ত মায়িক মনে করলে ভক্তের আর দ্াড়াবার উপায়
খাকে না। বৈকু্ঠ যদি বাস্তব হয় মর্ত্যও বাশুব।
দেখা যায়, রূপ-স্থূপ-রঘুনাথার্দির সিদ্ধান্তগ্রন্থের ও কথিত অভিপ্রায়ের
দারনিক্য যিনি করছেন সেই চরিতামৃত-রচয্িতা পরকীয়া-পক্ষে তার দৃঢ
অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কৃষ্ণের বৃন্দাবন-লীলাতত্ব ও নবদ্বীপ-নীলাচল
লীলাতত্ব ব্যাখ্যানের গ্রারস্তে রাগাত্মিক ভক্তি সম্বন্ধে যূল কথা৷ বলতে গিয়ে
তাকে অনিবার্ধভাবে পরকীয়া-প্রসঙ্গ তুলতে হয়েছে £
বৈকুষ্ঠা্যে নাহি যে যে লীলার প্রচার।
সে সে লীল৷ করিব যাতে মোর চমৎকার ॥
মে বিষয়ে গোপীগণের উপপতিভাবে।
যোগমায়। করিবেক আপন প্রভাবে ॥
আমিহ না জানি তাহা না জানে গোপীগণ।
দোহার রূপ-গুণে হরে নিত্য ঈৌোহার মন ।
ধর্ম ছাভি রাগে দৌহে করয়ে মিলন ।
কতূ মিলে কতু না মিলে দৈবের ঘটন ॥
অর্থাৎ নবরপ ধরে তিনি নরজগতের প্রেমলীলার সারনিক্ষর্য দবগ্রভাবে
আম্বাদদন করলেন। “বৈকুগাছো নাহি" অর্থে নিত্যলীলায় তিনি এ রস আস্বাদ
করতে পারেন নি। এখানে নিত্যলীল। থেকে প্রকটলীলার শ্রেয়ত্বই গ্যোতিত
হয়েছে। নিত্যলীলায় স্বকীয়ত1 থাকলেও (শ্রীজীবের উপলব্ধি অনুসারে ) প্রকট-
লীলার পরকীয়াত্বই প্রশংসনীয় । “প্রোহার রূপ-গুণে* গ্রভৃতিব অর্থ হ'ল কন্দর্পই
এ প্রেমে মধ্যস্থতা করে, অগ্নি বিপ্র স্বজন গুরুজন নয়, দৃতীও নয়। এই জন্যই
স্পট ক'রে বলা হ'ল ষে 'ধর্ম ছাড়ি রাগে ফ্লোহে'। যেমন রায় রামানন্দের পদে
পহিলহি রাগ নয়নভঙ্গ ভেল।
অনুদিন বাঢ়ুল অবধি ন গেল ॥
গৌড়ীয় বৈষবধর্ষের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ১৪৪
'-'ন খোজলু' দূতী ন খোজলু আন।
দুহ'ক মিলন মধ্যত পীচবাণ ॥
অতএব রাগাত্মিক প্রীতি পরকীয়ারই স্বভাব। প্রীতি দাম্পত্য অথচ রাগাত্মিক
এ পরম্পর-বিরোধী কথা । চরিতাম্বতকার পুনশ্চ স্পষ্ট ভাষায় বলছেন :
পরকীয়া-ভাবে অতি রসের উল্লাস।
ব্রজ বিনা অন্যত্র ইহার নাহি বাস ॥
অর্থাৎ লৌকিকে, সাহিত্যে, অলংকারশাস্ত্রে এর পৃণ প্রকাশদীপ্তি নেই ।
॥ পঞ্চতত্ব ও গণোদ্েশ ॥*
শ্রীপাদ স্বরূপ-দামোদর পঞ্চতত্ব অভিমত স্থাপন করেন। পরে ত' সাধারণ্যে
প্রচারিত হয় এবং কবিকর্ণপূর-সংকলিত গৌরগণোদ্দেশদীপিকায় স্থান লাভ
করে। এই অভিমতে নবদ্বীপ-লীলাপরিকরদের প্রধান পাচ মহাপুরুষকে
পাঁচটি তত্বের অস্ততুক্ত ক'রে দেখা হয়েছে। যুল অন্থভব এই যে শরীক
রাধাভাব নিয়ে গৌররূপে নিজকে প্রকটিত করলেন স্ববাসন৷ পূরণের অন্ত ।
ভক্ভিধর্মের প্রবর্তনের দিক্ দিয়ে এ বিষয়টিকে বলা যায়, ভক্তির মহিমা! দেখাতে
গিয়ে তাকে ভক্তভাব অঙ্গীকার ক'রে অবতীর্ণ হতে হয়েছিল। সেই ভক্তের
বা উপানিকার চরম দৃষ্টান্ত বৃন্দাবনে বৃন্দাবনেশ্বরী এবং মানবরূপে শ্রীগৌরাঙ্গ।
কৃষ্ণলীলার আর এক স্বভাব হ'ল তিনি শক্তি এবং ব্যহ নিয়ে নিজকে প্রকটিত
করেন। এই বৃহ তার লীলা-পরিকরদের মধ্যে যাঁরা ঘনিষ্ঠতম তাদের
নিয়ে। অগপ্রকটলীলায় তার সবচেয়ে নিকটবর্তী হলেন নারায়ণ-বাস্থদে
এবং সংকর্ষণ-বলরাম, তারপর মহাবিষুণ এবং তারও পরে গুণাবতার ব্রন্ধা,
বিষু,। শিব। এর] কৃষ্ণের অংশের অংশের অংশ। যদি নিত্যলীলায় এবং
বুন্দাবনে এদের নিয়ে তার লীলাবিলাস হয়ে থাকে, কারণ পরিকর ছাড়া
তার লীল! নেই, তাহ'লে চৈতন্যাবতারেও ত। অল্পবিস্তর ঘটেছে নিশ্চয় এবং
পরিকরদের পিয়ে মহা'প্রভূব ভক্তিলীল! সকলে প্রত্যক্ষও করেছেন। এই
হিসেবে এক দিকে যেমন সাধারণ ভাবে চৈতন্য-পরিকরদের সঙ্গে ব্রজলীলার
পরিকরদের (পুরুষ বা শ্রী) একত্ব প্রদ্রশিত হয়েছে ( গৌরগণোদ্দেশ ) তেমনি
মুখ্য পরিকরদের নিয়ে ভক্ত-ভক্তি-তত্বের সমন্বয়ও সাধিত হয়েছে।
চৈতন্তলীলার মুখ্য পরিকর হলেন যথাক্রমে নিত্যানন্দ, অদ্বৈত, গদাধর
এবং শ্রীবাস। শ্রীচৈতন্থকে নিয়ে পাচ। শ্রাবাসকে* অন্ত যাবতীয় পরিকরদের
২০০ বৈষব-রস-্প্রকাশ
প্রতিনিধি হিসেবেও দেখা হয়েছে। এ বিষয়ে স্ব্ূপ-্দামোর্দরের বন্দনা-
গ্লোক হ'ল;
পঞ্চতত্বাত্মকং কৃষ্ ভক্তরূপন্বূপকমূ।
ভক্তাবতারং ভক্তাখাং নমামি ভক্তশক্তিকম্ ॥
চরিতামুতের আদ্দিলীলার সপ্তম পরিচ্ছেদে এই পঞ্চতত্বের বর্ণন1 দেওয়।
হয়েছে । ভূমিকায় কবিরাজ গোম্বামী বলছেন £
স্বয়ং ভগবান্ রুষ্ণ একলে ঈশ্বর |
অদ্বিতীয় নন্দাত্মজ রসিক-শেখর ॥
রাসাদি-বিলাসী ব্রজললন।-নাগর ।
আর সব যত দেখ তার পরিকর ॥
সেই কৃষ্ণ অবতীর্ণ শ্ররুষ্চৈতন্য ৷
সেই পরিকরগণ সঙ্গে সব ধন্য ॥
জীবনিস্তারের জন্য ভক্তরূপ গ্রহণ করেছেন যে কৃষ্ণ তিনি হলেন ভক্তরূপ ;
এখানে শ্রীচৈতন্ত । ভক্তকে "স্ব বা তার নিজরূপে মিজভাবে প্রকটিত করায়
ভক্তম্বূপ- প্রভূ নিত্যানন্দ। তিনি নিজভাবরূপ অবলম্বনে শ্রীচৈতন্যের সেবা
এবং তার ভক্তিধর্ম স্থাপনের লীলায় সহায়তা করেছেন :
যছ্যপি আপনে প্রত হয়েন বলরাম ।
তথাপি চৈতন্যের করে দাস অভিমান ॥
আবার, যারে দেখে তারে কয় দস্তে তৃ4 করি।
আমারে কিনিয়! লহ ভজ গৌরহরি ॥
সারা বাও.লায় শ্রেষ্টভক্ত নিজভাববিহ্বল নিত্যানন্দপ্রভূই বাছবিচার না! করে
আচগাল-দ্বিজ সকলকে হবিভক্তি গ্রহণ করিয়েছিলেন । মহাপ্রতু শ্রীনিত্যানন্দের
দ্বারাই এই কার্ধ সম্পন্ন করেছিলেন, যেমন পুব পূর্ব লীলায় বলরাম ও
সংকর্ষণ ছারা গো্লীল। ও স্ষ্টাদি কাজ ক'রেছিলেন। চরিতাম্বত বলছেন £
সহজেই নিত্যানন্দ কৃষ্ণপ্রেমোদ্দায |
প্রভুর আজ্ঞায় কৈল ধাহা তাহ দান ॥
কবিকর্ণপূর বলেন “নিত্য 'নন্দগণাঃ সর্বে গোপালা গোপবেশিনঃ।” বৃন্দাবন-
দাসের বর্ণনায় নিভ্যানন্দ-বলরামের অনুচরেরা বেন, বংশী, শিক্ষা, ছান্দনদড়ি,
গুঞাহার প্রভৃতি নিয়ে গোপবালক-বেশে বুন্াবনলীলার অনুকরণ করতেন।
ভক্তিধর্ম-প্রচারে ভক্তরূখ মহাপ্রভুর দ্বিতীয় অন্তরঙ্গ এবং লীলাসহায়
গৌড়ীয় বৈষ্ঞবধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ২০১
হলেন অছ্বৈত আচার্য । একে ভক্তাবতার বলা হয়েছে। শ্রীচৈতন্যসহ
সমস্ত ভক্তের অবতীর্ণ হওয়ার জন্তে ইনিই দায়ী। মহাবিষু যেমন দায়ী সির
জন্য | নবদ্বীপের যাবতীয় লীলাপরিকরদের মধ্যে ইনিই সর্বাপেক্ষা বয়োজ্োষ্ঠ,
প্রবীণতম | কথিত হয়, অধর্মের অত্যুদয়ে ব্যাকুল হয়ে ইনিই পুনঃপুন প্রার্থন।
ক*রে গৌরাঙ্জাবতার ঘটিয়েছিলেন। স্বরূপ-দামোদয়ের কড়চা অন্্যাঁয়ী অদ্বৈত-
তত্ব হ'ল
মহাবিষুতর্জগত্কর্তা মায়য়! যঃ স্থজত্যদঃ |
তশ্যাবতাব এবায়ম অছৈতাচার্য ঈশ্রঃ ॥
এ'রই কার্কারিতায় সপরিকর কৃষ্ণ'বতাঁর ঘটেছিল ব'লে ইনি আসলে স্যির
প্রত্যক্ষ কর্তা মহাবিষু। ন্বরূপ-দামোদরের অদ্বৈতবন্দনা হ'ল £
অদ্বৈতং হরিণাদ্বৈিতাৎ আচাযং ভক্তিশংসনাৎ।
ভক্তাবতারমীশং তম্ অন্ত চার্মাশ্রয়ে ॥
কৃষ্ণের সঙ্গে একত্বের জন্য তাঁকে অদ্বৈত এব ভক্তি প্রচারের জন্য আচার্য
বল] হয়। অদৈতের ভক্তাবতারত্ব সম্বদ্ধে চৈতন্যভাগবত বলছেন £
পরম সদয়-মতি প্রতু বিশ্বস্তর |
চাহিয়া অদ্বৈত প্রতি করিল। উত্তর ॥
তোমার সংকল্প লাগি অবতীর্ণ আমি*
বিস্তর আমার আরাধনা কৈলে তুমি ॥
শুতিয়া আছিলু' ক্ষীরসাগর ভিতরে ।
নিদ্রাভঙ্গ মোর তোর প্রেমের হংকারে ॥
দেখিয়া জীবের দুঃখ না পারি সাঁহতে |
আমারে আনিলে সর্বজীব উদ্ধারিতে ॥
যতেক দেখিলে চতৃদিগে মোর গণ।
সভার হইল জন্ম তোমার কারণ ॥
যে বৈষ্ণব দেখিতে ব্রহ্গাদি 'ভাবে মনে ।
তোম! হৈতে তাহা দেখিবেক সর্বজনে ॥
অছ্বৈতপ্রভৃকে মতান্তরে সদাশিবও বলা হয়েছে। ভক্তশক্তি হলেন শ্রীল গদ্দাধর
পণ্ডিত। নবদীপে মহাপ্রভুর যখন কৃষ্ণভাব তখন এবং কীর্ভন-ভাবাবেশের
সময় গদাধর সর্বদা! মহাগ্রভুর বামপার্ববতর্থ থাকতেন । দক্ষিণে নিত্যানন্দ,
কচিৎ নরহরি এবং বামে গদাধর | গদ্াধরের লম্ষ্ী বা রাধিকার ভাব।
২০২ বৈষ্ঞব-রস প্রকাশ
সেই ভাবেই তার শ্রীচৈতন্তপ্রীতি। শ্রীচৈতন্যের কৃষ্ণব্যাকুলতার আত্তি একমাত্র.
তিনিই প্রশমিত করতে পারতেন। তাই গর্দাধর ভক্তশক্তিত্বূপ | চৈতন্-.
ভাগবত বলছেন £
আপনে চৈতন্য বলিয়াছে বারে বার।
গদাধর মোর বৈকুঠ্ঠের পরিবার ॥
চরিতাম্ুত বলেন £
পুরীর বাৎসল্য মুখ্য রামানন্দের শুদ্ধ সখ্য
গোবিন্দাদ্যের শুদ্ধ দ্বাশ্য রস।
গদাধর জগদানন্দ স্বরূপের মুখ্য রসানন্দ,
এই চারিভাবে প্রভু বশ।
শ্রীবাসকে পঞ্চতত্বের মধ্যে ভক্তহিসাবে স্থান দেওয়া হয়েছে। নবদ্ীপ-লীল"-
পরিকরদ্দের মধ্যে শ্রীবাসের চারিজ্র্য এবং ভক্তি অতুলনীয় ছিল ব'লেই তাকে
ভক্তের তত্বরূপে দেখা হয়েছে। শ্রীবাস-গৃহেই মহাপ্রতুর আত্মপ্রকাশ এবং
যাবতীয় লীলা । শ্রীবাস-গৃহেই নিত্যানন্দের অবস্থান এবং ভক্তসমাবেশ।
অহোরাত্ত্র ভক্তসমাবেশে এবং নৃত্য-কীর্তনে শ্রীবাস-গৃহ মুখরিত থাকত।
শ্রীবাস এবং তৎপত্বী মালিনী গ্রভুলীলার যাবতীয় ভার অকাতরে বহন
করেছেন। তাই শ্রীবাস শ্রেষ্ঠ ভক্ত বা ভক্ত-প্রতিনিধি। এই চার অস্তরঙ্গ
মহাপুরুষ নিয়ে মহাগ্রতুর লীল৷ বা আত্মপ্রকাশ এবং ভক্তিধর্ম প্রচার। তাই
সকলকে নিয়ে পঞ্চতত্বের কল্পনা কর! হয়েছে । বল] যায়, একই তত্ব ভক্তিধর্ষ
স্থাপনের জন্য পাঁচরূপে প্রকাশিত, আবার এ পাচ মূলে একই । এদের মধ্যে
ভগবান্ শ্রীচৈতন্তকে মহাপ্রভু এবং নিত্যানন্দ-অধৈতকে প্রতু আখ্যায় অভিহিত
করা হয়েছে।
নবদ্বীপ, নীলাচল এবং বুন্দাবনের মহাগ্রতু-পার্ধদগণ ব্রজলীলায় কে
কোন্ স্বান অধিকার করেছিলেন তাই নিয়ে গৌরগণোদ্দেশের কল্পন৷। এব
পত্তন সম্ভবতঃ স্বরূপদামোদরেরই কীতি, কারণ, ব্রজলীল। এবং নবদ্বীপলীলার
সুশ্্ন তত্ব সব তারই আয়ত্তে ছিল। মহাপ্রভু ন্বয্ং কোনে। কোনো পরিকরকে
ব্রজের বা নিত্যধামের নামানুসারে আহ্বান করতেন। সেই দৃষ্টাস্তেই হয়ত
ত্বূপদামোর্দর বিষয়টি নিয়ে ও স্বভাব, চারিত্র্য, ভক্তিভাবুকতার বিশেষত্ব
অধ্যয়ন করে একালের লীলাপার্ধদদের ব্রজলীলায় স্থাপন ক'রে দোখছিলেন।
স্বরূপদ্দামোদ্দরের এই উদ্যোগ হয়ত বা কবিকর্ণপূরই সম্পূর্ণ করেছিলেন।
গৌড়ীয় বৈষ্ববধর্মের দাশনিক প্রতিষ্ঠা ২০৩
যদিচ তাকেও তৎকাল-প্রচলিত নানান্ অভিমতের সমীকরণ করতে হয়েছিল ।
প্রাপ্ত গৌরগণোদ্দেশদীপিকায় পরবর্তী কোনো কোনো মনীষীর অতিপ্রায়ও
নিবন্ধ হওয়া সম্ভব। ব্রজ-নবদীপের একত্বের ধারণা অনুযায়ী_-অদ্বৈত
আচার্য সদাশিব, শ্রীবাস পণ্ডিত নারদ, বাস্থদেব সার্বভৌম বৃহস্পতি, রামানন্দ
রায় অর্জুন বা ললিতা, স্বরূপদামোদূর বিশাখা, প্রতাপরুত্র ইন্দ্রদ্যন্, সনাতন
গোস্বামী লবঙ্গমগ্জরী, রূপ গোস্বামী রূপমঞ্জরী, জীব গোন্বামী বিলাসমগ্রী,
রঘুনাথদাস রতিমঞ্জরী, হরিদাস ঠাকুর ব্রহ্ধা, বাসদের দত্ত মধুত্রত, মুকুন্দ দত্ত
মধুক, নরহরি সরকার মধুমতী, রামানন্দ বস্থ কলকণ্ঠী, বৃন্দাবনদাস বেদব্যাস,
কষ্দাস কবিরাজ কন্তুরীমঞ্জরী, গৌরীদাসপ সবখেল স্থববল, গোবিন্দ ঘোষ
কলাবতী, উদ্ধারণ-দত স্থবাহু ইত্যার্দি। কিছু কিছু মতভেদও আছে।
এছাড়া গণোদ্দেশ প্রভৃতি গ্রন্থে নিত্যানন্দ-অনুচর কয়েকজন ভক্তকে
ব্রজের দ্বাদশ গোপাল বলে উল্লেখ কর। হয়েছে। পরবতাঁকালে বৈষ্ণবধর্মের
সুভ্তন্বরূপ চৌধক্টজন মোহান্তের উল্লেখও দেখা যায়। বৈষ্ব-ভক্তের। এ দের
অনেকেরই আবির্ভাব-তিরোভাব উৎসব পালন করেন এবং উৎসবাদিতে
স্বরণ ক'রে থাকেন। বুন্দাবনের ষড়গো্বামী অবশ্ট এদের থেকে বিশ্রুত।
এদের সকলকে নিয়ে দেবকীনন্দনের বিখ্যাত “বৈষ্ঞব-বন্দনা”। ধাদের
নিয়ে নীলাচলে মহাপ্রভু তার লীলাসার প্রকট করেছিলেন, বিশেষতঃ
রায় রামানন্দ, সার্বভৌম, এবং স্বরূপ দ্ামোদরঃ ধারা এই রাগধর্মের বিশেষ
বোদ্ধাও ছিলেন, তাদের কোনে। সম্প্রদায়তূক্ত কেউ করেনি। “উপাদান'
গ্রন্থে ডঃ বিমানবিহারী মজুমদার আক্ষেপ করেছেন যে কবিকর্ণপূর বিখ্যাত
গ্ন্থকর্তা হয়েও গোস্বামীরূপে ম্মরণীয় হয়নি। এ যড়গোস্বামীর কথা
অবকাশক্রমে পরে আলোচিত হবে।
॥ মহ্থাপ্রভু-রচিত শিক্ষারন্নোকাটুক॥
কুষ্ণগৌর মহাপ্রভু নিজভাঁব আস্বাদন এবং নিজভাঁব বিদিত করা এই
উভয় উদ্দেশ্য নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। নিগৃঢ় স্বকীয় ব্যাপার সংসাধনের
সঙ্গে সঙ্গেই তার দ্িতীম্ন উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছিল, এর জন্যে তাঁকে পৃথক প্রযত্ব
করতে হয়নি। “সেই দ্বারে আচগ্ডালে কীর্তন সঞ্চারে।” পূর্ধ পূর্ব অবতার
এবং মহাপুরুষদের নিজ নিজ উপলব্ধ ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কর্মে অথক!
২০৪ বৈষণব-রস-প্রকাশ
প্রচারকার্ধে নামতে হয়েছিল। মহাপ্রতুর ক্ষেত্রে তদ্ধিপরীত, এই তার
আবির্ভাবের বৈশিষ্ট্য ।
নিরন্তর স্ব-ভাববিহ্বল অবস্থায় যাপন করার জন্য লোকশিক্ষণের অবসরও
তিনি পাননি । বরং লোকচেষ্টাময় লৌকিক লীলায় অবতীর্ণ হয়ে কালে
কালে তিনি নিজে কিছু শিখেও নিয়েছিলেন, যেমন শিখেছিলেন রায়
রামানন্দ ও রঘুপতি উপাধ্যায়ের কাছে, স্বরূপর্দামোদরাির সঙ্গে আলোচনায়,
এবং সম্ভবতঃ তারও পূর্বে, গয়ায় শ্রীপাদ ঈশ্বরপুরীর কাছে। আবার নিজ
নর্মল জ্ঞানবুদ্ধিমতো! অদ্বৈতবাদ্দ নিয়ে তিনি বিতর্কও করেছেন, শ্রীরপ-
সনাতনকে কিছু নির্দেশও দিয়েছেন, আর দাক্ষিণাত্য ভ্রমণে তত্ববাণী-
সম্প্রদায় গুলির মধ্যে রাগধর্ষের উৎকর্ষ প্রতিপার্দনের জন্ত বিবিধ আলাপেও
ঈনরত হয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে তার মৌখিক শিক্ষণ গ্রন্থার্দিতে যেভাবে
বণিত দেখা যায় ত সন্দেহাতীত না হ'লেও, নীলাচলে ভক্তসমাগমে
ব্রহ্মানন্দ ভারতীকে সহাহ্য সগৌরব তিরস্কার এবং গৌড়াগত মুরারি,
আুকুন্দ, রথুনন্দন, শংকর প্রভৃতিকে হাস্যপরিহাসচ্ছলে সংক্ষেপে যথাযোগ্য
উপদেশ দান প্রভৃতির সত্যতায় ও যাথার্থ্যে অবিশ্বাসের কারণ নেই। রাম-
কেলিতে সনাতন-রূপ আত্মসমর্পণ করার পূর্বে--“পরব্যসনিনী নারী" প্রত্ৃতি
শ্লোক উদ্ধার ক'রে উপদেেশদানও সত্য ঘটন|| সবচেয়ে উল্লেখযোগা হল যুবক
বঘুনাথদাপকে শিক্ষণ। প্রথম যখন শ্রীপাদ রঘুনাথ শাস্তিপুরে মহাপ্রভুর সঙ্গে
সাক্ষাৎ করে সংসার ত্যাগর সংকল্প জানাম «দখন মহাপ্রতু তাকে বলেন,
তোমার বৈরাগ্যের প্রয়োজন নেই, “যথাযোগ্য বিষয় ভূ অনাসক্ত হইয়া? |
তার ছু”তিন বৎসর পরে রঘুনাথ যখন যথার্থই সর্বস্ব ত্যাগ ক'রে নীলাচলে এসে
পড়লেন এবং মহাপ্রতুর উপদেশ চাইলেন তখন মহাপ্রভু মাত্র ছ'চারটি কথ।
তাকে বলেছিলেন এবং শিক্ষণের জন্য নিতান্ত অন্তরঙ্গ ত্বরূপদদামোদরের
হাতে তাকে সমর্পণ করেছিলেন । মহাপ্রভুর সে ক'টি উপদেশবাক্য হ'ল এই £
গ্রাম্যবার্তা না কহিবে গ্রামাবার্তা না শুনিবে।
ভাল না খাইবে আর ভাল ন1 পরিবে ॥
তৃণাদপি শ্ৃনীচেন তরোরিব সহিষ্ণুনা।
অমানিন। মানদেন কীর্তনীয়ঃ সদ) হরিঃ ॥
কথাগুলি সংক্ষিপ্ত, কিস্ত সপ্চগ্রামের জমির্দার-তনয়কে প্রাথমিকভাবে দেওয়ার
মত যোগ্যতম উপদেশ। অর্থের প্রাচুর্য এবং বিলাসের মধ্যে প্রতিপাঁলিত
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ২০৫
যুবকের ভালো খাওয়া-পর1 এবং কামবিষয়ক কথাবার্তায় আগ্রহ থাকতে পারে
মনে ক'রে মহাপ্রভু সে বিষয়ে সাবধান করলেন, আর, এশ্বর্ব এবং গ্রতাপের
সংস্কার বিন্দুমাত্র থাকলে কৃষ্ণ সেই পরিমাণে দূরে থাকবেন তাও জানিয়ে
দিলেন। কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত ক'টি কথা ছাড়া এভাবে আর কোনে। উপদেশ
সম্ভবতঃ তিনি কাউকে দেননি। তার জীবনকেই এবং নানান্ ক্ষেত্রে নানান্
আচরণকেই-শিক্ষার প্রেরণ। হিসেবে ভক্তদের সামনে রেখেছিলেন ।
এইভাবে মৌখিক শিক্ষা বা নির্দেশ অবসরক্রমে যৎসামান্য দ্রিতে পারলেও
নিজ বিচিত্র এবং সুক্্ম উপলব্িসমূহ লিখিত রচনার মধ্যে তিনি কিছুই গ্রথিত
ক'রে যেতে পারেননি । গ বিষয়ে যা কিছু আমর! জানতে পেরেছি তা
স্বরূপ-দামোর্দরের কাছে। তিনি তার অনুভবসমূহের প্রত্যক্ষ অন্ুভাবক এবং
লীলারতুসমূহের ভাণ্ডারী ছিলেন। তবু আপনমনে থাকতে থাকতে কয়েকটি
শ্লোক তিনি রচন! করেন ব'লে প্রসিদ্ধি। রূপগোস্বামী সংকলিত পদ্যাঁবলীতে
ভগবতঃ ব'লে এরকম আটটি শ্লোক গ্রথিত হয়েছে। সেখান থেকে চরিতা-
মৃতকার সংগ্রহ ক'রে অন্ত্যলীলার শেষ পরিচ্ছেদ্দে সেগুলির বর্ণন ও ব্যাখান
করেছেন। ত্বার মতে লীলাজীবনের শেষের দিকে তিনি লোকশিক্ষা দ্দিতে
এগুলি নিজেই উচ্চারণ ক'রে আম্বাদ করতেন। বিচার করলে দেখ ঘাবে,
এগুলির প্রথম তিনটি এবং বষ্ঠটি নামমহিমা এবং নামসংকীর্তনের গুরুত্ব
বিষয়ে । অন্যপ্তলি কষে অহৈতৃকী রাগময়ী গ্রীতি এবং মুখ্যতঃ দাশ্তভাব
নিয়ে রচিত। শ্লোকগুলি বিবৃত এবং যথাসাধ্য ব্যাখ্যাত হচ্ছে ।
১. চেতোদর্পণমার্জনং ভবমহার্দাবাগ্রিনির্বাপণং
শ্রেয়কৈরবচক্দ্রকাবিতরণ* বিদ্য/বধৃজীবনমূ।
আনন্দাম্তুধিবর্পনং প্রতিপদ, পূর্ণামতা শাদ নং
সর্বাত্মন্নপনং পবং বিজয়তে শ্রীরুষ্ণসং কীর্তনম্ ॥
্রঙ্ধান্বাদববিষয়ে মহধিরা উপনিবদ্ ও এন্যান্ত ধর্মগ্রন্থ বা শাস্ত্রে যেসব বর্ণন!
দিয়েছেন তা যে হরিনামস+কীত্তণের মধ্য দিনে অক্লেশে লভ্য, মহাপ্রতট এই
শ্লোকের বর্ণনায় তা জানালেন । এই শ্লোকের অন্য আর এক ব্যগ্ধনা হল
এই যে, নামগ্রহণের পূর্বে ব্রপচর্য যম-নিয়ুমারদি পুরানে। রীতির কোনে
সাধনের প্রয়োজন নেই । চিত্তশুদ্ধি প্রতি গৌণব্যাপার নাঁমপ্রেমের মধ্যে
অনায়াসেই সাধিত হয়।
চিত্তরূপদর্পণ, যাতে বাসনাসযূহের প্রতিবিপ্ধ পড়ে, তার মালিন্য হরি-
২০৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
সংকীর্তনে নিঃশেষে মাজিত হয়ে যায়। যে সংসারজ্জালা, জীবনের ত্রিবিধ
ছুঃখ ধামিক ব্যক্তিদের ক্রেশদায়ক জ্ঞান, কর্ম, যোগ প্রভৃতি মার্গ অবলম্বন
করিয়েছে এবং অনিশ্চিত ফল দিয়েছে, সেই সব ছূর্বহ ছুঃখ নামে-রুচি হলেই
দূরে চলে যায়। উপনিষদ্ প্রেয় এবং শ্রেয়ের মধ্যে তুলন। ক'রে যে-শ্রেয়ঃকে
ভূমা ব। চরম প্রাপ্তব্য ব'লে উল্লেখ করেছে, সেই শ্রেয়োরূপ নির্মলক্সিদ্ধ
কুমৃদপুষ্পের লাবণ্যবর্ধক হ'ল এই নামরূপ চক্দ্রিকা। এবিদ্যয়ামুতমশ্্তে
প্রভৃতি উক্তিতে যে বিদ্য! বা শ্তদ্ধ জ্ঞানের গৌরবখ্যাপন কর] হয়েছে সেই
বিদ্যাূপ কাম্যবধূর প্রাণ হ'ল এই নামসম্পদ্। নামচন্দ্রোদয়ে প্রসিদ্ধ আনন্দ”
(“আনন্দরূপমম্বতং যদ্ধিভাতি” ) রূপ মহাসমূদ্র উচ্ছুসিত হয়, এর প্রতি বর্ণেই
শ্রুতিকথিত অমুতের স্বাদ প্রর্ণভাবে বর্তমান। অনির্বচনীয় আনন্দ-অমৃতের
অভিষেকে জীবের ইন্দ্রিয়ার্দি অস্তঃকরণসহ আত্মা শান্ত হয়ে পরিতৃপ্ত হয়।
এমন হরিনামকীর্তন অবিদ্াক্রিষ্ট জীবের সহজে কৃষ্ণলাভের জন্য পৃথিবীতে
প্রতিঠিত হোক।
২ নায়ামকারি ব্হুধা, নিজশক্তিযোগ-
স্তত্রাপিতো, নিয়মিতঃ ম্মরণে ন কাল: ।
এতাদৃশী তব কৃপা ভগবন্ মমাপি
দুর্টেবমীদৃশমিহাজনি নানুরাগঃ ॥
হে, নামের কত বৈচিত্র্যই ন] তুমি স্ষ্তি করেছ ! ভিন্ন ভিন্ন জীবের বিভিন্ন
মনোবৃত্তি অন্থমারে এবং গীতোক্ত 'যে ঘখা মাং প্রপদ্ন্তে প্রতিজ্ঞা স্মরণে
বেখে হরি, কৃষ্ণ গোবিন্দ, মাধব, শ্যাম প্রভৃতি অনন্ত নামে নিজেকে
প্রকাশিত করেছ ! সেই নামে আবার নিজের শক্তি যুক্ত করেছ-__যাতে নাম-
কীর্তনই যোগনূপে জীবের অনন্ত আশ্রয় হয়। তার উপর নামের স্মরণ-
কীর্তনে কাঁলাকাল বিচার রাখোনি, এতদূর তোমার কৃপা ; কিন্তু হায়, আমার
এতদূর ছুর্ভাগ্য (কর্মবিপাক ) যে এত সুযোগ দেওয়া হলেও সেই তোমা-
অভিন্ন নামে আমার আজও অনুরাগ জন্মালো না ।
এই ক্লোকে নামের সঙ্গে নামীর অভেদ, ঈশ্বরের কারুণ্য, অন্যবিধ ধর্ষপথে
অনুষ্ঠানার্দির ও কালাকাল বিধি-নিষেধের নিরর্থক ছুঃসহতা। এবং রাগমার্গের
নিয়মশৃন্যত। প্রভৃতি ব্যপ্ধিত হয়েছে। শেষাংশে মহাপ্রভুর নিজ দুর্ভাগ্য-প্রখ্যাপন
লোকশিক্ষার্থে।
গৌভীয় বৈষ্ঞবধর্ষের দার্শনিক গরতিষ্ঠ। ২০৭
৩, তৃণাদপি স্থনীচেন তরোরিব সহিষণণন|।
অমানিন। মানদেন কীর্তনীয়ঃ সদা হরি: |
ল্লোকটিতে নামকীর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের অবহেলিত লাঞ্ছিত মনুযত্বকে
মর্যাদ। দেওয়া] হয়েছে । কারণ, তারাই বিশেষভাবে অমানী অথচ মানদ।
আর মুখ্যতঃ এদেরই জন্য মহাপ্রতর অবতারতা। অভিজাত এস্বর্শালী
রঘুনাথকে তিনি এই উপদেশটিই দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন।
তণের চেয়েও অবনত যিনি, ধিনি তরুর মতই লহিষ্, যিনি (মানী
হ'লেও) মান বিসর্জন দিয়েছেন অথব1 জীবসমাজে মান ধার কোনোকালেই নেই,
অথচ যিনি অন্যকে যথাযোগ্য, মানমধাদায় ভূষিত ক'রে থাকেন এমন ব্যক্তিই
হরিম্মরণের যোগ্য, প্রকৃত বৈষ্ণব। চরিতামৃতকার এর বিশ্লেষণে বলছেন £
উত্তম হঞ। আপনাকে মানে তৃণাধম ।
ছুই প্রকারে সহিষ্ণুত। করে বৃক্ষসম |
বৃক্ষ যেন কাটিলেহ কিছু না বোলয়।
শুকাইয়! মৈলে কারে পানি ন৷ মাগয় ॥
যেই যে মাগয়ে তারে দেয় আপন ধন।
ঘর্ম বৃষ্টি সহে, আনের করয়ে রক্ষণ।
উত্তম হঞ1 বৈষ্ণব হবে নিরভিমান।
জীবে সম্মান দ্বিবে জানি কৃষ্-অধিষ্ঠান ॥
৪. নধনং, ন জনং, ন শন্দরীং, কবিতাং বা জগপ্ণীশ, কাময়ে।
মম জন্মনি জন্মনীশ্বরে ভবতাদ্ভক্তিরহৈতুকী ত্য়ি ॥
এটি মহাপ্রভুর অহেতুকী ব1 শুদ্ধা প্রীতির কামনা । স্পষ্টত; লোকশিক্ষার্থে।
সাধারণ মানুষ তোমার কাছে যা চায় ত। হ'ল ধন, জন, সুন্দরী স্ত্রী, কবিত্ব
ব। বিদ্প্ধতা__এইসব | তারা তোমাকে চায় না। হে ঈশ্বর, আমার যেন
জন্মে জন্মে তোমাতেই শ্রদ্ধা ভক্তি থাকে।
মহাপ্রভ্ এখানে শ্রেয়ঃকামী সংসারী জীবের ভূমিকা অভিমান ক'রে
প্রার্থনা করছেন। ব্যঞ্জনায় বলছেন যা পেলে পুর্ণকাম হওয়! যায় এবং
ধনজনাদি তুচ্ছ হয়ে যায় তাহা'ল এ শ্তদ্ধাবা কেবল! প্রীতি, ঈশ্বরসেবার
অধিকার | রুপা ব্যতিরেকে তা সম্ভব নয়; তাই প্রার্থন! করতে হচ্ছে।
৫... অয়ি নন্দতনূজ, কিংকরং পতিতং মাং বিষমে ভবানুধো।
কৃপয় তব পাদপস্কজস্থিতধূলীসদৃশং বিচিন্তয় |
২৩৮ বেষ্ব বস-প্রকা
প্রিয় সম্বোধন ক'রে স্থছুর্লভ দাশ্তভক্তির জন্য প্রার্থনা। আমি অবিস্াকিষ্ট
জীব, সংসারে গতাগতির বিড়ম্বনায় বিকলচিত্ত। আমি কি রুপা-কণিকালাভেও
বঞ্চিত থাকব। তোমার পাদপঙ্কজে কত ধূলিরেধু সংলগ্ন হয়ে থাকে, সেই
একটি রেণু হওয়ার সৌভাগ্য আমাকে দাও। এগুলি স্পষ্টতই জীবের-
আবৃত্তির জন্য রচিত ।
৬. নয়নং গলদশ্রধারয়। বর্দনং গদ্গদরুদ্ধয়া গির]।
পুলকৈনিচিতং বপুঃ কদা তব নামগ্রহণে ভবিষ্যতি ॥
তোমার নাম নিতে কবে অশ্রু ঝারবে, কবে নামোচ্চারণে ক বাম্পাকুল হুবে'
আর দেহে রোমাঞ্চ দেখ! দেবে, সে শুভদিন আর কত দূরে ?
নামে প্রীতিই যে কৃষ্ঃপ্রীতি এখানে প্রকারাস্তরে তাও বোঝানো হ'ল ।
৭. যুগায়িতং নিমেষেণ চক্ষুষ। প্রাবৃষায়িতম্।
শূন্যায়িতং জগৎসর্বং গোবিস্দবিরহেণ মে ॥
কষ্চবিরহে এক নিমেষ আমার কাছে এক যুগ বলে মনে হচ্ছে। চোখে বর্ষা
ঘনিয়ে আসছে, পৃথিবী সংসার শূন্য বলে মনে হচ্ছে।
চণ্ীদাসাদির পদাবলীতেও রাধার এই বিরহভাব ফুটেছে। কবির!
কল্পনায় যা বর্ণনা করেছেন মহাপ্রতৃতে তার প্রত্যক্ষতা দেখে রাগভক্কির
যাথাথ্য অন্ধাখনীয়।
৮ আঙ্নিষ্য ব পাদরতাং পিন, মাম্ অদর্শনাৎ মর্মাহতাং করোতু ব1।
যথাতথ] ব1 বিদ্ধাতু লম্পটঃ মত্প্রাণনাথস্ত স এব নাপরঃ ॥
তীব্র বিরহান্তভব এবং বঞ্চনার অবস্থাতেও কৃ যে অনন্তাশ্রয় সে কথ!
বুঝিয়েছেন রাগভক্তির শ্রেষ্ঠ সাধক। মধুরের অন্তর্গত দাস্ত এ শ্লোকের রসভাব।
একবার আলিঙ্গন ক'রে তারপর তিনি যদি আমাকে পদর্দলিত ক'রে নিম্পি
করেন, অথব1 চির অনর্শনের দ্বারা মর্মপীড়া। দিতে থাকেন, এমনকি আমাকে
ত্যাগ ক'রে অন্য বল্লভায় আকুষ্ট হয়ে যদ আমার অপমান করেন বা আমার
সঙ্গে যা-খুশি তাই ব্যবহারও করতে থাকেন, তবু তিনিই আমার সর্বন্ব, আর
কেউ নয়।
রাগভক্তির.এক বিশেষ স্তরে তীত্র বিরহজ্বালা অন্কুতৃত হয়। সেক্ষেত্রেও
অনুরাগ থেকে ভক্ত বিচ্যুত হন না। মহাপ্রভুর ভাবাবস্থ। দর্শনে রাগভক্তির
এ বিষয়টিও নীলাচলের ভক্তদের কাছে পরিস্ফুট হয়েছিল। চরিতাম্ৃতকার
লিখছেন £
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্ষের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ২০
বাসে বিষজ্ঞাল। হয় ভিতরে অযুতময়
কৃষ্তপ্রেমার অদ্ভুত চরিত।
এই প্রেম আস্বাদন তপ্ত ইক্ষু চর্বণ
জীভ জলে না যায় ত্যজন।
হেন প্রেম! যার মনে তার বিক্রম সেই জানে
বিষামূতে একত্র মিলন ॥
'আঙ্িস্ত বা" প্রভৃতি বর্ণনায় মহাপ্রভুব নিজ অভিজ্ঞতার ইঙ্গিত প্রচ্ছন্ন রয়েছে
ব'লে মনে হয়। বুন্দাবনদাঁস বিবরণ দিয়েছেন, গয়া থেকে প্রত্যাবর্তন কালে
কানাইয়ের নাটশালায় গৌরাঙ্গের এক আশ্চর্য অন্ভব ঘটে। তিনি
দেখলেন, তমালশ্যামবর্ণ শিখিপুচ্ছধারী ও কন্দর্পকান্তি এক কিশোর তাকে
আলিঙ্গন ক'রে কোথায় লুকিয়ে গেল। সেই থেকেই তার ভাবাস্তর এবং
অশ্রকম্পপুলকা'দির মুহুমুহু প্রকাশ ।
শিক্ষাপ্লোকপগুলি পগ্ঠাবলী'তে যে পারম্পর্য নিয়ে বিবৃত, সে পারম্পর্য
চরিতামুতকার রাখেন নি। ভাবসংগতির দ্দিকু থেকে সাজিয়ে নিয়েছেন।
মহাপ্রভু কোন্ সময় কোন্টি রচন।৷ করেছিলেন তা জানবার কোনে
উপায় নেই।
॥ বৈষ্ণবধর্ন ও সাম্প্রতিক কাল।
বৈষ্ঞবধর্মে সম্প্রদায়ভেদ এবং মতভেদ শ্রীল নিত্যানন্দ-অছৈতের তিরো-
ভাবের পর গড়ে উঠতে থাকে । জাহুব] ঠাঁকুরানী ও বীরচন্দ্র প্রভূ এই
ভিন্নমুখী ধারাগুলিকে সংহত এবং স্বসম্প্রদায়গত করার জন্য ষোড়শ শতকের
মাঝামাঝি থেকে অন্ততঃ অষ্টম দশম পর্যন্ত প্রতৃত যত্ব ও পরিশ্রম করেন।
এদের উদ্যোগ স্তিমিত হতে না৷ হতেই মধ্যবঙ্গে আচার্য শ্রীনিবাস এবং
উত্তরবঙ্গে নরোত্তম ঠাকুরের হ্বপ্রকাশে গৌড়ীয় বৈষ্কবধর্ম সবিন্যত্ত সুসংহত
এবং ব্যাপক হয়ে ওঠে । বুন্দাবনের গোম্বামীদের রসসিদ্ধান্ত এবং কাব্য-
নাটকারদি এই সময়েই বাঁঙল দেশে প্রচারিত হয়। এই সময়েই জ্ঞানদাস,
গোঁবিন্দদাস, বাঙালী বিদ্যাপতি, রায্শেখর প্রভৃতি প্রসিদ্ধ পদকর্তা মহা-
জনদের পদরচনার কাল এবং কীর্তনের বিস্তৃতির কাল। এ হ'ল
যোড়শ শতকের শেষ এবং সপ্তদ্বশের প্রথমের দ্িকৃূ। এই উজ্জীবনের
১৪
২১৪ বৈফ্ব-রস-গ্রকাশ
প্রভাব সপ্তদশের শেষ পর্যন্ত অস্কুপ্ন ছিল, যদিও ইতিমধ্যেই দলস্বার্থবাদী
এবং ধর্মকঞ্চুক কিছু মোহাস্ত এবং গোস্বামী যে এই লোকধর্মমার্গ ক্ষন
না করেছিলেন এমন নয়। এই স্ময় থেকে আবার অনেক বৈষ্ণবই সহজিয়।
'পথ বেছে নিতে থাকেন। অহজিয়ারা বড় বড় বৈষ্ণব সাধক ও আচার্ধদের
নাম দিয়ে পদাবলী ও সাধন-গ্রন্থ লিখতে থাকেন । তন্ত্রবাহিত সহজসাধনের এবং
শাক্তমতের যে কণ্টকতরু একদা! লোক-ধর্মের পথ সমাচ্ছন্ন করেছিল এবং
রাগভক্তি ও নাম-প্রেমের প্লাবনে অনৃশ্তপ্রায় হয়েছিল, তা৷ আবার মাথা তুলে
শাখাপল্নব বিস্তার করতে আরম করলে এবং আঠারে! শতকের মাঝামাঝি
আধা-শাক্ত আধা-বৈষ্ণব এবং আধা-বৈঞ্চব আধা-সহজিয়া এক বিভ্রান্তিকর
ধর্মীয় পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটালে । এই সময়ে ধনপুষ্ট সামস্ততান্ত্রিকতাও মহা-
প্রভুর পূর্বকালের মত পুনরায় দেশব্যাগী হয়ে উঠল । সাধারণ মানুষ যে মর্যাদা
লাভ করেছিল তা হারালে । রখুনন্দনকে সাক্ষ্য ক'রে বলশালীরা ছুর্গা-
পূজায় ও অন্যান্য স্মার্ত অন্ুষ্ঠানাদিতে প্রবৃত্ত হ'ল; বর্ণভেদ, উচ্চবর্ণের
অহমিকা এবং অস্পৃশ্ঠতায় দেশ পরিব্যাপ্ত হ"ল, হিন্দুর] মুসলমানদের দ্বণা
করতে আরম্ভ করলে। বাঙালী বলতে পৃথক্ পৃথক জাতিবর্ণের পৃথক
পৃথক সমাজের লোক বোঝাতে লাগল।
ইংরেজের আধিপত্যে সমাজের আভ্যন্তরীণ কাঠামোর পরিবর্তন কিছুই
ঘটল ন। বললেই চলে। উপরন্ক আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত স্থৃতরাং পদ-
মর্যাদার অধিকারী, এবং শিক্ষা-বঞ্চিত সুতরাং হীনবিত্ত ও মর্ধাদাহীন, এই
ছুই শ্রেণীতে বাঙলায় তথা ভারতে মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়ল। সমাজগত বনু
শ্রেণীর মধো এ আর এক ভিন্নধরনের শ্রেণীবিভাগ । সামন্ততান্ত্রিকতার
উপর উপনিবেশ-শাসনের মিশ্রণে অদ্ভুত এক জটিল সমাজ-পরিস্থিতি।
উনিশ শতকে ইংরেজি শিক্ষাসংস্কৃতির আবির্ভাবে উচ্চশিক্ষিত সমাজে
বিবেকের জাগরণ ঘটেছিল ঠিকই, বিবিধ কুসংস্কার থেকে মুক্তির আগ্রহও
শিক্ষিত সমাক্তে সঞ্চারিত হয়েছিল, জাতীয়তাবোধের জাগরণও একালের
উল্লেখ্য নবভাব, এবং পর্যোপরি সাহিতাক, ধর্মপথিক, সমাজচিন্তক ও
বৈজ্ঞানিক শত মনীষীর দুর্লভ সমাবেশও একালের সমাজে এতিহাব্ূপে
সঞ্চিত হুয়েছে। কিস্তু আমাদের ভুললে চলবে না৷ যে উনিশ শতকের
এই মানসিক পরিবর্তন সমগ্র সমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশকে মাত্র স্পর্শ
করেছে | সে অংশ শুধু শিক্ষিত নয়, উচ্চশিক্ষিত ;) শতকর। হিসবে ছু,চার
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ২১১
জন মাত্র! ক*লকাতা এবং শহরাঞ্চলে কতিপয় বাক্তির মধ্যে এই উনিশ
শতকের নবভাবুকতা৷ মীমিত ছিল। এমন কি খাস ক'লকাতাতেও সাধারণ-
জন সেই আঠারে। শতকের চড়ক খেউড় বুলবুলির লড়াইয়েই কায়বাকৃচিত্ত অর্পণ
করেছিল। সুতরাং উনিশ শতকের প্রথমার্ধে অথবা! দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের
সমাজের নবজন্ম হুয়ে গেছে এমন তত্ব উচ্চকঠে কেউ কেউ প্রচার করলেও তা
বাস্তব সত্য নয়। আর সত্য নয় বলেই আজকের শিক্ষিত মাজের মধ্যে
অবক্ষয়, অশিক্ষিতের সঙ্গে শিক্ষিতের, কুলীনের সঙ্গে অকুলীনের, ধনী ও
নিঃস্বের মধ্যে প্রভেদ এত ব্যাপক। সত্য নয় বলেই স্বামীজীর এত
উদ্যোগ এবং মহাকবির পুনঃপুন 'খত অশ্রপাত। কিন্তু এ ছুই মহাপুরুষ
অধিক্ষিত নিঃস্ব হীনজাতি ও গ্রামীণ মান্থষের যে কল্যাণ চেয়েছিলেন তা
সামস্ততান্ত্রি-সাম্রাজ্যবাদী পরিস্থিতিতে সম্ভব হয়নি। কুলীনদের স্বেচ্ছায়
কৌলীন্য-বিসর্জনের ইতিবৃত্তও শাস্ত্রে লেখে না।
সাধাবণের কেউ কেউ ভেবেছিলেন ষে রাষ্্রাধিকার স্থায়ত্তে এলেই কোটি
কোটি মন্ুয্যত্রহীনকে মানুষের অধিকারে আনা সম্ভব হবে। গাদ্ধীজীর মত
ধর্মপ্রেমিক রাজনীতিককে তার! প্রত্যক্ষও করেছিলেন। তাদের স্বপ্রসাধ নিষ্ষল
হয়েছে। এ স্বাভাবিক। কারণ, যে গণতন্ত্রে রক্ষণশীল এমনকি কায়েমী স্বার্থ-
বাদীরাই রক্ষক হওয়ার অধিকার পায় সে গণতন্ত্রে নিপীড়িত জনের মুক্তি
ম্দূরবর্তী হতে বাধ্য । তবু এরই মধ্যে শম্বকগতিতে হরত সমাজ-উন্নয়ন কিছু
কিছু চলছে এবং ছু-চা'রজন সাধু ব্যক্তি যে বিভিন্ন রাহাধিক্কারে নেই এমনও
নয়। কিন্তু অল্পে অল্পে জাগরিত মানুষের চাহির্ধার কাছে এ কল্যাণ কিছুই নয় ।
ত৭ ছাড়া এ রাষ্টরব্যবস্থায় ভিন্ন ধবনের উৎপাত প্রশ্রয় পেয়ে জনজীবনকে পযুদদস্ত
করতে চলেছে । এ হ*ল ধনতান্ত্রিকতা। পণ্য-উৎপারন ও মুনাফা -সঞ্চয়
সীমিত কতিপয় ব্যক্তির করায়ত্ত হওয়ায় এবং উপযুক্ত প্রতিকার-ব্যবস্থা। ন!
থাকায়, বরং রাষ্্র সহায় হওয়ায়, যেমন এক পক্ষে অতিমাত্রায় ধনসম্পদ
পুপ্ধীতৃত হচ্ছে, তেমনি অন্য পক্ষে নিঃস্বতা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।
ফলে শুধু মেহনতী মান্ু'ষঘরই নয়, জনসাধারণেরই জীবনযাত্রা! বিপর্যন্ত হয়ে
পড়েছে । মনুয্ত্বে অহরহ আঘাত পড়ছে। মানবসমাজ দিশাহারা হয়ে
উঠেছে, তার কোনে! কোনো! শাখা! অতিষ্নাত্রায়।
আমরা পূর্বেই বলেছি, উন্নত জীবনাচরণই ধর্মাচরণ। সমাজজীবনকে বাদ
দিয়ে কিছুই নেই, ধর্মও মেই । যে-মধ্যযুগে রাজভক্তিরূপ নবধর্মের অভ্যুদয়
২১২ . বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
তাতে শক্তি এবং প্রতাপের স্বরূপ ছিল ভিন্নতর । অন্নবস্ত্রেরে এত নিদারুণ
ও ব্যাপক সংকট তখন দেখ] দেয়নি । বর্তমান পরিস্থিতিতে এদেশের কোটি
কোটি মানুষের জীবনধারণের সংকটের সঙ্গে ত্রুত মানসিক অবনতি ঘটছে,
কালে সামুহিক ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থায় নবধর্ষের জাগরণ
কি সহসী সম্ভব হবে। জীবনরক্ষার মৌলিক আয়োজন সম্পূর্ণ না হ'লে
ধামিকতার মানসিক প্রস্তুতি সম্ভব নয় । অর্থাৎ জীবনরক্ষার ব্যবস্থার সমস্সত্রেই
নৃতন ধর্ম, যাকে আমর! পূর্বে মহামানবধর্ম বলে অভিহিত করেছি, তারও
ভিত্তি প্রতিষ্রিত হয়ে যাবে, কে জানে । এ বিষয়ে পূর্বাহে কিছুই বল!
যায় না। কবির কথাই হয়ত ঠিক-_
এমন রাতে উদ্দাস হয়ে কেমন অভিসারে
আসে আমার নেয়ে।
সাদা পালের চমক দিয়ে নিবিড় অন্ধকারে
আসছে তরী বেষে।
কোন্ ঘাটে যে ঠেকবে এসে কে জানে তাঁর পাতি,
পথহার] কোন্ পথ দিয়ে সে আপবে রাতারাতি,
কোন্ অচেনা আঙিনাতে তারি পূজার বাতি
রয়েছে পথ চেয়ে ।
অগৌরবার বাঁড়িয়ে গরব করবে আপন সাথী
বিরহী মোর নেমে ।
যদ্দি বল? যায় ধর্ম বওমান ভারতবর্ষে নেই, অধর্মের অন্তায়ের ভয়ে ভীত হয়ে
ধর্ম গুহাহিত হয়ে পড়েছে, তাহ'লে ভালো শোনাবে না বটে, কিন্তু সত্য-
কথন হবে। ধর্ম কি জীবনব্যাপী অসদ্দাচরণে এবং ঢাঁক বাজিয়ে পুজো
করায় অথবা সভ1 ক'রে বক্তৃত। দেওয়ায়? ধর্ম কি মুনাফা সঞ্চয়ে এবং
লোক-দেখানো। মন্দিরাদি নির্যাণে? ধর্ম কি রাজনীতি বা! শিক্ষার নামে
কূট-কৌশলের ও দলীয় স্বার্থের পোষণে? ধর্ম কি অর্থকরী গ্রস্থনির্মাণে
ও পন্নবিত বাগবিন্যাসে? ধর্ম কি কর্তব্য সম্পাদন না৷ ক'রে জীবিকার
দাবিতে? ধর্ম কি প্রচারকার্ষে ও প্রচ্ছন্ন স্বোদ্ররপুরণে? ধর্ষ যর্দি কেবল
বাইরের কঞ্চুক হয়, তার চেয়ে অধর্মাচরণ আর কিছুতে হতে পারে ন1।
ভগবদ্গীতার ষোড়শ অধ্যায়ে দৈবী এবং আহ্রী প্রবৃত্তির দিকৃ থেকে
মানুষের ছুই শ্রেণীবিভাগ কর] হয়েছে এবং আন্মরভাবাপন্ন মানুষের
গৌড়ীয় বৈষবধর্মের দ্বার্শনিক প্রতিষ্ঠা ২১৩
প্রকৃতির বর্ণনা! দেওয়। হয়েছে । বর্তমান ভারতের ধর্মনীতিক অধোগতির
মূলে ধনদর্পান্িত এই শ্রেণীর কার্ধকারিতাই যে বিশেষভাবে দায়ী তা
গীতোক্ত প্রমাণ থেকে অনুধাবন করা যেতে পারে £
কামমাশ্রিত্য ছুষ্প,রং দ্ভমানমদান্বিতাঃ |
মোহাদ্ গৃহীত্বাসদ্গ্রাহান্ গ্রবর্তন্তেতশুচিত্রতাঃ ॥
চিন্তামপরিমেয়াঞ্চ প্রলয়াস্তামুপাশ্রিতাঃ।
কামোপভোগপরম। এতাবদ্ধিতি নিশ্চিত: ॥
আশাপাশশতৈর্বদ্ধ1ঃ কামক্রোধপরায়ণাঃ |
ঈহন্তেকামভোগার্থম্ অন্যায়েনার্থসঞ্চয়ান্ ॥
ইদদমগ্য ময়] লব্ষমিমং প্রাপ্গ্যে মনোরথম্।
ইদ্মন্তীদমপি মে ভবিষ্যুতি পুনর্ধনম্।
অসৌ ময় হতঃ শত্রহনিষ্যে চাপরানপি।
আত্যো২ভিজনবানোহস্মি কোহন্যোহত্তি সদৃশো ময়] |
যক্ষো দাস্তামি মোদিষা ইতাজ্ঞানবিমোহিতাঃ॥
মহাপ্রভুর আবির্তাবকালে এরই একট সীমিত সংস্করণ দেখা গিয়েছিল ।
মায়ামহায়ে এখন আবার ত। প্রবল বেগে প্রসারিত হয়ে লোককল্যাণের
পথ অবরুদ্ধ করছে। কিন্ত তবু হয়ত আশা আছে। এই আধারণ অবস্থার
মধ্যেও অসাধারণত্ব লুকিয়ে নেই এমন নয়। দেশব্যাপী এই তমিত্রার মধ্যে
আলোর শেষ রেখ। এ নামপ্রেমময় সমাজসাম্য । এই নিতান্ত সহজ লোকধর্ম।
রুচি, শ্রদ্ধা, নিষ্ঠা প্রভৃতি থেকে স্বত-উদ্দিত অন্তরের আশ্চর্য আলোক, যার উদয়ে
স্বার্থের আবিলতা দূর হবে, বাসনা-সংস্কারের জমাট হিমানী বিগলিত হবে।
এ রাজনীতিকদের প্রচারিত ও মূল থেকে বিচ্যুত প্রেম-অহিংসা নম, এ
মানুষের মৌল স্বভাবধর্মের সঙ্গে একীভূত সমতামূলক সম্প্রীতি । বর্তমানে-
প্রচ্ছন্ন অশুদ্ধ অস্তঃকরণকে মস্থণ ক'রে আবিভূত এক রম্যভাবের দীপ্তি। এরই
প্রকাশে জীবে নয়া, মানবশ্্রীতি সহজাতভাবে আপনা থেকে সমুভূত হয়, নতুবা
জীব-সাঁধারণের প্রবৃত্তিই হ'ল লোভ, ঈর্ষা, হিংসা শ্বার্থকাম ব্যক্তিদের রাজ-
নীতিক বা সাংস্কৃতিক বক্তৃতার দ্বারা এর নিরাকরণ সম্ভব নয়। যথার্থ
ধর্মের অতাদনয় চাই এবং সে ধর্ম আছে, উভভাল স্বার্থকলহ এবং তথাকথিত
ধর্ম-সংস্কৃতির ছন্মবেশের মধ্যেও তা রয়েছে। রয়েছে সরল এবং অবহেলিত
এঁ সাধারণ মানুষের মধ্যেই, যাদের মহয্যত্বে উদ্ধারের জন্য মহাপ্রভু এসে-
২১৪ বৈষ্ণব-রস-গ্রকাশ
ছিলেন। তা ছাড়া তিনি যে-ভাবসংস্কারের সম্পদে আমাদের ধনী ক'রে
গেছেন তার এঁতিহা আজও রয়েছে সাহিত্যে, চারিত্র, আমাদের বিপ্লবী মনৌ-
ভাবের মধ্যে । ধর্মের সপ্তাবস্থা থেকে এই জাগরণ ভাবের পথেই ঘটবে। জগ্জাল
যা জমেছে তা নিঃশেষিত হওয়ার জন্য প্রাথমিক সংঘাতকে হয়ত ডেকে
আনবে, কিন্তু তার পরই 'জয় জয় পরম] নিবৃ্তি। এই সংঘাত থেকে বোধ
হয় পরিত্রাণ নেই । এতে মন্দও যাবে, তথাকথিত ভালোও কিছু যাবে। য৷
থাকবে তা নিয়ে শ্বচ্ছন্দে চলবে কিছুকাল। পুনশ্চ অচলায়তন যদি গড়ে,
পুনশ্চ তিনি ভাঙবেন। এই হল ইতিহাস-বিধাতার লীল।। কুরুক্ষেত্রের
পর মহামানবধর্ষের প্রভাঁসলীল1 । কখনে! একভাবে প্রকাশ, কখনো ভিন্ন-
ভাবে, সবই অপ্রত্যাশিত, কারণ, 'জন্ম কর্ম চ মে দিব্য । অপিচ-_
অব্যক্তং ব্যক্তিমাপরং মন্যস্তে মামবুদ্ধয়ঃ।
পরং ভাবমজানস্তে! মমাব্যয়মন্থতমম্ |
নাছং প্রকাশঃ সর্ধশ্য যোগমায়াসমাবৃতঃ |
৷ বৈষবীন্তা। ও রবীজ্ম-অনুভব ॥
রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় প্রেরণা এবং কাব্যাহ্ছভূতি আংশিকভাবে অথবা?
বিপুলভাবে পদাবলীতে প্রকাশিত বৈষ্ণব ধর্মভাবুকতার দ্বার নিয়ন্ত্রিত_
এমন কথা কোনে! কোনে। রবীন্দ্র-সমীক্ষক অথবা পদাবলী বিচারক বলে
থাকেন। এ বিষয়টি, ব্যাপকভাবে, রবীন্দ্রনাথের উপর উপনিষদের প্রভাব
প্রভৃতি গতাচ্ছগতিক এবং আলোচকপক্ষে আত্মতুষ্টিকর নিরীক্ষা সঙ্গে
সমস্থক্রে বিচার্, এবং এই ধরনের গড্ডলিকা-পদ্ধতির বিচার বিবেচন।
সম্পর্কে আমরা অন্যত্র আমাদের বক্তব্য সাধ্যমত নিবেদনও করেছি। বওমানে
নান! কাঁরণে বিষয়টির পুনরুথাপন করতে হচ্ছে।
বাঙলার বৈষ্ঞবধর্ম পদাবলী-সমদ্ধ হয়ে এককালে বাঙলার শিক্ষিত-
অশিক্ষিত এবং বর্ণনিবিশেষে প্রায় সমস্ত মানুষকে ভাব-বিহল ক'রে
পেকালকার বৈষয়িক ও গৃতধর্ম__ন্তরাং হৃতসর্বস্ব দীন জীবনের উবে স্থাপন
করেছিল এবং আনন্দময় মুক্তিকে সহজলভ্য ক'রে তুলেছিল। বর্তমানে তা
আঁধুনিক শিক্ষিত সমাজ থেকে দূরে সরে গেলেও, ভাবের একট! জ্স্কারলেশ
জাতীয় শানসে রেখে গেছে। যার জন্তে চিন্ত) এবং মনন থেকে ভাবের ম্ৃল্য
গৌড়ীয় বৈষ্ঞবধ্ষের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ২১৫
আমাদের কাছে বেশি। আমাদের "তখনকার হ্বদেশ-আন্দোলনই হোক
আর সাম্প্রতিক প্রগতি-অভিলাষই হোক, রক্ষণশীলতাই হোক, আর বিপ্লব-
চেতনাই হোক, ইতিহাস-অধ্যয়ন অথব। সাহিত্য-বিচার হোক, ভাবের
যূুলেই এগুলির যথার্থতা আমরা পরীক্ষা করি। উনিশ শতকে শিক্ষিত
সমাজের জাগরণের যূলেও পশ্চিমাগত ভাবেরই প্রেরণা, সেইজন্য সাহিত্য আশ্রয়
করেই নবীনতার বিশেষ প্রকাশ। বাঙালি-চিত্তের এই সুত্র ধরে
রোম্যানটিক সাহিত্যের প্রতি আমাদের পক্ষপশত, এই স্ত্রেই রবীন্দ্রনাথের মত
কল্পনাপ্রবণ মহাগীতিকবির অখবি9তাঁব। আজ পর্যস্ত আমাদের ভাবসম্পদের ছুটি
তুঙ্গ-সীমা-_-এক বৈষ্ণব সাহিত্য, ছুই রবীন্দ্র-কাব্যগীতি। একটি খুরোগুরি
ধর্মীয়, অন্যটি পুরোপুরি সাহিত্যিক, ধর্মের আভাসযুক্ত। আভাস কেন? যথার্থ
ধর্মীয়ত1 রবীন্দ্রকাব্যে নেই, এমন কথ। বল] যায় কোন্ বিচারে? একথা বলা
যায় তার কাব্যস্বরূপ হৃদয়জম ক'রে এবং পূর্ব পূর্ব ধর্মীয়তার সঙ্গে রবীন্ত-
অনুভবের আত্যস্তিক প্রভেদ লক্ষ ক'রে । মাছষসহ নিসর্গই রবীন্্মাথের কাছ্ছে
সর্বস্ব । গুহাহিত চরম রহশ্য যদি কিছু থাকে তা বাস্তবের মধ্যেই নানাভাবে
আভাসিত হচ্ছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এবং মানবিক দ্ষেহপ্রেমে। প্রকারাস্বয়ে
মান্বকেই তিনি চরম সত্য হিসেবে দেখেছেন, ব্যক্তি-মাহষকে না হ'লেও
সমষ্টি-মাছঘকে | সেই একজীববাদী ভাবনা-কল্পনা-বাসনার ঘনীতৃত সারফেই
তিনি মহামানব বলে অভিনন্দিত করেছেন-_-“এ মহামানব আসে? । প্রাচীন
সমালোচকের1 কাব্যসৌন্দর্য ব1 কাব্যরসকে খুব উচ্চে তুলে ধ'রে “বন্ধান্বাদ-
সহোর্দর” ব*লে অভিহিত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ দ্লাড়িয়েছেন আরও এক
ধাপ উপরে । তিনি কাব্যাম্বাদকেই ব্রদ্ধাম্থাদ ব'লে অন্রভব করেছেন, যেমন,_
আর নাই রে বেলা, নামলে] ছায়া ধরণীতে,
এখন চল্ রে ঘাটে কলসখানি ভরে নিতে ।
জানি নে আর ফিরব কিনা,
কার সাথে আজ হবে চিনা,
ঘাটে সেই অজান। বাজায় বীণ। তরণীতে।
অথব1-_ এই যে তোমার প্রেম,
ওগো হাদয়হরণ।
এই যে পাভাঁয় আলো নাচে
সোনার বরণ ।
২১৬ বৈষব-রস-প্রকাশ
অথব! শরৎ-সৌন্দর্য দেখে__
আমার নয়ন-ভূলানে। এলে ।
আমি কী হেরিলাম হৃদয় মেলে !
শিউলিতলার পাশে পাশে
ঝর] ফুলের রাশে রাশে
শিশিরভেজা ঘাসে ঘাসে
অরুণ-রাঙা চরণ ফেলে।
এসবের মধ্যে স্বপ্নটা নিসর্গসৌর্যরসিকের সৌন্দর্কেই চরম এবং পরম
ক'রে দেখার আগ্রহ পরিস্ফুট হয়েছে। “অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর
হাওয়)--এই কবিতা বা! গানটিকে ভবকাগ্ডারীর উপলব্ধি, পরমাত্ম-স্তরতিবাক্য
প্রভৃতি ব'লে কেউ কেউ মনে করেছেন। অথচ এটি সচরাচর-ৃষ্ট নদীর উপর
ভাসমান তরী-বেয়ে-যাওয়ার সৌন্দর্যের অতিশয়িত বর্ণনা ছাড়া আর কিছুই
নয়। এই রমণীয়তাকেই কবি এমন চরমভাবে দেখেছেন যে, এ তরীর মাঝিকে
তার হৃদয়ের সর্বস্ব অর্পণ করতে চেয়েছেন। এহ'ল রোম্যান্টিক কবিকল্পনার
বিশেষত্বের দিকৃ। “সোনার তরী” কবিতার কল্পিত মাঝির ব্যাপারও ঠিক
তাই। আশ্চর্যের বিষয়, রবীন্দ্রকাব্য আলোচনা ক'রে থাকেন এমন স্থধী
ব্যক্তি কেউ কেউ আজও খেয়া” কাব্যের শেষ কবিতা তুমি এপার ওপার
কর কে-গোঃ ওগে। খেয়ার নেয়ে'_ প্রভৃতিকে অধ্যাত্ম-কবিত] মনে করেন।
মনপ্রাণ দিয়ে অনুভব করলে দেখবেন, এটি রোম্যান্টিক সদূর অন্থভবের কবিতা
ছাঁড়া অন্য কিছু নয়। “খেয়া” এবং “নেয়ে”? কোনে। সাংকেতিক ব্যাপার নয়,
একেবারে প্রত্যক্ষ বাস্তব। যেকাব্যের স্থুরে কবি গেয়েছেন গ্রামছাড়। এ
রাঙামাটির পথ আমার মন ভুলায় রে, সেই স্থুরেই এটি গাওয়া | ভাঙ] হাট,
সন্ধ্যার ছায়া, কালোজলের কলধ্বনি এবং এর সঙ্গে মন-কেমন-কর1, কবির এ
চির-উদ্দাপী চির-ব্াদবিধুর ভাবাবেশই কবিতাটির অস্তনিহিত রসসত্য।
আমর এই শ্রেণীর অধ্যাত্মরসিকর্দের অন্থরোধ করছি, কবির এ খেয়া, তরী,
ঘর, পার, গোধূলি, সন্ধ্যা, ঘাট, আঘাট। প্রভৃতির ইমেজকে তার] তাদের অধীত
অধ্যাত্বের সঙ্গে আগাগোড়। মিলিয়ে দেখুন অর্থসংগতি হয় কি না। দেখবেন,
ঠেকে যাচ্ছেন পদে পদে। “বহুদিন হোল কোন্ ফাল্ধনে ছি যবে তব
ভরসায়, এলে তুমি ঘন বরষায়»-__এই “তুমি” কি ঈশ্বর হতে পারেন ? 'পসারিনী”
কবিতার পমারিনী যদ্দি পরমাত্মী। হয়, তাহলে “পসরা” কী হবে? তার আবার
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ২১৭
“ছুরাঁশা” কেন? তথ্চ বালুর কী সংকেত ? “ভরা দিখি' বলতে কী বোঝাচ্ছে?
এইভাবে তত্বকথার জটিল জাল এমন স্থঙ্টি হবে যে, শেষ পর্যস্ত অ-কার
ক-কাবের ব্যাখ্যায় কুলকুগুলিনী, ভাকিনী হাঁকিনী প্রভৃতি ভাবতে হবে।
আসল কথা-_-রবীন্দ্রনাথ মুখ্যতঃ নিসর্গরনিক কবি; আর এসব তার অতি
রমণীয় কাব্য-নির্মীণ _ভাষায়, ভঙ্গিতে, ধ্বনিতে, চিত্রে। এ-ই তার সর্বন্থ
এবং এই নিয়েই তিনি স্থচিরকাল বেঁচে থাকবেন। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, গীতবিতানে
সংকলিত গানগুলিকে ধার! প্রকৃতি, প্রেম, পৃজ। প্রভৃতি ম্বকপোঁলকক্পিত
আখ্যা দিয়ে পাঠকের সামনে প্রথম উপস্থাপিত করেছিলেন তারা হয়তে! পাঠক
বা গীত-রসিকের স্থবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে এরকম করেছিলেন, কবির সমর্থনও
হয়ত পেয়েছিলেন, কিন্তু নিজেদের অজ্ঞাতে এক বিভ্রাস্তিকর পরিস্থিতির স্যটি
কবেছেন। পূজা" শ্রেণীর অনেক গান যে স্পষ্টতঃ নিসর্গের ত। তার। দেখেও
দেখেন নি।
কাব্যের রাজ্য এবং অধ্যাত্বের রাজ্য পরস্পর পৃথকৃ। অধ্যাত্মের সঙ্গে
রোম্যান্টিক শ্রেশীর কাব্যের আভাসে যোগ বা যোগের মত ভাব থাকতে পারে,
বাব যোগ নেই। মিস্টিক কবি ধাদের বল! হয় তারা রোম্যান্টিকই ঃ
কবিই, মিস্টিক্ সাধক নন। এই কাব্যতুরীয়তাই রবীন্দ্রনাথে ; তার উপাস্
হল কাব্যরসব্রদ্ষ, সৌন্দ্যব্রক্ষ, জীবনব্রক্ধ ; ভক্তিবাদের ঈশ্বর নয়। কিন্ত
যেহেতু রসসত্তাকেই কবি অতিরুত ক'রে চরম ক'রে দেখেছেন, সেইহেতু,
লীলাময় এবং রূপমধ্যবত্তী সত্তার কল্পনা তাকে করতে হয়েছে। এই সত্বার
সামগিকতা আমাদের কাছে ঈশ্বররূপেই স্থানে স্থানে প্রতীয়মান হয়ে পড়েছে।
কবির এই ঈশ্বর নিস্গে সাহিত্যে ইতিহাসে জাতীয়তায় মানবমহিমায়
রাষ্রবিপ্লবে__যেমন পাশ্চাত্য দার্শনিক [7681-এর 4১05০0105 [0০৪ তিনি
লীলাপরায়ণ নটরাজ, প্রকাশময়। এরই ফলে কতকগুলি কবিতায় ও গানে
তার ভক্তিবিগলিত হৃদয়ের প্রকাশ ঘটেছে। সেগুলিকে কেউ যর্দি ভগবদ্-
ভক্তির কবিতা বলতে চান আপত্তি নেই, বিস্ত মনে রাখতে হবে যে অঞ্ৈতের
ব্রহ্ম, অথব। যোগের অন্তর্যামী, কি ভক্তির বা বিশিষ্টাদ্ৈতের সঙ্গে ঠিক তার মিল
নেই, বেণুকর নবকিশোর গোপবধূবিটের সঙ্গে তো নেইই। তা৷ ছাড়।
তাঁর কতকগুলি ঈশ্বরসন্বন্ধীয় গান, যাকে ব্রহ্ষসংগীত বলা হয়, তা বহুলাংশে
দ্েশ-কালের ধাবিতে রচিত। রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিগতভাবে প্রবল ধামিক
প্রকৃতির ছিলেন ; মহষিপুত্র ছিলেন ব*লেই নয়, নিজন্বভাবেই চরিত্রবান্ ও.
২১৮ বৈষ্ব-রস-গ্রকাশ
ধামিক ছিলেন। কিন্ত তিনি আবার সমুচ্চ কাব্যকল্পনীর অধিকারী এবং.
পৃথিবীতে আজ পর্যস্ত আবিভূতি প্রথম শ্রেণীর সাহিত্যিকদের অন্যতম
ছিলেন। তার এই সাহিত্যিকতা, এই রহস্যময় কল্পলোক শ্থজনকে ধর্মীয়ত।
ব'লে গ্রহণ করলে ভূল কর! হবে। কবি কালিদাস কোথাও কোথাও
কাব্যের প্রয়োজনবশে শিবস্তৃতি উচ্চারণ করলেও একথা কি কেউ বলবেন ষে,
তিনি কুমারসম্ভব-শকুস্তলায় শৈবধর্মের প্রত্যভিজ্ঞ! গ্রতিপন্ন করেছেন? স্থতরাং
রবীন্দ্রনাথ পরবশে অথবা আত্মবশে শাস্ত দাশ্ত মধুরের অভাসযুক্ত কিছু
কবিতা ও গান রচনা করলেও ভক্তিভাবের সাধক হয়ে পড়েন নি। অ-দলে
আমর! তার সাহিত্যকতি স্বরূপে বিচার করি না বলে এবং আমাদের মানস-
ভূমি কাবারস গ্রহণের অঙ্থকূল নয় বলেই তার বিশুদ্ধ কাব্যে ঈশ্বর দর্শন
করি। ভারতীয় বিভিন্ন এতিহোর আংশিক ও স্বাভাবিক অন্বর্তনকে
প্রভাব ব*লে বিবেচনা করি। রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন এতিহের অন্ুবর্তন
করেছেন, আবার করেনওনি-এমন কি তার বিরুদ্ধাচরণও করেছেন।
যেহেতু তিনি বৌদ্ধগাথ। অবলম্বনে ছু-একটি কবিতা লিখেছেন, “নটার পূজা”
বুদ্ধের শ্তঘগান করেছেন অথব। গণ্যে কিছু লিখেছেন সেইহেতু তিনি বৌদ্ধ;
যেহেতু তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে উপনিষদের মন্ত্র উদ্ধত করেছেন এবং অমৃত,
আনন্দ প্রভৃতি শব ব্যবহার করেছেন, সেইহেতু তিনি উপন্যিদের খষি ; যেহেতু
তিনি ব্রদ্ষপংগীত লিখেছেন, সেইহেতু তিনি ব্রাহ্ম) যেহেতু তিনি বাউল স্থুর
এবং বাউল গানের ভাষা-ইমেজ ব্যবহার করেছেন, সেইহেতু তিনি বাউল ১
যেহেতু তিনি বধু, প্রাণেশ, প্রিয়, পরমধন, স্বন্দর প্রভৃতি শব্ধ ব্যবহার করেছেন
এবং কাব্যরসময় কল্পসত্তার সঙ্গে একটা সম্পর্ক পাতিয়েছেন, সেইহেতু
তিনি বৈষ্ব_ এরকম ধারণ! প্রারুতজনস্থলভ হতে পারে, বিদপ্স্থলভ নয়।
অন্ধের হুম্তীদর্শনের ব1 মণি-বিচ্ছুরিত বিভিন্ন বর্ণের স্ায়'ও এখানে অচল।
কারণ, রবীন্দ্রনাথ বসলে যে কবিবাক্তি সে তে। নিজেকে বহুধা বিওক্ত ক'রে
দেখতে চায়নি, বিভিন্ন শ্রেণীর মনোরঞগ্জনের জন্যেও কাব্য রচনা করতে বসেনি ।
রবীন্দ্রনাথের কবিসত্তা, কবিষ্বানস ব1 কল্পনাকুশলতার মধ্যে খণ্ডিত বহুত্ব নেই 3
বৈচিত্র্য আছে, বিরোধ নেই। কী নেই একত্ব, কী সেই স্থত্র যাকে পেলে
কবিকে সঠিক ও সমগ্রভাবে পাওয়া যাবে? এসব বিষয় নিয়ে আমরা পূর্বে
পূর্বে বছ বাক্যব্যয় করেছি। এখানে আমাদের দেখাতে হচ্ছেত্ার মৌল
কবিধর্ষের সঙ্গে বৈষবধর্মের বিরন্ধ সম্পর্ক । বর্তমান আলোচনায় ধরে নেওয়া
গৌড়ীয় বৈষণবধর্ষের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ২১৯
হয়েছে যে, গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম সম্বন্ধে সঙ্জন পাঠক পরিচিত ও সহানুভব-সম্পন্ন ।
এমন কথ। যে উঠল, তার প্রমাণ সাম্প্রতিক একটি সংবাদ থেকে দ্িচ্ছি।
অশ্লীলতাদোষে অভিযুক্ত কোনে! উপন্যাসের বণিত বিষয়ের সমর্থনকল্পে কোনে!
অধ্যাপিকা (নিশ্যয়ই তিনি বাংলায় এম. এ. 1) শ্রীকুষ্ণকীর্তন গ্রন্থে বণিত
রাধাকৃষ্ণের মাতুলানী-ভাগিনেয় সম্পর্কের বিষয় উল্লেখ করেছেন। তার শ্রীকৃষ্ণ
কীর্তন অধ্যয়নে তিনি এট্রকুও বোঝেননি যে, ওটি ধর্মীয় গ্রন্থ। শ্রীকষ্ত্রীতির
ব1 ভগবত্প্রীতির কাছে লোকসম্পর্ক ব৷ শান্ত্রচালিত সংসার-ধর্মের অতিতুচ্ছত।
প্রতিপাদ্দনই ছিল ধাগিক কবির উদ্দেশ্য । শ্রীকুষ্ণকীর্তন ব। পদ্দাবলীকে বিশ্তদ্ধ
সাহিত্যের কোঠায় ফেলে তা দিয়ে লৌকিক সাহ্কিত্যের অশ্লীলতা। সমর্থন
বিদপ্ধসমাজে গ্রহণীয় হবে কি? কিন্তু দোষ বোধ হয় এক এ'রই নয়। বৈষাৰ
সাহিত্যের অধ্যাপনা করেন, এমন উচ্চ ডিগ্রিধারী ব্যক্তিও যখন বলেন যে,
জয়দেব-বিদ্যাপতি-চণ্তীদাস লৌকিক কাব্যই লিখেছিলেন--তখন অন্যে পরে
কা কথা !
বৈষ্বর্দের বণিত পরকীয়! রতির গোঁপীপ্রেমে এবং লৌকিক জগতের প্রেমে
আশমান-জমীন্ পার্থক্য । একটি মায়াতীত, অন্যটি মায়িক। গোপী প্রেম.
নিঃশেষে কামনাশৃন্য, আর, নিংস্বার্থতা এবং ছুঃখময় ত্যাগ আমাদের কল্পনায়
যতদূর যেতে পারে, রাধাভাব তারও উপবে। মত্ত্যপ্রেম যত উচ্চশুরেরই
হোক না কেন বৈষ্বদের ধারণায় ত1 সকাম। চব্িতামুতের বিখ্যাত
পঙ্ক্তিগুলি ম্মরণ কর। যাক £
আতেন্দ্িয়-প্রীতি-ইচ্ছা ( _মত্যপ্রণয় ) তারে বলি কাম।
কষ্েজ্তিয়-প্রীতি-ইচ্ছ। ধরে প্রেম নাম ॥ **
কামগন্ধহীন স্বাভাবিক গোগীপ্রেম ।
নির্মল উজ্জল গুদ যেন দ্ধ হেম ॥ ***
আর এক অদ্ভুত গোপীপ্রেমের স্বভাব । ক**
সথথবাঞ্। নাহি, স্থুখ হয় কোটিগুণ ॥
আবার-_
বাহে বিষজালা হয় ভিতরে অমৃতময়
কৃষ্ণপ্রেমার অদ্ভূত চরিত ॥
মহাজন-পদে গোপীপ্রেমের, রাধাভাবের অনির্চনীক্ষ অতিমত্য শ্বভাবকে:
১২০ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
নানাভাবে প্রকাশ করার প্রয়াস লক্ষা করা যায়। কোনো সাধক-কবি বর্ণন!
করেছেন
সোই পরিতি অন্ু- রাগ বখানিতে
তিলে তিলে নৌতন হোয় ॥
জনম অবধি হাম রূপ নেহারলু
নয়ন ন তিরপিত ভেল।
লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয় রাখলু
তভে। হিয় জুড়ন ন গেল ॥
অপর একজন কৃষ্ণের রূপের অপ্রাকৃত প্রভাব এবং সেই সঙ্গে রাধাভাবের
স্বরূপ বোঝাতে একটি পদ্দে অতিশয়োক্তি, বিরোধ, বিষম গ্রভৃতি অলংকারের
'একশেষ করেছেন £
আধক-আধ-আধ দিঠি-অঞ্চলে
যব ধরি পেখলু কান।
কত শতকোটি- কুহ্থম-শর-জরজর
রহত কিযাত পরাণ ॥ ইত্যাদি।
রাঁধাকুষ্*-প্রণয়ের অগ্রাকৃতত্বের ব্যঞ্জনা এইভাবে পদ্দাবলীর সর্বন্্।
অবশ্ত একথ। হয়তে। ঠিক যে, মত্যের পরকীয়। প্রীতির দৃষ্টান্তে অন্থমানে এই
প্রণয়ের বহিরঙ্ববিন্াঁস কল্পিত, তবু এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, মত্ত্যপ্রেম সীমিত-_
কষ্ণপ্রেম নিঃসীম। অস্ততঃ সেইভাবেই এই শ্রীতি নিদিষ্ট হয়েছে, কারণ
মহাপ্রভুর আশ্চর্য বিরহোম্মীদ এই প্রেমকক্পনার যথার্থ্য পরিস্ফুট করেছে।
চৈতন্-পূর্ববর্তী পদাবলীতে বিদ্যাপতি-চণ্তীদাস-জয়দেব-বিদ্বমলে যা বণিত
হয়েছে তা যে সত্য, মহাগ্রভুই তার প্রমাণ। বস্ততঃ পাথিব প্রেম এবং
ব্রজপ্রেম যে এক বস্ত নয়, এই নির্দেশের বিরুদ্ধেই রবীন্দ্রনাথ আক্ষেপমূলক
প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার “বৈষ্ণব-কবিতা*়-শুধু বৈকুষ্ঠের তরে বৈষবের
গান ?-_-এই কথা ব'লে। রবীন্দ্রনাথের অনুভবে পাখি প্রেমের মধ্যেই
প্রীতির চরমোৎকর্ষ, এর উপরে আর কিছু নেই। তিনি নিজ মনোভাব
জ্ঞাপন করতে বৈষ্বীয়তার সঙ্গে তার অনুভবের পার্থকের দিকৃটিই
'স্থুপরিষ্ফুট করেছেন £
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দর্শিনিক প্রতিষ্ঠা ২২১
এই প্রেমগীতিহার
গাথ! হয় নরনারী-মিলনবেলায়,
কেহ দেয় তারে, কেহ বধুর গলায় ।
দেবতারে যাহা দিতে পারি, দিই তাই
'প্রিয়জনে ;_ প্রিয়জনে যাহ! দিতে পাই
তাই দিই দেবতারে ; আর পাঁব কোঁথ। ?
দেবতারে প্রিয় করি প্রিয়েরে দেবতা ।
কবি জানেন যে, বৈষ্ব-অঙ্কভবে দেবতা প্রিয় হয়েছেন, কিন্তু প্রিয়জন
দেবত। ব'লে অনুভূত হয়নি + নস্তবতঃ বৈষব দর্শনে সচ্চিদানন্দ স্বয়ং-ভগবান্
কৃষ্ণের এবং তার স্বরূপশক্তি গোপীদের সঙ্গে মায়াবদ্ধ জীবের মৌলিক পার্থকা
প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এই আত্যন্তিক পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে বল। হয়েছে-_
হলাদিন্া। সংবিদাশ্রিষ্টঃ সচ্চিদানন্দ ঈশ্বর: |
স্বাবিদ্যাসংবৃতে। জীবঃ সংকরেশনিকরাকরঃ ॥
রবীন্দ্রঅন্থভব মর্ত্যসবন্ব, এ পার্থক্য মানে ন!। বৈষ্ঞবর্দের কাছে কৃক্হীন
মায়িক অস্তিত্ব ক্লেশকর, ত্বণার। সেই দেহেন্দ্রি়ই সার্থক যা আহুকৃল্যে
কৃষ্ণান্থশীলনে রত। কৃষ্সংস্পর্শহীন শ্রবণ-নয়নাদ্ির নিন্দী নিম়্লিখিতভাবে,
কর! হয়েছে £
বংশীগানামৃতধাম লাবণ্যামৃত-জন্সস্থান
যে ন৷ দেখে সে ঠা্বদন।
সেনয়নে কিবা কাজ মুগ্ডে তার পড়ু বাজ
সে নয়ন রহে কি কারণ ॥ ₹*+
কানাকড়ি-ছিদ্রসম জাঁনিহ সেই শ্রবণ
তার জন্ম হল অকারণে ॥ ***
হেন কৃষ-অ-গন্ধ যার নাহি সে সক্বন্ধ
সেই নাস! ভন্ত্রার সমান ॥ *%%
বিপরীত-তুলনায় রবীন্দ্রনাথের অনুভব স্থপরিচিত £
এই বন্থধার
মুত্তিকাঁর পাত্রখানি ভরি বারংবার
তোমাঁর অমুত, ঢালি দিবে অবিরত
নানাবর্ণগন্ধময় | **%
২৯ বৈষ্ণবপ্রম-প্রকাশ
যা-কিছু আনন্দ মাছে দৃশ্তে গন্ধে গানে
তোমার আনন্দ রবে তার মাঝখানে ।
ক্তরাং রবীন্দ্র-অন্ধুভব বৈষ্ণব-অন্ুভব থেকে মৌলিকভাবে পৃথকৃ।
এরকম ক্ষেত্রে প্রভাবের প্রশ্ন ওঠে না। রবীন্দ্রনাথ বৈষ্ঞবধর্মের দ্বার!
প্রভাবিত হননি । পদাবলীর সাহিত্যধর্মের বারা তিনি অন্ুপ্রাণিত হয়েছিলেন,
ভাষা-ভঙ্গি চিত্রকল্পও গ্রহণ করেছেন স্বচ্ছন্দে, যেমন গ্রহণ করেছেন কীর্তন
গানের স্থর নানান্ ক্ষেত্রে। সম্ভবতঃ রবীন্দ্রনাথ পদ্দাবলীর ভাষা ও
রূপকল্প স্থানে স্থানে গ্রহণ করেছেন বলেই পাঠকের চোখে ধাধ। লেগেছে,
অন্তবঙ্গ ভাব সম্পর্কেও তার] সাজাত্য ধ'রে নিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের
পদাবনী-গ্রীতি ছিল, কিন্তু তা সাহিত্যিক, ধর্মীয় নয়। সাহিত্যিক দিকের
অন্থসরণ এঁতিহা হিসেবেই তাতে বর্তেছিল। কৈশোরে পদ্দাবলীর মাত্রাবৃত্ত
ছন্দ ও ব্রজবুলির মাধূর্যে আকৃষ্ট হয়ে তিনি অন্করণাত্মক কিছু পদও
লিখেহিলেন । কিন্তু ত1 নিতান্তই কাঁচা হাতের লেখা__-তার ভাষাতেই
“মেকি? ।
রণীন্দ্রঈশ্বর ষে ব্রজবিহারী কৃষ্ণ নন_-মধুরং মধুরং বপুরস্ত বিভোরধরং
মধুরং বদনং মধুরমূ। মধুগন্ধিমৃছুশ্মিতমেতদহো! মধুবং মধুরং মধুরং মধুরম্*_
প্রভৃতি বর্ণনার অনুরূপ কেবল মধুর নন, রুত্র ভয়ংকরও, তা তার বনু
কবিতায় গানে পরিষ্ফুট। তিনি নটরাজ, তার নৃত্যের দুই পদক্ষেপ,
তিনি কখনো স্থন্দর, কখনো ভয়ংকর । মহাকাশে নিসর্গের মধ্যে তার এই ছুই-
রূপ সর্বদাই প্রকাশ পায়, মানব-সমাজের মধ্যেও । যুদ্ধ, বিপ্লব, প্লাবন, ভৃকম্প,
সূর্যতারকার রূপাস্তর প্রভৃতি হ'ল এ রুত্র ভয়ংকরের আবির্ভাবের মাধ্যম |
বিশেষভাবে তিনি অনভিপ্রেত আধার ঘরেরই রাজা । কবির বক্তব্য হ'ল বাহা
রমণীয়তার মত এই ভয়ংকরতাকেও সাগ্রহে বরণ ক'রে নিতে হুবে। রবীন্দ্রনাথ
কেবল নিসর্গের নন, মানবসমাজেরও কবি। সেখানে তিনি চিরন্তনের
পথিক। জীর্ণ সংস্কার, বিভিন্ন পুরাতন তন্ত্র বিসর্জন দিয়ে সংস্কারের
মালিন্য সম্পূর্ণ মুছে ফেলে তিমি নৃতনকে গ্রহণ করতে চান। সে নৃতন
সংস্কারে-অবরুদ্ধ ব্যক্তির কাছে অপ্রিয়, অমঙ্গলকর এমন কি সর্বনেশে বলে
প্রতীত হলেও তাকে গ্রহণ কর] ছাড় গত্যন্তর নেই। এই হ'ল তার
একটি মাত্র বাণী। গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মও পুরাতন শাস্তাদি বর্জন করে
বৈপ্লবিক নৃতনের জন্ম দিয়েছিল, কিন্তু তা যতটা ধর্মের দিক্ থেকে সে-
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্মের দার্শৰিক প্রতিষ্ঠা হই
পরিমাণে বাস্তব জীবনের দ্বিকৃ থেকে নয়। অবশ্ব বৈষ্ণব সমাজে জীবনাচরণ
ধর্মাচরণের বশীতৃত হয়ে পড়েছে, সে কথ! ্বতন্ত্র। সমাজের মালিস্ত
'মোচনের জন্য এবং নবজীবন গঠনের জন্য কবি নৃতনকে এইভাবে অভ্যর্থন!
জানিয়েছেন £
প্রভাতস্চর্য এসেছ রুত্রসাজে;
দুঃখের পথে তোমার তুর্য বাজে, **&
হে বিজয়ী বীর নবজীবনের প্রাতে
নবীন আশার খড়গ তোমার হাতে
জীর্ণ আবেশ কাটে! সৃকঠোর ঘাতে*"'ইত্যার্দি।
অথবা,
“জয় তব ভীষণ সব-কলুষ-নাশন কুদ্রত1১।
অথবা, স্পষ্ট ভাষায় মাধুর্ষের প্রতিবাদ :
নয় এ মধুর খেলা,
তোমায় আমায় সারাজীবন
সকালসন্ধ্যা-বেল) | ***
তোমার প্রেমে আঘাত আছে
নাইক অবহেলা ॥
এ ছাড়া “বজে তোমার বাজে বাশি", “আমারে তুমি করিবে ভ্রাণ এ
নহে মোর প্রার্থনা প্রভৃতি আরও শত শত কবিতায় ও গানে এই
ভাবের প্রকাশ দেখ। যায়। আসলে রবীন্দ্রনাথ প্রচলিত ঈশ্বরে ভক্তি'র
কবি নন, তিনি ইতিহাস, সমাজ, সংসার ও মাহ্্ষের কবি,-আর নিসর্গ-
ব্যাখ্যার কবি। তবু রবীন্ত্-রচনায় যে সব জায়গায় ভক্তিভাবুকতার
আভাস লেগেছে এবং সাধারণ্যে যেগুলি বৈষ্বীয় ভক্তি ব'লে আস্বাদন
ক'রে থাকেন এমন ছু"চারটি কবিত1 বা গানের স্বরূপ আলোচিত হচ্ছে :
এক. তাই তোমার আনন্দ আমার 'পর
তুমি তাই এসেছ নিচে।
আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর,
তোমার প্রেম হ'ত যে মিছে £""ইত্যাদি
“এটি দৃশ্ঠতঃ বৈষব, কারণ, এর কথার মধ্যে আনন্দ, প্রেম, ঈশ্বর, রসের
২২৪ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
খেল।, মনোহরণ, প্রত, ভক্ত, মৃতি, এমনকি যুগলসশ্মিলনও ব্যবস্ৃত হয়েছে ।
কিন্তু কাব্যার্থ অনুসরণে দেখ! যায়, এতে তিনি বৈষ্বীয়তার প্রতিবাদ ক'রে
তার অভিপ্রেত মত্যরসোপলব্ধির এবং মানুষের চরমতাই ব্যক্ত করেছেন ।
কোনে বৈষ্চব একথ] মানবেন ন] যে, তাকে নইলে কৃষ্ণের প্রেম ব্যর্থ। তিনি
বলবেন, কোথায় সেই সর্বচিত্তহর অখিলরসামৃতধুতি সাক্ষাৎ মন্মথ-মন্মথ
পূর্ণ ভগবান্, আর কোথায় আমি ক্ষুদ্র জীব, মায়ানিগৃহীত কামকাঞ্চনস্পৃহাজর্জর !
অগগিত ব্রন্ধাণ্ড ও ব্রদ্ধ। নিয়ে ধার লীলা, সহশ্র-সহজ্জ মহিষী, শত সহশ্র গোপী
ধার স্থৃদুর্লভ সাক্ষাৎ পাবার জন্য ব্যগ্র, ধার অনন্ত লীলার কণিকা-লবলেশ
ম্পর্শ করতে পারলে জীব ধন্য হয়ে যায়” আমাকে নইলে তার প্রেম
মিথ্য। হয়ে যাবে, এমন কথ! শুনলেও পাপ। এবং বস্ততঃ লীলাকীর্তনের
মধ্যে এই পদটি যদ্দি কেউ প্রবিষ্ট করিয়ে গান করেন, তাহলে যথার্থ
বৈষ্ণব ত] শোনামান্রর সভ1 ত্যাগ ক'রে উঠে যাবেন। এই কবিতাটিতে
“আমায় নিয়ে মেলেছ এই মেলা” প্রভৃতি বাক্যে পাখিব স্সেহসেবামাধূর্বময়
জীবন-চর্যার দিকে কবি যে ইঙ্গিত করেছেন, তাই হ'ল এখানে ঈশ্বরাভি-
প্রেত রসের খেল। ; গোপীপ্রেমের অত্যাশ্র্য বিরহ্দাহ নয়। আসলে এই
জীবনের বিচিত্র স্ুখাস্বাদসমূহেরই চরমতা৷ কবি খ্যাপন করেছেন, তাঁকেই
অতিকৃত ক'রে ঈশ্বরীয় ব'লে অঙ্থভব করেছেন। কবির এ ধারণা বৈষ্ণব-
বিরোধী । শেষ পঙ্ক্তির “যুগলসন্মিলন” বলতে মত্যপ্রেমিক এবং রসবূপ
ঈশ্বরের মিলিত একককে কবি বুঝিয়েছেন এবং তদন্থ্যায়ী বিশ্বের মধ্যেই
পরম পুরুষার্থকে লক্ষ্য করেছেন । বৈষ্ণব মতে এমন সব কথা যিনি উচ্চারণ
করেন তিনি রসিক, তিনি কবি, ভক্ত নন।
দুই. তোমার আমার মিলন হবে ব*লে
আলোয় আকাশ ভরা ।
নী ০ চে
তোমার আমার মিলন হবে ব'লে
যুগে যুগে বিশ্বতুবনতলে
পরান আমার বধূর বেশে চলে চিরন্বয়ংবর]।
এর বাব্যার্থও অনুরূপ | সন্ধ্যা উধা, আলোক, আকাশ, নিখিল-্রাবী
সৌন্দর্যল্োত কবিচিত্তে রসাস্বাদরূপ কল্পিত অরূপের সঙ্গে মিলন-বাঁসনা জাগ্রত
করেছে। তার এই অরূপ পাথিব বূপসাগরে ডুব দেওয়ার ফলে পাওয়। |
গোঁড়ীয় বৈষ্বধর্ষের দার্শনিক গ্রতিষ। ২২৫.
বন্ততঃ মত্য-সৌন্দর্যের কাছেই কবি মনঃপ্রাণ সমর্পন করেছেন। তাই
বধৃবেশের ছবি দিতে কবির কোন আয়াস হয়নি। এ বধূবেশে গোপীভাব
ব্যঞ্িত হচ্ছে না, আর “তুমি” সর্বনামে নির্দিষ্ট ব্যক্তিও কোন মুতিধারী নয়,
নিছক সৌন্দ্যযৃতি মাত্র ।
তিন. কেন চোখের জলে ভিজিয়ে দ্রিলেম না শুকনো। ধুলে। যত !
কে জানিত আসবে তুমি গো অনাহ্তের মতে] ॥
পার হ'য়ে এসেছ মরু, নাই যে সেথায় ছায়াতরু-_
পথের ছুঃখ দ্িলেম তোমায় গো এমন ভাগ্যহত ॥
এর মধ্যে 'অভিসারিকা” চিত্রের ছায়াপাত মাত্র ঘটেছে, এ অভিসারিকা সংস্কৃত
সাহিত্যেরও হতে পারে, বৈষ্ববপদেরও হতে পারে । কিন্ত কবির বণিত নায়িকা!
(এক্ষেত্রে কবিই ) একালের এই পৃথিবীরই । সে বিরহিণী এবং প্রতীক্ষমাণ]।
মত্যরসাবস্থার অখগুতাবোধ থেকে কল্পিত মানবিকতা নায়ক হতে পারে । এর
সঙ্গে তুলনীয়_“মনে হ'ল যেন পেরিয়ে এলেম অন্তবিহীন পথ।” ছুটিই পাথিব-
প্রেমগীতি, রবীন্দ্ার্থে যার সঙ্গে ঈশ্বরপ্রেমগীতির পার্থক্য নেই। আমরা পূর্বেই
বলেছি, পদ্দাবলী থেকে বহু ইমেজ, ও বাগ.ভঙ্গিমা আর্টিস্ট কবি নিয়েছেন ।
বাশিধবনির, কালো৷ রূপের, কদমতলার, যমুনায় জল আনার এবং সর্বোপরি
পাথিব নায়িকাতে রাধার চিত্র “আরোপিত হয়েছে ব'লে নিম্নলিখিত মর্ত্য
পূর্বরাগের পরিহাসমধুর অপূর্ব গানটিকে কি কেউ বৈষ্ণবীয় গোপীপ্রেমের পোষক
ব'লে মনে করবেন ?--
এখনে, তারে চোখে দেখিনি
শুধু বাশি শুনেছি।
মনপ্রাণ যাহা ছিল দিয়ে ফেলেছি ॥
শুনেছি যূরতি কালে।
তারে ন! দেখাই ভালো,
শখি, বলো, আমি জল আনিতে
যমুনায় যাবো! কি?
ঠিক এই বিভ্রান্তিতেই “জীবনদেবতা” নামীয় “চিত্রা+ কাব্যের কবিতাটি
বৈষ্ণবীয় দ্বৈতভাবসাধনার ক্বিত। ব$+লে ব্যাখ্যাত হয়েছে। “জীবনদেবতা"য়
নিতান্ত আত্মমুখী কবি তার নিজ ব্যক্তিসত্বার সঙ্গে ভাবের আলাপচারী
১৫
২২৬ বৈষুব-রস-প্রকাশ
করেছেন, অথচ ভাষাভঙ্গিতে বৈষ্কবীয়তার আভাস আর্টের প্রয়োজনে বাধ্য
হয়েই গ্রহণ করেছেন £
এখন কি শেষ হয়েছে প্রাণেশ
যা কিছু আছিল মোর । *%*
শিথিল হয়েছে বাহুবন্ধন,
মদ্িরাবিহীন মম চুম্বন,
জীবনকুগ্জে অভিসার-নিশ।
আজি কি হয়েছে ভোর ॥
জীবনর্দেবতার সঙ্গে একই স্থুরে গাথা “অন্তর্যামী* কবিতা, যেখানে কবি এ
অন্তরমত্তাকে (98৮)০০61৮6 9০17) নারীরূপে বর্ণনা করেছেন, তা ঈশ্বর দ্বৈত
অদ্বৈত প্রভৃতি ভ্রান্তি জন্মিয়েছে। কাব্যকধিতার রম্নণীয় মায়াস্থষ্টি ষাদের অন্তর
স্পর্শ করে না, টৈবীমায়ায় তারাই এভাবে শুক্তিতে রজতবুদ্ধি পোষণ করেন।
চার. সীমার মাঝে অসীম, তুমি বাজাও আপন স্থর-_
আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ, তাই এত মধুর ।
কত বর্ণে, কত গন্ধে, কত গানে, কত ছন্দে
অরূপ, তোমার রূপের লীলায় জাগে হৃদয়পুর ॥
কবি পাথিব স্পেহ-প্রেম-সৌন্দর্যরম্যতার আম্বাদের আনন্দ নিয়ে নিজের মধ্যে
ঈশ্বরেব আনন্দ অনুভব করেছেন। এও যা আর 'যাকিছু আনন্দ আছে
দৃশ্টে গদ্ধে গানে, তোমার আনন্দ রবে তার মাঝখানে” অথবা “তুমি নব নব
রূপে এস প্রাণে । এস গন্ধে বরণে এস গানে” প্রভৃতিও তা1। আমার মধ্যে
তোমার প্রকাশ+ প্রভৃতির অস্মিতা বৈষ্বপদে ছুলভ। "সীমার মাঝে অসীম,
বলতে বিশিষ্টাদ্বতবাদী ব1] হেগেলীয় ধারণার স্পশ যদি বা পাওয়৷ যায়,
বিশিষ্টাদৈতের মত জীববোধ এবং পাথিৰ প্রবৃত্তি হেয়তাবোধ এর মধো নেই।
রবীন্দ্রনাথ ব্যাপকভাবে নব্য হেগেল সম্প্রদায়ের মিস্টিক হতে পারেন, বৈষ্ণব নন।
পাচ. প্রভু আমার, প্রিয় আমার, পরমধন হে।
চিরপথের সঙ্গী আমার চিরজীবন হে ॥
অথব1 তুমি বন্ধু, তুমি নাথ, নিশিদিন তুমি আমার*_ এগুলি মোটা মুটি
প্রয়োজনবশে লেখ! ব্রহ্গসংগীত। যেগুলি ম্বতঃস্মৃর্ত সেগুলিতে কবির উপলব্ধ
বিশেষ ঈশ্বরের সঙেই ভাব-পরিচয় ব্যক্ত হয়েছে, আমাদের পূর্বপরিচিত কোনে?
ঈশ্বরের সঙ্গে নয়। আমর একথা বলছি না যে, রবীন্দ্রনাথ পরমতত্বরূপে
গৌড়ীয় বৈষবধর্মের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ২২৭
'কোনেো সততায় বিশ্বাসী নন। কিন্তু এ সত্তা তার নিজের, এ দত কাব্যিক,
এ সত্তা নভোবৈজ্ঞানিক। কাব্যকল্পনার হ্ত্রে আগত সেই সত্তার সঙ্গে স্থানে
স্থানে কবি স্বাভাবিক ভাবেই ভাববিনিময় করতে চেয়েছেন। যেমন
নিয্ললিখিত ছুটি ক্ষেত্রে £
ছয়, দিনশেষে কর্মশাল1 ভাষ। রচনার
নিরুদ্ধ করিয়। দিক দ্বার ।
পড়ে থাক্ পিছে
বহু আবর্জনা বহু মিছে ।
বারবার মনে মহন বলিতেছি, আমি চলিলাম-__
যেখ! নাই নাম,
যেখানে পেয়েছে লয়
সকল বিশেষ পরিচয়,
নাই আর আছে
এক হয়ে যেথা মিশিরাছে,***
এবং যেখানে অথণ্ড দিন
আলোহীন অন্ধকারহীন,
আমার আমির ধার] মিলে যেথা যাঁবে ক্রমে ক্রমে
পবিপূর্ণ চৈতন্তের সাগরসংগমে | *”*ইত্যা্দি
প্রচ্ছন্ন বিরাজে
নিগৃঢ অন্তরে যেই একা,
চেয়ে আছি পাই যদি দেখা । "**ইত্যাদি।
মনে রাখতে হবে, সাধারণ মানবিক মনোভাব নিয়েই কবিতা] লেখা হয়ে
থাকে । উপরের পঙ্ক্তিগুলিতে যা জানানো হয়েছে তা বিদায়ী মানুষের
সাধারণ মনোভাব । অবশ্য বিশ্বাসী মানুষের, অবিশ্বাসীর নয়। রবীন্দ্রনাথ
ভাঁববাদী ছিলেন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই এ পব কথা লিখেছেন | কিন্ত
বিচার্ষ এই যে, কবির উপলব্ধ এঁ সত্ব! ভক্তিধর্মচিহ্নিত ঈশ্বর কিন1।
দেখ। যাবে ত1 নয়। “ষেখা নাই নাম” ইত্যাদির মধ্যেই তা স্পষ্ট।
বৈষ্ণবের ঈশ্বর একেবারে সবিশেষ-এমন কি, বিগ্রহধারী। এ বর্ণনা
থেকে একথা স্পষ্ট যে, কবি ঠিক জানেন না কী সেই সত্বা। আভাসে অনুমানে
মোটামুটি একটা এককের ধারণা ক'রে নিয়েছেন, অথচ, বৈষবের1 ঠিক
২২৮, বৈষ্বব-বস-প্রকাশ
জানেন যে তিনি স্বয়ং ভগবান, তিনি কৃষ্ণ, সচ্চিদানন্ববিগ্রহ। “জন্মদিনে”
কাব্যের মধ্যে গ্রথিত কবির এ কবিতাটির মূল্য কবিতা হিসেবেই, নতুবা,
বিষয়ৰস্তর দিক থেকে নোতুন কিছু নয়, বিশ্ময়করও নয়। পারের ভাক
অনুভব করলে মানবচিত্তে এরকম ভাঁবন| চিরস্তনের ব্যাপার । বৈষ্ণবেরা
এরকম মনোভাবকে ঈশ্বরীয় রতি বলেন না, বলেন রত্যাভাস। কোনে!
কারণে ক্ষণিকের জন্যে ঈশ্বরীয় ভাবের ছুোঁওয়া মনে লাগে, তারপর তা
মিলিয়ে যায়।
সাত, “ধুলা! সাথে আমি ধুল1 হয়ে রব
সে গৌরবের চরণে।
ফুলমাঝে আমি হব ফুলদল
তার পূজারতি বরণে।
যেথা যাই আর যেথায় চাহি রে
তিল ঠাই নাই তাহার বাহিরে, * * *
যেথা আছি আমি আছি তারি দ্বারে,
নাহি জানি ত্রাণ কেন বল কারে।
আছে তারি পারে তারি পারাবারে
বিপুল ভুবন-তরণী |”
উৎসর্গ কাব্যের এই কবিতার্টিতে ঈশ্বরভাবুকত। আছে ঠিকই, কিন্ত সে
ঈশ্বর পৃথিবীর সম্পর্ক ছাড়া অন্য কিছু নয়,_এর প্রমাণ কবিতাটির
সর্বত্র । বস্বতঃ মর্তাপবমতাই এই প্রবাসী” কবিতাটির কাব্যার্থ। “তুণে
পুলকিত যে মাটির ধরা, “ওরে মাটি তুই আমারে কি চাস+_ প্রভৃতির
মধ্যে তা স্পষ্ট। বৈষ্ণবীয় ভক্তি, তার্দের কপাবাদ যে নেই তার প্রমাণ
--“নাহি জানি ত্রাণ কেন বল কারে”-কথাগুলির মধ্যে পাই।
এইভাবে দেখানো যেতে পারে, রবীন্দ্রনাথ ম্বতন্তর পথের পথিক।
তিনি যদি ঈশ্বব অনুভব করেই থাকেন তে। সে ঈশ্বর এতাবৎ আমাদের
অপরিচিত। সে ঈশ্বর মর্্য ছাড়া এক অঙ্গুলিও উধ্র্বে নন। অনশ্ঠ
জৈবতার মধ্যে তার প্রকাশ দীপ্তিহীন ত]1 বলাই বাহুল্য । দৃশ্ত-গন্ধ-
গানের, মেহ-প্রেম-দেশাত্মবোধের, চিত্র-কবিতা-দর্শনের, জীবনসংগ্রামে
সামাজিক ঘন্বসংঘাতের মধ্যে ভাবময় যে সত্ব আভাসিত তাকেই তিনি:
চরম. ও পরম ব'লে মনে করেছেন। তাঁর অস্থভবে এই রসবোধেই
গৌড়ীয় বৈষ্বধর্ষের দার্শনিক প্রতিষ্ঠা ২২৯
মুক্তি; অন্ত্যাসেও নয়। ভজন-সাধনেও নয়। কুদ্ধত্বারে দেবালয়ের কোণে
কেন আছিস ওরে, এবং শশুনবি রে আয় কবির কাছে তরুর মুক্তি
ফুলের নাচে»_ প্রভৃতি অসংখ্য পঙ্ক্তি এ বিষয়ে বিখ্যাত।
এ ব্যাপারে পাঠকদের কাছে আর একটি প্রমাণের বিষয় উল্লেখ
করছি। সে প্রমাণ হৃদয়সাক্ষ্যেরঃ “সচেতসামচ্ছভবঃ” | বৈষ্ণব ভক্তিভাব
বিষয়ে ধাদ্দের কিছুমাত্র অনুভব আছে এবং ধার সেই সঙ্গে কাব্যরস্ও
অনভিজ্ঞ নন, তারা কবীরের দৌহায়, কি মীরা-হথরদাস-তুলপীদাসের
গীতে, অথব! জ্ঞানদাস-গোবিন্দদাস-নরোত্তম ঠাকুরের পর্দকীর্তমে, এমনকি,
হ্যামাসংগীতেও যে অধ্যাত্ুরাজ্যে নীত হবেন, রবীন্দ্রগীতিতে ত হবেন
কি? কাবাকে বাদ দিয়ে অন্যধবনের অধ্যাত্ম রবীন্দ্রনাথে মেই। তার
গীতাঞ্জলি প্রভৃতি মুখ্যভাবে কাব্যলক্ষণাক্রান্ত। অন্যপক্ষে, কৃষ্ণ-গৌরাঙ্গ-
বৃন্দাবন যেখানে নেই বৈষ্ণবও সেখানে নেই। রবীন্দ্রনাথ নিঃশেষে বরণীয়
কবি ও জীবন-ভাবুক। তাতেই তার অতুলশীয় মূল্য। অধ্যাত্ম-বিষয়ক
রসভাধুকতার উন্নতশ্রেণীর কবি ভাঁরতবর্ধে সহত্র। একটি রবীন্দ্রনাথ দিয়ে
তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি করায় রবীন্দ্রনাথের কোনো গৌরবই থাকে না যে!
এস" অর্থাৎ ভক্তিরস
পৃজ্যঘন্গরাগো ভক্ভিঃ। পুজাহ ব্যক্তিতে সম্রমবোধের অতিরিক্ত সাধাঁরণ
ষে প্রিয্নতা তাকেই বলে ভক্তি। কিন্তু যথার্থ ভক্তি এশ্বরবোধহীন।
মমত্ব বা প্রিয়তা এর ম্বরূপলক্ষণ। একে শ্ুদ্ধা, কেবলা» অহেতুকী প্রভৃতি
বিশেষণে বিশেষিত করা হয়ে থাকে। এই ভক্তির পরম উৎকর্ষ, যতদূর
মাছষের কল্পনা যেতে পাঁরে--তার সাক্ষ্য হলেন মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য,
তিনিই এর প্রদর্শক এবং প্রবর্তক। লোকশিক্ষার্থে তার দৈন্যোক্তি হ'ল
_মিম জন্মনি জন্মনি ভবতাদ্ ভক্তিরহৈতুকী ত্বি।, তার আবিভাবের
পূর্বেকার ভাগবত সম্প্রদায়ের বা তত্ববাদদীদের যে ভক্তি তা সমূচ্চের
প্রতি হীনমন্তের প্রসাদদভিক্ষামূলক স্বতিনতি। কৃষ্ণের বিশ্বরূপদর্শনে
(গীতা, ১১শ) অর্জনের যে মনোভাব তা এই ভক্তির পর্যায়ে পড়ে।
সখাসম্পর্কে আবদ্ধ যে কৃষ্ণের সঙ্গে তিনি এতকাল বিশ্রসম্তালাপ এবং
তর্কবিতর্ক ক'রে আসছিলেন, কৃষ্ণের করাল কালবূপ দর্শনে ক্ষণিকের জন্য
তা স্তব্ধ হয়ে পড়ল, ভয়ে বিশম্ময়ে অর্ভুম তার স্তব করতে লাগলেন এবং
সথ! মনে ক'রে যেসব সাহসিক উক্তি এতকাল তিনি ক'রে আসছিলেন,
তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলেন। এই উক্তি গৌড়ীয় বৈষ্বদের কাম্য নয়।
এমনকি পতিজ্ঞানে রুক্সিণী সত্যভামাও কৃষ্ণের প্রতি যে অন্্মাত্বক
প্রীতিভাব পোষণ করেন, তাও গৌড়ীয় অভিলধিত নয়। বুন্দাবনে উদ্ধব-
হ্দাম-যশোদা-গোপীবৃন্দ দাশ্য-সখ্য-বাৎসল্য-মধুর ভক্তিরতির যে রম্যতা
প্রদর্শন করেছিলেন তা-ই এই নবলোকধর্ষের পথিকের অভিল[ষত বস্ত।
অছৈতশ-্শ্রীবাস-রায়রামানন্দ-দামোদরম্বরূপ-রক্ষিত শ্রীচৈতন্ত এই ভক্তির ওকাশ-
মৃতি, সাহচর নিত্যানন্দ এর বিলাসমৃতি, সনাতন-রূপ-জীব, মুখ্যতঃ শ্রীরূপ,
্রস্থাদিতে এর উদ্গাতা এবং যাবতীয় বৈষুব মহাজন এর প্রমাতা।
( ভক্তি যে রসরূপে স্বাদ্িত হতে পারে এবং তার যে এত বৈচিত্র্য
আছে, ষোড়শ শতকের বৈষ্ণব মহাজনেরা তা দেখালেন। ভারতী
সংস্কৃতিতে একটি অভিনব অধ্যায় তারা সংযোজন করলেন। আর জাতি-
কুলনিবিশেষে মাহ্ষমাত্রেরই এই সম্পদ লাভের অধিকার ম্মরণে রেখে
এরা ষেসব বিধি-নিষ্মের প্রবর্তন করলেন তাতে ধর্মাচরণেও এর] নৃতন
প্রথ দেখালেন। লৌফিক অলংকারশান্ত্রে যে আট-ন'টি ভাব ও তার:
'রস' অথাৎ ভক্তিরস ২৩১
পরিণামরূপ রস ব্যাখ্যাত হয়েছে তার মধ্যে ভক্তির স্থান নেই। অলংকার-
শাস্ত্রের উদ্ভবের পূর্বে উপলব্ধ উপনিষদে অবশ্য ব্রক্মকে রস এবং আনন্দস্বরূপ
বলে কোথাও কোথাও অভিহিত করা হয়েছে (রসে বৈ সঃ» আনন্দ-
রূপমমৃতং যদ্ধিভাতি, “আনন্দং ব্রঙ্গেতি ব্জানাৎ”))] কিন্তু এর দ্বার! স্বাদের
চমৎকারিত1 জ্ঞাপিত হয়েছে কি না সন্দেহ, অন্ততঃ শংকর-রামানুজের
ব্যাখ্যা থেকে তা পাওয়া যায় না। শৈব কালিদাসের বা অভিনবগুপ্ডের
কোনে। বর্ণনা থেকেও বোঝ। যায় না যে শিবভক্তিকে রাগাত্মিক-ভাবে
তারা লক্ষ্য করেছেন। শিব-পার্বতীর প্রণয়কথার কালিদাস লৌকিক
প্রণয়রসেরই মহিমা দেখিয়েছেন, আর প্রত্যভিজ্ঞা দর্শনের পথিক অভিনবগুপ্ত
শাস্তরসকে সমর্থন করলেও এর পৃথকৃ রাগাত্মিকত। অনুভব করেননি।
ধ্বন্তালোকে উদ্ধৃত “যা ব্যাপারবতী”* প্রভৃতি শ্লোকে অন্তত সত্য ধামিক
ব্যক্তির প্রচলিত শান্তভাবের, রাগাত্মিকতাঁর নয়। তবু ভক্তি যে স্থখরূপে
ত্বাদদিত হতে পারে তার সাক্ষ্য বিরলদৃষ্ট ছু-চারজন ধামিকের অন্থভবে
নিশ্চয়ই ছিল। কবি জয়দেব তাঁর লীলাগীতের প্রারস্তে বলেছেন “যদি
হরিম্মরণে সরস মনো'। কৃষ্ণকর্ণামুতের মধুর ভক্তি পরিপূর্ণরসাত্মক হয়ে
উঠেছে শ্বীকার করতেই হবে। তারও পূর্বেকার আলবারদের গীত এবং
পরবর্তা মিথিলা-বাঙ্লার বিগ্যাপতি-চণ্তীদ্রাসের রাধারুষ্ণলীলাগীত ভক্তের
অন্তরে রসরূপে স্বাদিত হয়েছিল। হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বিচারে তার
স্বীকৃতি ছিল না। আলংকারিকেরা ধর্মীয় সাহিত্যকে ভিন্নরাজ্যের ব'লে
পরিহারই ক'রে এসেছিলেন ।
প্রাকৃত কাব্য এবং ধর্মের এই দুস্তর ব্যবধান গৌড়ীয় বৈষ্ঞবধর্মে
লঙ্ঘিত হয়েছে। লৌকিকত1 এবং ধর্মীতা এক হয়ে যায়নি ঠিকই, তবু
ছুয়েরই সীম! বিস্তৃত হয়েছে। ধর্ম স্বাদাত্মক হওয়ায় জনগণের অধিকারও
| *. থা ব্যাপাগবতী রদান্ রসরিতুং কাচিৎ কবীনাং নব।
ৃষটির্য। পরিনিষিতার্থবিষয়োন্সেষা চ বৈপশ্চিতী। -
তে দে অপ্যবলম্বয বিশ্বমখিলং নির্বয়ত্তে। বরং
শ্রান্ত। নৈব চ লকমন্ধিশযন তবদ্ভভিতুলাং হুখম্ ॥
অর্থাৎ, একদিকে কবিকুল-প্রদশিত অপূর্ব কাব্যরস, অন্তদ্িকে বিজ্ঞানী পঙিতবর্গের সুস্ব
বন্তবিচার---এ দুই পথ অবলম্বন ক'রে নিসর্গ পর্যবেক্ষণে আমর] পরিশ্রাত্ত হয়ে পড়লাম, তত্ব কী
তা আজ্তও অনুভব হ'ল না। অথচ ঈশ্বরে বিশ্বাস ও ভক্তি আরোপ ক'রে চিত্তে যে হুখ অনুভব
করেছি তার তুলন। নেই।
৩২ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
গিয়েছে বেড়ে । আলংকারিকেরা শব্দের গুণরীতিময় বক্রতা লক্ষ্য
করেছিলেন, মহাগ্রভূ হরি-কৃষ্-গোবিন্াদি নামেরও রসবত। প্রদর্শন করেছেন।
ফলে এই দীড়িয়েছে যে বৈষ্ণব পদাবলী প্রাকৃতরসিকদের দ্বারা আজ
কাব্য হিসেবেও গৃহীত হয়েছে । রাধাকুষ্ণ-প্রণয়লীলা, যা যূলতঃ অপ্রারত,
তা প্রণয়লীলা বলেই এবং স্থচারুভাবে নিমিত বলে অপরিসীম কাব্যরসেরও
অভিব্যঞ্ক হয়েছে । রবীন্দ্রনাথ, যিনি মত্যের অতিরিক্ত ধর্মজণৎ অন্ভব
করেন না, তিনি স্পষ্টতই কাব্যের সপক্ষত1 ক:রে ধর্মীয়তার বিরুদ্ধে অভিযোগ
এনেছেন £
হে বৈষ্ণব কবি,
কোথা তুমি পেয়েছিলে এই প্রেমচ্ছবিঃ
কোথা তুমি শিখেছিলে এই প্রেমগান
বিরহ-তাপিত | হেরি কাহার বয়ান
রাধিকার অশ্র-আখি পড়েছিল মনে ।
বিজন বসম্তরাতে মিলনশয়নে
কে তোমারে বেঁধেছিল ছুটি বাহুভোরে ।
আপনার হদ্দয়ের অগাধ সাগরে
রেখেছিল মগ্ন করি ! এত প্রেমকথা-_
রাধিকার চিত্রদীর্ণ তীব্র ব্যাকুলতা
চুরি করি লইয়াছ কার মুখ, কার
আখি হতে !
ষে ধর্ম চিরাচবিত ম্মরণ মনন শিদিধ্যাসনের পথ ত্যাগ ক'রে প্রণয়-বাৎসল্য,
পূর্যরাগ-মান এবং আনন্দাঙ্ভবের প্রকাশক নৃত্যগীত, অশ্র-পুলক-যুছ্রীর পথ
আবলগ্বন কমেছে সে ধর্ষ সম্পর্কে রসিকের এ প্রশ্ন স্বাভাবিক। ধর্ম এখানে
লৌকিক সম্পর্কের রমণীয়তা৷ আশ্রয় করেছে । এ ধর্ষের মূল শ্বূপেই রয়েছে
কাব্য, হৃদয়ভাবের স্চ্ধ্তা, এক আশ্চর্য হ্বপ্রসাধ। আশা-দুরাশা পাওয়া না-
পাওয়। মিলিয়ে এক অদ্ভুত বিশ্ব। অহেতুক গ্রীতির বা শ্তত্ধা ভক্তির আকর্ষণ
রোম্যান্টিক কাব্যলক্ষণাক্রাস্ত। এতে চিত্তের মুক্তি, মুক্তির আনন্দ এবং
আনন্দের বিচিত্র ও বিস্তৃত ভাবোচ্ছাস। ধর্ষয এক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ কাব্যের রূপ
পরিগ্রহ করেছে। কিন্তু প্রশ্ন এই যে, কাব্য কি ধর্মে উত্তীর্ণ হতে পারে ? এ
প্রশ্ন ধািকের। তাঁর উত্তর, বৈষব ভাবুকতায় ধর্ম কাব্যের পথ আশ্রয়
“রস অর্থাৎ ভক্তিরস ২৩৩
করেছে মাত্র, কাব্যের মধ্যে আত্মসমর্পণ করেনি । তাই কবির এ উচ্ৃসিত
অভিযোগ | ধর্ম কাব্যের কাছাকাছি এসেও মিলে যায়নি । সমধমিতা এবং
একত্ব এক কথ নয় । “রাধিকার চিত্রদীর্ণ তীব্র ব্যাকুলতা” মত্য থেকে সংগৃহীত
হলেও বিষয়টি মূলে অতিমত্ঠের | দেবত] নরব্ূপে বাস্তবে লীল। করছেন মাত্র,
এতে তার ইচ্ছার তৃপ্তি এবং ভক্ত মান্ষের প্রয়োজন । কিন্তু মানুষ দেবতা হতে
পারে না, তার মহিমা! যতই থাক। রবীন্দ্রনাথ নি:শেষে কবি এবং সেই
মানবসম্পর্ককে এবং কাব্যন্বরূপকে উচ্চতম সীমায় তুলে ধ'রে বলেছেন-__যারে
বলে ভালোবাসা; তারে বলে পূজা ।*
আসলে সাধারণ কাব্য এবং ধর্মান্ভবের কাব্যের মধ্যে পার্থক্য অন্ুধাবনের
তত্বটি ফুটেছে অচিস্ত্যভেদাভেদ দর্শনে, যাতে চিচ্ছত্তি এবং জীবশক্তির মধ্যে
পার্থক্য রাখ! হয়েছে। ভক্তির মূল হ'ল কৃষ্ণের হলাদিনী, যা ভন্মাচ্ছাঁদিত
অগ্নিকণার মত জীবের অভ্যন্তরে রয়েছে চিধংশের সঙ্গে সঙ্গেই । এই ভক্তির
স্থত্রেই জীব ঈশ্বরের চিচ্ছক্তির অন্তভতি হতে পারে। কিন্তু জীব আতুষ্টবশে
অজ্ঞান এবং জডকে আশ্রয় ক'রে বয়েছে। তাব জ্ঞানের জগৎ এবং প্রিয়জগৎ
হ'ল এই মায়িক জগৎ, সত্ব রজঃ তষোগুণের জগৎ | লৌকিক প্রেম, স্মেহ, জাতি-
প্রীতি ষত উচ্চন্তরেরই অর্থাৎ সাত্বিক হোক ন। কেন, তা খণ্ডিত সীমিভ।
কৃষ্ণরতি থেকে এসবের পার্থক্য মৌলিক । বল! যেতে পারে লৌকিক স্রেহপ্রেমে
রুষ্রতির আকার বা আভাস রয়েছে, স্বরূপ নেই। এজন্য চরিতামুতকার
লৌকিক প্রেমকে স্পষ্টতই কাম, কপট প্রেম, কৈতব প্রভৃতি ব'লে অভিহিত
করেছেন। “অকৈতব কৃষ্ণপ্রেম, যেন জ্গান্বনদ হেম, হেন প্রেম! নুলোকে না হয় ।”
“দূয়ে শ্দ্ধ প্রেমবন্ধ, কপট প্রেমের গন্ধ, সেহো৷ মোর কৃষ্ণ নাহি পায়।” জীবন্বভাব
স্বার্থময়, কষ্প্রেম নিঃশ্বার্থ স্বন্রাং শুদ্ধ। জন্ম-জন্নাস্তর পরিগ্রহ করতে করতে
ঘৌভাগ্য বশত: কোনে! জীবের চিতে ঘদি কৃষ্ণকথা শ্রবণে প্রবৃত্তি হয় এবং
অন্কূলে বধিত হয়ে সেই প্রবৃত্তি যদি রুচি, নিষ্ঠা, আসক্তিতে পরিণত হয়
তা"হলে লীলার শ্রবণ কীর্তন স্মরণ প্রভৃতি সে অনুশীলন করতে থাকে এবং এর
ফলে চিত্ত অনুকূল ও শুদ্ধ হ'লে কৃষ্ণরতির আবির্ভাব ঘটতে পারে ।
রুষ্তভক্তিপ্ন রতি এবং রসপরিণাম অচিস্ত্যভেদাভেদ-গত কৃষ্কন্বরূপশক্তি ও
জীবশক্ষির পার্থক্যের উপর প্রতিষ্িত। কুষ্ণভক্তি-ভাব অগ্রাকূত, অ-লৌকিক,
* বৈধাব ধানিকতা এবং রবীন্দ্র-কাবাকতার তুগনামূলক আলোচনা আরও বিস্তুতভাবে পূর্বেই
স্করা হয়েছে।
২৩৪ বৈষ্ব-রস-গ্রকাশ
এর রসপরিণামের তে। কথাই নাই । লৌকিক কাব্যশান্ত্রে ভাবমাত্রেই লৌকিক»
আর বিভাব এবং অহ্নভাব-সঞ্চারী মিশ্র বিভাবের সহায়তায় ভাবের যে আনন্দাত্মক
পরিণাম কেবল তাই অলৌকিক । আবার এ "অলৌকিক এবং কুষ্$রতির
অলৌকিক সমার্থকও নয়। কাব্যরসের অলৌকিক অগ্রাকৃত নয়, অ-লৌকিক
অর্থাৎ লৌকিক কর্য-কাঁরণ জন্ত-জনক প্রভৃতি সম্বন্ধবোধের অযোগ্য । বসাঁভি-
ব্যক্তির ব্যাপারগুলিকে লৌকিক প্রমাণের দ্বারা ধরা যায় না, অন্গভবেই তার
সত্যতার একমাত্র সাক্ষ্য, তাই অ-লৌকিক। আর বৈষ্বের অলৌকিক
হ'ল যা লৌকিক বা মায়িক জগতের নয়, অর্থাৎ আধ্যাত্মিক । শব্ধ
ছুটি এক হ'লেও এদের বাচকত্ব পৃথকৃ। বৈষ্ণব ভক্তির. রতি থেকে
রসপরিণাম এবং তার কারণ কার্ষসমূহ অর্থাৎ বিভাব অন্ুভাব (সাত্বিক
ভাব) এবং সঞ্চারী সবই অপ্রাকৃত বলে পরিগণিত হয়েছে। বৈষ্ণব আলং-
কারিক “ভাব থেকে রসপরিণামের মৌলিক স্ত্র যগ্যপি মেনে নিয়েছেন
এবং ত্ববাসনার স্বা্দবিশেষকেই রসাবস্থা বলে ধরে নিয়েছেন ( অভিনবগুপ্ত-
পার্দের অভিমত) তবু বিশেষ ক্ষেত্রে তার! প্রচলিত রসশাস্ত্রের বিভাগ
বৈচিত্র্যগুলি মেনে নেননি, পৃথক পথ অবলম্বন করেছেন এবং স্থানে স্থানে
উন্নতিবিধানেরও চেষ্টা করেছেন। এসব বিষয় আমর] পরে পর্যালোচন।
করছি।
“পুজ্যেঘস্থরাগো। ভক্তি এ হ'ল সাধারণ বর্ণন৷ মাত্র, লৌকিক মন্বন্ধের
ক্ষেত্রেই প্রায়শঃ প্রযোজা । কিন্তু 'সা পরাচুরক্তিরীশ্বরে' এইটি হ'ল ঈশ্বর সম্বন্ধে
অন্থরাগের, প্রিয়তাবোধের শ্রেষ্ঠতার কথা। এ হ'ল
রাগভক্কি, গৌড়ীয় বৈষবধর্মের মূল কথা। এই অঙ্রাগ
জ্ঞান-কর্ম-বিমিশ্র হলে এবং লৌকিক বাসনা বা] আধ্যাত্মিক অন্য কোনো
বাসনার সঙ্গে বিজড়িত হলে তা উত্তম ব'লে বৈষ্ণব মহাজন ত্বীকার করবেন
ন।। শ্রীরূপ লক্ষণ নির্ণয় করছেন £
অন্যাভিলষিতা শৃন্তং জ্ঞানকর্মাগ্যনাবৃতম্।
আনুকৃশ্যেন কৃষ্ণানুশীলনং ভক্তিরুতম। ॥
ভক্তির জন্যই ভক্তির আচরণ, ধর্মের জন্যই ধর্ম; সম্পদ বিদ্যা স্বর্গ এমন
কি মোক্ষের কামন৷ যুক্ত থাকলেও ভক্তি উত্তম হবে না। জ্ঞান এবং
কর্মের উপরে এই ভক্তির স্থান। কর্ম ও জ্ঞানকে ভক্তির সচিব বল!
হয়েছে। আবার, সংসারী জীবের সেই পর্যস্তই আহ্ষ্ঠানিক কর্ম আচরণীয়,
ভক্তি-বৈ চিত্রা
'রস' অর্থাৎ ভক্তিরস ২৩৫
যে পর্যস্ত না! চিত্তে ভক্তির আবির্ভাব হয়। পরবর্তা কালে ভক্তির পোষক
কর্ম মাত্র বিহিত। 'আন্ুকূল্যেন” শব্ধের অর্থ অন্থকূল রুচি এবং প্রবৃত্তির
ছারা । ' কায়-বাকৃ-চিত্ব কৃষ্ণ সমর্পণ ক'রে, জ্ঞান বৈরাগোর ভাব মনে
উদ্দিত হতে ন দ্বিয়ে। “অস্থশীলন+ অর্থে শ্রবণ, মননাদি এবং সেবাপরিচর্ষ] ।
এই উত্তম] ভক্তিই হন শুদ্ধা, অহৈতুকী, অব্যবহিত1। সালোক্য, সামীপ্য,
সাষ্টি প্রভৃতি মুক্তির কামন। যার মধ্যে থাকে না। এবিষয়ে শ্রীরূপ দৃঢ়
অভিমত ব্যক্ত ক'রে বলছেন £
ভূক্তিমুক্তিস্পৃহ। যাবৎ পিশাচী হৃদি বর্ততে।
তাবভ্তক্তিস্থথন্তাত্র কথমভ্যুদরয়ে। ভবেৎ ॥
সংসারে ভোগ এবং জীবনান্তে মুক্তি এ ছুই কামনা! পিশাচীর মত।
ভক্তিম্থখনিঝর পিশাচী শুষে নেয়। এই ভক্তি পাপক্স, অবিদ্ভাবিনাশক্ষম
এবং শুভদ, আর, সর্বোপরি জাতিকুল নিবিশেষে সমস্ত মানুষেরই এতে
সমান অধিকার । সমস্ত ধর্ষপথের মধ্যে শুদ্ধভক্কিমার্গের শ্রেষ্ঠতা সম্বন্ধে
শ্রীমদ্ভাগবতের একাদশ অধ্যায়ে কৃষ্ণমুখে বল! হয়েছে £
ন সাধয়তি মাং যোগে। ন সাংখ্যং ধর্ম উদ্ধব।
ন স্বাধ্যায়স্ঞপন্ত্যাগে! যথ। ভক্তির্মোজিত] ॥
শ্রীরূপ তার ভক্তিরসামৃতপিন্ধৃতে শুদ্ধাভক্তিকে সাধন, ভাব এবং প্রেম
এই তিনটি প্রাথমিক ভাগে বিভক্ত করেছেন। এ তিনের প্রত্যেকটি,
আবার বৈধী এবং রাগাঙ্গগা এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত ।
বৈধী ভক্তি হুল শাস্ত্রনির্দেশ এবং প্রবৃত্তির ফলে অন্্রশীলিত মার্গ।
যেমন, পদ্মপুরাণের নির্দেশ ন্মর্তব্যঃ সততং বিষ্ণুবিম্মর্তব্যো ন জাতুচিৎ্*
অথবা] গীতার পরামর্শ “সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ' গ্রত্ৃতি
শান্্বাক্যে উৎসাহিত হয়ে যদ্দি কোনে। ব্যক্তি ভক্তির আশয় নেন এবং
এরকম শান্্বাক্যে যদি তার প্রবৃত্তি থাকে তাহলে তিনি শাস্ত্রের নির্দেশ
অন্ুস্ণারেই সাধনায় রত হন | এরকম ভক্ত তার মাধনপথে
আপনা থেকেই ভাব ও প্রেমের উর্দয় অন্ুভব করেন।
ভাব ও প্রেমের অস্তিত্ব পূর্বে ছিলই না, সাধনার দ্বার! তা পায়!
গেল এমন পরিস্থিতি ভক্তিশান্ত্রকার শ্বীকার করেন না, তার্দের অভিমত এই
ষে ভাব ও প্রেম নিত্যসিদ্ধ বস্ত। কেবল ভগবানের চিচ্ছন্কির অধিকারের
মধ্যেই নয়, জীবশক্তির মধ্যেও ভা আংশিকভাবে রয়েছে, অবিগ্যা এবং
বৈধী ও রাগানুগ।
২৩৬ বৈষব-রস-প্রকাশ
জড়ে সমাচ্ছাদিত রয়েছে এইমাত্র । হলাদিনীর সার ভাব ও প্রেমকে
সাধনার দ্বারা উৎপাগ্চ মনে করলে এর নিতাতার হানি ঘটে, অপ্রাকৃত
না হয়ে ত1 লৌকিক বিষয়ের মত প্রাপ্থি-অপ্রাপ্তির পর্যায়ে পড়ে। এতে
কৃত্রিমত। দোষ আরোপিত হয়। আসলে ভাব ও প্রেমের নির্মাণ হয়
না, কোনো সাধনও নেই। মাচুষের হৃদয়ে এর জাগরণের নামই সাধন ।
এ বিষয়ে “সিন্ু'তে বল। হয়েছে ঃ
নিত্যসিদ্ধন্ত ভাবস্ত প্রাকট্যং হৃদি সাধ্যতা।
'চরিতামত এর অন্সরণে বলছেন £
নিত্যসিদ্ধ কৃষ্ণপ্রেম সাধ্য কতু নয়।
শ্রবণাদ্দি-শুদ্ধ চিত্তে করয়ে উদয় ॥
শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, পাদসেবন, অর্চন, বন্দন, দ্বাস্ত প্রভৃতি এবং আরও বহু
বিধিনিিষ্ট বৈষ্বাচারই হ'ল সাধনভক্তির অঙ্গ | রাগান্গগা ভক্তিরও এসব
সাধন রয়েছে । 'রাগান্তগা* হ'ল বৃন্দাবনের গোপীবৃন্দ, নন্দ-যশোদা, শ্রীদাম-স্দাম,
উদ্ধবার্দির অন্ুগামী যে ভক্তি। 'রাগাত্মিকাঁর অনুগত ব'লে রাগানুগ!।
গোপীদ্দের কাছে কৃষ্ণ কাম বা প্রেমের বশীভূত । অন্থাত্র পুত্র, সখ।, "প্রতু প্রভৃতি
সন্বন্ধের বশীভূত। এজন্য রাগাত্মিক প্রীতির বৃন্দাবনে ছুই রূপ । মানুষও নিজ
প্রবৃত্তি ও রুচি অনুযায়ী এ ছুয়ের কোনো একট। ভাব অনুসরণ ক'রে সাধনে
রত হতে পারে। রাগাত্মিকে ঈশ্বরে উশ্বর্বোধ বা পৃজনীয়তাবোধ নেই-_
মোর পুত্র, মোর সখ। মোর প্রাণপতি।
এইভাবে করে যেই মোরে শুদ্ধ রতি ॥
আপনারে বড় মানে, আমারে সম হীন ।
সেই ভাবে হই আমি তাহার অধীন ॥
এবং ব্রজের নির্মল রাগ শুনি ভক্তগণ।
রাগমার্গে ভজে যেছে ছাড়ি ধর্ম কর্ম॥
আর রাগাত্মিক-রাগান্থ্গ৷ ভক্তিতে কৃষ্ণসেবার অকারণ লোভই হ'ল বড় কথ।।
শান্ব এবং যুক্তিতর্ক এখানে মূল্যহীন । অথচ বৈধমার্গের ভক্ত শাস্্রার্দি অবহেল।
করেন না। বৈধী ভক্তি অনুসরণ করতে করতে যখন ভাবের উদয় ঘটে তখন
ভক্ত রা'গান্গগ-মার্গের অধিকারী হয়ে পড়েন। শাস্ত্রার্দি নির্দেশ মানার গ্রয়োজন
তখন আর থাকে না। তবু তিনি যেকর্মে লিপ্ত থাকেন নে হ'ল কৃঙ্চসেবার
প্রয়োজনীয় কর্ম। বৈদিকলৌকিক কর্ষ নয়। আর শ্রবণ কীর্তনাদি ঘ৷
“রস” আর্থাৎ ভক্তিরস ২৩৭
বৈধীতে বিহিত তা৷ রাগান্থগারও অন্ধ । এইভাবে ভক্ত কৃষ্ণাসক্তি বশতই
অনায়াসে এ সবের প্রতি আকৃষ্ট হন। শ্রীরূপ রাগের লক্ষণ স্থাপনে বলেছেন,
ইঞ্টে স্বারসিকী পরমাবিষ্টতা” | লালসাই যার আবির্ভাবের একমাত্র কারণ,
অন্য কোনে। কারণ বা উদ্দেশ্য যার যূলে নেই। এই আশ্চর্য প্রীতি গুঁপপত্য-
ভাবাপন্ন গোপীদের। ভিন্নভাবে যশোদাদিরও | তাঁর অন্গগামী মত্যবাসীদের
যে ভজনপদ্ধতি তা-ই রাগানুগ1 | রাগানুগভাবেও ভজন-সাধন প্রয়োজন । সেই-
হেতু শ্রবণ-কীর্তনাদি রাগান্ছগারও অঙ্গ ।
এরকম রাগ ভক্তের চিত্তে তখনও আবিভূতি হয়নি, অথচ কৃষ্ণকথ প্রভৃতিতে
শ্রদ্ধা জন্মেছে, রচি এসং নিষ্ঠাও দেখ! দিয়েছে, তিনি সাধুসঙ্গ করতে আরম্ত
করেছেন, এমন ভক্তির পথিকই বৈধী ভজনের অধিকারী । এরকম ভক্তির
অধিকারীর আবার তিনটি শ্রেণী বিভাগ কর! হয়েছে! ধার শাস্ত্রজ্ঞানবশে
চিত্তে দৃঢ়তা এসেছে তিনি উত্তম, ধার শাস্তজ্ঞান নেই অথচ শ্রদ্ধা আছে তিনি
মধ্যম। আর ধার স্বপ্নশ্রদ্ধী তিনি কনিঠ। গীতায় অবশ্ঠ ভক্তের চারটি শ্রেণীর
উল্লেখ কর। হয়েছে £
চতুবিধা ভজন্তে মাং জনা: স্থক্কৃতিনোহ্ুন ।
আর্তো জিজ্ঞান্থরর্৫থার্ধা জ্ঞানী চ ভরতর্ধভ ॥
এবং এর মধ্যে জ্ঞানী ভক্তকেই শ্রেঃ স্থান দ্েওয়! হয়েছে । শ্রীবূপের মতে এর
মধ্যে যে-কোনে। শ্রেণীর মানুষই ঈশ্বরকুপায় উত্তম ভক্তরূপে সাধনে আত্ম-
নিয়োগ করতে পারেন ।
হরিভক্তিবিলাস' গ্রন্থে সাধনভক্তির পথে প্রবেশ করার প্রপ্ততি হিসেবে
গুরু-আশ্রয়, দীক্ষা, গুরুসেব1*, ধর্ষজিজ্ঞাসা, একাদশী জন্মাষ্টমী প্রভৃতির পালন,
ভগবছিমুখ ব্যক্তির সঙ্গ ত্যাগ, শান্্রার্থ বিষয়ে বাদবিতগ্ডা বর্জন, অন্যদ্দেবতায়
অনবজ্ঞ!, কোনে প্রাণীকে উদ্বেগ ন। দেওয়। প্রভৃতি প্রধান কয়েকটি মানসিক
এবং অন্ত কয়েকটি কায়িক ও বাচিক বিধি অনুসরণের উপদেশ দেওয়। হয়েছে।
এর মধ্যে কতকগুলি গীতোক্ত ভক্তিযোগের ভক্ত-চারিত্র্যের সঙ্গে তুলনীয়
(“অছেষ্টা সর্বভৃতানাং" ইত্যাদি ১২শ অ:)। অন্যগুলি সিদ্ধ বৈষ্ণব মহাজনদের
উপলব্ধি অনুসারে সংযোজিত । যেমন বৈষ্বচিহ্ন ধারণ, নির্মাল্য ধারণ, বিগ্রহ,
স্পস্পপীশসিশিল
* ভারতের অন্তান্য ধর্ম-সন্প্রদ্দার়েঃ মত বৈষব সম্প্রধায়েও গুরুর স্থান খুব উচ্চে। দীক্ষাণ্ডর
এৰং শিক্ষারণ্তরু উভয়েরই প্রস্তাব এই জন্ত ঘে অন্তর্ধযামী রূপে ও গুরুরপে ঈশ্বরই মন্ত্র এবং ধর্ম শক্ষা,
দেন। ““গুরুরূপে কৃঝ কূপ করেন সক্তগণে।'?
২৩৮ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
প্রদক্ষিণ, সম্মুখে নৃত্য, দণ্ডব্, অর্চন, পাছ্য-নৈবেত্যের স্বাদ গ্রহণ, তুলসী সেবন,
সেবাপরাধ নামাপরাঁধ বর্জন, শরণাপত্তি প্রভৃতি সব মিলিয়ে সংখ্যায় চৌষটি।
এগুলি ষে প্রসিদ্ধ পুরাণাদি থেকে সংগৃহীত সে বিষয়ে “সিদ্ধু' বহু প্রমাণ উদ্ধার
করেছেন । চরিতামুতে সনাতনাশক্ষায় (মধ্য, দ্বাবিংশ) সাধনভক্তির
অনুষ্ঠান বিষয়ে এসব কথ! বিস্তারিতভাবে বিবৃত হয়েছে ।
শ্রীপাদ্দ জীবগোম্বামী ভক্তিকে মূলত: তিনভাগে বিভক্ত করতে চেয়েছেন
_আরোপসিদ্ধা, সঙ্গসিদ্ধা ও স্বরূপসিদ্ধা। গীতায় 'যৎকরোষি যদশ্লাসি প্রভৃতি
এবং “সর্বকর্ষফলত্াগং ততঃ কুরু* প্রভৃতি শ্নোকে কৃষ্ণে কর্মার্পণের যে কথা
বল? হয়েছে, যদুসরণে রায় রামানন্দ “কষে কর্মা্পণ সাধ্যসার* এই প্রাথমিক
অভিম্নত প্রকাশ করেছিলেন, তাকেই 'আরোপসিদ্ধা” ভক্তি বল! হয়েছে।
“সঙ্গসিদ্ধা” হ'ল কর্মজ্ঞানমিশ্রা। ভগবংপরিকরার্দির সঙ্গ থেকে উদ্ভূত] | "ম্বরূপ-
সিছ্ধ।* ভক্তিতে জ্ঞানকর্মংযোগের কোনে! আবশ্তকত1 নেই | এই হ*ল প্রত্যক্ষ
ভক্তি এবং 'প্রায়শই অকৈতব। বৈধী এবং রাগানুগা হিসেবে এই তিন ভক্তি
প্রসারিত হয়ে থাকে । এখন বৈধী ভক্তির শ্রেষ্ঠ সাধনাক্গগুলি বিবেচিত
হচ্ছে। শ্রীমদ্ভাগবতে নবলক্ষণ) ভক্তির বিষয় বল! হয়েছে £
শ্রবণং কীর্তনং বিষ্ঞোঃ ম্মরণং পাদসেবনমূ।
অর্চনং বন্দনং দাশ্যং সখ্যমাত্মনিবেদনম্ ॥
এর সাহায্যেই কালে কৃষ্ণ ভাব ও প্রেম উদ্দিত হয়ে থাকে । এগুলির
একটি মাত্র অঙ্গ সাধন করলেও প্রেমার অধিকারী হওয়া যায়। রাগাহ্থগার
পথিক এবং সিদ্ধ ভক্তেরাও আত্মার আনন্দের জন্য শ্রবণ-কীত্তনের অভ্যাস
করেন।
(১) শ্রবণ_-সাধুসঙ্গের ফলে ধার শ্রদ্ধা উদ্গত হয়েছে এব" যিনি
শরণাপত্তি বরণ করেছেন, আবাব যিনি গুরুপদাশ্রয়ও গ্রহণ
করেছেন এমন সব ভক্ত কৃষ্ণকথ! শ্রবণার্দির দ্বারা ভক্তির আচরণ
করবেন। শ্রবণ বলতে নাম, রূপ, গুণ এবং লীলার শ্রবণ।
শ্রীমদ্ভাগবত, রুষ্ণকর্ণামৃত, মহাঁজন-পদাঁবলী এবং গোস্বামীদের
রচিত গ্রন্থের পাঠ ও শ্রবণ এই পর্যায়ে পড়ে।
(২) কীর্তন-_-“নামলীলাগুণাদীনামুচ্চৈর্ভাষা তু কীর্তনম | নাম ও
লীলাদির রম্য স্বরসংযোগে গান করাকেই বিশেষভাবে কীর্তন
বলে। বনুব্যক্তির সম্মিলিত এবং নৃত্যবাগ্ঠার্দি সংযুক্ত এ গীতকে
'রস+ অর্থাৎ ভক্তিরস ২৩৯
স-কীর্তন বলা চলে। সাধারণভাবে কীর্তনের রীতি ধর্মসম্প্রদায়-
বিশেষে পূর্ব প্রচলিত হলেও মহাপ্রভূই এ রীতিকে বিশেষভাবে
সাধনের অলীভৃত ক'রে তোলেন। তাই বস্ততঃ তিনিই কীর্তন
গান এবং সংকীর্তনের প্রবর্তক। নীলাচলে অবস্থান কালে স্বীয়
ভাবের ' তৃপ্তিবিধানের জন্য তিনি-_
চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, রায়ের নাটকগীতি,
কর্ণামৃত, শ্রীগীতগোবিন্দ।
স্বরূপ রামানন্দ সনে মহাপ্রভু রান্রিদিনে
গায় শুনে পরম আনন্দ ॥
কীর্তনের মুখ্য ছুই ভাগ, নামকীর্তন এবং লীলাকীর্ভন। এ ছাড়া
রূপগুণার্দির কীর্তনও ভিন্নশ্রেণীভূক্ত হতে পারে। নামকীর্তনের
ফল মহাপ্রভু নিজেই লিপিবদ্ধ করেছেন--“চেতোদর্পণমার্জনং,»
প্রভৃতি শ্লোকে। কলিযুগে নামকীর্তনের শ্রেষ্ঠতা মহাপ্রভু ঘোষণ।
করেছেন এবং নিবিচ।রে সমস্ত মান্ষকে এর অধিকার দিয়ে
গেছেন।
(১) স্মরণ পূর্বাহ্নভূত বিষয়ের অন্ুভবকে স্মরণ বলে। কৃষ্ণের ব্ূপ
গুণ চেষ্টা প্রভৃতির মানস-অনুভব | ধ্যান, ধারণ], সমাধি
প্রভৃতি এই পর্যায়ে পড়ে।
(৪) পাদসেবন- পরিচর্ধা। কৃষ্ণবিগ্রহের এবং তুলসীর | ব্যঞ্জনায় কুষণ-
পরিকরদ্ের তথা গৌর-পরিকরদের নেবাও এই পধায়ে পড়ে।
সপরিকর মহাপ্রতুর গুগ্চাগৃহমার্জন পরিচর্যার শ্রেষ্ঠ দৃষ্টাস্ত।
(৫) অর্চন-__পুজা অর্থাৎ মন্ত্রের দ্বার] উপচার সমর্পণ । দীক্ষাগ্রহণাস্তর
গৃহস্থের পক্ষে অবলম্বনীয়। হরিভক্তিবিলাস মতে অর্চন কর্তব্য ।
ভক্ত নিষ্ষিঞ্ন হয়ে যদি অর্চনাভিলাষী হণ তাহলে তিনি শুধু
জল তুলসীর ছারাই অর্চন করতে পারেন।
স্মরণীয়__
তুলসীদলযাত্রেণ জলস্ চুলুকেন বা1।
বিক্রীণীতে স্বমাত্মানং ভক্তেভ্যে| ভক্তবৎসূলঃ ॥
পুরুষ নিবিশেষে সকল বর্ণের লোকেরই কৃষ্ণার্চনে অধিকার আছে।
(৬) বন্দন_ কৃষ্ণের মহিম1 ও বিবিধগ্ুণ শ্রবণানস্তর তার ত্তব, নমস্কারার্দি |
২৪০
(৭)
(৮)
(৯)
বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
দাশ্য-দধাস-অভিমান। এ দাশ্য সাধারণ দ্াসভাবে ভজন মাত্র,
রাগাঙ্গ! প্রেমভক্তির দাশ্যরতি নয়।
সথ্য- বিশ্বস্ততা! ও মিত্রবৃত্তি। বিধিমার্গে সখ্যভাবন! একরকম,
আবার রাগাহ্ছগ! মার্গে ভিন্নরকম। বল যেতে পারে বিধিমার্গে
সখ্য আরোপিত, রাগান্ছুগায় অনায়াসে আগত । বিধিমার্গে রতি
বা ভাব নেই, তাই সখ্যের আভাস মান্র বর্তমান ।
আত্মনিবেদন-_ জ্ঞান, কর্ম, এমন কি কায়মনোবাক্যের সমর্পণ,
আত্মবিক্রয়। যেমন, বিদ্যাপতি উল্লিখিত-_
দেই তুলসী তিল দেহ সমপিলু'
দয়া! জন্থ ছোড়বি মোয় |
রাগাস্থ্গায় আত্মসমর্পণের দৃষ্টান্ত হ'ল চত্ডীদাস লিখিত__
সব সমপিয়। একমন হৈয়।
নিশ্চয় হইলু দাসী ॥
শ্রীল নরোত্তম ঠাকুর রাগানুগমার্গের মঞ্জরীভাবের সাধক হয়েও সাধন-
ভক্তির অঙ্গসমূহ কিভাবে প্রার্থনা করেছেন দেখা যাক £
আর কি এমন দশ হব।
এ ভব সংসার তেজি পরম আনন্দে মজি
আর কবে ব্রজভূমে যাব ॥
সুখময় বৃন্দাবন কবে গাব দরশন
সে ধূলি লাগিবে কবে গায় ।
প্রেমে গদগদ হৈয়া রাধাকৃষ্ণ নাম লৈয়।
কান্দিয়া বেড়াইব উচ্চ রায় ॥
নিভৃত নিকু্ে যায়্যা অষ্টাঙ্গ গ্রণাম হেয়!
ডাকিব হা' প্রাণনাথ বলি।
কবে যমুনার তীরে পরশ করব নীরে
কবে খাব করপুটে তুলি ॥
আর কি এমন হব শ্ররাসমণ্ডলে যাব
কবে গড়াগড়ি দিব তায়।
বংশীবট ছায়! পায়া? পরম আনন্দ হৈয়া
পড়িয়। রহিব কৰে তায় ॥
“রস; অর্থাৎ ভক্তিরস ২৪১
কবে গোবর্ধন গিরি দেখিব নয়ান ভরি
রাধাকুণ্ডে কবে হব বাস।
ভ্রমিতে ভ্রমিতে কবে এ দেহ পঙন হবে
করে আশ নরোত্বম দাস ॥
বৈষ্ণবগণ জ্ঞান বৈরাগ্যকে কোনোক্রমেই ভক্তির সাধন ব'লে অঙ্গীকার করেন
না। সাধুসঙ্গ, প্রবৃত্তি, ফচি, নিষ্ঠা, আসক্তি শ্রবণ-কীতনাদর মধ্য দিয়ে, ভক্তি-
ভাবোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে, জ্ঞান-বৈরাগ্য আপনা থেকেই ভক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে
পড়ে এই তাদের প্রত্যয় এবং অভিজ্ঞতা । স্থতরাং জ্ঞানাদি হ'ল ভক্তির
পরিবার, অন্থচর, কিংকর, সর্বতোভাবে অঙ্ছগামী । এখন শ্ররূপ-নিদ্দি্ট ভাব-
তদ্ভির বিন্যাস অনুসরণ কর! যাক ।
লৌকিক রসবাদী আলংকারিকের। যে অর্থে ভাব” শব্ধ প্রয়োগ করেছেন
বৈষ্ণবশান্ত্কারও সেই অর্থেই গ্রহণ করেছেন, যদিও লৌকিকতার সঙ্গে
অলৌকিকতার মৌলিক ভিত্তিভূমির পার্থক্য থেকেই
গেছে। লৌকিক ভাব (91001101 ) মায়িকরৃত্তিগত;
ভক্তিভাব হলাদিনীর অংশ। এই ভাব “রতির* পর্যায়শবধ | স্থায়ী এবং সঞ্চারী
ভাবের দুই শ্রেণী পূর্বেকার আলংকারিকদের মতই এথানে স্বীকৃত । এই ভাবরতির
ক্রমোতৎকর্ষের কর্নন। কিন্তু বৈষ্বদের ম্বকীয়। যেমন, রতি (বা ভাব ) বধিত
হয়ে ক্রমে প্রেম, নেহ, মান, প্রণয়, রাঁগ, অন্থরাগ এবং পরিণামে ভাব ও মহাভাব।
এ উৎকর্ষ রসপরিণামের নয়, ভাবেরই প্রৌঢিতর এবং প্রৌঢিতম স্তরবিশেষের ।
অর্থাৎ প্রেমনেহাদিও স্থায়ীভাবই । ভক্তিরতিতে ( ব। ভাবে ) ভক্তিস্থায়ীভাবের
অন্কুরোদ্গম বল! যেতে পারে । চরিতামৃত্তকার তুলন। দ্রিয়ে বলছেন :
সাধনভত্তি হইতে হয় রৃতির উদ্দয়।
রতি গাঢ় হলে তার প্রেম নাম কয় ॥
প্রেম বৃদ্ধিক্রমে ন্েহ মান প্রণয় ।
রাগ অঙ্গরাগ ভাব মহাভাব হয় ॥
যৈছে বীজ ইক্ষুরস গুড় খগ্ডসার।
শর্কর] সিতামিশ্রি উত্তম মিশ্রি আর |
এই সব কৃষ্ণভক্তিরসের স্থায়িভাব।
দেখা যায়, রতির পর্যায় শব্ধ “ভাব” হ'ল সামান্য ব। সাধারণ ভাব (9:001017) )-
বাচক। আর পরিপাকাবস্থার ভাব” তারই উৎকষ। “ভাব* শব্দের এই প্রয়োগ-
১৩
ভাবভদ্ি
২৪২ বৈষ্ঞব-রস-প্রকাশ
বিভ্রাট লক্ষ্য ক'রে বোধ হয় চরিতাম্বতকার স্থায়ীভাবের প্রথম সাধারণ অবস্থাকে
আর "ভাব? না বলে “রতি*ই বলেছেন। “প্রেম” এ রতিরই প্রগাঢ অবস্থা ।
ভাবভক্কির লক্ষণ নির্ণয়ে শ্রী্প বলছেন £
শুদ্ধসত্ববিশেষাত্ম। প্রেমস্্যাংশুসাম্যভাক্।
রুচিভিশ্চিত্তমাস্থণ্যকৃর্দসৌ ভাব উচ্যতে ॥
শুদ্ধসত্ব অর্থাৎ ভগবানের স্বরূপশক্তির অন্তর্গত হলাদিনীর বৃত্তি। এই শুদ্ধসত্ব
হ'ল যার মূল, য! প্রেমরূপ সর্ষের কিরণতুল্য, আর ভগবৎসঙ্গলাভের অভিলাষে
ষ! চিত্তকে মহ্থণ বা ক্িগ্ধ ক'রে তোলে তা-ই হ'ল ভাব। অর্থাৎ পরবর্তী
প্রেমের প্রাথমিক অবস্থাই হ'ল ভাব। এতে অশ্রপুলকাদি সাত্বিক গুকাশ
্বল্পমাত্রায় লক্ষিত হর । এই কৃষ্ণরতির উদ্ভব ভক্তের চিত্তে ঘটে ছুটি উপায়ে,
এক সাধনে অভিনিবেশ, ছুই কৃষ্ণকুপা। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি অর্থাৎ সাধনপর্যায়
ব্যতীত কৃষ্কক্ুপায় আপন। থেকেই ভক্তির উদ্গম ছূর্ণভ বললেই চলে। নারদ,
শুক, প্রহলাদ প্রভৃতি কতিপয় মহাপুরুষই এই ভক্তির অধিকার পেয়েছিলেন ।
সাধন-অভিনিবেশ থেকে উৎপন্ন ভাবভক্তির কথা শ্রীমদ্ভাগবতে কপিলদেবের
মুখে এইভাবে বল! হয়েছে £
গতাং প্রসঙ্গান্মম বীর্যসংবিদঃ ভবস্তি হৃৎকর্ণরসায়না: কথাঃ ।
তজ্ঞোষণাদাশ্বপবর্গবর্ম্মনি শ্রদ্ধা রতির্ভক্তিরচুক্রমিস্যতি |
এই “ভাব” যেমন বৈধী সাধন থেকে, তেমনি রাগান্থগা৷ সাধন থেকেও
আসতে পারে। ভাবোদ্গম হ'লে কী কী অনুভাবের দ্বারা অর্থাৎ কার্য
বা বহিঃপ্রকাশের দ্বারা তা বোঝা যায়? এজন্য বলা হয়েছে_ ক্ষাস্তি
অর্থাৎ অকিক্ষু্কতা বা ধীরতা, বিরাগ, মানশৃন্ততা, আশাবদ্ধ:, সমুৎকঠা,
নামগানে সর্বদ রুচি, গুণবর্ণনে আসক্তি, বৃন্দাবনাদিতে ( নীলাচল, নবদীপেও )
প্রীতি প্রভৃতি । শ্রীরপ এই কৃষ্ণরতি এবং মোক্ষকামী ব্যক্তিদের রতি
(যা মাত্র রতাভ্যাঁস ), এ ছয়ের পার্থক্য স্মরণে রাখতে বলেছেন। এ ছাড়া
ভক্তিহীন ব্যক্তির চিত্তেও কচিৎ শ্রবণ-কীর্তন-তীর্থগমনের সংযোগে সাময়িক-
ভাবে রতির আভাস ব৷ ছায়া আসতে পারে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
প্রেমভক্তির লক্ষণে বল হয়েছে £
সম্যঙ, মহ্ণিতস্বান্তে! মমত্বাতিশয়াঙ্কিতঃ।
ভাবঃ ম এব সান্দ্রাত্থা বুধৈঃ প্রেম নিগগ্যতে ॥
স্ব চিত্তকে সম্যকৃভাবে মহ্ছণ করে এবং যাতে মমত্বের আতিশয্য থাকে
প্রেমতাক্ত
“রস? অর্থাৎ ভক্তিরস ২৪৩
এমন গাঢ়তাপ্রাপ্ত ভাবকেই প্রেম বলে। এই প্রেমাও ভাবোৎপন্ন আবার
কৃষ্ণকূপা থেকে উৎপন্ন হতে পারে এবং বৈধী-সাধন ও রাগান্বগসাধন-
নির্ভর হতে পারে। পার্মক্য এই যে, বৈধী সাধনের মধ্যে কৃষ্ণের
মহিমাজ্ঞান এবং রাগান্থগে মাধুরষজ্ঞান অস্তলীন থাকে। সাধনভক্কি
অবলম্বনেও ভক্তচিত্তে যে প্রেমের আবির্ভাব ঘটে তা৷ স্বতঃ আবির্তুত,
সাধনভক্তির সঙ্গে তার জন্য-জনক সম্বন্ধ নেই। বৈষ্বর্দের এই অনুভবের
বিষয় পূর্বেই বলা হয়েছে। এই বিবয়টি ম্মরণে রেখে প্রেমভক্তির উদয়ের
পূর্বেকার সাধনপদ্ধতির সংক্ষিপ্ত বিবৃতি পুনশ্চ দেওয়া যেতে পারে :
আদৌ শ্রদ্ধা তর্তঃ সাধুসঙ্গোইথ ভজনক্রিয়]।
ততোহনর্থনিবৃত্তিঃ স্তাৎ ততো নিষ্ঠ। রুচিস্ততঃ |
অখাসক্তিস্ততো৷ ভাবস্ততঃ প্রেমাত্যুদর্চতি ॥
এই প্রেমের মহাভাব পর্বস্ত প্রবৃদ্ধির বিষয়গুলি পরে স্থায়ীভাব পর্যালোচনে
বিবৃত হচ্ছে ।
“ভক্তিরসামৃতসিন্ধু'তে ভক্তিরসের উপাদান এবং অঙ্গগুনির সাধারণ
বিন্তাস দেওয়। হয়েছে এবং উজ্জ্রলনীলমণিতে ত। বিশেষভাবে, অলংকার-
শাস্ত্রের প্রথায় বিবেচিত হয়েছে এবং সেখানে উজ্জ্বল বা মধুর রসের বৈচিন্র্যই
আলোচিত হয়েছে । বিভাবান্থভাব-ব্যভিচারীর সংযোগে রসনিষ্পত্তির যে
নির্ণয় লৌকিকশাস্ত্রের পূর্বাচার্ষেরা৷ ক'রে গেছেন বৈষ্ণবাল-কারিক তারই স্ষুত্
অন্ুনরণ করেছেন। অথচ কিছু কিছু বিশেষকেও ন্বান মধ্যে সমন্বিত
করেছেন। ভক্তির স্থায়ীভাবত্ব তথা রসের গৌণ-মুখ্য বিভাগ বৈষ্বন্দের
অলৌকিকী কৃষ্ণভক্তির অন্থসরণে, বিশ্তাবাদির মধ্যে সান্বিকভাবের অন্গ-
প্রবেশনও মেইমত। ভরতার্দি পরিলক্ষিত সাত্বিক ভাবের পূর্ণমহিম।
গৌড়ীয় বৈষ্ণবের। প্রত্যক্ষ করেছিলেন মহাপ্রভুর দিব্য বিকারগুলির মধ্যে।
এছাড়া আলম্বন, উদ্দীপন প্রভৃতির মধ্য নৃতনতর "৪ সুক্মতর বৈচিত্র্যের
সমাবেশও বৈষ্ণব মহাঁজনের নিজন্ব । কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্য ব্যাপার
হ*ল মধুররস বিবেচনে পরকীয়া রতির উৎকর্ষ নির্ধারণ। বন্তত পরকীয়াই
বৈষ্ণবদ্দের শান্কের যাবতীয় বৈতিত্র্যকে নিয়ন্ত্রিত করেছে এমন বলা যায়।
এইভাবে তারা যে রসশান্থ নির্যাণ করেছেন ত] নিশ্চিতভাবে ভারতীয়
রম-সমীক্ষাকে সমৃ্ধ ও বিস্তৃততব করেছে। এইসব বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং অভিনব্
২৪৪ বৈষ্ব-রস-গ্রকাঁশ
সুল্্ মনম্তত্বে সমৃদ্ধ পর্যবেক্ষণের জন্য অবশ্য মহাপ্রভু-প্রদশিত নব রসধর্মই
হেত । শ্রীপাদ রূপগোষ্বামীই এর রচনায় ও গুচাবে পথিরুৎ এবং অদ্ভুত-
কর্মীও। তাকে পুনঃপুন নমস্কার ক'রে যথাসাধ্য এবং দ্রুতগতিতে তার
উচ্ছিষ্ট চর্বণ করতে প্রয়াস করছি।
অবিরুদ্ধ হোক আর বিরুদ্ধ হোক, অন্য যে-কোনেো। ভাব যে-ভাবকে
মুছে ফেলতে পারে ন৷ তাকে স্থায়ীভাব বলে, এই হ'ল লৌকিক অলংকাঁর-
শাস্ত্রোক্ত স্থায়ীভাব-লক্ষণ। শ্রপ একেই পরিমাজিত ক'রে বলেছেন-_
“অবিরুদ্ধ বা বিরুদ্ধ ভাবকে বশীতৃত ক'রে যা রাজার
মত অবস্থান করে'। বল। বাহুল্য, ব্যক্তিগত জীবনে
শ্রীর্ূপ রাজসঙ্গী ছিলেন, তাই এই উপম1। শ্রীরপ এখানে স্পষ্টতই শ্রীকুষ্ণ
বিষয়ক রতির দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। এই অলৌকিক স্থায়ীভাব
মুখা-গৌণ ভেদে ছুই শ্রেণীর। মুখ্য হ'ল-শুদ্ধ (অর্থাৎ শম), প্রীত
( অর্থাৎ দাস), সখ্য, বাৎসল্য ও প্রিয়ত। (অর্থাৎ মাধুর্ধ)। গৌণ হ'ল
_-_ লৌকিক অলংকারশাস্ত্রোন্ত রতি (প্রেম) ও শম বাদে ( যেহেতু
এগুলি মুখ্যের অন্তভূতি পূর্বেই হয়েছে) সাতটি-হাস, শোক, ক্রোধ,
উৎসাহ, ভয়, জুগ্রপ্পা ও বিম্মঘ। লৌকিক থেকে নেওয়] হলেও এগুলি
বৈষ্ণব শাস্্রাহুমারে অলৌকিকই অর্থাৎ শ্রীরুষবিষয়ক রতিরই অন্তভুক্ত।
এ পাঁচটি মুখ্যকে একক ধরে এর সঙ্গে সাতটি গৌণ স্থায়ী এবং তেত্রিশটি
ব্যভিচারী ( লৌকিকশাস্ত্রের অনুরূপ ) যোগ ক'রে ভাবের সংখ্যা একচল্িশ।
এই একচল্লিশটি ভাব বিভাব-অন্ভাবের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন রস-
পরিণাম লাভ করে। অবশ মুখ্যের অঙ্গরূপেই অন্গুলির রসবত্তা এবং
আটটি সাত্বিকভাবকেও অঙ্গরূপে গণনা করণে সাজ মুখ্য-গৌণ রতি
রসপরিণামে উনপঞ্চাশটি হয়ে থাকে । এই সব ভাব কৃষ্ণাদি ব্রজজনে
থেকে বিষয়গত হয়, আবার ভক্তচিত্তে অবস্থান ক'রে আশ্ররগত হয়।
ভান্কুর নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এই সব ভাব ভিন্ন ভিন্ন বর্ণ বৈচিত্র্য
ধারণ করে। মুখ্যভক্তি পাচটির কোনো৷ একটি কোনো আশ্রয়ে অবিমিশ্র-
ভাবে থাকলে তাকে “কেবলা” আর একাধিক ভিন্ন রতিসঙ্গে মিশ্রিত থাকলে
তাকে “সংকুলা” ঝল। হয়েছে । যেমন দ্বাস্তের সঙ্গে সখ্যের মিশ্রণে উদ্ধবের
প্রীতি নংকুলা। আপচ,
স্বায়ীভাব ও রস
“রস; অর্থাৎ ভক্তিরস ২৪৫
সেই বলদেব ইহ] নিত্যানন্দ ভাই ॥
বাৎসল্য-দাস্য-সখ্য-_তিন ভাবময় ।
চি এ
অদ্বৈত আচার্য গোসাঞ্রিঃ ভক্ত-অবতার ।
কৃষ্ণ অবতার কেল ভক্তিব গ্চার ॥
সথা-দাশ্য ছুই ভাব সহজ তাহার ।
কত্ প্রভূ করেন তাবে গুরু ব্যবহার ॥
এ ছাড়া স্থায়ী রতির শীতত্ব উষ্ণত্বের বিভাগণ্ড শ্রীরূপ করেছেন । হর্ষ, হাস,
উতণাহ, গর্ব প্রভৃতি ভাব শীতশ্বরূপ, আর উৎকণ্ঠা, শঙ্কা ছুংখবিষাদের বোধ
যানে আছে তা উক্ম্ববপ। উফ বতি বা, বিপ্রলগ্তে দুঃখাতিশয়ের কারক
হয়, তা-ই কিন্তু বিশেষভাবে আনন্দজনক। সাতটি গৌণরতির মধ্যে
জুগ্চপ্লা (দ্বণী ) “বিষয়ে অর্থাৎ কৃষ্ে থাকে না, আশ্রযে অর্থাৎ ভক্তে মাত্র
থাকে ।
উপরি-লিখিত পাঁচটি মুখ্য ভক্তিরতিব পরিণামে পাচটি রসের নাম হ'ল
যথাক্রমে শান্ত, প্রীত, প্রেয়, বসন এবং মধুর । নামাস্তবে
শান্ত, দরান্ত, সখা, বাৎপল্য ও মধুর । বিভাব, অন্ভাব,
সাত্বিক এবং ব্যভিচারীর সংযোগে মৃখ্যরতি এব” গৌণরতিগুলি স্বার্দাত্মক বসে
পবিণাম লাভ করে।
১. শুদ্ধ বা শান্ত বিষয়ে বিবক্ত ঘোগীদের পরমাত্মা-জ্ঞানে শ্রীকুষে,
মমতাবজিত যে ভাবসন্বন্ধ তা-ই শান্ত রতিব পোষক। তারা এই ভাৰ
আশ্রয় ক'রে ব্রহ্মানন্দের স্থখান্ভব করে খাকেন। মসনক, সনন্দ প্রভৃতি
ঝষিরা এই শাস্ত ভাররসের সাধক। এ রসের আলম্বন বিভাব হলেন
চিদানন্দঘন যৃতি, আত্মারাম, পরমাত্মঠ, বিভব, শান্ত, দ্াস্ত, হতারিগতিদায়ক
শ্রীকষ্ণ। এর উদ্দীপন বিভাব হ'ল উপনিষদ-শ্রবণ, জ্ঞানপ্রধান ভক্তের সাহচর,
চিন্তে চিদ্ঘন হর স্ফৃতি, তুলসীর সৌরভ, শজ্বের ধ্বগি, পর্বত, অরণ্যার্দ
নির্জন স্থান, গঙ্গাদি পবিত্র নদী প্রভৃতি । অগ্তভাব__নাসাগ্রে দৃষ্টি, মৌনাবপস্বন
প্রভৃতি । সঞ্চারী_ধৈর্ধ, শ্বতি, মতি, উতসুক্য, বিতর্ক। সাত্বিক__নির্বেধ,
রোমাঞ্চ, ন্যেণ, কম্প, শুভ ।
২. প্রীত ব দাশ্ত-_এই রতিকে প্রীত কেন বল। হয়েছে তার কারণ
হিসেবে রসামৃতদিন্ধৃতে বল| হয়েছে যে 'ইনি আরাধ্য এই বোধে আরাধ্য
মুখা পঞ্চবসেব পরিচয
২৪৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
বিষয়ে আসক্তি বিধান করে এবং অন্যত্র প্রীতি বিনষ্ট ক'রে দেয়। এই
প্রথম মমত]1 ব1 আত্মীয় সম্পর্কের কাছাকাছি সেব্য-মসেবক সম্পর্ক স্থাপিত হ'ল
ব'লে, যথার্থভাঁবে প্রেমভক্তির প্রথম পর্যায় হিসাবে নামকরন-প্রীত। দাসত্ব
এবং পাঁলনীয়ত্ববোধে প্রীতভক্তির ছুটি রূপ। সম্ত্রমগ্ীত এবং গৌরবগ্রীত।
সম্ত্রমপ্রীতে আজ্ঞাবতিতা, বিশ্বন্তত1, গ্রভুজ্ঞানে নত্রবুদ্ধি প্রভৃতি লক্ষিত হয়।
প্রভুতাজ্ঞান-জন্য সম্ত্রম, কম্প ও চিত্বমধ্যে আদর স্থায়ী সম্্মপ্রীতের ভাব-
বৈশিষ্ট্য । লালনীয়বোধে কনিষ্ঠত্ব অভিমান এবং পুত্রত্ব অভিমান থাকে । এর
আলম্বন-_পরিচর্যাগ্রহণে অভিলাষী অথবা বৎসলতাবোধযুক্ত শ্রীকৃষ্ণ । দীস্য-
ভাবের আশ্রয় ভক্ত উদ্ধব, এবং পারিষদরূপ সাত্যকি, বিছুর, শরণাগত কালিয়-
নাগ প্রভৃতি অথব। যছুকুমারগণ, প্রদ্যুন্ন প্রভৃতি । শ্রীচৈতন্পক্ষে মুরারি, শংকর,
গোবিন্দ প্রভৃতির সম্্মপ্রীত। উদ্দীপক-_শ্রকুফের অন্রুগ্রহ, চরণধূলি, অজ-
মৌরভ, মুরলীধ্বনি শ্রবণ অথবা তার বাৎসল্য । "শান্তদাসরসে এশ্বর্ কাহাও
উদ্দীপন ।* অন্থভাব- আজ্ঞ। পালনে যুক্তকরত।| কৃষ্দাসের সহিত মিত্রত,
দণ্ডায়মানতা, আনন্দে নৃত্য, অথব1 গৌরবপ্রীতে নীচাঁসনে উপবেশন প্রভৃতি |
সাত্বিক__শুভ্ম্থেদাদি আটটিই। ব্যভিচারী-_হর্ষ, গর্ব, বিষাদ, দৈন্ত, স্মৃতি,
শঙ্কা, মতি, আবেগ, লজ্জ। প্রভৃতি চব্রিশটি। প্রীতভক্তি বাঁধত হয়ে উত্তরোত্তর
প্রেম, শ্লেহ এবং রাগ এই তিনটিতে উৎকর্ষ লাভ করতে পারে ।
ব্র্জবিহারী ছিতুজ শ্রীকৃষ্ণ বিষয়ে দ্বাশ্যভাবরসের একটি পদ--
গোবর্ধন গিরিবর পরম নির্জন স্থল
রাই কানু করাব বিশ্রামে |
ললিত বিশাখ। সে সেবন করিব রঙ্গে
স্থখময় রাতুল চরণে ॥
কমল-সম্পুট করি কপূর তাশ্থুল পুরি
যোগাইব বদন-কমলে ।
মণিময় কিন্ধিণী রতন-নৃপুর আনি
পরাইব চরণযুগলে ॥
কনক-কটোয় ভরি স্থগদ্ধি চন্দন পুরি
ফ্লোহাকার শ্রীঅঙ্গে ঢালিব।
গুরুর'প1 সখী বামে ভ্রিভঙ্গ হইয়া ঠামে
চামরের বাতাস করিব ॥
'রসঃ অর্থাৎ ভক্তিরস ২৪৭
অথবা, জয় জয় শ্রীকৃষ্চৈতন্য দয়াসিন্ধু।
পতিত উদ্ধার হেতু জয় দীনবন্ধু ॥
জয় প্রেমভক্তিদ্রাত] দয়া কর মোরে ।
দৃত্তে তৃণ ধরি ভাকে এ দাস পামরে ॥
পূর্বেতে সাক্ষাতে যত পাতকী তারিল1।
সে বিচিত্র নহে যাতে অবতার কৈল।॥
মে৷ হেন পাপিষ্ঠ এবে করহ উদ্ধার ।
আশ্চর্য দয়নল গুণ ঘুষুক সংসার ॥
৩. প্রেয় বা সথ্য-ধারা বয়সে বেশাদিতে এবং ভাবে কৃষ্ণের তুল্য
স্বাদের কৃষ্ণের প্রতি মমত্যুক্ত যে সমবোধ তাই হ'ল প্ররে় স্থায়ীভাব বা
সখ্যরসের বিষয়। শ্রীদ্াম হুদামাদি সখাগণ এবং অর্জুন, ভ্রৌপদী প্রভৃতি
এই ভাবরসের আশ্রয়গত আলম্বন। বিষয় হিসেবে দ্বিভূজ কৃষ্ণ তো আছেনই।
চৈতন্যাবতারে রায় রামানন্দ এবং মুকুন্দার্দি শুদ্ধ সখ্যের অধিকারী । সথ্যের
ষধো শান্তের নিষ্ঠা, দাশ্তের বিশ্বস্ততামূলক সেবনের ভাব অস্তনিহিত থাকে,
অধিক হ'ল বিশ্রম্ভত। ও সমবোধ। এই সখার্দের বয়ন্তও বল হয়।
বৃুন্দাবনের বয়ন্যদ্দের চারটি শ্রেণী-_সুহৎ, সথা, প্রিয়সখা। ও প্রিয়নর্ষসখ] |
শ্ীদামাদি হলেন প্রিয়সখ। ; স্থবল, উজ্জল প্রভৃতি প্রিয়নর্মসখা- কৃষ্ণের
প্রেমলীলার সহাঁয়ক। সখ্যরসে উদ্দীপন বিভাব হ'ল-_রূপ, শৃঙ্গ, বেখু এবং
পরিহাস ও বিবিধ ক্রীড়া। অস্থভাব-_বাহুযুদ্ধ, যত্িক্রীড়া, জলক্রীড়া, দ্যুত,
“কান্ধে চড়ে, কান্ধে চড়ায়, করে করায় রণ» একব্রে শয়ন-উপবেশন,
পরিহাস, নৃত্য, গীত প্রভৃতি । সাত্বিক_স্বস্ত, ম্বে;ট রোমাঞ্চ, অশ্রু ।
ব্যভিচারী- উগ্রতা আরা ও আলশ্য বাদে ভ্রিশটি। এর মধ্যে মিলিতাবস্থায়
এবং অমিলিতাবস্থায় ব্যভিচারীন পার্থক্য ঘটে। সখ্য উৎকর্ষ লাভ ক'রে
ক্রমশঃ প্রেম. স্রেহ, মান, প্রণয়, রাগ, অনু," পর্ষস্ত অগ্রসর হ'তে পারে।
সখ্যের কষ্চবিরহে মধুরের পূর্বরাগে মত দশ দশা লক্ষিত হতে পারে।
প্রেয়ভাবের পদ, যথা
আওত শ্রীদমচন্ত্র রডিয়। পাগড়ী মাথে।
ম্তোক-কৃ্ণ অশশুম।ন দাম বন্দাম সাথে ॥
কটি কাছনি বঙ্কিম ধটী বেধুবর বাম কাখে।
জিতি কুঞ্জর গতি মস্থর ভায়্য। ভায়্যা বলি ভাকে ॥
২৪৮ বৈষ্ণব রস-প্রকাশ
ছান্দন-ভোর কান্ধহি শোভে কানে কুগডল-খেলা |
গলে লখিত গুগ্কাহার ভূজে অঙ্গ বাল] ॥
স্কুট-চম্পক-দল-নিন্দিত উজ্জল-তন্থ-শোভ]।
পদ-পন্বজে নৃপুব বাজে শেখর মনোলোভা |
অপিচ, প্রভাতে উঠি! বরজরাঁজ।
তুবিতে চনিল। ধেন্স-সমাজ ॥
সথাগণ আসি মিলিল তাহি।
আনন্দ বাঢচল ও মুখ চাহি ॥
গাভী দোহন করিয়া কান।
স্ববলের সনে নিভৃতে যান ॥
পুছত সুবল হেরিয়া মুখ ।
কি ভেল আজুক রজনি-স্থখ ॥
৪. বসল ও বাৎসল্য- অনুকম্পার্হ ব্যক্তির উপর অন্কম্পাকারীর ষে
সম্রমশৃন্য রতি তাকেই বলে বংসল। যথোচিত বিভাঁবাদ্দির মিলনে বসল
রতি বাৎসল্য রসে পরিণাম পায়। বাৎসল্যে এর নিয়স্তরের রতির নিষ্ঠা,
মেবন-পরিচর্যা, বিশ্রন্ধতা অন্তলগন থাকে, অথচ এর অতিশয় হ'ল মমতার
আধিকা, যার ফলে তাভনা, ভৎ্সনা, বন্ধনাদদি কর। হয়ে থাকে । কৃষ্ণের
গুরুজনেরা এই রসের আশ্রয় আলম্বন। গুরুবর্গ যথাক্রমে-_-যশোদা, নন্দ,
রোহিণী, দেবকী, বস্থরদেব গুভূতি। শ্রীচৈতস্পক্ষে শচীদেবী, মিশ্রপুবন্দর,
মালিনী, শ্রীবাস, অদ্বৈত, সার্বভৌম ভট্টাচার্য, পরমাঁনন্দ পুরী প্রভৃতি । এর
উদ্দীপন বিভাঁব হ'ল কৌমারার্দি বয়স, বালাচাপল্য, বাল্যক্রীড়। প্রভৃতি ।
অন্ুভাব লালন, প্রতিপালন, উপদেশ দন, মন্তকাপ্বাণ, তাড়নাদদি। সাত্বিক
ভাব ন্ততত-স্বেদাদি আটটি, অপি গু যশোদ1 পক্ষে শ্তনছৃগ্ধক্ষরণ। ব্যভিচারী
হ'ল হর্যাদি সখ্যরসের ত্রিখটি। এই রতির উৎকর্ষ প্রেমন্সেহার্দি থেকে
অনুরাগ পর্যস্ত। বাঁৎসল্যরস-বিষয়ক পদ, যথা
আমার শপ।ত লাগে ন৷ ধাইহ ধেন্ুর আগে
পরাণের পরাণ নীলমণি।
নিকটে রাখিহ ধেন্ছ পূরিহ মোহন বেণু
ঘরে বৈসে আমি যেন শুনি ॥
“রস” অর্থাৎ ভক্তিরস ২৪৯
বলাই ধাইবে আগে আরা শশু বাঁমভাগে
শ্ীদাম সাম সব পাছে।
তুমি তার মাঝে ধাইয়া সঙ্গ ছাডা না হইয়্য
মাঠে বড় রিপুভয় আছে ॥
ক্ষুধা পেলে চাঞা৷ খাইয়্য পথ-পানে চাহি যাইয়্য
অতিশয় 'ণোষ্কুর পথে ।
কার বোলে বড় ধেন্ু ফিরাত্যে না৷ যাইয়্য কাঙ্গ
হাত তুলি দেহ মোব মাথে ॥
অপিচ-_ নিতাই করিয়া আগে চলিলেন অনুর [গে
আইল! সাই শান্তিপুরে,
মুভায়্যাছে মাথার কেশ ধর্য।ছে সন্ন্যাপীর বেশ
দেখিয়া সবার প্রাণ ঝুরে ॥
করজোড় করি আগে দাণড।ইয়! মায়ের আগে
পড়িলেন দণগ্ডবৎ হৈয়]।
ছুই হাত তুলি বুকে চুম্ব দিয়া চাদ মুখে
কান্দে শচী গলায় ধরিয়া ॥
ইহার লাগিয়া যত পড়াইল ভাগবত
একথা কহিব আমি কায়।
অনাথিনী করি মোরে যাবে বাছ! দেশান্তরে
বিষুপ্রিয়ার কি হৈব উপায় ॥
এ ডোর কৌপীন পরি কি লাগিয়! দণ্ড ধরি
ঘরে ঘবে খাবে ভিক্ষা মাগি।
জীয়স্ত থাকিতে মায় ইহ] নাহি সহা যায়
কাব বোলে হৈল। বৈরাগা ॥
৫. মধুর__.লীকিক অলংকারশান্ত্ে ৷ রতি”, “আদি” বা শৃঙ্গার” বৈষ্ণব
শান্ে তা-ই “মধুর” বা 'উজ্জলগ। এই রতি বা নাঘক-নাপ্লিকাগত প্রেমভাব
সমুচিত বিভাব-অনু ভাব-সাত্বিক এ পাভিচারীর যোগে মণুববসে পরিণাম লাভ
করে। এই রতির বিষয় শ্রীরুষ্ণ ও প্রেয়সীবর্গ, প্রেয়সীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠা রাধিকা ।
আশ্রয় গোপীবর্গ ও ভক্তহ্ৃদয়। উদ্দীপন-_রাধা'রুষেনের বপপ্ুণ, মুবলী, যমুনাতট
প্রভৃতি । ব্যভিচাবী-_-আলম্ত, উগ্রত।, ঘ্বণা ব্যতীত সমস্ত। অন্তভাব-__কটাক্ষ-
২৫ বৈষ্ব-রস প্রকাশ
বিক্ষেপ হান্যাদ্ি অনেক। সাত্বিক- স্তভ স্বেদাদি সমন্ত। মধুররতিতে শাস্ত-
সখ্য-দাশ্-বাৎসল্যের সমন্ত গুণ, অধিকন্ত প্রেমের একাত্মতা-বন্ধন | মধুররতি
উৎকর্ষ লাভ করতে করতে ভাব, মহাভাব পর্যস্ত অবস্থায় উত্তীর্ণ হতে পারে।
অবশ্য এই মহাভাব-সম্পদে একমাত্র শ্রীরাধার অধিকার। মধুররতি ও রসের
বৈচিত্র্য পরে বিস্ততভাবে প্রদশিত হচ্ছে । এবিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য পদ £
পহিলহি রাগ নয়নভঙ্গ ভেল।
অস্থুদিন বাঢল অবধি ন গেল ॥
ন সো মরণ ন হাম রমণী।
দু মন মনোভব পেশল জনি ॥ ইত্যাদি
এই প্রসঙ্গে চরিতামৃতে শ্রীরপ-শিক্ষণ অংশে যেভাবে এই মূখ্য ভক্তিরদ এবং
সাধকশ্রেণীবিন্তাসের পরিচয় দেওয়) হয়েছে ত] উদ্ধত করা যেতে পারে-__
শাস্ত ভক্ত নব যোগেন্দ্র সনকাদি আর।
দাশ্তভাব-ভক্ত সর্বক্জ সেবক অপার ॥
সখ্যভক্ত শ্রাদামাদি, পুরে ভীমাজুন।
বাৎসল্য ভক্ত পিত। মাত? যত গুরুজন ॥
মধুররস ভক্ত মুখ্য ব্রজে গোপীগণ।
মহিষীগণ লক্ষ্মীগণ অসংখ্য গণন ॥
পুন কৃষ্ণরতি হয় ছুইত প্রকার।
এশবর্যজ্ঞানমিশ্া কেবল৷ ভেদ আর ॥
গোকুলে কেবলারতি এশবরধজ্ঞানহীন ।
পুরীদ্ধয়ে বৈকুগ্ঠাচ্ছে এশ্বর্য-প্রবীণ ॥
এশ্বরজ্ঞান প্রাধান্যে সংকুচিত প্রীতি ।
দেখিলে ন। মানে এশ্বর্য কেবলার রীতি
শান্ত দান্য রসে এশ্বর্ধ কাহা উদ্দীপন ।
বাৎসল্য সখ্য মধুরেত করে সংকোচন ॥
বস্থদেব-দেবকীর কৃষ্ণ চরণ বন্দিল।
এ্বর্য জ্ঞানে দোহার মনে ভয় হৈল।
কৃষের বিশ্বরূপ দেখি অজুনের হৈল ভয়।
সখ্যভাবে ধাষ্ট ক্ষমায় করিয়। বিনয় ॥
“রস” অর্থাৎ ভক্তিরস ২৫১
রুষ্ণ যদ্দি রুক্সিণীরে কৈল পরিহাস ।
কৃষ্ণ ছাঁড়িবেন জানি কুল্সিণীর হৈল ত্রাস ॥
কেবলার শুদ্ধ প্রেম! এশ্বর্য না জানে ।
এশ্বর্য দেখিলে নিজ সম্বন্ধ সেমানে॥
শাস্তরসে স্বরূপবুদ্ধ্ে কৃষ্ণেকনিষ্ঠতা ।
শমে। মন্নিষ্ঠতা। বুদ্ধেঃ ইতি শ্রীমূখগাথ! |
কৃষ্ণ বিনা তৃষ্ণ। ত্যাগ তার কার্য মানি।
অতএব শাস্ত কৃষ্ণভক্ত এক জানি ॥
ত্বর্গ মোক্ষ কষ্ভক্ত নরক করি মানে।
কুষ্ণনিষ্ঠ৷ তৃষ্ণাত্যাগ শাস্তের ছুই গুণে ॥
এই ছুই' গুণ ব্যাপে সব ভক্তজনে ।
আকাশের শব গুণ যেন ভূতগণে ॥
শান্তের স্বভাব কৃষ্ণে মমতাগন্ধহীন।
পরম ব্রহ্ম পরমাত্ম! জ্ঞান প্রবীণ ॥
কেবল স্বরূপজ্ঞান হয় শাস্তরসে।
পূর্ণৈশ্বর্য গ্রতৃজ্ঞান অধিক হয় দাস্যে ॥
ঈশ্বরজ্ঞান সম্রম গৌরব প্রচুর ।
সেবা করি কৃষে স্থথ দেন নিরন্তর ॥
শান্তের গুণ দাশ্যে আছে অধিক সেবন।
অতএব দাশ্রসের হয় ছুই গুণ ॥
শান্তের গুণ দান্তের সেবন সথ্যে ছুই হয়।
দ্বাস্তে সম্ম গৌরব সেবা সথ্যে বিশ্বাসময় ॥
কান্ধে চড়ে কান্ধে চভায় করে ক্রীড়া রণ।
কৃষে। সেবে কৃষ্ণে করায় আপন সেবন ॥
বিশ্রস্-প্রধান সথ্য গৌরব-সন্ত্রম-হীন।
অতএব সখ্যরসের তিন গুণ চিন ॥
মমত1 অধিক রুষ্ণে, আত্মসম জ্ঞান ।
অতএব সখ্যরসে বশ ভগবান্ ॥
বাঁৎসল্যে শাস্তের গুণ দ্াস্তের সেবন ।
সেই জেই সেবনের ইই] নায় পালন ॥
২৫২ বৈষণব-রস-প্রকাশ
সখ্যের গুণ অসংকোচ, অগৌরব সার।
মমত।ধিক্যে তান ভৎসন ব্যবহার ॥
আপনাকে পাগকজ্ঞান কৃষ্ণ পাল্য জ্ঞান।
চারি রষের গুণে বাংসল্য অমৃত সমান ॥
মধুবরসে কৃষ্ণনিষ্টা সেবা 'মতিশয়।
সখের অপংকোঁচ লালন মমতাধিক হয় ॥
কান্তভাবে নিজাঙ্গ দিয়া কবেন সেবন।
অতএব মধুব বসে হয় পঞ্চ গুণ
আকাশার্দির গুণ যেন পর পব ভূতে ।
এক দুই তিন ক্রমে পঞ্চ পৃথিবীতে ॥
এগ মত মধুরে সব ভাব-সমাহার ।
অতএব স্বাদীধিক্যে করে চমতকার ॥
প্রীতিমূলক এই পাঁচটি মুখ্য স্থাযীভাব উদ্দীপিত করে কৃষ্ণের উপাসন। রাগান্ুগ
ভজনের প্রখ্যাত মার্গ। ভক্তের অভিরুচি এব মানসিক গঠন অন্কসারে এর
কো।নে। একটি অবলন্বিত হয়ে থাঁচে। যিনি যে হাব অবলম্বন করেন, কৃষ্ণ
সেই ভাবেই তার কাছে ধরা দেন। এবিষয়ে স্ত্র হ'ল “যে যথা মাং
প্রপদ্যন্তে তাংস্তথেব ভজাম্যহম্।” কিন্তু এমনও হতে পারে যে ভক্ত
সাধনার জোরে উচ্চতর এবং উচ্চতম পর্যায়ে আরোহণ করতে পারেন।
এবিষয়ে কৃষ্ণকুপা এবং পূর্ব পূর্বজন্মের স্থকৃতির প্রশ্ন অবশ্তই রয়েছে।
রাগান্গায় গোৌণভক্ভি-স্থায়ীভাব সাতটির পরিচয় অর্থাৎ এগুলির
আলম্বন, উদ্দীপন, ব্যভিচারী এবং পারস্পরিক নম্পর্ক লৌকিক অলংকার-
শাস্ত্রের অন্থরূপ। এগুলি হ'ল হাশ্ত, শোক, ক্রোধ, উৎসাহ, ভয়, বিম্ময়
ও জুগুপ্া। রতি এবং শম মুখেই স্থান পেয়ে গেছে। মুখাভক্তিরস-
গুলির প্রত্যেকটিতে এই মাতটির যে-কোনো একটি
ছুটি, অথবা সবগুলিই পোষকবপে সহাঁয়করূপে অবস্থান
করতে পারে। যেমন দান্তের হান্ত, দান্তের ক্রোধ, দাস্তের শোক প্রভৃতি ,
মধুরের হাস্য, মধুরের শোক, মধুরের ক্রোধ প্রভৃতি। এই ভাবে গৌণ
মুখ্য মিলিয়ে স্থায়ীভাবের ও রসের সংখ্যা পয়ত্রিশে দাড়ায় । এর সঙ্গে
স্তভ-ম্বেদার্দি আটটি সাত্বিক ভাব যোগ করে তেতাল্লিশ সখ্যা গণিত
হতে পারে। সাত্বিক শাঁবগুলির দ্বতন্ব রসপরিণাম লৌকিকে হয় না।
গৌণ স্বায়ীভাব ও রম
“রস; অর্থাৎ ভক্তিরস ২৫৩
লৌকিকে এগুলি অন্ুভাব মাত্র। ভক্তিমার্গে এগুলিও দিব্য অনুভা,
স্থতরাং এগুলির পৃথকৃ রসপরিণাম ন1 হোক, ঘনিষ্ঠ রসসম্পর্ক অবিসংবাঁধিত |
হাস্তাদি রসের আলম্বন উদ্দীপন, অঠভাবার্দি লৌকিক অলংকারশাস্থ্ে বণি*
বিষয়ের অন্ুবপ হলেও স্বল্প কিছু বিশেষও আছে। তাই এগুলি নিষ্ট হচ্ছে
হাসরতি স্থায়ীভাব,' হাস্তরস। কৃষ্ণ বা তদন্বরী ব্যক্তিরা আলগ্ছন
বিভাব। এ প্রকার আলম্বনের বাক্য, বেশ, আচরণ প্রভৃতি উদ্দীপন ।
নাসা, ওষ্ঠ প্রভৃতির স্পন্দন, দস্তবিকাশ প্রভৃতি অন্ুভাব। হয আলস্তা
আকার-গোপন প্রভৃতি ব্যভিচারী । হান্তের পরিমাণ ও প্রকারভেদে
হাসরতিকে ছয় ভাবে দেখা যায়। স্মিত, হসিত, বিহসিত, অবহসিত
ও অতিহসিত।
শোক স্থায়ীভাব, করুণ রস। আলম্বন কৃষ্ণ, কৃষ্ণপ্রিয়বর্গ এরং কৃষভক্তিন্বখ
লাভ করতে পারছেন না এমন প্রিয়জন । ওঁচিত্যের জন্য করুণে শান্তের বিষয়
থাকতে পারে না। উদ্দীপন হ'ন কৃষ্ণের রূপ, গুণ, চেষ্টা । অন্থভাব- বিলাপ,
দীর্ঘশ্বাস, ক্রন্দন, ভূপতন প্রভৃতি । ব্যভিচারী-স্তভ্ত, স্বেদ প্রভৃতি সাত্বিক
এবং নির্বেদ, গ্লানি, দৈন্, চিন্তা, বিষাদ, ওংস্থক্য, চাঁপল্য, ব্যাধি প্রভৃতি ।
ক্রোধস্থায়ীভাব, রৌদ্র ভক্তিরস। কৃষ্ণ, কৃষ্ণের হিতকারী, কৃষ্ণের অহিতকারী
আলম্বনের এই তিন বিষয়ভেদ। ভক্তরূপ আলম্বন বা আশ্রয় আলম্বনের
দিক দিয়েও হিত ও অহিতের ভেদ হতে পারে। উদ্দীপন__গর্বযয়হান্ত,
বক্রোক্তি, অনাদর এবং কৃষ্ণের হিতপক্ষ অহিতপপক্ষ ব্যক্তির চেষ্টা । অন্থভাঁব__
মুষ্টি আস্ফালন, দৃত্তঘর্ষণ, ওষ্ঠদংশন, 'ভৎসন। প্রভৃতি । ব্যভিচারী-_ স্তভাদি
সাত্বিক এবং আবেগ, গর্ব, অস্য়া, উগ্রত। প্রস্ততি । ক্রোধের তিন বিভাগ-_
কোপ, মন্ধ্য এবং রোষ। শক্রুপক্ষে কোপঃ বন্ধু বা আত্মীয়পক্ষে মন্্য এবং
রুষ্দয়িতাপক্ষে রোষ।
উৎসাহ স্থায়ীভাব, বীর ভক্তিরস। যুদ্ধ, দান, দয়। এবং ধর্ম এই চারটি
ক্ষেত্রেই বীরত্ব প্রযুক্ত হতে পারে। কৃষ্ণ, কৃষ্*প্রিয়বর্গ বিষয়ালম্বন এবং ভক্ত-
হৃদয় আশ্রয়রপ। দর্প, ম্পর্ধা-বিক্রম, আত্মশ্লাঘার্দি, ভেরী-তুরী-কানিনাদ
উল্লাস, করতালি গ্রভৃতি এর উদ্দীপন । পুভাঁদি সাত্বিক এবং সিংহনাদ,
আক্রোশ, মদমত্তগতি, উদ্যম, ধের্য প্রভৃতি এর অন্ভাব। গর্ব, আবেগ, হর্ষ,
ক্রীড়া, ম্বতি, অমর্ষ প্রভৃতি বাভিচারী। ধর্মবীরে সংশাস্ত্শ্রবণ, নীতি,
আস্তিক্য, সহিষ্ণুতা প্রভৃতি উদ্দীপন। এরকম অন্যগুলিতেও ভাবান্থযায়ী ।
২৫৪ বৈষ্ণব-রস প্রকাশ
ভয় স্থায়ীভাব, ভয়ানক রস। আলম্বন শ্রীকৃষ্ণ এবং তীর ভক্ত। অপরাধী
ও অপরাধী ভক্তপক্ষে কৃষ্ণ থেকে ভয়, আর কৃষ্ণের অনিষ্টাশঙ্কা করেন এমন
যশোদাদির চিত্তে ভয়। উদ্দীপন জুটি প্রভৃতি । অন্ুভাব- মুখের শ্র্কতা,
পশ্চাৎ-দৃ্টি, গাত্রসংকোচন, উদ্ঘূর্ণা, আশ্রয়-অন্বেষণ প্রভৃতি | ব্যভিচারী
মোহ, অপস্মার, শঙ্কা । অশ্রু ব্যতিরেকে যাবতীয় সাত্বিক।
জুগুপ্ণা স্থায়ী, বীভৎস ভক্তিরস। শান্তাশ্িত ভক্তগণই এর আলম্বন অর্থাৎ
আশ্রয়ালম্বন। কৃষ্ণ বা তত্প্রিয় পক্ষে বিষয়রূপে এ থাকতে পারে না।
দাশ্তবাৎ্সল্যদ্দিতেও এই রসের উপকারকতা৷ নেই । উদ্দীপন- জঘন্ট বিষয়-
সক্তি। নিষ্ঠীবন, নাসিকাকুঞ্চন, অক্ষিসংকোচ প্রভৃতি অন্নুভাব। স্তত্ত, কম্প,
পুলক, ঘর্ম সান্বিক। গ্লানি, শ্রম, নিরবে, মোহ দৈন্য, বিষার্দ, জড়তা প্রভৃতি
ব্যভিচারী ।
বিশ্বয় স্থায়ী, অদ্ভুত ভক্তিরস। আশ্রয়ালম্বন শান্ত থেকে মধুর পর্যস্ত সকল
প্রকার ভক্ত। লোকাতীত কর্ম, রূপ, গুণ প্রভৃতিব অধিকারী কৃষ্ণ এবং
কৃষ্ণসম্পকিত স্থানার্দি এর বিষয়। কৃষ্ণের রূপ, বেশ, কার্য প্রভৃতি উদ্দীপন |
নেত্রবিস্তার এবং স্তভাদি যাবতীয় সাত্বিক এর অন্থভাব। আবেগ, হধ,
স্মৃতি, মতি প্রভৃতি ব্যভিচারী ।
উপরি-উক্ত সমস্ত ক্ষেত্রে বিষয়ালম্বন হিসেবে শ্রীরষ্স্থলে শ্রীগৌরকেও
গ্রহণ করতে হবে। আরও মনে রাখতে হবে শাস্তাদি মুখ্য পাঁচটিই যথার্থ-
ভাবে হুরিভক্তিরস। বণিত হান্তাদি গৌণগুলি প্রায়শই ব্যভচারীভাবে
অবস্থিত থাকে । অর্থাৎ মুখ্যভক্তিরসগুলির সঙ্গে এবং ভক্তহৃদয়ে কোনোটি
কখনও যুক্ত হয়, কখনও হয় না। কন্ত ব্যবহারিক ক্ষেত্রে হাস্তা্দি গৌণ-
রসগুলিও যে অঙ্গীভাবে অর্থাৎ প্রধানভাবে আস্বাগ্ত না হতে পারে এমন নয় ।
সেরকম ক্ষেত্রে যে-কোনোটি অঙ্গী হলে অন্যগুলিব অঙ্গভাবে থাকতে বাধা
নেই, তা মুখ্যই হোক আর গৌণই হোক ।
শ্রীপাদ রূপগোম্বামী মুখ্য এবং গৌণ রসগুলির পারস্পবিক মিত্রতা এবং
বৈরীত। নিয্ললিখিতভাবে নিরূপণ করেছেন :
রস মিত্র বৈরী
শাস্ত প্রীত (দাশ্য), প্রেয় (সখ্য), মধুর, যুদ্ধবীর,
ধর্মবীর, অদ্ভূত, বীভৎ্ রৌন্র
'রস' অর্থাৎ ভক্তিরস ২৫৫
রস মিত্র বৈরী
প্রীত (দাশ) শান্ত, বীভৎস, ধর্মবীর, মধুব,
দানবীর, করুণ, ভয়ানক যুদ্ধবীর (কৃষ্ণ),
রৌব্র (কৃষ)
প্রেয়: (সখ্য) মধুর, হান্ত, যুদ্ধবীব বসল, রৌদ্র,
| ভয়ানক
বসল হাস্য, করুণ, ভয়ানক, মধুব, যুদ্ধবীর,
অদ্ভুত গীত, রৌদ্র
মধুর হাস্য, 'প্রেম্বং, বসল, বীভৎস,
যুদ্ধবীর, ধর্সবীর শান্ত, রৌদ্র,
ভয়ানক
হাস্য বীভৎস, মধুব, বসন করুণ, ভয়ানক
করুণ রৌদ্র, বসল হান, সম্ভোগশঙ্গার,
অদ্ভুত
রৌদ্র করুণ, বীর হাশ্ত, শৃঙ্গার, ভয়ানক
বীর অদ্ভুত, হাস্য, সখ্য, দাশ্তি ভয়ানক
ডয়ানক বীভৎস, করুণ বীর, শঙ্গার, হাস্য, বৌস্
বীভৎস শান্ত, হান্য, দাশ্য শঙ্গার, সখ্য
অদ্ভুত বীর, শান্ত, প্রভৃতি মুখ্য পাচ রৌদ্র, বীভৎস
উল্লিখিত সমস্ত রস স্থায়ীভাব, বিভাব, অঙ্কভাব প্রভৃতির দিক থেকে
অঙ্গহীন হলে অথবা! বিরুদ্ধ স্থায়ী, বিভাব, অস্থভাব প্রভৃতির সঙ্গে যুক্ত
হয়ে পড়লে রসাভাম হয়ে ওঠে ।
স্থায়ীভাব ও রসবৈচিত্র্য বিনির্গয়ের পব ভক্তিরসের বিভাব, অঙ্ভাব,
সাত্বিকভাব ও ব্যভিচারী সম্বন্ধে বল! হুচ্ছে।
॥ বিভাব. আলম্বন ॥ ভক্তিরপরিণামের কারণগুপির মধ্যে বিভাৰ
প্রথমতঃ ছুই প্রকার (লৌকিক অলংকারশাস্ত্রেরে মতই )_(১) আলম্বন,
(২) উদ্দীপন । আলম্বন বিভাব আবার বিষয়ের দিক্ থেকে (১) কৃষ্ণ বা গৌর,
(২) রুষ্ণসহায় বা গৌরলীলাপরিকর এবং আশ্রয়ের দিক্ থেকে (৩) গৌরকৃষ্ণভক্ক
এই তিন ভাশে বিভক্ত। শ্রীরূপ কৃষ্ণের অবয়ব ও চারিত্যে চৌবটিটি
বিশেষ গুণের উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে প্রথম পঞ্চাশটি মানুষের মধ্যে
২৫৬ বেষ্চব-রস-প্র কাশ
দৃষ্ট হ'লেও নিতাস্ত আংশিক ভাবে, একমাত্র কেই তার পূর্ণ তম অভিব্যক্তি।
আর শেষ চারটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য শুধু রুফেই প্রাপ্তব্য। অন্য দশটি গুণ
নারায়ণ, বিষু। বাস্থদেবে এবং ত্রহ্ষা শিব প্রভৃতিতে আংশিকভাবে
প্রাঞ্থবা। এরকম কয়েকটি সাধারণ বিশেষণ হ'ল-্থরম্যাঙ্গ, মহাপুরুষ-
লক্ষণান্বিত, রুচির, তেজস্বী, বলবান, বিবিধ ভাষাজ্ঞ, সত্যবাক্, প্রিয়বাক্,
ধর্মতব্বজ্ঞ, পণ্ত, বুদ্ধিমান, বিদগ্ধ, কৃতজ্ঞ, দৃঢব্রত, শুচি, দাত্ত, ক্ষমাশীল,
গন্ভীর, বদান্ত, ধামিক, বীর, বিনয়ী, ত্রীমান্, ভক্তবন্ধু, শরণাগত-পালক।
নারায়ণার্দির অনুরূপ কৃষ্ণের পাচ গুণ হ'ল--৫১) অবিচিজ্তামহাঁশক্তি ( অর্থাৎ
যুক্তিতর্কে ধরা যায় না এমন মহাশক্তি-সম্পন্ধ), (২) কোটিব্রন্মাগুবিগ্রহ
(অর্থাৎ কোটিত্র্ধাণ্ড ধার লোমকৃপে বিরাজ করে ), (৩) অবতারাবলীবীজ
( অগণিত অবতারের যূল ), (৪) হতারিগতিদায়ক (নিহত শত্রুদের উত্তম
গতি দান করেন আর যথার্থ ভগবৎ-দ্েষীর্দের কর্মফল অনুসারে অধম গতি
বিহিত করেন এমন ), (৫) আত্মারামগণাকষা (অর্থাৎ জ্ঞানতপন্যায় ষে-
সম্ত মুনি আত্মানন্দে নিমগ্ন থাকেন তাদেরও চিত্ত আকর্ষণ ক'রে ভক্তি-
পথে নিয়ে আসতে সক্ষম)। একমান্র কৃষধেই প্রাপ্তব্য বিশেষ চারটি
৭ হ'ল-__
১. সর্বাডভূতচমৎ্কারণীলাকল্লোলবারিধিঃ
অতুল্যমধুরপ্রেমমণ্ডিতত্রিয়মগ্ডলঃ |
৩. ব্রিজগন্মানসাক ধিমুরলী কলকৃজিত:
৪. অসমানোধ্বরূপশ্রীবিস্মীপিতচরাচরঃ ॥
অর্থাৎ যাবতীয় অপূর্ব চমৎকার লীলাতরঙ্গের মহাসমুদ্রনপ। অতুলনীয়
মধুররসাত্মক প্রেমের দ্বারা অগণিত প্রিয়ধধের অর্থাৎ গোপরমণীদের মণ্ডিত ও
বিমুগ্ধ করেছেন এমন, ব্রিভুবনের যাবতীয় জীবের মনোহরণ করতে পারে
এমন বংশীধ্বনি যিনি করেন এবং যার অধিক সম্ভব নয় এমন কি সমানও
নয় এমন অলৌকিক রূপসৌন্দর্ষের দ্বারা যিনি চরাচরের বিম্ময় উৎপাদন
করেন। সংক্ষেপে বেণুম়াধূর্য, রূপমাধূর্য, প্রেম-প্রিয়তা এবং লীলামাহাত্ময
একমাত্র রুষ্েরই বৈশিষ্ট্য |
এ ছাড়া রসামৃতসিন্ধুতে কৃষ্ণের আরও আটটি সত্বভেদবূপ চারির্র্যগত
স্বভাব বণিত হয়েছে। তা হ'ন, শোভা, বিলাস, মাধুর্য, মাঙ্গল্য, হ্ৈর্য, তেজঃ,
ললিত ও ওদার্ধ। হেতু তিনি একাধারে ধীরোদাত্ত, ধীরললিত, ধীরশাস্ত
“রস' অর্থাৎ ভক্তির ২৫৭
এবং ধীরোদ্ধত নায়কের চুড়ামণি সেইহেতু এ আটটি স্বভাব অনায়াসেই তাঁর
অন্তঃকরণেছ্খআশ্রয় পেয়েছে। এই শ্রীরুঞ্ণ তার এর মাধুর্ধাদি বিশিষ্ট গুণ
নিয়ে ্বারকায় পূর্ণ, মথুরাক়্ পূর্ণতর, কিন্ত বুন্দাবনেই পূর্ণতম |
কৃষ্ণের সহায় বলতে ধর্মার্দি বিষয়ে গর্গ প্রভৃতি, যুদ্ধ বিষয়ে সাত্যকি
প্রভৃতি, মন্ত্রণাঁবিষয়ে উদ্ধবাদ্দি এবং নুন্দাবনলীলায় শ্রীদাম স্থদ্দাম থেকে আরম্ভ
করে ললিতাদি সীর] পর্যন্ত সমস্ত লীলাপরিকরবৃন্দ ! অনুবপভাবে গৌরলীলায়
নবদ্বীপ, নীলাচল ও বুন্দাবনের লীলাপরিকরগণ।
কৃষ্ভক্ত বলতে তার্দেরই বোঝায় ধারা কৃষ্ণভাবিত-অস্তঃকরণ। ভক্তদের
“দুই শ্রেণী-_সাধক এবং সিদ্ধা। সিদ্ধেব। আবার সাধনসিদ্ধ, কপাসিদ্ধ, নিত্যসিছ
ভেদে বিভিন্ন । নিত্যসিদ্ধ তারাই ধাদের গণ কৃষ্ণেরই মত নিত্য এবং ধারা
আনন্দম্বদূপ। যাদবগণ এবং বুন্দাবনের গোপগোপী নিত্য সিদ্ব-শ্রেণীতূক্ত ।
এরা লীলার জন্ত কৃষ্ণের সঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন এবং কৃষ্ণের লীলাসংবরণের
সঙ্গে নিত্যধামে চলে যান। আসলে এদের জন্ম-মৃত্যু হয় না, আবির্ভাব-
তিরোভাব ঘটে মান্র। ভক্ত লীলাপরিকবের৷ শাস্ত, দাস, স্থৃত, সখা, গুরুবর্গ
ও প্রেয়সীবৃন্দ এই পাঁচ প্রকারের । অনুরূপভাবে নিত্যসিদ্ধ গৌরভক্তদের
বিষয়ও বুঝতে হবে।
॥ উদ্দীপন বিভাব॥ কষ্চের বয়স, রূপ, গুণ, প্রসাধনাদি--যা আলম্বন
বিভাবকে পূর্ণতা দান করে এবং য1 ভক্তহাদয়ে কৃষ্ণরৃতি উদ্দীপিত ক'রে
রস- পরিণামে নিয়ে যায়। কৃষ্ণেব বয়স বলতে কৈশোর বুঝায়। “বয়:
কৈশোরকং ধ্যেয়ম্ । কৈশোর বলতে প্রথম কৈশোর, মধ্য কৈশোর, শেষ
কৈশোর অর্থাৎ নবযৌবন। বূপ হ'ল ভূষণাদিরও যা! শোভর কারণ। নিতাস্ত
রমণীয়তা অসমোধধ্বত1 প্রভৃতি হ'ল রুষ্*ব্ূপের বৈশিষ্ট্য । গুণের বিষয় পূর্বেই
বল। হয়েছে। প্রসাধন হ'ল কৃষ্ণের বেশভূষ।--পীতবাস, ময্ুরপুচ্ছ, মাল্যগন্ধাদি |
কেশবন্ধন, অন্ুলেপন, যাল্য, চিত্র, তিলক, তাশ্থল ও ক্রীড়াপন্ম এসবকে এক
কথায় 'আকন্প' বল! হয়েছে। কৃষ্ণের মণ্ডন হ'ল *কেয়ুর, কুগুল, হার, নৃপুর
প্রভৃতি। বশী তিন প্রকার, বেণু (বারো আঙুল দীর্ঘ, ছয়টি ছিত্রযুক্ত ),
মুরলী (দুই হাত দীর্ঘ, মুখরন্ধ ছাড়া চারটি রন্বযুক্ত ) বংশিক
(নয়ছিত্রযুক্ত সতেরে! আঙ্ল দীর্ঘ)। রাসলীলাতে কৃষ্ণের চেষ্টাগুলিও
উদ্দীপন । শু ছাড়া তুলসী, কষ্জন্মদিন, দোলোত্ব প্রভৃতি |, কষ্ণ-সন্বন্ধীয়
শ্ ১৭
ই৫৮ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
এই লব উদ্দীপন বিভাব লৌকিক অলংকার শান্থ্ের বহিভূতি। লৌকিক শান্ছে
কৈশোরের মহিমা বণিত হয়নি, আর বংশীধ্বনির আশ্চর্য আকর্ধণের কথাও
নেই। উল্লিখিত উদ্দীপনগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠতা হ'ল মুরলীরবের, যেমন-__
ক্ণবক্ে ন্দুনিষ্ঠ্যুতং মুরলীনিনদামৃতম্।
উদ্দীপনানাং সর্ধেষাং মধ্যে প্রবরমীর্যতে ॥
॥ অনুভ্ভাৰ॥ অর্থাৎ আলম্বনের চেষ্টা বা কার্য যার দ্বারা আলম্বনের
অন্তর্বতত স্থায়ীভাবের অনুমান হয়। কৃষ্ণপক্ষে ভ্রবিক্ষেপ, স্মিত, বিহসিত,
মত্তগতি, গীত, মুরলীবাদন, চুম্বনাদি-_মধুরে, এবং ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভিন্ন চারটি
রসে। রাধাপক্ষে সম্ভোগশূঙ্গার এবং বিপ্রলশ্তশূঙ্গারভেন্দে কটাক্ষ, ম্মিত,
নতাঁননতা, দীর্ঘশ্বাস, গ্রীবাবক্রতা, হস্তাবরোধ প্রভৃতি অগণিত ।
পূর্বরাগান্বিতাবস্থার দশ দশার মধ্যে অনিদ্রা, দেহের কূশতা, জড়তা, ব্যাকুলত,
জরোত্াপ, উন্মত্তচেষ্টা, যুছণ প্রভৃতি বিখ্যাত। আশ্রয়ালম্বন ভক্তপক্ষে গীত,
নৃত্য, ভূলুন, হুংকার, দীর্ঘশ্বাস, লালাশ্রাব, অট্টহান্ত, লোকাপেক্ষা-পরিত্যাগ
প্রভৃতি । এগুলি অবশ্য শ্রীরাধা-পক্ষেও অন্থুমেয়। এর মধ্যে লালাত্রাব, অষ্রহাস
উদদূর্া প্রভৃতি যা লৌকিকে দেখা যায় না তাকে উদ্ভাম্বব বল! হয়েছে।
॥ সাত্ত্বিক॥ লৌকিক অলংকারশান্ত্ে বল? হয়েছে থে এগুলি অস্ুভাব
পর্যারের হলেও ঠিক অন্গভাব নয়। যেহেতু সত্ব বা আত্মার বিজ্ঞান-আনন্দময়
প্রকাশই এগুলির বৈশিষ্ট্য । শ্রীন্ূপ বলেছেন, সাক্ষাৎ রুষ্ণসন্বন্বী অথব। কিঞ্চিৎ
ব্যবধানের ফলেও যে সব ভাব চিত্তকে অধিকার করে, তার মূল অবস্থাটিই হ'ল
সত্ব। এর থেকে যে সব অন্ুভাব জন্মে তাদের সাত্বিক বলা যায়। আসল
কথা মনে হয়, ভক্তি-রসসিদ্ধাস্ত অনুসারে এগুলির সঙ্গে অন্ুভাবের সম্পর্ক
অভেদে ভেদরূপ নয়, একেবারে পৃথক । ভক্তিরতির বিশেষ অন্ভাবগুলিকে
দিব্য মনে কব। হলেও বল। যায় যে, নৃত্য গীত হাহাকার ভূলুগ্ঠনার্দিতে
বুদ্ধিপূর্বক প্রবৃত্তি, স্তস্তাদি সাত্বিকে অনায়াস প্রবৃত্তি এই পার্ধক্য । শ্রীপা জীব
এইভাবেই পার্থক্য বিনির্ণয় করেছেন।
ভক্তিশাস্ত্রের বিশেষ হ'ল শ্রীর্প সাত্বিকভাবগুলিকে স্সিপ্ধ, দিপ্ধ এবং রুক্ষ
এই তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন এবং স্সিগ্কার্দির আবার গৌণ এবং মুখ্য এই
ছুই ছুই বিভাগ ধরেছেন। এই তিন ভাগে বিভক্ত মুখ্য' হচ্ছে সাক্ষাৎ
“রস” অর্থাৎ ভক্তিরস ২৫২
কষসন্বন্ধীয় অর্থাৎ মুখ্যভক্তিরস-সন্বদ্ধীয় আর গৌণ হচ্ছে গৌণ-ভক্তিরসযুক্ত।
“দগ্ধ” হচ্ছে স্পষ্টভাবে মুখ্য-গৌণ রতি ছাড়া অনুগামী কোনও রতির উৎপর
সাত্বিক। আর “রুক্ষ হচ্ছে রতিশৃন্য জনের রত্যাভাসের ফলে উৎপন্ন সাত্বিক।
সান্বিক ভাব হ'ল আটটি_স্তভ্ত, স্বেদ (ঘর্ষ ), রোমাঞ্চ, স্বরভঙ্গ, বেপথু
( কম্পন ), বিবর্ণতা, অশ্রু এবং প্রলয় (মুছণ)। হর্য, ভীতি, বিস্ময়, বিষাদ
এবং ক্রোধ থেকে হয় শ্তন্ভের প্রকাশ । শুস্তে বাক্যার্দি বন্ধ হয়ে যায় এবং অবয়ব-
গুলি নিশ্চল হয়ে পডে। হর্যভরক্রোধার্দি থেকে উৎপন হয় ঘর্ম । আশ্চর্য-দর্শন,
হর্ষ, উৎসাহ ও ভয় থেকে রোমাঞ্চ । বিষাদ, বিস্ময়, ক্রোধ আনন্দ, ভয় থেকে
স্বরভঙ্গ। ভ্রাস, ক্রোধ, হর্ষ থেকে গাত্রকম্পন | বিষাদ, ক্রোধ, ভয় থেকে
দেহের বিবর্ণত। | হর্ষ, বিষাদ, ক্রোধ থেকে বিনা প্রযত্বে নেত্রে অশ্রর উত্তব।
সম্যক হর্ষ বা বিষাদ থেকে উত্তভৃত হয় জ্ঞানশৃগ্তা বা মৃছণ। যুছ সাব্বিকে
কুপতন, হস্তপদাদির আক্ষেপ প্রভৃতি অনুভাব দেখা যায়।
শ্রীৰ্প প্রদত্ত স্শ্ম বিভাগ অনুযায়ী এই সব সাত্বিক ভাবের আবার
ক্মোৎকর্ষ হয়ে থাকে । উৎকর্ষ খলা যায় ষদি বহুকালব্যাপী হয়, বনুজঙ্গব্যাপী
হয় এবং স্বরূপতই তীব্রতর তীব্রতম হয় । এই রীতি অন্ায়ী ধৃমায্রিত, জ্বলিত,
দা এবং উদ্দীপ্ত এই হ'ল সাত্বিক-ভাবের ক্রমবৃদ্ধি। অল্প প্রকাশে ধৃমায়িত,
ছুই তিন সাত্বিকের একত্র দর্শনঘোগ্য প্রকাশে জলিত, চার পাঁচ সাত্বিকের একক্র
প্রকাশে দীপ্ত এবং সমুদয় সাত্বিকের পরিশ্ফুট ও দীর্ঘকালবযাপ] প্রকাশে উদ্দাপ্ত
হদ্ধে থাকে। প্রথম জগন্নাথ-দর্শনের পূর্বমূহূর্তে মহাপ্রভু যুছি+ হয়ে পড়েছিলেন।
তাই দেখে গোপীনাথ আচার্ষের সঙ্ায়তায় সার্বভৌম নিশ্চয় করেছিলেন__
“স্থদ্দীপ্ত সাত্বিক এই নাম যে প্রলয়” ।
॥ ব্যন্িচারী বা সঞ্চারী ॥ স্থায়ীভাবের অভিমুখে চালিত হয়ে স্থায়ীকে
গতি দান করে, প্রবুদ্ধ করে এজন্য ব্যভিচারী । লৌকিক অলংকারশাস্ত্বের
অন্থরূপ শুক্তিশাস্ত্রে তেত্রিশটি ব্যভিচারীর উল্লেখ কর। হয়েছে। স্থায়ীভাবে
সঙ্গে সংগতি অনুসারে বাযভিচারীর'ও বিভাগ আছে । যেমন. লজ্জা, হাস, নির্বেদ
বিষাদ, শঙ্কা, ত্রাস, আলস্য, ত্রীড়া, হর্ষ প্রভৃতি মধুর রলে ব্যভিচারী । নিদ্র
আলম্ত, অবহিথ। প্রভৃতি হান্তরসে ; নির্বেদ, মোহ, অপনম্মার, ব্যাধি, গ্লানি, স্মৃতি,
শ্রম, বিষাদ, জড়ত) প্রভৃতি করুণের ব্যভিচারী । এরকম এক একটি মুখ এবং
গৌণ রসের পুষ্টিকারক বিভিন্ন ব্যভিচারী রয়েছে।
২৯ বৈষুণব-রস-প্রকাশ
আলংকারিকের! ব্যভিচারীর সন্ধি, শাবল্য, শাস্তি প্রভৃতির উল্লেখ করেছেন।
দুই ভাবের মিলন-মিশ্রণে সন্ধি, বিরুদ্ধ ব্যতিচারীর সংমর্দে শাবল্য, প্রবল কোনে
ভাবের বিনাশে ভাবশান্তি ঘটে । শান্ত, দাস্য প্রভৃতি বিবিধ ভক্তের বিশিষ্টতার
জন্য তাদের চিত্তবৃত্ভিও ভিন্ন ভিন্ন হয় এবং চিত্ত অনুসারে ভাবগুলির উদ্দয়, বিলয়,
সন্ধি, শাবল/ ভিন্ন ভিন্ন রীতির হয়ে থাকে । নিযে ( চৈতন্তভাগবত ও চরিতামত
থেকে ) এই সব সুক্ষ ভক্তিরসদর্শন যে-প্রতাক্ষের প্রেরণায় ঘটেছিল অন্ুভাঁব-সহ
হাপ্রভুর সেই আশ্চর্য ভাবচিত্র দৃষ্টাস্তস্বরূপ উৎকীর্ণ হ*ল £
ষখন কান্দয়ে প্রভূ প্রহরেক কান্দে।
লোটায় ভূমিতে কেশ, তাহ] নাহি বান্ধে ॥
সে ক্রন্দন দেখি হেন কোন্ কাষ্ঠ আছে।
না পড়ে বিহ্বল হেয় সে প্রভুর পাছে ॥
যখন হাঁসয়ে প্রভূ মহা অন্রহাস।
সেই হয় প্রহরেক আনন্দ-বিলাস |
দাস্তভাবে প্রভু নিজ মহিমা না জানে।
সেব্য সেবক প্রভূ হেল আপনে ॥
জিনিলু' জিনিলু' বোলে উঠে ঘনে ঘনে।
হাসিয়া বিকল প্রভূ হএ সেইক্ষণে ॥
ক্ষণে ক্ষণে আপনে গায়েন উচ্চধ্বনি।
ব্রদ্দাণ্ড ভেদয়ে যেন হেনমত শুনি ॥
ক্ষণে ক্বণে অঙ্গে হয় ব্রহ্মাণ্ডের ভর।
ধরিতে সমর্থ কেহে! নহে অনুচর্ ॥
ক্ষণে হয় তুলা হৈতে অত্যন্ত পাতল।
হরিষে করিয়। কান্ধে বুলয়ে সকল ॥
প্রতুরে করিয়। কান্ধে ভাগবতগণ।
পূর্ণানন্দ হএঞ9] করে অঙ্গনে ভ্রমণ ॥
যখনে ব। হএ প্রতু আনন্দে মুছিত।
কণমুলে হরি বোলে সভে অতি ভীত ॥
ক্ষণে ক্ষণে সর্ব অঙ্গে হএ মহাকম্প।
মহাশীতে বাজে যেন বালকের দত্ত ॥
'রস* অর্থাৎ ভক্তিরস ২৬১
ক্ষণে ক্ষণে মহাস্বেদ' হএ কলেবরে।
যৃতিমতী গঙ্গা! যেন আইল। শরীরে ॥
কখনো বা হএ অঙ্গ জলস্ত অনল ।
দিতে মাত্র মলয়জ শুখায় সকল ॥
ক্ষণে ক্ষণে অদতৃত বহে মহাশ্বাস।
সম্মুখ ছাড়িয়া সভে হএ একপাশ ॥--*.. _-চৈতন্তভাগবত।
গরুড়ের সন্ধানে রহি করে দরশনে
সে আনন্দের কি কহিব বলে।
গরুড়ন্তম্তের তলে আছে এক নিশ্থালে
সে খাল ভরিল অশ্রজলে |
তাহা হইতে ঘরে আসি মাটির উপরে বসি
নখে করে পৃথিবী লিখন।
হা হা কাহা বৃন্দাবন কাহা গোপেন্দ্র নন্দন
ক্কাহা সেই বংশীবদন ॥% *
উঠিল নানা ভাববেগ মনে হৈল উছ্ছেগ
ক্ষণমাত্র নারে গোঙাইতে ।
প্রবল বিরহাঁনল ধের্য হৈল টলমল
নান। শ্লোক লাগিল] পড়িতে ॥*% *
নানা ভাবের প্রাবল্য হৈল সন্ধি শাবল্য
ভাবে ভাবে হেল মহারণ।
ওতস্থক্য চাপল্য দৈন্য রোষামর্য আদি সৈম্ত
প্রেমোন্মাদ সভার কারণ ॥
মত্বগজ ভাবগণ গ্রভুর দেহ ইক্ষবন
গজযুদ্ধে বনের দূলন।
প্রভুর হৈণ দিব্যোন্সাদ তন্থ মন অবসাদ,
ভাবাবেশে করে সম্বোধন ॥%%
স্তম্ভ কম্প প্রন্থেদ বৈবর্ণা অশ্রু ত্বরভেদ
দেহ হৈল পুলকে ব্যাপিত।
হাসে কান্দে নাচে গায় উঠি ইতি উতি ধায়
ক্ষণে ভূমে পড়িয়া মৃছিত ॥*+** __চৈতন্তচরিতামত ।
২৬২ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
কচিন্মিশ্রাবাসে ব্রজপতিন্ৃতস্তোরুবিরহাৎ
ঈথচ্ডীসন্ধিতাদ্দধদধিক দৈর্ঘ্যং ভুজপদো:।
লুঠন্ ভূমৌ কাক্কা বিকলবিকলং গদ্গদ্বাঁচ?
রুদ্ন্ শ্রীগৌরাঙে। হৃদয়ে উদয়ন্ মাং মদয়তি ॥
_ গোরা গস্তবকন্পবৃক্ষঃ।
শ্রচৈতন্তের নীলাচললীলাব প্রত্যক্ষত্ষ্টা ্রপাদ রখুনাথ দাস সেই লীলার একাংশ
স্মরণ ক'রে বলছেন : একদিন কাশীমিশ্রের আবাসে কৃষ্ণবিরহে শ্রচৈতন্য এমনই
কাতর হয়েছিলেন যে ভাবের আধিক্যে তার দেহে অদ্ভুত বিক্রিয্" দেখা
গিয়েছিল । তার অশ্রপ্রত্যঙ্গের সন্থিগুলি শিথিল হয়ে গিয়েছিল, হাত প|
অত্যন্ত দীর্ঘ হয়ে পড়েছিল। এমন অবস্থায় তিনি নিতাস্ত বিকল হয়ে
স্বরভঙ্গজনিত গ্দ' দস্বরে জান্ষেপ ও রোদন বরতে করতে মাটিতে গড়াগড়ি
দিয়েছিলেন। ফ্ইই দৃশ্টি আমার মনে হওয়ায় আজ আমার হত
বিভ্রান্ত হচ্ছে । অপিচ-_
একদিন মহাওতু সমুদ্র যাইতে ।
চটক পর্বত দেখিলেন আচন্থিতে ॥
গোবর্ধন শৈল জ্ঞানে আবিষ্ট হৈল1।
পর্বত দিশাতে প্রভু ধাইয়া চলিলা ॥
“হভ্তায়মপ্রিববলাঃ”-_
এই শ্লোক পরি প্রভূ চলে বাধুবেগে।
গোবিন্দ ধাইল পাছে নাহি পায় লাগে ॥
ফুকার পডিল মহাকোলাহল হেল ।
যেই ধাহ। ছিল সেই উঠিয়া ধাইল॥
ত্বূপ জগদানন্দ পণ্ডিত গদাধর |
রামাই নন্দ।ই নীলাই পণ্ডিত শংকর ॥
পুরী ভারতী গোসাঞ্ আইলা সিদ্ধৃতীরে ।
ভগবান্ আচার্য খগ্জ চলিলণ ধীরে ধীরে ॥
প্রথমে চলিল। প্রভূ যেন বারুগতি।
শুভ্ভভাব পথে হেল চলিতে নাহি শক্তি ॥
প্রতি রোমকৃপে মাংস ব্রণের আকার ।
তার উপর রোমোদগম কদন্ব প্রকার ॥
“রস' অর্থাৎ ভক্তিরস ২৬৩
প্রতিরোমে প্রন্থেদ পড়ে রুধিবের ধার ।
কণ্ঠ ঘর্থর নাহি বর্ণের উচ্চার ॥
ছুই নেন্র ভরি অশ্রু বহয়ে অপার ।
সমুদ্রে মিলিল ষেন গঙ্গাযমুনাধার
বৈবুর্যে শঙ্খপ্রায় শ্বেত হৈল অঙ্গ |
তবে কম্প উঠে যেন সমুদ্রতরঙ্গ ॥
কপিতে কাপিতে প্রভু ভূমিতে পড়িল]।
তবে ত গোবিন্দ প্রভুর নিকটে আইল। ॥
_ চৈতন্তচরিতামত।
॥ গধুররসবৈদিত্রী ॥
্থাযীভাব-প্রসঙ্গ £ মনের অস্থকূল বিষয় যদি শৃঙ্গার হয় তাহলে সেই
বিষয়ে স্থদৃঢ় মানসিক প্রবণতাই হবে শৃঙ্গার ব। মধুর রতি ব1 মধুর স্থায়ীভাব |
মধুররতির চিত্তকে ব্যাপ্ত করার যূল কারণ হিসেবে শ্রীরপ সাতটি ব্যাপার লক্ষ্য
করেছেন।
অভিযোগ-__অর্থাৎ অভিপ্রেত নায়কপক্ষে নায়িকার এবং নায়্িকাপক্ষে
নায়কের ভাঁবপ্রকাঁশ থেকে ভাবোদ্গম। এ নিজে প্রত্যক্ষ করলেও হতে পারে ।
অন্টে প্রত্যক্ষ ক'রে বিবরণ দ্দিলেও হতে পারে । অভিযোগ, যেমন-_
বাহু তুলিলে কেশ বন্ধন ছলে।
ঘন ঘন বিকাশিলে ধদনকমলে ॥
আঙ্গভঙ্গ কৈলে কেহ্ছে মোর বিদ্যমানে ।
এবে আলিঙ্গন দিআ1 রাখহ পরাণে ॥
কিসকে ঘুচাইলে" রাধা নেতের আঞ্চল।
দেখায়লে কুচভার করায়িলে বিকল ॥
যমুনার তীরে রাধা কদমের তলে।
তরল করিলে কেহ্ছে নয়নযুগলে ॥
আধ মুখ ঢাকিলে সক্অ বসনে।
তে কারণে রাধ। ধরিতে নারে মনে ॥
_ চত্ীদান।
২৬৪ বৈষুব-রস-প্রকাশ
এখানে প্রত্যক্ষভাবে রাধার ভাবদর্শনে কৃষ্ণের ভাবোত্পতি। পরোক্ষে যথা
সখীমুখে কৃষ্ণভাবাবেশ সংবাদ-_
ধনি ধনি রমণি-জনম ধনি তোর ।
সব জান কানু কানু করি ঝুরয়ে
সো তুয়! ভাবে বিভোর ॥* *
কেশ পসারি যব তুহু আছলি
উর পর অন্বর আধ]।
সে নব হেরি কান্নু ভেল আকুল
কহ ধনি ইথে কি সমাধ1 ॥"""
_বিগ্যাপতি (
বিষয়-_শব, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়লভ্য বিষয়ের যোগে, ষথা-_
কদম্বের বন হৈতে কিবা শব্দ আচন্বিতে
আসিয়া পশিল মোর কানে ।* *
রাই কহে কেবা হেন মূরলী বাজায় যেন
বিষামুতে একত্র করিয়।।
অথবা, “কেব শুনাইল শ্াম-নামন প্রভৃতিতে শব্ধ রতির কারণ।
থির বিজুরি বরণ গোরি
পেখিঙ্থ ঘাটে কৃলে।
অথবণ, ভল কএ পেখ ন তেল।
মেঘমাল সঞ তভিতলত। জঙ্গ
হৃদয় শেল দই গেল ॥
আধ আচর খসি আধ বদন হসি
আধহি নয়ান তরঙ্গ ।
প্রভৃতিতে রূপ কারণ। এরকম অন্যান্য বিষয় ।
সশ্বন্ধ---বনহুরূপ গুণের একাধারে সমন্বয় । যেমন,
রূপে ভরল দ্দিঠি সোঙরি পরশ মিঠি
পুলক ন তেজই অল | *
নব নব গুণগণে বান্ধল মঝ্ু মনে
ধর্ম রহব কোন ঠাম। প্রভৃতি |
অভিমান-_মানসিক নিশ্চয়ত।, যেমন,
মধুররসবৈচিত্রী ২৬৫
তোর! কুলবতী ভজ নিজ পতি
যার যেবা মনে লয়।
ভাবিয়া দেখিলু শ্যাম বধু বিনে
আর কেহ মোর নয় ॥ প্রভৃতি ।
তদীয়বিশেষ_ শ্রীকৃষ্ণের পদাঙ্ক, গোষ্ঠ, গোবর্ধন, যমুনা, প্রিয়জন প্রভৃতি ।
উপম।- শ্রীকৃষ্ণের সাদৃশ্য অনুভবে, যেমন কৃষ্ণলীলার অন্থকর্তা নটের ভাব ও
কার্ধাদি দর্শন, মেঘ 'তমাল প্রভৃতি দর্শন। যেমন-_
নবনীল মেঘ হেরি আকাশের গায়।
শৃন্তে বাছু মেলি গোপী আলিঙ্গিতে চায়।
স্বভাব_উপরে কথিত বাহ্হেতু নয়, আপন] থেকে ভাবের উত্তবহেতু।
বল] যেতে পারে, ম্বতঃসিদ্ধ, প্রায়-অকারণ কৃষ্ণান্নুরাগ। অথব] কৃষ্ণের গোপীর
প্রতি স্বাভাবিক রতি। এই ম্বভাব-কারণতা একমাত্র কষ্ণপ্রেয়সী, বিশেষতঃ
গোপীদের এবং মুখ্যতঃ শ্রীরাধার মধ্যেই লভ্য। এই দিক্ থেকে স্বভাব-কারণের
ছুই বিভাগ : (১) নিসর্গ, (২) স্বরূপ। নিসর্গ হচ্ছে স্ব বাঁসনা ব] সংস্কার |
তা কখনও ভাবোদগমের কারণ হতে পারে। যেমন,
শুন লো মরম সই।
যখন আমার জনম হইল
নয়ন মুদ্দিয়া রই ।
প্রভৃতি চণ্তীদ্রাসের পদ। 'ম্বরূপ'-কারণ নিসর্ণের থেকেও আরও এক ধাপ
উপরের । এর মধ্যে কৃষ্ণনিষ্ঠ স্বরূপ সঙ্জনমাত্রকেই আবিষ্ট করতে পারে।
ললনানিষ্ঠ স্বরূপ একমাত্র ব্রজগোপী, বিশেষে শ্রীরাধাতেই লত্য। শ্রীরূপ
বলছেন-_“রতিঃ স্বভাবজৈব স্ঠাৎ প্রায়ে। গোকুলন্থভ্রবাম। এই স্বাভাবিক
কৃষ্তরতির প্রকাঁশ যথ। শ্রীগৌরাঙ্গে £
প্রভু নোলে 'ভাই সব, কহিল। সুসত্য।
আমার এসব কথ অন্থাত্র অকথ্য ॥
কুষ্ণবর্ণ এক শিশু মুরলী বাজায় ।
সবে দেখে] তাই, ভাই, বোলে । সর্বথায় ॥
যত শুনি শ্রবণে সকল কষ্ণনাম।
সকল ভূবন দেখে | গোবিন্দের ধাম ॥
হ্৬ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
অথবা, শ্রীচৈতন্য-দর্শন মাত্রেই নিত্যানন্দের দৃঢ় সংস্কার বশতঃ ভাবাবেশ»
টি
নিত্যানন্দ-সন্মুখে রহিলা বিশ্ব্তর |
চিনিলেন নিত্যানন্দ আপন ঈশ্বর ॥
হরিষে স্তত্িত হৈল। নিত্যানন্দ রাঁয়।
একদুষ্টি হই বিশ্বস্তর-রূপ চায়।
রসনায় লেহে যেন, দরশনে পান।
ভূজে যেন আলিঙ্গন, নাসিকায়ে ঘ্রাণ ॥'
_টেতন্যভাগধত |
এ দৃষ্টান্ত ছুটি যথাক্রমে ললনানিস এবং উভদ্বনিঠ স্বরূপের। প্রথমটি
কেবল নায়িকার মধ্যে, কৃষ্ণের দর্শন-শ্রধণ ব্যতিরেকে আপনা থেকেই
কৃষ্স্কুরণ। শ্রীকৃষ্ণ এবং গোপী ছুয়েরই স্বরূপ একত্র অভিব্যক্ত হ'লে
উভয়নিষ্ঠ ত্বরূপ হয়।
॥ কষ্ণরতির প্রথম তিন বিভাগ £ সাধারণী, সমঞ্জসা, সমর্থ ॥
সাধারণী_ যেখানে স্বন্থখবাসনাময় সম্ভোগেচ্ছাই রতির হেতু, সেখানে
সাধারণী। যেমন কুজাদি নাগরিকার। ভাঁগবতে বণিত কুক্জা বলছেন-_
“হে কৃষ্ণ! এসেছ যখন, কিছুদিন আমার সঙ্গে বাঁস ক'রে আমাকে আনন্দ
দ্াও। আমিযে তোমাকে ছাডা থাকতে পারছি না।” ভোগবাসনা-যুক্ত
বলে কুব্জাদি নায়িকার এই রকম রতি নিবিভ নয়। ভোগেচ্ছা তিরোহিত
হ'লে রতিও তিরোধান করে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হ'তে পারে তাহ'লে এরকম
রূৃতিকে কৃষ্ণরতি পর্যায়ে ফেলা হ'ল কেন? তার উত্তর এই যে, কিছু ন)
থাকার চেয়ে স্বপ্ন হ'লেও. কিছু থাক। ভালো এই অর্থে। কোনে সংসারী
ব্যক্তি হ্বনদিন কৃষ্সেবা ক'রে যদ্দি সংসারে প্রত্যাবর্তন করে তাহ'লে
তার সেই স্বল্প স্থকৃতিও কি মূল্যহীন হবে? এরকম সাময়িক কাম-
গন্ধময় রতিও দুর্লভ বলে শ্রীবপ একে “মণি” বলেছেন, যদিও পরবর্তী
উন্নততর উন্লততম শ্রেণীর রতিকে চিন্তামণি এবং কৌন্তভ মণির সঙ্গে
তুলনা! করেছেন। কুজার মধ্যে রাগাঙ্কিত ভক্তিরতির ( হোক তা
আতেন্জিয়গ্রীতিজাত ) আবির্ভাব ঘটেছিল বলেই কৃষ্ণ এবিষয়ে লানন্দ
মধুররসবৈচিত্রী ২৬৭
সম্মতি দিয়েছি প্রীরূপ সাধারণী রতিকে ধৃমায়িত” বলেছেন, যেহেতু
এতে সাত্বিক ভাব একেবারে প্রকাশিত হয় না। আর এই রতির সীমা
প্রেমের প্রারস্ত স্তর পর্যন্তই, এই নির্দেশ দিয়েছেন।
সমপ্ডীসা_এ রতি সাধারণীর উর্বস্তরের। কারণ, “সাধারণী'তে
সম্তোগেচ্ছ। সব সময়েই পৃথক থাকে, আর সমগ্তসায় কখনে। কখনো
মাত্র পৃথকৃ থাকে । এ রতি পত্বীভাবের, কৃষ্ণের গুণার্দি শ্রবণ থেকে
ধার। তাঁকে পতিরূপে পেতে চেয়েছিলেন তাদের। অর্থাৎ দ্বারকার রুল্সিণী
প্রভৃতি মহিষীদের এবং ,বুন্দাবনের সেই সব গোপীর, ধার প্রাথন।
করেছিলেন কাত্যায়নি মহামায়ে মহাযোগিস্তধী শ্বরি। নন্দগোপস্থতং দেবি
পতিং মে কুরু তে নমঃ ॥ বিবাহগত পত্বীত্বে লোকাপেক্ষা ধর্মাপেক্ষা
থাকে । আর স্বস্থখবাসনাও কদাচিৎ পৃথকৃনাঁবে থাকে, তাই এ রভি
মধ্যবতশ স্তরের। সাধারণী অনিবিভ, এনর্থ] অভিনিবিড আর এ হ'ল
নিবিড। অমর্ধসা রতির শ্রেয়স্করতার জন্য রুক্সিণীর চিঠি পাবামান্র কু
ছারক থেকে বিদর্ভ ছুটেছিলেন রুক্স্িণীকে অপহরণ করার জন্য । কিন্ত
আবার এও ঠিক যে, যৌনসম্ভোগের বাসনা নিয়ে ষোড়শ সহশত্র মভিবী
যখন তার্দের ভাব, হাব, হেল, কিলঞ্চিত প্রভৃতির দ্বার কুষ্ণচকে আবরণ
করার চেষ্টা করেছিলেন তখন কুষ্ণ তাদের কাছে ধরা দেননি । স্মদ্ধনজি-
সম্পন্ন গোপিকাদের কাছেই ভিনি' সর্বথ। আত্মবিক্রম করেছিলেন । সমগ্রসা
রতিতে ছুটি একটি সাত্বিক থাকে বলে জলিত ব1 দীপ্ত অবস্থার পবিচয়
পাওয়। যাঁয়। কিন্তু উদ্দীপ্ত এবং স্থ-উদ্দীপ্ত সাত্বিকভাবের অর্থাৎ সাত্বিকের
পূর্ণতির এবং পূর্ণতম প্রকাশের পরিচয় একমাত্র সমর্থাতেই প্রাপ্তব্য।
সমর্থ কৃষ্ণের প্রার্থনীয়তম যে রতিতে সন্ভোগেচ্ছ৷ বিন্তুমাত্র পৃথক
থাকে না, রতির সঙ্গে একাত্ম বা বিলীন হয়ে যায় তাই হ'ল জমর্থ1।
এতে ্ব-ইন্জ্রিয়ের তৃপ্থিলালসা থাকে না। কৃষেব্দ্রিয়-গ্রীতি-ইচ্ছাই এর
সর্ব। এ রতির হেতু পূর্বোলিখিত স্বরূপনিষ্ঠতা। এ নৈসগিক,
স্বতঃসিদ্ধ। একমাব্র ব্রজগোঁপীর মধ্যেই এর স্থিতি । শ্রীবরপ আবও
বলছেন যে, এ রতি সর্ববিস্মীরিগন্ধী” অর্থাৎ এতে ইহকাল, পরকাল,
কুলধর্ম, লোকলজ্জা এমনকি ছুন্তাজ আর্পথ অর্থাৎ স্বামীধর্মও ভুলিয়ে দেয়।
আর পরিণামে মহাভাব-অবস্থায় পৌছে দেয়। এ রতি নৈসগিক হ'লেও
ব্ূপাদি দর্শন থেকে এর আবির্ভাব ঘটতে পারে (উত্তব নয়)। এ.
২৬৮ বৈষব-রস-গ্রকাশ
সআ্দতম বলে বহিরঙ্গ কোনে! ভাবই একে প্রতিহত করতে পারে না।
এ 'সর্বাভূতবিলাসোমিচমৎকারপ্রীঃ। এই গোপীভাবকে লক্ষ্য করেই কুষ্ণ
বলেছিলেন-__এ"দের প্রেমের খণ আমি জন্মে জন্মেও শোধ করতে পারব
না। এরা ছুশ্ছেছে গৃহশৃঙ্খল ছিন্ন করে আমাকে ভজনা করেছেন।
পরকীয়াত্েই সমর্থা রতির প্রতিষ্ঠা। কৃষ্ণপ্রেমের জন্য ত্যাগ ও ছুঃখ-
সহিষ্তার চূড়ান্ত মহিমা! একমাত্র পরকীয়া! রতিতেই প্রাগ্তব্য।
॥ সমর্থা রতির বিকাশ ও পরিণাম ॥
কৃষ্ণরতির ক্রমোতকর্ষ হ"ল-_প্রেম, স্লেহ, মান, প্রণয়, রাগ, অনুরাগ, ভাব,
মহাভাব। মহাভাবই এর চরমাবস্থা, এর পর আর কল্পনা করা যায়
না। চরিতামৃত উজ্জ্লনীলমণির অনুসরণে বলছেন £
প্রেম ক্রমে বাড়ে, হয় স্সেহ মান প্রণয় |
রাগ অনুরাগ ভাব মহাভাব হয় ॥
বীজ ইক্ষুরন গুভ তবে খণ্ড সার।
শর্করা সিত] মিছরি শুদ্ধ মিছরি আর ॥
ইহ। ষৈছে ক্রমে নির্মল, ক্রমে বাড়ে স্বাদ ।
রতি প্রেমাদিতে তৈছে বাঢ়য়ে আস্বাদ ॥
রতির এই উৎকর্ষময় অবস্থাগুলি অবশ্য সাধারণভাবে “প্রেম” নামেই
অভিহিত হয়ে থাকে । আর অগণিত গোপীদের মধ্যে স্বভাবের দিকৃ
দিয়ে একে অন্ত থেকে অন্পবিস্তর বিভিন্ন ব'লে প্রেমের বৈচিত্রী আরও
অগণিত হয়ে পড়ে। ফলে শ্রীকষ্ণের গ্রেমরমবৈচিত্র্য অন্ভব বাস্তব হয়ে
ওঠে । এগুলি উত্তরোত্তর উৎকৃষ্ট হলেও গোপিকাদের, বিশেষতঃ শ্ররাধার
ক্ষেত্রে এগুলির আবির্ভতাবে অগ্রপশ্চাৎ নির্ণয় করা কঠিন। ন্রেহের থেকে
একেবারে রাগ-অন্ুরাগের অবস্থা, পরে প্রণয়-মানের, এমনটি শ্রীমতীর
ক্ষেত্রে কখনও দেখা যায়।
১. প্রেম সর্বথা ধ্ংসরহিতং সত্যপি ধ্বংসকারণে।
যন্ভাববন্ধনং যুনোঃ অ প্রেম! পরিকীতিতঃ ॥
বিনষ্ট হবার বাহা অন্তরঙ্গ বহু কারণ থাকলেও যুবক-যুবতীর ষে ভাববন্ধন
কোনোমতেই বিনষ্ট হয় না, তাকেই প্রেম বলে। বাহা কারণ বলতে
গুরুজনের তাড়ন-ভত্সন, 1নসর্গের বিরোধিতা, অন্ত কার্ষে নায়কের বিদেশ
ষধুররসবৈচিত্রী ২৬৯
গমন ও স্থদীর্ঘ প্রবাস এবং অস্তরজ কারণ বলতে ঈর্ষা, স্্টায় প্রভৃতি ।
যেমন, চণ্ীদাস-বর্ণনে £
যে কাহনু লাগিআ] মে! আন ন1 চাহিলো
ন1 মানিলে! লঘু গুরু জনে ।
হেন মনে পড়িহাসে আলগা উপেখিঅ। রোষে
আন লঞ] বঞ্চে বুন্দাবনে ॥%*
নান্দের নন্দন কানু যশোর্দার পোআঁল
তার সমে নেহা বাঢ়ায়িলো।
গুপতে রাখির্তে*কাজ তাক মোঞ বিকাসিলে।
তাহার উচিত ফল পাইলে"? ॥
সামা মোর দুরুবার গোআল বিশাল
প্রতি বোল ননন্দ বাছে।
সব গোপীগণে মোর কলঙ্ক তুলিআ৷ দিল
রাধিক। কাহ্বাঞ্চির সঙ্গে আছে ॥
এত সব সহি] মে। কাহের নেহাত লাগি
মোক নেহ কাহ্াঞ্চির পাশে ।
বাসলীচরণ শিরে বন্দিআ।
গাইল কড়ু চণ্তীদাসে ॥
অথবা! গোবিন্দদাসের-_
মন্দির তেজি যব পদ চারি আওলু
নিশি হেরি কম্পিত অঙ্গ ।
তিমির-ছুরস্ত পথ হেরই নপারিয়ে
পদযুগে বেঢল তুজজ ॥
একে কুলকামিনী তাহে কুহু যামিনী
ঘোর গহন অতি দূর ।
আর তাহে জলধর বরিখয়ে ঝরঝর
হাষয যাঅব কোন পুর ॥
একে পদ পঙ্কজ পঙ্কহি বুড়ন
তাঁহে শত কণ্টক শেল।
২৭০ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
যা! “রসন-আশে কছু নাহি জানলু
চির দুখ অব দূরে গেল ॥
গাঢ়ত্বের তারতম্য অনুসারে প্রেমের তিন বিভাগ-_ মন্দ, মধ্য ও প্রৌঢ় ; অর্থাৎ
গাঢ়, গাঢ়তর, গাঢ়তম। মন্দ প্রেমে নায়কের ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন মিলনের ফলে
নায়িকার প্রতি কিছুটা! অনাদর-ওদাসীন্য ঘটতে পারে । আর নায়িকা-পক্ষে
নায়কের সেবাস্থখ সম্পার্দনে কর্দাচিৎ বিশ্বৃতি ঘটতে পারে । মধ্যপ্রেমে নায়ক
অন্যান্য কান্তার ও প্রেয়সীর মধ্যে সমভাব পোষণ করতে পারেন। আর
নায়িকাপক্ষে নায়িক। বিরহছুঃখ কোনে। প্রকারে সহা করতে পারেন । নায়কের
প্রৌঢ প্রেমে নায়িকার মনোভাব, তার দুঃখকষ্ট সর্বদ। নায়কের বিচার-
বিবেচনার মধ্যে থাকে । নায়িকার প্রৌঢ় প্রেমের লক্ষণ হ'ল নিতান্ত বিচ্ছেদ
অসহিষ্ণুতা । সন্দেহ নেই গোপীশ্রেষ্ঠা রাধিকা এই প্রৌঢ় প্রেমেরই সর্বোচ্চ
অবস্থার অধিকারিণী। অন্যান্য গেপীর সঙ্গে তুলনায় রাধাপ্রেমের উৎকর্ষের
এই দিকৃটি গোবিন্দদাস কবিরাজ নিম্নলিখিত পদে স্চারুরূপে বুঝিয়েছেন £
আধক-আধ- আধ দিগ্ি-অঞ্চল
যব ধরি পেখলু' কান। উত্যাদি।
( ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত )
তা ছাডা এই পদটিতে শ্রীরাধার যে বিশেষ প্রেমের বিকাশ ফুটেছে তার
নাম হ'ল স্নেহ। এর লক্ষণ £
২, লস আরুহ পরমাং কাষ্ঠাং প্রেম! চিদ্দীপদীপনঃ |
হৃদয়ং দ্রাবয়নেষ আহ ইত্যভিধীয়তে।
অত্রোদিতে ভবেজ্জাতু ন তৃপ্চিদর্শনাদিযু॥
প্রেম প্রবধিত হয়ে যদ চিত্তের সম্যকৃ প্রকাশক হয়ে ওঠে, আর হৃদয়কে
দ্রবীভূত করে তাহ'লে স্সেহ আখ্যা লাভ করে । জ্েহের অবস্থায় কেবল শ্রবণাদি
ইব্জিয়ের তৃপ্তিবোধেই পরিতৃপ্তিবোধ ঘটে না। এতে যে চিত্রপ্রব ঘটে তার
আবার উত্তম মধ্যম ভেদ কর] যাঁয়। যে চিত্তদ্রব অঙ্গস্পর্শে উদ্ভূত তা কনিষ্ঠ,
দর্শনে উদ্ভূত হ'লে তা মধ্যম এবং কেবল শ্রবণ স্মরণ-জাত হলে তা উত্তম
হবে। যেমন-_
কে বা শুনাইল শ্যাম নাম।
কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গে।
আকুল করিল মোর প্রাণ ॥ ইত্যাদি
মধুররসবৈচিত্রী ২৭১
“অথবা, গোবিন্দদাসের-_
তুয়া অপরূপ রূপ হেরি দূর সঞ্ঞে
লোচন মন ছুহু ধাব।
পরশক লাগি আগি জলু অস্তর
জীবন রহ কিয়ে যাব।
তোহে কি কহব ভঙ্গী।
প্রেম-অগেয়ান দহনে ধনী গৈঠলি
জন্ত তু দহত পতঙ্গী ॥
কহত সম্বাদ ' কহই নাহি পারই
কাছে বিশোয়াসব বাল] ।
অন্থখন ধরণী-শয়নে কত মেটব
স্থৃতন্- অতনুশর-জ্ঞাল] ॥
কালিন্দীকৃল কদম্বক কানন
নাষে নয়নে ঝরু বারি ।
গোবিন্দ্দাস কহই অব মাধব
কৈছে জীয়বি বরনারী ॥
কেবল ইন্ড্রিয়-অন্রভবে অতৃপ্রি, যথ।-_
বূপ লাগি আখি ঝুবে গুণে মন ভোর।
প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর ॥
হিয়ার পরশ লাগি হিয়া! মোর কান্দে।
পরাণ পিরিতি লাগি থির নাহি বাদ্ধে ॥
অথবা ছোট বিদ্যাপতির দৃষ্টাত্ত £
জনম অবাঁধ হাম বপ নেহারলু
নয়ন ন তিরপিত ভেল।
সোই মধুর বোল শ্রবণহি শুনলু
শ্রতিপথে পরশ ন গেল ॥**
লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয় রাখলু
তে হিয় জুড়ন ন গেল ॥
২৭২ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
এই দিব্য অতৃপ্তির বিষয় “চরিতামৃতে+ £
এ মাধুর্ধামৃত পান সদা যেই করে।
তৃষা শান্তি নহে, তৃষ্ণা বাটে নিরস্তরে ॥
অতৃপ্ত হইয়। করে বিধির নিন্দন।
অবিদগ্ধ বিধি ভালে ন1 জানে শ্জন ॥
কোটি নেত্র নাহি দিল সবে দিল ছুই ।
তাহাতে নিমেষ, কৃষ্ণ কি দেঁখিব মুই ॥
শ্সেহের ছুই প্রকারভেদ নির্ণয় করেছেন শ্রীবূপ-ত্বতবৎস্সেহ $& মধুবৎন্সেহ |
এ-ছুই হের নিজন্ব পার্থক্য নয়, আধারগত বৈচিত্র্য মাত্র। স্লেহের স্বভাব
হল চিত্তের দ্রবতা। এই দ্রবতা মাদকতাহীন এবং উষ্ণতাহীন হ+লে
ঘৃতন্মেছ, আর স্বাভাবিক মাদকত] ও উষ্ণতাময় হ'লে মধুন্সেছ। দ্বৃতন্সেহে
দাক্ষিণ্যের ভাগ বেশি, কচিৎ কৌটিল্য। আর মধুন্সেহে বন্রত। অর্থাৎ
কৌটিল্যের ভাবই অধিক । তা ছাড়া বলা হয়েছে যে, মধু স্বতই স্বাদযুক্ত আর
গ্বত স্বতই স্বা্দহীন। ঘ্বৃতের স্বাদ্রত্বের জন্য অন্যবস্ত-সংযোগ এবং পাক
প্রয়োজন । ভাবান্তরের যোগেই ম্বৃতস্নেহ শ্বাদযুক্ত হয়ে ওঠে। মধুন্বেহে এই
ভাবাস্তর যোগের প্রয়োজন নেই। দৃষ্টান্তে শ্রারূপ স্বৃতত্রেহবূপে চন্দ্রাবলীর
প্রেম এবং মধুন্েহরূপে শ্রীরাধার প্রেম উপস্থাপিত করেছেন । চন্দ্রাবলীর
প্রেম স্বভাবতই স্সিগ্ধ, শাস্ত, আত্মসমর্পণময় | রাধিকার প্রেম স্বভাবত তীব্র,
মার্দকত। এবং উষ্ণতাযুক্ত, স্থতরাং ম্বাছু এবং অসাধারণ বৈচিত্র্যময় । পার্থক্য
বোঝাতে বলা হয়েছে প্রথমটি “তদীষতাময্ম” অর্থাৎ “আমি তোমার”
এই ভাবসম্পন্ন, দ্বিতীয়টি “মদ্রীয়তামস্” অথাৎ “তুমি আমার” এই ভাবযুক্ত।
ছিতীয়টিরই স্বাদাধিক্য এবং উৎকর্ষ। প্রথমটি সংকোচ এবং ভীতিতে
কিছুটা জড়তাপন্ন, দ্বিতীয়টিতে প্রবল জোরের অধিকার আছে, আছে
বিশেষ আত্মীয়তার আকর্ষণ। যদিচ মধুল্সেহেই কৃষ্ণ পরম বশীভূত, তবু
বৈচিত্র্যের জন্ত ঘ্বুতন্মেহও তার কাম্য হয়ে থাকে।
৩. মান-__ স্সেহস্তুৎকষ্টতাব্যাপ্ত্া। মাধুর্যং মানয়ন্ নবম্।
যে। ধারয়ত্যদাক্ষিণ্যং সমান ইতি কীত্যতে ॥
ন্েহের অবস্থা যদি গাঢ়ত। পায়, তাহ'লে তাতে আরও নৃতন বৈচিত্র্য
যুক্ত হয়ে পড়ে। সেই অবস্থায় নায়ক-নায়িকা প্রতিকূলতা বা বক্রুতা
পোষণ ক'রে মিলনে প্রেমকে আকর্ষক ও উপচিত করেন। এই অবস্থাকে
মধুররসবৈচিত্রী ২৭৩
বল। হয় মান। মান বিশেষতঃ নায়িকাতেই বণিত হয়। এ মান হচ্ছে প্রেমের
সাধারণ উচ্চ অবস্থা । বিপ্রলভ্ত-শুঙগারে এরই বিশেষ দিকের প্রকাশ।
মানাবস্থার প্রেমে নায়িক। প্রেমের গর্বে ভ্রকুটি, ক্রোধ, তিরস্কার প্রকাশ করেন।
স্সেহের ছুই বিভাগ অনুযায়ী তদাশ্রিত মানেরও ছুই বিভাগ কল্পিত
হুয়। গ্বৃতন্সেহে উদাত্ত মান এবং মধুক্সেহে ললিত মান। উদাত্ত মান ছুই
শ্রেণীর দাক্ষিণ্যোদাতত এবং বাম্যগন্ধোদাত। অভ্যন্তরে বাম্য, কিন্ত
প্রকাশে দাক্ষিণ্য থাকলে হবে দাক্ষিণ্যোদ্াাতত মান। আসলে প্রতিকূল
ভাব নেই, কিন্তু প্রকাশে বাম্য বক্রতা থাকলে বাম্যগন্ধোদাত্ত মান।
ললিত মানে রাধাকষ্ণ-কেলিবিলাস বিশেষভাবে পরিপুষ্ট হয়। ললিত
মানের মূল হ'ল শ্রীরাধার স্বাধীন-ভর্তৃকার মনোভাব । এই মনোভাবের
বশে মধুন্সেহ কৌটিল্য এবং বক্রনর্মবিলাসের উদ্ভব ঘটালে ললিতমান।বস্থ'!
হয়। শ্রীরাধার প্রচ্ছন্ন কোপ, আক্ষেপ প্রভৃতি শ্রীকষ্ণকীর্তন গ্রন্থের বংশী-
খণ্ডে সুন্দর স্ফৃতিলাভ করেছে । নিচে উদ্ধত পদে নর্মললিত মান
চমৎকার প্রকাশ পেয়েছে :
কিসের লাগিয়] রাই হইল। মানিনী।
ভাগ্যে মিলয়ে হেন মধুর ধামিনী ॥
ভাগ্যে মিলয়ে হেন রসময় কান্ত ।
তোহে বিমুখ বিধি বুঝল নিতান্ত ॥
অকারণ মানে খোয়লি নিজ দেহ।
এছে কুমতি দ্রশায়লি কেহ ॥
এছন সহচরী শুনইতে বাত।
স্থবদনী হাসি ধুনায়ত মাথ ॥
কো মানিনী? কাহে সাধসি এহ ?
কিয়ে পরলাঁপসি ন। বুঝিয়ে থেহ।
নাগর কহ, সখি, কি কহ্মি বাণী ।
কাহে তু" এই মানিনী অঙ্ছমানি ?
শুনি সহচরী সব হাসি উতরোল।
সো সঘী অবনত কছু নাহি বোল ॥
বিলসই ছুহু' তব বিবিধ বিলান।
দূরহি নেহারই বললভদাস ॥
১৮
৭৪ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
৪. প্রণয্বব_প্রেমগর্বষয় মানের ঘনীভূত নিতাস্ত বিশ্বস্ততা-যুক্ত অবস্থার
নামই প্রণয় । এই অবস্থায় প্রিয় একান্তভাবে আমারই এই স্বাধিকার-
বোধ আসে, নায়িকা! স্বাধীনভর্তকার মত প্রিয়ের সঙ্গে আচরণ করেন।
কখনও নায়ক নায়িকার প্রসাধন নির্বাহ করেন, কখনে নায়িক। স্বতঃপ্রবৃত্ত
হয়ে নায়ককে আলিঙ্গনাদিদানে স্থখী করেন। এই অবস্থায় নায়িক! লজ্জা-
সংকোচ প্রভৃতি অনাবশ্তঠক এবং কেলিবিষয়ে শত্র মনে ক'রে পরিত্যাগ
করেন। জয়দেব-বণিত রাসের পদের নিম্নলিখিত অংশে গোপীদের এই
অঙ্ংকোচ এবং একান্তবিশ্বাসময় কষ্ণগ্রীতি ফুটে উঠেছে £
পীনপয়োধরভারভরেণ হরিং পরিরভ্য সরাগম্।
গোপবধূরম্থগায়তি কাচিছুদঞ্চিতপঞ্চমরাগম্ ॥
কাপি বিলাস-বিলোল-বিলোচন-খেলনজনিতমনোজম্।
ধ্যায়তি মুগ্ধবধূরধিকং মধুস্থ্দনবদনসরোজম্ ॥
কাপি কপোলতলে মিলিতা লপিতুং কিমপি শ্রুতিমূলে ।
চারু চুচুষ্ব নিতম্ববতী দয়িতং পুলকৈরমৃকূলে ॥
কেলি-কলা-কুতৃকেন চ কাচিদযূং যমুমাবনকৃলে।
মঞ্জুলবঞ্জুলকুগ্জগতং বিচকর্ষ করেণ ছুকৃলে ॥
কোনে। গোপিক? কৃষ্ণের গণ্দেশে গণ্ড ন্যস্ত ক'রে কানে কানে রহস্যকথ।
শোনাবার ছলে চুম্বন করছেন অথব1 উগ্যানশোভাবিমুগ্ধ কৃষ্ণকে লীলাস্থলে
ফিরিয়ে আনার জন্ত বস্ত্র ধরে আকর্ষণ করছেন-_-এ প্রেমের অত্যন্ত বিশ্র
অবস্থা! ছাঁড়া সম্ভব নয়। নিক্লিখিত বর্ণনেও প্রো প্রণয়ের পরিচয়
গ্রথিত হয়েছে £
হের দেখদিয়া যা।
নিদ্দ যার ধনী চাদ-বদনী
স্টাম-অঙ্গে দিয়া পা ॥
নাঁগরের বাহু করিয়। শিথান
বিথান বসন-তৃষা।
নিশাসে দুলিছে রতন-বেশর
হাসিখানি তাহে মিশ] ॥:-- _ জগন্নাথ দাস।
প্রকারান্তরে শ্রীমতী কৃষ্ণকে দিয়ে নিজের প্রসাধন করিয়ে নিম্নে অপূর্ব
স্থথান্ুভব করছেন :
মধুররসবৈচিত্রী ২৭৫
আনন্দে স্ুবদনী কছু নাহি জান।
বেশ বনাঅত নাগর কান ॥
সিন্দুর দেঅল সী'খি শিঙারি ।
ভালহি মুগমদ পত্রকি সারি |
চিকুরে বনাঅল বেণী ললিত ।
কুষ্কুম কুচযুগে করল রঞ্জিত ॥
যাবক লেখল রাতুল চরণে।
জীবন নিছাই লেঅল তছু শরণে |... -_-নরোতম দাস।
এ হ'ল প্রকারাস্তরে শ্রীতীর স্বাধীনভর্তকাভাব-বিলাস। শ্রীপাদ রূপ
ভাগবত থেকে রাধিকার প্রণয়মহিমাস্থচক নিম্নলিখিত ছুটি পঙ্ক্তি উদ্ধার
করেছেন;
ততো। গত্বা বনোদ্দেশং দৃপ্ত কেশবমত্রবীৎ।
ন পারয়েহং চলিতুং ময় মাং যন্ত্র তে মনঃ ॥
'তারপর অরণ্যে প্রবেশ করে শ্রীমতী কৃষ্ণকে বললেন আমি আর চলতে
পারছি না, তোমার যেখানে খুশী আমাকে বহন করে নিয়ে চল।,
উজ্জর্ননীলমণিতে এই প্রণয্বের ছুই বিভাগ করা৷ হয়েছে--মৈত্র এবং সখ্য ।
আবার সুৈত্র, স্ুসখ্যও হতে পারে। যেখানে বিশ্রভ্ের সঙ্গে বিনয় থাকে,
যেখানে একটু সংকোচ থাকে সেখানে মৈত্র, আর যেখানে মুক্তসংকোচ
স্বাধীন আচরণ থাকে সেখানে সখ্য । যেমন বল! নায়, বহুদিন পরে কুষ্ণের
দেখ পেলে গোপী পাগ্রহে তার কর গ্রহণ করলেন। কিন্ত শ্রীমতী
শ্ববক্ষপীড়নের দ্বার৷ তাকে নির্দভাবে আলিঙ্গন করলেন।
৫. রাগ-_ছুংখমপ্যধিকং চিত্তে সথত্বেনৈব ব্যজ্যতে |
যতস্ত প্রণয়োৎকর্যাৎ স রাগ ইতি কীত্যতে |
প্রণয়ের উৎকর্ষ ঘটলে যর্দি এমন অবস্থা আমে যে প্রবল ছুঃখও (বিরহ, লোক-
গঞ্জনা, পথের ক্লেশ প্রভৃতি জনিত ) চিত্তে স্থখ ব'লে প্রতিভাত হুয় তাহ*লে সেই
প্রেমের অবস্থার নমে “রাগ” বল! যায়। এই অলৌকিক বৈষ্ণব রাগসম্পর্কেই
চরিতামুতকার বলেছেন £
বাহে বিষজাল। হয় ভিতরে অমৃতময়
কৃষ্ণপ্রেমীর অস্ভুতচরিত।
২৭১ বৈষ্ব-রষ-গ্রকাশ
এ ঘেন রবীন্দ্র-কধিত “ডান হাতে স্থ্ধাপাত্র বিষভাশু লয়ে বাম করে' অথব।
“এই করেছ ভালো, নিঠুর, এই করেছ ভালে।। এমনি করে হৃদয়ে মোর তীব্র
দহন জালো?, প্রভৃতি । লৌকিক অস্ুভব, তবু ভাবের দিক্ থেকে সাদৃশ্য আছে।
ছুঃখ প্রবলতম হ'লে তাতে হ্বায়গ্রস্থি ছিন্ন হয়, ভবমানন্দের আবির্ভাব ঘটে। ছিজ
চণ্তীদ্াসের পদে রয়েছে-_
নিশি দ্িশি অন্তথন প্রাণ করে উচাটন
বিরহ অনলে জলে তন্চু।
ছাড়িলে ছাঁভন নয় পরিণামে কিবা হয়
কি মোহিনী জানে কাল। কানু ॥
অথবা।, কলঙ্কী বলিয়! ডাকে সব লোকে
তাহাতে নাহিক দুখ।
বধুর লাগিয়া কলঙ্কের হার
গলায় পরিতে স্থখ ॥
গ্ভৃতির মধ্যে দুঃখে স্থথান্ুভবরূপ রাগধর্ম ব্যঞ্জিত হয়েছে। এই রাগের ছুই
প্রধান ভেদ এবং তার মধ্যেকার অবান্তর ভেদও উজ্জলনীলমণিতে কর। হয়েছে।
রঞকত্ব পর্মের দ্বিক্ মনে রেখে শ্রীরূপ মুখ্য বিভাগের নামকরণ করেছেন নীলিম'
এব" বৃক্তিম1। নীলিমাব দুই প্রকার, নীলীরাগ এবং শ্যামারাগ । রক্তিমার
ছুই প্রকার, কুন্থৃভরাগ এবং মঞ্রিষ্ঠারাগ।
কষ্ণ-চন্ত্রাবলীর প্রেম নীলীরাগের অন্ততূক্তি। এই প্রেম ব্যয়িত হয় না
অথচ বাইরে এর প্রকাশও তেমন দেখ যায় না৷ অর্থাৎ এতে ঈর্যামানাদির বিকার
তেমন লক্ষ্যগোচর হয় না। নায়িকা যেখন ধীর, শান্ত, বিপ্রল হয়েও
অচঞ্চল, তার প্রেমও তেমনি । ফলতঃ চন্ত্রাবলীর চিত্তে তীব্র ছুঃখজালাবোধ
নেই, স্বয়ং অভিসারেও তার তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। “আমি নিশিদিন
তোমায় ভালবাসি, তুমি অবন্গরমত বাসিয়ো+-এরকম ভাব। এতে ভীরুতারও
অবকাশ থাকে। কীজানি কী হয়, নাজানি প্রিয় কী মনে করেন, কাজ নেই
বেশি মান ক'রে- এই ধারণা বর্তমান থাকে।
শ্ামারাগে কৃত্রিম ভীরুত] অর্থাৎ ভীরুতার ছল থাকে মাত্র, এ দীর্ঘকাল
ধ'রে মাধ্য এবং নীলীরাগ থেকে কিছু প্রকাশশীলও হয়ে থাকে । দীর্ঘকাল
ধরে মাধ্য' বলায় পরবর্তা রক্তরাগ থেকে এর পার্থক্য দেখানে। হয়েছে।
মধুররসবৈচিত্রী ২৭৭
রক্তরাগের কুস্থৃম্ত-শ্রেণীতে রাগ ভ্রতগতিতে চিতে সংসক্ত হয়। অন্য রাগের
অর্থাৎ নীলী, শ্যামা এবং পরবর্তা মঞ্রিষ্ঠার ছবি নানাভাবে ব্যঞন। করে এবং এই-
ভাবে বহিরক্গ বৈচিত্রা নিয়ে যা শোভমান হয় তা-ই হ'ল কুস্তস্তরাগ | কুহৃম-রাগ
রঙ. হিসেবে খুব স্থায়ী নয় । কুন্স্ত ₹“কুন্থ্ম” ফুল । কিন্তু আধারবিশেষে এ স্থায়ী
হতেও পারে । এই রাগ সাধারণভাবে শ্রীরাধার প্রিয়সথীদের মধ্যে দেখা যায়।
শ্রীরাধার রাগ হ'ল মঞ্জিষ্ঠা-রাগ-শ্রেণীর। এর মধ্যে যেমন দ্রুত
সংসক্তিগুণ আছে তেমনি আছে দৃঢ়তা, অন্য কোনে। ভাব বা বস্তর ( যেমন
দূতী প্রভৃতি বা কোনো সাখন-হ্থরুতির ) প্রতি নিরপেক্ষতা এবং যৃহ্র্তে
যৃহূর্তে বর্ধনশীল উজ্জলত1। মঞ্চিঠার রং পাকা স্থায়ী, আবার মঞ্জিষ্ঠা রাগের
দ্বার রঞ্িত বস্ত্রকে ধৌত করলেও তার বর্ণগৌরব বৃদ্ধিই পায়। বাধা-
বিরহাদির দ্বার এ রাগের উতৎকর্ষই ঘটে।
এমন পিরিতি কভু ন। দেখি না শান
পরানে পরানে বান্ধা আপনা আপনি ॥
প্রভৃতিতে অথবা! নিম্মলিখিতরূপ বনুপর্দে অন্য কোনে! সাধন-নকৃতির প্রতি
অপেক্ষা না করেই কৃষ্ণপ্রেমের আবির্তাব পরিস্ফুট করা হয়েছে :
কিবা] রাতি কিবা দিন কিছুই ন! জানি।
জাগিতে স্বপনে দেখি কাল! মুখখানি ॥
আপনার নাম মোর নাহি পড়ে মনে।
পরান হরিল রাঁঙ। নক্সান-নাঁচনে ॥
কি খেনে দেখিলাম সই নাগরশেখর ।
আখি ঝুরে মন কান্দে পরান ফাফর ॥
সহজে মূরতিখানি বড়ই মধুর।
মরমে পশিয়৷ সে ধরম কৈল চুর ॥
আর তাঁহে কত কত ধরে ধৈদগধি |
কুলেতে যতন করে কোন্ বা মুগধি ॥ _ন্বলরাম দাষ
বাধার আধিক্যে প্রেমের উৎকর্ষ, ষথা_
ছাড়িয়৷ ঘরের আশ করিব সে বনবাস
এই চিতে দঢ়াইলু' সার ।
রাতি দিবস হাম হিয়ার উপরে থোব
না করিব আর জাখির আড় ॥
২৭৮ বৈষ্ঞব-রস-প্রকাশ
সই, তোমারেই কহিয়ে মরম।
জাতি মোর ভাসাইলু' কুলে তিলাগুলি দিলু
ঘুচাইলু' ধরম করম ॥
শাশুড়ী ননদী ভরে নিশাস ন৷ ছাড়ি ঘরে
এই দুখে হেন সাধ করে।
'অঙ্গের উপর অঙ্গ থুইয় চান্দমুখ নিরখিয়!
মনের কথাটি কব তারে ॥
নয়ান না শুনে আন আন নাহি শুনে কান
যত দেঁখি সব লাগে ধন্দ।
বলরামদাসে বলে নাহি জানি কি করিলে
সে নাগর গোকুলের চন্দ ॥
এই প্রেমে অনপনেয় দৃঢ়তা ”কি ”* বলিব, সই কি আর বলিব। যে
পণ কর্যাছি মনে সেই সে করিব” প্রভৃতিতে, অথবা মৃত্যুবরণ করেও
মিলনলাভের আগ্রহে পরিষ্ফুট, যেমন-__
ধাঁহা পু অরুণ চরণে চলি যাত।
তাহা তাহ। ধরণী হইয়ে মঝু গাত ॥
যে৷ দরপণে পন নিজ মুখ চাহ।
মঝু অঙ্গ জোতি হোই তথি মাহ!
বিরহ-মরণ নিরদন্দ |
এছে মিলই যব গোকুলচন্দ
যে৷ সরোবরে পছ' নিতি নিতি নাহ।
মঝু অঙ্গ সলিল হোই তথি মাহ 1***
গোবিন্দদাস কহ কাঞ্চন গোরি।
সো মরকত তঙ্ছ তোহে কিয়ে ছোড়ি ॥
শ্রীরূপ স্সেহরাগার্দির এই সব বিভেদ নির্দেশ করেছেন অন্যান্য গোপীর্দের ও.
মহিষীবৃন্দের প্রেমের লঙ্গে নাধাগ্রেমের পার্থক্য দেখাবার জন্যে ।
৬. জনুরাগ- সদানভূতমপি যঃ কুর্যাৎ নবনবং প্রিয়ম্।
রাগো। ভবন্নবনবঃ সোহন্থুরাগ ইতীর্যতে ॥
অঙ্গুরাগ রাগের পরবর্তী অধ্যায়। এতে রাগ নিত্য নব নব রূপ ধারণ করে
মধুররসবৈচিত্রী ২৭৯
এবং সেই সঙ্গে সদাসর্বদ অহ্ত্ৃত প্রিয়কেও নতুন নতুন ভাবে অন্গভব করিয়ে
প্রেমের এক বেচিত্রী সম্পাদন করে। এ হ'ল “নবরে নব নিতুই নব, যখনি হেরি
তখনি নব*। এর ফলে প্রিয়-স্বা্ব-বাসনার তৃষ্থি কাচ ঘটে না এবং প্রীতিও
পরিণাম লাভ করে না। নিরন্তর বেড়ে চলতেই থাকে । কোনে। বিষয়ের
সীমা অনুভব করলেই ত1 স্থিতিময়, বাচ্য ও বর্ণনার যোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্ত
কৃষ্ণপ্রেম অনির্ণেয়, অনির্বচনীয়-ত্বভাব । এ যেন রবীন্দ্রনাথ-বণিত :
যে যৃহূর্তে পূর্ণ তুমি, সে মুহূর্তে কিছু তব নাই,
তুমি তাই
পবিত্র সদাই ।
কৃষ্ণের রূপ, গুণ, চেষ্টা, মুরলীধ্বনি, সব কিছুকেই অবলম্বন ক'রে অথব।
একাংশকেও অবলম্বন ক'রে রাধিকার এই অতৃষ্থি ঘটে । চির-অতৃপ্তি এবং
চির-ব্যাকুলতা নিয়ে শ্রীমতীর কৃষ্ণভাব বৈষ্ববধর্ম তথ] সাহিত্যের এক অপূর্ব
বন্ধ হয়ে রয়েছে। এর স্বরূপ বিষয়ে চরিতামুতে ইঙ্গিত দেওয় হয়েছে ঃ
অদ্ভুত অনস্ত পূর্ণ মোর মধুরিম।।
ত্রিজগতে ইহার কেহ নাহি পায় সীম ॥
এই প্রেমদ্বারে নিত্য রাধিকা একলি।
আমার মাধূর্যামৃত আন্বাদে সকলি ॥
যদ্পি নির্মল রাধার সংপ্রেম-দর্পণ।
তথাপি স্বচ্ছত1 তার বাড়ে ক্ষণে ক্ষণ ॥
আমার মাধুর্ষের নাহি বাটিতে অবকাশে।
এ দর্পণের আগে নব শব রূপে ভাসে ॥
মন্মাধুর্য রাধাপ্রেম দোহে হোড় করি।
ক্ষণে ক্ষণে বাড়ে দোহে, কেহ নাহি হারি॥
অপিচ-- এ মাধূর্যাম্বত পান সদ যেই করে।
তৃষ্ণা শাস্তি নহে, তৃষ্ণা বাঢ়ে নিরস্তরে ॥
অতৃথ্ধ হইয়া করে বিধিরে নিন্দন।
আস্বার্দের এই নিত্য নবনবত্তের জন্য রাধাকৃষ্ণ পরস্পর নিতাস্ত বশীভূত এবং
তাদের মিলনের মধ্যেও অতৃষ্থিজনিত বিরহাহুভব দৃষ্ট হয়। এরকম বিরহকে
“প্রেমবৈচিত্ত্য বঙ্ধ] হয়েছে (এ বিষয় পরে বিবৃত হচ্ছে)। এ ছাড়।
অন্থুরাগের আ1রও ছুটি তটস্থ লন্গণ শুবূপ বিকৃত করেছেন_-বিরহে কৃষস্ফৃতি এবং
২৮০: বৈষ্ব-য়নস্প্রকাশ
অপ্রাণীতে জন্গলালস। । কবিশেখর বিষ্ভাপতির নিয়লিখিত পদ্দে এই অঙ্রাগ
অবস্থার মুলভাবটির পরিচয় অসামান্য সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে :
কী পুছনি অনুভব মোয়।
সোই পিরিতি অনুরাগ বখানিতে
তিনে তিলে নৌতন হোয় ॥
জনম-অবধি হাম রূপ নেহারলু
নয়ন ন তিরপিত ভেল।
সোই মধুর বোল শ্রবণহি শুনল
শ্রুতিপথে পরশ ন গেল ॥ .-_ইত্যাদ্দি।
এই প্রেমাবস্থার নিতান্ত বশীভৃতত্ব ষথা_
বন্ধুর রসের কথা কি কহব তোয়।
মনের উল্লাস যত কহিল ন হোয় ॥
এক ছুই গণইতে অস্ত নাহি পাই।
বপে গুণে রসে প্রেমে আরতি বাঁঢ়াই ॥
দণ্ডে প্রহরে দিনে মাসেকে বরিখে।
যুগে মন্বস্তরে কত কলপে না দেখে ॥
দেখিলে মানয়ে যেন কতু দেখে নাই।
পদ্ম শঙ্খ আদি কত মহানিধি পাই ॥-.. __জ্জানর্দাস।
মিলনে বিরহস্ফৃতি বা প্রেমবি চিত্ততা__
নাগর সঙ্গে রঙ্গে যব বিলপই
কু্তে স্থতলি তূজপাশে।
কাহ্ছ কান করি রোয়ই সুন্দরী
দারুণ বিরহ হুতাশে ॥
আরতি কহুন ন ষাই।
আচলক হেম আচলে রহু যৈছন
খোজি ফিরত আন ঠীই ॥
কাছা গেও সো মঞ্জু রসিক স্থনাগর
মোহে তেজল কথি লাগি।
কাতর হোই মহীতলে লুঠই
মদন দছনে রহু জাগি॥
মধুররসবৈচিত্রী ২৮১
রাইক বিরহে কান্থু ভেল সচকিত
বয়ানে বাণী নাহি ফুর।
প্রিয় সহচরি লেই করে কর বাদ্ধই
| গোবিন্দদাস রহ দূর ॥
বিরহে কষ্ণস্ফৃতি, যেমন “গীতগোঁবিন্দ” £
ধ্যানলয়েন পুরঃ পরিকল্পয ভবস্তমতীবছুরাপম্।
বিলপতি হুসতি বিষীদ্তি রোর্দিতি চঞ্চতি মুঞ্চতি তাপম্ ॥
অথবা, ভাবোলাস পর্যায়ের বর্ণনায়, অথবা, শ্রীমন্মমহাপ্রতুর ভাবাবস্থায় £
এত বলি আগে চলে যমুনার কূলে ।
দেখে তাহা কৃষ্ণ হয় কদ্ধের মূলে ॥
কোটিমন্মঘমোহন মুরলীবদন |
অপার সৌন্দর্যে হরে জগন্নেত্রমন ॥
সৌন্দর্য দেখি ভূমে পড়ে মৃছ? হঞ্াা।
হেনকালে স্বরূপাদি মিলিল। আসিয়৷ ॥
পূর্বব সর্বাঙ্গে প্রভুর সাত্বিক সকল ।
অন্তরে আনন্দ আম্বাদ বাহিরে বিহ্বল ॥
পূর্ববৎ সভে মেলি করাইল ঠতন।
উঠিয়া চৌদিকে প্রভু করেন দর্শন ॥
কাছা গেল কৃষ্ণ এখনি পাইল দরশন।
ধাহার সৌন্দর্যে হরে মোর নেত্র মন ॥
পুন কেন ন৷ দেখিয়ে যুরলীবদন ।
তার দরশন লোভে ভ্রময়ে নয়ন ॥**
প্রভূ কহে কৃষ্ণ মুঞ্ডি এখনি পাইঙ্জ।
আপনার ছুর্দেবে পুন হারাইনু |
চঞ্চল স্বভাব কৃষ্ণের না রহে এক স্থানে ।
দেখ দিয়া মন হরি করে অন্তর্ধানে |
অপ্রাণীতে জন্মলালসা, যথা, শ্রীমদ্ভাগবতে কথিত উদ্ধবের অভিপ্রায়ে__
সাসামহে। 5চরণরেণুজুধামহং শ্তাং
বৃন্দাবনে কিমপি গুল্মলতৌবধীনাম্।
২৮২ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
য৷ ছুম্তজং ত্বজনমার্ষপথং চ হিত্বা
ভেভুমু'কুন্দপদবী শ্রুতিভিবিষুগ্যাম্ ॥
অর্থাৎ, অভিসারিক। গোপীদের চরণরেণুর স্পর্শ পেয়ে কৃতার্থ হয়েছে
বৃন্দাবনের এমন তকুগুল্সলতার একটি হয়ে যদি আমি জন্মাতাম! কারণ
এই গোপিকার। দুস্তাজ পাতিত্রত্য, গুরুজন পরিজন ত্যাগ ক'রে শ্রুতির]
পেতে পারেনি এমন কৃষ্সেবাকেই পরমতম বস্ত বলে গ্রহণ করেছে।
অথবা, ব্যগরনায়__
ধরণী হইল মাটি কী পুণা করিয়া।
মোর বন্ধু যায় যাতে নাচিয়। নাচিয়। ॥
নৃপুর হৈয়াছে সোনা কী পুণ্য করিয়।।
বন্ধুর চরণে যায় বাজিয়। বাজিয়] ॥**" _ রঘুনন্দন।
৭, ভ্ভাব- অন্থরাগঃ হ্ৃসংবেছশাং প্রাপ্য প্রকাশিতঃ |
যাবদাশ্রয়বৃত্তিশ্চেদ্ ভাব ইত্যভিধীয়তে ॥
অন্গরাগ নিজ বোধাত্মক অবস্থা লাভ ক'রে যদি সাত্বিক ভাবের দ্বার।
বাইরে প্রকাশ পায় এবং রাগের শেষ কল্পনীয় সীম! পর্যস্ত অগ্রসর হয়
এবং জ্েহ-প্রেমাঁর্দির সমস্ত বৈচিত্র্যের ধারক হয় তাহ'লে তাঁকে “ভাব”
বল] যায়। প্রবল ছুঃখেরও স্থখরূপে অস্থভব হা রাগ। এই রাগের
ব্যাঞ্ডিবৈচিত্রের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তীব্র দুঃখের পরমস্থথময় কেবল
বোধরূপে যার স্থিতি এবং সাত্বিকাদির দ্বারা যা প্রকাশময় তাই হ'ল
ভাব। ভাব শব্ষটির সাধারণ “রতি” অর্থ সমাচ্ছার্দিত ক'রে এখানে
বিশিষ্ট প্রয়োগ করা হয়েছে। এই স্ব-সংব্ছেতা বা কেবল প্রেমবোধরূপে
স্থিছির প্রকৃষ্ট উর্দাহরণ হ'ল রায় রামানন্দের নিয়লিখিত পদ্দীংশ__
পহিলহি রাগ নয়নভঙ্গ ভেল।
অঙ্দিন বাঢ়ল অবধি ন গেল ॥
ন সো রমণ ন হাম রমণী!
দু মন মনোভব পেশল জনি ॥
'অথবা।, জ্ঞানদ্াস-লিখিত-_
শুনিয়া দেখিলু' দেখিয়া ভুলিল
তুলিয়! পিরিতি কৈলু ।
মধুররসবৈচিত্রী ২৮৩,
পিরিতি বিচ্ছেদে না৷ রহে পরাণ
ঝুরিয় ঝুরিয়। লু ॥
পিরিতি দোসর ধাত]।
বিধির বিধান সব করে আন
না শুনে ধরম কথা ॥
পিরিতি মিরিতি তুলে তৌলাইতে
পিরিতি গুরুয়। ভার।
পিরিতি বেয়া যার উপজয়ে
সে বুঝে না! বুঝে আর ॥
রাগের অতিক্ফুরণে সমুহ বৈচিত্র্যের বিকাশ, যেমন-_
ঘুমে আলাপয়ে কত পরবন্ধ |
রভসে আলিঙ্গই করি কত ছনা |
জাগরে নিয়ড়ে না হেরি তোহে কান।
সে৷ রস পরশ সপন করি মান ॥
তো সঞ্জে রহত বিচ্ছ্দে।
বিপরীত চরিতে বাঢ়ায়সি খেদ ॥
ভরমে পুছয়ে তোহে মরমক বোল ।
উতর না শুনইতে জীউ উতরোল।
পুন উতকন্ঠিত করইতে কোর ।
দূরে রহ পরশ দূরশ ভয়ে চোর ॥
এছল নিতি নিতি কত অঙ্গতাপ ।
পর সমঝায়ত ইহ বড় তাপ॥
গোবিন্দ্দীস কহ কি ফল সংবাদ।
ঘতয়ে পিরিতি ততয়ে পরমা ॥
কখনে! আশা, কখনো! আশঙ্কা, কথনে। উল্লাস, ব্যর্থতার বেদন। ও গ্লানি.
এবং গ্রণয় মানাদির একত্রে সম্প্রকাশের এই অপূর্ব চিত্র নিঃসন্দেহে মহা-
প্রভুর ভাবোম্সাদ-দশনে পরিকল্পিত হয়েছিল £
উন্মাদের লক্ষণ করায় কৃষ্ম্মরণ
ভাবাবেশে উঠে প্রণয় মান।
২৮৪ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
সোলু& বচনরীতি মদ গর্ব ব্যাজস্বতি
কতু নিন্দা কতু ত সম্মান ॥
এই বিরহোন্মান্দের বিষয় স্বল্প পরেই বিবৃত হচ্ছে।
শ্রীৰপের মতে ভাবেই প্রেমের চূড়াস্ত অবস্থা, আর এই ভাবই ব্রজ-
দেবীদ্দের বিশেষতঃ শ্রীরাধার ক্ষেত্রে “মহাঁভাব” বলে কথিত হয়। চরিতামৃত-
পাঠে মনে হয় কবিরাজ গোস্বামী মহাভাবকে ভাব থেকে উৎকর্ষযুক্ত একটি
স্বতস্ত্র অবস্থা হিসেবেই গ্রহণ করতে চান এবং একমাত্র রাধাপ্রেমেই এই
মহাভাবাবস্থ। প্রত্যক্ষ করেন, যেমন__
হলার্দিনীর সার প্রেম প্রেমমার ভাব।
ভাঁবের পরমকাষ্ঠী নাম মহাভাব ॥
মহাভাবস্বরূপ) শ্রীরাধাঠাকুরাণী |
সর্বগুণখনি অর্বকানস্তাশিরোযণি |
প্রীৰপের অন্থভবে কৃষ্ণের মহিষীবুন্দ অন্গরাগের অবস্থা যর্দিই বা পেতে পারেন,
ভাব ব1 মহাভাবের কিছুতেই নয়। মহিষীর্দের সমগ্তস1 রতিতে স্বহ্থখবাসন।
খাকে ব'লে এই কৃষ্ণস্থখে পরমাত্মস্থখের অবস্থা তাদের আসতে পারে না।
৮. অন্ধাভাব--“বরামুভন্বরূপপ্রী” পুর্ণ বা শেঠ অমৃতই যার সৌন্দর্য,
অর্থাৎ যা পরমাশ্চর্যরমণীয় এবং যা মনকে ভাবৈকরসময় ক'রে তোলে,
হলাদিনীর সারনির্ধাসে রূপান্তরিত ক'রে দেয়-তা-ই হৃ*ল মহাভাব।
মহাভাবের দুই শ্রেণী, রাড এবং স্মধিরাঢ়ি। রূঢ শব্দের অর্থ প্রবৃদ্ধ।
যে ভাব প্রবৃদ্ধ হয়ে পরাকাষ্টা লাভ করেছে। এ কিন্ত মহাভাবের প্রথম
অবস্থা । দ্বিতীয় অবস্থায় অতিশয় প্রবৃদ্ধ হ'লে পর বল যাবে অধিরূঢ়
মহাভাব। এগুলির ঠিক লক্ষণ নির্দেশ করা যায় না। বল। যেতে পারে
রূঢ মহাভাবে স্তভব্বেদাি সান্বিক ভাব পুণ প্রকাশিত হয়, আর অন্ান্
অন্ুভাবগুলির লাধারণ বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া চিত্তের কয়েকটি
বিশিষ্ট ভাবস্ফুরণও রূঢ় মহাভাবের বিক্রিয়া। সেগুলি এই ঃ
(১) নিমেষ-অসহতা, যেমন,
কোটি নেত্র নাহি দিল, সবে দিল দুই।
তাহাতে নিমেষ কৃষ্ণ কী দেখিব মুই ॥
মধুররসবৈচিত্রী ২৮
অথবা, ময়ন-চকোর মোর পিতে করে উতরোল
নিমিখে নিমিখ নাহি সয়
অথবা, এমন পিরিতি কু ন৷ দেখি ন। শুনি।
নিমিখে মানয়ে যুগ কোরে দুর মানি ॥
সমুখে রাখিয়া করে বসনের বা।
মুখ ফিরাইলে তার ভয়ে কাপে গা॥ -_ইত্যার্দি।
(২) আসন্ন-জনতাহদ্বিলোড়ন, যেমন, মহাপ্রভুর ভাবাবস্থায়__
কম্প স্বেদ পুলক অশ্রুর অন্ত নাঞ্ডি।
মৃতিমতী ভক্তি হেল] চৈতন্য গোসাঞ্ছি ॥
নাচেন ঠাকুর ধরি নিত্যানন্দ হাথ।
সে কটাক্ষ স্বভাব বণিতে শক্তি কাত ॥
সম্মুখে দেউটি ধরে পণ্ডিত শ্রীমান্।
চতুর্দিগে হরিদাস করে সাবধন ॥
হেনই সময়ে নিত্যানন্দ হলধর।
পঁড়িল। যুছিত হই পৃথিবী-উপর ॥
কোথায় ব1 গেল বুড়ী বড়াইর সাজ ।
কষ্ণরসে বিহবল হৈল। নাঁগরাজ ॥
যেইমাত্র নিত্যানন্দ পড়িল। তমিতে ।
সকল বৈষ্ণবগণ কান্দে চারিভিতে ॥
হুড়াহুড়ি হৈল রুষ্ণপ্রেমের ক্রন্দন |
সকল করায় প্রতু শ্রীশচীনন্দন ॥
কারো গল। ধরি কেহে। কান্দে উচ্চরায় ।
কাহারে! চরণ ধরি কেহো! গভি যায় ॥ -_চৈতন্যভাগবত '
(৩) কল্পের ক্ষণিকতাবোধ-_
তুমি মোর নিধি রাই তুমি মোর নিধি।
ন| জানি কি দিয়া তোম। নিরমিল বিধি ॥
বসিয়া দিবস রাতি অনিমিথ আখি।
কোটি কলপ যদি নিরবধি দেখি।
তবু তিরপিত নহে এ ছুই নয়ান।
জাগিতে তোমারে দেখি স্বপন সমান ॥
৮১
বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
(৪) কৃষের সুখেও ছঃখাশঙ্কা, মঙলেও অমজলাশঙ্কা_
রাসমগুল ছোড়ি আম। সঞ্ঞে গেল]।
পশ্থক দুখ হাম কত ন দেলা॥
চলইতে অবলাক কত দিলা কোর ।
নবনীত অঙ্গে হৈল। পরশ কঠোর ॥
যমুন। কুগ্ত মাহা রভসবিহার |
ছাপি রহ কৌন ছুঠ করু পরচার ॥
নিজ স্থখ লাগি তোএ এত ছুখ দেল।
তুয়। গৌরব নাশ মরমহি শেল ॥
(৫) যুছণ ব্যতিরেকেও সব বিস্মরণ-_
অথবা,
স্থসর ঝাশীর নাদ শুনিঅ। বড়ায়ি
রান্ধিলে] যে স্থনহ কাহিনী ।
আম্বল ব্যগ্কনে মো বেশোআর দিলে?
শান্তক দিলে। কানাসোঅ] পাণী ॥
নান্দের নন্দন কাহ্ন আড়বীাশী বাএ
যেন রএ পাঞ্জরের শুঅ।।
তা স্থনিআ' দ্বতে মে? পরল। বুলি
ভাজিলে। এ কাচা গুআ |
সেই ত বাশীর নাদ স্ুনিঝ। বড়ায়ি
চিত মোর ভৈল আকুল ।
ছোলক্গ চিপিআ। নিমঝোলে খেপিলে।
বিনি জলে" চড়াইলে"। চাউল ॥
রাধাবদন চাদ হেরি ভুলল
হ্াামর নয়ন চকোর।
ছান্দ বাদ্ধ বিশ্থ ধবলী ধাওত
বাছুরি কোরে অগোর ॥
শৃনহি দুহত মুগধ মুরারি |
ঝুটহি অঙ্গুলি করত গতাগতি
হেরি হুসত ব্রজনারি ॥
মধুররলবৈচিন্রী ২৮৭
লাজহি লাজ হাসি দিঠি কুঞ্চিত
পুন লেই ছান্দন ডোর।
ধবলিক ভরমে ধবল পায়ে ছান্দল
গোবিন্দদাস হেরি ভোর ॥
(৬) ক্ষণকাল-বিষয়ে কল্পতাবোধ--
তু রহু নিকরুণ মধুপুর মাহ।
নিতি নব নাগরি রস অবগাহ ॥
যে। খন মান তো৷ বিন্থু যুগ-লাঁখ।
সো কি সহয়ে চির বিরহবিপাক ॥
এ হরি এ হরি তুয়া পথ চাই।
অব কি জীবই ন জীবই রাই ॥".' _গোবিন্দদাস
অথবা, চান্দ সুরুজের ভেদ না জানে।
চন্দন শরীর তাএ।
কাহু বিনি মোর এবেঁ একখন
এক কুল যুগ ভাঁএ ॥"". -শ্রীকষ্ককীর্তন
অধিরূটঢ় মহা'ভাৰ-- এই অবস্থায় সাত্বিকভাবসহ অন্ভাবগুলি পূর্ণভাবে
প্রকাশিত হয়ে এক অনির্বচনীয় বিশিষ্টতা লাভ করে । বলা যায়) সাত্বিকভাব-
গুলি স্ু-উদ্দীপ্ত হয়। অধিরূঢের ছুই বিভাগ ঘোৌরন-মোহন এবং মাদন।
মোদন সম্ভোগাবস্থার রূপ, এরই বিরহাবস্থায় মোদ্দনকে “মোহন? বলা হয়।
'মাদন* নিত্যমিলিতাবস্থার এক অপূর্ব রূসপ্রমান্ততা, যে অবস্থায় মিলন-বিরহ
সুখ-দুঃখ সব একাকার হয়ে অনির্বচশীয় অখণ্ড রসাবস্থা স্ফুরিত হতে থাকে ।
বল। বাহুল্য, এ প্রেমতত্ব প্রারস্ত থেকে পরিণাম পর্যস্ত অলৌকিক দিব্য, তর্কের
অগোচর, ভক্তগণের অনুভবগম্য এবং প্রিয়। “অভক্ত উষ্ট্রের ইথে নাহিক
প্রবেশ ।
মোঁদ্দন--একাস্ত মিলিতাবস্থায় রাধারুষ্ণ উভয়ের উদ্দীন সাত্বিকপহ বিবিধ
চমৎকার ফুটে ওঠে । যেমন-_
পেখলু' রে সখি যুগল কিশোর ।
কালিন্দী-তীর নিকুঞ্জক ওর |
নব নব বূপ নিকুপম লাবণি
মরকত কাঞ্চন কাতি।
৬ '. বৈষ্ব-রস-গ্রকাশ
নারী পুরুষ দু লখই না পারিয়ে-'
অছু পরিরস্ণ ভাতি |
ঘন ঘন চুম্বনে লুবধ বদ্দন দু
বিগলিত স্বেদ-উদদ-বিন্দু।
হেরি হেরি মরম ভরম পরিপুরল
কে বিধুমণি কে! ইন্দু ॥
সিন্দুর অরুণ চন্দন বিধুমণ্ডল
সঘনে উদ্দিত অব মেলি ।
গোবিন্দ কহুই নব অপরূপ
রাধা মাধব-কেলি ॥
অথবা, দু রসে ভোর হেরি পাঁচবাণ।
কেলি-কল। কিয়ে করত সন্ধান ॥
দেখ পুন চেতন দুহু অবলম্ব।
পুনহি অচেতন যব পুন চুম্ব ॥
বিপুল পুল€বর খ্বেদ-সঞ্চার।
চিরথির নধনে নীব অনিবাঁর ॥
কাপই থরহরি গদ গদ ভাষ।
ছুই দু] পরশনে কতন্' উল্লাস ॥".. --রাধামোহন
শ্রবূপ মোদনাখ্য মহাভাবের ছুটি বিশেষত্ব নির্দেশ করেছেন--১. শ্রীমতীর এই
অবস্থার গ্রভাবে মহিষীগণসহ স্বয়ং কৃষ্ণের বিদ্ময়-বিক্ষুন্ধতা, ২. ধার] গ্রেমবতী
বলে খ্যাত সেই কক্সিণী সত্যভামা, লক্ষ্মী, চন্দ্রাবলী প্রভৃতি থেকেও
প্রেমাতিশয্য । চরিতামৃতের বর্ণনা অনুসারে £
ধাহার সৌভাগ্যগুণ বাঞ্ছে সত্যভাম] |
ধার ঠাঞ্জি কলাবিলাস শিখে ব্রজরাম। ॥
যাঁর সৌন্দর্যগুণ বাঞ্ছে লক্ষ্মী পার্বতী |
ধার পতিব্রত] ধর্ম বাঞ্ে অরুত্ধতী ॥.
ধার সদ্গুণগণের কৃষ্ণ ন] পায়েন পার।
শ্রীবাধা এবং তার যুথস্থ গোপীদেের মধ্যেই এই মোদনের স্থিতি |
মোহন- মোদনেরই বিচ্ছে্দাবস্থার নাম হ'ল 'মোহন”। এখানে নিতান্ত
বিরহবিবশতার জন্য পাত্বিকভাবনিচয় স্থ-উদ্দীপ্ধ হয়। মোহনের যাবতীয়
মধুররসবৈচিত্রী ২৮৯
বৈচিত্র্য মহাপ্রভুর মধ্যে স্কুরিত হয়েছিল, বিশেষতঃ তার অস্ত্যলীলায়। শ্রীবূপ
নিশ্চয়ই সেই অবস্থা থেকে এর উপাদান সংগ্রহ করেছিলেন। এই মোহন
মহাভাবের অধিকার প্রায়শঃ শ্রীমতীতেই দেখা যায়। এই মহাভাবের মৃখ্য
সঞ্চারী-ভাব হ'ল মোহ ব! যুছণ।
যোহুনের কার্ষকারিতার বর্ণনায় বল! হয়েছে যে, এতে রুক্সিণী-সত্যভাম-
চন্দ্রাবলী প্রভৃতি প্রেয়সীদের ছারা কৃষ্ণ আলিঙ্গিত থাকলেও এর স্বরণে বা
অনুভবে কৃষ্ণের যুছণ, অসহনীয় বিরহছুঃখের পরিবর্তে রুষের সখের কাম্যতা,
ব্রহ্মাগক্ষোভকারিতা', পশুপক্ষীদেরও বেদনাবৈকলা, মৃত্যুবরণ ক'রে পঞ্চভূতময়
হয়ে কৃষ্ণের সঙ্গে মিলনবাসনা, আর, দিব্যোন্সাদ প্রভৃতি ।
মোহনাবস্থায় শ্রীমতীর বৈকল্য, যথা, শ্রীমন্মহাপ্রতু-_
প্রেমের ওঁৎকণ্ঠয প্রভুর নাহি কৃষ্ণসঙ্গ |
বিরহে বাটিল প্রেম জালার তরজ
ব্যাকুল হইয়। প্রভু ভূমিতে পড়িল] ।
গোসাঞ্ডি দেখিয়া আচার্য নৃত্য সন্বরিল। ॥
প্রভৃর অন্তর মুকুন্দ জানে ভালমতে । «
ভাবের সদৃশ পদ লাগিলা গাহিতে ॥
আশচার্য উঠাইল প্রভুকে করিতে নর্তন
পদ শুনি প্রভুর অঙ্গ না যায় ধারণ ॥
অশ্রু কম্প পুলক ম্বেদ গদ্গদ্দ বচন।
ক্ষণে উঠে ক্ষণে পড়ে ক্ষণেকে রোদন ॥
“হা! হ] প্রাণপ্রিয় সখি কী না হৈল মোরে ।
কাঙ্গপ্রেমবিষে মোর তন্ মন জারে |” * *
এই পদ গায় মুকুন্দ স্থমধুর স্বরে ।
শুনিয়] প্রতৃর চিত্ত অন্তর বিদরে ॥
নির্বেদ বিষাদ হর্য চাপল্য গর্ব দৈন্য |
প্রভুর সহিত যুদ্ধ করে ভাবসৈন্য ॥
জরজর হৈল। প্রভু ভাবের গ্রহারে।
ভূমিতে পড়িল] শ্বাম নাহিক শরীরে ॥
দেখি! চিন্তিত হৈল সব ভক্তগণ।
আচম্থিতে উঠে প্রভু করিয়। গর্জন | - চৈতন্তচরিতামূত
১৪
২৯০ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
মহিযীকাস্তাস্নিষ্ট ক্ণের রাধাবিরহ-বৈকল্যের সে তুলনীয় এই্বরবমূতি জগরাখের
সঙ্গে মিলনে মহাপ্রভুর বিচিত্রাবিরহাবস্থা। £
যে কালে করেন জগন্নাথ দরশন ।
মনে ভাবে কুরুক্ষেত্রে পাঞ্াছি মিলন ॥
রথযাত্রায় আগে যবে করেন নর্তন।
তাহা এই পদ মাত্র করেন গায়ন |
“সোই ত পরাণনাথ পাইলু' ।
ধাহ। লাগি মদনদহনে ঝুরি গেলু ॥”
এই ধুয়। গানে নাচে দ্বিতীয় প্রহর |
কৃষ্ণ লই ব্রজে যাই এভাব অন্তর ॥
এইভাবে নৃত্য মধ্যে পড়ে এক শ্লোক।
যে শ্লোকের অর্থ কেছে। নাহি বুঝে লোক ॥
"্যঃ কৌমারহরঃ স এব ছি বরঃ-_” **
এই মত মহাপ্রতু দেখে জগন্নাথে ।
স্ভদ্র/ সহিত দেখে বংশী নাহি তাতে ॥
ত্রিভজন্ুন্বর ব্রজে ব্রজেন্দ্রনন্দন |
কাহা পাব এই বাঞ্চ। বাড়ে অনুক্ষণ |
রাধিকার উন্মাদ যৈছে উদ্ধব দর্শনে ।
উদ্ঘূর্ণা প্রলাপ তৈছে প্রভুর রাত্রর্দিনে
বিরহু-ছুঃখের পরিবর্তে কৃষ্ণের সুখের কামাতা, যথা, চণ্তীদাস-__
বহুদিন পরে বঁধুয়া এলে।
দেখ! না হইত পরাণ গেলে ॥
এতেক মহিল অবলা ব'লে।
ফাটিয়। যাইত পাষাণ হ'লে ॥
ছুখিনীর দিন ছুখেতে গেল ।
মথুর1 নগরে ছিলে ত ভাল |
এ সব ছুঃখ কিছু না গণি।
তোমার কুশলে কুশল মানি ॥
এ সব বৈচিত্রের মধ্যে দ্রিব্যোম্মাদই বিশেষভাবে লক্ষণীয় । মহাপ্রতুর শেষ-
লীলায় এ অবস্থা বিশেষভাবে লক্ষ্যাভৃত হয়েছিল । পদাবলীকারেরাও এ-অবস্থার
মধুররসবৈচিত্রী ২৯১
বিভ্তত বিবরণ দিয়েছেন। এতে উদ্ধূর্ণা অর্থাৎ ভ্রমময় চেষ্টা! এবং চিত্রজঙ্ল অর্থাৎ
পরিজর, বিজনন, উজ্জল, সংজগ্ন, অবজল্প প্রভৃতি প্রলাপের নানা বৈচিত্র্য দেখা
যায়। এগুলি পর পর বিবৃত হচ্ছে। বিরহোন্নাদ বা! দিব্যোন্সা্দের নিম
লিখিতভাবে লক্ষণ-নির্ণয় কর! হয়েছে ঃ
এতস্ত মোহনাখ্যস্ত গতিং কামপুযুপেয়ুষঃ।
ভ্রমাভ1 কাঁপি বৈচিত্রী দিব্যোম্মাদ ইতীর্যতে ॥
মোহনাখ্য মহাভাবের কোনে। অবস্থাগতিকে চিত্তের বিভ্রান্তি ঘটে, উন্মাদের মত
হাবভাব লক্ষিত হয়, একে: বল! যায় দ্িব্যোন্নাদ। চরিতামৃতকার বুকিয়ে
বলছেন £
উন্মাদের লক্ষণ করায় কষ্খম্মরণ
ভাবাবেশে উঠে প্রণয় মান।
সোলুঠ বচনরীতি মদ গর্ব ব্যাজস্ততি
কভু নিন্দা কভু ত সম্মান ॥
অহাগ্রতুর এই অবস্থার বর্ণনায় বলছেন £
নিরস্তর হয় প্রভুর বিরহ-উন্মাদ ॥
্রমময় চেষ্টা গ্রলাপময় বাদ ॥
রোমকৃপে রক্তোদগম দস্ত সব হালে।
ক্ষণে অঙ্গ ক্ষীণ হয় ক্ষণে অঙ্গ ফুলে ।
গভীর! ভিতরে রাত্রে নিত্রা নাহি লব।
ভিত্তে মুখ শির ঘসে ক্ষত হয় সব ॥
তিন দ্বারে কবাট প্রতু যায়েন বাহিরে।
কতু সিংহদ্বারে পড়ে কতু সিদ্ধুনীরে ॥
চটক পর্বত দেখি গোবর্ধন ভ্রমে
ধাঁঞা চলে আর্তনাদ করিয়া ক্রন্দনে ॥
উপবনোগ্ভান দেখি বুন্দাবন জ্ঞান।
তাহ] য।ই নাচে গায় ক্ষণে মুছণ যান ॥
কাহ। নাহি শুনি যে যে ভাবের বিকার।
সেই ভাব হয় প্রভুর শরীরে প্রচার ॥
চরিতামূত মধ্যলীলার দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ উদ্ঘূর্ণা এবং প্রলাপের বিবরণ তরষটব্য।
এ বিষয়ে প্রীমদ্ভীগবতে বণিত ভ্রমরকে উপলক্ষ্য ক'রে প্রীমতীর বিবিধ.
২৯২ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
প্রলাপোক্কিও প্রমাণ। পূর্বরাগের উন্মাদ, ব্যাধি, মোহ দশাতেও মোহনের ও
দিব্যোম্নাদের বৈচিত্র্যসমূহ লক্ষণীয়। বল! বাহুল্য, একমাত্র শ্রীরাধার মধ্যেই
এই আশ্চর্য প্রকাশ দেখ। গিয়েছিল ।
শ্রীমতীর উদবঘূর্ণ। ব) ভ্রমকল্প কার্যকলাপের পরিচয়, যথা
* * উন্মত ভাঁতি ধনি আছয়ে নিচলে।
জড়িমা ভরল হাত পদ নাহি চলে ॥
আঁধ আধ বচন কহিছে কার সনে ।
পুন পুন পুছয়ে সবহু তরুগণে ॥
ত্রিভঙ হইয়া খেনে বাজায় মুরলী ।
দেখিয়া কান্ময়ে সখী করিয়। বিকুলি ॥
মথুরা মথুর। বলি উঠয়ে কাপিয়]।
ললিতার গল] ধরি পড়ে মূরছিয়! ॥
হেন মতে বিরহিণী ভাবে বিভোর ।
কি কহুব রসময় না পাওল ওর ॥
অথবা হিমকর পেখি অনত কর আনন
রহত করুণা-পথ হেরি ।
নয়ন-কাজর দেই লিখই বিধুস্তদ
তা সঞ্জে কহতহি টেরি ॥ক *
নয়নক নীর লেই সজল কমল দেই
শু পূজয়ে নিজ দেহ ॥
পরতৃতকে ভর পায়স লেই কর
বায়স নিয়ড়ে ফুকার। _বিগ্যাপতি |
চিত্রজল্লের ব৷ প্রলাপের প্রকার £
(১) প্রজল্- ঈর্ণ, অস্থয়', মদ প্রভৃতি সঞ্চারীভাব নিয়ে অবজ্ঞা দ্বার
প্রিয়ের অপটু তু. গ্রদশন, যেমন, শ্রীমস্ভাগবতে ভ্রমরের প্রতি শ্রীমতীর উক্তি :
মধুপ, কিতববন্ধো, মা স্পৃশাজ্বিং সপত্্যাঃ
কুচবিলুলিতমালা কুক্কুমন্মশ্রুতির্নঃ |
বহতু মধুপতিশ্তন্নামিনীনাং প্রসাদং
যছুসদসি বিড়ম্ব্যং যস্যদূত্বমীদৃকৃ
“ওহে ভ্রমর, ওহে শঠের বন্ধু! যাও যাও। আমাদের পা ছু'য়ো না। তোমার
মধুররসবৈচিত্রী ২৯৩
গৌোঁফে এখনও লেগে আছে সেই মালার কুস্কম_যে মাল! কৃষ্ণের মথুরা-
প্রেয়সীর্দের বক্ষ শোভ। করে থাকে । তুমি কার দূত হয়ে এসেছ? তারই না,
যার মথুরা-মানিনীদের কাছে লাভ-করা! অনুগ্রহ যাদবসভাতেও ধিক্কংত হয় ?”
অপিচ,
যূরলি রে! মিনতি করিয়ে বার বার।
হ্যামের অধরে রৈয়া রাধা রাধা নাম লৈয়।
তুমি মেনে না বাজিও আর ॥
খলের বদনে থাক নাম ধরি সদা ডাক
গুরুজন। করে অপযশ।
খল হয় যেই জন সেকি ছাড়ে খলপনা
তুমি কেনে হও তার বশ ॥ -_উদ্ধব্দাস
(২) পরিজন্ন-কৃষ্ণের নির্দয়তা, শাঠ্য, চাপল্য প্রভৃতি প্রতিপন্ন ক'রে কোনো
ভঙ্গিতে নিজের বিচক্ষণত] প্রকাশ করলে পরিজল্প হবে। যেমন, শ্রীমন্মহাপ্রতৃ-_
উপজিল প্রেমাঙ্কর ভাঙ্গিল যে ছুখপুর
রুঝ তাহা নাহি করে পান।
বাছিরে নাগররাজ ভিতরে শঠের কাঁজ
পরনারী বধে সাবধাঁন ॥*%*
কুটিল প্রেমা অগেয়ান নাহি জানে স্থানাস্থান
ভালমন্দ নারে বিচারিতে।
ক্রুর শঠের গুণ-ভোরে হাতে গলে বাদ্ধি মোরে
রাখিয়াছে নারি উকানিতে ॥**
কৃষ্ণ কপা-পারাবার ক করিবে অঙ্গীকার
সখি তোর এ ব্যর্থ বচন।
জীবের জীবন চঞ্চল যেন পম্মপত্র-জল
ততদ্দিন জীবে কোন জন॥
শত বত্পর পর্যস্ত জীবের জীবন অস্ত
এই বাক্য কহ না বিচারি।
নারীর যৌবন ধন যারে কুষ্চ করে মন,
সে যৌবন দিন ছুই চারি ॥
২৯৪ বৈষব-রস-প্রকাশ
(৩) বিজন্ন_তুত্তরে প্রচ্ছন্ন মান, অথচ বাইরে বাক অনুয়া-সহকারে কৃষ্ণের,
প্রতি কটাক্ষোক্তি। যেমন ভ্রমর-গীত] £
*ক্শুন ওহে মধুকররাজ।
সে গুণ চরিত কথা শুনিতে মরমে বেথা
না কহিহ এ হেন সমাজ ॥
ইবে তার আলিঙ্গনে অবিরত পরশনে
কুচরোগ মিটিল যাহার ।
ত1 সভার আগে যাহ চপল-চরিত গাহ
মনোরথ পৃরিবে তোমার 1**
(৪) উজ্জন্প-_গর্বমিশ্র ঈর্ষ। এবং অস্ুয়ার সঙ্গে কৃষ্ণের কপটতা ব্যক্ত ক'রে
আক্ষেপ:
(ওরে কাল। ভ্রমর ) তোমার মুখেত নাহি লাজ ।
যাও তুমি মধুপুরী যথা নিদারুণ হরি
আমার মন্দিরে কি বা কাজ ॥
ব্রজবাসিগণ দেখি নিবারিতে নারি আখি
তাহে তুমি দেখা দিলে অলি।
বিরহ-অনল একে তন্গ খীন শ্তামশোকে
নিভান আনল দিলে জালি ॥
মথুরায় কর বাস থাকহ শ্ঠামের পাশ
চুড়ার ফুলের মধু খাও।
সেথ। ছাড়ি এখা কেনে ছুখ দিতে মোর প্রাণে
মন্দির ছাড়িয়া বাট যাও
(৫) সংজল্প-_ছুর্বোধ্য পরিহাস-উক্তিতে কৃষ্ণের অকুতজ্ঞত প্রভৃতি খ্যাপন :
কপট বিনয় বহু জানত সোয়।
কৈতৰ বচনে ভুলত সব কোয় ॥
তুহ্ই অন্থচর বহু চাতুরি জান।
সো কি করব ইহ চতুরক ঠাম॥
হে ষট্পদ মঝু চরণে না ধরবি।
এছে কপটপন ইথে নাহি করবি ॥
মধুররসবৈচিন্রী ২৫
বাহে লাগি কুলশীল করু সমাধান ।
সে। পুন তেঙ্দি চলত আন ঠাম ॥
জানল তোহোরি মুরুখ ব্যবহার।
ধরম করম তাহে নাহি বিচার ॥**. _ঘনশ্যাম।
(৬) অবজল্প- ঈর্ষা! বা! ভয়ের সঙ্গে উচ্চারিত কৃষ্ণনিন্দাবাক্য :
পূর্বজন্মে রাম হৈয়। বালি কপি বিনাশিয়!
যেহ কৈল ব্যাধের আচার ।
স্থ্পণথার নাসাকর্ণ তাহা কৈল ছিন্ন ভিন্ন
বড়ই নির্দয় মন তার ॥
পুনশ্চ বামন হৈয়। বলির সর্বস্ব লৈয়!
পুন তারে করিল বন্ধন।
হেন কৃষ্ব্ণ যে তার সখা চাহে কে
তবু তারে নাহি ছাড়ে মন ॥
এরকম (৭) অভিজন্ন, (৮) আজল্প এবং (৯) প্রতিজন্ন । কেবল (১) স্থুজল্পের
ব্যাপারেই এসব থেকে ভিন্নত1। স্থুজন্নের নায়িক! শ্রীরাধ! নিতাস্ত সরল এবং
গভ্ভীর। তার ব্যাকুলতা এবং উৎকণ্ঠা আছে। কিন্তু তীব্র প্রণয়রোষ 'নেইণ
পরিহাসবাক্যও ছুর্পভ, যেমন--
মাধব, কা সম্বাদব তোয়।
যব তুই আওব সব নিবেদৰ
মদন রাখয়ে যদি মোয় ||%%
তে। বিচ হুখ যত তাহা না কহিব কত
দারুণ বিরহ-বিষাদ ।
চম্পতি-পতি প্রতি কহইতে এছন
বাঢ়ল প্রেম-উন্মাদ ॥
মান মহাভাব
সর্বভাবোদ্গমোল্লাসী মাদনোইয়ং পরাৎপরঃ |
রাজতে হলাদিনীসারে] রাধায়ামেব যঃ সদা ॥
হলাদিনী ব। প্রেমরসের সারনির্যাস এই মাধনে স্নেহ, মান, প্রণয় প্রভৃতি সমস্ত
আবেক্স একাধারে বিকাশ হয় (স্থতরাং সম্ভোগ এবং “বিপ্রলস্ভ; ছুয়েরই মিশ্রণ
২৯৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
থাকে )। এ ভাব হ'ল শ্রেষ্ঠ থেকেও শ্রেষ্ঠ এবং একমাত্র শ্রীরাধাতেই এর
স্থিতি। সমস্ত ভাবের উদ্গম বলতে সাত্বিক ভাঁবও গ্রহণ করতে হবে।
মোদনের সঙ্গে মাদনের প্রভেদ এই যে, মোদনে হর্যাধিক্য আছে, কিন্ত
মার্দনের মত প্রেম-মদমত্তত নেই | এতে প্রবল স্থখ দুঃখে, এবং প্রবল ছুঃখ সুখে
রূপান্তরিত হয়ে যায় এবং স্থখছুঃখ, মিলনবিরহের অনুভব একত্রিত হয়ে শুদ্ধ
প্রেমোন্মাদদে চিত্ত বিবশ হয়ে পড়ে । মোদনে এই বিশিষ্ট পরিণাম ঘটে ন।
এর বিশেষত্ব এই যে, ঈর্ধার কোন ব্যাপার ন1 থাকলেও এই অবস্থায় প্রবল ঈর্ষ।
জাগরিত হয় এবং সম্ভোগ-শূঙ্গারে কষ্চের সঙ্গে কোনে। ব্যবধান না থাকলেও
“কৃষের গন্ধমাজ বহনকারী” কোনে। বস্তর স্তব করা হয় অর্থাৎ বূপ-গুণ-লালসা
এতে সর্বদ্দাই বর্তমান থাকে ।
মান অবস্থায় সমস্ত সাত্বিকের পূর্ণতম প্রকাশ, যথা জগন্নাথ-মিলনে
শ্রমন্সহাপ্রতু-_
উদ্দণ্ড নৃত্যে প্রভূ করিয়] হুংকার ।
চক্রক্রমি ভ্রমে যৈছে অলাত আকার ॥
নৃত্যে প্রতৃর ধাহ। ধাহা পড়ে পদ্দতল।
সসাগর] মহী শৈল করে টলমল ॥
স্ুম্ত স্বেদ পুলকাশ্র কম্প বৈবর্ণ্য।
নানাভাবে বিবশত। গর্ব হর্য দৈন্ ॥**
উদ্দণ্ড নৃত্যে প্রতৃর অদ্ভুত বিকার ।
অষ্টসাত্বিক ভাবোদয় হয় সমকাল ॥
মাংস-ব্রণ-সহ রোমবুন্দ পুলকিত ।
শিমুলীর বুক্ষ যেন কণ্টকে বেষ্টিত ॥
একেক দত্তের কম্প দেখি লাগে ভয়।
লোকে মানে দত্ত সব খসিয়। পড়য় ॥
সর্বাঙ্গে প্রন্বেদ ছুটে তাত রক্তোদ্গম |
জজ জজ গগ গগ বলেন বচন॥
জলযন্ত্র ধারা যেন বহে অশ্রুজল ।
আশ-পাশ লোক যত ভিজিল সকল ॥
দেহকান্তি্গৌর কতৃ দেখিয়ে অরুণ।
কতু কান্তি দেখি যেন মন্ত্িকাপুষ্পসম ॥
মধুররসবৈচিত্রী ২৯
কু স্তব্ধ কতু প্রতু ভূমিতে পড়য়।
শুফ কাষ্ঠসম হত্তপদ ন। চলয় ॥***__-চৈতন্যচরিতামত-_মধ্য
'অথ শ্রীরাধা £
কহিতে কানুর বিলাস কথ! ।
ছল হল ভেল নয়ন রাতা॥
গদ্ব-গদ ক না! সরে বাণী ।
বিবরণ ভেল কী হৈল জানি ॥
পুলকে পূরল সকল দেহ।
স্তবধ হইলে ন| চলে সেহ ॥
ঝরঝর বাহি পড়য়ে ঘাম ।
খেনে থরথর কম্পমান ॥
যূরছি পড়ল সখীর গায়।
হেরি সহচরী চমক পায় ॥
কোলে করিয়া রহল তাই।
খেনেক চেতন পাওল রাই ॥
সখী কহে বিপরীত সে দেখি।
কহিতে এমন কোঁথ। না লখি
আমর] পুছিয়ে স্বখের কথ ।
ইহাতে তোহর কী ভেল বে ॥
রাই কছে মোর জীবন কানু ।
সে কথা কহিতে অবশ তন্তু ॥
শেখর কহয়ে রহিয়া তাই।
এমন প্রেমের বালাই যাই ॥
'অপিচ, ধনি ধনি রমণী-শিরোমণি রাই |
নয়নক ওত করত নাহি মাধব
নিশি দ্িশি রস অবগাই ॥
করতল-কুস্কুমে ও মুখ মীঞ্জই
অলক তিলক লিখি ভোর ।
সজল বিলোকনে পুন পুন হেরই
আকুল 24 গদ ভবন ১, __ এনাসিজহেছশশন )
২৮৮ বৈষব-রষ-প্রকাশ
অআপিচ,
হৃদয়-মন্দিরে মোর কানু ঘুমাঅল
প্রেম গ্রহরী রহ জাগি।
গুরুজন-গৌরব চৌর-সদৃশ ভেল
দুরহি দূরে রহ ভাগি।॥
এত দিনে ভাঙল ধন্দ।
কাছ-অনুরাগ- ভূজঙ্গে গরাসল
কুল-দাছরী মতিমন্দ ॥
আপনক চরিত আপেনাহি সমুঝিষে
আন করত হোয় আন।
ভাবে ভরল মন পরিজন বীচিতে
গৃহপতি শপতিক ঠাম ॥
নয়নক নীর থির নাহি বান্ধই
না জানি কিয়ে ভেল আখি।
যত পরমাদ কহুই নাহি পারিয়ে
গোবিন্দদদাস এক সাথী ॥
ভক্তিরসের স্থায়ীভাঁবের বিবরণ সমাঞ্চ হ'ল। এর পর বিভাব, অনুভাব, সঞ্চারী
প্রভৃতি।
ভক্তিরসের “বিভা,
“বিভাব হ'ল রসশাস্ত্রেরে পারিভাষিক শব্ঘ। লৌকিক জগতের যে সক
উপাদান অবলম্বন ক'রে কাব্যনাটক লেখ হয়, তা-ই গ্রথিত কাব্যনাটকের ক্ষেত্রে
বিভাঁব বলে পরিগণিত । এই বিভাব, অঙ্কভাব ও সঞ্চারীর মধ্য দিয়ে পরিপুষ্ট
হু*লে তবেই রতি প্রভৃতি স্থায়ীগুলি রসপরিণাম লাভ করে। ভক্তিরসের ক্ষেত্রে
বিভাব সংখ্যায় অগণিত নয়, সাঁমিত। কৃষ্ণ, ব্রজগোপীবর্গ, মহ্ষীরা।, অন্যান্য
কষ-সম্পকিত ব্যক্তিসযূহ, দ্ধারকা, মথুরা, বিশেষতঃ বুন্দাবনের নিসর্গ । মহাপ্রতু-
পক্ষে তিনি এবং তার পরিকরবর্গ, নবদ্ীপ, নীলাচল গঙ্গা, সমুক্জ এই সব হ'ল
উপাদান, সুতরাং ভক্তিরসময় কাব্য-নাটক-পদ্াবলীর বিভাব। বিভাবের ছুটি
বিভাগ, যে-মান্থষ বা বস্তকে মৃখ্যভাবে আইসসঙ্স কঃ স্ক1ব)পা6কাদ গ্রবাতত,
মধুররদরৈচিত্রী ২৯৯,
হয় এবং মুখ্যভাবে যার সহায়তায় পাঠক-দর্শকচিতে রসনির্বাহ হয় তাহ'ল
আলম্বন বিভাব। নরলীলাপরায়ণ কৃষ্ণ-রাধা এবং তাদের লীলাপরিকর বা
মহাপ্রভু এবং তার পরিকরবৃন্দ অথব1 ভক্তের হলেন আলম্বন বিভাঁব ৷ বিভাবের
অবান্তর বিভাগ হ'ল উদ্দীপন । বৃন্দাবন-নবদ্ীপ এবং নিসর্গাশ্রিত পশুপক্ষী,
পদার্থ, খতুণ্রী এবং কৃষ্ণের মালা, চূড়া, বংশী, মুরলীধ্বনি, তুলসী, একাদশী
প্রভৃতি হ'ল উদ্দীপনের অন্তর্গত। ভাগবতের রাঁদলীলায় উৎফুল্পমল্লিকা
শরৎ-রজনী হ'ল উদ্দীপন বিভাব। ক্রমে এসবের বৈচিত্রের পরিচয় দেওয়া
হচ্ছে। মনে রাখতে হবে ৫লীকিক কাব্যের বিভাঁব অ-লৌকিক (অর্থাৎ
লৌকিকেতর ঠিক আধ্যাত্মিক নয়) কিন্তু বস্ত ব1 উপাদান লৌকিক ; কিন্ত
বৈষ্ণব কাব্যা্দির শুধু বিভাবই অলৌকিক (অর্থাৎ অধ্যাত্ম ) নয়, উপাদানও
অলৌকিক । কৃষ্ণ সাধারণ নায়ক নন, গোপীরাও নন, বৃন্দাবনধামও
অলৌকিক, চিন্ময় । এবং শুধু নররূপ কৃষ্-রাঁধাই নন, তাদের বিগ্রহও চিন্ময়
॥ আলম্বন বিভাব।। আলম্বনের দুই ভাগ, বিষয়ালম্বন অর্থাৎ গ্ররুষ্ণ এবং
আশ্রয়াঁলক্বন শ্রীরাধা ও গোপীগণ।
ধীরোদাত্ব, ধীরললিত, ধীরোদ্ধত, ধীরশাস্ত এই চার শ্রেণীর নায়কের
সমস্ত গুণ এক কৃষ্ণেই বিদ্মান। তা ছাড়া এই মধুররসবিগ্রহ নায়ক পঁচিশটি
বিশেষ সদ্গুণেও মণ্ডিত, যেমন-_ন্থরম্য, মধুর, সর্বন্থলক্ষণ, বলীয়ান, নবতরুণ,
শাস্্রাদিতে যুক্তিতর্কপরায়ণ, প্রিয়ংবদ, কৃতজ্ঞ, দক্ষিণ, প্রেমবশ, নিত্যনৃতন,
বংশীধ্বনি-নিপুণ, অতুলনীয্-কেলিসৌন্দর্যময় ইত্যাদি । পূর্ব অধ্যায়ে যে সব
সদ্গুণের কথ বল! হয়েছে 'তার মধ্যে মধুররসে এগুলি বিশেষ ।
নায়ক কৃষ্ণ পতি এবং বিশেষতঃ উপপতি। কোনে! কোনে। গোপকন্া।
তাকে পতিরূপে পেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিবাহিত গোপরমণীকুলের উপপতি
হিসেবেই রুষ্ণের বিশেষ প্রতিষ্ঠী। উপপতি তিনি, যিনি
৮৮৭ অন্তের বিবাহিত রমণীর সঙ্গে প্রণয়ে আসক্ত হন। যদি
বল! যায়, নায়ক-নায়িকার ওুপপত্য বা পরকীয়াত্ব তো
শান্ত্রাদিতে এবং লৌকিক রসশান্্ে নিষিদ্ধ বললেই চলে। সেক্ষেত্রে
ওপপত্য বর্ণনায় অধর্ষেরই প্রশ্যয় দেয়৷ হয়। এর উত্তর শ্রীরূপ দিয়েছেন ।
কষ লৌকিক নায়ক নন, পূর্ণভগবান্; নরব্ূপ ধরেছেন তার লীলাবাসনায়।
'াবার হ্শার্দিনীশক্তি থোন্ড বঙ্গনীল'-পবিকর, হলারদিনীস14 লেন রাধিহ্ণা॥
৩০০ €ৈষ্জব-রস-প্রকাশ
গ্বতরাং প্রাকৃত নায়ক-নায়িকা পক্ষে য! নিন্দনীষ রাধারুষ্ণপক্ষে তা নয়। তা
ছাভ। ব্র্লীলায় কৃষ্ণ নবধর্ম প্রদর্শন করার জন্য এসেছিলেন । এ ধর্ম পর্ব-
পূর্ব শাস্বান্গত ধর্ম থেকে পৃথকৃ, স্থতরাৎ পূর্বশাস্্বিহিত বিধিনিষেধ এ
লীল। বিষয়ে প্রযুক্ত হতে পারে না। প্রশ্ন হবে তাহ'লে ধর্ম সাক্ষা ক+রে
বিবাহিত প্রেমের লীলা দেখালেই তো হ'ত। এ বিষয়ে শ্রীরূপ যুক্তি
দিচ্ছেন যে_অজ্রৈব পরমোৎকর্ষ: শ্ঙ্গারন্তয প্রতিষ্ঠিতঃ। ওপপত্যময় লীলাতেই
প্রেমের পরাকাষ্ঠা। এ বিষয়ে তিনি মাট্যস্ত্রসংগ্রাহক ভরত এবং অন্যান্ত
পূর্বস্ছরীদের বচন উপস্থাপিত করেছেন।* এবং বলেছেন যে স্বয়ং শুকদেব
শ্রীমদ্ভাশবতে কৃষ্ণের গুপপত্য এবং গোপরমণীদের পরকীয়াত্বের মহিম।
কীর্তন করেছেন । শ্রীশুকবণিত রুষ্ণ বলছেন যে, আমি এই গোপরমণীদে র
প্রেমরূপ সাধুকৃত্যের প্রতিদান জন্ম-জন্মান্তরেও দিতে পারব না। কারণ,
এরা স্বজন পরিজন এমন কি দুস্ত্যজ স্বামীধর্মকেণ আমার জন্যে ত্যাগ
কবেছেন। আবার উদ্ধব বলছেন যে, হায়, কৃষ্ণের জন্য অভিসাব করেন
যে ব্রজরমণীরা, তাদের চরণধূলিলিপ্ত তৃণলতার একটি যদি আমি হতে
'পাবতাম ! আসল কথ। এই যে, ছুঃখবরণ এবং ত্যাগের মাহাত্ম্ের মধ্যে
প্রেমের প্রতিষ্ঠা । পরকীয়া! রতিতে এই ত্যাগের চুভান্ত পরিচয়, স্বকীয়াতে
ত৷ থাকতে পারে না! স্থতরাং পরকীয়াত্ব এবং ওপপত্যই নবরাগ-ধর্ষের
ভিত্তি।
আমর] পূর্বেই বলেছি, উজ্জ্লনীলমণির টীকাকার অন্যতম গোম্বামী
শ্রীপাদ জীব পরকীয়াত্বের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাণন করতে দ্িধাগ্রস্ত হয়েছেন ।
তার মতে নিত্যলীলায় অর্থাৎ মৌলভাবে গোপীর! কৃষ্ণের স্বকীয়াই, কেবল
বন্দাবনলীলায় পরকীয়া অর্থাৎ পরকীয়ার মত প্রতীত হচ্ছেন মান্র।
“এখানে সহজেই প্রশ্ন ওঠে, নিত্যলীলায় যদি কৃষ্ণ পরিতৃপ্ত থাকতেন ত1'হলে
স্টার পপত্যময় বৃন্দাবনলীলার প্রয়োজনই বা কী ছিল। প্রেমের পরাকাষ্ট!
* বহু বাধতে যত্র খলু যন্ত্র প্রচ্ছন্নকামুকত্বং চ।
বা] চ মিথে। ছুলভতা। সা পরম) মন্ধস্ত) রতি; ॥॥ ( নাট্যশাস্ত্র)
নামত! হল ভত্বং চ ্ত্রীণাং যা চ নিবারণ
তদেব পঞ্চবাণন্ত মন্তে পরমমায়ুধস্।। ( রুদ্রসংহিত:)
বন্্র নিষেধবিশেব: সদুল ভত্বং চ হল্স্গাক্ষীণামূ।
ভত্রৈয লাপক্গাণাৎ নিভরমাসজ্যতে হদ্য়ম্।॥ (বিঝুঞ্গুনংহিতা )
মধুররসবৈচত্রী ৩০১,
আম্বাদন করতে এবং জানানোতেই তো তার বৃন্দাবনলীলা। তা যদি
হয়, তাহলে গোপীরা মূলতঃ কৃষ্ণের স্বকীয়া থাকুন বা না থাকুন তাতে
কিছু যায় আসে না| শ্রীপাদদ জীব কৃষ্ণের অন্তরঙ্গ] স্বূপশক্তির বিষয়
বিবেচনা ক'রেও একথা বলতে পারেন। সেক্ষেত্রে কিন্ত লীলাহীনতার
ব্যাপার এসে পড়ে। নরলীল] নিয়েই কৃ্চের ও কৃষ্ণভক্র্দের যা-কিছু
প্রয়োজন । ফলত: শ্রীজীবের “পরমস্বকীয়ীপি পরকীয়ায়মাণাঃ শ্রীব্রজদেব্যো
ন তু পরকীয়া:” এরকম উক্তি রুত্রিম সামঞ্স্তবিধানের প্রয়াসই স্থচিত
করে। উজ্জ্লনীলমণিব অপর খ্যাতনামা! টীকাকার শ্রীপার্দ বিশ্বনাথ
চক্রবর্তী পরকীয়াত্ব বিষয়ে শ্রীরপের অভিপ্রায় ও পরকীয়াত্ব স্থাপনের
যথার্থতা নানাভাবে বিঙ্লেষণের' বারা বুঝিয়েছেন । তার কথায়, রাসার্দি-
লীলাকে মায়িক বললে ভক্তদের দডাবার জ্গায়গ। থাকে ন1। উজ্জ্বলনীলমণির
নায়ক-নায়িক1 প্রকরণে শ্রীরূপ খুব স্পষ্টভাবেই পরকীয়ারতির শ্রেষ্ঠত্ব কীর্তন
করেছেন। এতে সংশয়ের কিছু নেই। নিত্যলীলার প্রসঙ্গ অবান্তর বলেই
তিনি তোলেননি। যাই হোক, শ্রীরূপ এক কথায় পূর্বপক্ষকে এই ব*লে
নিরস্ত করেছেন যে, কুষ্ণপ্রসঙগে পরকীয়াত্বের দোষের প্রশ্নই ওঠে না,
কারণ, কষ প্রাকৃত নায়ক নন, তিনি ঈশ্বর ।
পতিই হোন আর উপপতিই হোন নায়কের পূর্বোক্ত ধীরোদাত্ব-আদি
চারটি বিভাগের প্রত্যেকটির মধ্যে আবার অন্থকুল,
দক্ষিণ, শঠ ও ধুষ্ট 'এই চার রকমের প্রভেদ দেখা
ষায়,। এই হিসেবে নায়কদের বিভাগ হয়ে পড়ে ৪৮ ৪--১৬। বলা
বাহুল্য, বিচিন্ত্রলীলাময় এক কুষ্জের মধ্যেই এ যোল প্রকার নায়কের সমস্ত
গুণ বিদ্যমান ।
“অনুকূল” নায়ক তাঁকেই বলে *যিনি একনায়িকানিষ্ঠ। কৃষ্ণ যখন অন্য
নায়িবাপ্রসঙ্গ বর্জন ক'রে শ্রীরাধাতেই আসক্তি প্রকাশ করেন তখন
রাধাপক্ষে তিনি অন্থকূল নায়ক। যেবন শ্রীমতীর নিজ উক্তি মতে £
নায়কতেদ
গোকুল নগর মাঝে আর কত নারী আছে
তাহে কেন না পড়ল বাধা ।
নিরমল কুলখানি যতনে রেখেছি আমি
বাঁশী কেন বলে রাধা রাধা ||
৭৩৪২ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
'অথব। কৃষ্ঞোক্তি :
স্বন্দরি কাহে কহুসি কটুবাণী।
তোহারি চরণ ধরি শপতি করিয়ে কি
তু বিনে আন নাহি জানি ॥
'ধীরোদাত-আদি যূল বিভাগ অবলম্বনে অনুকূল নায়কও চার প্রকৃতির হবেন।
“দক্ষিণ নায়ক হচ্ছেন তিনি, ষিনি সমভাবে ব্হুনায়িকানিষ্ঠ, অথচ এরকম
'হুলেও গ্রথমার প্রতি গৌরব ত্যাগ করেন না| যেমন, কলহান্তরিত] অবস্থায়
শ্রীমতী বলছেন £
আম্বল প্রেম পছিল নহি জানলু
সে বৃুব্ল্ 5 কান।
আদর সাধে বাদ করি ত। মঞ্চে
অহোনিশি জলত পরাণ ॥| ইত্যাদি
মাধব, কাহে কান্দায়সি হামে।
চলি যাহ সে! ধনি ঠামে ॥
তোহোরি হৃদয়-অধিদেবী।
তাকর চরণ যাউ সেবি ॥ হত্যাদি।
শঠ-_নায়িকার কাছে খুব প্রিয়ভাষী, কিন্তু অন্তরালে যথার্থই অপরাধী এমন
নায়ক, যেমন--
অন্তরে জানিয়। নিজ অপরাধ।
করজোড়ে মাধব মাগে পরসাধ।
নয়নে গলয়ে লোর গদগদ্দ বাণী।
রাইক চরণে পসারল পাণি |
"অথবা,
কপট নেহ করি রাইক পাস।
আন রমণী সঞ্জে করহ বিলাস ॥ ইত্যাদি
ধ্ই-_অন্য নায়িকাসঙ্গ স্পষ্ট হলেও যে নায়ক নির্ভয়ে মিথ্যা বচনে ভা!
পুকোবার ছল করে। যেমন-_
বংশী পরশি আমি শপথ করিয়ে ।
তোম] বিনে দিবানিশি কিছু ন। জানিয়ে।
মধুররসবৈচিত্রী ৩৯৩
ফাগুবিন্দু দেখিয়। সিন্দুরবিন্দু কহু।
কণ্টকে কঙ্কণ-দাগ মিছাই ভাবহ ॥ ইত্যার্দি।
'মপিচ,
কাহা নখ-চিহ্ন চিহ্নুলি তু স্থন্দরি
এহ নব কুম্কুম-রেহ।
কাঁজর ভরমে মরমে কিয়ে গণ্সি
ঘনযুগমদ-পদ এহ || * +
গেরিঅ হেরি বৈরী সম মানসি
উর পর যাবুক ভানে।
ফাগুক বিন্দু ইন্দুমুখী নিন্দমসি
সিন্ুর করি অন্থমানে ।
তোহারি সম্বাদে জাগি সব যামিনী
অরুণিম ভেল নয়ান।
তুই পুন পালটি মোহে পরিবাদসি
গোবিন্দদাস পরমাণ ।
লৌকিকে শঠত এবং ধৃষ্টত1 উন্নত সৌন্দর্যরূচির আধার ন। হলেও উপপতি রুষে।
এব চমৎকারিত। অবিসংবাদিত এবং ত1 মনোরম কবিত্বেরও উদ্ভব ঘটিয়েছে।
রসশাস্ত্রে চেট, বিট, দূতী প্রভৃতি নায়কসহায় ব'লে কথিত। কৃষ্ণের
পপ্যত্যময় প্রেমলীলায় বিশেষভাবে সহায়ের প্রয়োজনীয়তা লীলারসিকের।
উপলন্ধি করেছেন। এক্ষেত্রে শ্রীরূপ প্রচলিত রনশান্ত্রেব উপর কামশাস্ত্ের
নায়কসহায় নির্দেশেই অধিকতর মান্য করেছেন। তাই কেবল
বিবি, চেটবিটাদিই নয় প্রিয়নর্ষসথা! এবং দূতীর বিবরণও তাকে
দিতে হয়েছে । “চেট? নায়কের সেবক মাত্র, সে দক্ষ এবং গৃডঢ়কর্মক্খ কুষ্ণপক্ষে
গোপিকাদের সঙ্গে যোগাযোগ-রক্ষক | বুন্দাবনে কৃষ্ণের এরকম কর্মকুশল সেবক
হলেন ভদ্র, ভূঙ্গার প্রভৃতি । “বিট? হ'ল কামশান্ত্রে নিপুণ সমালাপ-দক্ষ ধূর্তচরিত্র
বিশেষ । বুন্দাবনে কৃষ্ণের একজন বিট হলেন_-কড়ার। “বিদৃষক' মধূমঙ্গল
অলংকারশাস্থান্থগত বিদূষকই | তিনি বিকৃত বাকৃচেষ্টার ছারা কৃষ্ণপরিকরদের
হাশ্যবিধান করেন। “পীঠমর্ণ' অনেকটা সখার মত। তিনি নায়কের সদৃশ
গুণবান্ হয়েও নায়কের অন্তগত। কৃষ্ণের পীঠমর্দ হলেন শ্রদাম, সখাদের
মধ্যে ধার বিশেষ গুণবত্তা। কৃষ্ণের পপ্রিয়নর্মনখা” হলেন স্থবল, যিনি কৃষ্ণের
৩৩৪ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
সঙ্গে গোপীর্দের প্রণয়ের সব ব্যাপাবই জানেন, যেমন কৃষ্ণের তেমনি
গোপিকাদের গ্রেমক্রীড়ার অতি বিশ্বন্ত সহায়, ধার কাছে উভয়পক্ষই গোপন
কথা খুলে বলতে পারেন। চৈতন্ত-পরবর্তা যুগে রাধারুক্-প্রণয়ে দূতীর
ভূমিকার গুরুত্ব স্বীকৃত হয়নি, কিন্তু গ্রণয়ের পর মিলন বিষয়ে সংযোগ রক্ষায়,
প্রবাস এবং মান পর্যায়ে নর্মঘহায়তায় দূতীর তমিকা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
রাধারুষ্ণের স্বয়ংসিদ্ধ প্রণয়ের বিষয় বিবেচন1। ক*রে উভয়ের স্বয়ংদৌত্যও বৈষ্ণব
কাব্যের মিলন-বিচ্ছেদ-লীলার একটি অন্যতম বিষয়। কৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য,
সাধিত হয় মুখ্যতঃ তার কটাক্ষ এবং বংশীধ্বনির দ্বার। এছাড়। প্রণয়ের
বিভিন্ন অবস্থায় আঙ্গিক এবং বাচিক দৌত্যেরও অবকাশ রয়েছে।
দৃতীপ্রেরণের বিষয়টিকে বলা হয়েছে আগ্তদৌত্য । বাকৃপটু অতিশয় বিশ্বস্ত
ব্যক্তি আপ্ত-দৌত্যের কাজ ক'রে থাকেন। প্রবাস, খগ্ডিতা, কলহান্তরিতা৷
এবং মানের অবস্থায় বিশেষভাবে আগ্তদৌত্যের প্রয়োজন। কৃষের স্বয়ংদৌত্য
যেমন-_
রসিক নাগর সাজি বাজিকর
সঙ্গেত স্থবল সখা ।
ঢোলক বাজাইয়। দড়ি দড়া লইয়া
ভানুপুরে দিল দেখা || * *
কতেক কুহক দেখায় কৌতুক
শিরে হাটি হাটি চলে।
ধনী হাসিমন বিচিত্র বসন
বাজিকর শিরে ফেলে ॥
বসন না লয় আর ধন চায়
কহে স্থবদনী পাশে।
ও হিয়ার মাঝে হেমঘট আছে
দিয়া পুর অভিলাষে ॥
শুনিয়া! নাগরী বুঝিল। চাতুরী
চম্নকিত হৈল। মনে।
হেন বাজিকর ন| দেখিয়ে আর
কত টীটপনা জানে ||**"
_উদ্ধবদাস।
মধুরসবৈচিত্রী ৩০৫
অথবা, মানে স্বয়ংদৌত্য যথা-_
চাহ মুখ তুলি রাই চাহ মুখ তুলি।
পরশিতে চাহি তুয়। চরণের ধূলি ॥
অভিমান দূরে করি চাহ একবার ।
দূরে যাউ সব মোর হিয়ার আন্ধার ॥।
পীত পিদ্ধন মোর তুয়া অভিলাষে।
পরান চমকে যদি ছাড়হ নিশাসে ॥-". _ জ্ঞানদাঁস
কষ্ণের আগুদূতীদের মধ্যে বীরা, বৃন্দ, মেলা, মুরল। প্রভৃতি । এর মধ্যে বীর!
প্রগল্ভবাক্ এবং বৃন্দ! চাঁটুপটুবা্ক। আধ্ুদূতীর তিনটি শ্রেণী : অমিতার্থ,
নিহ্ষ্টার্থা এবং পত্রহারিণী। অমিতার্থা দূতী ইঙ্গিতে নায়ক-নায়িক। ছুজনের
অথব। একজনের মনোভাব বুঝে নিয়ে স্বকৌশলে উভয়কে মিলিত করার চেষ্টা
করেন। অপরপক্ষে নিস্্টার্থা তিনি, যিনি কাজের ভার পেলে তবেই দৌত্য
করেন। পত্রহারিণী চিঠিপত্র নিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করেন। কৃষ্ণপক্ষে কোনো!
সখা অথবা পরিচারকও পত্রহারী হতে পারেন । বিশেষ বিশেষ গুণ ও চারিত্রয
নিষে পত্রবাহকদেরও কয়েকটি বিভাগ কল্পিত হয়েছে
নায়িকা ব। কষ্ণপ্রিয়।
স্বকীয়-_ন্বকায়া এবং পরকীয়া ভেদে মূলতঃ রুষ্ণপ্রিয়াদের ছুই ন্ভাগ |
স্বকীয়] ্বারকাঁয়। এদের সংখ্যা ষোল হাজার একশ আট। এদের আবার
গণ ব! শ্রেণী আছে, আর আছে প্রত্যেকেব সহম্র সহশ্র সথী এবং দাসী । সখীর।
মহিষীদের প্রায় তুল্যরূপণ্ণ, আর দাদীর] কিছু কম। এই সব মহিষীদের মধ্যে
আটজনই হলেন মুখ্যা এবং কৃষ্ণের প্রিয়তম1- রুল্সিণী, সত্যভামা, জান্ববতী,
কালিন্দী; শৈবা, ভন্দ্রী, কৌশল্যা এবং মাদ্রী। এদের মধ্যে আবার রুক্মিণী
এবং সত্যভাম। এর্বশ্রেষ্ঠ, রুক্মিণী এশ্বর্ষের দ্রিকু থেকে, আর সত্যভাম। সৌভাগোর
দিক থেকে। এদের সকলেরই বিবাহিত পতি শ্রীরুষ্ণ। এছাড়া রুষ্ঝ কোনে
কোনে গোপকন্ত(রও পতি। এর) কৃষ্ণকে পাবার জন্য কাত্যায়নী ব্রত
করেছিলেন এবং বিবাহিত ন1 হলেও কুষ্ণকে পতিরূপেই ভজন। করেছিলেন ।
ব্রজ্গোগীদের পরকীয়াত্ব এবং গ্রচ্ছন্নপ্রেমভাব সাধারণ লক্ষণ হলেও এক্ষেত্রে
বিশেষত্ব বুঝতে হুবে।
ও
৩৯৬ _ বৈষ্ব-রস-গ্রকাশ
পরকীষ্ঞা_ প্রেমের বশে ধারা ইহকাল পরকাল, শাস্ত্র গুরুবাক্া প্রভৃতি
গ্রাহ না ক'রে পুরুষবিশেষে আসক্ত হন এবং এ পুরুষের সঙ্গে অগ্নি-বিপ্র
সাক্ষ্য কঃরে পরিণয়বন্ধন ধাদের কোনে। কালেই ঘটে না, তারাই পরকীয়া ।
পরকীয়। গোপীর। অবশ্য একক কৃষেই আসক্ত ।
এর! কন্তাও হতে পারেন, অন্যের বিবাহিতাও হতে পারেন। এই
দুই ক্ষেত্রেই গোপন প্রেষ কৃষ্ণের অভিনন্বনের বিষয়। তবে বৃন্দাবনে
পরোঢ়া গোঁপরমণীরাঁই কৃষ্ণের বিশেষ প্রিয়, কারণ, প্রেমের জন্যে এদের
ছু:খবরণ এবং ত্যাগ অতুলনীয় । এই গোপরমণীর। পতিদের সঙ্গে সংসক্ত
হননি ' এবং সন্তানের জন্মও দেননি । নারায়ণরূপ কৃষ্ণের বক্ষঃস্থিত লম্ীর
চেয়েও এ'র। কৃষ্ণের অধিক প্রীতিভাজন।
পরকীয়। নায়িকাদের শ্রেণী তিনটি। সাধনপরা, দেবী ও নিত্যপ্রিয়।
'সাধনপরা* অর্থে সাধনায় নিরতা--একাকিনী অথবা যুখসহ। জন্মাস্তরে
এর! কেউ কেউ মুনি, কেউ কেউ শ্রতি। কেউ বা সাধারণ মানুষই ।
পূর্ব পূর্ব জন্মে রাগাম্গ ভজনে ধানের উৎকঠ্া৷ ছিল তারা ব্রজে গোগী
হয়ে, হরিণী প্রভৃতি হয়ে জন্মলাভ ক'রে স্থকৃতিৰশে কৃষ্ণের সালোক্য লাভ
ক'রে খাকেন। “দেবী” হলেন তারা ধারা নিত্যপ্রিয়াদের অংশ। কৃষ্ণের
দেঁবযোনিতে অবতারের সময় তাকে সঙ দেওয়ার জন্য এ'রাও দেঁবীরূপে
আবিভূত হন। এরা আবার ব্রজে নিত্যপ্রেয়পীদের সখী হয়ে কৃষ্ণলীলার
বিস্তারবৈচিত্র্য সাধন করেছেন। কৃষ্ণের বল্পভাদের মধ্যে নিত্যপ্রেয়সীরূপে
ধারা পুরাণে বিখ্যাত তারা হলেন- শ্রীরাঁধা, চন্দ্রাবলী, ললিতা, বিশাখা,
শ্তাম1, প্ল্সা, শৈব্যা, ভক্তরা, তারা, চিত্রা, ধনিষ্ঠ। প্রভৃতি । এছাড়া লোক-
প্রসিদ্ধ মনোরম, মঙ্গল।, বিমলা, লীলা, খঞ্জনাক্ষী প্রভৃতিও আছেন। এর!
সকলেই যৃথাধিপা। নিজ নিজ যুথ নিয়ে রাগাত্সিক ভজনে নিরত।
বিশেষ এই যে ললিতা, বিশাখা, পল্মা এবং শৈব্যার কোনে। দল নেই।
সথীত্বেই এদের পরাকাষ্ঠা। ললিত। এবং বিশাখ। শ্রীরাধার সখী, পদ্ম! ও
শৈব্য। চন্দ্রাবলীর |
॥ গুরাথ। ॥
রাদা ও চন্দ্রাবলী কৃষের নিত্যপ্রেয়পীদের মধ্যে সর্বোত্তম! । এ হুয়ের
মধ্যে আবার প্রেমের তীব্রতী ও গভীরতায় রাধার তুলনা নেই। তিনি কষের
মধুররসবৈচিআী ৩৭
হুলারদিনীর ঘনসারবিগ্রহং মহাভাবের অবস্থার অধিকারিণী, 'সর্বগুণথনি
পর্বকাস্তাশিরোমণি।
প্রশ্ন হতে পারে, গোপীশ্রেষ্ঠ এই রাধার বিষয় কি ইতিহাস-পুরাণে বিবৃত
হয়েছে, ন। এ কৃষ্ণোপাসক বৈষ্ণবদের উদ্ভট কল্পনা? তার উত্তরে শ্রীবপ
বলছেন-_রাধা শাস্ত্প্রসিচ্ধা! কৃষ্ণপ্রেয়সী, গোপালোত্তরতাপনী উপনিষদে ধাকে
গান্ধবাঁ বলা হয়েছে। এবং খকৃ-পরিশিষ্টে “রাধয়া মাধবো দেবে! মাধবেন চ
রাধিকা” ব'লে রাঁধামাধবের যে অবিনাভাব সপ্বদ্ধের. বিষয় বল হয়েছে
তাতে রাধার কৃষ্ণপ্রেয়সীত্ব পূর্বেই স্থাপিত হয়েছে। তা ছাড়া পল্গ-
পুরাণেও এভাবে রাধার উল্লেখ ধয়েছে। |
শ্রীরপ এইভাবে সমাধান খুঁজে পেলেও আজকের সংশয়দৃষ্টি ও ইতিহাম-
চেতনার যুগে গোল এত সহজে মেটেনি। এবিষয়ে ভূমিকাংশে আমরা
আমাদের বক্তব্য বলেছি, এখানেও প্রয়োজনবশে সংক্ষেপে তা বলতে
হুচ্ছে। আধুনিক অন্ুসন্ধিৎহদের কারে! কারো মতে রাধা লৌকিক
সাহিত্যের প্রেমিক] হিসেবে প্রথমে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন» পরে ভক্তিগ্রন্থে
স্থান পেয়েছেন। ঝকৃ-পরিশিষ্টে রাধার উল্লেখুক বৈষ্বদ্দের প্রক্ষিপ্ত ব*লে
তারা মনে করেছেন। গোপালতাপনীতে রাধার নাম নেই। এমন কি যে-
ভাগবত গৌড়ীয় বৈষ্ব্দের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ তাতেও রাধা নেই। অথচ অন্তত:
সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীর লৌকিক সাহিত্যে রাধার উত্লথ পাওয়। যাচ্ছে।
যেমন, হালের সংগৃহীত গাথাসপ্তশতীতে, আনন্দবধনের ধ্বনরালোকে,
ভট্রনারায়ণের বেণীসংহারের নান্দীশ্লোকে । অতএব সন্দিপ্ধ খকু-পরিশিষ্ট ব।
গোপালতাপনীকে রাধা-বিষয়ে অগ্রাধিকার ন৷ দিয়ে সাহিত্যকেই দেওয়া
উচিত।
এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য এ সব বিষয়ে যে-বিবেচন৷ প্রথমে কর!
উচিত, অথচ যা কর] হয় ন1, তা হ'ল এই যে, পূর্বপ্রতিষ্ঠিত দেবর্দেবীকে
নিয়ে সাহিতে) নায়ক-নায়িকা-ভাবের কাব্যনির্মাণের স্পৃহা ভারতীয়
সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য । শিবপার্বতী তে কালিদাসের পূর্বেই ( এবং কলিদাসের
লেখাতেও) ঈশ্বর-ঈশ্বরীত্বে প্রতিষ্ঠিত। আর কুমারসম্ভব তো। লৌকিক
'কাব্য। কথা এই *যে, লীলার অংশ নিয়ে রসময় কাব্য। রসশান্ত্রে এ
দোষের নয়। গাথাসপ্তশ্তীর বা আনন্দবর্ধনের উল্লিখিত কবিও এভাবে
প্রতিষ্ঠিত রাধারুষ্কাঁহিনী থেকেই তাদের সংক্ষিপ্ত কবিত্বের উপাদান সংগ্রহ
৩০৮ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
করেছেন। বেশ বোঝা যায়, গাথাসঞ্তশতীর গাথা অথবা! আনন্দবর্ধন
উল্লিখিত গ্লোকের মুলে রাধারুষ সংবলিত কোনো ধারাবাহিক কাহিনী
রয়েছে। সে কাহিনী কি লৌকিক না ধর্মীয়? লৌকিক হ'লে তাঁর
আগে তা কোথায় ছিল? রাধা না হোন, কৃষ্ণ তো বহু পূর্ব থেকেই
ভগবতাঁয় প্রতিষ্ঠিত। তাহ'লে কৃষ্ণের প্রেম নিয়ে যে কবিত!, তা কি
নিছক লোক-কাহিনী-যুল হতে পারে? শ্রীয়দ্ভাগবতে রাধার নাম থাক
না থাক, কৃষ্ণ এবং গোঁপীপ্রেম যে আধ্যাত্মিক সে বিষয়ে তো দ্বিমত থাকতে
পারে না। অশ্বঘোষের বুদ্ধচরিতে কৃষ্ণের গোপীসহ লীল। বণিত হরেছে।
স্থতরাং গোপী এবং গোপীশ্রে্ঠ রাধাকে নিয়ে প্রতিঠিত লীলাকাবযোর এক
কটি বিচ্ছিন্ন রম্য অংশকেই লৌকিক কবির! কাব্যে ব্যবহার করেছেন--এই
সিদ্ধান্তে আসতে হয়।
গৌড়ীয় বৈষ্ণব গোস্বামীরা মনে করেন ভাগবতের “অনয়ারাধিতো” এই
শব্দার্থ রাধার নাম লুকিয়ে রয়েছে । স্পষ্ট বলা হয়নি, কারণ, যে-গোপীমূখে
একথা বল! হয়েছে তিনি কটাক্ষ ক'রে বলেছেন ব'লে নাম ধরেন নি।
প্রধানা একজন গোপীরঞ পরিচয় তো? স্পষ্ট । রাধা যর্দি লৌকিক
নায়িকাই হন, তাকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরাই
দায়ী নন। দশম-একাদশ শতাব্দীর ভক্তিরসিক বিন্বমঙ্জলের কৃষ্ণকর্ণামৃতে
রাধাপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়। অবশ্য কাহিনীমূলক কোনে লীল। নষ।
দ্বাদশ শতাব্দীর গীতগোবিন্দেই প্রথম প্রায়-পূর্ণাঙ্গ রাধাকষ্জলীলার পরিচয়
পাচ্ছি। এ কাব্যটিও ভাগবত এবং প্রচলিত অন্যান্য ধর্মীয় কহিনীর
অন্থবৃত্তিযমূলক বলেই মনে হয়। সে যাই হোক, যেহেতু রাধার নাম পাচ্ছি
না এরং রাধানামসহ পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় আখ্যায়িক! দুর্লভ হচ্ছে সেইহেতু
লৌকিক সাহিত্যের এঁ প্রতিঠিতলীলানির্ভর ছু* একটি বিক্ষিপ্ত রচনাকে
ধর্মীয়তার পূর্বে স্থাপনের কোনো যৌক্তিতা থাকতে পারে না। বরং
মহাপ্রভু এবং গোস্বামীদের ধারণ এবং যুক্তি মেনে নেওয়াই যুক্তিসংগত।
রাধা এবং চন্ত্র'ব্লী। বৃন্দাবনে কৃষ্ণের প্রধান] প্রিয়াদদের মধ্যে এই ছুই
হলেন সর্বোত্তমা এবং সবচেয়ে নিকটবতিনী। এদের মধো শ্রেষ্ঠা হলেন
শ্ররাধা। তিনি কৃষ্ণপ্রিয়াবলীমুখ্য] | তার দেহগঠন “অতি স্থুসমগুস, তিনি
ষোড়শ প্রসাধনে নিত্যতূৃষিতা, দ্বাদশ আভরণে মণ্ডিতা। কৃষ্ণের মত তিনিও
বু গুণ্রে অধিকারিণী; স্তরাং মধুররসের দিকৃ থেকে শ্রেষ্ঠ নায়িক!।
মধুররসবৈচিত্রী ৩
তিনি আম্চর্ধরূপময়ী, সমাবূঢড ঠশোরের যাবতীয় অভিনব দেহশোঁভার
অধিকারিণী। মধুরমন্দ স্মিত তার অধরোষ্ঠে, চারুসৌভাগ্যস্থলক্ষণ তার
সর্বাঙ্গে। তিনি চারুবাকৃ, তিনি নর্মদক্ষা, বিনীতা, করুণাময়, বিদগ্ধা,
লজ্জ।ধৈর্য-বিমগ্ডিতা অথচ বিরহে বিপরীতা, তিনি সখীপ্রণয়বশীতৃত1।
শ্রীরাধার সখীবুন্দও রূপে গুণে অধিক ন্যুন! নন। এই সথীর! তার প্রেম-
লীলার সহায় । বিভিন্নতায় এর! পাঁচ প্রকারের £ সখী, নিত্যসখী, প্রাণসখী,
প্রিয়খী, আর পরমপ্রেষ্ঠসখী । ললিতা, বিশাখা, চিত্রা, চম্পকলতা),
তুঙ্গবিদ্যা, ইন্দুলেখা, রঙ্গদেবী ও স্থদ্বেবী এই অষ্ট সখী হলেন পরমপ্রেষ্ঠা ।
শ্রীরাধার ঘনিষ্ঠতমা। বলে এর] কৃষ্ণের অতিপ্রিয়া, আর কৃষেেও এদের
পরমপ্রিয়ত] |
॥ নায়কীভেৰ ॥
লৌকিক অলংকারশাঞ্ধে নায়িকার্দের বয়সোঁচিত স্বভাবভেদ্দে তিনটি
শ্রেণীভেদ দেখানো! হয়েছে মুগ্ধা, মধ্য, প্রগল্ভ1। কি তা হ'ল স্বকীয়!
অথব1 পরকীয়কন্যকা ( পশ্চাৎ স্বকীয় ) বিষয়ে ; পরোঢ়াদের অন্বন্ধে কদাপি
নয়। বৈষ্ণব রসশাস্ত্রে নায়িকাদের মধ্যে পরোঢ়াই প্রধানা, এই বিশেষ ।
ক. মৃদ্ষধী-_ মুগ্ধা নববয়ঃকাম! রতৌ বাম সখীবশা |
রতচেষ্টান্থ সত্রীভচারুণৃঢ প্রধত্বভাক্ ॥
কতাপরাধে দয়িতে বাপ্পরুদ্ধাবলোকন।।
প্রিয়াপ্রিয়ে।ক্তৌ চাশক্ত! মানে চ বিমুখী সদ] |
মৃগ্ধার নবীন বয়স, প্রথমবাঁসনী, কামকলায় অনভিজ্ঞত1, রতিবিষয়ে প্রতিকৃলত,
সখীর্দের আঙ্গত্য, অত্যধিক লজ্জার জন্য গোপন মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ
সাবধানত1।। তিনি প্রণয়ীর অপরাধে শুধু রোদনশীল। কিন্ত অমানিনী, চাটু-
প্রিয্নবাক্য অথব1 অপ্রিক্ষবাক্য দুয়েরই প্রম্নোগে অক্ষম । যেমন, বিদ্যাপতি-_
কত অন্থনয় অন্রগত অনুবোধি।
পতিগৃহ সখিহি' সুতাঁওল বোধি ॥
বিমুখি স্থৃতলি ধনি স্থমুখি ন হোএ।
ভাগল দল বনুলাবএ কোএ ॥
বাঁলমু বেসনি বিলাসিনি ছোটি।
মেল ন মিলএ দেলছু হেম কোটি ॥
৩৯৩ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
বসন ঝপাএ বদন ধর গোএ।
বাদর তর সসি বেকত ন হোএ ॥
ভূজ-যৃগ চাপ জীপ জে” সাচ।
কুচ কাঞ্চন কোরী ফল কাচ ॥
লগ নাহি' সবএ করএ কমি কোর ।
করে কর বারি করছি কর জোর ॥
গ্রকারাস্তর কৃষ্মুখে :
হামে দরশাইতে কতহু' বেশ করু
হামে হেরইতে তন্গ ঝাঁপ।
স্থরত শিঙারে আজি ধনি আয়লি
পরশিতে থরথর কাপ ॥
(শুন হে) কামুক ইহ অবধারি।
সকল কাজ হাম বুঝলু বুঝায়লু
না বুঝলু অন্তর নারী ॥
অভিমত কাম নাম পুন শুনইতে
রোখই গুণ দরশাই।
অরি সম গঞ্জয়ে মন পুন রগুয়ে
আপন মনোরথ সাই ॥
অন্তরে জীউ অধিক করি মানয়ে
বাহিরে লাগয়ে উ্দাসে।
কহ কবিশেখর অন্গভব জানলু
বিদগধ কেলি-বিলাঁসে ॥
মানে অক্ষম বা মু
সুন্দরি, উপদেস ধরিঅ ধরি
সুষ্থ সু স্থললিত বাণী।
নাগরিপন কিছু কহব] চাহ
কহলনু বুঝএ সয়ানী ॥
কোকিল কৃজিত ক বইসাওব
অন্থরঞব রিতুরাজে ।
অপিচ,
মধুররসবৈচিন্রী ৩১৯
মধুর হাস মুখমণ্ডল মণ্ডব
ঘড়ি এক তেজব লাজে ॥
কৈতব কএ কাতরত। দরসাঅব
গাঢ় আলিজন দানে ।
কোপ কইএ পরবোধল মানব
ঘড়ি এক না করব মানে ॥ ইত্যার্ি
মুখ যব মাজল রসিক মুরারি।
সুন্বরি রহলি কবহি কর বারি ॥
প্রেম সবহু' গুণ দুহু করি লেল।
মুল নয়নযুগল কর দেল ॥
করে কর বারিতে উপজল হাস।
ছুই পুলকায়িত গদগদ ভাষ ॥
খ. মধ্যা-_মুদ্ধা'র রতি-অভিলাষকে সমাচ্ছন্ন ক'রে প্রবল লঙ্জাই প্রধান
হয়ে দেখা দেয়।
“মধ্যাটওর লজ্জা এবং রতিবাসন! সমান লমান। মধ্য
উদ্ভিব্র-নবযৌবনা, বাক্যে স্বপ্প প্রগল্ভ1ঃ নর্মবিলুস-প্রাথিনী এবং মানবিষয়ে
কখনে। কোমল। কখনে। বূঢা। যেমন গোবিন্দর্দাস £
বেণুক শবদ- দূত মঝু অস্তর
পৈঠল শ্রবণক বাট।
হৃর্দিমাহ। ধৈরজ অর্গন তোড়ল
উঘারল কুল কবাট ॥
( সখি) কানু সে বরজ বাটোয়ার।
মঞঝু মন-গৃহপতি নিজ জোরে বান্ধল
কছু নাহি কয়ল বিচার ॥
তৈখনে অ্দন সদন আসি ঘেরল
বাধল ধরম রাখোয়াল।
ধন মান যৌবন সব হরি লেঅল
উজোরি প্রেম উজিয়াল ॥
সরবস লেই পালটি যব যায়ব
গৃহ মাহা দেয়ল আগি।
৩১২ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
গোবিন্দদাস দূরহি দূর কাপই
শরম ভরম ভয় ভাগি ॥
সাধারণভারে মানবিষয়ে মধ্যার স্বল্প মান আছে আবার স্বল্প অন্ুনয়ে এবং
মিলনব্যাকুলতায় সে মান সহজেই পরিহার করার প্রবণতাও আছে,
0
সো মুখ-চান্দ নয়নে নাহি হেরলু
নয়ন-দহন ভেল চন্দ ।
সোই মধুর বোল শ্রবণে ন। শুনলু'
মধুকরধ্বনি ভেল ছন্ব।
সজনি, কাহে বাঢ়ায়লু' মান
প্রেম-ভঙ্গ ভয়ে অব জীউ কাতর
তুহ্ছ পরবোধবি কান।
সো৷ কর-কিশলয়- পরশ উপেখলু'
অব কিশলয়ে তনু ফোর।
নব নব নেহ স্থধারস নিরসলু'
গরলে ভরল তন মোর ॥***
_গোবিন্দদাস।
কিন্তু এই মধ্য। নায়িক। মানের অবস্থাভেদে ভ্রিবিধ! হতে পারেন-£ধীরা, অধীরা,
এবং ধীরাধীরা। অপরাধী প্রিয়কে কেবল বক্রোক্তি প্রয়োগ ক'রেই যিনি
তৃপ্ণ হন তিনি “ধীর” যেমন-_
(মাধব ) কাহে কান্দায়সি হামে ।
চলি যাহ সে। ধনি ঠামে ॥
তোহোরি .হদয়-অধিদেবী ।
তাক চরণ যাউ সেবি ॥
যে যাবক তুয় অঙ্গ।
ততহু করহ পুন রগ ॥
সোই পূরব তুয়! কাম।
কী ফল মুগডধিনী ঠাম॥
এত কহ গর্দগদ ভাষ।
ভগ রাধামোহন দাস ॥
মধুররসবৈচিত্রী ৩১৩
অধীর মধ্যা, যেমন-__
ধিক রহু মাধব তোহোরি সোহাগ ।
ধিক রহু যো ধনি তোহে অনুরাগ ॥
চলহু কপট শঠ না কর বেয়াজ
কৈতব বচনে অবহু কিয়ে কাজ॥
সহজই অনলে দগধ ভেল অঙ্গ।
কাহে দেহ আহুতি বচন বিভর্জ |**
সিন্দুর কাজর ভালহি তোর |
ছল করি চরণে লাগায়সি মোর ॥
কহইত্ে রোখে অবশ ভেল অঙ্গ।
কহ বলরাম ইহ প্রেম-তরঙগ ॥
অধীর অবস্থায় কোপ এবং বুভাষণ-প্রবণতা থাকে । মুহুর্তে ধীর] মূহূর্তে
অধীর এরকম মিশ্রাবস্থায় হবে “ধীরাধীরা»।
গ. প্রগল্ স্ত1-__প্রগল্ভ1 দেহশোভার দিক্ থেকে পূর্ণযৌবনের অধিকারিণী,
শৃঙ্গাররতিবিষয়ে যেমন সমুৎস্থক তেমনি উপভোগক্ষমা, রতি-হাস-শোকাদির
মুন্মুহ অন্নুভবের অভিজ্ঞতাময়ী, রসবিদগ্ধতায় নায়ক ধার অনুগত, যিনি
চতুরবচনপ্রয়োগে এবং শৃঙ্ষারচেষ্টায় নিপুণা, এবং মানে নিতাস্তই কড়া ।
মুগ্ধ! এবং প্রগল্ভার মধ্যবতিনী মধ্য নাম্িকাকেই যগ্তপি কাব্যনাট্য এবং
রসশান্ধে অভিনন্দিত করা হয়েছে, এবং ব্রজরমণীদের ও বিশেষভাবে শ্রীমতীর
যদিচ মধ্যাত্েই স্থিতি, তবু তাদের সাময়িক প্রগল্ভ1 অবস্থার বিষয় বিবেচন।
করে 'প্রগল্ভাঃর উল্লেখ কর হ'ল। আমল কথা, একই নায়িকা সময় ও
অবস্থাভেদে ভিন্নস্বভাবসম্পন্ন হয়ে মুগ্ধা, মধ্যা, প্রগল্ভ। তিনটি আখ্যাই পেতে
পারেন। শ্রমতীর প্রণয়াধিক্য বলে মানে কদাচিৎ কোমল, কর্দাচিৎ বিহ্বলা-
কদাচিৎ কর্কশ । কখনে' কৃষ্ণের দর্শনেই পরিতৃপ্ঠা, কখনে। সম্তোগলালসাময়ী ।
শ্রীরাধার প্রগল্ভ। অবস্থার আভাস নিম্নলিখিত পদগুলিতে পাওয়া যাবে।
সভোগ-শৃঙ্গারে, যথা
কুটিল-কটাখ- বিশিখ ঘন বরিখনে
দূরে করি বিবিধ তরঙ্গ ।
নিজ তম্থ ওষধি সংস পরশ দধি-
লেশে থকিত করু অঙ্গ ॥
৬১৪ ফেব-রস-প্রকাশ
(সুন্দরি ) পীতান্বরী তুই ভেলী।
একলি ঠিলোলি শ্যামরসলায়র
সব সার হরি লেলী॥
দ্ূর-অবগাহ- অন্তর-মাহ] মন্থর
মদন-কমঠ অবগাহি।
উচকুচমন্দর হারভূজগবর
মেলি মথন নিরবাহি ॥
অধর স্বধ] প্রিয়- প্রেম লছমী হিয়
বাহিরে নখপদ চন্দ।
প্রতি তন ভাব- রতনে পরিপুরল
গোবিন্বদাস রহ ধন্দ॥
বক্রোক্তি-পরায়ণা, যথা_
ভাল হৈল আরে বধু আইলা সকালে ।
প্রভাতে দেখিলু' মুখ দিন যাবে ভালে ॥
বন্ধু তোমারে বলিহারি যাই।
ফিরিয়। ঈাড়াও তোমার টাদমৃখ চাই ॥
আই আই ধর্যাছে রূপ কাজরের শোভা] ।
ভালে সে সিন্দুর তোমার মুনিমনোলোভা৷ ॥% *
স্থর্গ যাবক-রঙ্গ উরে ভাল সাজে ।
এখন কহ মনের কথা আইল কিব। কাজে |
মানে অতিকঠিনা, যথা__ |
কত কত অন্ভুনয় করু বরনাহ।
ও ধনি মানিনি পালটি ন চাহ ॥
বহুবিধ বাণী বিল'পয়ে কান।
শুনইতে শতগুণ বাঁয়ে মান ॥
গর গদদ নাগর হেরি ভেল ভীত।
বচন না৷ নিকসয়ে চমকিত চীত ॥
পরশিতে চরণ সাহস নাহি হোয়।
কর যুড়ি ঠাঁড়ি বদন পুন জোয়॥
'নধ্যা” শ্রেণীর নায়িকার মত প্রগল্ভাতেও ধীর], অধীরা, ধীরাধীর৷ ভেদ
মধুরঘবৈচিত্ৰী ৩১৫:
থাকতে পারে। ভা ছাড়। গ্রগল্ভ। জ্যেষ্ঠটা এবং কনিষ্ঠ ভেদে ছু'রকমের
হতে পারেন । কন্যকণ নায়িক। সবসময়েই মুগ্ধ। হয়ে থাকেন।
এই মুখ্য তিন শ্রেণীর পরকীয়। নায়িক। প্রেমলীলায় এক এক পর্যাক্কে
এক একটি অবস্থার, অধিকারিণী হন। এই অবস্থা হিসেবে এই নায়িক।
আটপ্রকারের বৈচিত্র্য ধারণ করেন, যেমন-_-অভিসারিক1, বাসকসজ্জা,
উৎকন্টিতা, বিপ্রলন্ধ।, খণ্ডিতা, কলহান্তরিতা, প্রোফিতভর্তৃকা এবং স্বাধীন-
ভর্তৃকা । এর মধ্যে প্রোধিতভর্তকা এবং স্বাধীনভর্তক। অবস্থ! হ্বকীয়।
নায়িকারও হতে পারে। যদিচ পরকীম্াতেই এগুলির মাধুর্য এবং গৌরব
সমধিক। এগুলি যথাক্রমে বণিত হচ্ছে;
১, আঅভিসারিকা অভিসার শব্দের অর্থ কোনো সংকেত স্থানের
অভিমুখে অগ্রসর হওয়া। সাধারণভাবে যে-কোনে। মানুষের যেকোন!
স্থানের অভিমুখে, যেমন সৈনিকের রণক্ষেত্রের অভিমুখে । কিন্তু শব্দটি
ক্রমশঃ প্রেমিক-প্রেমিকা ক্ষেত্রেই রূঢ় হয়ে পড়েছে।
একান্ত মিলনব্যাকুল। যে প্রেমিক! ন্বয়ং অভিসার করেন অথবা প্রেমিককে
নির্বাচিত মিলনস্থলে অভিসার করান তাকে অভিসারিক। বল। হয়। এর
মধ্যে নায়িকার অভিসারই রম্যতার আধিক্যের জন্য কাব্যার্দিতে মুখ্যভাবে
বণিত হয়েছে। বল] বাহুল্য, অভিসারের মাধূর্ধ পরকীয়াতেই সীমিত।
পরকীয়ার মধ্যে আবার পরোঢাতেই বৈচিত্র্যের সীমা । এজন্য বৈষ্ণব
কাব্যে রাধিকার অভিসার কবির। এত অভিনিবেশ সহকারে বর্ণনা করেছেন ।
বস্তত: অভিসারেই নায়িকার প্রেমের চরম পরীক্ষা । প্রেমের জন্য নায়িক!
কতদূর ত্যাগ শ্বীকার করতে পারেন -কুলঃ যশ, লজ্জা, মর্ধাদ্ণ1 সমস্ত কিছুকে
তৃণজ্ঞান ক'রে, স্বদেহ এবং প্রাণের প্রতি মমত্ব ত্যাগ ক'রে স্বার্থত্যাগ এবং
ছুঃখবরণের কিরকম পরিচয় দ্দিতে পারেন তার কণ্টিপাথর হ'ল এই অভিসার ।
শ্রীচৈতন্যের ভাবমূতিকে করনায় দেখে পরবর্তী পদরচয়িতারা অভিসারের
ব্যগনাপূর্ণ নোতুন ছবি একেছেন।
বিভিন্ন কার্য থেকে উপাদ্দান চয়ন ক'রে আলংকারিকেরা কুলবতীদের
অভিসারকাল এবং তৎকালোচিত প্রসাধনের, বর্ণন। দিয়েছেন । কাল হিসেবে
যেহেতু রান্রিই প্রশস্ত, সেজন্য অভিসারিকার মুখ্য ছুই বিভাগ -তমোভিসারিকা
এবং জ্যোতশাভিসারিকা। তমোভিসারিকার পরিধেয় শাটী হবে নীল,
নীলকুন্থমের আভরণ থাকবে এবং তিনি মৃগমদে অঙ্গ বিলিপ্ড করবেন।
৩১৬ বৈষ্ব-রস প্রকাশ
অপরপক্ষে জ্যোৎ্ন্াভিসারিকার পরিধেয় হবে শুভ্র ক্ষৌমবস্ত্, তিনি মল্লিকার
মত শ্বেতপুষ্পের মাল্য ধারণ করবেন এবং সর্বাঙ্গে চন্দনচর্চা করবেন ।
সবক্ষেত্রেই তারা মণ্ীর-বলয়ার্দী আভরণকে নীরব করে রাখার ব্যবস্থা
করবেন এবং আত্মগোঁপনের জন্য অবগুঠনবতী হবেন, আর অঙ্গপ্রত্যঙকে
দেহের মধ্যে যতদূর সম্ভব মিলিত করে পথ চলবেন--“সংলীন। ন্বেষু গাত্রেষু
মুকীকৃতবিভূষণ”।
শ্রীমতীর ভাবব্যাকুলতার কাঁলাকাল-হীনতার বিষয় উপলব্ধি ক'রে বৈঝব
পদাঁবলীতে মহাজনের দ্বিবাভিসারও (প্রাতঃ, মধ্যাহ্ন প্রভৃতি ) বর্ণন]
কবেছেন। তা ছাড় মূল বর্ধাভিসারের অন্থপরণে হেমস্ত, শিশির, বসন্ত
প্রভৃতি খতু-সময়োচিত অভিসারেরও সঙ্গিবেশ করেছেন। গোবিন্দ্যাস কবি-
রাজের নিম্নলিখিত পদটিতে তিমিরাভিসার বর্ণনের সঙ্গে সঙ্গে, ভাবে এমনকি
রূপেও কৃষ্ণময়ী রাধিকার একটি অপূর্ব ছবি ফুটে উঠেছে। পর্দটির কাব্যাংশ
সংস্কত থেকে গৃহীত হলেও গৌড়ীয় বৈষ্ব রাখাভাবের সমন্বয়ে তা বিশিষ্ট
হয়ে উঠেছে £
নীলিম মুগমদে তন্ন অন্ুলেপন
নীলিম হার উজোর।
নীল বলয়গণে ভুজযুগ মণ্ডিত
পহিরণ নীল নিচোল ॥
হরি অভিসারক লাগি।
নব অনুরাগে গোরী ভেলী শ্তামরী
কুহু যামিনী ভয় ভাগি ॥
নীল অলকাকুল অলিকে হিলোলত
নীল তিমিরে চলু গোই।
নীল নলিনী জঙ্থ শ্যামর সায়রে
লখই ন পারই কোই ॥
* মু্িনঁলছুকুলিনী মৃগমদৈ: প্রত্যঙপত্রক্রিয়।
- ৰাহ্ মেচকরত্বকঙ্কণভূতৌ কণ্েহঘুসারাবলী।
ব্যালখাঁলকমগ্জরীকমলিকং কাস্তাভিসারোৎসবে
বৎসত্যং তমন। যুগাক্ষি বিহিতং বেশে তবাচার্যকম্ ॥
মধুররসবৈচিত্রী ৩১%
নীল ভ্রমরগণ পরিমলে ধাবই
চৌদিকে করু বাংকার।
গোবিন্দদাস , অতএ অন্ুমানল
রাই চললী অভিসার ॥
বর্ণতিমিরাভিসারে শ্রীমতীর ছুঃখবরণের চিত্রও গোবিন্দদাদ একেছেন :
(মাধব ) কি কহব দৈব-বিপাক।
পথ-আগমন-কথা কত ন| কহিব হে
যদি হয় মুখ লাখে লাখ।
মন্দির তেজি যব ' পদ চারি আওলু
নিশি হেরি কম্পিত অঙ্গ ।
তিমির-ছুরস্ত পথ হেরই না পারিয়ে
পদযুগে বেঢল ভুজঙ্গ ॥
একে কুলকামিনী তাহে কুহু-যামিনী
ঘোর গহন অতিদূর |
আর তাহে জলধর বরিখয়ে ঝরঝর
হম যাওব কোন পুর | ইত্যাদি
জ্যোৎস্াভিসার, যথা
সুন্দরী, মাধব তুয়া পথ হেরই
তুরিতে করহ অভিসার ।
গগন উপরে উয়ল বিধুমণ্ডল
বমল কিরণ পরচঢার ॥
সমুচিত বেশ করহ বর চন্দন
কপূর খচিত করি অঙ্গ।
ছুপ্ধফেন-পসিত অস্বর পহিরহ
কঞ্ণহি চল নিঃশঙ্ক ॥
চরণ কমলে নৃপুর তেজি হন্দরী
চল তাহে শবদ-রহিত।
এতহি বচনে চললি বর-রঙ্গিণী
মনসিজ মদে উলসিত ॥
শ্রীরূপ বিধান দিয়েছেন যে নায়িকা একাকিনী যাবেন, তবে সিদ্ধ একজন
৩১৮ বেষ্ব-রস-গ্রকাশ
সখী সঙ্গে থাকতেও পারে । তদন্যায়ী সথীসহ শ্রীমতীর অভিসারের চিত্র তুলে
ধ'রে এর রূপসৌন্দর্ধও ফুটিয়ে তুলেছেন কবি অনস্তদাস :
ধনি ধনি বনি অভিসারে ।
সঙ্গিণী রঙ্গিণী প্রেমতরঙ্গিণী
সাজলি শ্যাযবিহারে ॥
চলইতে চরণ সঞ্ঞে চলু মধুকর
মকর+ পানকি লোভে ।
সৌরভে উনমত ধরণী চুম্বয়ে কত
ধাহ। ধাহা পদচিহু শোভে ॥
কলকলতা জিনি জিনি সৌর্দামিনী
বিধির অবধি রূপ সাজে ।
কিঙ্কিণী-রনরনি বঙ্করাজ-ধ্বনি
চলইতে স্থমধুর বাজে ॥
হংসরাজ জিনি গমন সুলাবণি
অবলম্বন সখী-কান্ধে।
অনন্তদাস ভণে মিললি কুগুবনে
পুরইতে শ্যাম-মন-সাধে ॥
সৌন্দর্য-আসক্ত কবি বিস্ত হয়েছেন যে কুলবধূব1 অভিসারে যেতে অলংকার-
শিঞ্জিত সংগোপনই করবেন। মহাগ্রভূ-ভাবে ভাবিত জ্ঞানদাসেরও অনুরূপ
বিশ্বৃতি-বিহবলত ঘটেছে যখন তিনি রবাব-বেণুবীণার নিনাদসহ শ্রীমতীর
অভিসার-যাত্র! বর্ণনা করেছেন £
আবেশে সখীর সঙ্গে অঙ্গ হেলাইয়।
পদ আধ চলে আর পড়ে মুরছিয়! ॥
রবাব খমক বাণ] স্থমেল করিয়া |
বৃন্দাবনে প্রবেশিল জয় জয় দিয়] |
নৃপুরের কুম্ঝুস্থ পড়ে গেল সাড়া ।
নাগর উঠিয়। বলে রাই আইল পার! ॥
এ কীর্তন-মহোৎসবে বিলসিত মহাপ্রভুর চিত্র । এ গ্রভাব স্বাভাবিক । আবার
নিম্নলিখিত অংশে ভাব-ব্যাকুল ধাবমান মহাপ্রভুর চিত্রাঙ্কনও হ্বাভাবিকই
'স্থায়েছে £
অধুরসবৈচিন্রী ৩১৯
সখীগণ রজ তেজি চলু একেসরি
হেরি সহচরীগণ ধায়।
অদৃতূত প্রেম- তরঙ্গে তরজিত
তবহ সঙ্গ নাহি পায় ॥
' চললী কলাবতী অতিশয় রসভর
পম্থ বিপথ নাহি মান।
২. ৰাসকপজ্জ1। _ন্ববাসকবশাৎ কান্তে সমেম্যতি নিজং বপুঃ।
সজ্জীকরোতি গেহং চ যা! স। বাসকসজ্জিক1 ||
কথ। আছে, প্রিয় এখানে আসবেন এমন ভাবনায় ব্যাকুল! যে নায়িক1 নিজ
গৃহ শঙ্গারাম্থকূল ভাবে সজ্জিত এবং দেহ প্রসাধিত করেন তাকে বাসকমজ্জ!
বলা হয়ে থাকে।
এই অবস্থায় নায়িকা» প্রিয় এলে কিভাবে অভ্যর্থনা করবেন আর
মিলনাবস্থাতেই বা! কী করবেন, এই সব চিস্তা ক'রে অভিভূত অবস্থায়
থাকেন, পথের দিকে তাকিয়ে থাকেন, সথীর সঙ্গে বিশরস্তালাপ করেন, মুহ্মুন্ছ
দূতীর অনুসন্ধান করতে থাকেন। কবি জয়দেবের বর্ণনে বাসকসজ্জার
প্রত্যাশা এবং তন্ময়তার চিত্র অপূর্ব হয়েছে । দৃতী কষ্খদমীপে শ্রীরাধার অবস্থা
বলছেন :
পশ্ঠতি দিশি দিশি রহসি ভবস্তম্।
ত্বদধরমধুরমধূনি পিবস্তম ||
নাথ হরে। সীদতি রাঁধ। বাসঘরে ॥
ত্র্দভিসরণরভমেন বলস্তী ।
পততি পদানি কিয়ন্তি চলস্তী ॥
বিছিত-বিশদ-বিস-কিশলয়-বলয়। |
জীবতি-পরমিহ তব রতিকলয়] ॥
মুহরবলোকিতমণ্ডনলীল!।
মধুরিপুরহমিতি ভাবনশীল! ॥
ত্বরিতমূপৈতি ন কথমভিপারম্।
হুরিরিতি বদতি সখীমন্গবারম্॥
্লিত্যতি চুম্বতি জলধরকল্পম্।
হরিরুপগত ইতি তিমিরমনল্লম্॥
৩২০ | বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
ভবতি বিলদ্ধিনি বিগলিত-লজ্জা।
বিলপতি রোদিতি বাসকসঙ্জ। ॥
৩. উৎকণ্ঠিতা_অথবা বিরহোতৎকন্িতা। এ বাসকসজ্জারই পরবতী
অবস্থা | “প্রিয়ের অন্য নারীর প্রতি কোনো সমাদর নেই অথচ তিনি বিলম্ব
করছেন কেন এমন ভাবনায় যে নারী বিলম্বিত রজনীতে প্রতীক্ষমাণ৷ অবস্থায়
নিতান্ত ব্যাকুল হন তাঁকে উৎকণ্তিতা আখ্য] দেওয়] হয়েছে । যেমন--
হাম রহু সংকেত অনত রহ কান।
একলি কুঞ্জে কুস্থমশর হান ॥
হৃদয়ে জলত মঝ্ু আগি।
কঠিন পরান রহত কথি লাগি ||
ষাকর লাগি মনহি মন গোই।
গড়ল মনোরথ ন]। চঢ়ুল সোই ॥
কুলবতী চরিত পিরিতি লাগি খোই।
হা হ। হরি করি কাননে রোই ॥
পম্থ নেহারি নয়ন রয় লাগি।
টুটত রজনী বাঢ়ত অন্থরাগি ॥-". -গোবিন্দদাস।
৪. বিপ্রলন্ধ।-প্রিয়ঃ কৃত্বাপি সংকেতং যস্তা নারাতি সন্িধিম্*__
সংকেতস্থান এবং সময় ঠিক করেও প্রিয় যদি না আসেন তাহলে নিতান্ত
অবমানিতা এবং ব্যথিত] নায়িকাকে বিপ্রলব্ধা অর্থাৎ বঞ্চিত বিরহিতা৷ বলা
যাবে। যেমন-_
গাথল পছুমিনী ভেল তৃজঙ্গ।
গরল উগারল মলয়জ-সঙ্গ ॥
কুন্থমশেজ ভেল শর-পরিষস্ক।
বজর-নিপাতন মধুকর-কঙ্ক ॥
কোই নহত অন্থকূল।
পাওলু হরি সঞ্জে প্রেমক যূল ॥
কি করব কাহে কহব পুন এহ।
যাওব কাহ] নাহি পাইয়ে থেহ ॥
দৈবক দোষ বুঝিয়ে অন্মান।
অতন্থহ তন ধরে কতহু বিধান ॥
মধুররসবৈচিত্রী ৩২১
কৈছন জীউ রহত ইহ দেহ।
নাশক ভেল মঝু বাসক গেহ ॥
হরি রহ কোন কলাবতী পাশ।
আওত কহ ঘনশ্টামর দাস ॥
৫. থণ্ডিত1--শপথ উল্লজ্বন ক'রে নায়ক অন্যনারীসমাগত হয়ে এমনকি
সেই সমাগমের চিন বেশবাসে ও দেহে ধারণ ক'রে যে-নায়িকার কাছে প্রভাতে
এসে দেখা দেন সেই নায়িকাকে খণ্ডিতা বল! হয়ে থাকে । এই অবস্থায়
নায়িকার রোষ, দীর্ঘশ্বাস, নীরবতা প্রভৃতি চেষ্টা দেখ! ষায়। যেমন শ্রীমতী :
দেখ সখি হোর কিয়ে নাগররাজ ।
বিপরীত বেশ বিভৃষণ হেরিয়ে
কোন কয়ল ইহ কাজ ॥
ঢুলি ঢুলি চলত খলত পুন উঠত
আওত ইহ মঝু কাস্ত।
স্থলপঙ্কজদল মু্দিত নয়নযুগ
যামিনী জাগি নিতান্ত ॥
মুখবিধুরাজ মলিন অব হেরিয়ে
অরুণ-কিরণ ভয় লাগি।
অলক-নিকর উড ভালগগন পর
নিশি অবসান ভয় ভাগি |**
টলমল চরণ যুগল মণিমগ্ত্ীর
ঝনন ঝনন ঝন বাজে।
কহ বলরাম দাস হই বিপরীত
হেরত নাগররাজে ॥
এ বিষয়ে আরও দৃষ্টান্ত ২৮২ পৃ্ঠীয় ভরষ্টব্য।
খগ্ডিতার পববর্তী অবস্থা নিঃসন্দেহে মানের । তবু “মানিনী” হিসেবে নায়িকার
যে বিভাগ কর] হ'ল না, তার কারণ বোধহয় এই যে মানকে বিপ্রলভ-শৃঙ্গারের
অন্যতম পর্যায় হিসেবে বিবেচনা কর] হয়েছে । এ কেবল নায়িকার অবস্থা-
বৈচিন্ত্য হিসেবে গণনার যোগ্য নয়।
১৫.
৩২২ | বৈষ্ণব-রষ-প্রকাশ
৬. কলহ্াস্তরিতা-_খগ্ডিতা অবস্থ1 এবং তদহ্ছসারী মানের. মধ্যে একটা
কলহের ভাব থাকে । সেই কলহ অন্কুতাপের দ্বারা অন্তরিত অর্থাৎ দূরীভূত
হ'লে নায়িকার যে অবস্থ! হয় তা কলহাস্তরিতার, যেমন__
আন্ধল প্রেমে পহিল নাহি হেরলু
সো বু-বলভ কান।
আদ্র-সাধে বাদ করি ত] মঞ্জে
অহনিশি জলত পরাণ ॥
(সজনি) তোহে কহি মরমক দাহ ।
কানুক দোখে যে! ধনি রোখই
সে! তাপিনী জগমাহ ॥
যে! হাম মান বত করি মানল
কাঙ্ৰ মিনতি উপেখি।
সো অব মনমিজ- শরে ভেল জরজর
তাকর দরশ না দেখি ॥
ধৈরজ লাজ মান সঞ্জে ভাগল
জীবন রহ সন্দেহ।
গোবিন্দদাস কহই সতি ভামিনি
এছন কান্থক নেহ ॥
৭. (প্রাষিতভর্তৃকা-__কার্ধব্যপদেশে প্রণয়ী প্রোষিত ( - প্রবাসগত )
হলে প্রণয়িনীকে প্রোষিতভর্তৃক! বলা হয়। শ্রীমতীর ক্ষেত্রে ভর্ত। শবটিকে
সাধারণভাবে গ্রহণ ক'রে উপপতি কৃষ্ণকেই বুঝতে হবে। পূর্ব-প্রচলিত রসশাস্থ
যা মোটামুটি স্বকীয়ার প্রণয়ই অঙ্কন করেছে, তা থেকে শবটি অপরিবতিত
অবস্থায় গ্রহণ কর হয়েছে।
“মাথুর পর্যায়ে শ্রীমতীর অবস্থা! প্রোষিতভর্তকার। এই অবস্থায় নায়িক!
প্রি্নের গুণকীর্তন ও বিলাপ করেন। তার মানসিক চিন্তা ও শৃন্ততাবোধ, দেহে
মালিম্য ও জড়ত! প্রভৃতি লক্ষ্য করা যায়। যেমন, বিদ্যাপতি ঃ
পিয়া গেও মধুপুর হাম কুলবালা।
বিপথ পড়ল যৈছে মালতীমালা ॥
কি কহমি কি পুছসি শুন প্রিয় সজনি।
কৈছনে বঞ্চব ইহ দিনরজনী ॥
মধুররসবৈচিত্তী ৩২৩
নয়নক নিন্দ গেও বয়ানক হাস।
স্থধ গেও পিয়ানঞ দুখ মঝু পাস ॥
পরে 'মাথুর' পর্ধায়ের বর্ণনায় প্রোষিতভর্তকার আরও বিশেষ পরিচয় পাওয়।
যাবে।
৮. স্বাধীনভর্তৃকা_ নায়িকার যে অবস্থায় নায়ক কেবল তার সদী-
সমীপবর্তাই থাকেন না, অধিকস্ত প্রণয়ের অধিকার-গবিতা৷ নায়িকার ইঙ্গিতে
তার প্রসাধনাদি কার্ষও সম্পাদন ক'রে দেন, সেই অবস্থার নায়িকাকে
স্বাধীনভর্তৃকা বল! যায়। স্বাধীনভর্তৃকার মধ্যে যার সঙ্গ কষ্ণ ত্যাগ করেন না
তাঁকে “মাধবী” বলা হয়। যেমন গীতগোবিন্দ :
“রচয় কুচয়ো; পন্রং চিত্রং কুরুঘ কপোলয়োঃ” ইত্যাদি ।
অথবা, গোবিন্দদাস £
(ধনি ধনি ) রমণী-শিরোমণি রাই ।
নয়নক ওত করত নাহি মাধব
নিশি-দিশি রস অবগাই ॥
করতল-কুস্কুমে ও মুখ মাজই
অলক তিলক লিখি ভোর ।
সজল বিলোকনে পুন পুন হেরই
আকুল গদগদ বোল ॥
' লোচন-খঞ্ন অঞ্জমে রঞ্তই
নব কুবলয় শ্রুতি-মূল।
অতসী-কুস্থম-সিবি ললিত হৃদয়ে ধরি
কৃপণ হেম সমতুল |
যাবক-চীত . চরণ পর লিখই
মদন-পরাজয়-পাত।
গোবিন্দধাস কহই ভালে হোয়ল
কানুক আরকত হাত ॥
প্রণয়গত গুদার্যের বিষয় গণনা ক'রে এসব গোপরমণীদের উত্তম! মধ্যম
"এবং কনিষ্ঠ ভেদও কল্পন। করা যায়।
এর পূর্বে রাধা, চন্ত্রাবলী, শ্যামা, পদ্মা, শৈব্যা, ভদ্রা, তারা, চিত্রা প্রভৃতি
যেসব যুখেশ্বরীর কথা বল] হয়েছে, তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্ব্ব-রক্ষণের দিকৃ
৩২৪ বেষ্ব-রস-প্রকাশ
থেকে ম্বভাবভেদ নিরূপণ করতে গিয়ে শ্রীরূপ অধিক, সমা ও লঘু এবং এঘের
প্রত্যেকের প্রখর1, মধ্য ও মুছু এই নয় প্রকার বিভেদ দেখিয়েছেন । এরকম
শেণীবিন্তাসের ফলে স্বভাবের দ্দিকু থেকে এদের সমতা ও বিরুদ্ধতা বোঝার
স্থবিধে হয়।
॥ নায্িকা-দুতী প্রসঙ্গ ॥
পরকীয়৷ রতির ক্ষেত্রে দূতীর গুরুত্বের বিষয়ে পূর্বেই বল! হয়েছে।
নায়িকাপক্ষে যা বিশেষ তা-ই বল! হচ্ছে। স্বয়ংদূতী এবং আগুদূতী | রা'গবশে
ব্যাকুল! হয়ে লজ্জা ত্যাগ ক'রে, মনোভাব মিলনকাল প্রভৃতি নিজে জানিয়ে
এলে নায়িকাকে শ্বয়্বংদূতী বল! যায়। স্বয়ংদৌত্যে স্বাভি-
প্রায় জ্ঞাপন তিন রীতিতে হতে পারে। বাচিক, আঙ্গিক
এবং চাক্ষুষ । বাচিক অভিপ্রায় প্রকাশ প্রায়শই ব্যগুনার আশ্রয়ে করতে হয়।
এই ব্যগ্না ধ্বনিশান্সের নিয়মানুলারে শব্দোপ্তব হতে পারে, অর্থোন্তবর হতে
পাবে । বিশেষ বিশেষ শব্ধ ব্যবহার করে যদি ব্যঙ্গ্যার্থ আন। যায় তা"হলে
ব্যগুন। হবে শব্দোন্তব । আর শব্মভঙ্গির উপর জোর ন। দিয়ে বাচ্যার্থের সাহায্য
অভিপ্রেত ব্যঙ্গ্যার্থ জানাতে চাইলে বাঁচিক অভিযোগ হবে অর্থোন্ভব। এ ছাড়।
কোনো বিবয়ে শব্দে বা অর্থে নিষেধ জানিয়ে ষদ্দি সেই বিষয়ে প্রবৃত্তিই আসলে
বোঝানো হয়, তেমন আক্ষেপযূলক ব্যগ্তন৷ ন্বয়ংদৌত্যে থাকলে তা চমৎকার
হবে। অন্য কোনে। বিষয়ের বর্ণনার ছলে স্বাভীষ্ট নিবেদনও আর এক বক্রত]।
শ্ঙগাররসের ব্যাপারটি নিতান্ত রমণীয় বলে এর বচনবিন্তাসেও রমণীয়তা রক্ষা
করতে হয়। স্বয়ংদৌত্যে এরকম নানাপ্রকারে রসচমত্কার রক্ষা করা যায়।
সংস্কত-প্রাকত কাব্যে এভাবে ছল, আক্ষেপ প্রভৃতির সাহায্যে নায়িকার
গৃঢ বাচিক আত্মরতিজ্ঞাপনের দৃষ্টান্ত প্রব আছে। পদাবলী থেকে ছুটি
দৃষ্টান্ত সমাহৃত হ'ল £
পতি অতি দুরমতি কুলবতী নারী ।
স্বামীবরত পুন ছোড়ি না পারি ॥
তে রপযৌবন একু নহ উন।
বিদগধ নাহ না হোয় নিপুণ |
এ হরি অতয়ে দেখায়ব পন্থ।
প্জব পশুপতি গোরী একস্ত ॥
স্বয়ংদৌত্য
মধুররসবৈচিত্রী ৩২৫
সহজে বধূজন গতি মতি-হীন।
ঘর সঞ্চে বাহির পম্থ নাহি চিন |
না মিলল কোই বনহি' বন আন।
অন্ুসরি মূরলী আয়লু' এহি ঠাম ॥
আয়লু দূর পূরব নিজ সাধে।
একলী বোলি করহ জন বাধে ॥
ভূ যৈছে গোরী আরাধলী কান।
গোবিন্দদাঁস তাহে পরমাণ ॥
“আমার স্বামী অবিদপ্ধ, আমার রূপযৌবন ব্যর্থ হচ্ছে, সেজন্য পশুপতি পূজ
করতে এসেছি । দূর অরণ্য, আমি একাকিনী ।* এরকম উত্তিতে শব্ধ এবং অর্থ
দুয়েরই উপব নির্ভর ক'রে কৃষ্ণের কাছে শ্রীমতী অভিগ্রায় ব্যঞ্তিত করছেন।
'অপিচ ঘনশ্যামদাসের £
শীতলকর কর পরশহি মীঠ |
যাহে হেরি নিরমল হোওত দীঠ ॥
এ হেরি তোহোরি তিলক নিরমাঁণে।
হেরি নিশাপতি করি অন্গমানে ॥
অতএ মে লোচন পুন পুন চাহ।
ইথে জনি আন বুঝবি মন মাহ ।॥।
বিধিনিরমিত কছু কহন ন জাত।
দিনপতি দরশনে দ্িঠি জরি যাত ॥
কহ ঘনশ্যামদাস স্থথ গোই।
কহইতে আন আন জনি হোই ॥
এখানে অন্য বিষয়ের বর্ণনচ্ছলে স্বাভিগ্রায়-প্রকাশ । “হে কৃষ্ণ, তোমার মুখের
দিকে আমি তাক।চ্ছি না, তোমার চন্দনের ফৌট] চাদের মত ব'লে চাদ দেখে
চোখ ঠাণ্ডা করছি। স্র্ধ দেখে দেখে চোখ জলে গেল যে'--এরকম উক্তি
কষ্ণ যে আক্ষরিক ভাবে গ্রহণ করবেন ন। তা বলাই বাহুল্য ।
আঙ্গিক স্বাভিপ্রায় প্রকাশের তালিকায় এই ব্যাপারগুলির উল্লেখ করা
হয়েছে-_-অঙ্গুলি ম্ফোটন, বক্ষঃ ব্দনাদি আচ্ছাদনের দ্বারা সন্্রম জ্ঞাপন,
চরণাঙ্গুলির দ্বারা ভূলেখন, কর্ণকণ্ডয়ন, তিলকক্রিয়া, ভরকম্পন, অধরদংশঃ বেশ-
৩২৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
সজ্জা, মণ্ডনশিন, হারাদিগুল্ষনঃ সখী-আলিঙ্গন, সখী-তাঁড়ন, বাহুমূল প্রদর্শন,
নায়কনামলেখন, এবং তরুতে লতাসংযোগ প্রভৃতি |
চাক্ষুষ অভিযোগের দৃষ্টান্তত্বরপ বলা হয়েছে-_নেত্রম্মিত, নেজ্রার্ধমীলন,
নেত্রান্তে দর্শন, নেত্রান্ত-সংকোচন, বক্রদৃষ্টিক্ষেপ, বামনেত্রে দর্শন এবং কটাক্ষ
প্রভৃতি |
প্রীমতীর আগ্রদূতীর্দের অমিতার্থা, নিস্্টার্থা এবং পন্রহারিণীর কথ পূর্বেই
আপ্তদু্ী বলা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছেন শিল্পকারী, দৈবজ্ঞ!,
তপন্থিনীবেশধারিণী, পরিচারিকা» ধাত্রেয়ী, বনদেবী প্রভৃতি |
প্রয়োজনবশে সখীরাও দৌত্যে নিযুক্ত হন। সখী-দৌত্য নায়ক-নায়িকা
উভয়নিষ্ঠ হয়ে থাকে এবং প্রকাশের দিকৃ দিয়ে বাঁচ্য এবং ব্যঙ্গ্য রূপ লাভ করে।
॥ সবী-প্রসঙ্গ ॥
(সখী তারাই ধার। পরস্পরের মধ্যে আত্মাধিক প্রণয় পোষণ করেন, ধার
পরস্পর একান্ত বিশ্বস্ত এবং বয়স, বেশতৃষা, রূপমাধূর্ষ, বিলাস-বৈদগ্ধ্যে ধারা:
সমান। ) পূর্বে রুষ্ণ্রেয়সীবর্ণন প্রসঙ্গে শ্রীরাধার যুখবর্তা সখীসমূহের বিষয়
উল্লেখ ক'রে তাদের সখী, নিত্যসখী, প্রাণসখা, প্রিয়সথী, পরমপ্রেষ্টসথী এই
পাচ বিভাগ দেখানো হয়েছে। বর্তমানে সমস্ত যুখের সখীর্দের বিষয় সাধারণ
ভাবে বলা হচ্ছে।
রাধারুষ্-লীলায় সখীর স্থান অত্যন্ত উচ্চে। লৌকিক অলংকার শানে
সখীবিষয়ে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হয় নি। পূর্বরাগ, মান, প্রবাস, মিলন
সমস্ত ব্যাপারেই মখীর] এই প্রেমলীলাকে পুষ্ট ক'রে উত্তরোত্তর সমুদ্ধতর ক'রে
তোলেন। পপ্রেমলীলাবিহারাণাং সম্যগবিস্তারিকা সখী ।” চরিতামৃতে এই
লীলায় সখীভাবের গুরুত্ব ও সখীর স্থান রায়রামানন্দমুখে নিম্নলিখিতভাবে বিবৃত
হয়েছে__
রাধাকুষ্ণের লীল৷ এই অতিগৃঢ়তর |
দান্ত-বাৎ্সল্যাদি ভাবের না হয় গোচর।
সবে এক সখীগণের ইহা অধিকার ।
শখী হতে হয় এই লীলার বিস্তার ॥
সথী বিহু এই লীলার পুষ্টি নাহি হয়।
সখীলাল। বিস্তারিয়া সখী আস্বাদয় ॥
মধুররসবৈচিত্রী ৩২৭
সখী বিশ্ন এই লীলায় নাহি অন্যের গতি ।
সখীভাবে তারে যেই করে অন্থগতি ॥
রাধাকষ্ণকুগ্ুসেব1 সাধা সেই পায়।
সেই সাধ্য পাইতে আর নাহিক উপায় ॥
সথীর স্বভাব এক অকথ্য কথন।
কষ্ণপহ নিজলীলায় নাহি সখীর মন ||
কষ্সহ রাধিকার লীল। যে করায়।
নিজ কেলি হৈতে তাহে কোটি সুখ পায় ॥
রাধার স্বরূপ কৃষ্ণপ্রেমকল্পলত]1।
সঘীগণ হয় তার পুষ্প পল্পব পাত] ॥
কঞ্চলীলামৃতে যর্দি লতাকে সিঞ্চয় ।
নিজ হৈতে পল্পবাগ্যের কোটি সখ হয় ॥
সখীসমূহ হ'ল শ্রীরাধার কায়ব্যহ । ভেদাভেদ সন্বন্ধে আবদ্ধ। রাধাপ্রেম বধিত
ও পরিপুষ্ট হলেই এ'দেরও সখের চরমতা। প্রণয় কামহীন বিশুদ্ধ বলেই
এরকম হওয়1 সম্ভব । অপিচ-_
যগ্যপি সখীর কৃষ্ণসঙ্গমে নাহি মন।
তথাপি রাধিক। যত্বে করায় সঙ্গম ॥
নান। ছলে কৃষে প্রেরি সঙ্গম করায়।
আত্ম-কৃষ্ণসঙ্গ হৈতে কোটি স্থথ পায় ॥।
অন্যোন্টে বিশুদ্ধ প্রেমে করে রস পুষ্ট ।
তা সবার প্রেম দেখি রুষ্ণ হয় তুষ্ট ॥|
সহজে গোপীর প্রেম নহে প্রাকৃত কাম ।
কাম-ক্রীড়া সাম্যে তার কহি কাম নাম ॥।
সখীদের মধ্যে যুথেশ্বরী, অযুখেশ্বরী এবং যুখহীনা৷ কতিপয়ের কথ পূর্বেই বলা
হুয়েছে। যুখেখরীদের মন্ধ্য অধিক, সম, লঘু এবং তাদের প্রথর, মধ্য, মৃদ্ধ
প্রভৃতি বিভেদের যে পরিচয় পূর্বে দেওয়1 হয়েছে তা এদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য |
এক এক যূথে অবস্থিত গোপীদের মধ্যে অধিক! প্রথর প্রভৃতি ভেদ রয়েছে।
সখীদের মধ্যে ধার প্রেম, সৌভাগ্য এবং বিভিন্ন সদ্গুণ অধিক তিনি অধিক] ।
যুধেশ্বরীমাত্রেই অত্যস্তাধিক। | এ'রা কেউ বা! প্রথরা, কেউ বা মুছু, কেউ সম।
প্রথরা হচ্ছেন সতত গৌরবযুক্তা, গরবিনী। এ'র বাক্য ছূর্লজ্ঘ্য। ইনি কথনে।
৩ই৮ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
কারোর অতিবশংবদা হন না। এদের মধ্যে অধিকপ্রথর। হলেন শ্যামা, মঙ্গলা
প্রভৃতি । অধিকমধ্যা হলেন শ্রীরাধা, পালিক! প্রভৃতি । অধিকা-মছু হলেন
চন্্রাবলী, ভন্রা প্রভৃতি । যুখেশ্বরীদের চেয়ে লঘু ষে সব
সখী ( যেমন ললিতা, বিশাখা, চিত্রা প্রভৃতি ) তার্দের মধ্যে
একের তুলনায় অন্যে অধিক হলে আপেক্ষিক-অধিক! হয় । আপেক্ষিক-অধিকারও
প্রথরা, সম! মুদ্ী বিভেদ আছে। বল! বাহুল্য, এসব বিভেদ পারস্পরিক হুলনার
ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য | রাধিকার যুথে ললিতাদি আপেক্ষিক প্রথরাঁধিকা, বিশাখা দি
অধিকমধ্যা, চিত্রা, ময়ুরিকা গ্রভৃতি অধিকমুদ্ধী। একাত্মতার জন্ প্রণয়ে ধার!
পরস্পর খুব ঘনিষ্ঠ তারা হলেন সম। এদের মধ্যে প্রখরাদি ভেদ থাকলেও
প্রণয়ে তা কতকট৷ সাম্য লাভ করে। কৃষ্ণপ্রেমসৌভাগ্যাদ্ির আধিক্য নেই
এমন ধার।, তারা লঘু। লঘুর1 অত্যান্তাধিকা যুথেশ্বরীদের বিশেষ অন্কৃলভাবে
সব কাজ করেন বপ্তত যাওয়া-আসা, কাউকে সঙ্গে নিয়ে আপা প্রভৃতি
ব্যাপারে এই লঘুরাই বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকেন। লঘুর্দের ছুই ভেদ-_
আত্যন্তিকী এবং আপেক্ষিকী। কুস্থমিকাদি হলেন আত্যস্তিকী। শ্রীরাধার
তুলনায় ললিতাদি হলেন আপেক্ষিক লঘু । ললিত। আপেক্ষিক লঘু হয়েও প্রখর] |
লঘুপ্রথরা সখীরা বামা এবং দক্ষিণা এ ছুই শ্রেণীতে চিহ্নিত হতে পারেন ।
বাম। বলতে মান-বিষয়ে উতৎসাহিনী, মানের শিখিলতায় কোপনা, নায়ক কতৃক
প্রায়শঃ অভেগ্যা এবং নায়কের প্রতি নিষ্ঠুরাকে বোঝায়। যেনাষিকা এর
বিপরীত তিনি মানভঙ্গে স্থুখী, যুক্তিবাদিনী এবং নায়কের প্রতি দক্ষিণা।
লঘুমধ্যা এবং লঘুমুছ সথীদের খ্ভাবও অনুরূপভাবে কল্পনীয়। সখীর্দের ভেদ
এইভাবে বারে রকমের দীড়ায় । অত্যন্তাধিকা» আপেক্ষিক-অধিক, আপেক্ষিক-
সম! এবং আপেক্ষিক-লঘু এর প্রত্যেকের প্রথরা মধ্য! ও মুছুভেদ । ত। ছাড়া
আত্যন্তিক সমা ও লঘু।
এদের দৌত্য বিষয়েও শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। অত্যন্তাধিকার। হলেন
নিত্যনায়িকা, এদের মুখ্যদৃতীভাব নেই, গৌণদূতীত্ব আছে। গৌণদৌত্য
সমক্ষ এবং পরোক্ষ উভয়বিধ। সমক্ষ দৌত্য সাংকেতিক অথবা বাচিক।
সথীছার। সখীর প্রেরণে পরোক্ষ দৌত্য হয়। এর মধ্যে
কৃষ্ণের সঙ্গে মিলিত করাবার জন্য ছলপূর্বক সখীপ্রেরণও
আছে। সাধারণভাবে লেখ্য, উপহার প্রেরণ পরোক্ষ দৌত্যের অন্তততি।
নিত্যনায়িকার ধাঁরা সখী সই আপেক্ষিক-অধিকাদের নায়িকাপ্রায়া বল] হয়।
সথাডেদ
সথীকায
মধুররসবৈচিত্রী ৩২৯
'আপেক্ষিক-সমার্দের কখনে। নায়িকার মত কখনে? সখীর মত হতে হয়।
আপেক্ষিক-লঘুরা সবখীপ্রায়! আর আত্যস্তিক লঘু ধারা, তার! নিত্যসখী।
সর্বলঘু বলে এদের নায়িকাত্ধ অসম্ভব । নিত্যসখীদের নায়িকাত্বে আগ্রহ থাকে
না, কৃষ্ণ ইচ্ছা করলেও তারা মিলনে সম্মত হন না। আপেক্ষিক-অধিকা
প্রভৃতির্দের মধো কেউ কেউ নায়িকা হতে স্বল্প উতস্থক, কেউ কেউ একেবারে
উৎস্থক নন। |
সাধারণভাবে সখীদের কাঁজ হ'ল নায়ক ব1 নায়িকার কাছে তাদের
পারস্পরিক প্রণয়-বিষয়ে প্রশংসা, পরম্পরে আসক্তিবর্ধন, অভিসার সহায়তা,
কষে সখীসমর্পণ, আশ্বাস, পরিহাস, শৃঙ্গারসজ্জাবিধান, পাখা-চামর প্রভৃতির
দ্বার] সেবন, জদয়ভাব-উদ্ধাটন, নায়িকার দৌষক্রটি আচ্ছাদন, নায়িকার পতি
শ্ব্জ প্রভৃতিকে বঞ্চনা, হিত-উপদেশ দান, প্রয়োজনে মানাদি ব্যাপারে উদয়ের
দোষ দেখিয়ে শিক্ষণ, সংবাদপ্রেরণ এবং নায়িকার জীবনরক্ষার গ্রয়াস। এই
সখীবৃন্দের কেউ কেউ নায়ক-নায়িকাতে সমান স্নেহ পোষণ করেন, কেউ বা
নায়িকায় কেউ বা নায়কে অধিক স্ষেহ ব্যক্ত করেন।. এই হিসেবে এদের
সমন্সেহ! অসমন্সেহ। বিভাগও কর যায়।
॥ সেবিকা ব। মঞ্জুরী ॥
রাগান্ুগ ভক্তি-সাধনায় ভক্তদের কাছে মগ্তরী-ভাবের সাধন। নিতাস্ত
প্রাথিত। মঞ্জরীরা সখীবুযুহের অন্তর্গত প্রধান৷ সখীদের অঙ্থগামিনী রাধাকৃষ-
সেবিক1 মাত্র । সঘীর সঙ্গে মঞ্জরীর পার্থক্য এই যে সখীর1 কদাচিৎ কৃষ্ণসঙ্গ-
অভিলাষিণী হন, শ্রীরাধ। চন্দ্রাবলী প্রভৃতি কখনে। স্বেচ্ছায় সখীদের সঙ্গে কৃষ্ণের
মিলন ঘটান এবং কৃষ্ণও তীার্দের অন্তরের ব্যক্ত বা অব্যক্ত অভিলাষ বুঝে
সঙ্গম্খদানে কৃতার্থ করেন। কিন্তু মঞ্জরীদের কুষ্ণসঙ্গাভিলাষ বিন্দুমাত্র থাকে
না এবং কৃষ্ণ সঙ্গ দিতে চাইলেও তারা এ অধিকার গ্রহণ করতে চান না। রাধা-
কুষ্ণের কুঞ্ধসেবা তাদের বেশসজ্জী, গৃহসজ্জা, বাজন, কপূ রতান্ুল প্রদ্ধান, পানীয়
প্রক্ষালনাদির আয়োজন--এসব দায়িত্ব মঞ্জরী স্বেচ্ছায় সানন্দে গ্রহণ করেন।
সেবানন্দে যে পরম পরিতৃপ্তি তাই তাদের কাম্য । শ্রীরূপ তার স্তবমালায় এবং
অন্যত্রও মগ্তরী-ভাব-সাধনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। শ্রীল রঘুনাথদান গোস্বামী এবং
এদের অনুসরণে নরোতমদাস, কৃষ্দাস কবিরাজ প্রমুখ সাধকের! মঞ্জরী-ভাবে
কুগ্তসেবার অধিকার প্রার্থনা করেছেন। এজন্য তার! প্রককতি-ভাব অবলম্বন
৩৩০ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
করেছেন। শুধু সাধনার অঙ্গ হিসেবেই নয় সিদ্ধদেহেও তার সেবানন্দের অধিক
কিছ প্রার্থন৷ করেননি। শ্রীরঘুনাথদাস বলেছেন :
হে ভামিনি কবে পদান্বজ ছুই তব।
জ্লধার দিয় তাহা প্রক্ষালন করিব ॥
গৃহাস্তরে বসাইয়া৷ নিজ বেশ দিঞা।
মার্জন করিব তাহা আনন্দ করিঞা ॥
প্রাতঃকালে কপুরমিশ্রিত স্ুবাসিত।
যত্ব করি আনি জল মৃত্তিক সহিত ॥
এই সব সেব]! দেবি কবে দিবা মোরে ।
সেবা! করি বসাইব পুন নান তরে ॥
অভ্যঙ্গ করিবে আর গন্ধ তৈল পুরি।
উবটন করিবে কবে এ নব কিন্করী ॥
গমন্ধকপূর পুষ্প দিয়া স্থবাসিত বারি ।
কলসী কলসী স্থবাসিত জল ভরি ॥
প্রণয়ে ললিতা সথী আগে আনি দিব।
তব বর-অভিষেক হা কবে করিব || ইত্যাদি *
শ্রীল নরোত্বম ঠাকুরের প্তার্থন৷ হ'ল £
ছাড়িয়। পুরুষদেহ
কবে হাম প্রকৃতি হইব।
টানিয়। বাঞ্ষিব চূড়া
নবগুপ্তা তাছে বেড!
নান! ফুলে গাথি দিব হার ||
গীতবসন অঙ্গে
পরাইব সখীসঙ্গে
বদনে তান্বুল দিব আর ॥
ছুহু' রূপ মনোহারী
দেখিব নয়ন ভরি
নীলাম্বরে রাই সাজাইয়া। ইত্যাদি।
বিখ্যাত বৃদ্দাবনের ছ'জন গোন্বামী মগ্তরী-ভাবের সাধনার জন্য থাপরলীলার:
* ডঃগুকদেব সিংহ কর্তৃক প্ারূপ ও পদ্দাবলী সাহিত্য গ্রস্থে উদ্ধংত।
মধুররসবৈচিত্রী ৩৩১
বিভিন্ন যঞ্জরীরূপে পরিগণিত হয়েছেন, যেমন, শ্রীকূপ হলেন রূপমঞ্জরী, শ্রীসনাতন
লবঙ্গমঞ্জরী, শ্রীজীব বিলাসমগ্জরী, শ্রারঘুনাথদাস রতিমগ্জরী, শ্রীরঘুনাথ ভট্ট
রাগমঞ্জরী, এবং শ্রীগোপালভট্ট গুণমণ্ডরী ।
সখী প্রসঙ্গের উপসংহারে শ্রীরপ যৃথেশ্বরী ও যুথান্ুগতাদের ম্বপক্ষ,
' সুহৃৎপক্ষ, বিপক্ষ এবং তটস্থ পক্ষের বিষয় উত্থাপন করেছেন। গ্রেমলীলারসের
পরিপুষ্টির জন্য সখীর্দের এরকম পক্ষাপক্ষ অবলম্বন বিশেষ প্রয়োজনীয় । শ্রীরাধ!
বা চন্দ্রাবলীর বিপক্ষতা প্রণয়লীলাকে বক্রভাবে রমণীয়ই ক'রে তোলে।
পরিবেশ ও ঘটন। সংস্থান হিসেবে এরকম বক্রতার সংখ্যা অগণিত। ভাবের
সজাতীয়তায় স্বপক্ষতা, স্বল্প* বিজাতীয়তায় স্থুহৎপক্ষতা, সাজাত্যের অন্নত!
তটস্থত। এবং বিজাতীয়তায় বিপক্ষত। নির্ধারণ কর! যায়। ব্বপক্ষ সর্বতোভাবে
আগুকৃল্য করে, স্ুহাৎপক্ষ অভিলধিত ব্যাপার ঘটায় এবং অনভিলফিত ব্যাপারে
বাধ! দেয়, তটস্থ কার্যক্ষেত্রে উ্দাসীন্যের দ্বার বিপক্ষেরই স্থহৃৎপক্ষের কাজ করে
এবং বিপক্ষ ইষ্টনাশ ও অনিষ্টসাধন ক'রে থাকে। শ্রীরূপের প্রদত্ত দৃষ্টান্তে সখী
পদ্মার চতুরতা+, ধুষ্ঠতা, চাঁপল্য প্রভৃতির দ্বারা বিপক্ষভাবে রসের রমাতা বর্ধনের
প্রয়াস দেখা যায়।
॥ বিভাবে উদ্দীপন ॥
আলম্বন বিভাব অর্থাৎ নায়কপক্ষ এবং নায়িকাপক্ষের যাবতীয় বৈচিত্র্য
অথাৎ শ্রীকুষ্ণ, কষ্*সহায়, কৃষ্ণপ্রেয়পীবৃন্দ, সখী, দৃতী প্রভৃতির কথা বল!
হয়েছে। এখন শ্শঙ্গার স্থায়ীভাবের উদ্দীপনকারক যে সব বিষয় বা বস্ত তার
কথা হল! হচ্ছে। রাধাকুঞ্ণ বা! গোঁপীকৃষ্ণ উভয়পক্ষেই ভাবস্থিতির জন্য উদ্দীপন ও.
উভয়পক্ষীয় ব'লে পরিগণিত হবে ।
প্রথমে গুণ। গুণ তিন প্রকারের ; কায়িক, বাচিক, মানসিক । কায়িক
হ'ল বয়স, কূপ, লাবণ্য; সৌন্দর্য, মাধুর্য, স্থকুমারতা প্রভৃতি । বয়স বলতে
কৈশোর- প্রথম কৈশোর, মধ্য কৈশোর, পুর্ণ কৈশোর বা তারুণ্য । প্রথম
কৈশোরের মধ্যে আবার বয়ঃসন্ধির রমণীয়তা। রূপ অর্থাৎ সহজ অঙ্গশোভ] |
লাবণ্য অর্থাৎ মুক্তার মধ্যবত দর্পণের প্রতিভাসবূপ বস্তু।* সৌন্দর্য অর্থাৎ
গঠনের মনোরম সামঞ্রন্ত । অভিরূপতা অর্থাৎ নিজ গুণের দ্বারা নিকটবর্তী
* মুক্তাফলেষু ছায়াশ্তরলঙমিবান্তর!।
প্রতিভাতি যাঙ্গেবু তললাবণ্যমিহো!চাতে ॥
৩৩২ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
অন্যকেও সেরূপ গুণময় ক'রে তোলা । মাধুর্য অর্থাৎ চিত্বকে দ্রব্য করতে পারে
এমন অনির্বচশীয় কান্তি । মার্দব বা স্থৃকুমারতা অর্থাৎ কোমল বস্তর সংস্পর্শ
ও ক্রেশাস্থভবের গুণ।
তার পর নাম। এই উদ্দীপনটি গোঁডীয় বৈষবদের নৃতন গ্রস্থন। তারপর
চারিত্র্য অর্থাৎ চেষ্টা বা কার্য (“অন্ুভাব” শ্রেণীব ) এবং লীলাপরায়ণতা।
লীল। বলতে চিত্তাকর্ষক ক্রীড়া, নৃত্য, বেণুবাদন, গোদোহ, গোবর্ধনধারণ,
রাস প্রভৃতি বোঝায়। অতঃপর মণ্ডন_ বস্ত্র, ভূষা, রত্ব, অন্তলেপন, মাল্যা্দি
ধারণ। এসব বিষয়েও বৈষ্ণব শাশ্বের অভিনবত। লক্ষণীয় ।
অতঃপর “দন্বন্ধী” নায়ক-নায্নিক! সম্পকিত বস্তু । ব্যক্তি ছাড়াই স্বাধীনভাবে
যেগুলি অনুভবের যোগ্য । লগ্রী এবং সন্নিহিত ভেদে সন্বন্ধী ছু'রকমের। লিম্ী”
বলতে বংশীরব, শবঙ্গরব, গীত, অঙ্গ-সৌরভ, ভূষণশব্দ, পদাঙ্ক, বীণাধ্বনি, শিল্প-
কৌশল । এগুলি নায়ক-নায়িকার সঙ্গে অচ্ছেছাভাবে যুক্ত । অচ্ছেছ্য নয় এমন
হল পসন্গিহিত,' যেমন-_ নির্মীল্য, শিখিপুচ্ছ, গুগ্রামালা, শিলাধাতু, গাভীবুন্দ,
বেত্র-লগুভ, বেণু, শুঙ্গ, নায়ক-নায়িকার প্রিয়দের দর্শন, গোধূলি, বৃন্দাবন এবং
বুন্দাবনের আশ্রিত নিসর্গবস্ত-_পশ্ুপক্ষী, ভ্রমর, কুগ্ত, লতা, কদন্ব, কণিকার,
গোবর্ধন, যমুনা, রাঁসস্থল, শরৎ বসন্ত প্রমুখ খতু, চন্দ্র, জ্যোতন্া, তামসী, মেঘ,
বিদ্যুৎ, বাতাস প্রভৃতি
বৈষ্ণব মহাঁজনদ্দের পদসাহিত্যে এসব উদ্দীপনের মনোজ্ঞ বর্ণনা মুুমুন্ু
উপস্থাপিত হয়েছে।
॥ অনুভাব ॥
১. অলংকার-_-যৌবনে নায়িকাদের অর্থাৎ গোপীদের কান্তে (এখানে
কৃষ্ণ) অভিনিবেশ বশত: সত্ব-আক্রান্ত চিত্তের যে সব অদ্ভুত বহিঃপ্রকাশ
তাকেই অলংকার বল! হচ্ছে। অলংকারেব মধ্যে ভ্রনেত্রপ্রীবাভঙ্গি প্রভৃতির
প্রযত্ব থেকে উৎপন্ন তিনটি হ'ল ভাব, হাব, ও হেলা । অ-চেষ্টাকৃত লাতটি
যেমন-_ শোভা, কাস্তি, দীর্চি, মাধুর্ধ, গ্রগল্ভতণ, ওদার্য, ধৈর্য। আর নিতান্ত
ত্বভাঁবজ দশটি__লীলা, বিলাস, বিচ্ছিত্তি, বিভ্রম, ফিলকিঞ্চিত, মোট্রায়িত,
কুট্রমিত, বিব্বোক, ললিত, এবং বিকৃত। মোটামুটি লৌকিক অলংকার শাস্বের
অনুসরণে এসব বিস্তারিত । এগুলি যথাত্রমে ব্যাখ্যাত হচ্ছে ।
ভাৰ-_নিবিকারাত্মকে চিত্তে ভাবঃ প্রথমবিক্রিয়া'। নিবিকার চিত্তের
মধুররসবৈচিত্রী ৩৩৩
প্রাথমিক যে বিকার, এখানে শৃঙ্গারাত্মক উজ্জল মধুরের যে আন্দোলন, তাই
হ'ল ভাব। চিত্তের অবিকৃতি হ'ল ধীরত্ব বাসত্ব। অভিযোগ কারণে সেই
সত্বের প্রথম বিকারই হচ্ছে ভাব, যেমন অঙ্কুরোদ্গমের পূর্বে বীজের প্রথম বিদীর্ণ
হওয়া । এই ভাব আর রতির ভাব (679001097) এক বস্ত নয়, এ হচ্ছে
বহিংপ্রকাশরূপ, যেমন__
পৌগণ্ড বয়স শেষ গৌরাজন্ুম্দর ।
তুরুর নাচনি করে কিবা সে অন্তর ॥
লাজে অবনত মুখ আর আখি ছুটি।
বুঝিতে নারিম্থ এই ভাব পরিপাটি ॥
বামনয়নে পুন কটাক্ষ করয়।
মধুর মধুর শ্মিত করে বুঝিল না হয় ॥..*. -_রাধামোহন |.
অথবা,
কদম্বের বন হৈতে কিবা শব্দ আচন্থিতে
আসিয়া পশিল মোর কানে ।
অম্বৃত নিছিয়! ফেলি কি মাধুর্য পদাবলী
কি জানি কেমন করে প্রাণে |**
রাই কহে কেবা হেন মুরলী বাজায় যেন
বিষামূতে একত্র করিয়]।
জল নহে হিমে জন্ত কাপাইছে সব তন্থ
প্রতি অণু শীতল করিয়। ॥ *. _ দ্বিজ চণ্তীদাঁস।
অথবা।, কালি দমন দিন মাহ।
কালিন্দীকুল কদম্বক ছাহ ॥
কত শত ব্রজ-নববাল।।
পেখলু' জন্থ থির বিজুবিক মালা ॥
তোহে কহে স্থবল সাঙাতি।
তব ধরি হাম না জানি দিনরাতি ॥
তহি' ধনিমণি ছুই চারি।
তহি পুন মনোমোহিনী এক নারী ॥
সে রহ মঝু মন পৈঠি।
মনসিজ-ধুমে. ঘুয-নাহি দীঠি.... -_গোবিন্দদাস।
ত৩৪8
বৈষব-রস-গ্রকাশ
হাব-_ভাব থেকে অধিকতর প্রকাশময় চেষ্টাসমূহ হ'ল হাব। যেমন,
গ্রীবার বক্রতা, ভ্রনেত্রার্দির বিকাশ গ্রভৃতি। “ভাবে'র প্রথম দৃষ্টান্তে
শ্রীগৌরাঙ্গের বিক্রিয়া চিত্রে ভাব ও হাব একত্রিত হয়েছে। শ্রীমতীর “হাব,
যথা বয়ঃসন্ধিতে £
খেনে খেনে নয়ন কোণ অন্সরই |
খেনে খেনে বদন ধূলি তনু ভরই |
খেনে খেনে দশন ছটাছট হাস।
খেনে খেনে অধর আগে করু বাস ॥
চৌঙকি চলয়ে খেনে খেনে চলু মন্দ।
মনমথ-পাঠ পহিল অন্তবন্ধ ॥ ইত্যাদি।
ছেল হাব থেকে আরও স্পষ্ট নিশ্চিত শূঙ্গারস্ছচক বিক্রিয়াসমূহের প্রকাশ
ঘটলে তাকে হেল। বলে। যেমন
নহাই উঠল তীরে রাই কমলমুখী
সমুখে হেরল বরকান।
গুরুজন সঞ্ে লাজে ধনী নতমুখী
কৈমনে হেরধ বয়ান ॥
সথী হে অপরুব চাতুরী গোরী।
সব জন তেজি আগুসবি সঞ্চরি
আড় বদন তঁহি ফেরি ॥
তহি পুন মোতি হার টুটি ফেকল
কহত হার টুটি গেল।
সব জন এক এক চুনি সঞ্চর
শ্যাম দূরশ ধনী লেল |". -_বিদ্যাপতি।
শোভা-_তারুণা, বূপ, সৌন্দর্যাসাক্ত প্রভৃতি নিয়ে যে প্রকাশ, যেমন
- ক্কমুখে
অলখিতে হামে হেরি বিহসলি থোরি।
জন রজনী ভেল চাদ উজোরি ॥
কুটিল কটাখ ছট] পড়ি গেল।
মধুকর-ডন্বর অন্বরে ভেল ॥
ৰধূররসবৈচিত্রী ৩৩৫
কাহ রমণী উহ কে উহ জান।
আকুল করি গেও হামারি পরাণ ॥
লীলা-কমলে ভ্রমর] কিএ বারি।
চমকি চলিল ধনি চকিত নেহারি ॥
তেঁ ভেল বেকত পয়োধর শোভ]।
কনক-কমল হেরি কাহে না! লোভা ॥
আধ লুকায়লি আধ উদ্দাস।
কুচ-কুস্ত কহি গেও আপন আশ ॥-*"
| _বিছ্যাপতি।
কান্তি--শোভাকেই কাস্তি বলে--ঘদি সেই শোভা শূঙ্গার-পুষ্টিকারক হয়,
'যেমন-_
( এ ধনি) আচরে ব্দন ঝাপাউ।
লুবধল মধুপ চকোর বিধুস্তদ
অনত অনত চলি যাউ ॥
মুখমণ্ডল কিয়ে শরদ সরোরুহ
ভালহি অটমীক চন্দ।
মধুরিপু মরমে ভরম ধাহ। এছন
তাহে কি গণিয়ে মতিমন্দ ॥
জনি কহ গরবে পাণিতলে বারব
ও থলকমল উজোর।
তঁহি নখ-্ঠাদ- ভরম ভরে এছন
ততহি পড়ত জনি ভোর ॥
ভাঙ, ধঙ্ুয়া কিয়ে স্থতন্ু ধুনায়সি
যছু খরে গিরিধর কাপ।
সে৷ কিয়ে অতন্ু- পতগ শিরে ডারসি
গোবিন্দদাস হিয়ে তাপ ॥
দ্বীপ্তি- বয়স, দেশ, কাল, গুণে কাস্তিরই বিস্তারিত পরিস্ফুট প্রকাশ হ'ল
দীপ্তি, যেমন--
কাজর-রুচিহর রয়নী বিশাল! ।
তছু পর অভিসার করু ব্রজবাল। ॥ .
৬৩৩৩
বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
ঘর সঞ নিকসয়ে জইসন চোর ।
নিশবদ পদ্দগতি চললিহু থোর ॥
উনমত চিত অতি আরতি বিখার।
গরু নিতম্ব নব যৌবনভার |
কমলিনী মাঝ খিনি উচ কুচ জোর ।
ধাধসে চলু কত ভাবে বিভোর ॥*** --কবিশেখর।
মাধুর্য নায়ক-নায়িকার চেষ্টা ব1 কার্ষগুলির সকল অবস্থাতেই মনোজ্ঞতা
উদ্ধত অংশে রাধাকৃষ্ণের মিলিতাবস্থায় নিতান্ত মাধুর্য ব্যক্ত হয়েছে £
অপিচ,
নিধুবনে গ্তাম বিনোদিনী ভোর ।
দুহু ক রূপের নাহিক উপমা
প্রেমের নাহিক ওর ॥
হিরণ কিরণ আধ বরণ
আধ নীলমণি-জ্যে।তি।
আধ উরে বন- মাল। বিরাজিত
আধ গলে গজমোতি ॥
আধ শ্রবণে মকর কুগ্তল
আধ রতন-ছবি।
আধ কপালে চান্দের উদয়
আধ কপালে রবি ॥
আধ শিরে শোভ। ময়ূর শিখণ্ড
আধ শিরে দোলে বেণী !
কনক-কমল করে ঝলমল
ফণি উগারয়ে মণি ॥
মন্দ পবন মলয় শীতল
কুস্তল উড়য়ে বায়।
রসের পাখারে না জানে সাঁতারে:
ডুবল শেখর রায় ॥
ধাহ। ধাহা। নিকসয়ে তম্থ তন্গু-জ্যোতি ।
তাহা তাহ! বিজুরী-চমক-মতি-হোতি ॥
মধুররসবৈচিত্রী ৩৩৭
ধাহ। ধাহা অরুণ চরণ চল চলই।
তাহা তাহা থলকমলক দল খলই ॥ ইত্যাদি।
প্রগল্ভতা-_সম্তোগশূঙ্গারে নায়ক-নায়িকার পরস্পর আহুকৃল্যে লজ্জা
ত্যাগ করা। যেমন-_
কি কহব রে সখি আজ্বক বিচার।
সো স্বপুরুখ মোহে কল্পল শিঙার ॥
হসি হুসি বন আলিঙ্গন দেল।
মনমথ অস্থুর কুন্থমিত ভেল॥
আচর পরশি পয়োধর হেরু।
জনম পঙ্গু জনি ভেটল স্থমেরু ॥
যব নীবিবন্ধ খসাওল কান।
তোহর শপথ হম কিছু যদি জান |". _কবিশেখর |
উদ্ধার্ধ _সংযমময় উর্দারতা, যেমন-__
বহুদিন পরে বধুয়া1! এলে ।
দেখা না হইত পরান গেলে ॥
এতেক সহিল' অবল। বলে।
ফাটিয়া যাইত পাষাণ হলে ॥
ছুখিনীর দিন ছুথেতে গেল।
মথুর। নগরে ছিলে ত ভাল ॥
এ সব ছুঃংখ কিছু না গণি।
তোমার কুশলে কুশল মানি ॥"" - চত্ীরদাস ?
ধৈর্য--চিতবৃত্তির নিঃশেষ স্থিরতা, যেমন, মহাপ্রভু-কথিত শ্লোক :
আঙ্মিত্ত ব। পাদরতাং পিন মাম্
অদর্শনাৎ মর্মহতাঁং করোতু বা ।
যথা তথ! বা বিদধাতু লম্পট:
ম্প্রাণনাথস্ত স এব নাপরঃ ॥
জীল।__রম্যবেশ এবং কার্ধের হার! প্রিয়ের অন্থকরণ, যেমন শ্রীমন্মহা প্রতু £
কুষ্ণাবেশে চঞ্চল হইয় বিশ্বস্তর |
নাঁচয়ে বিহবল হঞা, নাহি পরাঁপর 1**
২২
অপিচ শ্রীরাধা,
বৈষ্বস্রস-প্রকাশ
ক্ষণে ক্ষণে হয় ভাব ভ্রিভঙ্গ-হুম্দর |
প্রহরেক সেইমত আছে নিরস্তর ॥
ক্ষণে ধ্যান করে করে মুরলীর ছন্দ।
সাক্ষাৎ দেখিয়ে যেন বুন্দাবনচন্দ্র ॥%*
আপনা ন1 জানে প্রতু রুক্সিণী-আবেশে।
।বদদর্ভের স্থত হেন আপনারে বাসে ॥
নয়নের জলে পত্র লিখয়ে আপনে ।
পৃথিবী হইল পত্র, অ্কুলি কলমে ॥
রুক্সিণীর পত্র সপ্তক্পোক ভাগবতে।
যে আছে, পডয়ে তাহ। কান্দিতে কান্দিতে ॥ **
বিরহে ব্যাকুল ধনি কিছুই ন৷ জানে ।
আন আন বরণ হইল দিনে দিনে ॥**
আধ আধ বচন কহিছে কার সনে।
পুন পুন পুছয়ে সবহু তরুগণে ॥
ত্রিভঙ্গ হইয়] খেনে বাজায় মুরলী |
দেখিয়। কান্দয়ে সী করিয়া বিকলি॥
শ্রীমভাগবতের বর্ণনা অনুসারে কুষ্ণবিরহে গোপিকার কৃষ্ণের গোবর্ধন ধারণ
প্রস্তুতি কার্ষের অন্গকরণ করেছিলেন ।
ৰিলাস- প্রিয়মিলনে মুখ, নেত্র প্রভৃতির এবং গমন, আসন-পরিগ্রহ
প্রভৃতির যে দব বৈশিষ্ট্য দেখা দেয় ত। হ'ল বিলাস, যেমন-_
ছলে দরশায়ল উরজক ওর।
আপনি নেহারি হেরল মোহে জোর ॥
বিহসি দশন আধ দরশন দেল।
তুজে ভূজ বাদ্ধি অলপ চলি গেল ॥
কি কহুব রে সখি নারী স্থজান।
হরখে বরখে কত মনমথ বাণ ॥
হরি কত দূরসে পালটি নেহারি।
তোঁড়ল কানড় কুস্থম উতারি ॥
মধুররসবৈচিত্রী ৩৩৯
বসনক ওর ঝাঁপল তব গোরী।
লীলাকমলে মুখ রোপলি থোরি
বৈদগধি বিবিধ পসারল যেহ।
কোন মুগধ তাহে ধরু নিজ দেহ ॥**" _জ্ঞানদাল।
বিচ্ছিত্তি-_ভৃষণ-পরিধান-জনিত শোভাবিশেষ, যেমন--
চুড়াটি বাধিয়1 উচ্চ কে দিল ময়ুরপুচ্ছ
ভালে সে রমণীমনোলোভ।
অথবা,
রাজিত চিকুর * উপরে নবমালতী
অলিকুল অলকার পাশে ।
মলয়জ মাঝে সাজে মুছু মুগমদ
তরুণীনয়নবিলাসে ॥
( সজনি ) কি পেখলু শ্যামর চান্দে।
তরণিতনয়াতীরে তরু অবলম্বন
তরুণ ভ্রিভঙ্গিম ছান্দে ॥
ও মুখমণ্ডলে ও মণিকুগ্ডল
গণ্ড উজোর ভেল কিরণে।
ইন্দ্রনীলম পি মুকুর উপরে জঙ্থ
করু অবলম্বন অরুণে ॥
তরুণ-তারাবলী অনিবাঁর ঝলমলি
উরে গজমোতিম হারে।
জানদাস কহ পীতধটি অঞ্চল
বিজুরি ঘন আদ্দিয়ারে |
অথবা,
* একে তনু গোরা কনক কটোর।
অতন্থ কাচল) উপাম।
হারে হরল মন জন বুঝি এছন
ফাল পসারল কাম ॥""* --বিছ্যাপতি |
প্রিয়ের মনোহরণের জন্য নায়িকা এরকম ন্বল্পমণ্ডন পরিগ্রহ করেন (যেমন
খোঁপায় ফুল অথব? কর্ণে মঞ্জরী অথবা যুগোচিত অন্য কিছু ), আবার ঈর্ষা মানে
৩৪৩ বৈষ্ণব-্রস-গ্রকাশ
দগ্ধ হয়ে চিত্তের অবৈকল্য দেখানোর জন্যেও বিচ্ছিত্তি-বিশেষ পরিগ্রহ করতে
পারেন।
বিভ্রম-_আভরণসমূহের স্থান-বিপর্যয়। এরকম ঘটতে পারে প্রিয়সমাগমের
উৎকগায় আত্মবিম্ৃত হ'লে, যেমন, অভিসারকালে £
রাই সাজে বাঁশি বাজে পড়ি গেও উল।
কি করিতে কিবা করে সব হৈল ভূল ॥
মুকুরে আচড়ি রাই বান্ধে কেশভার |
পায়ে বাদ্ধে ফুলের মাল না করে বিচার ॥
করেত নৃপুর পরে জজ্যে পরে তাড়।
গলাতে কিস্কিনী পরে কটিতটে হার ॥
চরণে কাজর পরে নয়নে আলতা ।
হিয়ার উপরে পরে বঙ্বরাজ-পাতা।
শ্রবণে করয়ে রাই বেশর সাজন1।
নাসার উপরে কবে বেণীব রচন] ॥
বংশীবদনে কহে যাও বলিহারি।
শ্যাম-অন্ুরাগের বালাই লৈয় মরি ॥
কিলকিঞ্চিত__প্রবল হর্ষবশতঃ যখন একই সঙে গর্ব, অভিলাষ, রুদিত,
স্মিত, অস্থ্য়া, ভয় এবং ক্রোধ এই সাতটি সঞ্চারীর একত্র আবির্ভাব হয়
তখনকাব প্রকাশবপ হল কিলকিঞ্চিত ।
অবনত আনন কএ হম রহলীহু
বারল লোচন-চোর।
পিয়। মুখরুচি পিবয়ে ধাঁবল
জনি সে চাদ চকোঁর॥
ততনু সঞ্জে হঠে হটি মোএ আনল
ধএল চরণএ রাখি।
মধুকর মাতল উড়অ ন পারএ
তৈেঅও পসারয়ে পাখি ॥
মাধব বোলল মধুর বাণী
ক] শুনি মুছু মোএ কান।
মধুররসবৈচিত্রী ৩৪১
তাহি অবসর ঠাম বাম ভেল
ধরি ধনু পাচবাণ ॥
তন্ন পসেবে পসাহনি ভাসলি
পুলক তৈসন জাগু।
চুনি চুনি ভএ কাচুঅ ফাটলি
বাহু বলয় ভাগু ॥
ভণ বিদ্যাপতি কম্পিত কর হে।
বোলল (বোল নযায়।
রাজা শিবসিংহ বূপনারায়ণ
সাম সুন্দর কায়॥
মোট্রাস্মিত__প্রিয়ের স্মরণে অথবা সংবাদে হৃদয় তন্ভাবে ভাঁবিত হলে
অভিলাষের বহিঃপ্রকাশ হ”ল মোট্রায়িত, যেমন-__
চৌদ্িকে চকিত নয়নে ঘন হেরসি ,
ঝাঁপসি ঝাঁপল অঙ্গ ।
বচনক ভাতি বুঝই নাহি পারিয়ে
কাহ! শিখলী ইহ রঙ্গ ॥
(স্ন্দরি) ।ক ফল পরিজনে বীাচি।
শ্যাম স্থনাগর গুপত প্রেমধন
জানলু হির-মাহ1 সাচি ॥
এ তুয়! হাস মরম পরকাশই
প্রতি অঙ্গ-ভঙ্গিম সাথী ।
গীঠিক হেম বদন মাহ! ঝলকই
এতদিনে পেখল আখি ॥
গহন মনোরথে পন্থ না হেরসি
জীতলী মনমথ রাজ।
গোবিন্দদাঁস কহই ধনি বিরমহ
মৌনহি সমুঝলু' কাজ ।
খমথবা, যেমন ভাবোলাসে £
কুদদিন সুদিন ভেল।
মাধব মন্দিরে তুরিতে আওব
কপাল কহিয়! গেল 1**
৪২ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
(আমার) চিকুর ফুরিছে বসন উড়িছে
পুলক যৌবন ভার ।
বাম অঙ্গ আখি সঘনে নাচিছে
ছুলিছে হিয়ার হার ॥ ইত্যাদি!
কুট্টমিত--প্রিয় কর্তৃক স্তনাধরাদিগ্রহণে বাহকোপপ্রকাশ।
লোতে আসি কষ্ণ করে কঞ্চকাকর্ষণ।
অন্তরে উল্লাস রাধা কবে নিবারণ ॥
বাহিরে বামত। ক্রোধ ভিতবে স্ব মন।
কুট্রমিত নাম এই ভাব বিভূষণ ॥ -_চৈতন্তচরিতামূত।
যেমন, একে অবল] অওকে সহজক ছোটি।
কর ধরইত করুণা কর কোটি ॥
আকম নামে রহএ হিঅ হারি।
জন্ু করিবরতল খসল পঅনারী ॥
নয়ন নীর ভরি নহি নহি বোল।
হরি ভরে হরিণ জইসে জীব ভোল ॥
কৌশলে কুচকোরক করে লেল।
মুখ দেখি তিরিবধ সংসএ ভেল ॥ _বিদ্যাপতি।
অথবা,
কুচ করপরশনে চমকি উঠয়ে ধনি
লোচনে জল ভরিপুর |
দশনক ঘাতে অধর বিখগুন
নীবি-বন্ধন করু দুর |
কোরহি জোরি . উবরি পুন স্থন্দরী
চললি তেজি বর নাহ।
সহচরি ধাই বাহু ধরি আনল
দুর্লভ রস-নিরবাহ ॥
বিবে্বোক-_-অভিলফিত কান্তকে গর্বমান সহকারে অনার প্রদর্শন !
গর্বমুখে, যেমন-_
বড়ার বহুআরী আন্দে বড়াঁর কী ।'
মোর রূপ যৌবনে তোম্গাত কী॥
মধুররসবৈচিত্রী ৩৪৩
দেখিল পাকিল বেল গাছের উপরে ।
আরতিল কাক তাক ভরিতে না পারে ॥..-শ্রীরৃষ্ণকীর্তন।
গর্যমিশ্র মানমুখে, যথা
ধিক রহু মাধব তোহোরি সোহাগ ।
ধিক রহু যে। ধনি তোহে অনুরাগ ॥
চলহ কপট শঠ না কব বেয়াঞ্।
কৈতব বচনে অব কিয়ে কাজ ॥
সহজই অনলে দগধ ভেল অঙ্গ ।
কাহে দেহ আহুতি-বচন-িভঙ্গ ||
সে৷ ধনি কামিনী গুণবতী নারী ।
হাম নিরগুণ রতিরভসে গোআরী ।
সোই পুরব তু হিয় অভিলাষ
বঞ্চলি ইহ নিশি যো ধনি পাস ॥
পুন পুন কাহে ধরসি মঝু পায়।
তু ব্ছ-বল্লভ তোঁহে না জুয়ায় ॥*".
-_বলরামদাল ।
জলিত-_ভ্রবিলাসাদি স্থরুমার অঙ্গভঙ্গি মাধুর্য :
কৃষ্ণ আগে রাধ। যদ্দি রহে দাণ্ডাইয়| |
তিন অঙ্গভঙ্গে রহে ভ্রু নাচাইয়]।।
মুখে নেত্রে করে নান] ভাবের উদ্গার |
এই কান্তাভাবের নাম ললিতালংকার ॥ __চৈতন্তচরিতামৃত।
ঘেমন,
গেলী কামিনী গজ গামিনী
বিহসি পাঁলটি নেহারি।
ইন্দ্রজালক কুহ্থমসায়ক
কুহুকী ভেলী বরনারী ।
জোরি ভূজযুগ মোরি বেটল
| ততহ বয়ান স্ুছন্দ।
দাম চম্পকে কাম পূজল
যৈছে শারদ চন্দ ॥:*. _বিগ্ভাপতি ।
৩৪৪
বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
বিরৃত- লজ্জা, মান, ঈর্ষ। গ্রভৃতির জন্য নায়িক। মনের কপাট খুলছেন না,
অথচ তার চেষ্টা অর্থাৎ কার্ষের জন্য ত] ব্যঞ্িত হচ্ছে এমন অবস্থায় “বিকৃত" হয়,
যেমন, লজ্জাহেতু ঃ
অথবা,
অবনত-বয়নী ন1 কহে কিছু বাণী।
পরশিতে বিহসি ঠেলই পছা'-পাণি ॥
স্থচতুর নাহ করয়ে অন্রোধ।
অভিনব নায়রি না মানয়ে বোধ ।।
পিরিতি বচন পুন কহল বিশেষ ।
রাইক হৃদয়ে দেখয়ে লবলেশ ॥
পহিরণ বসন ধরল যব হাতে।
তব ধনী দ্রীব দেই নিজ মাথে ॥
রস-প্রসঙ্গে কয়ল কত রঙ্গ ।
নিজ পরথাব নামে দেই ভঙ্গ ॥
নাহক আদর অধিক বাঢ়ায়।
জ্ঞান্দাগ কহ এহ না জুড়ায় |
শুন শুন মানিনী না কহব তোয়।
অন্থচিত মানে গোঙায়বি রোয় ||
তব নাহি শুনলি সহচরী বোল।
ফেরি রহলি মুখ ঝাঁপি নিচোল ॥
রোই রোই মাধব সাধল তোয়।
কাহে কাতর 'দিঠে চাহসি মোয় ||. -ঘনশ্বাম |
রাই যব হেরল হরি মুখ ওর।
তৈখনে ছল ছল লোচন জোর ॥
যব পু কহলহি লহু লু বাত।
তবন্থ' কয়ল ধনি অবনত মাথ ॥
যব হরি ধয়ল হি অঞ্চল পাশ।
তৈখনে ঢর চর তন্গ পরকাশ ॥
যব পছ' পরশল কঞ্চুক সঙ্গ।
তৈখনে পুলকে পূরল সব অঙ্গ |... -_-কবিশেখর।
মধুররসবৈচিত্রী ৩৪৫
মৌধ্য-ষে বস্ত নায়িকার (বা নায়কেরও) জানা, মিলন বিলাস মুগ্ধাবস্থায়
ত। পুনরায় জানতে চাঁওয়। ঃ
কি পুছসি রে সখি কানুক নেহ।
এক জিউ বিহি সে গড়ল ভিন দেহ |
কহিল ষে কাহিনী পুছে কত বেরি।
না জানি কি পায়ই মঝু মুখ হেরি ॥"". -কবিরঞ্জন।
চকিত- প্রিয়-সমীপে লীলায় ভীতি প্রকাশ (প্রকৃত ভয়ের বন্ত ন)
খাকলেও ) £ হ
গোসাঞ্ি সৌঁঅরি কাহ্াঞ্জি ঝাট বাহ নাএ।
মাঝ যমুনাত বহে বড় খর বাএ ॥
যমুনার জলে টলবল করে নাএ।
চমকী চমকী উঠি মোর প্রাণ জাএ ||
ষোল শত গোপী যোর রহি চাহে বাটে।
মোহোর করমে নাঁএ ভাগিল পাটে
একবার রাখ কাহ্াঞ্চি আদ্ষার জীবন ॥
গাইল বড়ু চণ্ডীদদাস বাসলীগণ ॥
এখানে ব্যঞ্জনাচ্ছলে কৃষ্সহ মিলনই প্রার্থনা করা হচ্ছে।
(পুনশ্চ অনুভাব-শ্রেণীভেদে )
২. উদ্ভাম্বর- কৃষ্-গোপিকাদের অথব। ভাবাক্রান্ত ভক্তর্দেহে যেগুলি
বিশেষভাবে প্রকাশিত হয়। এগুলি হ'ল নীবী-ন্রংশ, উত্তরীয়-স্থলন, কববী-
বন্ধের বিগলন, গাত্রমোটন ( অঙ্গমোড়া ), জংস্তণ (হাইতোলা ), স্বাণ-আ গ্রহে
নাসাক্ফুরণ, বিলুন, গীত, চীৎকার, লোক-নিরপেক্ষা (ওঁদাসীন্য ) প্রভৃতি !
এই উদ্ভাম্বরগুলি পৃরোক্ত মোট্টায়িত এবং বিলাসের সঙ্গেও সংগত ।
৩. বাচিক- আলাপ (প্রিয়ের চিত্তাকর্ষক উক্তি), বিলাপ, সংলাপ
( উক্রি-প্রত্যুক্তি ), প্রলাপ (বিলাপে নিরর্৫থক .শব্বপ্রয়োগ ), অনুলাপ ( একই
কথা বারংবার বলা ), অপলাপ (অন্যের কথাকে অন্তপ্রকারে যোজনা ), সন্দেশ
(বার্তা প্রেরণ) অতিদ্দেশ (একের কথাকে অন্যমুখে পরিন্ফুটন ), অপদেশ
(বক্তব্য বিষয়কে অন্য বিষয়ের দ্বারা ব্যঞ্ুনাচ্ছলে প্রকাশ ) উপদেশ এবং
৩৪৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
নির্দেশ (কিছু স্থির পূর্বক ভাষণ ), ব্যপদেশ ( অন্য কথার ছলে নিজ অভিলাষ
জ্ঞাপন )।
এই উদ্ভাম্বর এবং বাচিক অন্ুভাবগুলির সৌন্দর্য পদরচনার যত্রতত্র ছড়িয়ে
রয়েছে ব'লে এগুলির দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করা হ*ল না।
॥ ( অনুস্ভাৰের অন্তর্গত) সাত্বিক ভাৰ ॥
“ভাব* শকটির পরিচিত পুরাতন অর্থ (০700607 ) রক্ষা ক'রেও শ্রীরূপ এর
উপর আরও বিভিন্ন বাচকতা আরোপ করেছেন । যেমন “ভাব” বলতে বিশেষ-
ভাবে শুঙ্গাররতি বা প্রেম, “ভাব* প্রেমের পরিণত অবস্থা_-যার মহৎ-বিশেষণ-
ফোগে হয় 'মহাভাব"। আবার শুঙ্গাররতির প্রাথমিক প্রকাশচিহ্ন যেমন
পূর্বোল্লিখিত ভাব, হাব ও হেলা । এই অর্থ অবশ্ঠ অলংকারশাস্ে শ্রীরূপের পূর্বেই
আরোপিত। এখানে আবার বিশিষ্ট কয়েকটি অন্নভাবই “ভাব নামে চিহিত
হয়েছে । গোম্বামীপাদের অভিপ্রায় বোধ হয় এই যে, এই বিশিষ্ট অন্থভাবগুলি
(স্তত্ত, স্থেদ, রোমাঞ্চ প্রভৃতি ) একমাত্র মৃখ্য ভক্তিরসেরই অশ্তগামী। এ মুখ্য-
ভক্তিরসের অন্তর্গত ন! হ'লে গৌণরসে স্বতন্তরভাবে যেহেতু এগুলির অস্তিত্
থাকতে পারে ন', সেইহেতু শ্বতঙ্থ নামকরণ অপরিহার্য । তা ছাড়া রাগাশ্রিত
ভক্তচিত্তের নিতাসন্বন্ধী বলেও পরিণত-প্রেম “ভাখ এর সঙ্গে সংগতি ও
সামগ্রন্ত রক্ষার জন্তেও “ভাব” শব্দ প্রযুক্ত হয়েছে এমন মনে করা যায়। “সান্বিক"
বিশেষণটিই একে সাধারণ ভাব এবং অন্গুভাব থেকে পৃথক কবেছে।_ বলা
বাহুলা, মহাপ্রভুর মধ্যে এই সব অন্থভাবের প্রকাশ দেখে ভক্তিশান্ত্রে এগুলির
গুরুত্ব অন্থভৃত হয়েছে, এবং একথাও গঠ্িকষে পূর্বতন আলংকারিকেরা
লৌকিকেই এইসব সাত্বিক অবস্থার স্বীকৃতি দিয়ে গছেন।
সাত্বিক ভাবের সংখ্য] হল আট ঃস্তভত, ন্বেদ, রোমাঞ্চ, স্বরভঙগ, বেপথু,
বৈবর্ণ, অশ্রু এবং গ্রলয় |
স্তস্ভ- দেহাদির নিশ্চল অবস্থা । ভক্তিসংগত হর্ষে, বিষাদে, ভয়ে, অক্ষমায়,
বিন্ময়ে এই স্তস্তাবস্থা ; রাঁধারুষ্ণে এবং তদন্নুসারে ভক্তেও।
স্বেদ__ঘর্ম ১ হর্ষে ভয়ে ক্রোধে।
রোমাঞ্চ _আশ্চর্যদর্শনে, হর্ষে, ভয়ে ।
স্বরভঙ্গা- অস্পষ্ট জড়িত গদ্গদদ ভাষণ.; বিষাদে বিস্ময়ে, অক্ষমায়, হর্ষে,
ভয়ে।
মধুরসবৈচিত্রী ৩৪৭
বেপখু- দেহের কম্পন 9 ত্রাসে, হর্ষে, অক্ষমায় বা ক্রোধে ।
বৈবর্ণ্য-_দেহের বর্ণের বিকৃতি ; বিষাদে, ক্রোধে; ভয়ে।
জশ্রঃ- হর্ষে ( মুখের প্রফুল্লতা ও রোমাঞ্চ সহ ), রোষে ( ওষ্্ফুরণ, কাণাক্ষ-
জাকুটি সহ ), বিষাদে ।
প্রলয়-_যৃছণ, নিষ্পন্দতা ; স্থথে ( যেমন শূঙ্গারান্ত লৌখ্যাবস্থায়) শোক
হঃখে।
উল্লিখিত সাত্বিক ভাবগুলি ঈষৎ ব্যক্ত হ'লে অথব। এগুলির ছুটি বা একটি
ব্যক্ত হ'লে বল। যাঁবে ধ্মায়িত”। ছুতিনটি একত্র প্রকাশিত হ'লে এবং
সেগুলি চাপা! দেওয়! আয়াসসাধ্য হলে বলা যাবে “জলিত, । আর চার পাঁচটি
একত্র ক্ষুরিত হওয়ায় সেগুলির নিবারণ অসাধ্য হ'লে হবে “দীপ্ত, । এরকম পাচ
থেকে আটটির আবির্ভাব ঘটলে উদ্দীপ্ত । আর এরই চরমাবস্থা হচ্ছে স্দ্দীপ্ত।
এ সব বিষয় পূর্বেই বিবৃত হয়েছে । এবং মহাপ্রভুর ভাবাবস্থা থেকে দৃষ্টাস্তও
সমাহত হয়েছে। বর্তমানে পদাবলীতে চিত্রিত সাত্বিকক্ফুরণের কয়েকটি দৃষ্টাস্ত
গ্রথিত হ'ল। ৃ
১. আরে মোর গোর। ছ্বিজমণি।
রাধ! রাঁধ। বাল কান্দে লোটায় ধরণী ॥
রাধা নাম জপে গোর] প্রম যতনে ।
স্থরধুনী ধার। বহে অরুণ নয়ানে |
খেনে থেনে গোরা-অঙ্গ ভূমে গভি যায়।
রাধা নাম বলি খেনে খেনে মুরুছায় |
পুলকে পুরল তনু গদগদ বোল ।
বাস্থ কহে গোর) কেন এত উতরোল ॥
এখানে কৃষ্ণ-ভাবাধুত গৌরাজের অশ্রু, মৃছণ, পুলক ও শ্বর'ভের বর্ণন।।
্ নীরদ নয়নে নীর ঘর সিঞ্চনে
পুলক-মুকুল-অবলন্ব।
শ্বেদ্-মরন্দ বিন্দু বিন্দু চুয়ত
বিকলিত ভাব-কদ্থ ॥
এখানে অশ্রু, পুলক এবং স্বেদ।
৩. সহজে নুনিক পুতলী গোরী।
জারল বিরহ আনলে তোরি ॥
বটি 6৮
বৈষ্ণব-রস-গ্রকাশ
বরণ কাঞ্চন এ দশবাণ।
শ্যামরি সোঙরি তোহাঁরি নাম ॥
শুনহ মাধব কহলু তোয়।
সমতি না দেই সতত রোয় ॥
অরুণ অধর বান্ধুলি ফুল।
পার ভৈ গেল ধুতুর তুল ॥* *
এখানে শ্রীমতীর বৈবর্্য এবং অশ্রু।
ন। বান্ধে চিকুর ন৷ পরে চীর।
-না খায়ে আহার ন। পিয়ে নীর ॥
সোনার বরণ হুইল শ্যাম |
সোঙরি সোঙরি তোহারি নাম ॥
ন। চিহ্ছে মানুষ নিমিখ নাই ।
কাঠের পৃতলী রৈয়াছে চাই ॥
তুল! খানি দিলু নাসিক মাঝে।
তবে সে বুঝিলু শোয়াস আছে ॥
এখানে শ্রীমতীর বৈবর্ণ, স্তস্ত এবং প্রলয় সাত্বিক পরিস্ফুট।
৫,
এখানে মুপ্ধা নায়িকার প্রথম মিলনে ভীতিবখতঃ কম্পন, নিষাদে অশ্র।
পরশিতে তরসি করহি কর সেলই।
হেরইতে বয়ন নয়ন-জল খলই ॥
হঠ-পরিরস্ভণে থরহরি কাপ।
চুষ্বনে বদন পটাঞ্চলে ঝাঁপ ॥
মহাপ্রভুর হ্থ-উদ্দীপ্ত ভাবের চিত্র পূর্বেই উদ্ঘাটিত হয়েছে।
॥ মধুরসোচিত ব্যভিচারী বা! সঞ্চারী ভাৰ ॥
সাধারণ ভক্তিরস বর্ণনে ব্যভিচারীর বিষয় উল্লিখিত হয়েছে । তেত্রিশটি
ব্যভিচারীর মধ্যে উগ্রতা এবং আলম্ ছাড়া বাকি একত্রিশটিই মধুরে পরি-
গোষক। মৃত্যু, সুপ্তি প্রভৃতি বর্ণনদক্ষতাক্রমে মধুরে পরিপোষক হতে পারে।
এ ছাড়! সখীপ্রেম বা সখাগ্রেম উজ্জলমধুরে একটি নোতুন সঞ্চারী ব'লে
পরিগণিত হতে পারে।
মধুরসবৈচিন্ী ৃ ৩৪৪
নির্বেদ- ছুঃখ-বিচ্ছেদ-ঈর্ষ। প্রভৃতি ক্ষেত্রে কর্তব্য না কর] এবং অকর্তব্য
করার জন্য আঅধিকার, যেমন মহাগ্রভূর £
দূরে শুদ্ধপ্রেমগন্ধ কপট প্রেমের বন্ধ
সেহ মোর কৃষ্ণ নাহি পায়।
তবে যে করি ক্রন্দন স্বসৌভাগ্য প্রখ্যাপন
করি ইহ] জানিহ নিশ্চয় ॥
যাতে বংশীধ্বনি সখ না দেখি সে চাদমুখ,
যপি নাহি সে আলম্বন।
নিজদেহে করি প্রীত কেবল কামের রীত
প্রাণকীটেরে করিয়ে ধারণ ॥:"_-চৈতন্যচরিতামুত |
অথব।,
কুলবতী কোই নয়নে জনি ছেরই
হেরত পুন জনি কান।
কানু হেরি জনি প্রেম বাঢায়ই
প্রেমে করই জনি মান ॥
( সজনি ) অতয়ে মানিয়ে নিজ দোখ ।
মান-দগধ জিউ অব নাহি নিকসয়ে
কানু সঞ্চে কি করব রোখ ॥
- ইত্যাদি শ্রীমতীর, মানাস্তে।
অথবা,
(বন্ধু) সকলি আমার দোষ ।
ন। জানিয়া যদি কর্যাছি পিরিতি
কাহারে করিব রোষ॥
স্থধার সমূদ্র সমূখে দেখিয়।
খাইলু আপন স্থথে।
কে জানে খাইলে গরল হইবে
পাইব এতেক দুখে ॥ রর
-ইত্যার্দি আক্ষেপানুরাগে ।
বিষাদ্ব-_অনতাপের 'ভাব। অভিলধিত বস্তর অপ্রাপ্তি, প্রারন্ধ কার্ষের
অসাফল্য, বিপত্তির উদ্ভব এবং আত্মাপরাধ হেতু এই সঞ্চারীর উত্ভব। যেমন__
৩৫০ বৈষব-রস-প্রকাশ
শুনইতে কাহ্ মুরলীরব-মাধুরী
শবণ নিবারলু' তোর ।
হেরইতে রূপ নয়নযুগ ঝাঁপলু
তব মোহে রোখলি ভোর ॥
(স্থন্দরি) তৈখনে কহুলম তোয়।
ভরম্বহি তা সঞ্জে . লেহ বাঢ়ায়বি
জনম গৌয়ায়বি রোয় ॥
বিস্তু গুণ পরখি পরক রূপ লালসে
কাহে স্োপলি নিজ দেহ ।
দিনে দিনে খোয়সি ইহ তনু লাবণি
জীবইতে ভেলি সন্দেহ ॥
ইত্যাদি সবীমুখে ব্যঞ্জিত শ্রীমতীর বিষাঁদ।
'অথব],
স্থথের লাগিয়। এ ঘর বাদ্ধিলু
অনলে পুড়িয়৷ গেল।
অমিয়া-সাগরে সিনান করিতে
সকলি গরল ভেল ॥
_ইত্যার্দি বিপত্তি-অন্ুভবভরাত।
দৈচ্া_ছুঃখ, তাস, অপরাঁধ হেতু চিত্তের দৌর্বল্য। এটি গর্বের বিপরীত
ব্যভিচারী । যথা
"অয়ি দীনদয়া্ নাথ হে” ইতাশদি শ্রীপাদ মাধবেন্্র পুরী ।
অথবা,
তোমার দর্শন বিনে অধন্ হই রাত্রি দিনে
এই কাল না যায় কাটন।
তুমি অনাথের বন্ধু অপার করুণাসিন্ধু
এ কপ করি দেহ দরশন ॥ - ইত্যাদি মহাপ্রভূর।
অথবা,
হরি গেও মধুপুর হম কুলবাল।।
বিপথে পডল যৈছে মালতীমালা ॥
আথব),
মধুররসবৈচিত্রী ৩৫১
কি কহপি কি পুছমি শুন প্রিয়সজনি।
কৈছনে বঞ্চব ইহ দিনরজনী ॥
নয়নক নিদ গেও বয়ানক হাস।
স্থথ গেও পিয়া সঞ ছুথ মঝু পাস ॥
চরণনখর-মণি-রগ্রন ছাদ ।
ধরণী লুটাঅল গোকুলচাদ ॥
ঢরকি ঢরকি পড়ু লোচন-লোর।
কতব্ধপ মিনন্তি কএল পছ মোর ॥
লাগল কুদিন কএল হম মান।
অবহু ন নিকসয়ে কঠিন পরাণ ॥
রোস-তিমির অত বৈরি কি জান।
রতনক ভৈ গেল গেরিক ভান ॥
নারী জনম হম ন কএল ভাগি।
মরণ শরণ ভেল মানক লাগি ॥
বিন্যাপতি কহ শ্বন্থ ধনী রাই।
ব্রোয়সি কাহে কহ ভল সমুঝাই ॥
_ইত্যাদি অপরাধবোধসগ্াত |
গ্রাাান- শ্রম, মনংপীড। ও রত্যাদির দ্বার! কৃত দেহের ক্লান্তি ও বলের ক্ষয়,
যেমন-_
( দেখ দেখ ) গৌরবর গুণধাম।
যে। বূপলাবণি দেহ সুগঠনী
দেখি ঝুরে কোটি কাম ॥ :
সোই ভাব-ভরে ক্ষীণ দীসই
পরম দুবর দেছ্।
তত" দীপতি উজোর এছন
যৈছন চাদক রেহ
ইত্যাদি মহারভর |
বিন্থ গুণ পরখি পরক রূপ লালসে
কাহে পৌপলি নিজ দেহা।
৩৫২ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
দিনে দিনে খোয়সি ইহ্ ব্ূপ লাবণি-
জীবইতে ভেলী সন্দেহ ॥
_ ইত্যাদি শ্রীমতীর ।
অথবা,
(যাধব ) ছুবরী পেখলু' তাই।
চৌদশী চাদ জন্ক অহ্থথন খীয়ত
_ এছন জীবয়ে রাই ॥
শরম-_-পথ, নৃত্য ও রমণাদ্দিজনিত খেদ, যেমন__
( দেখ ) রাই করল অভিসার ।
শিরিষ কুস্থম জিনি কোমল পদতল
বিপথে পড়ত অনিবার ॥
যো থলকমল পরশে অতি কোমল
ঝামর ভই উপচন্ক |
সে] অব ধাহা তাহা কঠিন ধরণী মাহ
ডারত বডই নিশঙ্ক'॥ .
প্ল _ ইত্যাদি পথশ্রম !
রতি স্থখশয়ন নিবেশহি হ্ৃন্দরি
গ্রমুদদিত মানস ভেলি।
বিছুরল আন আন কেলি কৌতুক
অনুগত নিধুবন-কেলি ॥
অদভূত মদনবিলাস।
রাইক দেহ- দণ্ড পরিশোভিত
শ্রমজল-মুকুতা-বিকাঁশ |
- ইত্যাদি রতিজাত।
আদ-_-আসব পান থেকে অথব1 কামবিকার থেকে জাত মন্ততার ভাব»
যেমন-_
রূপ লাগি আখি ঝুরে গুণে মন ভোর ।
প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর ॥* *
কি আর বলিব সই কি আর বলিব।
ঘে পণ কর্যাছি মনে সেই সে করিব ॥
যধুরসবৈচিত্রী ৩৫৩
অথবা,
( সজনি ) অব কি করবি উপদেশ ।
কাছ্-অনুরাগে তন্গমন মাতল
না গুণে ধরম-লব-লেশ ॥
অথবা, অভিসারকালে :
কান্ছ-অন্করাগে হৃদয় ভেল কাতর
রহই না পারই গেহ।
গুরু দুরুজন ভয় কছু নাহি মানয়ে
চীর নাহি সম্বরু দেহ ॥
( দেখ দেখ ) নব অন্রাগক রীত।
ঘন আদ্ধিয্ার ভূজগ ভয় শত শত
তবনু" ন মানয়ে ভীত ॥
সখীগণ সঙ্গ তেজি চলু একেসরি
হেরি সহ্চরীগণ ধায়। _ ইত্যাদি জ্ঞানদাস।
শার্ব__সৌভাগ্য, রূপযৌবন; উত্তম আশ্রয় এবং ইই্প্রাপ্তির বশে অন্যের
অবজ্ঞা, যেমন-_
তোঁমর] যে বল শ্তাম মধুপুরে যাইবেন
কোন পথে বধু পলাইবে।
এ বুক চিরিয়া যবে বাহির করিব গো
তবে শ্তাম মধুপুরে যাবে ॥
অথব',
আচরে বদন ঝাঁপাউ।
লুবধল মধুপ চকোর বিধুস্তদ
অনত অনত চলি যাউ ॥
মুখমণ্ডল কিয়ে শারদ সরোকহ
ভালহি অটমীক চন্দ ।
মধুরিপু মরমে ভরম ধাহা এছন
তাহে কি গণিয়ে মতিমন্দ |
জনি কহ গরবে পাণিতলে বারব
ও থলকমল উজোর |% *
কত
অপিচ,
বৈষ্ণব রস-গ্রকাশ
ভাঙ, ধঙ্গুয়া কিয়ে স্থতন্ ধুনায়সি
যছু শরে গিরিধর কাপ।
সো কিয়ে অতঙ্- পতগ শিরে ডারসি
গোবিন্দদাস হিয়ে তাপ॥
* * চীর চন্দন উরে হার ন দেল]।
সো৷ অব নদী গিরি আতর ভেল।॥
পিয়াক গরবে হাম কাহুক না গণল]।
সে! পিয়! বিনা মোহে কে কি ন কহল] ॥
শহ্কা_অপবাদ এবং মন্দলোকের দ্বার কোনো অনিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা,
যেমন-_
অপি,
এই ভয় উঠে মনে এই ভয় উঠে।
ন৷ জানি কান্থর প্রেম তিলে জন্গ ছুটে ॥
গড়ন ভাঙিতে সই আছে কত খল।
ভাঙিয়! গড়িতে পারে সে বড় বিরল ॥
যথা! তথা যাই আমি যত ছুখ পাই ।
টাদমুখে হাসি হেরি তিলেক জুড়াই ॥
সে হেন বধুরে মোর যে জন ভাঙায়।
হাম নারী অবলার বধ লাগে তায় ॥** - চণ্তীদাস।
ভাদর মাসের তিথি চতুর্থীর রাতি।
জল মাঝে" দেখিলে 1 কি মে। নিশাপতি |
পুগ্ন কনসে কিবা ভরিলে হাথে।
তে কারণে বাশী চুরী দোষসি জগন্নাথে |
ব্রাস- বজ্র, বিদ্যুৎ, ঝটিকা, উচ্চশবদ প্রভৃতি থেকে সহসা উৎপন্ন ভয়ের মত
মনোভাব, যমন"
কুর্বতি কিল কোকিলকুল উজ্জলকলনাদ্দং।
জৈমিনিরিতি জৈমিনিরিতি রৌতি চ সবিষাদম্।
নীলনলিনমাল্যমহুহ বীক্ষ্য পুলকবীত]।
গরুড় গরুড় গরুড়েত্যপি রৌতি পরমভীতা! ॥
মধুররসবৈচিত্রী ৩৫৫:
সরস চন্দন গন্ধে ।
দেহে বিষম শঙ্কে |
দহন সমান মানে নিশি শশাঙ্ক | *% *
বনের হুরিণী যেহু তরাসিলী মনে ।
দশ দিশ দেখে রাধা চকিত নয়ানে | ইত্যার্দি
আবৰেগ-_চিতের সন্ত্রযম বা ত্বরাতাঁড়িত ভাব। এ ভাব প্রিয়ার্শন, শ্রবণ
ব! অপ্রিয়দর্শন-শ্রবণ থেকে উৎপন্ন হতে পারে । ষেমন-_
অথবা,
আজু ছুরদিন ভেল।
কান্ত হমারি নিতাস্ত আগুসরি
সংকেত-কুঞ্চহি গেল ॥
তরল জলধর বরিখে ঝরঝর
গরজে ঘন ঘনঘোর ।
্আমনাগর একলে কৈছনে
পস্থ হেরই মোর ॥
সঙরি মঞ্জু তচ্ছ অবশ ভেল জঙ্গ
অথির থরথর কাঁপ।
এ মঝু গুরুজন নয়ন দারুণ
ঘোর তিমিরছি ঝাঁপ॥
তুরিতে চল অব কিয়ে বিচারহ
জীবন মঝু আগুসার।
রাঁয়শেখর বচনে অভিনর
কিয়ে সে৷ বিঘিনি বিথার ॥
কালি হাম কৃঙ্ে কান্থ যব ভেট।
নিরমদ্দ নয়ন বয়ন করু হেট ॥
মান ভরমে হাম হাসি হাসি সাধ।
না জানিক্ে এছে পড়ব পরমাদ ॥
( এ সখি ) অব মোরে কহুবি বিশেষ ।
জানলু' কাঙ্থ চলব পরদেশ ॥ '-ইত্যাদি।
৫৬
অথবা,
বৈষ্ণব-রস-গ্রকাশ
আদরে আগুসরি রাই হৃদয়ে ধরি
জান্নু উপর পুন রাখি।
নিজ কর-কমলে চরণযুগ মুছই
হেরইতে চির থির আখি ॥
উন্মাদ অতিরিক্ত আনন্দ, উৎকণ্, বিপদ, বিরহ-বিষাদ থেকে উদ্ভূত
চিত্তবিভ্রম | আনন্দে, যেমন মহাপ্রভু £
উৎকণায় শ্রীমতী £
দেখত বেক গৌরচন্দ * *
সহজে সুন্দর মধুর দেহ
আনন্দে আনন্দে না বাদ্ধে থেহ
চুলি চুলি ঢুলি চলত খলত
মত্ত করিবর ভাতিয়]।
নটন ঘটন ভৈ গেল ভোর
মুকুদ্দ মাধব গোবিন্দ বোঁল
রোয়ত হুসত ধরণী খসত
শোহত পুলক পাঁতিয়া ॥
মণিময় মগ্তীর যতনে আনি ধনী
সে। পহিরল ছুই হাথ।
কিস্কিণী গীম-হার বলি পহিরল
হার সাজাওল মাথ ॥
অপরূপ পেখলু আজ ।
হুরি-অভিসার ভরমভরে স্বন্দরী
বিছুরল সাজ বিসাঁজ ॥
মুুরবলোকিতমগ্তনলীল|।
মধুরিপুরহমিতি ভাঁবনশীল। ॥
ত্বরিতমুপেতি ন কথমভিসারম্।
হরিরিতি ব্দতি সঘীমনুবারম্ ॥
গ্লিব্যতি চুম্বতি জলধরকল্পম্। .
হরিরুপগত ইতি তিমিরমনয়ম্ ॥
"অথবা,
মধুররসবৈচিত্রী ৩৪৭
উনমত ভাতি ধনী আছয়ে নিচলে।
জড়িমা ভরল হাথ পদ নাহি চলে ॥
আধ আধ বচন কহিছে কার সনে ।
পুন পুন পুছয়ে সবহু' তরুগণে ॥ --ইত্যার্দি।
অপত্মার-_চিভবিনাশ, মুগীরোগে যেমন হয় । যথ। মহাপ্রভু £
অথবা,
অথবা,
কতু স্তব্ধ কতু প্রভু ভূমিতে পড়য়।
শুফ কাষ্ঠসম হস্তপদ না চলয় ॥
কভু ভূমি পড়ে কতু হয় শ্বাসহীন।
যাহ! দেখি ভক্তগণের হয় প্রাণ ক্ষীণ ॥
কভু নেত্রে নাসায় জল মুখে পড়ে ফেন।
অম্বতের ধার! চন্দ্রবিষ্বে পড়ে যেন ।॥ --চৈতম্যচরিতামৃত ॥
কিয়ে সখি চম্পক-দাম বনায়সি
করইতে রভস বিহা'র।
সো! বর নাগর যাওব মধুপুর
ব্রজপুর করি আধিয়ার ॥
প্রিয়তম দাম শ্রাদ্রাম আর হলধর
এসব সহচর সাথ ।
শুনইতে যুরছি পড়ল সোই কামিনী
কুলিশ পড়ল জন মাথ ॥
খেনে খেনে উঠত খেনে খেনে বৈঠত
অবশ কলেবর কাপি।
ভণ যছুনন্দন শুনইতে এছন
লোরে নয়নযুগ ঝাপি॥
কালিয়া বরণ হিরণ পিন্ধন
যখন পড়য়ে মনে ।
মুরছি পড়িয়' কান্দয়ে ধরিয়!।
লব সী জনে জনে ॥
বি বৈধব-রস-প্রকাশ
কেহ কছে মাই ওঝায়ে ঝাড়াই
রাইয়েরে পাইঞ্াছে ভৃত]1।
ঝাঁকি ঝাকি উঠে কহিলে ন! টুটে
সে যে বুষভাগু-স্থৃতা৷ ॥
ব্যা্ধি-_বিচ্ছেদ-আনীত দেহতাপ প্রভৃতির মনোভাব £
কিয়ে হিমকর-কর কিয়ে নিরঝর-ঝর
কিয়ে কুস্থমিত পরিষঙ্ক ।
কিয়ে কিশলয় কিয়ে মলয় সমীরণ
জ্বলতহি চন্দনপন্ ॥
অব অবধারলু পরশক রঙ্ক |
নায়রি কোরে সঙরি তোহে মুরছই
অপরূপ মদন আতঙ্ক ॥
অপিচ,
যত সুখে বাঢ়াইল। তত ছুখে পোড়াইল।
করিল। কুমুদববন্ধু-ভাতি।
গুপ্ত কহে একমাসে দ্িপক্ষ ছাড়িল। দেশে
নি্দানে হইল কুহুরাতি ॥
মোহ্-_মুছণ। হর্ষে বিচ্ছেদে ভয়ে বা বিষাদে, যথা কৃষ্ণের ব্যাধি ও
মোহ £
এ ধনি এ ধনি বচন শুন।
নিদান দেখিয়। আইলু' পুন ॥
দেখিতে দেখিতে বাঁঢ়ল ব্যাধি |
যত যত করি ন! হয়ে সুধি॥
নম] বাদ্ধে চিকুর না পরে চীর।
না খায়ে আহার না পিয়ে নীর ॥
সোনার বরণ হুইল শ্যাম।
জপিয়া জপিয়! তোহার নাম ॥
ন] চিন্কে মাচুষ নিমিখ নাই।
কাঠের পুতদ্দী রৈয়াছে চাই ॥
মধুররসবৈচিত্রী ৩৫৯
তুলাখানি দিলু নাসিক মাঝে ।
তবে সে বুঝিলু সোয়াস আছে ॥
আছয়ে সোয়াস না রহে জীব।
বিলম্ব না৷ সহে আমার দীব ॥
চণ্তীদাস কহে বিরহ বাধ! ।
কেবল মরমে ওষধ রাধা ॥
অথবা,
অতি শীতল ৃ মলয়ানিল মন্দ মন্দ বহনা।
হরি বৈম্খী হমারি অঙ্গ মদনানলে দহন! ॥
কোকিলকুল কুহুকুহরয়ে ঝংকারে অলি কুহুমে ।
হরিলালসে তনু তেজব পাঁওব আন জনমে ॥
সব সঙ্গিনী ঘেরি বৈঠত গাঁওত হরিলীল]।
এছন বাণী শুনি তৈখনি রাগিণী মোহ গেল। ॥
ললিতা কোরে কর বৈঠল বিশাখা ধর নাটিয়]।
শশিশেখর কহ গোচর যাওত জীউ ফাটিয়া! ॥
স্ৃতি- প্রাণত্যাগ । যথার্থ মৃত্যু বর্ণনীয় নয়। মৃত্যুর উদ্যমই বর্ণনীয়।
শ্রীরপ বলছেন, “মৃতেরধ্যবসায়োহত্র বর্ণ্যঃ পাক্ষা্দিয়ং ন হি'। এ হ'ল
মৃত্যুর ব্যভিচারীভাবের বিষয়। ভারতীয় কাব্যনাটক এবং রসশান্ত্রে
এতিহোও মৃত্যুর ঘটন। প্রদর্শনীয় নয়। কারণ এতে রসহানি ঘটে। “রস-
বিচ্ছেদহেতুত্বাৎ মরণং ?নব বর্ণযযতে'। এবং মৃত্যুবরণ আবস্তিক হলে
আকাশবাণীর দ্বারা পুনর্জন্ম ঘোষণ। করতে হবে। পরে রসপর্যায়বিভাগের
মধ্যে আমর! দেখব যে এটুকুও বৈষ্ণব মহাজন স্বীকার করেন নি। বিপ্রলপ্-
শ্জারের চারটি অবান্তর বিভাগের মধো পূর্বপ্রচলিত করুণ বিপ্রলস্তের স্থানে
তারা প্রেমবৈচিত্ত্য নির্দেশ করেছেন । মৃত্যুর উদ্যম, যথা
কিকছিলি কঠিনি কালিদহে পৈঠবি
শুনইতে কাপই দেহ।।
এছন বচন কানু যব শুনব
জীবনে ন বান্ধব থেহ। ॥
৬৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
তাহে তু বিদগধ নারী ।
অনুচিত মানে দেহ যদি তেজবি .
মরমহি বিরহ বিথারি ॥*.. _ গোবিন্দদাস।
অথবা,
শীতল তছু ঙ্গহেরি . সঙ্গসথখ লালসে
কয়লু কুলধরমণ্ডণ নাশে ।
সোই যদি তেজেকি . কাজ ইহ জীবন
আনহ সখি গরল করি গ্রাসে ॥
প্রাণসঞ অধিক তু রোয়সি রে কাহে সখি
মরিলে হাম করিহ ইহ কাজে।
অনলে নাহি দাহবি রে নীরে নাহি ডাঁরবি
এ তনু ধরি রাখবি ব্রজমাঝে |
হামারি দোন বাহ ধরি সুদৃঢ় করি বান্ধবি,
শ্যামরুচি তরুতমালডালে ।-*" _শশীশেখর |
আলম্য : প্রকৃত অলসতাকে শ্রীবূ্প শুঙ্গারের সঞ্চারী হিসেবে নিষিদ্ধ
করেছেন, কারণ, আলস্য হ*ল কর্মকা, সামর্থ্য সত্বেও উদ্যোগ না করা । শাস্ত-
রসে এ-ব্যভিচারী প্রয়োজনীয় হতে পারে। কিন্তু লক্ষণীয় এই যে, অলস
আলন্ত প্রভৃতি শবগুলি আধুনিক কবির!" শৃক্গারে প্রায়শই ব্যবহার করেছেন
এবং তা চমৎকারও হয়েছে । অবশ্ঠ বল) যেতে পারে, সেক্ষেত্রে প্রকৃত আলম্য
নয়, জড়িম। মাত্র। যেমন “মেলি রাগ-অলস আখি, সখি, জাগো” অথবা “বকুল
কেবল দলিত করেছি আলসে, ছিলাম যখন নিলীন কুস্থম শয়নে” প্রভৃতি
রবীন্দ্রনাথে। কিন্তু বাসকসজ্জার রজনীশেষে নায়িকার নিয্নলিখিত অবস্থা! কর্মে
উৎসাহহীনত1 বলে পরিগণিত হবে না কেন? “শাম না এল। (আমার )
অলস অঙ্গ, শিথিল কবরী, বুঝি বা যামিনী বিফলে গেল।” অবশ্ত এখানেও
বল৷ যেতে পারে যে এ আলস্তের সঙ্গে অনিচ্ছার যোগ নেই। এগ জড়তাই।
যেমন জ্ঞানদাসেও “খেনে খেনে আলসে মুদি আধ আখি ইত্যাদি
পূর্বরাগোচিত বর্ণনা । “রসালস' বলতেও যথার্থ আলম্য নয়, নিপা” সধারী
হবে।
জ্রাড্য : অনিষ্ট ৰা ইষ্ট দর্শনে এবং বিরহে যে বিচারবোধহীনতা। মোহ"
অবস্থার পূর্বে এবং পরে এর অস্তিত্ব । যেমন--
মধুররসবৈচিত্রী | ৩৬১
রাধার কী হৈল অন্তরে বেখা।
বসিয়া বিরলে থাকয়ে একলে
না শুনে কাহার কথ। ॥
সদাই ধেয়ানে চাহে মেঘপানে
ন1 চলে নয়ানতারা |.
্বথব?,
'নয়ানে বহয়ে ধারা।
কহিতে বচন হারা ॥?
লোচন যুগলে লোর পরিপূর়।
কহুইতে বয়নে বচন নাহি ফুর ॥
চলইতে চরণ অচল সম ভেল।
কুলবতী ধরম করম দূবে গেল ।
ব্রীড়া £ লজ্জা, অধষ্ঠতার ভাঁব। নবসংগম, নিন্দিত কাজ, স্তব অথবা
অবজ্ঞ'-প্রস্থত মনোভাব থেকে জাত। যেমন, প্রথমসমাগমে--
থরথর কাপন লহু লহু ভাস।
লাজে না বচন করয়ে পরকাঁস ॥
আজু ধনী পেখল বড় বিপরীত ।
খন অনুমতি খন মানই ভীত ॥
স্থরতক নামে মুদএ ছুই আখি।
পাওল মদন মহোদধি সাথি ॥
চুম্বন বেরি করএ মুখ বঙ্ক!।
মীলল চাদ সরোরুহ অঙ্কা। ॥
নীবিবন্ধ পরসে চমকি উঠে গোরী ।
জানস মদন ভগ্তারক চোরী ॥
ফুয়ল বসন হিয়া, ভূজে রহু সাঠি।
বাহির রতন আচরে দেই গাঠি "1. -_বিগ্তাঁপতি।
গুরুজন-নিন্দিত গ্ণয়ে, যেমন-_
গুরু-গরবিত মাঝে রহি সখীসঙ্গে ।
গুলকে পুরয়ে তনু শ্তামপরসঙ্গে ॥
বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
পুলক ঢাকিতে করি কত পরকার।
নয়নের ধারা মোর বহে অনিবার ॥
ঘরের যতেক সভে করে কানাকানি।
জ্ঞান কহে লাজঘরে ভেজাই আগুনি |
কৃষ্ণের প্রতি অবজ্ঞায় সথীর £
হেদে হে নিলাজ বধু লাজ নাহি বাঁস।
বিহানে পরের বাড়ী কোন লাজে আন্ত ॥
অবনিথ।: কোনে কৃত্রিম ভাবদ্ারা গোপনীয় মনোভাব থেকে 'উৎপন্ন
চেষ্টাকে অবহিখা৷ বলে। অর্থাৎ শৃঙ্গারের প্রকাশকে অন্য কার্ষের দ্বারা গোঁপন
কর1। এ অবহিখ। কৌটিল্যের থেকেও হতে পারে, দ্াক্ষিণ্যর থেকেও হতে
পারে, আবার লজ্জ। থেকেও উদ্ভূত হতে পারে। যেমন--
পুলক ঢাকিতে করি কত পরকার।
নয়নের ধারা মোর বহে অনিবার ॥
এসব অংশে লজ্জাবোধ থেকেই অবহিখা। অপিচ-_
অথবা,
কৌটিল্যজাত £
কেলি রভস যব শুনে ।
আনত হেরি ততহি দেই কানে ॥
ইথে কোই কর পরচারি।
কাদন মাখি হাসি দেই গারি ॥
নাহি উঠল তীরে সে ধনি রাই।
মঝু মুখ সুন্দরী অবনত চাই ॥
এ সখি পেখলু' অপরূপ গোরী ।
বল করি চীত চোরায়লী মোরী ॥
একলি চললী ধনী হোই আগুয়ান।
উমড়ি কহই সখি করহ পয়ান ॥
গুরুজন সনে আজু চলইতে বাট।
অন্তরে উপজল কান্থক নাট ॥
পুলকে পূরল তন্থ ঝর ঝর ঘাম।
অবশ হৈয়! কহে কান কাঙ্গ নাম ॥
মধুররসবৈচিত্রী ৩৬৩.
ননক্ধি কহয়ে তহি কাছ কাহা ছেরি।
ভাঙ্গ ভাম্ব করি কহয়ে পুন বেরি ॥
অতিশয় তাপে তন্ুুতে বছু ঘাম।
তাহে পুন পুন সে কহল ভাঙ্গ নামি॥
স্বৃতিঃ সদৃশ বস্ত দেখে পূর্বান্থত্থৃত বস্তর স্মরণ, অথবা দৃঢ় অভ্যামবশে
পূর্বান্ছতৃত বিষয়ের মানসগ্রতীতি, যেমন-_ .
“পাসরিতে করি মন পাঁসর1 না যায় গে!
কী করিব কী হবে উপায়।”
রূপে ভরল দিঠি ' সোঙরি পরশ মিঠি
পুলক না তেজই অঙ্গ |
মোহন মুরলী রবে শ্রুতি পরিপূরিত
না শুনে আন পরসঙ্গ ॥”
“কৈছে হৃদয় ধরি পন্থ হেরত হরি
সোঙরি সোঙরি মন ঝুর ॥৮
বিতর্ক ঃ কারণ-অন্ুসন্ধানজনিত বা সংশয়জনিত বিচার-বিঞ্লেষণ £
মুর্দিত নয়নে হিয়। ভূজযুগ চাপি।
সুতি রহল হরি কিছু না আলাপি॥
পরসঙ্গে কহলহি নামহ তোরি ।
তবহি মেলিয়া আখি চাহে মুখ মোরি ॥
(সুন্দরি ) ইথে নাহি কহ আন ছন্দ।
তোঁহে অন্রত ভেল শ্যামর চন্দ ॥
যোই নয়নভঙি না সহে অনঙ্গ।
সোই নয়নে অবে লোর-তরঙ ॥
ষোই অধরে সদা মধুরিম হাস।
পোই নীরস ভেল দীঘ নিশাস ॥
বিদ্াপতি কহু মিছ নহ ভাখি।
গোবিন্দদাস কহ তুহ' তাহে সাখি॥
অথবা,
হমে দরশাইতে কতন্' বেশ কর
হুমে হেরইতে তন্থ ঝাঁপ।
২১৬৪ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
স্থরত শিঙারে আজ ধনী আয়লি
পরশিতে থরথরি কাপ॥
( শুন হে) কাহুক ইহ অবধারি।
সকল কাজ হাম বুঝলু, বুঝায়লু
না বুঝলু' অন্তর নারী ॥
চিন্তা ঃ অভিলধিত বস্তর অপ্রাপ্তি এবং অনভিলধিত বস্তর প্রাপ্তির নিমিত্ত
ধ্যানের নাম চিস্তা। যেমন শ্রীমন্মহাপ্রভু :
ভাবাবেশে কভু প্রভু ভূমিতে বসিয়া! |
তর্জনীতে ভূমি লেখে অধোমুখ হৈয়] ॥
অঙ্গুলিতে ক্ষত হবে জানি দামোদর ।
ভয়ে নিজকরে নিবারয়ে প্রভৃকর ।॥ -_চৈতন্তচরিতামৃত।
কৃষ্ণ, যথা-_ মন মাহ| কোপ বেকত নাহি ভেল।
এছন মানিনি ঘর মাহ! গেল ॥
গুণি গুণি মাধব চুলু নিজ বাস।
দন্দ পড়ল অব ন] পূরল আশ॥
মনহি' বিচারয়ে রসময় কান।
কৈছনে আঙ্জুক টুটব মান ॥
নিরজনে বৈঠিয়া রহল মুরারি।
তেজল গোঠক গমন বিহারি ॥
শ্রীমতী, যথা
তোদ্ষাক সংমুখ দেখি আধিক চিস্তনে |
হাসে রোষে কান্দে কাম্পে ভয় করে মনে ॥
--শ্রীকৃষ্ককীর্ভন।
মতি ঃ কোঁনে। বিষয়ে স্থিরনিশ্য়ের 'ভাব, যেমন-_
“তোর কুলবতী ভজ নিজপতি
যার ষেব। মনে লয়।
ভাবিয়! দেখিলু শ্যামর্বধু বিনে
আর কেহ মোর নয় ॥”
“কি আর বলিব সই কি আর বলিব।
যে পণ কর্যাছি মনে সেই সে করিব ॥?
মধুররলবৈচিত্রী ৩৬৪
স্মুথবা, লধীগ্রশ্থাস্তে শ্রমতীর অভিসারে মতি, যথা
কুল-মরিযাদ- কপাট উদঘাটলু*
তাহে কি কাঠকি বাধা ।
নিজ-মরিষাদ- সিন্ধু সঞ্জে পঙরলু'
তাহে কি তটিনী অগাধ। ॥
( সজনি ) মধু পরিখন কর দূর ।
কৈছেহ্ৃদ্য়ধরি পন্থ হেরত হরি
সোঙরি সোঙরি মন ঝুর ॥
কোটি কুহ্মর্শর বরিখয়ে যছুপর
তাহে কি জলদজল লাগি।
প্রেমদহন-দহ যাক হৃদয় সহ
তাহে কি বজরক আগি ॥
যছু পদতলে নিজ জীবন ফ্োঁপলু
তাহে কি তম্গ-অনুরোধ ।
গোবিন্দদাস কহই ধনি অভিসর
সহচরী পাওল বোধ ॥
ধুতি £ ছখনাশে ও অভিলধিত বস্তর প্রাপ্তিতে মানসিক অচাঞ্চল্য £
আজু রজনী হাম ভাগে পোহায়লু
পেখলু' পিয়। মুখ-চন্দ।
জীবন যৌবন সফল করি মানলু
দসদ্িস ভেল নিরদন্দ] ॥ -
আজু মঝু গেহ গেহ করি মানলু
আজু মঝু দেহ ভেল দেহ]।
আজু,বিহি মোহে অনুকূল হোয়ল
টুটল সব সন্দেহ] ॥
সোই কোকিল অব লাখ ভাকউ
লাখ উদয় করু চন্দ1|
পাঁচ বাণ অব লাখ বাণ হুউ,
মলয় পবন বধ মন্দা ॥
৬ শোধ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
কুর্য ঃ অভীষ্ট প্রাপ্তিতে চিত্তের প্রসন্নতা, যেমন, উপরি-উদ্ধত দৃষ্টান্তে, অথবা-_.
“ছু দোহা দরশনে উলমিত ভেল।
আকুল অমিয়1-সাগরে ডুবি গেল |:
ুই দিঠি ছু মুখে অবধি নাহিক স্থখে
পুলকে পুরল ছুই তন্থ।
বেঢ়ল সখীর ঠাট যৈছন চান্দের হট
তার মাঝে সাজে রাধা কাঙ্ছ ॥
ওঁৎন্থক্য £ ব্যগ্রতা। অভিপ্রেত বস্তর দর্শন ব1 প্রাপ্তির জন্য বিলম্ব-
অসহিষ্ুতা । যথা
ক নন্দকুলচন্দ্রমাঃ ক শিথিচন্দ্রিকালংকতিঃ
ক মন্দ্রমুরলীরবঃ ক ্থ সুরেন্দ্রনীলছ্যতিঃ |
ক রাসরসতাগ্বী ক সখি জীবরক্ষৌষধি-
নিধির্মম স্হৃত্বমঃ ক বত হস্ত হা ধিগবিধিম্॥
**ললিতমাধব |
কাহা সে ত্রিভঙ্গ ঠাম কাহ। সেই বেণুগান
কাহ| সেই যমুনাপুলিন |
কাহ। রাসবিলাস কাহা নৃত্যগীতহাস
কাহা। প্রভু মদনমোহন ॥ * *
তোমার দর্শন বিনে অধন্য হই রাত্রিদিনে
এই কাল ন যায় কাটন।
তুমি অনাথের বন্ধু অপার করুণাসিন্ধু
কপ। করি দেহ দরশন ॥
উঠিল ভাব চাপল মন হৈল চঞ্চল
ভাবের গতি বুঝন না যায়।
আর্শনে পোড়ে মন কেমনে পাব দরশন
কষ্ঠাই পুছেন উপায় ॥ * *
নান ভাবের প্রাবল্য হৈল লক্ষি শাবল্য
ভাবে ভাবে হৈল মহারণ।
ওস্থক্য চাপল্য দৈন্ত রোযামর্য আদি-সৈত
প্রেমোম্মাদ ভার কারণ ॥
মধুররসবৈচিত্রী ৩৬৭
উগ্রতা: অন্যের অপরাধ ও অসদ্ব্যবহারজনিত ক্রোধ। মধুররসে
পুর্িকারক নয়। তবে শ্রীমতীর প্রতি জটিল! ব1 ননর্দের বাক্য দৃষ্টান্ত হিসেবে
গৃহীত হতে পারে। দেখতে হবে খণ্ডিতাবস্থায় শ্রীমতীর রোষ ব1 অঙ্ছয়।
আছে, ঠিক ক্রোধের অবকাশ নেই। অবস্থাস্তরে অবশ্ত শ্রীমতীর কপট ক্রোধ
থাকতে পাঁরে। কুটিলার উগ্রভাব, যেমন-_
“উপরে থাকিয়! কুটিল! কহিছে
রাঙা করি ছুটি আখি।
তোর চতুরতা আজি বুঝিয়াছি
নিতি নিছি দাও ফাকি॥
উপরে যেমন বরণ কালিয়
ভিতরে তেমনি কালি।
দূর হরাখাল কুল-মজানিয়া
নতুব। খাইবি গালি ॥”
শ্রীমতীর কপট উগ্রতা, যেমন-_
সব সহচরি সহ বিনোদিনী রাই।
উধাড়িল। মগ্জুষ! নিকটেতে যাই ॥
দেখিতে পাইল শ্যাম নব জলধরে।
রাধিক! কপট ক্রোধে কহে ললিতারে ॥
এ ছুষ্ট ভূষণ মম সব চুরি করি।
অভিসার করিয়াছে পতিশিরে চড়ি ॥
দিতে বল পথি মোর তৃষণ ফিরায়ে।
নতুব। যে শান্তি দ্বিব রাজারে কহিয়ে ॥
--অকিঞ্চনদান।
অমর্ষ ২ নিন্দাজন্য অথব। অপমানবোধ-জন্ত অসহিযুতা। নিন্দাজন্ত যথ!
শীষের £
গোপকুমারসমাজমিমং, সখি,
পৃচ্ছ কদান্ুগতোইহং |
কথমিব মামমুপশ্তসি দিশিদিশি
কথমিব কলয়সি মোহ্ম্ ॥
৩৬৮ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
খণ্ডিতাবস্থায় অপমানিতা শ্রীমতীর :
আওত পর- বঞ্চক শঠ
নগর শতঘরিয়] |
রমণীপদ- যাবক পরি-
সর বক্ষসি ধরিয়া ॥ * *
যাযা ছূতি বারহ বারহ
নিয়ড়ে জনি আওয়ে!
এছন বাণী শুনি তৈখনি
শশিশেখর ধাওয়ে ॥
অসুয্পা £ প্রতিপক্ষ-বিষয়ে দে, যেমন__
শুন মাধব, কোন কলাবতি সোই।
প্রেম হেম গহি আপন রঙ দেই
এ হেন সাজায়লি তোই ॥
অথবা,
ধরণী জন্মিল এথ। কি পুণ্য করিয়!।
মোর বন্ধু যায় যাতে নাচিয়। নাচিয়] ॥
নৃপুর হৈয়াছে সোন। কি পুণ্য করিয়]।
বন্ধুর চরণে যায় বাজিয়! বাজিয়] ॥
বনমালা হৈল পুষ্প কি পুণ্য করিয়]।
বন্ধুর বুকেতে যায় ছুলিয় ছুলিয়] ॥
মূরলী হইল বাশ কি পুণ্য করিয়।
বাজে ও-অধরামৃত খাইয়। খাইয়া ॥| ইত্যাদি
চাপল : চিত্তের লঘুত1, গাভীর্ষের অভাব। প্রণয়ব্যাকুল অবস্থায় এই
সঞ্চারীর উদ্ভব। তু” চরিতামৃত--“উঠিল ভাব চাপল, মন হৈল চঞ্চল, ভাবের
গতি বুঝন না য়ায় ।” যেমন-__ .
“তুহারি হৃদয় অধিদেবী।
তাক চরণ যাউ সেবি ॥
যো! যাবক তুয়া অঙ্গ।
ততছি' করহ পুন রঙ্গ ॥ »
মধুররসবৈচিত্রী ৩৬৯
অথবা,
“অধরে মুরলী যব ধরু বনমালী ।
ফোই কবরী ধনি বাদ্ধি শিঙারি ।।”
নিদ্রাঃ চিত্তের নিমীলিতাবস্থা, “ন প্রবুদ্ধাং ন স্প্তাম্” (কালিদাস )।
চললহি মন্দিরে নওল কিশোরি।
হেরইতে হরি-মুখ অলক বিলোচন
চেতন-রতন চোরায়লি গোরী ॥
অথবা,
হরি হরি, অব ছু শ্তামল গোরি |
ছু ক পরশ রভ- -সে ছুহ' মুরছিত
স্থতল হিয়ে হিয়ে জোরি |
বিরহে, যথ1__
ঝর ঝর লোচনে শশিমৃখী রোই।
অলখিতে আওল লখই ন কোই ॥
সহচরিগণ মেলি শেজ বিছাই ।
অলসে অবশ ধনি স্থতলি তাই ॥
কুপ্ডি $ পূর্ণনিজ্ঞাবস্থায় স্বপ্রদর্শন £
রজনী শাওন ঘন ঘন দেয়! গরজন
রিমঝিম শবদে বরিষে।
পালক্কে শয়ান রঙ্গে বিগলিত চীর অঙ্গে
নিন্দ যাই মনের হরিষে ॥
শিখরে শিখ €-রোল মত্ত-দাদুরী-বোল
কোইল কুরে কুতৃহলে।
ঝিঞ্চা ঝিনিকি বাজে ডানুকী সে গরজে
স্বপন দেখিন্থ হেনকালে |॥**"
_জ্ঞানদাস।
প্রনেধ £ জাগরণ। উদ্ধত পদের উপসংহারে । যেমন--
পরশ করিতে রস উপজিল
জাগিয়। হইলু হারা ॥
৪
৩৭০ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
তু” রবীন্্নাথ__
“জেগে দেখি আমার আখি
আখির জলে গেছে ভেসে ।”
উল্লিখিত সঞ্চারীগুলির “উৎপত্তি” “সন্ধি” “শবলতা? এবং "শান্তি এই চারপ্রকার
অবস্থাও আলংকারিকের1! লক্ষ্য করেছেন। কোনো স্থায়ীভাবের অবস্থায়
কোনে সঞ্চারীর উদ্ভবে উৎপভি”। ছুই সজাতীয় অথব। বিজাতীয় সঞ্চারীর
মিলনে “ভাবসন্ধি৭। কয়েকটি সঞ্চারীর উত্তরোত্তর প্রকাশ, যাতে একটি ভাবের
সমাপ্তি না ঘটতে ঘটতে অন্যটি তার উপর এসে পড়ায় সংঘর্ষ বা বৈচিত্রোর সি
হয়, তাকে বল। হয় “ভাবশাবল্য'। ভাবের সমাপ্তিতে 'শান্তি। মহাপ্রভুর
দিব্যোন্মাদ অবস্থায় এরকম সন্ধি-শবলতার বিষয় উত্থাপন ও বর্ণন করেছেন
কষ্দ্দাস কবিরাজ ।
* নান। ভাবের প্রাবলা হেল সদ্ধি শাবল্য
ভাবে ভাবে হৈল মহারণ।
উৎস্থুক্য চাপল্য দন্ত রোযষামর্য আদি সেম্ত
প্রেমোন্মাদ মভার কারণ ॥
মত্তগজ ভাব্গণ প্রভুর দেহ ইচ্ষুবন
গজযুদ্ধে বনের দলন।
শৃ্গাররস-বিভাগ
পূর্ব পূর্ব অলংকারশাস্ত্রে বণিত শৃঙ্গাররসকে শ্রাপাদ রূপগোস্বামী 'জ্জল+
বা “মধুর আখ্যা দিয়েছেন। উজ্জল শব্দটি শূঙ্গারের ভরত-প্রদত্ত নিশেষণ
থেকে নেওয়া । শৃঙ্গারের ছুই বিভাব£ সম্ভোগ (অর্থাৎ মিলন) এবং
বিপ্রলভ্ভ (অর্থাৎ বিচ্ছেদ )। আস্তোগ-শৃঙ্গারকে শ্রীবূপ প্রথমতঃ দু'ভাগে
বিভক্ত করেছেন। মুখ্য এনং গৌপ। মুখ্য সম্ভোগ হ'ল পরিস্ফুট জাগ্রৎ এবং
সচেতন অবস্থার । গৌণ সম্ভোগ হ'ল এক অদ্ভুত বিচিত্র ম্বপ্লাবস্থার | এ
্বপ্রাবস্থা লৌকিকের মত নয়। অলৌকিক অপ্রারুত ভাবাবস্থা। মুখ্য এবং
গৌণ সম্ভোগ প্রত্যেকে চার ভাগে বিভক্ত-_সংক্ষিপ্ত, সংকীর্ণ, সম্পন্ন এবং
সমৃদ্ধিমান। প্রচলিত অনংকারশাস্্ব থেকে এখানে এই হ'ল বিশেষ ।
বিপ্রলম্ত-শূঙ্গার প্রচলিত অলংকার-শাস্ত্রে চারটি' পর্যায়ে বিভক্ত: পৃবরাগ,
মান, প্রবাস এবং করুণ। শ্রীরূপ এগুলির মধ্যে 'করুণ'কে বর্জন ক'রে ভার
জায়গায় “প্রেমবৈচিত্ত্য'কে স্থাপন করেছেন। করুণে নাগ্ক-নায়িকার একজন
মুত হন। : অবশ্য, চিরতরে মৃত্যু বর্ণনার নিয়ম অলংকারশাস্থে ন! থাকায় পরে
পুনর্জন্ম ও দেখানে? হয়। রাধাকৃষ্ণপক্ষে এরকম মৃত্যুবর্ণনার অসম্ভাব্যতা দেখে
এবং সেই সঙ্গে পরকীয়। প্রীতির একটি অনিবার্ধ বাশ্তব অবস্থার বিষয় উপলব্ধি
কঃরে শ্রীরূপ করুণের স্থানে নৃতন পর্যায়বিভাগ “প্রেমবৈচি ৪" নির্ধারণ করলেন ।
পূর্বরাগের দশ দশার শেষটি “মৃত্যু” ব'লে অভিহিত হ'লেও মৃত্যুর চেষ্টা,
“মৃত্যুবৎ"-রূপে বর্ণনা কর! হয়েছে ।
এখন শুঙ্গাবের বিভাগ-বৈচিত্র। যথামভব দৃষ্টান্তের ছার] বণিত হচ্ছে।
ক. মুখ্যসস্ভোগ £
দর্শনালিঙনাদীনামালুকৃল্যান্সিষেবয়] |
যুনোরুলাসমারোহন্ ভাবঃ সভোগ ঈর্ধতে ॥
নায়ক-নায়িকার স্খতাৎপর্ধময় দর্শন-আলিঙ্গন-চুহ্বনাদিযুক্ত যে মিলিতা বস্থা। তাই
হ'ল সভোষ-শূঙ্গারের বিষয়। এর মধ্যে মুখ্যস্তোগ হ'ল নায়ক-নায়িকার
পরস্পর জাগ্রৎ ও ইন্্িয়-মন-বুদ্ধি নিয়ে সম্পূর্ণ সঙ্ঞান অবস্থার। মূখ্য সম্ভোগ
চার ভাগে বিভক্ত |
১. সংক্ষিগু-পূর্বরাগান্তে নায়ক-নারিকার লজ্জা-সম্রমের বাধাহেতু
চকিত চুম্বনালিঙ্গন পর্যন্ত যে ব্যাপার তা হ'ল সংক্ষিপ্ত । যেমন-_
ত৭২
বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
যব কাঙ্গ নিয়ড়ে যাই কিছু বোলি।
লাজে কমলমুখী রহু মুখ মোড়ি ॥
আরতিল নাহ বিনয় বেরি বেরি।
ধনি মুখঠাদে আধ আচল দেলি ॥
রাধ! কান্থক পহিল আলাপ।
মনমথ মাঝে মন্ত্র করু জাপ |
বাহু পদারল গোকুলনাহ।
আছইতে আশ না করে নিরবাহ ॥
তুখিল মনোরথ ন। পূরয়ে আশ।
চান্দবকল। নহে তিমির বিনাশ ॥
তাবে বিভোর পছ' লু লু হাস।
রাই শিথিল মুখ বহ নিশোয়াস ॥
পরশিতে চিবুক নয়নে ভেল রঙ্গ।
জঞানদাল কহ উলসিত অঙ্গ ॥
২ সংকীর্ণ_নায়কের পূর্বকৃত উপেক্ষা) ব! প্রবঞ্চনার পর অর্থাৎ মানাদির
পর যে মিলন । এতে চুম্বনালিঙনের মাধূর্যের সঙ্গে বঞ্চনার্দির স্মৃতির জালা
মিশ্রিত থাকে । ফলে এ মিলনও বাঁধাহীন পূর্ণ মিলন হয় না। যেমন-_
নিজ অপরাধ মানি যব মাধব
কোরে অগোরল ধাব।
সরল বিরসময়ী ইঙ্গিতে রসবতী
অসমতি সমতি বুঝাব ॥
রাই কি করব নৈরাশে।
মান জলদ সঞ্েঃ নিকসয়ে মুখশশী
কানুক দীঘ নিশাসে ||
কনয়াঁচলরুচ উচকুচচূচুকে
সরসহি পরশই নাহ।
মানক লেশ- শেষ-রস-স্চক
আধ-মুদ্িত দিঠি চাহ ॥
অধর স্থধারস পিবইতে যব ধনি
বঙ্কিম করু মুখ আধ] ।
খ্্াররস-বিভাগ ৩৭ও
জগদানন্্ ভণ- তবহু দূরে গেও
হরিমন-মনসিজ-বাধ। ॥
৩. সম্পল্প-_-অদূর প্রবাসের পর ব্যাকুলিত অবস্থায় পরস্পর যে মিলন তা৷
হ'ল সম্পন্ন। প্রেমবৈচিত্যের পর বা ভাবী ও ভবন্ বিরহের পরযৃহূর্তে যদি
মিলন হয়ে যায় তাহ'লে তাও মম্পঙ্গের অন্তর্গত হবে। তা ছাড়া বিরহাবস্থায়
ভাবোল্লাসময় মানস-কল্পিত মিলনও সম্পন্নের অন্তর্গত হবে। রূঢ় মহাভাবের
অন্তর্গত চিন্তাধিক্জাত ভাব-সাক্ষাৎকার অতিশয় চমৎকারজনক | প্রতি-
বন্ধকতার ব। বিরহের তারতম্যান্ছসারে মিলন গাঢ় থেকে প্রগাঢতম হবে । সম্পন্গ
সভ্ভোগের ছুই রীতি । আগতি বাঁ প্রবাস থেকে আগমন এবং প্রাছুর্ভাব বা
আকস্মিক আবির্ভাব । যেমন, চিরায়িত। শ্রীমতীর কৃষ্ণমীপে আগমনে £
দু" মুখ হেরইতে ছুহা' ভেল ধন্দ।
রাই কহে তমাল মাধব কহে চন্দ ॥
চীত পুতলি যেন রহু ছু দেহ।
ন। জানিয়ে প্রেম কেমন অছু নেহ ॥
এ সথি দেখ দেখি দুই ক বিচার ।
ঠামহি কেহ লখই নাহি পার॥
ধনি কহে কাননময় দেখি শ্যাম।
সে। কিয়ে গুণব মঝু পরিণাম ॥
চমকি চমকি উঠে নাগর কান।
প্রতি তরুতলে দেখে রাই সমান ॥
ধোহে দৌহে যব নিচয় করি জান।
দুছ'ক হৃদয়ে পৈঠল পাচবাণ ॥
দ্রোহে ছু মিলল বাহু পসারি।
দোহ স্থখে.মাতল সব সুকুমারি ॥** - রায়শেধর।
অপিচ, বিরহিত গোপীসমীপে কৃষ্ণের অতকিত আবির্ভাব, ভাগবতে £
তাসামাবিরভূচ্ছোরিঃ ম্ময়মানমুখাদ্থুজঃ |
পীতাম্বরধরঃ শ্রপ্বী সাক্ষান্মন্মথমন্মথঃ ॥
আঁকশ্মিক ভাব-পাক্ষাৎকার, যথা
আজু রজনী হাম ভাগে পোহায়লু
পেখলু' পিয়া মুখ-চন্দ!। ইত্যাদি ৩১৪ পৃষ্ঠায় উদ্ধত ।
৩৭৪ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
৪, সম্মদ্ধিমান পরাধীনতার জন্য যেখানে নায়ক অথব! নায়িকাকে দূর
প্রবাসে কালযাপন করতে হয়, সে-অবস্থার স্থছুর্লভ মিলন হ'ল সমৃদ্ধিমান্
সভ্ভোগের অন্তর্গত। এ মিলন প্রবাসান্ত হতে পারে, আবার প্রবাস-মধ্যবর্তাঁ
আকম্মিক মানস-সাক্ষাৎকারও হতে পারে। এই মিলন যেমন প্রেমের দ্িকৃ
থেকে আশ্চর্য রমণীয়, তেমনি এতে শৃঙ্গারের যাবতীয় উপচারের পূর্ণ প্রকাশ
ঘটে। যেমন-_
অধর-স্থধারসে লুবধল মানস
তন্থ পরিরভ্তণ চাহ |
মুখ অবলোকনে অনিমিখ লোচনে
কৈছে হোয়ত নিরবাহ !।
রাধা-মাধব প্রেম ।
ছুলহ রতন জন্গ দরখন মানই
পরশন গাঠিক হেম ॥
আনন্দ-নীরে নয়ন যব ঝাঁপযে
তবহি পসারিতে বাহ।
কাপয়ে ঘন ঘন কৈছে করব পুন
স্থরত-জলধি-অবগাহ্ ॥
মধুরিম হাস- স্থধারস বরিখনে
গরদগদ্দ রোধয়ে ভাষ।
চিরদিনে মিলন লাখণ্ডণ নিধুধন
'কহতহি গোবিন্দ্রাস ॥
অপিচ,
কি কহব রে সখি আনন্দ ওর । '
চিরদিনে মাধব মন্দির মোর ॥
পাপ স্থধাকর যত ছুথ দেল।
পিয়। মুখ হেরইতে তত সুখ ভেল ॥
আচর ভরিয়। যদি মহানিধি পাই ।
তভে! হন পিয়া! দূরদেশ ন পঠাই ॥ **
| -_বিষ্যাপতি
শৃঙ্গাররস-বিভাগ ৩৭৫
অথবা,
বহু দিন পরে বধুয়া এলে।
দেখ। না হইত পরাণ গেলে ॥** --চণ্ীদাস।
প্রবল বিরহমধ্যে প্রিয়ের মৃতি-চিত্রার্দি টা প্রত্যক্ষ মিলন-অন্ভবেও
সমৃদ্ধিমান্ সম্ভোগ হবে।
খ. শৌণ সম্ভোগ-স্বপ্রযোগে প্রত্যক্ষবৎ সম্মিলন । এরও সংক্ষিপ্ধ
সংকীর্ণাদ্দি চার বিভাগ । ভক্ত বৈষ্ণবগণ এ-মিলনকেও সত্য বলেই অনুভব
করেন, কারণ, কৃষ্ণেচ্ছায় শ্রীরাধা! অঞ্ব1 তদনুসারে ভক্ত এইভাবে অভীষ্ট পৃতি
লাভ ক'রে থাকেন । যেমন-_
আজ হাম স্বপনে সমুখে এক মুনিবর
হেরি করলু' পরণাম।
সো মোহে কহল অচিরে তুয়! মঙ্গল
পূরব মানস-কাম ॥
ইহ্ পুন ক জনি কোই।
রজনীক শেষ সময় অরুণোদয়
স্বপন বিফল নাহি হোই ॥
আওব কানু পুনহ কিয়ে ব্রজমাহ।
এছে মন্হি যব কেল।
তবনু একজন ফুকরিয়ে আওত
তত বিহি-ইঙ্গিত ভেল ॥
ফুরয়ে বাম- নয়ন ভূক্ত ঘন ঘন
হোওত মনহি উল্লাপ।
এছন স্থলক্ষণ আন নহত পুন
ভণ ঘনশ্বামর দাস॥
অপিচ,
চিরদিনে মীলল রাইক পাস।
উঠই ন। পারই বিরহ হুতাঁশ ॥
বাম পাণি দেই দক্ষিণ ধারে ।
চেতন হোয়ল হাতকৃু ভারে ॥
৩৭৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
আখি মেলি হেরি উঠই ন! পার।
নাগর লেয়ল কোরে আপনার ॥
বিরহিনি বামে করি বৈঠল কান।
বিরছিনি মানল স্বপন সমান ॥
পূরল যত মরম অভিলাষ |
কছু নাহি বুঝল বলরামদাস ॥
এ-প্রসঙ্গে বাৎসল্যরসের বিষয় মাত্র তুলনায় উল্লেখ কর! যেতে পারে । মবদীপে
অবস্থান করেই শচীদেবী নীলাচলাবস্থিত নিমাইয়ের সাক্ষাৎ পেতেন ।
শ্রীচৈতন্তের আশ্বাসবাক্য ছিল যে, শচীদেবী যখন্ই ইচ্ছা করবেন নিমাইকে
কাছে পাবেন, এ-বিষয়ে বাস্দদেব ঘোষ বিরচিত নিম্নলিখিত অংশ জষ্টব্য :
আন্দিকার স্বপনের কথা! শুন লে মালিনী সই
নিমাই আসিয়াছিল ঘরে।
আঙিনাতে দ্রাড়াইয়' গৃহপানে নেহারিয়।
ম] বলিয়া ডাকিল আমারে ॥
ঘরেত স্থৃতিয়াছিলাম অচেতনে বাহির হেলাম
নিমায়ের গলার সাড়। পাঞা |
আমার চরণের ধৃলি নিল নিমাই শিরে তুলি
পুন কাদে গলায় ধরিয়]॥ ইত্যাদি ।
দিবা-ন্বপ্নবৎ সাক্ষাৎকার, নিশা-ন্বপ্পে দর্শনদান প্রভৃতির যূল্য বৈষ্ণবের কাছে
অপরিসীম ।
সভোগ-শুজারের জ্ঞাপক অস্ুভাব হিসেবে শ্রীরূপ নিষ্ললিখিত কয়েকটির
উল্লেখ করেছেন : সন্দর্শন, জল্প (কৌতুকালাপ ), স্পর্শ, পথরোধন, রাস,
বৃন্দাবনক্রীড়া, জলকেলি, নৌবিলাস, লীলাচৌর্য, দানলীল।, আত্মগোপন-ক্রীড়া,
মধুপান, বধৃবেশ-ধারণ, কপটনিত্রা, দ্যুতক্রীড়া, ' বন্তাকর্ষণ, চুত্বন, আলিঙ্গন,
নখাঘাত, অধর-সথধাপান, সম্প্রয়োগ। পদকর্তা মহাজনদের রচনায় এগুলি
যথাসম্ভব পরিষ্ফুট করা হয়েছে। শ্রীরূপ পূর্ব পূর্ব বিদপ্ধ অলংকারিকর্দের সঙ্গে
একমত হয়ে নির্দেশ দিয়েছেন যে এগুলির মধ্যে সম্প্রয়োগ (প্রকৃত সংগম )
অপেক্ষা! অন্ান্ত অন্থুভাবগুলিই অধিকতর মনোহারী ।
শৃঙ্জাররস-বিভাগ ৩৭৭
4 বিপ্রলম্ত-শৃগার ॥
সভোগের পুষ্টিকারক এই বিপ্রলন্তে পূর্বে-মিলিত অথবা! অ-মিলিত নায়ক-
নায়িকার অভীপ্সিত মিলন না৷ পাওয়ার মনোভাব বিঙ্লেষিত হুচ্ছে। বিচ্ছেদই
মিলনকে পরিপুষ্ট পূর্ণাঙ্গ ক'রে তোলে । পূর্বরাগ, মান, এবং প্রবাস প্রেমবৈচিত্ত্য,
বিপ্রলম্তের এই মুখ্য চার ভেদ এবং এগুলির আভ্যন্তরীণ বৈচিত্র্য উজ্জল নীলমশি
অনুসারে প্রদত্ত হচ্ছে।
ক. ॥ পূর্বরাগ ॥
রতির্যা সংগমাৎ পূর্বং দর্শনশ্রবণার্দিজা।
তয়োক্ষনীলতি প্রাজ্ঞৈ পূর্বরাগঃ স উচাতে ॥
প্রকৃত মিলনের পূর্বে পরস্পর দর্শন প্রস্তুতি থেকে ভাত নায়ক-নায়িকার সমুচিত
সঞ্চারীভাব ও অন্ুভাবের দ্বার! পুষ্ট মিলনেচ্ছাময় যে রতি, তাকেই বলে
পূর্বরাগ।
দর্শন প্রত্যক্ষ হতে পারে, চিত্রগত এবং স্বপ্রগতও হতে পারে । আর শ্রবণ
ঘটতে পারে দূতীমুখে, বন্দিমুখে, সখীমুখে অথবা সংগীতার্দি থেকে । কৃষ্ণের
মুরলীধ্বনি শ্রবণে রাধার পূর্বরাগোদয় বৈষ্ণব কবিদের একটি প্রিয় প্রসঙ্গ।
আবার কেবল নাম-শ্রবণে পূর্বরাগের ব্যাপারটি চৈতন্য-পরবর্তী বৈষ্ণব রসিক-
সমাজে সমাদর লাভ করেছে। উদাহরণসমূহ :
(১) মহাপ্রভুর প্রত্যক্ষ দর্শন, যেমন, চৈতন্ত-ভাগবত £
কানাগ্ডির নাটশাল1 নামে এক গ্রাম।
গয়া হৈতে আসিতে দেখিলু' সেই স্থান ॥
তমাল-শ্টামল এক বালক স্থন্দর |
নবগ্ুঞা। সহিত কুস্তল মনোহর ॥|
বিচিত্র মস্ুরপুচ্ছ শোভে তছুপরি |
ঝলমল মণিগণ-_লখিতে না পারি |
হাথেতে মোহন বংশী পরম-সুন্দর |
চরণে নৃপুর শোভে অতি মনোহর |
নীলন্তস্ত জিনি ভূজে রতু-অলংকার ।
শ্রীবংস কৌস্তভ বক্ষে শোভে মণিহার ॥
কি কহুব সে পীতধটার পরিধান ।
মকর-কুগডল শোভে কমল-নয়ান ॥
৩৭৮ বৈষব-রস-প্রকাশ
আমার সমীপে আইলা হাসিতে হাসিতে ।
আমা আলিঙ্গিয়৷ পলাইল কোন্ ভিতে ॥
(২) শ্রমতীর প্রত্যক্ষ, যথা__
এ সখি পেখলু এক অপরূপ ।
স্থনইত মানবি সপন সরূপ ॥
কমল জুগল পর চাদক মাল।
তা পর উপজল তরুণ তমাল ॥
তা পর বেঢল বিজুরিলত1।
কালিন্দী তীর ধীর চলি জাতা | * *
এ সখি রঙগিণি কহল নিশান।
হেরইত পুনি হযে হরল গেয়ান ॥ _বিদ্যাপতি।
(৩) চিত্রে দর্শন যথা-_
হম সে অবলা . হৃদয়ে অথলা
ভাল মন্দ নাহি জানি।
বিরলে বসিয়' পটেতে লিখিয়।
বিশাখ। দেখাল আনি |. _চত্ীদাস।,
(৪) স্বপ্নে দর্শন, যথা
মনের মরম কথা তোমারে কহিয়ে হেথা
শুন শ্রন পরাণের সই ।
স্বপনে দেখিলু যে হ্যটামল বরণ দে
তাহা বিন্থ আর কারে। নই ॥ '*“জ্ঞানদাস।
(৫) নামশ্রবণে পূর্বরাগ, যথা
কে বা শুনাইলে শ্যাম নাম ।
কানের ভিতর দিয় মরমে পশিল গো
আকুল করিল মোর প্রাণ।
ন। জীনি কতেক মধু শ্যামনামে আছে গো"
_ চণ্তীদাস।
(৬) মুরলী শ্রবণে, ষথা-_
কদস্বের বন হৈতে কিবা শব আচম্বিতে
আমিয়] পশিল মোর কানে""" _যুছুনন্দন ॥
শৃঙ্গাররস-বিভাগ ৩৭৯
কে না বাশি বাএ বড়ায়ি কালিনী নই কুলে।
কে ন। বাশি বাএ বড়ায়ি এ গোঠ গোকুলে ।
আকুল শরীর মোর বেআকুল মন।
বাশীর শবদে মো! আউলাইলৌ রাম্ধন ॥
কে না বাশি বাএ বড়ায়ি সেনা কোন জন1।
দাসী হজ তার পাঁএ নিশিবে! আপনা |: - চণ্তীদাস।
পূর্বরাগাবস্থার সঞ্চারী ভাব হ'ল- ব্যাধি, শঙ্কা, অস্থয়া, শ্রম, ক্লান্তি, নিরবে,
ওৎস্থক্য, দৈন্যা, চিন্তা, নিজ, জাগরণ, বিষাদ, জড়তা, উন্মা্) মোহ এবং স্ৃত্যু |
কৃষ্ণ-বিষয়ক রতির সাঁধারণী, সমগ্রস1 ও সমর্থার অনুযায়ী পূর্বরাগেও সাধারণ,
সমগ্ুস এদ্রং প্রৌঢচি এই তিন শ্রেণীবিভাগ কর] যায়। এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রো
পূর্বরাগে দশটি প্রধান সঞ্চারীভাব প্রবল হয়ে 'দশা'রূপ লাভ করে। এগুলি
হ'ল-_লালসা, উদ্বেগ, জাগরণ, তানব ( কৃশত। ), জড়িমা, বৈয়গ্র্য ( ব্যগ্রতা ),
ব্যাধি, উন্মা্, মোহ এবং মৃত্যু। সমগ্ুস পূর্বরাগের দশ দশা শ্বল্প ভিন্ন,
যেমন, অভিলাষ, চিন্তা, স্মৃতি, গুণকীর্তন, উদ্বেগ, বিলাপ, উন্মাদ, ব্যাধি,
জড়তা ও মৃত্যু । এ থেকে প্রমাণ হয় ষে প্রো পূর্বরাগ থেকে সমঞ্জস নিষ্-
মানের । সাধারণ আরও নিয়মানের, কারণ, এর দশার সংখ্যা মাত্র ছ'টি, তাও
কোমলভাবে অন্ুস্ূত হয় মান্র। এখন প্রৌঢ় পূর্বরাগের দশ দরশার স্বরূপ
প্রদবশিত হচ্ছে :
১. জালসা কৃষ্ণের দর্শনাদি প্রাপ্ডি-বিষয়ে তীব্র লোভ, গাঢ় তৃষ্ণা,
যেমন--
অবনত আনন কএ হম রহলিহু
বারল লোচন-চোর ।
পিয়। মুখরুচি পিবএ ধাওল
জনি সেচাদ্দ চকোর ॥
ততহ সঞ্জে হঠে হটি মোঞ্ে আনল
ধএল চরণ রাখি ।
মাতল মধুপ উড়ই ন পারএ
তইঅও পসারএ পাখি ।
মাধবে বোললি মধুর বাণী
তা স্থনি মুছু মোঞ্ে কান ।
৩৮৬ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
তাহি অবসর ঠাম বাম ভেল
ধরি ধন্থ পাচ বাণ॥
তঙ্ছ-পসেবে পসাহনি ভাসলি
পুলক তৈসন জাঞ।
চুনি চুনি ভএ কাচুঅ ফাটলি
বাহু বলয় ভাগু |
_বিদ্াপতি।
২. উদ্বেগ_মনের চাঞ্চল্য । এর অন্থভাব হ'ল দীর্ঘশ্বাস, চিস্তা, অশ্রু,
বিবর্ণতা', স্বেদ্র প্রভৃতি । যেমন,
ঘরের বাহিরে দণ্ডে শতবার
তিলে তিলে আইসে যায়।
মন উচাটন নিশ্বাস সঘন
কদশ্ব-কাননে চায় ॥
রাই কেনে ব1 এমন হৈল।
গুরু দুরুজন ভয় নাহি মন
কোথা বা কি দেব! পাইল ॥
সদাই চঞ্চল বসন অঞ্চল
সংবরণ নাহি করে।
বনি থাকি থাকি উঠয়ে চমকি
ভূষণ খসাঞা পরে ॥** _ চণ্তীদাস।
৩. জাগরণ, যেমন-_
তুহ মনমোহন কি কহব তোয়।
মুগ্ডধিনী রমণী তোহারি লাগি রোয় ॥
নিশি দ্বিশি জাগি জপয়ে তুয়া নাম।
থরথরি কাপি পড়য়ে মোই ঠাম ॥
যামিনী আধ অধিক যব হোয়।
বিগলিত লাজে উঠই তব রোয় ॥
সখীগণ যত পরবোধয়ে তায়।
তাঁপিনী তাপে ততহি নাহি ভায় ॥ ** __-কবিশেখর ৷
পর্দটিতে নীলাচলবাসী মহা প্রভৃব বিরহচত্তররের ছাঁয়। পড়েছে।
শৃঙ্গাররস-বিভাঁগ ৩৮১
৪ তানব, যেমন,
* * মাধব, শুন শুন বচন হমারি।
তুয়। গুণে হুন্দরি অতি ভেল ছুবরি,
গুণি গুণি প্রেম তোহারি ॥
ধরণী ধরিয়। ধনী কত বেরি বৈঠই
পুন তহি উঠই ন পার]।
কাতরদ্িঠিকরি . চৌদিশহেরি হেরি
নয়নে গলয়ে জলধার] ॥
তোহোরি বিরর্থেদিন খেনে খেনে তন খিন
চৌদশি চাদ সমান |
ভণয়ে বিষ্ভাপতি শিবসিংহ নরপতি
লছিম। দেবী পরমাঁণ ॥
৫. জড়তা, যেমন-_
রাধার কি হৈল অন্তরে বেখা।
বসিয়া বিরলে থাকয়ে একলে
ন। শুনে কাহার কথ ॥
সদাই ধেয়ানে চাহে মেঘপানে
ন। চলে নয়ানতার। ॥
বিরতি আছারে রাঙা বাস পরে
যেমত যোগিনী পারা |". _ চগ্রীদান।
অপিচ,
* * গুরুজন-বচন বধির সম মানই
আন কহই শুন আন।
পরিজন বচনে মৃগধী সম হাসই
গোবিন্দদাস পরমাণ ॥
৬. ৈষ্বগ্র্য-_অন্তর-নিরুদ্ধ ভাবের বিক্ষোভ-জন্য অসহিষ্ণু অবস্থ! £
রূপ লাগি আখি ঝুরে গুণে মন ভোর।
প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর ॥
হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে।
পরাণ পিরিতি লাগি থির নাহি বান্ধে || * *
৩৮২ বৈষ্ণব-রস-গ্রকাশ
গুরু-গরবিত-মাঝে রহি সবীসঙ্গে ।
পুলকে পূরয়ে তথ শ্যাম-পরসঙ্গে ॥
পুলক ঢাকিতে করু কত পরকার।
* নয়নের ধার মোর বহে অনিবার ॥... _জ্ঞানদাস।
৪. ব্যাধি, যেমন-_
সোনার বরণ দেহ।
পাওুর ভে গেল সেহ ॥
গলয়ে সঘনে লোর।
মুরছে সথিক কোর ॥
দার £*্লজরে |
সে মিনার হরে॥।
জীবনে নাহিক আশ।
কহয়ে এজ্ঞানদাস ॥
৮. উন্মাদ (ভ্রাস্তির অবস্থা )। নিম্নলিখিত পর্দে একত্র তানব, জড়িম,
ব্যাধি ও উন্মাদের প্রকাশ £
( মাধব ) ছুবরী পেখলু' তাই।
চৌদশি-টাদ জঙ্ু অন্থখন খীয়ত
এছন জীবই রাই ॥
নিয়ড়ে সখীগণ বচন যে পুছত
উতর না দেয়ই রাধ|।
হা হুরি হা হরি কহতহি অন্গথন
তুয়া মুখ হেরইতে সাধ। ॥
সরসহি মলয়জ- পঙ্কহি পঙ্কজ
পরশে মানয়ে জন্থ আগি।
কবহি ধরণি-শয়নে তন্তু চমকিত
হৃদি-মাহ]| মনমথ জাগি ॥
মন্দ মলয়ানিল বিষসম মানই
মুরছই পিককুল-রাবে।
মালতি-মাল- পরশে তনু কম্পিত
ভূপতি কহ ইহ ভাবে ॥
শ্ল্াররস-বিভাগ ৩৮৩
"অথবা,
নিজ-কর-পল্লব অঙ্গে না পরশই
শঙ্কই পঙ্কজ-ভানে।
মুকুর-তলে নিজ মুখ হেরি স্থন্দরি
শশি বলি হরই গেয়ানে. |": . _কবিশেখর।
৯, মোহু-__যুছণয় নিশলতা, ভূপতন প্রভৃতি । যেমন-_
তেজল গুক্লকূল-গৌরব লাজ ।
তেজল গৃহ গৃহপতিক সমাজ ॥
তেজল লোঁক নগর ঘর-বসতি।
তেজল ভূষণ অশন-রস-পিরিতি ॥
তেজল হষিক-করণ অভিলাষ ।
তেজল বদনে অমিয়ামর় ভাষ ॥
তেজল নয়নে নিমিষ অবিরাম ।
তেজল কিশলর-শয়নক নাম ||
শুন শুন বজর-কঠিন গীতবাস।
তেজল অব ধনি জীবন-আশ ॥
তেজল বিরহিণি সবহু গেয়ান।
নবমী দশ! সভে করু অনুমান ॥
অব যদ্দি যাই করহ অবসাদ ।
মাধব তোহারি চরণ ধরি কাদ ॥
১০* স্বৃত্যু- মৃত্যুর উদ্যম মাত্র বুঝতে হবে, যেমন-_
ধাহা পহু অরুণ চরণে চলি যাত।
তাহা তাহ! ধরণি হইয়ে মঝু গাত ॥
যে। সরোবরে পহ' নিতি নিতি নাহ।
হাম ভরি সলিল হোই তথি মাহ ॥
এ সখি বিরহ-মরণ নিরাদন্দ।
এছেঁ মিলয়ে যব গোকুলচন্দ ॥
যে! দ্রপণে পু নিজ মুখ চাহ।
- মঞ্জু অঙ্গ জোতি হোই তথি মাহ ॥
৩৮৪ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
যো বীজনে পু" বীজই গাত।
মঝু অঙ্গ তাহি হোই মু বাত।
যাহ! পছ' ভরমই জলধর শ্যাম।
মঝু অঙ্গ গগন হোই তছু ঠাম ॥
-গোধিগ্মদাস কই কাঞ্চন গোরি।
সে! মরকত-তঙ্গ তোহে কিয়ে ছোড়ি ॥
সমঞসাদির পূর্বরাগের চিন্তা, শ্বতি, অভিলাষ প্রভৃতির দৃষ্টান্ত পূর্বনিিষ্ট অন্থভাক
মঞ্চরীর বর্ণনেই দেওয়] হয়েছে । অতিরিক্ত গুণকীর্তন, মাল্যার্পণ, লেখ্যপ্রেনণ।
খ. ॥মান।।
দম্পতেোাব একক্র সতোরপ্যন্থরক্তয়োঃ |
স্বাভীষ্টাঙ্লেষবীক্ষারদিনিরোধী মান উচ্যতে ॥
নায়ক-নায়িক। পরস্পর অঙ্ধুরক্ত এবং নিকটে অবস্থিত হওয়া সত্বেও যে বিশেষ
মানসিক অবস্থ। উভয়ের মিলনে বাধ! জন্মায় তা-ই হ'ল মান । প্রণয় ন। থাকলে
মানের কোনে। প্রশ্ন ওঠে না| নির্বেদ, একক], অমর্য, অস্থয়াঃ গর্ব, অবহিথ। (ভাব-
গোপন ) প্রভৃতি এতে সঞ্চারীর কাঁজ করে। নায়কেরও অভিমান হতে পারে
( যেমন শ্বপ্পদোষে অথব। বিনাদোষে ভসনার ক্ষেত্রে ), কিন্ত নায়িকার মানই
সমধিক বৈচিত্র্য স্ষ্টি করে। অন্থুরক্ত অথচ কৃতাপরাধ নায়ক মানাবস্থায়
নায়িকাকে ভয় করবেন, আর নায়িকা পোষণ করবেন ঈর্ষা! এই হ'ল প্রণয়ের
লীলা । প্রতিপক্ষকে নায়িক। কদাপি সহ করতে পারেন না, এতে নায়কের
উপর তার গাঢ় আকর্ষণই প্রকাশ পায়।
মানের ছুই প্রকার-_সহেতু এবং নিহে তু । যথার্থ কারণ থাকলে অর্থাৎ
নায়কের ভিন্ন নায়িকার প্রতি পক্ষপাতের প্রমাণ পাওয়! গেলে সহেতু, যেমন
খণ্ডিত1 অবস্থার পর মান । আর কোনো কারণ ন। থাকলে বা ভ্রমবশতঃ কোনে
কারণ মনে মনে ভেবে নিয়ে (কারণাভাসে ) যে মান তা-ই হ'ল নিহেতু। এই
অকারণ মান প্রণয়লীলাবিলাসের একটি বিশেষ অঙ্গ, আর বৈষ্ণব মহাজনের!
ত৷ নিপুণভাবে বর্ণনা করেছেন। প্রেমের এই আশ্চর্য স্বভাবের কারণ নির্দেশ
করা যায় না। শুধু বলা যায় ষে প্রণয় স্বভাবতই কুটিলপথগামী-_“অহ্রিব
গতি: প্রেমঃ ব্বভাবকুটিল৷ ভবেৎ।* এ ছাড়া পরিমাণ হিসেবে মানেব ভিন্নরতায়
লঘু, প্রগাট, দুর্জয় প্রভৃতি আখ্য। দেওয়া যেতে পারে? প্রগাঢ় ব৷ দুর্জয় মান
ভাঙাতে অপরাধী নায়ককে প্রায়শই নায়িকার পায়ে ধরে ক্ষম। চাইতে হয়।
শৃঙ্গাররস-বিভাগ ৩৮৫
১. সহ্ছেতু মান ব! ঈর্যামান তিন প্রকারে ঘটতে পাবে £
অন্য নায়িকার সঙ্গে মিলন প্রত্যক্ষ দর্শনে-শ্রবণে, অন্ুমানে অর্থাৎ নায়কের
বেশতৃষা মুখের ভাব প্রভৃতি দেখে অথব' প্রতিপক্ষ নায়িকার দেহে নায়ক-প্রণত্ত
অলংকারাদি দেখে এবং অন্য কারো কাছ থেকে শুনে । এর মধ্যে প্রত্যক্ষের
ফলে মানের দৃষ্টান্ত হ'ল £
( সই ) মিছা নেহ তার সাথে।
মন্দিরে আছিল , আন ছলা ধরি
« বাহির হইল পথে ॥
সন্দ ভেল মনে , আমিহ তৈখনে
ঘরের বাহির হৈন্থ।
যা ভাবিল তাই দেঁখিল নয়নে
কপট বেকত পাইন ॥
বিশাখার করে কর রাখি শুঠ
সরস বারতা ভণে।
বড় পাঁপ ছিল পূরব জনমে
মরণ না হৈল কেনে ॥
যেহৌক সেহৌক আর কু তারে
আসিতে না দিবি হেথ।।
কু দেখি যদি খাইব গরল
থুচাব মনের বেথা ॥ ক্ষুদিরাম দাস
অন্নমান তিন প্রকারের হতে পারে । শ্রিয়গাত্রে খিপক্ষ-মিলন-চিঞ্ন দর্শনে
বা বিপক্ষদ্দেহে প্রিয়মিলনচিহ দর্শনে, গোত্রস্থলনে অর্থাৎ ভূল কব অন্য
নায়িকার নাম উচ্চারণে এবং প্রেমের স্বপ্রাবস্থার আচরণে ।
অসংগতি অলংকারের সাহায্যে ভোগাঙ্ক অস্থমান, যথা
নখপদ হৃদয়ে তোহারি |
অস্তর জলত হামারি |
অধ্ষহি কাজর তোর ।
বদন মলিন ভেল মোর ||
কাহে মিনতি করু কান ।
তুহু' হাম একই পরাণ ॥
ন্৫
৩৮৬ বৈষ্ব-রস-গ্রকাশ
হাম উজাগরি রাতি |
তুয়। দিঠি অরুণিম কাতি ॥
হামারি রোদন অভিলাষ ।
তুহু কহ গদগদ ভাষ ॥
সবে নহ তনু তনু সঙ্গ ।
হাম গোরি তুহু শ্টায অঙ্গ ॥
অতয়ে চলহ নিজ বাস।
কহতহি গোবিন্দদাস ॥
শুকমুখে শ্রবণেঃ যথা _
তক পর রৈয়1 শুক ফুকাবিয়।
কহয়ে আপন স্বরে।
কাহ্থরে লৈয়া চলিল ধাইয।
পদ্মা সহচরী ঘরে ॥
শুকের বচন শুনি বিনোধিনা
অরুণ যুগল আখি।
অবনত মুখে মুছুমন্দ থরে
হে গণগদ ভাখি ॥
পল্ম। সথির সঙ্গতি স্থন্দব
শ্যাম মধুকররাজ।
যৈছে রসধতা তৈছন রমিক
মোর সনে নাহি কাত |." _উদ্ধবদ্দাস।
২. নিহে তু ও কারণাভাস মান £
যমুনা সমীপ নীপ তরু হেলন
শ্যামর মুরলীক রদ্ধে।
রাধা-চন্দ্রাবলিত বিমলমুখী
গাওয়ে গীত পরবন্ধে ॥
শুনি ধনি রাই রোখে ভেল গবগর
থর থর কম্পিত অঙ্গ।
চন্দ্রাবলি বলি বংশী বাজাওত
বিলসয়ে তাকর সঙ্গ ॥
শঙ্গাররস-বিভাগ ৩৮৭
এত কহি মানে মলিন ভেল বিধুমুখ
ঢর ঢর অরুণ নয়ান।
কহতহি চপল- চরিত সঞ্জে পীরিতি
আজু হোয়ল মমাধান ॥
এখানে গোপীমুখে*চন্দ্রবলী-ধ্বনি শুনে কাবণাভাসে মান।
হের দেখসিয়। মুমলু হাপিয়।
গবাক্ষ ছুয়ারে চাই।
প্রাণনাখ সনে একত্র শয়নে
মানিনী তৈয়াছে রাই ॥
একি প্রেমের কুটিল গতি ।
নহিলে বা কেনে ছুহার মিলনে
কলহ উপদে নিত ॥
আপনার নখ- প॥ পরতেখ
(খির। নাগর উরে |
কাহ্ছ-পিঠ করি বিল] সুন্দরি
নাগর কাপিছে ভরে ॥-** _উদ্ধব্দাস।
এক্ষেত্রে নিহেতু মান । নখপদরেখা। এক্ট। উপলক্ষ মাত্র । অন্থরূ্প_
মরকত দরপণ ম্যামহদয়-মাহ।
আপন মুরতি দেখি রাই ।
গুরুয়া কোপে অধর ঘন কাপই
অরুণ নান ৬ ধাই ॥
দেখ দেখ কান্ুক রঙ্গ ।
আনহ রমণি হৃদয় করি বঞ্চই
এছন ন৷ দেখিয়ে চঙ্গ ॥***
_ প্রেম্দাপ।
আসলে এগুলি উপলক্ষ্যও নয়। মাঝে মাঝে মান করতে আপন থেকেই
মন চায় _তাই এট] উপলক্ষ্য বানিয়ে নেওয়া । নায়কের ক্ষণিক উদ্দাসীনতাও
মানের উপ্লক্ষ্য হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে মানের রাতি হবে লঘু বা
কোমল। সহেতুক মান মধ্যম স্তরের অথব' প্রায়শই দুর্জয় হয়ে থাকে । মধ্যম
মান নায়কপক্ষ থেকে পুনঃ পুনঃ কাতরোক্তির পর অথব] নায়িকা-পক্ষের আক্ষেপ
৩৮৮ নৈষব-রস-প্রকাশ -
ও শাণিত বিভ্রূপ প্রয়োগের পর শাস্ত হয়ে পড়ে । কিন্তু দুর্জয় মান নায়ক পদ্দতে
লুণ্টিত হলেও ভাঙে না । যেমন, মধ্যম মান
পহিলহি চাদ করে দ্রিল আনি ।
ঝাপল শৈলশিখরে এক পাণি ॥
অব বিপরিত ভেল সে সব কাল ।
বাসি কুন্থমে কিয়ে গাথই মাল ॥
না বোলহ সজনি, ন। বোলহ আন।
কী ফল আছয়ে ভেটব কান ॥
অন্তর বাহির সম নহ রীত।
পানি তৈল নহ গাট পিরিত ॥
হিয়া সম কুলিশ বচন মধুধার |
বিষঘট উপরে ছুধ উপহার ॥
চাতুরি বেচহ গাহক ঠাম।
গোঁপত প্রেমস্থখ ইহ পরিণাম ॥
তুহ কিয়ে শঠিনি কপটে কহ মোয়।
জ্ঞানদাস কহ সমুচিত হোর ॥
দুর্জয় মান-__
টৈছে চরণে কর- পল্লব ঠেললি
মীললি মান-ভ্জঙ্গে |
কবলে কবলে জীউ জরি যব যায়ব
তবু" দেখবি ইহ রঙে ॥
কী ইহ জিদ্দ অপার।
কে। অঙ্ছু বীর ধীব ,হাবল
পাউরি উতারব পার ॥
শামর ঝামর নলিন মলিন মুখ
বর ঝর নয়নক নীর।
পীতান্বর গলে পদহি লোটায়ল
হিয়া! কৈছে বাদ্ধলি থির |
সাধি সাঁধি ছরমী ঘরমী মহ! বিকল
ঘন ঘন দীঘ নিশাস।
শঙ্গাররস-বিভাগ ৩৮৯
মনমথ দাহ- দহনে মন ধমি গেও
রোখে চলল নিজ বাস ॥
অবিরোধি-প্রেম- পদ্থ তু" রোধলি
দৌোষ-লেশ নাহি নাহ।
বৃন্দাবন কহ নিষেধ না! মানলি
হমারি ওর নাহি চাহ।॥
মানক্ডঙগ-_নান। কারণে মানভঙ্গ ঘটে । নায়কেব কাকৃক্তি ও পাদপতন,
স্বল্প কারণে নায়িকার মানদৃষ্ে নায়কের উপেক্ষা ও মান-অবলগ্বন (তু-মান
কৈলি তো৷ কৈলি, আমরাও তোর মানে আছি রাই ), কালক্রমে মানবেগ-
শৈথিল্য । প্রচলিত সাহিতাদুষ্টে শ্রীরূপ মানভঙ্গের অন্য ছুটি কারণও নির্দেশ
করেছেন। নৈপগিক কারণে রসান্তর ঘটলে (দেমন বজ্রপাত ত্ৃকম্পন
প্রভৃতিতে ) এবং বুদ্ধিপূর্বক বসাস্তর ঘটালে ( যেমন, নায়ক বৃশ্চিকদংশন বা
অন্যবিধ আকম্মিক পীভাব ভান করলে )। নিম্নলিখিত অংশে কৃষ্ণের অকপট
'আন্মগত্য শ্রামতীর মানভঙ্গের কাবণ হয়েছে £
চাহ মুখ তুলি রাই চাহ মুখ তুলি।
নয়ান-নাচনে নাচে হিয়ার পুতলি ॥
পীত পিদ্ধন মোর তুয়া অভিলাষে।
পরাণ চমকে যদি ছাড়হ নিশাসে ॥
কত পরখসি মোরে আর।
তুয়। আরাধন মোর বিদ্দিত সংসার ॥
লেহ লেহ লেহ রাই সাধের মুরলী।
পরশিতে চাই তুয় চরণের ধূলি
তুয়া মুখ নিরখিতে আখি ভেল ভোর ।
নয়ন-অপ্রন তুয়া মোর চিত-চোর ॥
রূপে গুণে যৌবনে ভুবনে আগলি।
বিহি নিরমিল তুয়৷ পিরিতি-পুতলি ॥
এত ধনে ধনী বেই সে কেনে কৃপণ।
জ্ঞানদাস কহে কেবা1 জানিবে মরম |
শ্রীচৈতন্তচরিতামৃতে স্বরূপগোস্বামীপাদের বর্ণন উল্লেখ ক'রে নায়িকাভেদে
গোপীদের মানবৈচিত্র্য নিয়লিখিত ভাবে নিদিষ্ট হয়েছে £
৩৪৩
বৈষ্ব-রস-প্রকাঁশ
সম্যক গোপীর নাম না যায় কথন।
এক ছুই ভেদে করি দ্বিগ্রশন ॥
মানে কেহ হয় ধীরা কেহ ত অধীর] ।
এই তিন ভেদ কেহ হয় ধীরাধীর! ॥
ধীর। কান্ত দূরে দেখি করে প্রত্যুখান।
নিকটে আসিলে করে আসন প্রদ্বান ॥
হৃদে কোপ, মুখে কহে অধীর বচন।
প্রিয় আলিঙ্গিতে তারে করে আলিঙজন ॥
সরল ব্যাভারে করে মানের পোষণ ।
কিন্বা৷ সোল্ল বাঁক্যে প্রিয়নিরসন ॥
অধীর! নিষ্ঠুর বাক্যে করয়ে ভত্সন।
কর্ণোৎ্পলে তাডে করে মালায় বন্ধন ॥
ধীরাধীরা বক্রবাঁক্যে করে উপহাঁস।
কতু স্তৃতি কু নিন্দা কভু ব1 উদাস ॥
ুগ্ধা মধা। প্রগল্ভ! তিন নায়িকার ভেদ ।
মু্ধী নাহি জানে মানের বৈদদ্ধ্য বিভেদ ॥
মুখ আচ্ছাদিয়! করে কেবল রোদন ।
কান্তের বিনয়বাক্যে হয় পরসন্ন ॥
মধ্যাঁ প্রগল্ভা ধরে ধীরাদি বিভেদ ।
তার মধ্যে সভাঁর স্বভাব তিন ভেদ ॥
কেহ মুখর কেহ মুদ্ধী কেহ হয় সম! ।
ত্ব-স্বভাঁবে রুষ্ণের বাঁভায় রসসীমী ॥
গ্রাখ্য মার্দব সামা স্বভাব নির্দোষ
সেই সেই স্বভাবে কনে করায় সম্ভোষ ॥
স সং বং
বাম এক গোগীগণ দক্ষিণ একগণ।
নানাভাবে করায় কষে রস আস্বাদন ॥
গোপীগণ মধ্যে শ্রেঠা রাধাঠাকুরাণী |
নির্মল উজ্জল রস প্রেমরত্ব-খনি ॥
বয়সে মধম্যা তেহে। স্বভাবেতে স্মা।
শঙ্গাবরস-বিভাগ ৩৯১
গাঢ় প্রেমভাবে তেঁহে! নিরস্তর বামা ॥
বাম্য শ্বভাবে উঠে মান নিরস্তর |
তার বাম্যে বাঢ়ে কষ্ণের আনন্দ-সাগর ॥
পাঁ ।। প্রবাস ||
“অদূর প্রবাস” কৃষ্ণেব কাঁলিয়-দমন, গোষ্ঠে যাত্রা প্রভৃতি অবলম্বনে । কুষ্-
কীর্তনকার তার “রাধাবিরহে” কৃষ্ণের চকিত অন্তর্ধানে রাধার আক্ষেপ বর্ণন।
করেছেন। তাও অব প্রবাসের অস্ততৃক্ত হবে। প্রচলিত পদাবলীর
“'আক্ষেপানুরাগ” পর্যায় পরকীয়া! রতিতে মিলনের সাধারণ বাঁধা প্রতিবন্ধকের
উপর ভিত্তি ক'রে বিরচিত ব'লে এও অদূর প্রবাসে পর্যায়ভৃক্ত হবে। যদিও
আক্ষেপান্গরাগের স্ক্ম রসতাতপর্য অনুধাবন ক'রে একে বিপ্রলম্ত-শঙ্গারের একটি
পৃথক্ পর্যায় হিসেবে গণনা করাই সংগত ।
'স্থদূর প্রবাস” বলতে কৃষ্ণের কার্যোপলক্ষেে ৭ পারতন্ত্র্যের বশে মথুরাগমনকে
বোঝীয়। কংসের নিমন্ত্রণে অক্রুর এসে কৃষ্ণকে ঘথুরায় নিয়ে যান। সেখানে
গিয়ে কুষ্ণ কংসবধাদি স্বকার্ধও সাধন করেন। রসাস্তর ঘটবে ব'লে পদ্দাবলীতে
কংসবধাঁদি বণিত হয়নি। এই দৃর প্রবাসের বিরহাবস্থাকে তিন ভাগে বিভক্ত
ক'রে দেখ। যায়__ভাবী বিরহ (যে বিরহ অদূর ভবিস্তাতে হবে ), ভবন্ বিরহ
(যা ঘটতে চলেছে ) এবং ভূত বিরহ (যে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়ে গেছে)। এ
বিন্যাস পূর্বপ্রচলিত অলংকারশাস্ত্রেত দেখ! যায়। অন্ত্রুর কৃষ্ণকে নিতে
এসেছেন, তার রথ দেখা গেছে, এমন অবস্থার গোপীদের ভাবী বিরহের অবস্থা ।
যাত্রার সাজগোজ চলেছে, এখনই কষ মথুর1 যাত্রা! করবেন এমন অবস্থার
মনোভাব ভবন্ বিবহের, আর কৃষ্ণ চলে গেছেন, শীঘ্ব ফিরবার সম্ভাবন|। নেই,
এমন অবস্থা ভূত বিরহের |
তত্বের দিক্ থেকে দেখলে রুষ্ণের সঙ্গে গোপীদের কোনো বিরহ সম্ভব নয়,
কারণ কৃষ্ণ সর্বদাই গোপীদের সর্দে বাঁধলীলাপবাঁয়ণ অবস্থায় বুন্দাবনেই থাঁকেন
তবে প্রকট লীলার বৈচিত্র্য হিসেবে প্রবাসাদি দেখাতে হয়, কারণ বিপ্রলন্তেই
শঙ্গার পরিপুষ্ট ও পূর্ণ হয়। শ্রীৰপ উজ্জ্রননীলমণিতে নির্দেশ দিচ্ছেন ঃ
বৃন্দারণো বিহরত1 সদ] রাসাদ্িবিভমৈঃ।
হরিণ ব্রজদেবীনাং বিরহোইন্তি ন কহিচিৎ ||
দেখা যায়, শ্রীরূপ কুষের বৃন্দাবনলীল এবং দ্বারকালীল। এ ছুইকে একত্র ক'রে
একখানি নাটক রচন1 করতে যখন প্রবৃত্ত হন তখন স্বপ্রদৃষ্টে এবং মহাপ্রতুনিদে শে
৩৯২ বৈষ্ব-রস-্প্রকাশ
এ প্রয়াস বন্ধ ক'রে অবশেষে দ্বারকালীল1 এবং বুন্দাবনলীল৷ নিয়ে কৃষ্ণের
আত্যস্তিক বৃন্দাবনবিচ্ছেদ ন৷ দেখিয়ে পৃথকৃ ছুখানি নাটক রচন। করলেন-__
বিদ্প্ধমাধব এবং ললিতমাধব | শ্রীরপকে উপদেশদানে মহাপ্রভুবাক্য এ প্রসঙ্গে
স্মরণীয় £
কৃষ্কে বাহির নাহি করিহ ব্রজ হতে ।
ব্রজ ছাড়ি কষ কন্ডু না যান কাহাতে ॥
_-৫৮-চ, অস্ত্য £ ১ম।
যামলমুনিও পূর্বে নিদেশ দিয়েছিলেন £
কৃষ্োহন্তো। যছুস্ভুঁতো যস্ত গোপেন্দ্রনন্দনঃ।
বুন্দাবনং পরিত্যজ্য স কচিন্ৈব গচ্ছতি ॥
যছুকুলসম্ভূঁত কুষ্ণ গোপেন্দ্রনন্দন কৃষ্ণ থেকে পুথকৃ । মাধুর্ধলীলারসসার গোপকৃষ্ণ
বৃন্দাবনে চিরস্থায়ী। কেন, এ প্রশ্ন পূর্ণভগবান্ কষ্দম্পর্কে সমৃখাপিত হতে
পারে ন?, কারণ, তাঁর জন্ম কর্ম সবই দিব্য, অলৌকিক অতএব প্রকটলীলায়
রসবিস্তারবৈচিত্র্যের জন্য এবং ভক্তদের অক্ুগ্রহের জন্য কৃষ্ণের প্রবাঁসগমন | "
প্রবাস বিষয়ে শ্রীরূপ বলছেন £
পূর্বসংগতয়োর্নোর্ভবেদ্দেশান্তরাদিভিঃ |
ব্যবধানং তু ষ প্রাজ্জেঃ স প্রবাস ইভীর্যতে।
পূর্বে মিলিত নায়ক-নাপ্সিকার দেশান্তর প্রত্ৃতির দ্বার যে ব্যবধান ত।কে প্রবাস
বলে। এই প্রবাসের জন্য বিগ্লভ্তও প্রবাস-বি প্রলস্ত আখ্যা পেতে পারে । কৃ
লীলাকাহিনী অন্থসারে গিয়েছিলেন যথুরায়। এজন্য এই বিপ্রলম্তকে 'মাথুর”ও
বল। হয়। হর্ষ, গর্ব, মদ; ব্রীড়া এই কটি সঞ্চারী বদ দিয়ে শঙ্গারের সব
সঞ্চারীই এতে পাওয়1 যায়। প্রবাস দু'রক্মের_বুদ্ধিপূরব এবং অবুদ্ধিপূর্ব । নিজ
কার্ধবশে বিদ্বেশগমন হ'লে বুদ্ধিপূর্ব । পরবশে যেতে হলে অবুদ্ধিপূর্ব। কৃষ্ণের
মথুরাগমন নুদ্ধিপূর্ব এবং অবুদ্ধিপর্ব ছুই-ই। কংসের নিমন্ত্রণে যাচ্ছেন স্থৃতরাং
অবুদ্ধিপূর্ব এবং কংসবধার্দি কার্যাগ্ররোপে যাচ্ছেন সুতরাং বুদ্ধিপূর্ব। এ ছুই
প্রথমতঃ অদৃর প্রনাস এবং স্থ্দূর প্রবাস ভেদে দ্বিবিধ। আবার এ ছুই রীতির
প্রবাসেই বিরহ তিনভাগে বিভক্ত হতে পারে-_ভাবী বিরহ, 'ভবন্ বিরহ এবং
ভূত বিরহ। এই বিগ্রলন্ভে পূর্বরাগের মতই স্বল্প ভিন্ন দশ দশার উদ্ভব হয়__
চিন্তা), জাগরণ, উদ্বেগ, তানব ( কূশতণ )১ মলিনাঙগত1, প্রলাপ, ব্যাধি, উন্মাদ,
মোহ এবং মৃত্যু। উদ্ধত পর্দগুলিতে এপ অবস্থা যথাসম্ভব জ্ঞেয়।
শঙ্গাররস-বিভাগ ৩৪৩
মাথুরে ভাবী তিরহ, যখা --
কিয়ে সখি চম্পক- দাম বনায়সি
করইতে রভস-বিহার।
সো বর নাগর যাঁওব মধুপুর
ব্রজপুর কবি আধিয়ার ॥
প্রিয়তম দাম শ্রাদাম হলধর
এ সব সহচর সাথ ।
শুনইতে মুরছি পডল সো কামিনি
কুলিশ পড়ল জন্গু মাথ ॥
খেনে খেনে উঠত খেনে খেনে বৈঠত
অবশ কলেবর কাপি।
ভণ যছুনন্দন শুনইতে এছন
লোরে নয়নযুগ ঝাঁপি॥
অপিচ,
নামহি অন্রেব করেব নাহি য। সম
সে! আগ্ল ত্রজমাঝ ।
ঘরে ঘরে থোষই আবণ-অমঙ্গল
কালি কাঁলিছ' সাজ ॥
রজনী পোহাইলে কালি ।
রচহ উপায় যেছে নহ প্রাতর
মন্দিরে রহু বনমালি ॥
যোগিনী-চরণ শরণ করি সাধহ
বান্ধহ যামিনীনাথে |
নখতর চান্দ বেকত রহু অশ্বর
যৈছে নহত পরভাতে ॥
কালিন্দী দেবী সেবি তাহে ভাখহ
সো রাখউ নিজ তাতে ।
কিয়ে শমন আনি তুরিতে মিলাওব
গোবিন্দ্দাস অনুমাতে ॥
৩৪৯৪
বৈষ্ব-রস-গ্রকাশ
মাথুবে ভবন্ বিরহ :
ভূত বিরহ £
কান্থ নহ নিঠুর . চলত যে মধুপুর
মঝু মনে এ বড় সন্দেহ।
সে হেন রসিক প্রিয়া পিরিতি-পূরিত হিয়]
কাহে ভেল শিথিল-সনেহ |
চল চল সহচরী অকুর-চরণে ধরি
তিল এক হরি-বিলম্বাহ।
করুণা ক্রন্দন শুনইতে এছন
জানি ফিরয়ে বর-নাহ ॥
পরিহর গুরুজন 'হুদউ বা ছুরজন
কি কবব পরিজন পাঁপ।
কান্ুবিনে জীবন হ্বলতহি অন্থখন
কে সহ এ হেন সম্তাপ ॥
ও মুখ সমুখে ধরি নয়ন-অঞ্জলি ভরি
পিবইতে জীউ করে সাধ।
গোবিন্দদাস ভণ সো বিহি নিকরুণ
যে! করু ইহ-রস-বাধ ॥
প্রেমক অঙ্কুর জাত আত ভেল
ন ভেল যুগল-পলাশ]।
প্রতিপদ-চটাদ উদর যৈছে যামিনী
স্থথলব তৈ গেল নৈরাশা ॥
অব মোহে নিঠর মাপাই।
অবধি রহল পিছুরাই ॥
কে। জানে চাদ চকোরিণী বঞ্চব
মাধবী মধুপ স্থজাঁন।
অন্ুভবি কান্ু- পিরিতি অনুমানিয়ে
বিঘটিত বিহি-নিরমাণ ॥
পাপ পরাণ আন নাহি জানত
কানু কান করি ঝুর।
শঙ্গাররস-বিভাগ ৩৯৫
বিদ্ভাপতি কহ নিকরুণ মাধব
গোবিন্দধাস রস পুর ॥
দৃতী-সংবাদে রাধাবিরহ £
কুল-মরিযাদ রহল পরিবাদহি
তুহু মন হরি রহু দূর ।
বচন আদি করি সকল শকতি হরি
মদন মনোবথ পূর ॥
তোহে পুন কি কহব আর।
জগতে খোয়সি সোই ধনিক ঞলেবর
শোভারতন-ভাগ্তার ॥
অগ্রন লেই তন্ঠ রঞ্জল নব ঘন
দামিনি ছ্যতি হরি নেল।
লেই যৌবন-ছিত্রি নব-অস্কুর করি
যধুবন হন্ন বন তেল ॥ ৃ
তহি পুন এক লতা] তুম্া রোপিত
আশ যাকর নাম।
তা সঞ্েে জড়িত কণ্ঠগত নিরখত
অবহু' জীবন ঘনশ্যাম ॥
অদূর প্রবাসে বিরহ, যথ।-__
যে কাহু লাগিএা মো. আন লা চাহিলে? ( বড়ায়ি )
না মালিনে। লঘু্খরু জনে ।
হেন মনে পড়িচাসে আন্দ। উপেখিআ! রোষে
আন লআ1 ধঞ্চে বন্দাননে ||
কতছুখ কনিব কাহিনী ।
দহ বুলি ঝাঁপ দিলে? সেযোর স্থখাইল (ল)
মোএঞ" নাবী বড আভাগিনী ॥
নান্দের নন্দন কাহ্ন যশোরদ্দার পোআল
তার সমে নেহণ বাঁঢ়ায়িলে।।
গুপতে রাখিতে স্পা তাক মোঁঞ বিকামিলে।
তাহার উচিত ফল পাইলে ॥
৩৯৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
সামী মোর ছুরুবার গোআল বিশাল
প্রত বোল ননন্দ বাছে।
সব গোপীগণে মোর কলঙ্ক তুলিআ! দিল
রাধিক1 কাহাঞ্চির সঙ্গে আছে ॥
এত সব সহিলে। মো৷ কানের নেহাত লাগী
মোক নেহ কাহ্নাঞ্জির পাশে ।
বাসলীচরণ শিরে বান্দআ
গাইল বভ, চণ্ীদাসে ॥
য ।॥। প্রেমবৈচিত্তা ॥
প্রিয়ন্ত সন্নিকর্ষেইপি প্রেমোৎক ধন্বভাবত: |
য। বিশ্লেষধিয়াতি স্তৎ প্রেমবৈচিত্তামুচ্যতে ॥
নায়ক-নায়িকা পরস্পর সমীপবর্তী হ*লে” প্রেমের উতৎকর্ষবশতঃ স্বভাবিক
বিচ্ছেদকাতরতাময় যে আতি তাই হল প্রেমবৈচিত্ত্য । বৈচিত্তয শবের অর্থ
চিত্তের অন্য্থাভাব, বিচিত্ততা। মিলিতাবস্থাতেও বিরহ-অনুুতব স্ুস্ম্ মনন্তাত্বিক
এবং ব*€ব্যক প্রবৃত্তি । গোঁপীপ্রেমে, বিশেষতঃ মহাভাবময় রাধাপ্রেমে এই
ভাবের ক্ষতি আরও বিশেষভাবে হয়ে থাকে । লৌকিক প্রেমে বিরহের
একাধিপত্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথ “মেঘদূত” প্রবন্ধ লিখেছেন । এ প্রবন্ধে 'তনি
কালিদাস, ভবভূতি, বৈষ্ণব কবিকুল এবং ইংবেজি রোম্য।টিক কবিদের ভাবনার
সঙ্গে তাব নিজের স্থির বিরহ-ভাবুকতা মিলিয়ে নিয়েছেন। অধ্যাত্মের দিকৃ
দিয়ে বলা যায়, রাধাকুষ্ণপ্রেমে মিলনের অবকাশ যৎসামান্যই । কারণ,
হলাদিনীর সারতৃত শক্তিকে যখন পূর্ণভগবান্ রাঁধারূপে বাইরে নিয়ে এলেন
তখন শক্তি-শক্তিমানের পূনরায় একত্র হবার আকৃতিই প্রবল হ'ল। তখন থেকে
মিলনেও অতৃষ্থিবোধ জেগে রইল । এই চির অপূর্ণতা-অতৃপ্তিময় অদ্ভুত রাধাকৃষ্ণ-
প্রেমের খ্ষিয়টি কয়েকটি বৈষ্ণব পদ্দেই পরিস্ফুট হয়েছে, যেমন বলরামদাসের
নিম্নলিখিত রচন] £
তুমি মোর নিধি, রাই, তুমি মোর নিধি।
না জানি কি দিয়া তোম]। নিরমিল বিধি ॥
বসির ধিবসরাতি অনিমিখ আখি।
কোটি কলপ যদি নিরবধি দেখি ।
শৃঙ্গাররস-বিভাগ ৩৯৭
তবু তিরপিত নহে এ ছুই নয়ান।
জাগিতে তোমাবে দেখি স্বপন সমান ॥
দরপণ শীরস স্থদূরে পরিহরি ।
কি ছার কলের ফুল বটেক না করি ॥
ছি ছি কি শবদ চাদ ভিতরে কালিম]।
কি দিয়] করিব তোমার মুখের উপম] ॥
যতনে আনিয়ে যদি ছানিয়া বিজুরি।
অমিয়ার পাঁচে যদি রচিয়ে পুঙলি ॥'
রসের সায়র সাঝে কবাই সিনান।
তবু ত না হয় তোমার নিন সমান ॥
হিয়ার ভিতর থুইতে নহে পরতীত।
হারাও হারাঙ হেন সদ করে চিত ॥
হিয়ার ভিতর হৈতে কে কৈল বাহির ।
তেঞ্ি বলরামের পহু'র চিত রহে থির এ
চুড়ান্ত অতিশয়োক্তি দিয়েও প্রিয়ার স্বরূপ নির্দেশ কর। গেল না। আরও দেখ!
গেল নিকটতম প্রাপ্তির মধ্যেও সম্যক পাওয়। যায় নী। একটা অগ্রাঞ্চির
কাতরতাহই এ প্রেমের মৌল বিশেষত্ব । বাঙালী বিছ্াপতি এই প্রেমের
অনির্েয় ক্গভাব অনুভব কবেই বলেছেন £
কত মধু-ঘামিনী রভসে গোর়ার়লু
না বুঝলু কৈছন কেল।
লাখ লাখ যুগ হিয় হিয়ে বাখলু
তভে? হিয় জুড়ন ন গেল ॥
প্রেমবৈচিত্ত্য বিষয়ে গোবিন্দদ।সকৃত পদ £
নাগর সঙ্গে রঙ্গে যব বিলসই
কুপ্চে শুতলি ভূজপাশে।
কানু কানু করি রোয়ই হ্ন্দরী
দারুণ বিরহ-হুতাশে ॥
( এ সখ ) আরতি কহন না যাই ।
আচলক হেম আচলে রহু যৈেছন
খোজি ফিরত আন ঠাঞ্ডজি ॥
৩৪৮
বৈ্ব-রস-প্রকাশ
কাহ। গেও সো মঝু| রসিক স্থুনাগর
মোহে তেজল কথি লাগি ।
কাতর হোই মহীতলে লুঠই
মদন-দহনে রহু জাগি ॥
রাইক বিরহে কানু ভেল সচকিত
বয়ানে বাণী নাহি ফুর।
প্রিয় সহচরী লেই করে কর বান্ধই
গোবিন্দদাস রহ দূর ॥
কীর্তনগান ও রসপর্ধায়
প্রেমভক্তির অন্থভবের সঙ্গে কীর্তন ও নৃত্যের নিত্াসম্বদন্ধ । মহাপ্রভুর
অন্তরে প্রেমভক্তির আবিভাবের সঙ্গে কীর্তনগীতে ও নৃত্যে এ প্রেমের প্রকাশ
অনিবার্ধ হয়েই দেখ! দিয়েছিল। পাধদগণের চাবিত্যেও এ ভাব ও প্রকাশ
সঞ্চাবিত হতে বিলম্ব হয়নি। 'পর্বভূমি' প্রসঙ্গে আমর। দেখিয়েছি যে স্ফী
প্রেমিকেরাও অনুরূপ অবস্থার বশীভৃত্ত হতেন এবং শ্রীমদভাগবতেও এবিষয়ে স্পষ্ট
উল্লেখ রয়েছে-হসতাথো বোদিতি রৌতি গারত্যুন্মাদবন্নত্যতি লোকবাহা:।
এই সেদিনও শ্রীরামকৃষ্ণের ভব প্রকাশের প্রত্যক্ষদশরা তার গীতগ্রীতি ও
লোকবাহা নানান্ অবস্থ। দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। প্রেমিক ভক্তের
অভিলাষ হ*ল--আমার দে মা পাগল করে, আমার আর কাজ নাই জ্ঞান-
বিচারে? । সাধক রামপ্রসাদেব বক্তব্য হ'ল-- আমায় মন-মাতালে মাতাল
কৈল. মদ-মাতাল্যে মাতাল খলে”। কর্মী এবং যোগী, আর সেই সঙ্গে
নির্যাতিত মানুষের দুঃখে পরম কারুণিক বিবেকানন্দ রাঁগভক্তির তত্ব অবগত
হলেও ও-পথে যান নি। ববীন্দ্রনাথ তে। স্প%ই “উচ্ছলফেনভক্তিমদধারণ,
প্রত্যাখ্যান করেছেন। এমনকি গার-এতিহোর নামধারী সাম্প্রতিক কোনে।
কোনে। তাত্বিক ও শুচিবায়ুগ্রণ্ড বৈষ্ণব-সম্প্রায়কে নৃত্যগীত-রোমাঞ্চ-অশ্রু-
কম্প-যুছণর পথ প্রত্যাখ্যান ক'রে নামহীন বৈধী-ভল্তির প্রচারকার্ষেই নিরত
থাকতে দেখ| যায়। বুন্দাবনদাস ভালোভাবেই দেখিয়েছেন যে পপাধদ
মহাগ্রতুর নবদ্বীপে ভাবপ্রকাশের সময় এমন বহু ব্যক্তি ছিলেন ধার] ব্যাপারটিকে
পাগলামি মাতলামি এবং এদের উত্পাঁতশ্বরূপ মনে করতেন। এ নিয়ে
অবশ্য খেদ করে এবং বিরোধ ভেকে এনে হাঁ নেই» যেমন লাভ নেই ভক্ত-
বৈষ্বের লোকাপেক্ষা ক'রে । বে যথা মাং প্রপদ্ন্তে। অবশ্য প্রচারসম্বল
কপটত। দৃষণীয় নিশ্চয়ই ।
কথা এই যে মহাপ্রভু এবং ত'র নখদ্বীপ-নীল।চল পরিকরদের ভাবমূহূর্তগুলি
অনিবার্ধভাঁবে নৃত্যে, গীতে এবং নানাবিধ দৈহিক বিকারের মধ্য দিয়ে যৃতিমান্
হতে চেয়েছিল। এর গীতগ্রকাশকে “কীর্তন? নামে অভিহিত করা হয়েছে।
কীর্তন" শব্ষের মূল অর্থ বর্ন, নামোচ্চারণ। লোকপগ্রসিদ্ধ অর্থ হ'ল স্থরযোগে
গীত, গীতাকারে নাম, রূপ-গুণ এবং লীলার বর্ণন। শ্রীরূপ কীর্তনের লক্ষণ-
নির্ণয়ে এর ব্যাপক অর্থ গ্রহণ কঃরে বলেছেন 'উচ্ৈর্ভীষা”। বস্ততঃ যে-কীর্তন
৪০০ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
গীতরূপী তার বিশিষ্ট কোনে! নামকরণ সম্ভবপর হয়নি, যেমন হয়নি অন্য
কোনে] পর্যায়ের গীতবৈচিত্র্যের । রাগসংগীতের গ্রর্জরী, কানাড়া, মালকোশ,,
ভূপালী প্রভৃতি স্থান হিসেবে নাম। মেঘ, শ্রী, দীপক, বসন্ত প্রভৃতি নামের
মধ্যে ভাঁবজ্ঞাপকতা৷ হয়তো! বা কিছু ররেছে, কিন্তু এও পর্যাপ্ত নয়। ঠুংরি
অর্থেও কোনে। এক রীতির গান, টগ্লা এবং তর্জ অর্থেও তাই । যাই হোক,
এই নব্য দেশীয় রীতির কীর্তনগানকে বাঙল] ভাষায় নামকীর্তনের মধ্য দিয়ে
প্রসারিত করলেন শ্রীচৈতন্থ। তিনি শুধু উচ্চকণে উচ্চারণই করেননি, কৃষ্ণের
বিভিন্ন নামকে সাজিয়ে তাতে স্থরসংযোগও করেছিলেন।
খোল-মন্দির। সহযোগে এবং সহায়কের সহযোগিতায় এই নাম-কীর্তনকে
বল! হয়েছিল সংকীর্তভন। চৈতন্-জীবনের এতিহাসিকের] একবাক্যে মহাপ্রভুকেই
ংকীর্তনের জন্মদাতা! বলেছেন। যেমন, “সংকীর্তন আরম্তে মোহর অবতার”
€( চৈ-ভ1 ), “সংকীর্তন-প্রবর্তক শ্রীকৃষ্চৈতন্ত” ( চৈ-চ )। প্রেমাবেশের একেবারে
গ্রারস্তে দেখা যায় নিমাই পণ্ডিত তার পড়ুয়াদের নাম-কীর্তন শেখানোর প্রয়াস
করছেন--হরয়ে নম: | “দিশা দেখাইয়। গ্রভূ হাথে তালি দিয়।। আপনে
কীর্তন করে শিশ্তগণ লৈয়11” স্বল্প সময়ের মধ্যে মহাপ্রভৃর ভাবাবেশসমূহের
অলৌকিকতায় এবং তার ঈশ্ববত্বে পরিকরবর্গ নিঃসন্দেই হলে খোল-করতাল
সহযোগে সম্মিলিত সংকীত্তনের প্রারস্ত হয়। মহাপ্রভু নিজেই এই উদ্যোগ
করেন। ৮
'অছৈত-নিত্যানন্দের অঙ্গে পরামর্শ ক'রে তিনি বিশেষভাবে একদিন
সংকীর্তনের আয়োজন করেছিলেন ব*লে পদকর্তা পরমেশ্বরদাস, বুন্দাবনদাস
প্রভৃতি উল্লেখ করেছেন। তারপর পূর্ণাঙ্গ সংকীর্তনের বিশেষ আয়োজন হয়
ব্যাসপৃজার অনুষ্ঠানে, তার অভিষেকের দিনে এবং কার্জি-প্রতিবোধ-প্রসঙ্গে নগর-
সংকীর্তনে । চৈতন্য-ভাগবতকার বলছেন নগরসংকীর্তনের মধ্যে ভজনাঙ্গ
আত্মনিবেদনের একটি পদ শ্রীচৈতন্য গেয়েছিলেন এবং এইটি তার প্রযুক্ত আদি
সংকীর্তনের পদ _-“তুয়া পদে মন লাগ রে”। এ ছাড়া “হবি বোল মৃগ্ুধা,
গোবিন্দ বোল রে” প্রভৃতির মত নামগ্রহণের মনোভাবের পর্দের রচনা ও স্থরে
প্রয়োগ মহাপ্রভুর মুখে অনায়াসেই স্ফুরিত হওয়া সম্ভব । মহাপ্রতৃ নিজে যে
গাইতেও পারতেন তার প্রমাণ পাওয়। যায় চরিতকারদের উক্তি ও গৌরবিষয়ক
পদ-কর্তাদের বিবরণ থেকে ।
কিন্তু মহাপ্রভূকে সংকীর্তন-প্রবর্তক ধরলেও একমাত্র নামকীর্তনের ক্ষেত্র
কীর্তনগান ও রসপর্ধায় ৪০১
ছাড়া লীল। বা আত্মনিবেদনের ক্ষেত্রে তিনি স্থুরশ্রষ্টা ছিলেন এমন মনে করা
হয়ত সম্ভব নয়। এজন্য নয় যে, প্রথমতঃ তার পরিকরদের মধ্যে অনেকেই
সংগীতে নিপুণ ছিলেন । কিন্নরক মুক্ুন্দ, গোবিন্ব-মাধব-বাস্থ ঘোষ তে বটেই,
এমন কি অদ্বৈত আচার্ধও কীর্তনগীতবিৎ ছিলেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পর রাঁঢ-
ভ্রমণ শেষে ফিরে এসে যেদিন শ্রীচৈতন্য অৈতগৃহে, সেদিন অন্বৈত বিদ্যাপতির
পদ--কি কহব রে সখি, আনন্দ ওর? গান আরম্ভ করেছিলেন। আর
মুকুন্দ পরেছিলেন “হা হা প্রাণপ্রিয় সধি "| দ্বিতীয়তঃ দেখা যায়,
চণ্তীর্দাসের (অর্থাৎ বড়, চণ্ডীদাসেব ) বিস্তৃত লীলাকীত্তনের ও বিক্ষিগ্ত
রচনার প্দ তখন ব্যাপকভাবে গ্রচলিত ছিল। আর ছিল বিগ্যাপতি
ও জয়দেবের গীত, যা নীলাচলেও মহাপ্রভু স্বরূপ-বামানন্দের মুখে শুনতেন ও
আস্বাদন করতেন। চণ্তীদ্দাসের লীলা-কাব্য (যার শ্রীরুষ্ণকীতন নাম দেওয়।
হয়েছে) যাত্রারীতিতে-প্রযুক্ত গীতের সমাহার-বিশেষ। যে-আকারে তা
আমাদের সামনে এসেছে তাতে পাঁলাগায়কদের প্রযুক্তির চিহ স্পষ্ট। এর
সংস্কৃত শ্লোকগুলি এবং দণ্ডক, চিত্রক, লগনী, প্রকীর্ণক প্রভৃতি শব্দের ব্যবহারে
প্রযুক্তির নিদেশ দেওয়া হুরেছে। মূল বিষয় ক্ষী, একটি পাত্রের মনোভাব
অথব. ক'জনের আলাপ পদে বণিত হচ্ছে, পদ্দের মধ্যে কোনে1| ঘটনার বিবরণ
দেওয়া হচ্ছে কিনা, অপর কোনে পাত্রের প্রবেশ হচ্ছে কিন। এই সব ব্যাপার
নির্দেশ করতে শ্লোক এবং সংকেতের ব্যবহার কর! হয়েছে সর্বে'পার প্রতিটি
পদেব প্রারভ্তে রাগ-রাগিণীর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে । এ সব নির্দেশ
অধশ্য যূল কবির নয়, পাল! গায়কের। রাগ-রাগিণীগুলি লক্ষ্য করলে
দেখ! যা তখনকার বাঙালী গায়কেরা উত্তর ভারতে প্রচলিত শুদ্ধ মিশ্র
সমূদয় রাগের সঙ্গেই পরিচিত ছিলেন, দেশী সংগীত পদ্ধতির সঙ্গে তে৷ বটেই।
তা ছাড়া দেখ যাঁর কৃষ্ণকীর্তনের অধিকাংশ পদই চারভাগে এবং ষোল চত্রণে
বিভন্ত। প্রবন্ধগীত ব'লে পদের এই বিভাগ এতে স্পষ্টভাবে নির্দেশিতও
হয়েছে। এ বিভাগগুলিকে প্রচলিত ভাষায় স্থাক্ী, অন্তরা, আভোগ এবং
সঞ্চারী নাম দিলে বোধ হয় অন্যায় হবে না। গীতমধ্যে ক্ু-চিহ্নিত অতিরিক্ত
আবেগ-উদ্দীপক এক বা একাধিক ঞ্রবপদ্দের নির্দেশও কৃষ্ণকীর্তনের প্রায় সমস্ত
পদে রয়েছে । স্থতরাং ঞ্রবকার বা দোহারও ছিল। ছন্দ ও অর্থের সংগতি
অসংগতি বিচার ক'রে আমর] ঞু-গুলিকে বহু ক্ষেত্রে পালাগায়কের যোজন! মনে
করেছি। স্থতরাং মহাপ্রতুর পূর্বে রূপ-গুণ-লীলা-কীর্তনের স্বরবৈচিন্ত্য সকলের
৮২১
উঠি বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
অজ্ঞাত ছিল এমন মনে কর! যায় না। শুধু এই কথা বলা যায় যে, হরিনাম-
মুতি মহাপ্রভু নামকীর্তনের এবং খোল-করতাল যোগে সম্মিলিত কীর্তনের
উদ্ভব ও প্রসার ঘটিয়েছিলেন। আর, এর পর থেকে কীর্তনগানের প্রচার
দেশব্যাপীও হয়। ও
গরিকরদের সঙ্গে নৃত্য ও কীর্তনানন্দে বিভোর মহাপ্রভুর আত্মপ্রকাশের
সঙ্গে সঙ্গে বান্থদেবার্দিরও কীর্তন এবং কাষ্ঠ-পাষাণ-দ্রবকারী গৌরপদগীতের
প্রাছুর্তাব ঘটে । কিন্তু এ-পর্যায়ের কীর্তনের স্থরতাল-বৈচিত্র্য ঠিক কী ধরনের
ছিল, রসপর্ধায় বিভাগ ছিল কিনা এবং তাতে “আখর” দেওয়। হত কিনা বলা
যায় না। সাম্প্রতিক গবেষণার যুগেও এ-বিষয়ে সঠিক সংবাদ পাবার উপায়
নেই। অবশ্য, পরবতী পদসংগ্রহ-গ্রন্থে দেখা যায় প্রতি পদের উপরে অবলম্বনীয়
রাগের (দেশীয় অথবা যার্গরীতির ) নির্দেশ দেওয়া রয়েছে । কিন্তু এ অতি-
ব্যাপক একট কাঠামোব নির্দেশমাত্র । কীর্তনগানের বিকাশেব এই প্রথম
অধ্যায়ের পর পূর্ণ বিকাশের পরিচয় মেপে শ্রীস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে
খেতুঁড়িতে, নরোভ্তম ঠাকুর -প্রবতিত বৈষ্ব মহোৎ্সবের মধ্যে। এই
এতিহাসিক মহোতসবের প্রসঙ্গ বিশেষভাবে নিত্যানন্দদাসের “প্রেমবিলাস গ্রন্থে
দেওয়া রয়েছে । নিত্যানন্দদাস মহোতৎ্পবের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এবং গীতে
বিশেষতঃ বাগে নিপুণ ছিলেন । তার বর্ণনা থেকে জানা যায়, উৎসবের পূর্বে
খোল-করতালের পূজা কর। হয়। পরের দিন ফাল্গশী-পৃণিমা তিথিতে
গৌরাঙলগবিগ্রহ সহ কৃষ্ণের পাঁচটি বিগ্রহের স্থাপন সাঙ্গ হ'লে কীতন আরম্ত
হয়। প্রথমে গোঁকুলদ্বাসের অনিবদ্ধ গীত, পরে নরোত্তমের নিবদ্ধ গীত গাওয়া!
হয়। দেবীদ্দাস, গৌরাঙ্গদাস প্রভৃতি খোল ও করতাল বাদ্য করেন। কীর্তন
এবং সংকীর্তন এই মহোৎ্সবের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য ৷ কিন্ত প্রেমবিলাসের বর্ণন!
থেকে গীতোতৎ্সবের ভিতরের ব্যাপার অর্থাৎ স্থরতালের ও আখরের প্রয়োগ্ণ
প্রভৃতি বিষয়ে কিছুই জান যায় না। শুধুজানা যায় কীর্তন দু-এক দ্বিনের
মধ্যেই সমাপ্ত হয়ে যায়নি, বেশ কিছুদিন ধরেই চলেছিল এবং এটি বাৎসরিক
উৎসবে পরিণত হয়েছিল। আর নিশ্চয়ই পদাবলী কীর্ভনের মূল চারটি নিদিষ্ট
বিভাগ__নরোত্তম প্রবততিত গড়ের হাটের গড়ানহাটি, জ্ঞানদাসের বাসভৃমি
মনোহরশাহী পরগনার মনোহরশাহী, হছগলির নিকটবর্তী বর্ধমানের রানীহাট
অঞ্চলের রেনেটি এবং বীকুড়া-মেদ্দিনীপুর সংলগ্ন অঞ্চলের মান্দারন পরগনার
মান্দারিনী-_এই গীতমহোৎ্সবের যুল্যবান্ স্থফল। এই সময় থেকেই সম্ভবতঃ
কীর্তনগান ও রসপর্যায় ৪৯৩
শ্ীরপ-প্রবতিত রসপর্যায়ের অনুসরণে পালাবদ্ধ গীত গাওয়ার পদ্ধতিও স্থিরভাবে
নির্দিষ্ট হয়ে যায়। এবং 'আখর' দেওয়ার চমৎকারিতাও প্রদ্শিত হয়। তবে
একথা ঠিক যে এসব বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য পূর্ব থেকেই অল্নবিস্তর প্রচলিত না
থাকলে কেবল একটা অনুষ্ঠানেই প্রারন্ধ হওয়ার কথা নয়। দেখ। যায়, এই
সময়ের মধ্যেই জ্ঞানদাস, গোবিন্দদ[স, রায়শেখর, কবিরঞ্ুন, মনোহরদাস
প্রভৃতি পদকর্তা এবং কীর্তন-সাধকের। তাদের সাধনার ফল বৈষণ্ব ধর্মের
বিস্তৃতিতে অর্পণ করেছেন। অঙ্থমান হয় শ্রীন নরোত্তম বৃন্দাবন-মথুরা অঞ্চলে
কাটিয়ে শুদ্ধ ও মিশ্র রাগগীতে এবং নিবদ্ধ ও অনিবদ্ সংগীতে নৈপুণ্য অর্জন
করেছিলেন, ফলে এসবের মিশ্রণে ফীর্তনকে নবজীবন দান করার আগ্রহও
তার ছিল। এ সময়ে অর্থাৎ আকবরের সময়ে উত্তর-মধ্য 'ভারতে স*গীতের
আন্দোলন প্রসিদ্ধ। কিন্তু পূর্বে কী ছিল, এবং পরে কী হ'ল তার কোনে"
পরিচয়ই প্রেমবিলাসের বিবরণ থেকে পাওয়া যায় না । বজ্বতঃ নিত্যানন্দেব
প্রেমবিলাম” বহু অলৌকিক কথায় এবং অসম্পূর্ণ অবাস্তব বিবরণে পূর্ণ। কিন্ত
শুধু কি নিত্যানন্দদাস? পরবর্তীকালে যে থনশ্তাম-নরহরি তার বিখ্যাত
ভক্তিরত্বাকরে ঞ্পদাঁদি সংগীতের অভিজ্ঞত। বিস্ততভাবে বর্ণন করেছেন, তিনিও
কীর্তনগান বিষয়ে কোনে বিচার রেখে যাননি । আর কীর্তন বিষধে সম্প্রতি
যে সব বই লেখা হয়েছে তাতেও হয় আত্মকথা, নয় কীর্তনিয়াদের আসরের
কথা, নয় পরিচিত রসপর্যায়ের কখাগুলিরই পুনরুচ্চারণ কর] হয়েছে।
আমাদের মনে হয়, খেতুডির গীতমহোত্সধ থেকেই ঞ্রুপদাদি রাগসংগীতের
ধারায় কীর্তনগানের পুনবিন্তাস ঘটে। সাধক নরোত্বমই এ-বিষয়ে প্রবতনার
সার করেন। কারণ, নরোত্তম সংগীতজ্ঞ ছিলেন এবং মধ্য-উত্তর 'ভাবতেৰ
ঞপদ-বৈচিত্রয এবং নবাগত খেয়ালের সঙ্গে ইতিমধ্যেই তার ঘনিঠ পরিচয়
ঘটেছিল। লীলাকীর্তনের স্থন্দ্র রসপর্যায় বা পালাবিভাগ, “গৌরচক্রিকা? দিয়ে
পালারন্তের আবশ্ঠিকতা', বাঁঙ্লাঁয় তৎকাঁল-প্রচলিত কীতনের বহু-বিভিন্ন গায়ন-
পদ্ধতি ও ঘরানার বর্শীকরণ এ সবই এই মহোৎ্সবের অমুতময় ফল। অবশ্য
কীর্তনগানে এর পরবর্তী সময়েও অল্পবিষ্তর বৈচিত্র্য অনুপ্রবেশ করেছে।
রাধামোহন ঠাকুর, বৈষ্বদাস, দীনবন্ধুদাস প্রভৃতি মহাজনপদ্দের সংকলকেরা
' প্রায় সকলেই গীতজ্ঞ ও গাঁয়ক ছিলেন । এরা এবং নিঃসন্দেহে আরও কেউ
কেউ স্বকীয় উপলব্ধিমত রসনির্ভর রম্যতার সঞ্চার করতে চেয়েছিলেন । এর
মধ্যে সামান্য অথচ উল্লেখযোগ্য হ'ল “টেঞার ছপ, ও মিধুকানের ঢপ।
৪০৪ বৈষ্ণব-রস-প্রকাঁশ
“টেএশর ছপ* অর্থে বৈষ্বদাঁসের নিবাস টেঞা গ্রাম থেকে উদ্ভুত স্থরতাঁলের
চমৎকারবিশেষ। অবশ্ঠ কী সে চমৎকার, তা আমরা বলতে অক্ষম । আঠারো
শতকের শেষের দিকে টগ্পার সরে বাঙ্লার বৈঠকী সংগীতের আষর জমাট
হয়ে ওঠে। ফলে টগ্জা (ব1 ভগ্পা) কীর্তন, টপ২নীর্তন, ঢপ্-কীর্তন।
টপ্ শব্দে রকম বা ধরনও হতে পায়ে। কীতর্ন এবং পাঁচালি, গীতরীতি
বহুদিন ধ'রে বাঙ্লায় পাশাপাশি অবস্থান করায় উভয়ের বিষিশ্রণও
অনিবার্য হয়েছে । আবার উনিশ শতকের শেষ ও এই এতকের প্রথমের
দিকে জ্যোতিরিন্দ্র-রবীন্দ্রনাথ, ছিজেন্দ্রলাল এবং অতুলপ্রসাদ কীর্তনের
ঢঙের সঙ্গে রাগ বা রাগাঁশের বিমিশ্রণ ঘটিয়ে আধুনক মনের
উপযোগী রসবৈচিত্র্য সম্পাদন করেছেন । কথাঁব এন্দ্রজালিক এবং স্থুরমিশ্রণের
নবীন রাসায়নিক রবীন্দ্রনাথ কীর্তনকে বহুমাঁন করেছেন, কারণ কীর্তনে
কথার সঙ্গে স্থুরের সামগ্বন্ত পূর্ব থেকে পরিস্ফুট। লক্ষণীর এই যে, যাঁর
সঙ্গে ধর্মসাধনার অনিবার্য সম্পর্ক ছিল, তার স্থুরবৈশিষ্ট্য নিয়ে আজ
আমাদের লৌকিক রস-পিপাসাই চরিতার্থ হচ্ছে। অবশ্য কৃষ্ণগৌরের
সাধন-ভজনে অনুরাগী ধামিকের প্রাথিত কীর্তন বা সংকীর্তনের ধার!
আজও একেবারে লুপ্ত হয়নি, খাঁটি কীর্তনিয়া কেউ কেউ হয়ত বা
যথাসাধ্য তা রক্ষা করে চলেছেন, কিন্তু এ কথা ঠিক যে কীর্তনের
ব্যাপক অনুশীলন সামাজিক পরিবর্তনের ফলে স্তিমিত হয়ে পড়েছে।
আমাদের বাল্যকালের কথা মনে পড়ে, বৈষ্ণব-পাড়ায় যখনই গিয়েছি,
তখনই খোলের কসর ও পদ্দের আলাপ শুনেছি, দেখেছি কীর্তনিয়াদের
রেওয়াজ ও উৎকর্ষসাধনের বিপুল আগ্রহ, বৈষ্ণব তরুণদের ও বিভিন্ন
কীতনিয়াদের মধ্যে নানান্ রসবিতর্ক। বড় বড় গ্রাম-সংলগ্র সেই বৈষ্ণব-
পল্লীগুলি এখন প্রায় নিমূল নললেই চলে। গোময়লিপ্ড দাওয়ায় এবং
তুলসী-আন্দোলিত অঙ্গনে পদরচনা এবং কীর্তন এখন আর স্থলভ নয়।
এখন নব্যরুচির শ্রোতার্দের জন্য সময়ের ছকে-আট। কীর্তন ও লোকসংগীতের
ভার নিয়েছে আকাশবাণী। বাউলের মুখে শোন। কথা-__“বাবু, আমরা
এখন বোবা হয়ে গেছি।” এখন যন্ত্রবাহিত ঘর্মাক্ত জীবন, এখন যা
কিছু বাসন! তা জীবনসিদ্ধিতে সমপিত, আর্ট, শিল্প, গবেষণা এমন কি
ধর্মও বৈষয়িক জীবনের চর্যাতেই আত্মদদান করছে, এখন ভাবের আন্দোলনে
রাজনীতিরই মুখ্য অধিকার | গ্রামীণ জীবন-যান্রার ধারাও আজ রূপা-
কীর্তনগান ও রসপর্যায় ৪০৫
স্তরিত। স্বতরাং “যা যায় তা আর ফিরে না। মুক্তবেণীর পর যুক্তবেণী
"কে কোথায় দেখিয়াছ ?
কীর্তন কি লোকসংগীত? পশ্চিমী-বই-পডা আধুনিক লেখক যাই
নলুন, কৃষ্ণলীল1-বিষয়ক স্বত-উতসারিত প্রাথমিক প্রণয়কলহমিলনবিরহের
ক।ব্য, পরিশীলিত রসতত্বের বাইরে লেখা সর্বজনপ্রিয় ছন্দোময় রচনাঁকে
ধেমন লোকসাহিত্যের অন্তর্গত করাই সমীচীন, তেমনি ধেশীয় সুর-বিশিষ্ট
মৌলিক কীর্তন ভাটিয়ালি প্রভৃতিকেও। এ স্থর রাজসভাকক্ষ থেকে
আসেনি, কুশলী শিল্পীদের হাতে গায়নপদ্ধতির রূপান্তর ঘটলে এব
মাদদিম সরল মূতিটি আজও চিনে নেওয়া যায়। ঠিক তেমনি রামপ্রসাদী
দুব। কীর্তন, রামপ্রসাধদী, ভাটিয়ালিতে হিন্দুমুসলমান, টচ্চবর্ণ-নিয়বর্ণ
নিবিশেষে সকলেরই সমান আকর্ষণ। বিদ্যাপতি, গোবিন্দদাস-জ্ঞানদাস-
বায়শেখরের রচনা! ঠিক লোকমূল সাহিত্য নয, কিন্তু যে স্ররপদ্ধতি
এগ্তলিকে বহন ক'রে চলেছে তা নিঃসন্দেহে লৌকিক। যে কীর্তনেব
মাধ্যমে চার-পাঁচ শতাব্দী ধ'রে পীচ-ছ” কোটি মানুষের একটা জনত।
।ণঞ্জ মর্ষের নিবিড় সান্লিধ্য অনুভব করেছে, লুপ্তির পথে শতাব্দীর শেষে
তাঁকে নমস্কার জানাই ।
॥্কসপর্ায় ॥
পালাবদ্ধ কৃষ্ণ্যাত্রী-গীতের পরিচয় গৌড়ীয় বৈষ্ণর্ ধর্ম 'ও সাহিত্যের
উদ্তবের পূর্বেই ফগ্ভপি পাওয়া যায় (গীতগোবিন্দ ও শ্রীকুষ্ণবীর্তন দ্রঃ),
এব স্ক্ষ্তার সঙ্গে বিস্তারবৈচিত্র্যের অভ্থাদম গৌরলীলাপৃষ্টে কুষ্ণলীলার
গুরুত স্বরূপ অন্ুধাবনের পর থেকেই। শ্রীরূপের রসামৃতসিন্ধু এবং উজ্জর্-
শীগমণি এ ই রসশাস্ত্রে পরবর্তী পদসমূহের বিষয়বিন্যাসের প্রমাণ
প্রতিষ্ঠিত। শ্রীরূপ শ্বয়ং কবিপ্রতিভার অধিকারী হওয়ায় তার পক্ষে
নুতন রসশাস্মের গ্রস্থন সহজ ও বাস্তব হয়েছিল। তার নিমিত শাস্ে
পূর্বতন লৌকিক অলংকারশান্ত্ের অনেক কিছু গৃহীত হয়েছে, অনেক বিষয়
গৃহীত অথচ রূপাস্তরিত হয়েছে। আবার নৃতনতর প্রয়োজনে বহু নৃতন
দীবযয়েরও অবতারণা করা হয়েছে। রসাধ্যায়ে আমরা এগুলি সংক্ষেপে
পর্যালোচনা করেছি, কীর্তনগীতি-সংলগ্ন বিশেষ যা তা-ই এখানে কথিত
হ্চ্ছে।
৪০৬ বৈষ্কব-রস-গ্রকাশ
কষণলীল।-বিষয়ক কীর্তন-পালাগুলি লক্ষ্য করলে দেখ! যায় এর কতকগুলি
নিদিষ্ট ব্যাপার ব। আখ্যান-অন্ুসারী, কতকগুলি রসবৈচিত্র্া-অন্ুসারী, যদিচ
একথা ঠিক যে একেবারে রসবিহীন কোনে। ব্যাপার নেই, আর ঘটন।-বিহীন
রও নেই। বিষয় বা ঘটন] অন্থসারে পালাবিভাগ,_দান-লীল।, নৌকা লীন,
কুঙ্ীভঙ্গ, বনভোজন, গোবর্ধন-ধারণ, ফাগুলীলা, অক্রুর-সংবাদ, নন্দবিদায়,
পৃতনাবধ , গৌরাঙ্গলীল। নিয়ে যেমন, জগাই-মাধাই উদ্ধার,নিমাই-সন্গ্যাস প্রভৃতি |
রসান্থসারে যেমন- পূর্বরাগ, রূপানগুরাগ, অভিসার, মান, খণ্ডিতা, কলহাস্তরিত।
আক্ষেপান্রাগ, রসোদ্গার প্রভৃতি | একথ। মনে রাখ গ্রয়োজন যে, গোল্ধামীদের
গ্রন্থনির্মাণের পর পর্দকর্ত। মহাজনের। যে আক্ষরিকভাবে তার অন্গসরণ করেই
পণরচনা করতে লাগলেন এমন অনুমান অযৌক্তিক । শ্রীরূপের রসবিবেচন
্ীস্টীয় ১৫৮০ এর আগে গৌড়-বাঙ্লায় গৃহীত হয়েছিল কিন। সন্দেহ । অনুবাদ
এবং অনুসরণে লিখিত গ্রন্থ আরও পরের । * এমনকি গৃহীত হবার পরও
মহাজনের। যখন যেমন ভাবের অধিকারী হয়েছিলেন তেমনি ভাবেই পদ লিখে
গেছেন। পরদ্দসংকলয়িতারা ও কীর্তনগায়কেরাই বরং রসশাস্বের ভাগারী
ছিলেন। কবিদের যাঁবতীম রচন৷ এ'রাই সুসজ্জিত ক'রে রসোচিত পর্যায়-বিভাঁগে
ফেলেছিলেন । তবু স্বাভাবকবিত্বের পথ অনুসরণ করেও কদাচিৎ শাঞ্জের
অন্থবর্তন করার প্রয়োজন যে রচয়িতার। উপলব্ধি করেননি এমনও নয় ।
সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্ধীর রাধামোহন ঠাকুর, ঘনশ্ঠাম, জ্গদ্ানন্দ প্রভৃতির
রচনায় গোস্বামীদের শাস্তগ্রস্থ অধ্যয়নের প্রভাব স্পষ্টভাবেই অনুভূত হয়।
তখন ভক্তিরসামৃতসিন্ধু ও উজ্জ্বলনীলমণির বঙ্গান্বাদও গ্রচারিত হয়েছিল।
পদ্কর্তার। শ্ররূপের আক্ষরিক অনুসরণ ঘষে করেননি, বরং ভাবানুসর'
করেছেন এবং ইঙ্গিত গ্রহণ করে নৃতনতর পথে পদক্ষেপ করেছেন তার প্রমাৎ
রসোদগার, রসোলাস, ভাবোল্ল।স, রূপোল্লাম প্রভৃতি সম্তোগ-শূঙ্গারের এব
রূপাঙ্গরাগ, ূপাভিসার, আক্ষেপান্থরাগ গুভৃতি বিপ্রলভ্ভ-শৃঙ্গারের পদ রচন।
বিছ্যাপতি প্রবতিত বয়ঃসন্ধির রচনাও পরে স্বতন্ত্র পালাধ্ভাগের মর্ধাদ। লা;
করেছে। শায়কেরাই এসব সমাহরণ করে একক্র গ্রস্থন করেছিলেন লেখকদে'
প্রায়-স্বাধীন রচনা অবলম্বন ক'রে । আমর। পূর্বে অনুমান করেছি ৫
বিশেষভাবে খেতুড়ির মহোৎসবে বহু রসপর্যায় মোটামুটি সংগঠিত রূপ লা:
__ * উল্লেখযোগ্য বামগোপাল দাস কৃত “রসকল্পবল্পী” এবং গীতান্বরদাসের “কসমগ্রবী” সপ্ত?
শতাব্দীর শেষের গ্রস্থণ ৷
কীর্তনগান ও রসপর্ধায় ৪৯৭
করে। উল্লিখিত নৃতনতরগুলির সন্ধে আর একটি অসামান্য অভিনবতাও ক্রমশঃ
যুক্ত হয়ে খেতুঁড়ির মহোৎ্সবেই পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠা পায়, সেটি হ'ল “গৌরচন্দ্রিকা?।
রসবিষয়গুলি সম্বন্ধে শিক্ষার্থা-সাধারণের জন্য দু'চার কথা বললে বোধ হয়
অনপেক্ষিত-ভাষণ হবে না।
বয়ুঃসদ্ধি পূর্বরাগেরই অবাস্তর বিভাগ। এতে কৃষ্ণের পূর্বরাগ এবং
রূপবিমুদ্ধতার সৌন্দর্য রসবিষয়। রাধার কষ্ণরূপে আসক্তি হ'ল রূপান্গরাগের
বিষয়, এও পূর্বরাগের গাঢ়তাযুক্ত “অন্থরাগে'র অবস্থায় রূপদর্শনে। এ অবস্থায়
আশ্চর্য কৃষ্্বপ শ্রীমতীর চিত্তে মুহুমুহ স্কুরিত হয়। এরই বিবরণ নিয়ে রূপোল্লাস।
রাধার অভিসারে ঘদি রূপসজ্জা বর্ণন। গ্রাধান্তলাভ করে তাহ'লে ব্ূপাভিসার ।
এবিষয়ে. পূর্বে উদ্ধত অনস্তর্দাস-বণিত “ধনি ধনি বনি অভিসারে* একটি উল্লেখ-
যোগ্য রচন1 | শ্রীমতীর অভিসারধাজ্রার সংকল্পে কৃষ্ণের নিমিত্ত উৎকগ! এবং
তছুচিত ভাববিকারসমূহের বর্ণন। নিয়ে অভিসারোৎকঠ। অভিসারিক অবস্থার
ব্যাপক পদরচনাগুলিকে কালোচিত বিভাগে সাজিয়ে ছোট ক'রে বর্ধাকালোচিত
হিমকালোচিত প্রভৃতি পালার গ্রস্থন | নায়িকার উতকন্টিতা খগ্ডিতাদি
প্রকারকেও এইভাবে কালোচিত বিভাগে ফেল। হয়েছে । রসালস হ'ল সম্ভোগ-
শূঙ্গারের পরিণত অবস্থার, সন্তোগান্ত আনন্দময় তন্দ্রালসাবস্থার পরিচায়ক |
ভোজনান্তে উদ্গার মোচনের সাঘৃশ্যে রসোদ্গার | সবীপ্রশ্থের উত্তরে শ্রীমতীর
সন্তোগাবস্থার আনন্দময় স্বতিচারণ। এ রসোদ্গার সংক্ষিপ্ত-সম্পন্ন সম্তোগেরও
হতে পারে, পূর্ণ অর্থাৎ সমদ্ধিমান্ সম্তোগেরও হতে পারে। ভাবেলাস বা
ভাবসম্মিলনোল্লাস দৃশ্ঠতঃ বিরহেরই অবস্থার অস্তরগত। এতে কৃষ্ণের সঙ্গে
শ্রীমতীর মিলন-প্রত্যাশার ও কল্পনায় ভাবে মিলনের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোঁল। হয়।
বিবহে কৃষ্ণতন্ময়া বস্থার এ অপূর্ব কল্পন।। বৈষ্ণবশাস্্কার অবশ্য ভাবসম্মিলনকে
সম্ভোগ শঙ্গারের অন্তর্গত ক'রে দেখেছেন। কারণ, এরকম মিলনও রাধারুষ
পক্ষে অলৌকিক যথার্থ মিলনই |
আক্ষেপাহুরাগও ঠিক রসশাস্ত্র নির্দিষ্ট বিষয় নয়, কবিদের রচন1 থেকে
নামকরণ ও গ্রন্থন । এ হ'ল শ্রীমতীর সর! বিরহাবস্থা, প্রায় অকারণ বিরহ-
কাতরত', কষ প্রবাসে' অর্থাৎ মথুর] ন। গেলেও নিমেষমান্তর বিচ্ছেদের অসহনীয়
অবস্থায় আক্ষেপই এই শ্রেণীর পদরচনার অপূর্ব বৈশিষ্ট্য । রাধাভাবান্বিতা
শ্রীমতীর আত্যস্তিক ছুঃখসহনের মহিম1 এতে ব্যঞ্রিত। লক্ষণীয় এই যে, বড়,
চণ্তীদাসই এ শ্রেণীর বিরহের পর্দের অঙ্টা, কারণ, কৃষ্ণকীর্তনের রাধাবিরহ
৪০৮ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
₹ংশে তিনি কৃষ্ণের সঙ্গে রাধার নিতান্ত সাময়িক বিচ্ছেদ প্রসঙ্গের অবতারণা
ক"রে শ্রীমতীর প্রবল আক্ষেপ প্রদর্শন করেছেন। পদ্দাবলীতে বিরহ অবস্থার
বর্ণন] সম্ভোগ-শুঙ্জারের বর্ণনাকে বহুদূর অতিক্রম ক'রে গেছে, কি গভীরতায় কি
ব্যাপকতায়। এর কারণ শ্বধু এই নয় যে বিরহ ছাড়া মিলন পুষ্টিলাভ করে না,
এর কারণ এই যে বিরহই এই প্রেমের প্রায় সর্বস্ব। রূপ-গুণ নিয়ে চতুরচুড়ামণি
কৃষ্ণ ক্ষণিকের জন্য দর্শন দিয়ে লালস! জাগিয়ে পরে চিরঅদর্শনে প্রেমিকের
চিত্ত উত্তরোত্তর কাতর ও তর্দভিমুখী ক'রে তোলেন। গৌভীয় বৈষ্ণবধর্ম
এই বিরহকাতরতা। এবং মিলন-লালসার আগ্রহের অনির্বচনীয় এক রম্য ধর্ম।
এই প্রসঙ্গে লৌকিক মানবচিত্তে এবং তদন্রযায়ী সাহিত্যেও বিরহাবুকতার
প্রতি সমধিক আগ্রহের বিষয় ক্মরণীয়। গ্রেমবোধের সঙ্গে বিজড়িত গভীর
জীবন-জিজ্ঞাসার কবি শেলির প্রসিদ্ধ উপলবিতে--0৮] 55/69551 301085
৪19 (11998 0126 1611 ০? 58063 11191). এবিষয়ে রবীন্দরোক্তি হ'ল__
“গভীর ছুঃখ ভূমা, ট্র্যাজেডির মধ্যে সেই ভূমা৷ আছে- সেই ভূমৈব স্বখম্।” এবং
“আমর! যাহার সহিত মিলিত হইতে চাহি সে আপনার মানসসরোবরের অগম্য
তীরে বাস করিতেছে; সেখানে কেবল কল্পনাকে পাঠানে! যায়, সেখানে
সশরীরে উপনীত হইবার কোনো পথ নাই”। সংস্কত ভাষার কবি আরও
স্পষ্টভাবে বলেছেন £
সংগমবিরহবিকল্পে বরমিহ বিরহো! ন সংগমস্তস্া2 |
সঙ্গে সৈব তথৈকা ত্রিভুবনমপি তন্ময়ং বিরহে ॥
অর্থাৎ “মিলন-বিরহের মধ্যে একটিকে যদি বেছে নিতে বল, তাহলে আমি
বলব, আমি বিরহই চাই, কারণ, মিলনে আমার প্রিয় তো৷ একক হয়ে
আমার প্রত্যক্ষে থাকে, আর বিরহে ত্রিভুবনে সর্বত্র আমি তাকেই দেখি” ।
এরই অপর পিঠে অধ্যাত্মে রয়েছে বিরহে কৃষ্স্ফৃতি-_ধাহা ধাহা নেত্র
পড়ে তাহা কৃষ্ণ স্ফুরে। অধ্যাত্ম আকৃতিতেই বাউল সাধক গেয়েছেন__
“আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যে রে।” মিলনের অতুপিতে
এবং অতলস্পর্শ বিরহভাঁবনায় তাই বৈষ্ণব পদাবলী পূর্ণ।
আক্ষেপান্থরাগে শ্রীমতীর আক্ষেপকে কয়েকটি ভাগে চিহ্নিত ক'রে
পদদাবলীরসিকেরা দেখেছেন, যথা (১) কৃষ্ণের উপর আক্ষেপ (২) যূরলীর
উপর (৩) নিজের উপর (৪) সখীর উপর (৫) দূতীর উপর (৬) অবৃষ্টের
উপর (৭) কন্দপ্পের উপর। এতে পূর্বরাগাবস্থার লালসা, উদ্বেগ প্রভৃতি
কার্তনগান ও রসপর্যায় ৪০৯
দশ দরশার পূর্ণ অভিব্যক্তি হয়। মুখ্য পালাক্রমের মধ্যে এই আক্ষেপান্ুরাগ
পূর্বরাগ ও মাথুরের কাছাকাছি, প্রেমবৈচিত্তোর সঙ্গে সংলগ্ন, অথচ প্রেম-
বৈচিত্ত্যে মিলনের মধ্যেই বিরহকাতরতার অনুভব, আর এতে মিলন-
নিরপেক্ষ স্থায়ী ছুংখকাতরত1, যে ছুঃখের শেষ অন্থভূত হবার নয়। বস্তত
আক্ষেপান্ছরাগের মধ্যেই মহাভাবস্বদপা রাধার সংসার, সমাজ, অদৃষ্ট এমন কি
কুষ্ণ-প্রদত্ত ছুঃখের পূর্ণাঙ্গ মাঁনসচিত্রের পরিচয় আমরা লাভ করি।
পদাবলী-কীর্তনের এই সব রসগত স্ক্্র পর্যায়বিভাগ ছাড়া গৌরলীল।
ও কৃষ্ণলীল! আস্বাদনের ভিন্নতর বৈচিত্র্যও পালাকীরত্তনের অঙ্গীভৃত হয়েছে
দেখা যা়। এর একটি হ'ল অষ্টকালীয় লীল, অন্যটি দণ্ডাত্মিক লীলার
গ্রন্থন। বৈষ্ণব ভক্ত দ্দিবারাত্রির ভগ্রাশ অবলম্বন করেও কৃষ্ণলীলার
বৈচিত্র্য আম্বাদন করতে চেয়েছেন, যেহেতু ক্ষণে ক্ষণে নবতাই লীলার
অন্ততম আকর্ষণ। দিবা-রাত্রিকে আটটি কালবিভাগে পৃথক ক'রে অষ্ট-
কালীয় লীলা । এই কাঁলবিভাগ হ'ল (১) নিশাস্ত ২) প্রাত্তঃ (৩)
পূর্বাহ্ব (৪) মধ্যাহ্ন (৫) অপরাহ্র (৬) সাযম (৭) প্রদোধ বা নিশার প্রথম
ভাগ (৮) নক্ত বা মধ্যরান্রি। মধ্যরাত্রির মিলনের পর রাধাকৃষেব বিচ্ছেদ
নিয়ে নিশাস্ত বা কুগুভঙ্গ। বিচ্ছেদ দিয়ে পালা শেষ করতে নেই এই
সংস্কারে নিশাস্ত দিয়েই অষ্টকালীয় লীলার পালারস্ত। শ্রীগৌরাঙ্গেরও
অষ্টকালীয় লীলার অন্গভবে মহাজনের! পর্দ লিখেছেন। দগ্ডাত্সিক লীলার
পদ বা দিবাপরিমাণকে এক এক দণ্ডে বিভাগ ক'রে কৃষ্ণলীলববেচিত্র্যও
আস্বাদন করেছেন তার]।
এখন গৌরচন্দ্রিকা"। যার আশ্রয়ে মহাজন ও কার্তনিয়ারা রাঁধা-
রুষ্ধকথার বর্ণন-আম্বাদন করতে ও ভক্তদের সে আম্বাদ দান কবতে
চেয়েছেন, তার উল্লেখে আমর1 এ গ্রন্থের পালা শেষ করছি।
গৌরচন্দ্রন্ত ইন্ম্ অর্থাৎ গৌরচন্দ্রের এই লীলা! এই অর্থে গৌরচন্দ্রিকা ।
গৌরাঙ্গ কৃষ্ণের রাধাভাবমূতি, একাধারে রসরাজ ও মহাভাবের প্রকাশ,
অস্তঃকৃষ্চ বহিগৌঁর। নীলাঁচল-পরিকর স্বব্প ও রামানন্দের উপলব্ধ এই তত্ব
প্রথমে বৃন্দাবনের গোস্বামীরা, পরে তাবৎ ভক্তমহাজনের সাদরে গ্রহণ
করেছিলেন। তারা গৌরবের নবদ্বীপ-নীলাচলে প্রকাশিত ভাববিকারের
মধ্যে কষ্টাধার ব্রজলীলাবিলাসকেই বিন্মপ়্মহকারে নানাভাবে অনুভব
৪১০ ্ বৈষব-রস-প্রকাশ
করেছিলেন এবং পর্দরচনার মাধ্যমে সেই লীলার ইতিহাস রক্ষা করতেও
আগ্রহী হয়েছিলেন। ধার] মহাপ্রভুকে প্রত্যক্ষ করেননি, তারাও অন্যের
ৃষ্টান্তে এবিষয়ে অভিনিবেশ করেছিলেন। ব্রজলীলার মত নবদ্বীপলীলাতেও
কৃষ্ণের ছুটি অভিলাষ ছিল, এক, তিনি রাধাপ্রেমের আশ্চর্য স্বরূপ অনুভব
করে নিজে বুঝবেন, ছুই, ব্রজলীলার প্রকৃত স্বরূপ ভক্তদের বুঝিয়ে
নামাদ্দি কীর্তনের মধ্য দিয়ে নবরাগধর্মের দিকে সকলকে আকর্ষণ করবেন ।
স্থতরাং প্রতুলীলা ব্যতীত ব্রজলীলার স্বরূপ ভক্তদের কাছে অজ্ঞাতই
থেকে যেত, গোপীপ্রেমের তাৎপর্য এবং রাধাপ্রেমের আশ্চর্য মহিম।
অপ্রকাশিতই থাকত। মহাজন একটি পদে তাই বলেছেন :
মধুর-বৃন্দাবিপিন-মাধুরী-প্রবেশ-চাতুরী-সার
বরজ-যুবতি-ভাবের ভকতি শকতি হইত কার?
মহাগ্রতু কপ! ক'রে দেখালেন তাই ভক্তেরা দেখলেন । মহাপ্রভু তার নিজলীলা
অভিব্যক্তিন্ণে ব্রজলীলাকে স্থপরিস্ফুট ক'রে তুললেন। এই কারণে ভক্তদের
প্রয়োজন হ'ল কৃষ্ণলীলার অনুরূপ গৌরলীলারও আস্বাদন, এবং গৌরলীলার
সহায়তায় রাধাকৃষ্ণজলীলার মধ্যে যথাযথভাবে ও সহজে অন্থুপ্রবেশর অধিকার
গৌরলীলা অনেকে প্রত্যক্ষও করেছিলেন, স্থৃতরাং প্রত্যক্ষে অনিবার্ধ বিশ্বাস
স্থাপনের ফলে অপ্রত্যক্ষও তীর্দের কাছে গ্রত্যক্ষের সমান শ্রদ্ধা অঞ্জন করল।
গৌরলীল! দৃষ্ট ও বণিত হ'লে দেখা গেল কচিৎ কৃষ্ের কিন্তু প্রায়শই রাধার
বিচিত্র ভাবব্যাকুলতার সঙ্গে তা সহজেই মিলে যাচ্ছে। স্থতরাং ব্রজরসপিপাস্থরা
প্রথমে গৌরলীলা আস্বাদন ক'রে তার আশ্রয়ে ব্রজের রাধাপ্রেমের নিগৃঢ়তায়
নিমজ্জিত হওয়ার বাসন। পোষণ করতে লাগলেন। এই জন্য পালাবদ্ধ কীর্ভনে
রাধারুঞ্চলীলার যে-ভাবের যে-রসের পাল] গাওয়। হবে তার পূর্বে রাধাভাববিগ্রহ
কুষ্ণগৌরের সেই ভাবের সেই অবস্থার পদ্দ কীর্তন ক'রে প্রয়োজনগত এবং
রসগত ইচিত্য রক্ষা করা হয়। এরকম গৌরচন্দ্রিকার ব্যবস্থাকে “তছচিত
গৌরচন্দ্রিকা” বলা হয়। অন্য আর এক দিক দিয়ে, গৌরচন্দ্রিকার সাহায্যে
রুষ্ণচলীলার অবতারণ। রাঁধাভাবের জীবস্তবিগ্রহের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতার
পরিচয়ও বটে। বলা বাহুল্য, মহাপ্রতুর প্রত্যক্ষদর্শী বা! পরোক্ষদর্শা ধারা তার
লীল। নিয়ে পদ লিখেছেন তাদ্দের সমন্ত পর্দই যে গৌরচন্দ্রকারূপে গাওয়ার
যোগ্য এমন মনে করা হয়নি । গৌরাজলীল। নিয়ে লেখা বু রচনাই তার
জীবনের বাহঘটন! নিম্নে, যেন নবদীপলীলার মধ্যেকার কাজি-প্রবোধ,
কীতনগান ও রসপর্যায় 9১১
জগাই-মাধাই উদ্ধার, তার সন্ন্যাস ও শচীদ্দেবীর বাৎসল্য, নবন্বীপবাশীর্দের শোক
প্রভৃতি । মহাজনদের বর্ণনাগুণে এগুলির কবিকতিও হৃদয়গ্রাহী, এবং কেবল
গৌরলীল। নিয়ে পাঁলাকীর্তনে এগুলির গ্রস্থন আবশ্তিক, তবু যেহেতু এগুলি
মহাপ্রভুর নিগৃঢ় নিজ লীলারসের বর্ণন! নয়, সেইহেতু কুষ্ণলীলার পালাকীর্তনে
এগুলির ভূমিক। যথাযথ হবে না, বিশেষতঃ যখন কৃষ্ণগৌরের স্বান্ভববিলাস নিয়ে
রচন1 যথেষ্ট পরিমাণেই রয়েছে । দেখ! গেছে, গৌরচন্দিকার প্রয়োজন বিষয়ে
আলোচনা করতে গিয়ে কেউ কেউ এমন মন্তব্য করেছেন যে, কৃষ্ণলীলার
সম্ভোগ-শূঙ্গার প্রভৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে অঙ্লীলত। এমে পড়েছে, সেই
অঙ্গীলতাকে আবৃত করার জন্যই মহাপ্রভুর লীলাপদ দিয়ে কুষ্ণকথ! আরম্ভ কর]।
এর থেকে অসমীচীন মন্তব্য আর কিছু হতে পারে ন1। প্রথমতঃ এ মস্তব্য-
কারীদের প্রশ্ন কর৷ যেতে পারে, ধর। গেল সম্ভোগ-শৃঙ্গারের বর্ণন। অশ্লীল, কিন্ত
বিগ্রলম্ভের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তে! অঙ্লীলতার প্রসঙ্গ নেই, সেক্ষেত্রে কেন
মহাপ্রভুর কথা! অবতারণার প্রয়োজন? দ্বিতীয়তঃ দেবাদ্রিবিষয়া রৃতিতে
কোনে। বর্ণনাই তো] গ্রাম্য বলা চলে না। তা] ছাড়া বৈষ্ণবশান্মেই পূর্বনির্দেশ
রয়েছে--কামৈব গোপরামাণাং প্রেম ইত্যগমৎ প্রথাম্। অর্থাৎ রাধারুফ্প্রণয়ে
কামকথার প্রসঙ্গ থাকলেও তাকে প্রেম বলেই গ্রহণ করতে হবে। আর
“কাম দ্ৌম দোহাকার বিভিন্ন লক্ষণ।” স্থতরাং অবৈষ্ণণ ব্যতীত রাধা-
কষ্ণলীলায় গ্রাম্যতা দোষ কেউই উপলব্ধি করেন না। এমন কি দৃশ্ঠতঃ
প্রকট গ্রাম্যতা যাতে আছে, এমন শ্রীকুষ্ণকীর্তনও বৈষ্বের কাছে নিন্দনীয়
হবে না। মহাপ্রভু শ্চ্ছন্দেই এর পদ আস্বাদন করেছেন।
আসল কথা এই যে, লীল। মানেই ঈশ্বরের নররূপ নরপ্রকৃতি অবলম্বন ক'রে
আত্মপ্রকটন। এই নরলীলায় কৃষ্ণেব অপরিসীম আগ্রহ। এ তার অনির্ণেয়
স্বেচ্ছাও বটে, ভক্তদের স্থখবিধান ও সাধারণকে যথার্থ ধর্ম অর্থাৎ রাগধর্মপথে
আনার জন্য প্রয়োজনীয়ও বটে। বৈষ্বমহাঁজনের1 লীলাশুক মাত্র। তারা
নিজ অন্ু্ব দিয়ে যা যা! প্রত্যক্ষ করেছেন, অবিকল তার উচ্চারণও
করেছেন। তারা গ্রহণ বর্জন ক'রে অনর্থক বাড়িয়ে রঙ. দিয়ে কিছু
বলেননি, সে ক্ষমতা ব1 প্রবণত। তাদের নেই। যেমন নেই শুকপক্ষে
দষ্টবস্তর ব্যতিক্রম ক'রে বেশি কিছু বলা, বা অমূলক বর্ণনা কর|।
গৌড়ীয় বৈষ্ণব মহাজনের! রাধারুষ্ণের ভিন্ন দেহে লীলা! প্রত্যক্ষ করেননি,
একদেহে লীলার আশ্র্যদর্শন তাদের গোচর হয়েছিল, এমনভাবে হয়েছিল
৪১২ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
যে অপ্রত্যক্ষও তার্দের কাছে প্রত্যক্ষ হয়ে উঠেছিল। আর ষোড়শ"
সঞ্চদশ প্রভৃতি শতাব্দীর যে সব মহাঁজন এ লীলা প্রত্যক্ষ করতে পারেননি
পূর্বাচার্যদের আগ্বাক্য অন্থুদারে তারাও কল্পনায় সম্যকূ অনুভব করেছিলেন ।
তাদের কল্পনানেত্রে দর্শনও যে কত বাস্তব তা কি গোবিন্দদাসাদির পদপাঠে
ও শ্রবণে আমরা অনুভব করতে পারি না?
নামমূতি গৌরচন্দ্রের জয় হোক ।
প্রথম-মুদ্রণে সমাঞ্টোহয়ং গ্রন্থঃ। কৃষ্নগর, রবিবার, ওরা বৈশাখ,
বঙ্গীয় সন ১৩৭৪।
[ পরিশি্
শ্রীচৈতন্যের জন্মভূমি__নবদ্বীপ (নদীয়। )*
বাঙলার ও বাঙালীর সহআধিক বৎসরের ইতিহাসের ধারা লক্ষ্য করলে
দেখা যায়, এদেশ ভারতবর্ষের মধ্যে সবচেয়ে চঞ্চল ও পরিবর্তন-প্রবণতার
দেশ। এর মানবসমাজের মধ্যে কালে কালে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও প্রজাতি
বিমিশ্রিত হয়ে পড়েছে, কী দেহে কী ভাবে । ফলে জীবনচর্ধায়, সাহিত্যে ও
দর্শনে এই ভূখণ্ড নানান্ মত-সংঘাতের মধ্য দিয়ে ক্রমাগত আবতিত হয়েছে।
যেমন মানবিক উপাদানে, তেমনি এর ভূপ্রকৃতিতেও পুনংপুন পরিবর্তন
ঘটেছে এব, আজও ঘটছে। নৈসগিক পরিবর্তনের মুখ্য কারণ এর নদীগুলির
গতি-পথেব পরিবর্তন, গতি-অবরোধ, নৃতনতর শ্রোত-পথের আবির্ভাব
গ্রভৃতি। অপেক্ষারুত প্রাচীন গঞ্গী-বরহ্মপুত্রসহ করতোয়া, ভৈরব, মাখাভাঙ্গ?,
ইচ্ছামতী প্রভৃতি এবং অপেক্ষারুত আধুনিকে ভাগীরখী, দামোদর, তিঞ্চার পথ-
পরিবর্তন, শাখা-প্রশাখার বিলোপ ও ভিন্নমুখে বিস্তার মাছষের অর্থনীতিক জীবন-
যাত্রায় রুচিতে স্বাস্থ্যে, স্থতরা' চিন্তাভাবনায় রূপান্তরের স্ষ্টি করেই চলেছে।
এমনি এক নৈসগিক বপান্তরের মধ্যে দিয়ে চালিত হয়েছে ভাগীরথী-
তীরব্তা নবদ্বীপ বা নদীয়ণ'__একদী। বাঙলার সংস্কৃতির কেন্দ্র ও গৌরবস্থল এবং
শ্রীচৈতন্যের বাল্য-কৈশোর-যৌবনের লীলাভূমি, গৌভীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রথম
প্রকাশ ও বিস্তারের কেন্দ্র । পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য যে, দেশ ও জাতির
পক্ষে এত বড় একটা ঘটন। পরবর্তী ইতিহাস লেখকদের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ
হয়নি। বৈদেশিক ও সামস্ততাপ্ত্রিক শাসনের মধ্যে অবশ্য তা হওয়ার কখ।
নয়। ফলে জাতীয় চেতনার বিকাশের পর থেকে জাতীয় মানবিক
ইতিহাস নতুন করে গঠনের জন্য আমাদের নির্ভর করতে হয়েছে মুখ্যত
সাহিত্যিক উপাদানের উপর, আর গৌণভাবে তথাকথিত ইতিহ।সের
বিবরণের উপর অনুমান প্রয়োগ ক'রে এবং কিছু কিছু জনশ্রতির উপরও ।
অথচ আজকের স্্লশিক্ষিত মানষেরও শ্রীচৈতন্থ সম্পর্কে খুটিনাটি ইতিবৃভ
জানবার আগ্রহ খুবই প্রবল হয়েছে। মধ্যযুগের নদীয়াই ব1! কোথায় ছিল
আর শ্রীচৈতন্যের বাসগৃহ সেই নবীপের কোন্ অঞ্চলে হওয়া সম্ভব এটা
০ পে সস
* ১৯ জুলাই, ১৯৭৫ “দেশ” পাত্রক1।
1 শহর 'নদীয়া' নবদ্বীপ শবেরই প্রাকৃত তদ্্ভ্ৰ রূপ । নবহ্বীপ-ণঅদ্দীঅ--নদীঅ]।
৪১৪ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
জানার ওৎস্থক্য কেবল বৈষ্ণব ভক্তর্দের পক্ষেই নয়, ছাত্রদের ও সাধারণের '
পক্ষেও সমান স্বাভাবিক। কিন্ত ছুঃখের বিষয়, আমাদের ইতিহাসের এত
বড় ব্যাপার সম্পর্কে আমর। সচেতন হলেও উদ্যোগী হতে পারিনি আজও ।
এখনকার নবদ্বীপ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের মঠনির্মাতা ও সম্প্রদায়বাদীরা
নির্ধারিত ইতিহাস-ভৃগোলের অভাবে তাদের স্ব স্ব মঠমন্দির প্রতিষ্ঠার মিকেই
শ্রীচৈতন্যের নবদবীপলালার বিভিন্ন অঞ্চল ব'লে চিহ্নিত করে চলেছেন, যাব ফলে
ধর্ম নিয়েও দলীয়তার প্রসার ঘটছে কম নয়।
এরকম অবস্থায় দেশের প্রকৃত ইতিহাস-ভবগোলকে উদ্ধার ক'রে, বাস্তব
পরিস্থিতি দেশবাসীর সামনে তুলে ধর! শিক্ষিত গবেষকদের ও স্বদেশী রাষ্ট্রের
একটি জাতীয় কর্তব্য বলেই মনে করি। সেকালের এই দ্বীপ অঞ্চলটির
উপর নৈসগিক পরিবর্তনের লীনাতরঙ্গ যেভাবে বারংবার আঘাত হেনেছে
তাতে শ্রীচৈতন্যের বাঁসগৃহ, শ্রীবাসের অঙ্গন প্রভৃতি ঠিক কোন্ কোন্ স্থানে
ছিল আজ আর তা সঠিক নির্ধারণ কর হয়ত সম্ভব নয়, কিন্তু গঙ্গাতীরবর্ত
সেই এলাকাগুলি মোটামুটি চিহ্নিত করা ছুরহ হবে না, যদি ভূতত্ববিদ্,
প্রত্বতাত্বিক এবং মধ্যযুগের সাহিত্যে অভিজ্ঞ স্থধীবৃন্দ একযোগে আন্তরিকভাবে
প্রয়াস করেন। এ বিষয়ে ভাগীরথীর পুবাতন প্রবাহপথ নির্ধারণই সবচেয়ে
গুরুত্পূর্ণ ব্যাপার। মহাপ্রভুর নিতান্ত প্রিয়, তার বেগবতী ব্যাকুলতার
মমানধর্মী জেহময়ী ভাণীরথী মহাপ্রতুর অদর্শনের পর থেকে চঞ্চল! হতে হতে
“আর নবদ্বীপের প্রয়োজন কী” এই ব'লে কি পরিশেষে পুরাতন নদীয়া
নগরীর সেই সব লীলাক্ষেত্রগুলি ধুয়ে মুছে অপসারিত করে দিলেন, অথবা
পরবর্তী বৈষ্ৰ সমাজের সাম্প্রদায়িক 'কলহু ও ক্রম-অবক্ষয় দৃষ্টে ক্ষোভে
মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বিপরীতগতি হলেন? মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যে নণিত
মে নদীয়া আর নেই, যছুপতেঃ ক গতা৷ মথুরাপুরী ! সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক
প্রয়াসে নবদ্বীপ অধ্যয়ন প্রারন্ধ হবে কনা! জানি না। আজকের এই
সীমায়িত অবকাশে মধ্যযুগের সাহিত্যে এ বিষয়ে কী প্রমাণ মেলে ত। দেখ।
যেতে পারে।
সাহিত্য বলতে মুখ্যত বৈষ্ণব জীবনীকাব্যগুলিই এ বিষয়ে আমাদের
অবলম্বন। জীবনীকাব্যগুলিতেই বর্ণন। প্রসঙ্গে নব্ধীপের পথঘাট, শ্রীচৈতন্য
সম্পকিত ভক্তদের বাসস্থান, পার্খববতর্শ অঞ্চলসমূহ এবং ভাগীরথীর প্রবাহ্পথ
প্রভৃতি বিষয়ে বেশ কিছু আভান পাওয়া যায়। চৈতন্তজীবনী বিষম্নক
শ্রচৈতন্টের জন্মভূমি-_নবদ্ীপ ৪১৫
পদাবলী ইতিবৃত্ত বিষয়ে নিতাস্তই কৃপণ, জীবনী গ্রন্থগুলির লক্ষ্যও ইতিবৃত্ত
মঞ্চয়ন নয়, লীলাশ্রবণোৎস্থক ভক্তচিত্তের তৃপ্তিসাধন। তবু ই।তহাস-ভূগোলকে
জীবনীকাররা বর্জন করতে পারেন নি, প্রাসর্দিকভাবে গ্রন্থমধ্যে স্থান
তাদের দ্রিতেই হয়েছে । প্রদত্ত প্রমাণের উপর তার] পাঠকদের অনুমানের অবকাশ
রেখেছেন ; কেউ কেউ একটু বেশী, কেউব। অপেক্ষাকৃত কম। অনশ্য এমন
চরিতকাব্যও মেলে যার মধ্যে এতিহাসিক বর্ণনের মায়া আছে মাত্র, গ্রককৃত
তথ্য কিছ নেই বললেই চলে। যাই হোক, আমাদের অভিপ্রেত নবদ্বীপ-
পরিচয়ের ব্যাপারে চরিত-গ্রন্থগুলিকে এইভাবে বেছে নেওয়া যেতে পাঁরে__
(১) মুরারি গুপ্তের সংস্কৃত চৈতন্যচরিত গ্রন্থ । এটির প্রমাণ খুবই গুরুত্ব-
পূর্ণ, কারণ শ্রীচৈন্তস্থের জীবৎকালেই গ্রন্থটি লিখিত ও সমাপ্ত হয়। আর
স্রারিগুধ শ্রীচৈতন্যের জ্যেষ্ঠ সহপাঠী এবং একান্ত প্রিয় পার্ধদ ছিলেন ।
কিন্তু চৈতন্ব-জীবনীব সঙ্গে নদীয়ার ইতিহাস-ভূগোল নির্ধারিত' ক'রে যাবেন
এমন অভিপ্রায় মুরারির ছিল না। তিনি নিতান্ত ধামিক, বিশেষত ভক্তের
মতই গ্রন্থ লিখে গেছেন। তবু প্রসঙ্গক্রমে শ্রচৈতন্ের পারিবারিক অবস্থ।
এবং নবদ্বীপ বিষয়ে ছিটেফোটা যেটুকু পরিচয় তিনি দিয়ে গেছেন তারই
মূল্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । (২) কবিকর্ণপূরের লেখা সংস্কৃত চৈতন্তচরিত
মহাকাব্য এবং চৈতন্যচন্দ্রোদয় নাটক। নবছীপ প্রসঙ্গে এতে একটি স্মরণীয়
সংবদ পাওয়া যায়, যা চৈতন্যভাগবতেও মিলছে। ত] হ*ল নবদীপ নগরীর
সন্নিহিত গঙ্গার পশ্চিম পারে কুলিয়া গ্রাম। (৩) চৈতত্ত-ভাগবত নামে
বাঁডল। গ্রন্থটি শ্রীচৈতন্তের তিরোভাবের অন্তত কুড়ি বছরের মধ্যে সমাণ্চ
হয়। এটিতেই তুলনামূলকভাবে নবদ্বীপের ইতিহাস ভূগোঁলের বিশেষ
পরিচয় যা কিছু গ্রথিত দেখা যায়। রচনা৷ হিসেবেও এটি খুবই প্রামাণিক।
(৪) লোঁচনদাসের চৈতন্মঙ্গল-__এর বাস্তব এতিহাসিক মূল্য নগণ্য ।
(৫) জয়ানন্দের চৈতন্তমঙগল-_এই কাব্যটির প্রারভে নবদ্বীপের পীরালিয়! নামক
মুদ্লমান-প্রধান একটি গ্রামকে নবদ্ধীপের সন্নিকটবর্তা বল! হয়েছে। কিন্তু এ
বিষয়ে যে তথ্য পরিবেশিত হয়েছে তা। এঁতিহাসিক নয়, বিশ্বাসযোগ্যও মনে হয়
না, ঘেমন জয়ানন্দ পরিবেশিত অন্য বহু তথ্যও বিশ্বাসযোগ্য নয়। (৬) কৃষ্টদাস
কবিরাজ বিরচিত চৈতন্যচরিতামৃত | চৈতন্য-জীবনী এবং বৈষ্ণব ধর্মের দিক থেকে
এটি সর্বশ্রেষ্ঠ হলেও নবদীপ-পরিচিতির দিক দিয়ে চৈতন্যভাগবতত থেকে নৃতনতর
কোনো সংবাঁদ এতে পাওয়া যায় না। (৭) শ্রীনরহরি চক্রবর্তা বিরচিত
৪১৬ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
ভক্তিরত্বাকর। এটি শ্রচৈতন্যের তিরোভাবের আনুমানিক ছুশ' বছর পরে
লেখা গ্রন্থ । দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈষ্ণব আন্দোলনে ষোড়শ শতাব্দীর শেষ .থেকে
নতুন করে বৈষ্ণব সংগঠন প্রারব্ধ হয়। এই সময় নিগৃঢ় বৈষ্ণব সাধন পদ্ধতি
ও কীতনাদির শুন্দ্রতা গড়ে উঠতে থাকে । বহু বৈষ্ণব তন্তগ্রস্থও রচিত হয়।
এরই উপর নির্ভর ক'রে নিছক ধর্মতন্ত্রের বিস্তারই এই গ্রন্থাটর লক্ষ্য । সপ্তদশ
শতাব্দীর বৈষ্ণবমগুলী ও কেন্দ্রগুলির একট সাধারণ পরিচয় এ থেকে পাওয়া
গেলেও প্রকৃত ইতিহাসের দিক দিয়ে গ্রন্থটি নিভরযোগ্য নয়, সে দৃষ্টি থেকে
এটি লেখাও হয়নি । সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে, ছুশ" বছর আগেকার
নবদীপ অঞ্চলের একটি বর্ণনা তিনি তার গ্রন্থে সঙ্গিবিষ্ট করেছেন, যার মধ্যে
নবছীপ ও পার্বতী অঞ্চলগুলির পুরানো লৌকিক নাম-পরিচয় বর্জন ক'রে
তিনি নতুন নামকরণের প্রয়াশ করেছেন এবং প্রতিটি অঞ্চলের সঙ্গে একটি ক'রে
উদ্ভট অলৌকিক কাহিনী যোগ ক'রে দিয়েছেন । এবিষয়ে আমর! পরে বলছি ।
এখন দেখা যাক, নবদ্বীপ, ভাগীরথী ও নবদ্বীপ-পার্খববতাঁ অঞ্চলের কী পরিচয়
মুরারি, কবিকর্ণপূর, বৃন্দাবন দাস এবং নরহরি চক্রবর্তাঁ তাদের গ্রন্থে গ্রথিত
করেছেন।
শ্রীচৈতন্তের বাসগৃহ এবং নবদীপ অঞ্চলের পরিচয় যদি মুরারি দিতেন তাহলে
তা-ই সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য হ'্ত। কিন্তু মুরারি ইতিবুত্তে অন্থুরাগী ছিলেন
না। ছু-একটি ঘটনার বর্ণনায় তাঁর অজ্ঞাতসারে অবশ্য ভাগীরথীর অবস্থান
স্থচিত হয়েছে । যেমন, (১) গৌরাঙ্গের জ্যে্ট ভ্রাত। বিশ্বরূপ গঙ্গাপার হয়ে
সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন, “ত্যক্তী গৃহং স্বর্গনদীং প্রতীর্য জগ্রাহ সন্যাসম্
অশক্যমন্যৈঃ” (১ম প্রক্রম, ৭ম অঃ)। (২) বাস্তব সন্ন্যাস গ্রহণের কিছু
পূর্বেই একদিন শ্রীচৈতন্ত মাতার উপর বিসক্ত হয়ে গঙ্গা পার হয়ে উত্তর কূলে
গিয়ে দ্রুত পদক্ষেপে কিছুদূর চলে গিয়েছিলেন। মুরারি ও অন্তান্ত সহচরের'
উদ্দিগ্ন হয়ে পশ্চাদ্ধাবন ক'রে তাকে ফিরিয়ে এনেছিলেন__
ততে। ব্যাট্যাং মুরারে স্তে ঝটিত্যাগত্য সেশ্বরাঃ |
উপবিশ্য ক্ষণং স্থিত্বা বিজয়স্তাশ্রমং যযুঃ ॥
উধিত্বা রজনীং তত্র প্রভাতে ভগবান্ পরঃ।
জগামোত্তরকং কৃলং জাহব্য1 অন্রমৎ ভ্রুতম্॥
(২ প্রঃ ১২ অঃ)
শ্রচৈতন্তের জন্মত্মি--নবদ্বীপ ৪১৭
(২) নবদীপের বিপরীত কৃলে কুলিম্বা (- কৃলদ্বীপ) নামে গ্রাম ছিল।
অবশ্ত মুরারির চৈতন্যচরিত গ্রন্থের শেষের দিকে যে অংশে এই সংবাদ
রয়েছে সেই অংশ প্ররক্ষিপ্ত ব'লে পণ্ডিতের মনে করেন। কিন্তু নবঘীপের
পশ্চিম দিকে গল্াপাবে যে কুলিয় গ্রাম ছিল সে সংবাদের নিংসংশয়
প্রমাণ দিচ্ছেন বুন্দাবনদাস ও কবিকর্ণপূর। স্থতরাং মুরারির এ অংশ
ক্ষিপ্ত হলেও নবদীপের পশ্চিমে যে গন্গ! ছিল (এবং মুরারির অন্য বর্ণনায়
উত্তরেও ছিল) এ স্থুনিশ্চিত। নবদ্বীপের পশ্চিমে গঙ্গ! এবং প্রাম্ন বিপরীত
কূলে 'কুলিয়া” এ সংবাদ কবিকর্ণপুরও দিচ্ছেন। তার মহাকাব্যে তিনি
কুলিয়ার নাম করেন নি, শুধু বলেছেন গঙ্গাপারে পশ্চিমে কোনে। দেশে গিয়ে
শ্রীচৈতন্ত উপস্থিত হলেন (নীলাচল থেকে গৌড়ভ্রমণের মধ্যে)। চৈতত্য-
চরিত মহাকাব্য তার একেবারে প্রথম বয়সের লেখা, কিন্তু শেষ বয়সে
তিনি যে নাটক লেখেন ( চৈতন্যচন্দ্রোদয় ) তাতে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন
যে গঙ্গাপারে নব্ীপের পশ্চিমের এই গ্রাম হল “কুলিয়া” | যেমন-_-
প্রতাপরুদ্র । কথয় মে কিয়দ্দ'রং ভগবন্তেশ গতাঃ |
পুরুষাঃ । কুলিয়াগ্রামং যাঁবৎ।
রাজা । ( সার্বভৌমমুখং নিরীক্ষতে )।
সার্বভৌম | দেব, নবদ্বীপপারে পারেগঙ্গ,
কশ্চন তশ্লাম। গ্রামোহন্তি ।
১ ধঃ গং
পুরুষ: । ততোইছৈতবাটামভ্যেত্য
হরিদ্রাসেনাভিবন্দিতঃ তখৈব
তরণি-বত্মন। নবদ্বীপন্য পারে কুলিয়।
নাম গ্রামে মাধবদাসবাট্যাম্ উত্তীর্ণবান্। (নবম অঙ্ক )
এ হ'ল শ্রীচৈতন্যের নীলাচল থেকে বৃন্দাবন যাবার অভিলাষী হয়ে যাত্রা
কালে গৌড়ের পথমধ্যবর্তা ঘটনার বর্ণনা । কবিকর্ণপূব আরও সংবাদ দিচ্ছেন
যে, শ্রীচৈতন্তকে দেখার জন্য নবদ্বীপ অঞ্চল থেকে লোকের ভিড় এত বেশি
হয়েছিল যে খেয়্া-নৌকাঁর ভাড়া এক কাঁক থেকে এক কাহন পর্যন্ত
উঠেছিল, আর জলপখে মাঝে মাঝে যে সব বাঁশের সেতু করা হয়েছিল তা
প্রত্যহই ভেঙে যেতে লাগল । শ্রীচৈতন্য সাতদিন কুলিয়ায় থেকে নবছীপের
লোকের মনস্কামন৷ পূর্ণ ক'রে রামকেলি গ্রামে যান।
২৭
৪১৮ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
উক্ত চৈতন্তচন্দ্রোদয় নাটক লেখার বিশপচিশ বছর আগেই বাঙলায়
লেখ' বিখ্যাত গ্রন্থ বৃন্দাবনদাসের চৈতন্যভাগবত বিরচিত হয়। এই গ্রন্থটিও
অত্যন্ত প্রামাণিক আর নবদীপ অঞ্চলের এবং সেই সঙ্গে এ অঞ্চলের
সমাজস্থিতির ও শ্রঁচৈতন্যের পারিবারিক অবস্থার যা কিছু বিশদ বিবরণ
এতেই পাওয়া খায়। যদিও শ্রীচৈতন্তের্ বাঁসগৃহ কেমন ছিল, কোন মুখে,
গঙ্গা থেকে ঠিক কত দূরে এ সব খুচরে! খবব তিনি দেননি । বৃন্দাবনের গ্রস্থের
মধ্যথণ্পে শ্রীচৈতন্যের নবধর্ম প্রকাশের বর্ণনার মধ্যে কাজীর বিরুদ্ধত!
প্রশমন বণিত হয়েছে । এই প্রসঙ্গে যে-যে অঞ্চল ও পথ দিয়ে শ্রীটচতন্তের
নেতৃত্বে সংকীর্তনের দল কাজীর বাড়ি গিয়ে পৌছেছিল এবং চক্কাকারে
নবছীপ পবিক্রম। ক'রে ফিরে এসেছিল তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
তখনকার নবদ্বীপের পরিচয় হিসাবে এই বিবরণটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এই
বিবরণ অনুসরণে দেখা যায়, নবছ্ীপে গঙ্গার দক্ষিণ তীর ধ'রে (পশ্চিম থেকে
পূর্বে ) একটি পথ চলে গিয়েছিল। এই পথটি তীরবর্তী বসতিগুলির সঙ্গে
যোগাযোগ রক্ষা করত 1 এ ছাড়া গঙ্গার উপর বেশ কয়েকটি স্নানের ঘাটও
ছিল। শ্রীচৈতন্ত নিজে যে ঘাটে স্নান করতেও সাঁতার কাটতে অভ্যস্ত ছিলেন
(সম্ভবত তার গৃহের সব থেকে কাছের কোনো ঘাট) সেখান থেকে
সংকীর্তনের প্রারভ্ত হয়। তারপর মাধাইয়ের ঘাট এবং বারোকোণ!
ঘাট প্রভৃতি অতিক্রম ক'রে এ পথ ধ'বে তার। গন্গানগর? অঞ্চলে এসে
পৌছালেন। গঙ্গার নগরের মধ্য দিয়ে নগরিয়ারদদের ঘাট অতিক্রম ক'রে
এলেন শিমুলিয়া। এ শিমুলিয়া গ্রাম এখনও রয়েছে। এর অবস্থিতি
বর্তমান নবদীপ শহরের উত্তর-পূর্বে এবং মায়াপুর” নামে বর্তমানে কথিত
অঞ্চলের ঠিক উত্তরাংশে। শিমুলিয়াতে এসে এ পথ ছেড়ে দিয়ে “কাজীর
বাড়ির পখ ধরিলা ঠাকুর”। শিমুলিয়া সম্পর্কে বুন্দাবনদ্দাস বলেছেন যে
এটি নবদ্বীপ শহরের প্রত্যন্ত পল্লী “নদীয়ার একান্ত নগর শিমুলিয়া» । বিবরণ
থেকে বেশ বোঝা যায় যে শিমুলিয়া এবং সেখান থেকে কাজীর বাড়ী (যে
অঞ্চলকে কাজীপাড়া বল) হ'ত ), সংকীর্তনের প্রারস্ত স্থান থেকে বেশ কিছু
দুরের রান্তা। আর এ অঞ্চলে গঙ্গাও নেই, কোনো ঘাটও নেই। আরও
লক্ষপীয় এই যে, নবদ্বীপ থেকে শিমুলিয়া আনতে এবং কাজীর প্রত্যয়
উৎপাদনের পর গাদিগাছা, পারভাঙ্গা! এবং সম্ভবত “মাজিদ ( মধ্যদহ ) প্রভৃতি
দিয়ে অর্থাৎ বর্তমান নব ঘীপের পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চল বেষ্টন ক'রে উত্তর-পশ্চিমে
শ্রচৈতন্যের জন্মতুমি__নবন্ধীপ ৪১৯
ফিরে আমতে গিয়ে সংকীর্তনের দলকে পথে কোনো নদী বা জলপথ
অতিক্রম করতে হয় নি। গার্দিগাছা। অঞ্চল 'হ'ল এখনকার গঙ্গা এবং
জলঙ্গী নদীর মিলনস্থলের নিকটবর্তী তখনকার গ্রাম। আর পারভাঙ্গ।
হ'ল এখনকার নবদ্বীপ শহরের মধা পূর্ব ভাগ। নবদ্বীপ অর্থে
জলপখের দ্বারা বিচ্ছিন্ন নটি দ্বীপ নয়। .নব উদ্ভূত দ্বীপ, ভাগীরথী
এবং জলঙ্গীর প্রবাহ দ্বারা বেষ্টিত দ্বীপারকৃতি অঞ্চল। পুরাতন
মানচিত্রাদি এবং ভাচ ইংরেজ বণিক ও পর্যটকর্দের বিবরণ থেকে দেখা
যায় জলঙজী যৃহ্মূহু তার আ্রোতপথ পরিবর্তন করেছে। এখন যেখানে
গঙ্গার সঙ্গে মিশেছে বহু আগে তার উত্তরে মিলিত ছিল। পরে এ পথ ত্যাগ
করে কিছুদূব আগে থেকেই দক্ষিণমুখী হয়ে ব্মীন নবছীপের ৪1৫ মাইল
দক্ষিণে সমু্রগডের কাছে মিলিত হয়েছিল। আর ষোড়শ শতাব্দীর
প্রামাণিক বর্ণনা থেকে দেখছি যে, গঙ্গাপারে ন্বদ্বীপের পশ্চিমকূল যেমন
ছিল, তেমনি উত্তরকৃলও ছিল অর্থাৎ গঙ্গা উত্তরে ও পশ্চিমে নবছীপকে
বেষ্টন কবে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত ছিল। এখনকাব নবছীপের পূর্ববাহিনী
বতমানের গঙ্গ। বেশ পরেই আঁবিভূত হয়েছে। যোডশ শতাব্দীর বৈষ্ণৰ
গ্রন্থ গুলিতে জলঙ্গীর প্রবাহের নাম পাওষা যায় না। অনুমান, জলঙ্গী
তখন বেশ কিছু দূর দিয়ে প্রবাহিত হত। তবু কিছু দ্বরের এ জলঙ্গী এবং
উত্তর-পশ্চিম গঙ্গ। মিলিয়ে ছীপাকৃতিই হয়ে দাড়ায় ।
নগর-সংকীর্তনের বর্ণনায় মুরারি বিস্তারিত বাঁপ।রে যান নি। তিনি
বলেছেন__
হরি-সংকীতনং কৃত্বা নগরে নগরে প্রভু: |
শ্নেচ্ছাদীমুদ্দরধারাঁসৌ। জগতামীশ্বরে! হরি: ॥
এ থেকে বোঝা যার নবদ্বীপের পূর্বপ্রান্তের মুসলমান পলীগুলিকেও তিনি
স্পর্শ করেছিলেন। বুন্দাবনদাস বলছেন,
“সর্ব নব্ধীপে নাচে ত্রিভুবন-রাঁয়” ।
পরে তিনি বলেছেন শৃন্রপ্রধান নগর-অঞ্চলের নগরিয়াদের সঙ্গে শ্রাচৈতন্যের
বিশেষ প্রীতির সম্পর্ক ছিল এবং শঙ্খবণিক ও তন্তবায়দের সঙ্গে নৃত্যকীর্তুন
ক'রে “খোলাবেচ। শ্রীধরের” গৃহে কিছুক্ষণ কাটিয়ে তিনি ব্বগৃহে প্রত্যাবর্তন
করেন। সম্প্রতি শ্রচৈতন্তের প্রায় সমকালীন পদ্কর্তা উদ্ববদাসের ভনিতায়
একটি পদ পাওয়া গেছে। এ পদটিতেও এ নগরসংকীর্তনের স্থানগুলির নাম ও
৪২০ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
পর্যটনের ক্রম উল্লেখিত রয়েছে । বৃন্দাবনদাস থেকে বিশেষ এই যে, শ্রীচৈতন্য
রাজপগ্ডিত সনাতন মিশ্রের গৃহ অর্থাৎ তার শ্বশুরালয় হয়ে তবে নিজালয়ে
প্রত্যাবর্তন করেন। আর রয়েছে গঙ্গার ও শ্রীচৈতন্যের বাধগৃহের অবস্থান
সম্পর্কে একটি চমকপ্রদ তথ্য-_
বায়ুকোণে কিছু দূরে গঙ্গার দক্ষিণ তীরে
নিজ গৃহে গেলা গৌরহরি ॥
এ পদটি যদি অকৃত্রিম হয় তাহলে তৎকালীন গঙ্গার প্রবাহ এবং নবদ্বীপ
মধ্যে শ্রীস্তৈন্তের বাসগৃহের অবস্থিতির অন্বেষণ অনেকটা সহজ হয়ে আসে।
অবশ্ট মুরারি এবং বুন্দাবনদাস যে বর্ণনা! দিয়েছেন তাতেও গঙ্গার দক্ষিণ
কূলেই যে শ্রীচৈতন্যের “নিজঘাঁট” 'মাধাইয়ের ঘাঁট” “বারকোণা ঘাট? এবং
“নগরিয়া ঘাট” ছিল এই তথা অন্থমিত হয়। সন্যাসের সংকল্প নিয়ে গৃহ-
ত্যাগ ক'রে শ্রীচৈতন্য যে-ঘাটে গঙ্গ। পার হয়ে উত্তরকৃলে পৌছে কাটোয়ার
পথ ধরেছিলেন জনশ্ররতিতে তাকে “নিদয়ার ঘাট” বলে। আমাদের অনুমান
এটি তখনকার খেয়াঘাটও ছিল এবং বুন্দাবনদীসের টৈতন্য-ভাগবতে নব-
দ্বীপের মধ্যবর্তা অথচ শ্রীচৈতন্-শ্রীবাসের গৃহ থেকে দুরব্তণা যে-রাজপথের
বিবরণ রয়েছে তা এ খেয়াঘাট অতিক্রম ক'রে গঙ্গার তীর ধরে কাটোয়া
পর্যস্ত চলে গিয়েছিল। এখন নবদ্বীপ থেকে কাটোয়৷ যেতে হলে গজ।
অতিক্রম করতে হয় না, তখন হ'ত! নবদ্বীপের আর একটি খেয়াঘাটের
অন্তিত্ব পাঁওয়! যাচ্ছে দক্ষিণ দিকে, যা পার হয়ে জনত। শ্রীচৈতন্যকে দেখার
জন্য বিদ্ভাবাচষ্পতির গ্রাম বর্তমান বিদ্ভানগরে- সমবেত হয়েছিল। হুসেন
শাহের শাসনকালে “আ হ্ুয়াঁ অর্থাৎ বর্তমান কালনার সংলগ্ন “অন্থিকা”* গ্রাম
এই অঞ্চলের ব| মুল্লুকের প্রশাসনিক টার ছিল! "খানে মু্লুক-
পতির নিবাস ছিল। নবদ্বীপের মধ্যবর্তী মে রাজপথের উল্লেখ রয়েছে তা৷
নিশ্চয়ই অনুদ্নার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত এবং বিষ্ানগরের খেয়াঘাট
পার হয়ে নবদীপের মধ্য দিয়ে ও কাঁজীর বাড়ির সন্নিকট হয়ে কাঁটোয়।
যাবার খেয়াঘ'ট পর্যস্ত প্রসারিত ছিল এ অনুমান অসংগত হবে না। রাজপথ
যে শ্রীচৈতন্য ও শ্রীবাসের গৃহ থেকে কিছু দূরবতণ ছিল এ প্রমাণ পাঁওয় যায়
* অনুপ! ৰা আদুয়। শব্ষের অর্থ আমবাগানের জন্ত দেয় ট্যাকৃদ্ যে গ্রামে আদায় করা হত।
“অন্বিক।" নাম এখনকার বানানে!
শ্রীচৈতন্যের জন্মসূমি__-নবদ্বীপ ৪২১
চৈতন্ত-ভাগবত থেকেই । অখচ ৩ শ্রীচৈতন্ের সহপাঠী ও স্থগায়ক মৃকুন্দ-
দত্তের গৃহের নিকটেই ছিল, কারণ-_
“ রাজপথ দিয় প্রভু আইসে একদিন।
সি ১ ০
মুকুন্দ যায়েন গঙ্গা! শান করিবারে ।
(আদি-__সঞ্তম )
শ্রীবাস কার্ধব্যপদেেশে একদিন রাজপগ দিয়ে যাচ্ছিলেন, অকল্মাৎ কিশোর
গৌরাঙ্গকৈ সে পথে দেখে সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করলেন--“কতি চলিয়াছ
উদ্ধতের চুঁভামণি?” (আদি-_অষ্টম)। আহ্মানিক ১৬৮০ শ্রী: প্রস্তুত
ফ্যান্ডেন ব্রোক্রে নকশায় দেখছি তখনকার একটি গ্রশস্ত রাজপথ ও
ব্যাণিজ্যপথ মেদিনীপুর থেকে বর্ধমান কাটোয়। হয়ে গঙ্গার ওপার থেকে
সোজা কাশিমবাজার পর্যন্ত চলে গেছে। আব্বুয়।-নবীপের এই রাজপথ,
কাটোয়ায় গিয়ে উক্ত পথের সঙ্গে সম্মিলিত ছিল এই অনুমান হয়। নদীর
প্রবাহে বা অন্যভাবে বিনষ্ট না] হলে যাতায়াতের পথ কখনও বিলুপ্ঠ হয় না।
এ পথেব পাশেই শহর গঞ্জ গড়ে ওঠে। আমাদের মনে হয় বর্তমান
পোড়োমা-তলার ( পড়ুয়া” পোড়ো।1+মা) পাশ দিয়ে যে পথটি দক্ষিণে
উত্তরে বহুদূর প্রসারিত এটিই তখনকার রাজপথ ।
গৌড়ে আগমনকালে শ্রীচৈতন্তের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিতির ব্যিয়ে কবিকর্ণ-
পুরের সঙ্গে বৃন্দাবনদাঘের কোথাও কোথাও মতানৈক্য থাকলেও শ্রীচৈতন্ত
বিদ্য।াঁচস্পতির গৃহে এবং প্রবল জনতার চাপ থেকে বিগ্ভাবাচস্পতিকে
রক্ষা করতে গিয়ে যে মাঝরাতে লুকিয়ে কুলিয়! গ্রামে চলে আসেন এ তথ্যে
কোন বিরোধ দেখা যায় না। বস্তত কুলিয়া ব1 'পাড়পুর-কুলিয়।” ষে
নবদ্বীপের প্রায় সংলগ্ন এবং গঙ্গার অপব পারে পশ্চিম তীরে ছিল এটি একটি
অবিসংবাদিত সত্য । ফলত এও খোঁঝা যায় যে গঙ্গ! নবদ্বীপকে উত্তরে ও পশ্চিমে
বেষ্টন করে দক্ষিণ দিকে প্রনাঁহিত ছিল। এ বিষয়ে অন্য নিঃসংশয় প্রমাণও
মিলেছে । কবিকঙ্কণ মুকুন্দের চণ্তীমঙ্গলকাব্যে ষোডশ শতাব্দীর গঙ্গার এই
অঞ্চলের প্রবাহপথ নির্দিষ্ট হয়েছে। ধনপতির সিংহল যাত্রার বর্ণনা প্রসঙ্গে
মূকুন্দ অঞ্জয় ও ভাগীরখীর সংোগস্থল থেকে চব্বিশপরগন1 পর্বস্ত গঙ্গার
পার্খবতী বেশ কয়েকটি গ্রাম নগর ও ঘাটের উল্লেখ করেছেন। উত্তর থেকে
দক্ষিণে বর্ণনার ক্রম হচ্ছে এই : অজয় ভাগীরঘীর সংযোগস্থলে ইন্দ্রানী, ডাইনে
৪২২ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
ভাওলিংহের ঘাট, বামে মাটিয়ারি চগ্ডিগাছা, বেলনপুর। দিনে ও রাত্রে
বাহিয়। “পুরধলী,” ( পুরস্থলী - বর্তমান পূর্বস্থলী ) তারপর নবদ্বীপ। সেখানে
চৈতন্য-বন্দনা ও রন্ধন ভোজন সেরে নিয়ে রাত্রিযাপন ক'রে পবেব দিন যাত্রা
করে পাড়পুরঃ সমূদ্রগড়, মির্জাপুর, ডাইনে অনুয়া, বামে শান্তিপুর, ভাইনে
গুপ্তিপাড়া। পরে উলী, খিসিমা ঘুরে ফুলিষাব ঘাট ইত্যাদি। এন
বর্ণনক্রম মোটামুটি নির্ভরযোগ্য । অধিকাংশ অঞ্চল এখনও বর্তমান আছে।
কয়েকটির নাম পরিবতিত হয়েছে মাত্র। আর গঙ্গার গ্রবাহ গত চারশ? বব
ধরে এ-পাঁশ-ও পাশ করেছে ব'লে কয়েকটি গ্রাম বর্তমানে একটু দু পণ্ডে
গেছে । যেমন মাটিরারি গঞ্জ থেকে এখন মাইল তিনেক. পূর্বে। বেলনপুতের
বর্তমান সংস্কতায়িত নাম হ'ল বিল্বগ্রাম__মদনমোহন তর্কালংকারেব নিবাস!
চণ্তীগাছা। গ্রামটি সম্ভবত ভিন্ন নাম ধারণ করেছে। মুড়াঁগাছার নিকটবর্তী
€কানে গ্রাম হতে পারে। পুরধলী আর কিছুই নয় বর্তমান পূর্বস্থলী, যার
পুরস্থলী নাম প্রাচীন পুঁথিতে পাওয়া যায়। লক্ষণীয় পূর্বস্থলীব পরই নবদ্বীপ,
নবধীপের পরেই পাড়পুরের উল্লেখ । পাঁডপুর হ'ল পূর্বোক্ত কুনিয়ার সংলগ্ন
গ্রাম । কৃত্রিম শুদ্ধবপে কদাচিৎ পাহাড়পুর | ছু'টি গ্রামকে একসঙ্গে চিহ্নিত কর!
হয় পাড়পুর-কুলিয়৷ ব'লে । পূর্বেকার নবদ্বীপ শহরের প্রায় বিপরীত কৃলে স্বপ্ন
দক্ষিণে এ কুলিয়া অধুনা বিলুপ্ণ। সমুদ্রগড বর্তমান রেল স্টেশনের দক্ষিণে
গ্রাম। এ সমুদ্রগড়ের সন্সিকটে একদ| গঙ্গার সঙ্গে জলঙ্গী এবং দামোদরেব পূর্ব
প্রবাহ “খড়ী” নদী মিলিত ছিল এবং এ মিলনস্থলের নাম ছিল “তেমোহানী”।
গঙ্গা তখন“ফুলিয়ার পাশ দিয়ে প্রায় উত্তর মুখে বাক নিয়ে উল অর্থাৎ বর্তমান
বীরনগর এবং উলার পূর্বদিকের খিস্মা গ্রাম হয়ে আবার দক্ষিণ দিকে
প্রবাহিত হয়েছিল। গঙ্গার সেই পুরাতন খাতের নিদর্শন আজও স্পষ্ট) আব
পূর্বতন গঙ্গ1 ( মড়িগঙ্গ। ) যে বর্তমান মবছীপ শহরের মাইল খানেক পশ্চিমে ও
মাইল ছুই উত্তরে প্রবাহিত ছিল তারও ভূতাত্বিক প্রমাণ যথেষ্ট । জলঙ্গী নদী যে
মুহুমূহু পার্খপরিবর্তন করেছে এবং সম্ভবত ষোড়শ শতাব্দীতে ত1 নবদ্বীপ থেকে
পূর্বে বেশ কিছু দূরে ছিল তারও প্রমাণ এ অঞ্চলে যাতায়াতের ফলে নিত্যই
দবেখছি। বৃন্দাবনদাস জলঙ্গীর বর্ণনা দেননি । কিন্তু তার চৈতন্তভাগবতের
অন্ত্য খণ্ডে দেখা! যায় শ্রীচৈতন্য সন্যাস নিয়ে উত্তরে পশ্চিমে রাঢ় অঞ্চলে তিন
দিন ভ্রমণের পর যখন শাস্তিপুরে ফিরে এসেছিলেন, তখন তাকে দেখার জন্য
নবদ্বীপ থেকে ভক্ত ও পার্ধদের নৌকায় জলপথ অতিক্রম ক'রে তবে
শ্রীচৈতন্যের জম্মভূমি-_নবহীপ ৪২৩
শাস্তিপুরে পৌছেছিলেন। নবদ্বীপ গঙ্গার যে দিকে শাস্তিপুরও সেই দিকে
এবং ফুলিয়। শান্তিপুর থেকে গঙ্গার তীর হয়ে নবদীপ পর্ধস্ত পথও ছিল।
ফলে অন্থমান হয়, যে-জলপথ তারা নৌকা অতিক্রম করেছিলেন, তা এই
জলঙ্গী নদীর, যা শান্ছিপুবের কিছু উত্তরে গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হ'ত । জলঙ্গীর
এই পুরাতন প্রবাহপখ ১৯১৭ শ্রীং প্রন্তত বঙ্গীয় সার্ভে মানচিত্রে রশ্নেছে, তাছাড়া
সপ্তদশ শতাব্দীতে নিগিত ফ্যান্ডেন ব্রেক এবং থবৃন্টনেব মানচিত্রে পাওয়।
যাচ্ছে । শ্রী: ১৭৫০-?৫ মধ্যে নেখা ভারতচন্দ্রের অন্র্ধামঙ্গলে মহারাজ
কষ্চচন্দ্রের রাজোর সীম। বর্ণনাকলে ল। হয়েছে_-“রাজোর উত্তর সীমা
মুশিদাবাদ | পশ্চিমের সীম] গঙ্গ।' ভাগীলঘীখাধ ॥৮ এ সীমানা! এখনও নদীয়।
জেলার সীমানা । বর্তমান প্রবাহিত নবদ্বীপপূর্ব গ্দা অন্থত ভারতচন্দ্রেব
কাব্যরচনাঁর সমম পর্যস্ত ছিল ন]।
এখন অপর বিখ্যাত গ্রন্থ ভক্তিরত্রাকরেব বর্ণনা দেখা যাঁক। একমাত্র
ঘভক্কিরত্বাকর+ গ্রন্থে বিশেষ উদ্যোগ আয়োজন সহকাবে নবদ্ীপের বর্ণন।
দেওয়। হয়েছে । শ্রীনরহরি চক্রবর্তীর তক্তিরত্রাকর আঠারে। শতাব্দীর বচন ।
গ্রন্থটি সার্থকশামা এবং সাঁধনপখের পথিক বৈষ্ণব উক্তেব কাছে যুল্যবান্
নিঃসন্দেহে । কিন্ত গ্রন্থটি যে-পরিমাণে ভক্ত-ওক্তির উৎকর্ষ-বিধায়ক গ্রিক সেই
পরিমাণেই ইতিবৃত্ত ও বাশ্তবের উপব নিঠুর অবজ্ঞার পরিচায়ক । যেমন
বলা যায়, শ্রীচৈতন্য-অদ্ৈত-নিত্যানন্দের পরবতী তিন বৈষ্ণব মহাপুরুষ
শ্রীনিবাস নরোতুম-শ্যামানপ্দের কীতিকলাঁপ বর্ণনা ভক্তিরত্বাক্কর রচনার
অন্যতম উদ্দেশ্ট । অথচ তাদের আবির্ভাব তিরোভাব ব1 তাদের বুন্দাবন গমন,
দীক্ষা) প্রত্যাবর্তন, বিখ্যাত খেতৃভীব মহোৎসব প্রতৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের
কোন সন-তারিখই নরহরি চক্রবত্তী দেননি । কেবল তিথিনক্ষতত জানিয়েছেন।
একমাত্র দেখা যায়, সনাতন গোস্বামীকৃত বৈষ্ুব-তোষণী এবং জীব গোস্বামীকৃত
লখুতোষণীর সমাপ্তির তারিখ তিনি দিয়েছেন। এটি দিতে পেরেছেন কারণ,
'লঘুতোষণী” নীকার পূর্বেই তা দেওয়া রয়েছে । আসলে ভঃ রঃ পুরোপুরি
বৈষ্ণব-সাধন গ্রন্থ । ষোড়শ শতাব্দীতে লেখা বু বৈষ্ণবতন্ত্রের থেকে আদর্শ
গ্রহণ ক'রে লেখা । এর এতিহ।সিক মূল্য কিছুমাত্র নেই, তবে যোড়শ-সপ্তদশ
শতাব্দীর গোবিন্দদাসাঁদির রচিত কিছু পদের উদ্ধৃতি এর মধ্যে দেখা যায়,
আর দেখা যায় সংঘ্বতে লেখা জীবগোম্বামীর কয়েকটি পত্র। এতিহাসিকের
কাছে এটুকুই এর আকর্ষণীয় বস্ত। শ্রীনিবাদাদির জীবন ও কার্ধাবলীর
৪২৪ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
যে বর্ণনা এতে পাওয়া যায়, তাঁও বসল পরিমাণে জনশ্র্তির উপর নির্ভর
করেই তাকে গঠন করতে হয়েছে। যাই হোক, শ্রীল নরহরির নবঘীপ-পরিকল্পনা।
দেখা যাক।
শ্রীনিবাসকে নবদ্বীপ ও পাশ্ববর্তী অঞ্চল পরিদর্শন করাচ্ছেন শচীদেবীর
পবিচারক ঈশান। আহ্ুমানিক কাল ১৫৭৫-৮০ খ্রীঃ । তখন ঈশানের বয়ংক্রম
আশি-নববই বসরের কম হবে না। ভক্তিরত্বাকরের ছাদশ তরঙ্গে এই বর্ণনা!
রয়েছে। এর পূর্বে পঞ্চম তরঙ্গে শ্রীনরহরি অনুরূপভাবে বুন্দাবনের বর্ণনাও
ধিয়েছেন। বর্ণনার প্রারভ্ে তিনি নবদ্বীপকে ন"টি পৃথক দ্বীপের সমাহার মনে
করেছেন, যা কেউ কোথাও নির্দেশ করেন নি। আবার তিনি এমন
ব্যাখ্যাও দিয়েছেন যে, শ্রধণা্দি নবধ] ভক্তির উদ্দীপন হয় বলে নবদ্বীপ নাম।
এ নটি দ্বীপের তিনি নিম্নলিখিত নাম দিয়েছেন__অন্তগ্বীপ, সীমস্তদ্বীপ,
গোক্রমদ্বীপ, মধ্যদ্বীপ, পর্বতাখ্য-কোলদীপ, খতুদ্বীপ, জহুদ্বীপ, মোদদক্রমদ্বীপ,
রুদ্রদীপ। আসলে এগুলি হ'ল বাঙ্ল] নামের কৃত্রিম ততসমকরণ। মর্ধাদ]
বাড়াবার জন্ত কেউ কেউ এরকম হাস্থাকর কৃত্রিম শুদ্ধতার আশ্রয় নিয়ে থাকেন।
যেমন কলিকাতাকে কালীক্ষেত্র*, বেলেঘাটাকে বিশ্বপ্বুষ্ট এবং মির্জাপুরকে মৌর্ধ-
পুরম ঝলে আভিজাত্যের ছদ্মবেশ পরানো যায়! উক্ত নামকরণের মধ্যে
সীমন্তদ্বীপ হ'ল শিমুলিয়ার ছদ্মনাম, গোক্মদ্বীপ গাদ্দিগাছার, মধ্যদ্বীপ
ম[জিদার, পার্বতাখ্যকোলদ্বীপ পাড়পুর-কুলিয়ার, জঙহ্ুদ্বীপ জাননগব বা
জাহাননগরের । এই বাঙলা নামগুলি এ সময়কার সাহিত্যে পাচ্ছি। কিন্ত
অন্তদ্বীপ _ আতোপুর, খতু _ রাতুপুর,আবার মহৎপুর _ মাতাপুর, ভরদ্বাজটিক। -
ভারুইডাঙা, এগুলি পাওয়। যাচ্ছে না। পুরাতন নবদ্বীপের বিলীন হওয়ার
পর সম্ভবত চর অঞ্চলগুলি এইসব বাঙল! নামে চলিত হয়। আদর্শ ভক্ত নরহরি
কেবল এ অঞ্চলগুলির সংস্কৃত নামকরণ করেই ক্ষান্ত হন নি। প্রত্যেকটি
অঞ্চলের একটি করে কল্পিত অলৌকিক কাহিনীও জুড়ে দিয়েছেন । যেমন
সীমন্তদ্বীপ নামের কারণ-_ পার্বতী শ্রীচৈতন্যের পদধূলি সীমন্তে ধারণ করেছিলেন ।
গোক্রমদ্বীপের কারণ--এখানে অশ্বরখবৃক্ষের নিচে স্থুরভি গাভী থাকতেন এবং
* গ্রাসলে কলিকাতা শব্দের মুন হ'ল “কপিলক্ষেত্র' । প্রাকৃতে 'কইলধেত্ব'-_কইলথেতা-_
কইলকেতা-কলিকাতা। পূর্বে উচ্চারণ হ'ত 'কইল্' লেখা হ'ত “কলি'। যেমন উচ্চারণ হ'ত
চাল, লেখ! হ'ত চালু, অথব| “মইব' (-মহ্যি ) লেখ হ'ত মবি। “আউশ' ধান লেখ। হয়েছে
“আশু, ঝলে।
শ্রীচৈতন্যের জন্মভূমি _নবদ্বীপ ৪২৫
স্বরভি গৌরদরশনে গৌরমহিম1! কীর্তন করেছিলেন। তেমনি গৌরাঙ্গ
সপ্তধির কাছে মধ্যাহ্ে দর্শন দিয়েছিলেন, তাই মধ্যদীপ। তারপর ব্রন্দা
হরিদাস হয়ে জন্মাবেন এই কথা বলে কৃ্ণ অন্তর্ধান করেছিলেন ব'লে নাষ
হ'ল অন্তন্থীপ। এই রফম সর্বত্র, এবং নিতান্ত বিশ্বাপী ভক্তের কাছে এই সব
অলৌকিক কল্পিত কাহিনীর মূল্য থাকতে পারে, কিন্তু ইতিহাস-ভূগোলের
দিক থেকে এসব কাল্পনিক ও বিশ্রান্তিকর। নরহরি চক্রবর্তী ভাগীরঘী ও
জলঙ্গীর অবস্থান বিষয়ে কোনে! ইঙ্গিত কোথাও দেন নি।
এই রকম অধ্যাত্ম দৃষ্টিভঞ্গির চব্মত। পাওয়া যাবে তার “মায়াঁপুর” নাম
কল্পনায় । শ্রীল নরহরির বিবরণ মতে নবদ্ীপের মধ্যবর্তী অন্তত্বাপের
অভ্যন্তরে “মায়াপুর” অবস্থিত এবং এ “মায়াপুর”ই হ'ল গৌরাঙ্গ বিষুপ্রিয়ার
লীলানিকেতন। বস্তত এই “মায়াপুর” বান্তবে কোথাও ছিল ন। যোৌড়শ
সপ্তদশ শতাবীর কোনও জীবনীকার বা প7কর্তা মহাজন মায়াপুরের
উল্লেখ করেন নি। শ্রীল নরহরি কোথাপ্র পেলেন তাও স্পষ্ট নয়, “তথাহি”
বলে তিনটি সংস্কৃত অনুষ্ুপ অবশ্য তিনি যোজন করেছেন, ঘা তর নিজস্ব রচন।
হওরাই সম্ভব । আসলে যোড়শ-সগ্তদশ শতাব্দীতে বুন্দাবনে ও অন্যান্য অঞ্চলে
নিগৃঢ় সাধনসংকেতময় বহু বৈরষ্ণবশাস্ত্র ও কড়চা লিখিত হয় যার কয়েকটি
থেকে তিনি “তথাহি” বলে বহু শ্লোক তুলেছেন । এরকম কযেকটির নাম
হল সাধনদীপিক1, উর্ধ্বাস্বায়তন্ত্র, ববাহতন্ত্র। এগুলির কোন কোনটিতে
বুন্দাবনের গোবিন্দদেব, গোপীনাথ, মদনগোপালের মন্দিরাঞ্চলকে “যোগ-
পীঠ* আখ্য। দেওয়া হয়েছে । আর কামবীজ মন্ত্রে শক্তির জাগরণ ঘটিয়ে
যোগসাধনার নিরশেও দেওয়] হয়েছে । নরহরি চক্রবর্তাঁও বৃন্দাবন-পরিক্লমায়
বুন্দাবনকে বারংবার যোগপীঠ আখ্যা ভূষিত করেছেন। এবং তিনি
ভক্তদের, যেমন বুন্দাবনের যোগপীঠের তেমনি নবদীপের মায়াপুরের ধ্যান
করতে নির্দেশ দিয়েছেন । কৃষ্তদ্ান কবিবাজের বিখ্যাত চৈতন্যচরিতাম্বত
গ্রন্থেও বুন্দাবনের গোবিন্দদেবের মন্দিরকে যোগপীঠ বল! হয়েছে। তিনি
এইভাবে উক্ত যোগপীঠের বর্ণন। দিচ্ছেন__
বৃন্নাবনে কন্সক্রমে নুবর্ণসদন।
মহাযোগপীঠ তাহা রত্বসিংহাসন ||
তাঁতে বসি আছে সদ। ব্রজেন্দ্রনন্দ্রন |
শ্রগোবিনদেব নাম সাক্ষাৎ মদন ॥ (আদি-_অষ্টম )
৪২৬ বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
“মায়াপুর” নাম উক্ত যোগপীঠের অন্রসরণেই কল্পিত । সম্ভবত বৈষ্ঞবশাস্ধ
ও অচিস্ত্া-ভেদাভেদ দর্শনেব “ষোগমায়া” শব্দটি ধবেই গৌভীয় বৈষ্বদের
ছুই অঞ্চলে কল্পিত ছুই নাগ । বুন্দাবনে যদি যোগপীঠ ধর] হয় তাহ'লে
নবদ্বীপে তা হওয়া উচিত মায়াপীঠ, এরকম ধাবণ। থেকেই মায়াপুর নামের
কল্পন। | এ/পাদ নরহরি বলছেন__
নবদীপ মধ্যে মায়াপুর নাম স্থান ।
যাথ! জন্মিলেন গৌরচন্ত্র ভগনান্॥
যৈছে বৃন্দীবনে যোগপীঠ স্থমধুর |
তৈছে নবদ্বীপে যৌগপীঠ মায়াপুর ॥
মায়াপুর শোৌভ) সদ? ত্রঙ্গাদি ধেয়ায়।
মায়াপুর মহিমা কে ব। নাহি গায় ॥
অন্য তিনি বলেছেন-__
দ্বারকার এর দেখ রে নদীয়ায়ে।
রত্ব-সিংহাসনে গৌরচন্দ্র বিলসয়ে ॥
ভূবনমোহন প্রত শ্রীগৌরবিগ্রহ।
বিলসমে রত্ুদিংহাসনে লক্ষ্মীসহ ॥
অতএব মায়াপুর ভক্তের কল্পন] মাত্র এবং সেই অর্থে সতা, বাস্তঘ ইতিহাস
ভূগোলেব সত্য নয়। ভক্তের দৃষ্টিতে পৌরবিগ্রহ যেমন চিন্ময়, শ্রীধাম
নবদীপঞ্ তেমনি চিন্ময়। আর সেই চিনুয়ত্বের প্রতীক শব্দই হ'ল মায়া-
পুর। এ নিয়ে ভক্ত বৈষ্ণবদের সঙ্গে আমার্দের কোনে। বিরোধের অবকাশ
নেই। কিন্ত বর্তমান নবদ্বীপ শহর্ই মায়াপুব অথব1 মায়াপুর+ যাার্থ
নবদ্ধাপ এমন কথ। বললে ইতিহাস-ভূগোগের বাস্তব সত্যকে নিতান্ত তাচ্ছিল্য
কর) হয় সেই জন্তই নবদ্ধীপের বাস্তব অবস্থিতি নিয়ে এই আলোচন।
কর গেল। মাত্র কিছুদিন পূর্বে বর্তমান নবদ্বীপেরই উত্তরে প্রাচীন গল্প! ও
সেই দিকেই মহাপ্রভুর বাড়ি ছিল এই সিদ্ধান্তে স্থির হয়ে, অথচ এ কাল্পনিক
মায়াপুরঃ নামের ঘারা চালিত হয়ে বর্তমান নবদ্বীপের উত্তরের এ অঞ্চলকে
কেউ কেউ “প্রাচীন মায়াপুর”” আখ্যায় অভিহিত করেছেন। আমলে কোনে!
মায়াপুরই যখন ছিল না এবং বর্তমানে চালু-করা নাম মায়াপুর ষখন
মৌজা-মানচিত্রে ছিল মেঞ্াপুর-মিঞাপাড়া (কাজীপাড়ার দক্ষিণ), তখন এ
প্রাচীন মায়াপুর আখ্যাও সমান ভাবে বিভ্রান্তিকর, স্থৃতরাং পরিত্যাজা।
শ্রীচেতন্যেব জন্মভূমি-_ নবদ্বীপ ৪২৭
যধ্যযুগের সাহিত্যে নবদ্বীপেব অবস্থানে যে পরিচয় ফুটেছে তাতে দেখা!
গেল নবদ্বীপ গঙ্গার দক্ষণ'ও পূর্ব তীব সংলগ্ন নগব এবং পার্খববতী বন “পাড়া”
অঞ্চলে সমদ্ধ। বর্তমান নবদ্বীপ শহব পুবাতন নবদ্বীপেব দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল।
ভাগীরণীব নবদ্বীপ-পূর্ববাহিনী গতি তখন ছিল না। আর জলঙ্গী ও বহুদূরে
ছিল। এই হিসাবে ব্মান নবদ্বীপ রেলস্টেশনেব ও পূর্বস্থলী গ্রামের প্রাণ
দমদূণবতী স্থানে, তখনকা ও গঙ্গা ! বমান মড়িগঙ্গী )। আর তাবই দক্ষিণ ও
পূর্বীরে নবদ্বীপের প্রাণকেন্দ্র ছিল । বর্তমান বাব.লীবি এলাকায় সড় বেলসেতৃব
সন্নিকটে শ্রীচৈতন্থের বাসগুহ হতেও পারে ।
টৈতন্য'ভাগবত ও অন্যান্য ছু'একটি গ্রন্থের বর্ণনা খকে অন্ুম।নে শ্রাচৈতন্যের
বাসগৃহের একটি বিবরণও প্রস্তুত করা যায়। ছোট বাস্ত। বা গলির উপর
পূর্বমুখ বাড়ি। একদিক পূর্বমুখী পুজার ঘর অন্যদিকে শয়নগৃহ ৭ সংলগ্
রন্ধনস্থল। শয়নগৃহ ছুই-কুঠুধি। পৃঙ্গাব ঘৰ ও বাসের ঘবের মধ্যে প্রশস্ত
উঠান। উঠানে নিমগাছ ও পাশে তুলসী ও ফুলের গাছ। পিছনে পশ্চিম
দিকে খিভকী। গৃহের অবস্থান গঙ্গ। থেকে কিছু দৃবে। শ্রীবাস ও শুক্ান্বর
ব্রহ্চারীর বাঁড়ী গঙ্গাব একেপানে উপরেই । ইটের পাঁকাবাডি বারোরই
ছিল না।
সমান্তোহয়ং গ্রন্থঃ | দ্বিতীয্র" সংস্করণম্।
কলিকাতা, ফাল্সনী পণিম। । শচৈহন্ত-আবির্ভাবের পঞ্চশত হমর সম্পূর্ণ !
বঙ্গীয় ১৩৯১।
নির্দেশিক।
পষ্ঠাঙ্ক
সম
অকিঞ্চন দাম ৩৬৭
অচ্যুতানন্দ ৮৬ ১২২
অতুলপ্রসাদ ৪০৪
অদ্বৈত আচার্য ১২, ১৪, ১৫১ ১৬, ১৯,
২০-২১১ ৬০) ৬২-৬৪) ৭২-৭৫১ ৭9
৮৬, ৯২) ৯২, ১০৪) ১১৭ ১২১-
২২, ১২৫, ১ ১৯৪) ২০১-৩)
২০১৯) ৪০৪-১১ ৪২৩
অদৈত-প্রকাঁশ ৬৪
অধিবঢ মহাঁভাঁব ১৭৭১ ২৮৪১) ২৮৭
অনন্তর্দাপ ৩১৮১ ৪০৭
অনদামঙ্গনে ৪২৩
অনুপম ৯১, ৯৫১ ৯৮-৯৯
'অন্ুরাগ, ৭৩, ২৭৮-৮২,
অপম্মার ৩৫৭-৫৮
অবঙল্প ২৭৯৫
অবতার ১৬৩-৬৪
অবহিথা ৩৬২-৬৩
অভিনবগুধধ ২৩১
অভিপারিকা ৩১৫-১৯
অভিযোগ ২& ৩-৬৪
অমর ৩৬৭-৬৮
অআল"কার ৩৩২
অষ্টকালীয় লীলা ৩৮৩
অস্চয়া ৩৪ ৪-৪৫
অশ্বমঘোষ ৪, ৩০৮
অন্তগ্বাপ ৪২৪১ ৪২৫
'অন্য়া ৮২০১ ৪২২
১৩২
পৃষ্াঙ্ক
জা
আখর ৪০২
আনন্দাবর্ধন ৩০৭-৮
আবেগ ৩৫৫-৫৬
আলবার ৪, ২৬, ২৭ ৩১১৩৮ ৫১
আলম্য ৩৬০
আক্ষেপান্ুরাগ ৪০৬-৯
ই
ইলিয়াস শাহ ১২
ইসলাম ২৬, ২*
ঈশ্বরপুবী ১৯) ২০১ ৫৩, ৬৬-৬৫১ ৬৭১
১১৩, ২০৪
উ
উগ্মত। ৩৬৭
উজ্জল্প ২৯৪
উজ্জ্লনীলমণি ৪৫১ ১১৮১ ১৬ন৯, ২৪৩,
২৬৮১ ২৭৬১১ ৩০০
, ৩৯১১ ৪০৫-৬
উদ্বেগ ৩৮০
উদ্ভান্বর ৩৪৫
উদ্ধবর্দাস ২৯৩, ৩০৪, ৩৮৬-৮ ৭) ৪১৯
উদ্ধব-সন্দেখ ৯৩, ১২০
উদ্ধারণ দত্ত ২০৩
উন্মাদ ১০৯, ৩৫৬-৫৭, ৩৮.-৮৩,
উপপনিষদ্ ৩১, ৩২১ ৪০-৪২) ১৩২-৩৩,
১৩০১ ১৪৪-৪৫) ১৪৮১ ১৫৫) ২১৪,
২১৮
উৎকন্ঠিতা ৩২০
৪৩২
উ
উধবায়ায়তন্ব ৪২৫
খা
ঝগবেদ ৫১
খকৃপরিশিষ্ট ৫১, ৩০
খতুহীপ ৪২৪
এ
এতরেয় ব্রাহ্মণ ৩৮
৩
ওঁদার্ধ ৩৩৭
ওঁৎস্থক্য ৩৬৬
ক
কবিকর্ণপুর ৫৮-৬৩১ ৭০১ ৮০-৮১১ ৮৪,
১১৮, ১২০) ১২৩১ ১২৫-১২৬,
-২৯-৩০১ ১৬৬১ ২*২-১১৪১৫-১৭১
৪২১
কবিরঞ্জন ৩৪৫, ৪০৩
কবিশেখর ৩৩৭, ৩৪৪১ ৩৮০১ ৩৮৩
কবীর ৫৬
কলহাস্তরিত। ৩২২
কালিদাস ৩৯, ২১৮১ ২৩১১ ৩০৭,
৩৬৯
কাশীমিশ্র ৮৪-৮৫১ ৯৩
কাশীশ্বর গোস্বামী ৮৬, ৯০
কিলকিঞ্চিত ৩৪*-৪১
কীর্তন-গান ৩৯৯-৪০৫
কুষ্টমিত ৩৪২
কুমারসম্ভব ৩০৭
বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ
কুমারিল ৪
কুন্ভরাগ ২৭৭
কৃত্তিবাস ২১
কষচন্দ্র ( মহারাজ। ) ৪২৩
রুষ্ণকর্ণামৃত ২৫, ৩৮১ ৫০১ ৫:-৫৩,
৮২-৮৪১ ২৩৮১ ৩০৮
কষ্দাস ( কাঁল। ) ৮২১ ৮৪) ৮৬
কষ্ণদাস (রাজপুত ) ৯৪
কৃষ্দাপ কবিরাজ ৫৮-৫৪, ৬১, ৬২,
৬৩-৬৪, ৯৩, ৯৫১ ১০৪, ১০৯১,
১১১১ ১১৪১ ১১৮ ১১৯১ ১২৩,
১২৯১ ৯৩২১ ১৮৯) ১৯০১ ১৯৯-
২০৪০) ২০৩) ৩২৯) ৩৭০) ৪১৫)
৪২৫
কৃষণপ্রয়৷ ৩০৫-৯
কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ১৪
কেশবকাশ্মীরী ৬৪
কেশব-ভাঁরতী ২০১ ৬৭, ৭৮,-৭৯, ৯৬.
কৌলীন্য ৬-৭, ২১*-১১
খ
খণ্ডিতা ৩২১
খেতুড়ি ৪০২-৩, ৪০৬-৭১ ৪২৩
খেয়৷ ৪১৬
গা
গঙগাদাস পণ্ডিত ৭০
গদ্দাধর পণ্ডিত ১৮, ৬২১ ৬৪, ৭২-৭৩,
শ৫১ ৭৭) ৭৯-৮৩) ৮৬১ ৯১১ ৪৪,
১৯৯) ২০১৯
গর্ব ৩৫৩-৫৪
গরানহাটি ৪*২
নির্দেশিকা
গাথাসঞ্চশতী ৫১, ৩৯৭
গাঙ্বীজী ২১১
গীতগোবিন্দ ২১, ২২) ২৪-২৫১ ৫৩,
১২৭১ ১৯৩১ ২৩৯১ ২৮১১ ৩০৮১
৩২৩১ ৪০৫
গীতবিতান ২১৭
গীত। ২১ ৪, ৫১ ১৯১ ৩৮১ ৪৫-৪৬১ ১৯১
৭৩১ ১৩৩, ১৪৫১ ১৪৭১ ১৫৩,
১৫৯, ১৭১১ ২৩০১ ২৩৫) ২৩৭
গীতাগ্ুলি ২২৯ |
গোকুলদাপ ৪০
গোপালতাপনী ৫০, ১৭২) ১৯৫) ৩০৭
গোপালভট্ট ৪1, ৬০-৬১১ ৮৩, ১১৪,
৩৩১
গোপীনাথ আচার্য ৮১১ ২৫৮
গোপীনাথ পট্টনায়ক ১৬, ১০৭
গোবর্ধন ১৩
গোবিন্দ (সেবক ) ৮৫, ১১০
গোবিন্দ ঘোষ (এ দত্ত) ৫৫, ৬২১ ৭০১
৭৩-৭৪১ ৭৯-৮০১ ১২৯১ ২০৩১ ২" ৬১
৩৫৬, ৪৬০১
গোবিন্দদাস কবিরাজ ২৩, ১২২, ১৭৩-
৭৫১ ১৮৫১ ১৮৯-৯১১ ২১৯) ২২৯,
২৬৯-৭১, ২৭৮১ ২৮১ ২৮৩১ ২৮৭-
৮৮১ ২৯৭-৯৮১ ৩০৩১ ৩১১-১২১
৩১৬-১৭) ৩২০১ ৩২২-২৩, ৩৩৩,
৩৪১) ১৫৪১
৩৬৫, ৩৭৪১ ৩৮১,
৩৯৩-৯৫১ ৩৯৭-৯৮) ৪০৩,
৩৫৬, ৩৬০,
৩৮৪,
৩৩৫,
৩৬৩,
৩৮৬,
৪০৫)
গোবিন্দদাসের কড়চ! ৬৩, ১২৯
গৌতমীয়তন্ত্র ৫০১ ১৯৫ ।
কা"
৪৩৩
গৌরগণোদ্দেশ দীপিকা ১২৯, ১৩১,
৬৩
গৌরচক্জ্রিক।
৪০৯-১১
গৌরাঙ্গস্তব কন্গ বৃক্ষ ২৬২
গৌরীপ্নাস পণ্ডিত ৬১, ৯২১ ২০৩
গ্লানি ৩৫১-৫২
গোদ্রম দ্বীপ ৪২৪
৪০৭
৮
১৮৬, ৪০৩
দন
ঘটজাতক ৩৯
ঘনশ্তামর্দাস ২৯৫, ৩২১, ৩২৫) ৩১৪,
৩৭৫১ ৩৯৫১ ৪০৩১ ৪০৬
ঘ্বত স্েহ ২৭২
চ
চকিত ৩৪৫
চন্দ্রশেখর আচার্য ৭০) *৩, ৭৫) ৭৭,
৮৩
চন্রশেখর বৈছ্য ৯৪১ ৯৫
চত্ীদাস ( বড়ু ) ২১, ২২-২৩১ ২৫, ৫০
৫৩, ৭৪) ১২৭) ১৬৮১ ১৭২) ১৯৪,
১৯২, ১৯৭, ২১৯-২০১ ২৩১, ২৩৯,
৩৫৯
২৬৩, ২৬৫১ ২৬৯১ ৩৫৪,
পু
৩৭৯-৮০) ৩৯৬১ ৪১) ৪০৭
চণ্তীর্দাস ১৭৩, ২৭৬১ ২৯০১ ৩৩৩১ ৩৩৭১
৩৫৪, ৩৫৯১ ৩৭৫) ৬৭৮১ ৩৮০+৮১
চর্যাগীতিক। ৭
চাপল ৩৬৩৮-৬৯
চিন্ত] ৩৬৪
চিরপ্ীব সেন ৮৭
৪৩৪
চৈতন্য-চন্দ্রোদয় ৫৮, ৫৯১ ৮১১ ১১৪,
১১৮১ ১২০১ ১৩০১ ৪১৫, ৪১৭,
৪১৮
চৈতন্ত-চন্দ্রামৃত ১০৯
চৈতন্য-চরিতামুত (চরিতামত ; চৈ-৮)
১৬১ ১৮১ ২০১ ২১, ৫৮-৫৯১ ৬২,
৬৭১ ৭৬, ৮০১ ৮৬১ ১১৬১ ১১৮,
১২০-২১, ১৩২, ১৩৭) ১৪৮-৪ ৯১
১৫৫-৫৬, ১৬৪১ ১৬৭-৬৮, ১৭২,
১৭৫-৭৮) ২০০১ ২০২, ২১৯, ২৩৬,
২৩৮) ২৫০) ২৬০-৬১) ২৬৩১ ২৬৮,
২৭২১ ২৭৯, ২৮৮-৮৯১ ২৯১১ ২৯৭১
৩২৬১ ৩৪২-৪৩, ৩৪৯, ৩৫৭১ ৩৬৪,
৩৮৯, ৩৯২১ ৪০০১ ৪১৫) ৪২৫
চৈতন্য চরিতের উপার্ধান ১২৪-২৫,
১২৬) ১২৮, ১২৯, ১৩১
চৈতন্য-ভাগবত ১৩১ ১৭১ ১৯১ ২০১
৫৮-৬০১ ৬২-৬৭১ ৬৬১ ৭১১ ৮০১
৮৭, ১২২১, ২৭১-২১ ২৬০-২৬১১
২৬৬১ ২৮৫) ৩৭৭১ ৪০০১ ৪১৫)
৪১৮১ ৪২০-২২১ ৪২৭
চেতন্ত মঙ্গল (লে। ) ৫৮, ৪১৫
চৈতন্ত মঞ্জুষ! ১৩০
চৈতন্া্টক ১০৯, ১৮৫
জগদ্ানন্দ ৬২, ৭*, ৮০১৮৪, ৮৬১ ১৯১)
১০২, ১০৬, ৩৭২-৭৩, ৪০৬
জগক্সাথ মিশ্র (মিশ্র পুরন্দর ) ১৫, ৬২-
৬৩১ ৬৬-৬৭১ ৮৩
জনার্দন চক্রবর্তী ৫১
জড়ত। ৩৮১
জয়র্দেব ২২-২৫, ৫০১ ২১৯, ২৩১১ ২৭৪
৩১৯১ ৪০১
বৈষ্ব-রস-প্রকাশ
জয়ানন্দ ৫৮১ ৬৩১ ৯২১ ১১০১ ১২৯১
৪১৫
জাগরণ ৩৮০
জাড্য ৩৬০-৬১
জামী ২৭
জালাল্ উদ্দীন্ রূমী ২৭
জাহবাদেবী ১০৫, ১২২, ২০৯
জীব গোস্বামী ১, ৪২, ৪৫১ ১১১১ ১১৪,
১১৮১ ১১৯১ ১২৬, ১৪৩, ১৫৫,
১৫৯, ১৯৫-৯৭, ২০৩, ২৩০১ ২৩৮,
২৫৮১ ৩০০-১১ ৩৩১১ ৪২৩
জহদ্বীপ ৪২৪
জ্ঞান্দাস ২৩, ১৭৩১ ১৯০-৯১১ ২০৯১
২২৯১ ২৮০১ ২৮২, ৩০৫১ ৩১৮,
৩৩৯,৩৪৪, ৩৫৩, ৩৬০১ ৩৬৯১ ৩৭২,
৩৭৮) ৩৮২১ ৩৮৮-৮৯১৪ *২-৩১ ৪০৫
জ্যোতিরিক্দ্রনাথ ৪০৪
ট
টপ্পা ৪৭৪
এ
ঢপ-কীর্তন ৪০৪
নত
তত্তবসন্দত ৪২-৪৩
“তছচিত গৌরচন্দ্রিকা” ৪১৯
তপন মিশ্র ৯৪-৯৫
তানব ৩৮১
তুনসীদাস ২২৯
তৈত্বিরীয় আরণ্যক ৩৯
জাস ৩৫৪-৫৫
নির্দেশিকা
1
থরন্টন ৪২৩
র
দণ্ডাত্সিক লীল। ৪*৯
দানকেলিকৌমুদী ৯৩, ৯৯
দামোদর পর্ডিত ৬২, ৭৩, ৮৬১ ৮৮) ৯৩১
১০৬
দ্রিথিজয়ী ১৫
দিব্যোন্সার্দ ১০০-৯, ১৭৭-৭৯, ১৮১)
১৮৩, ২৯০-৯২
দীনবন্ধু দাস ৪০৩
দীপ্তি ৩৩৫-৩৬
দূতী ৩২৪
দন্ত ৩৫৩-৫১
দিজেন্ত্রলাল ৪০৪
দ্বিজরামদেব ১১
গু
ধাম ১৬০-৬১
ধৃতি ৩৬৫
ধৈর্য ৩৩৭
ধবন্তালোক ৩০৭
ঙ
নস
নটীর পূজা ২১৮
নবীনচন্দ্র সেন ৪০
নরহুরি চক্রবতাঁ ১১১, ৪১৫-১৬, ৪২৩-
হ্৬
নরহরি সরকার ৫৫১ ৬০১ ৭০ ৭৩-৭৪,
৮৭১ ১১৮-১৯১ ১২২১ ১২৫১ ১২৬-
২৮১ ১৮০১ ১৮২১ ১৮৫, ২০৩১ ৪০৩
৪৩৫
নরোতম ঠাকুর ৬৩, ১১১, ১২২) ১৭৯
২৯৯, ২২৯) ২৪০) ২৭৫) ৩২৪-৩০,
৪০২-৪০৩, ৪২৩
নাট্যশান্্র ৩০০
নানক ৫৬
নারদ-পঞ্চরাত্র ৩৮, ৫২, ১৪৬
নারদীয় তন্ত্র ৫০, ১৫৭
নারায়ণী ৬২
নিত্যানন্দ ২০, ২১, ২৭ ৬০+ ৬২-৬৩,
৭০) ৭৩-৭৮) ৭৯১ ৮০-৮১১ ৮৪১ ৮৬১
৮৮, ৯০, ৯৯; ১০২-৫১ ১১১১ ১১৫১
১১৯, ১২২-২৩, ১২৫, ১৩২) ১৬২,
নিই ২০১-২১ ২০৯, ২৩০)
২৬৬) ৪০০১ ৪২৩
নিত্যানন্দ দাস ৪০২-৩
নিদ্রা ৩৬৯
নিশ্বার্ক ৩৪, ৩৫, ৩৭) ৫২১ ১৩৪, ১৩৬,
১৪২, ১৪৪
নির্বেদ ৩৪৯
নীলীরাগ ২৭৬
পপ
পচ্যাবলী ১১৫১ ১১৮১ ১২৪১ ২০৯
পরকীয়া ১০০১ ১৬৭-৬৮৪১ ১৯০-৯৯,
৩০৬৩
পরমানন গুপ্ঠ 4৪
পরমানন্দ পুরী ২০, ৮৩১ ৮৫-৮৬) ৯১
পরমেশ্বর দা ৪০০
পরিকর ১৬১
পরিজগ্প ২৯৩
পাণিনি ৩৯
পীতান্বর দাস ৪০৬
৪৩৬
পুগুরীক বিদ্ভানিধি ১৬, ২০১ ৭৩
পুরন্দর খ। ১৩
পুরাণ ২৫, ৩৮, ৪৪-৪৫১ ৫১১ ৫২-৫৩১
১১৩১ ১১৮১ ১৫৭৯১ ১৬১১ ৩০৭
পুরধলী (পুরস্থলী ) ৪২২
পুরুযোত্তম আচার্ধ ৭১১ ৭৩
পূর্বরাগ ৩৭৭-৭৯
প্রকাশানন্দ ৪৪-৯৮
প্রগল্ভতা ৩৩৭
প্রগল্ভা নায়িকা ৩১৩-১৫
গ্রজল্ন ২৯২-৯৩
গ্রণয় ২৭৪-৭৫
প্রতাপরুত্র ১৬, ৮০-৮২১ ৮৪১ ৮৭-৯১১
৯৮১ ১০৭১ ১৩০১ ২০৩
প্রথম পুজা" (পুনশ্চ ) ৯
প্রথযয় মিশ্র ৯৩
গ্রবাম ৩৯১-৯৬
গ্রবোধ ৩৬৯-৭৬
গ্রবোধানন্দ ৬১১ ৮৩১ ১৩১
শ্রীত ব] দ্বাহ্য ২৪৫-৪৭
প্রেম ১৬৭-৬৮ ২৬৮-৭০
প্রেমদান ৩৮৭
প্রেমবিলাম ৪*২-৩
প্রেমবিলাস বিবর্ত ১৭৮-৮ৎ
প্রেমবৈচিত্ত্য ২৭৯, ৩৯৬-৯৮, ৪*৯
গ্রেয় বা সখ্য ২৪৭-৪৮
প্রোষিতভর্তৃক। ৩ ২২-২৩
কক
ফ্যানডেনব্রোক ৪২১, ৪২৩
বৈষ্ণব-রস-গ্রকাশ
ৰ
বংশীবদন ৩৪
বন্ধেশ্বর ৭৩, ৮৬
বঙ্কিমচন্দ্র ৪০
বসল ও বাৎসল্য ২£৮-৪৯
বলনভদ্রে ৯৩, ৯৪১ ১০২
বলরামদাস ১৮৫১ ২৭৭, ৩১৩, ৩২১,
৩৪৩, ৩৭৬১ ৩৯৬-৯৭
বল্পভ ( আচার্ধ ) ৩৭, ৩৮, ১৩৬-৩৭,
১৪২, ১৪৪
বল্লভদ্াস ২৭৩
বয়ঃসন্ধি ৪০৭
বন্থবন্ধু ৪
বাচিক ৩৪৫-৪৬
বাণীনাথ পট্টনায়ক ৮৫
বাসকসজ্জা ৩১৯-২৯, ৩৬০
বাস্থ ঘোষ ৫৫, ৭০,
১২২১ ১২৭১ ১৮০১ ১৮২)
৭৩-৭৪১ ৮৩৬১
১৮৫,
৩৭৬১ ৪০১
বাসদের সার্বভৌম ৫৭, ৬২, ৯১১ ২৪৩
বায়াজিদ ২৭
বিকৃত ৩৪৪
বিচ্ছিত্তি ৩৩৯-৪*
বিজল্ল ২৯৭
বিজুলি খান্ ৯৪
বিতর্ক ৩৬৩-৬৪
বিদ্গঞ্ধমাধব ৯৯১ ১১৬, ১৫৯১ ১৮৯
৩৯২
নির্দেশিকা
বিছ্যাপপতি ২১-২৪১ ২৬, ৫০১ ৫৩১ ১৯০)
২১৯) ২৩১১ ২৮০১ ২৯২১ ৩০৯-১০১
৩২২, ৩৩৪-৩৫) ৩৩৯, ৩৪২-৪৩,
৩৬১১ ৩৭৪১ ৩৭৮১ ৩৮০-৮১১ ৮০১১
৪ ০৫-৬
বিদ্যাপতি (বাঙালি ) ১৯০, ২০৯
২৭১, ৩৯৭
বি্ভাবাচস্পতি ১৪১ ৯১, ৪২০-২১
বিগ্রলন্ধা ৩২০-২১
বিবেকানন্দ ৫, ১১১, ৩৯৯
বিব্বোক ৩৪২-৪৩
বিভাব ২৫৫-৫৭, ২৯৮-৩*৫
বিভ্রম ৩৪ *
বিমানবিহারী মজুমদার ৭৬, ১২৪-২৬,
১৩১, ২০৩
বিলাম ৩৩৮-৩৪
বিন্বমঙ্গল ৫১, ৮২-৮৩১ ২২৪
বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ১৯৬
বিশ্বরূপ ১৫১ ৬৬১ ৭২) ৮২-৮৩, ৪১৩৬
বিষয় ২৬৪
বিষার্দ ৩৪৯-৫০ |
বিষুপুরাণ ৪৯, ১৩৩, ১৪৫, ১৪৬, ১৫৫
বিষুপ্রিয়া৷ ৬১, ৬৯, ৯২, ১২০, ৪২৫
বিষ্ুণ্ধসংহিত1 ১৯৫১ ৩০০
বীনটারনীৎস্ ৩৯
বীরচন্ত্র ১০৫, ১২৩১ ২০৯
বীরভত্র ১২২
বুদ্ধর্দেব ৩, ১২১ ৬৬-৬৭১ ১৪২
বুদ্ধিমস্ত খা ১৩
বুহ্ৃচরিত ৪, ৩৯, ৩০৮
৪৩৭
বুন্দাবনদাঁস ১৩-১৫, ৫৭-৬০১ ৬২৬৫,
৬৯-৭০১ ৭৫-৭৭১ ৮০১ ১০৫১ ১১১১
১১৮১ ১২২-২৩১ ১২৭১ ১২৯১ ১৩০-
৩১) ২০৩, ২০৯, ৩৯৯-৪০০১ ৪১৬-
১৭, ৪১৮১ ৪১৯১ ৪২০-২২
বৃহদ্ভাগৰতামৃত ৪৫
বেঙ্কটভট্ট ৮৩
বেণীসংহার ৫২, ৩০৭
বেদসযূহ ৪৪, ৫৩, ১৪৪
বেদাস্তস্কত্র ৩১১ ৩৮৭ ৪৫১ ১৫২
বৈয়গ্র্য ৩৮১-৮২
বৈষ্ণবতোধিণী ৪৫, ৪২৩
বৈষ্ণবদদাস ৪০৩
বৈষ্ণব ফেথ, আযাগুমুভমেন্ট (৬ 91512$8
[10 800. 1১0০০100916) ১২৪,
১২৭
বৌদ্ধধর্ম ৩১ ২৯১ ১৩২-৩৩, ১৩৮
ব্যভিচারী বা সঞ্চারী ২৫৯-৬৩
ব্যাধি ৩৫৮, ৩৮২
ব্যাসর্দেব ৪১১ ৪৫১ ১৩৩১ ১৯৭
্রহ্বৈবর্ত পুরাণ ২৪, ৫১
ব্রহ্মনংহিত1 ৩৮, ৫০১ ৮৩১ ৮৪) ১৫৩
ব্রদ্ধানন্দ ৬২১ ৭৩, ৭৫১ ৭৭১ ৮০১ ৮৬
ব্রীড়া ৩৬১-৬২
ভ্ভ
ভক্তিরত্বাকর ৬৪, ১২৯ ৪১৬, ৪২৩-২৪
ভক্তিরসামৃতসিন্ধু ৪৫, ১১৪, ১১৮,
১৪৩১ ২৩৫১ ২৩৮ ২৪৩, ৪০৬
ভগবান্ আচার্য ৮৬
ভষ্টনারায়ণ ৩০৭
ভবন্ বিরহ ৩৯৪
৪৩৮
ভবত্ভাতি ১০৬
ভবানন্দ রায় ৮৫
ভরত ১৯৫১ ২৪৩, ৩০০
ভাঁরতচন্দ্র ৪২৩
ভাগবত ৪, ১৯১ ২১, ২২) ২৪) ২৮,
৩৪১ ৩৮-৩৯১ ৪২১ ৪৫) ৪৭১ ৪৯১
৫১১ ৫২-৫৩, ৭৩, ১০৬১ ১১৩,
১২৭) ১৪১১ ১৪৩-৪৫) ১৫১১ ১৫৩-
৫৪১ ১৫৬১ ১৬৩১ ১৮৭-৯০১ ১৯২-
৯৩১ ১৯৫১ ২৩৫১ ২৩৮১ ২৪২১ ২৮১,
২৯১-৯২ ৩০০১ ৩০৮) ৩৩৮) ৩৭৩,
৩৯৪
ভাগারকর (ডঃ) ৩৮
ভাব ২৮২-৮৪১ ৩৩২৩৩
ভাবী বিরহ ৩৯৩
ভাবোলাস ২৮১, ৪০ ৬-৭
ভাঙ্কর আচার্ধ ৫১ ৩১১ ৩৪১ ৩৭, ৮১,
১৩৮
ভাওসিংহের ঘাট ৪২২
স্বৃত বিরহ ৩৯৪
তপতি ৩৮২
ভ্রমরগীতা ২৯৪
অঅ
মজলধর্ম-কাব্য-দেবতা ৭, ৮-১১
মগ্তরী ১৬৯, ২০৩, ৩২৯-৩১
মণ্রিষ্ঠারাগ ২৭৭
মতি ৩৬৪-৬৫
সদ ৩৫২৫৩
মর্নমোহুন তর্কালংকার ৪২২
মধুর ২২২, ২৪৯-৫০
মধুস্ছদন সরহ্বতী ১৪
বৈষ্ঞব-্রস-প্রকাশ
মধুস্থদন বাচস্পতি ১৪
মধূন্দেহ ২৭২
মধ্যা ৩১১-১৩
মধ্যদ্বীপ ৪২৪, ৪২৫
মধ্ব (আচার্ষ) ৩৫-৩৬, ৪১১ ৮৩,
৩৭১ ১৪২১ ১৪৪-৪৫
মনোহরদাস ১৩১, ৪০৩
মনোহরশাহী ৪০২
মন্দারিনী ৪০২
মহাভাব ১৭৬, ২৮৪-৮৭
মহাভারত ৩; ৪, ৩৯১ ৪৪১ ৫০,
১৬৪
মহাভাষ্য ৩৯
মান ১৭৭, ২৯৫-৯৮
মাধব ঘোষ ৫৫, ৭৩১ ৭৪১ ৩৫৬) ৩৮৩,
৪০০
মাধবী দেবী ১০৬
মাধবেন্দ্র পুরী ২০, ২৭, ৫*, ৫৩, ৬৭,
৮৩১ ১১৩, ৩৫০
মাধুর্য ৩৩৬-৩৭
মান ১৭৯, ২৭২-৭৩, ৩৮৪-:৮৬
মান ( নিহেতু ) ৩৮৬-৩৮৪
মানভঙ্গ ৩৮৯-৯১
মানিক গাঙ্গুলি ১
মালাধর বন্থ ২১
মীরা ২২৯
মুকুন্দ ( কবিকঙ্কণ ) ১১, ৪২১
মুকুন্দ দত্ত ১৯, ৬২, ৬-১ ৭২-৭৩, ৭৭,
৮৪১ ৮৬) ২০৩-৪৯
*৮৩৪-
১৪৪,
৭৯) ৮০-৮১১
৩৫৬১ ৪০১১ ৪২১
ির্দশিক।
মুগ্ধা ৩০৯-১০৩
সুরারিগ্ ১৫, ১৯, ৫৬৬৩, ৬৫১ ৭০)
5৩, ৭৫-৭৭, ১১৮) ১১৯১ ১২২-২৫১
১২৭১ ১২৭-৩২, ১৮১১ ২০৪) ২6৬,
৪১৫-১৭) ৪১৯-২৬
মিঞাপাড়া ৪২৬
স্বৃতি ৩৫৯-৬০, ৩৮৩
মেঘদৃত (প্রবন্ধ ) ৩৯৬
মৈচ্ছদ্দীন চিন্তি ২৭
মোট্রাপ্লিত ৩৪১-৪২
মোদন ২৮৭-৮৮১ ২৭৯৬
মোহ ৩৫৮-৫৯) ৩৮৩
মোহন ১৭৭১ ২৮৮-৯০
মৌদ্ধ্য ৩৪৫
যা
যহুননন ৩৭৮, ৩৯৩
যামল ৩৯২
যামুনাচার্য ৫, ৩১১ ৮২
যোগবাশিষ্ঠ রামায়ণ ৭৪
যোগেশচন্ত্র বিদ্যানিধি ৫৩
যোগগীঠ ৪২৫, ৪২৬
যোগমায়া ৪২৫
বর &
রথুনন্দন ১৪১ ৮৭১ ১২২১ ২৯৪১ ২১৯,
২৮২
রধুনাথ আচার্ধ ২১-২২
রঘুনাথ দাস ১৬, ৬০, ৯৩১ ১০২-৪,
১০৯১ ১১৪১ ১২২-২৩১) ১২৭)
১৩৬১ ১৮৪-৮১১ ২০৩১ ২৯৪১ ২০৭)
২৬২১ ৩২৯১ ৩৩৪) ৩৩১
৪৩৯
রঘ্বুনাথ ভট্ট ৯৪, ১০৬, ১২৬, ৩৩১
রথুনাথ শিরোমণি ১২
রঘুপতি উপাধ্যায় ৯৫, ১০৬, ১২১,
১৬০১ ২০৪,
রবীন্দ্রনাথ ২৪, ২১৪, ২১৫, ২১৭-১৮
২২০-২৩, ২২৪, ২২৫-২৯১ ২৩১১
২৩৩, ২৭৬১ ২৭৪) ৩৬০১ ৩৭৯)
৩৯৬১ ৩৯৯১ ৪০৪১ ৪০৮
রসকল্পবলী ৪১৬
রসমঞ্জরী ৪০৬
রসপর্যায় ৪০৫-১২
রসালস ৪০৬-৭
রসোদ্গার ৪০৬-৭
রাগ ১৮৭, ২৭৫-৭৮
রাঘব পণ্ডিত ৮৬১ ১*৩
রাধামোহন ঠাকুর ১২৭, ২৮৮, ৩৩৩,
৪০৩) ৪৯৬
রাধামোহনর্দাস ৩১২
রাবেয়া ২৭
রামগোপাল ্বাপ ৪*৬
রামচন্দ্র খা ১৩১ ৮৯
রামচন্দ্রপুরী ৭০, ১০৬
বামগ্রসাণ ৩৯৯, ৪০৫
রামকেলি ৬৪, ৯৪, ৪১৭
রামান্থজ ( আচার্য ) ৫) ৩১১ ৩২) ২৩-
৩৭) ৪১-৪২১ ৮১১ ১৩৪-৩৬১ ১৩৮৪
১৩৯, ১৪২) ১৪৪-৪৫১ ১৪৪) ১৫৪১
৩১
রামানন্দ বস্থ ৮৭
রামায়ণ ২, ৩, ২১
রাতুপ্ুর ৪২৪
রায়রামানন্দ ১৬১ ৫২১ ৫৯১ ৮২১ ৮৪-
৮৮১ ৯০-৯১১ ৯৩১ ৯৯১ ১০৭-৮,
১১৩-১৪) ১১৬; ১১৯-২০১ ১২২,
১২৯১ ১৬৯১ ১৭৮-৭৯১ ১৯৮১ ২০৩-
৪১ ২৩০১ ২৩৮১ ২৪৭১ ২৮২১ ৩২৬,
৪০১
রায়শেখর ২০৯, ৩৩৬১ ৩৭৩, ৪০৩,
৪০৫
রুজ্রসংহিতা। ৩**
রুদ্রেসম্প্রদায় ৩৭, ১১৭
রূপগোম্বামী ৪৫,
৯৮-১০০) ১০২১ ১০৪১ ১১৪১ ১১৭১
১১৮১ ১২০১ ১২৫-২৬১ ১২৮ ১৪৩,
১৫৯-৬০১ ১৭৮১ ১৮০-৮১৪ ১৮৫)
১৮৭১ ১৮৯১ ১৯২-৯৬১ ১৯৮১
২০৩-৫) ২৩৪-৩৫১ ২৩৭, ২৪১-৪২,
২৪৪-২৪৫১ ২৫৪-৫৫১ ২৫৮-৫৭৯,
২৬৩১, ২৬৫, ২৬৬৬৭, ২৭২,
২৭৫-৭৬১ ২৭৮১ ২৮৪১ ২৮৮-৮৯,
খ১০৯-৩০ ত ৩০৩, ৩০৭) ৩১৭, ৩২৭,
৩৩৯১) ৩৪৬, ৩৭১১ ৩৭৬ ৩৮৯,
৩৯১-৯২১ ৩৭৯৪১ ৪০৩, ৪০৫-৬
বূপসনাতিন ১১ ১৩, ১৬১ ৪৫) ৫৭,
১১১) ১১৪-১৫১ ১১৮-২০ ১২৬,
১৩০১ ১৪৩১ ১৮১১ ২০৪
বূপান্ুরাগ ৪০৫
বূপাভিসার ৪০৬-৭
বূপোলাস ৪০৬-৭
রেনেটি ৪০২
রুদ্রদীপ ৪২৪
বূপরাম ১০
রৈবতক ৪০.
৫৯-৬০১ ৯২-৯৬,
বৈষ্ব-্রস-প্রকাশ
লগ
লক্ীদেবী ১৫১ ৬৬,
লঘুভাগবতামৃত 3৫, ১৬৩
লঘুতোঁষণী ৪২৩
ললিত ৩৪৩
ললিতমাধব ৯৯, ১১৬) ১৮৯) ৩৬৬,
৩৯২
লালসা ৩৭৯-৮০,
লীল। ৩৩৭-৩৮
লোচনদাস ৫৮-৫৯,
১১০১ ১১৩১ ১২৭১ ৪১৫
লোচনরোচনী ১৯৫
৬০, ৬৩, ৮০১
শা
শংকরাচার্য ৪, ২৯-৩৫১ ৪১৪২১ ৫৬১৮৩»
১৩৩-৩৪১ ১৩৮৪ ১৪89১ ১৪৫,
১৫ ০৫২১ ২০৪১ ২৩১
শঙ্কা ৩৫৪
শচীদেবী ১৫১ ৬৩১ ৬৯১ ৭২১ ৭০১ ৭৯)
৮৩১ ৮৫-৮৬১ ৯২-৯৩) ২৪৮১ ৩৭৬,
৪8২৪
শকুস্তল। ২১৮
শতপথ ব্রাহ্মণ ৩৮১ ৩৯
. শতানন্দ খ। ৩১, ৮৬
শশিভৃষণ দাসগুপ্ত ৫.
শশিশেখর ৩৬০১ ৩৬৮
শাস্তরস ২৪৫
শামস্উদ্দীন তাব্রিজী ২৭
শিক্ষার্ইক ১১৭১ ১৫০-৬০১ ২০৩-৯
শিবানন্দ সেন ৫৭, ৬২) ৮৬, ৮৭১ ৯১,
১২৬-২৯১ ১৩২
নির্দেশিকা
শিমুলিয়া ৪২৪,
গুকদেব সিংহ ৩৩,
শুরাম্বর ব্রন্মচারী ১৬, ৭৩, ৮৬) ৪২৭
শৃন্যপুরাণ ৯
শেখ সাদী ২৭
শেলি (9116115য ) ৪০৮
শোভা ৩৩৪
ঠ্মারাগ ২৭৬ *
শ্বামানন্দ ৪২৩
শ্রম ৩৫২
শ্রীকষ্কীর্তন ২১) ২৫) ২৬) ৩৯, ৫৩,
২১৯, ২৭৩, ২৮৭) ৩৪৩, ৩৬৪,
৪০১১ ৪০৫) ৪০৭) ৪১১
গ্রকুষ্ণবিজয় ২১
শীধর (খোলাবেচ। ) ১৬) ৬৫) ৭৩, ৮৬
৪১৯
শ্ীধরস্যামী ৫০, ১৮৮
শ্রীনাথ চক্রবর্তী ১৩০, ১৬০
শ্রীনিবাস আচার্ষধ ৬৩, ১১১১ ১২২-২৩,
২০৯) ৪২৩-২৪
শ্রীবাস ২০১ ৬৩, ৬৫) ৭২-৭৩) ৭৪-৭৫১
৭৬) ৮৬) ১১৯, ১২৫, ১৩২১) ১৮১১
১৯৯, ২০২-৩, ২৩, ২৪৮, ৪১৪,
৪২০-২১১ ৪২৭.
শ্রীমান্ পণ্ডিত ৭৩, ৮৬
শ্রারজপুরী ৬৭, ৮৩
শ্রীবামরুঞ্ণ ১১১, ৩৯৯
ভ্রীসম্প্রদদায় ৩৪, ১১৭, ১৯৩
শ্রীবাদের অঙ্গন ৪১৪
জীরাম পণ্ডিত ৭৫
৪৪১
ষ
যট্্সন্দর্ভ ৪৫) ১৩২১ ১৪৩
ষড়গোসম্বামী ১২৬, ২৯৩
1
সংকীর্ণ ৩৭২-৭৩
সংক্ষিপ্ত (সম্ভোগ ) ৩৭১-৭২
সংজল্ন ২৯৪-৯৫
সখীপ্রসঙ্গ ১৬৯) ৩২৬-২৯
সবীসমূহ ৩০৯, ৩২৭
সত্যরাজ খান ৮৭
সখ্য ২৪৭
সনক-সম্প্র্দায় ৩৭, ১৩৪
সনাতন ১, ৪৫,
১১৫-১৬, ১২০)
৯২৯৫১ ১০০-২১
১২৩১ ২০৩-৪,
৩৩১১ ৪২০১ ৪২৩
সমু্রগড় ৪১৯১ ৪২২
সমগ্ডসা রতি ২৬*
সমর্থা রতি ১৯৯১ ২৬৭
সমুদ্ধিমান্ ( সম্ভোগ ) ৩৭৪-৭৫
সম্পন্ন ( সম্ভোগ ) ৩৭৩
লহ্বন্ধ ২৩৪
সাত্বিকভাঁব ২৫৮-৫৯, ৩৪৬-৪৮
সাধারুণী রতি ২৬৬-৬৭
সার্বভৌম ভট্টাচার্য ১৪, ১৬, ৫৭, ৫৯,
৮১-৮২১ ৮৪১ ৮৭-৯১) ৯৬) ১০৭,
১২০-২১১ ১৩০১ ১৫৬, ২০৩) ২৪৮
সাধনদীপিক1 ৪২৫
সুভল্প ২৯৫
স্থনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ২৮
1৪8৪২
স্ৃপ্তি ৩৬৯
নুবুদ্ধি রায় ১৩
সরদাস ২২৯
সুশীলকুমার দে ১১৫, ১১৭ ১২৪, ১২৫,
১২৬
ক্কুফী ১৯,
৩৯৯
২৬-২৮১ ৫৩১ ৭৩১ ১১৩
2
সোনার তরী ২১৬
ম্লেহ ২৭০-৭২
স্মৃতি ৩৬৩
স্বকীয়া ৩০৫
অরূপ দামোদর ১১৪৫, ৮৫১ ৮৯১ ৯১
৪৪ ৯৯১০ ০১ ১০৩১ ১০৬১ ৬ ০৮-
১০১ ১১৭১ ১১৯-২০১ ১২২-২৩,
১২৬ ১২৯-৩১৭ ১৬১১ ১৮১-৮৩১
১৮৫১ ১৯২১ ১৯৮-৯৯১ ২০০-৫১
২৩০১ ২৩৯, ২৪৮১ ৩৮৯১ ৪০১
ত্বাধীনভর্তুকা ৩২৩-২৪
সীমস্তঘ্ধীপ ৪২৪
বৈষ্ণব-রস-গ্রকাশ
ছু
হংস্দুত ৯৩, ১২০
হরপ্রসাদ শাস্ী ২৪
হরিদাস (ছোট ) ১০৬
হরিদাস ঠাকুর ১৬, ১৯-২০১ ২৭১ ৫৭১
৭০) ৭৫) ৭৭, ৭৪, ৯১১ ১০৮) ১১৩,
১১৪১ ১২১১ ২০৩১ ৪২৫
হরিভক্তিবিলা ২৩৭
হর্য ৩৬৬
ধলা ২৭
হাফিজ ২৭
হাব ৩৩৪
হাল ৩০৭
হিরণ্য ১৩
হুসেনশাহু ১৩, ১৫১ ৮০১ ৯১-৯২১ ৭৪১
৪২০
হেগেল (068০1) ৩২১ ১৩৪১ ২১৭
হ্মচন্জ্র রায়চৌধুরী ৩৮১ ৩৯
হেল] ৩৩৪